#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৭
কোলাহলপূর্ণ চারিদিক কৃত্রিম আলোর ছড়াছড়ি। আজ প্রতিযোগিতার লাস্ট দিন জিমি আগের দুই প্রতিযোগিতায় মধ্যে সিলেক্ট হয়েছে। আজ লাস্ট দিন সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। কে থাকবে? কাকে চলে যেতে হবে বুক ভরা আশা নিয়ে। জিমি নিজেকে স্ট্রং করে নিয়েছে নিজে এলোমেলো কথায় বুঝিয়েছে ‘প্রতিযোগিতায় হার জিত আছেই। কেউ জিতবে কেউ বা হারবে। কিন্তু সবার মনে একটা না একটা আশা নিয়ে এসেছে কেউ বা এখানেই থেমে যাবে কারো বা এখান থেকেই শুরু হবে যা হবে দেখা যাবে’ জিমি যতই নিজেকে বোঝাক মনের মধ্যে একটা ক্ষুদ থেকেই যাই। সবার পার্ফমেন্স দেখে জিমি মনে মনে ভয় পাচ্ছে। একাক জনের পার্ফমেন্স দূরদান্ত প্রতিযোগিতায় তাতে ক্রমশ টাফ হয়ে যাচ্ছে। একে একে স্ট্যান্ড শেষ এবার জিমি পালা। জিমি বড়বড় শ্বাস নিয়ে অন্ধকার আচ্ছন্ন চাঁদহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল ‘তোমার মেয়েকে জিততেই হবে হারলে যে সব শেষ আব্বু তুমি দেখো আমি ঠিক পারবো ইন-শা-আল্লাহ’
জিমির নাম এনাউন্স করতেই জিমি মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মাঠের চারিদিকে বসে থাকা সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। ফেন্ডদের দিকে তাকাতেই তারা আশ্বাস দিলো। জিমিও মাথা নাড়িয়ে বাইকের ডান হাতের হ্যান্ডেল ধরে বা হাত দিয়ে চাবি ওয়ান করে দিলো। ডান হাত দিয়ে বাইকের পিছনের একচাকা দিয়ে নিজের চারিদিকে ঘুড়ালো গাড়ি। অতঃপর বাইকে বসে কিছুক্ষণ গিয়ার দিয়ে স্টার্ট দিয়ে কিছুদূর চালিয়ে নিজেই বাইকের হ্যান্ডের ওপর উঠে দাঁড়ালো। সবাই উত্তেজনায় চিৎকার দিয়ে উঠলো কেউ বা শিঁশ বাজিয়ে উঠলো। জিমি বাইকের পিছনে এসে হ্যান্ডেল ধরে পিছনের একচাকায় দাঁড় করিয়ে দিলো। এছাড়ার আরো কয়েকটা আনকমন স্ট্যান্ড করলো।
রেজাল্টের পালা উত্তেজনায় হাসফাস করছে। রেজাল্ট কি? জিমি নিজেও ঘামছে বারবার। কি হবে? কি হবে? করে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠছে। জিমি হাতে থাকা টিস্যুটা নিয়ে কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম গুলা বারবার মুছে। হাতে-পায়ে অদৃশ্য কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিযোগিরা সকলেই মনে মনে চাই তারা সিলেক্ট হোক! কিন্তু সবাই তো আর সিলেক্ট হবে না ৬ জন থেকে ৩ জনকে সিলেক্ট করা হবে।
স্ট্রেজে উঠে একটা মেয়ে এন্ডকারিন করতে লাগলো।
-‘হ্যালো এভরিওয়ান! কেমনবোধ করছেন সবাই? হুমমম সবাইকে দেখছি বেশ এক্সাইটেড দেখাছে। কি হবে? কে টিকবে? আর কেই বা মন খারাপ করে চলে যেতে হবে? আমি ও প্রচুর এক্সাইটেড। প্রতিযোগিতার লাস্ট দিন যে এতো টাফ তো হবেই। সব প্রতিযোগিতারাই এক একজন উইনয়ার একটা কথায় মাথায় রাখবেন প্রতিযোগিতায় হার জিত থাকবেই তাই বলে কি থেমে গেলে চলবে? উহুম এখান থেকে আবার উঠে দাড়াতে হবে অনেকটা পথ পারি দিতে হবে। আপনার মন খারাপ করার কিছু-ই নাই আপনার মধ্যে কিছু তো একটা আছে যার জোরে আপনি এতোদূর আসতে পারেছেন সবাই তো আর এতো দূর আসতে পারে না। প্রাউন্ডফিল হওয়া উচিত আপনার। তো যাই হোক অনেক কথা বলে ফেললাম জানিনা আপনাদের মধ্যে কার কতটা আমার কথা কাজে লাগবে। তো চলুন আমাদের জাঝেজরা কি সিদ্ধান্ত নিলেন দেখে আসি। জাঝেজ সিনিয়র মি.শফিক স্যার প্রতিযোগিদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন….’
