প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৫

0
1150

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৫

খান বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসা শুরু করেছে। বাসার বড় ছেলের বিয়ে যেনো তেনো ভাবে দিলে হয় তার বিয়ে তো হবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সেভাবেই এগোচ্ছে সব কিছু। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সামি আর জাকি পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে সামি জাকির কানের কানে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো

-‘ ভাইয়া ভাবির সাথে প্রেম কেমন চলে?’

জাকি খাবার খাওয়া থামিয়ে বিষম উঠে যায়। জুলি বেগম দৌড়ে এসে ছেলেকে পানি দিয়ে বলল

-‘কি হলো? দেখেশুনে আস্তে আস্তে খাবি তো না-কি এতো তাড়াহুড়ার কি আছে?’

সামি খেতে খেতে ফোঁড়ন কেটে বলল

-‘ আরে বুঝো না? ভাবির সাথে প্রেমআলাপ করবে সেজন্য’

সামির কথা শুনে কেউ কেউ মুখ টিপে হাসলো কেউ বা জোরেই হাসলো। জাকি সামির দিকে চোখ রাঙালো তা দেখে সামি বলল

-‘দেখছো দেখছো আম্মু। সত্যি কথা বললেই তোমার ছেলে চোখ রাঙানি দেয়’

জাকি দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘হ্যাঁ তুমি তো সত্যবাদী যুধিষ্ঠি আর তুমি যে আজ-কাল রাস্তাঘাটে কি করছো সে-সব তোমার আম্মু জানে? নাকি বলবো তোমার আম্মুকে’

সামি গম্ভীর হয়ে যায়। জাকিও আর কিছু বলল না। জুলি বেগম বলেন

-‘আজ মিলিদের বাসায় যাচ্ছি আমি কাল মিলি আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলল হঠাৎ কি জানি বলবে’

°
°
সূর্যের তির্যক রশ্মি ভ্যাপশা গরমে কাহিল অবস্থা সবার ঘেমে নেয়ে একাকার। এই গরমের মধ্যে জিমি আর লিলি গেছে বাজারে। জিমি একা যেতে চাইছিলো কিন্তু লিলি তাতে নারাজ কি আনতে কি আনবে তাই জেদ ধরে সেও গেছে সাথে অবশ্য জিমি ফেন্ডরা ছিলো মিলি বিয়েতে তারাও কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছে। লিমন স্কুলে গেছে আর একমাস পরেই তার এসএসসি পরীক্ষা কড়া নজরে রাখছে সবাই ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।মিলির বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। আর ক’দিন পরেই বিয়ে কাল থেকে আত্মীয় স্বজনরা আসা শুরু করবে। বাসার মেনডোর খোলা থাকায় জিমি আর লিলি ডুকে পড়ে।

-‘আপু, এই আপু, কই তুই দেখ সবঠিকঠা….’

বসার রুমে এসে আর কথা বলতে পাড়লো না কথা যেনো আটকে গেছে। গলাটা শুকিয়ে গেছে। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘামের চিকন স্রোত বেয়ে আসছে। সাথে লিলি বেগমেরও অবস্থা খারাপ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে বসার রুমে বসে থাকা জুলি বেগম ওরফে মিলির হবুশাশুড়ি। মিলি ওনার পাশেই বসে ছিলো। মিলি উঠে এসে জিমির পাশে দাঁড়িয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলল

-‘এই যে আমার ছোট বোন জিমি আফরিন!’

জিমি বিষফোড়ান চোখে মিলির দিকে তাকালো। মিলি চোখ দিয়ে আশ্বাস জানালো। জিমি শুঁকনো ঢোক গিলে জুলি বেগমের দিকে তাকালো তাকে দেখে তার অভিব্যক্তি বোঝা যাচ্ছে না। তিনি যেমন ছিলেন তেমনি আছে। লিলি পরিস্