মি.শফিক-‘তুমি তো সবই বলে দিলে এটা সত্যি প্রতিযোগিতা অনেক টাফ ছিলো। আমরা জাঝ করার সময় ভেবে পারছিলাম না কাকে রেখে কাকে কি করবো তো যারা পারবেন না তাদের মন খারাপ করার কারন নাই এগিয়ে যান তবু আপনাদের মধ্যে আমরা বেষ্টটাকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছি তো দেখা যাক কি হয়’
-‘অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে সেই কাক্ষিত মুহূর্ত সো এস্ট্রেজে ডেকে নিচ্ছি আমাদের জাঝেজদের তাদের কাছ থেকে জেনে নিবো আমাদের বিজয়-ই দের নাম…’
জিমির বুকে দ্রিমদ্রিম করে আওয়াজ হচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে এ-ই বুঝি সব শেষ?
জাঝেজরা একে একে নাম বলতে লাগলেন। জিমি চোখ বুজে দু-হাতে মুখ ডেকে বসে আছে নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। জাঝেজরা থার্ড, সেকেন্ড, ফার্স্ট নাম এনাউন্স করছে। একে একে থার্ড, সেকেন্ড প্রতিযোগিদের নাম বলায় জিমি ফুপিয়ে উঠলো। মনে মনে ধরেই নিলো সে এই প্রতিযোগিতার সিলেক্ট হতে পারলো না।
-‘আমাদের ফাস্ট রানারাফ মিস.জিমি আফরিন’
জিমি থমকালো। মনের মধ্যে মিশ্র অনুভূতিরা রংধনুর রঙিন আকাশে অবাধ্য পাখির ন্যয় ডানা মেলে উড়াউড়ি করতে লাগলো। চোখ দিয়ে দূর্লভ অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়লো। মুখে দু-হাত চেপে কেঁদে ফেললো সবার সামনে।
সবাই উত্তেজনায় জিমির নাম ধরে চিৎকার দিতে লাগলো। জিমির ৫ জন ফেন্ড লাফিয়ে বাউন্ডারি ক্রাস করে। চিৎকার দিয়ে মাঠ দিয়ে দৌড়ে আসলে। গার্ডরা বাঁধা দিতে এলেও তারা মানলো না। জিমির কাছে চলে গেলো। জিমিকে ঘিরে চিৎকার দিয়ে উঠে বলল
-‘থ্রি চিয়ার্স ফর জিমি হিপ হিপ হুররেএএএএ…’
জিমিকে স্ট্রেজে ডেকে পুরুস্কৃত করা হলো। এক লক্ষ টাকার চেক। এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো আর দামি বাইক হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর (মটোজিপি এডিশন) পুরুস্কৃত করা হলো। জিমি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলল
-‘আমাকে তো সবাই চিনেনই আমি জানি না এটা পাওয়ার যোগ্যতা আমার কতটুকু? আদেও আছে কি না জানি না। আমি বলতে গেলে এখানে কখনো আসবো কখনো কল্পনা তো দূর ভাবিও নাই। আমার ৫ ফেন্ড আসলে তারা ফেন্ড না তারা যে আমার কতটা হৃদয় জুড়ে আছে হয়তো তারা জানে না বলে বোঝাতে পারবো না তাদের জন্য আমি আজ এখানে। এমনকি আমার ফ্যামিলির কেউ-ই জানে না আমি এখানে হয়ত এতোক্ষণে জেনেও গেছে আমাকে টিভির পর্দায় দেখছে। তো যায় হোক আমার এই টাকা দরকার ছিলো আমার বোনের বিয়ে আর ক’দিন পরেই আমার ইচ্ছে ছিলো অনেক ধুমধামে আপুর বিয়ে দিবো এমনকি আমার বাবাও তাই চাইতেন তার বড়মেয়েকে খুব ধুমধামে বিয়ে দিবে এটা আমি তার ডাইরি পড়ে জেনেছি কেউ জানে না অবশ্য তিনি হয়ত নাই কিন্তু তার স্বপ্নগুলা তো আছে আমি তার স্বপ্ন গুলো পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এই টাকা দিয়ে আমি আমার আপুর বিয়ে দিবো এন্ড থ্যাংকিউ সো মার্চ ওয়াল আমার জন্য দোয়া করবেন’
টিভি সামনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলি তার চোখটাও অশ্রুতে টইটম্বুর। সামিও অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে টিভির স্কিনে।
চলবে।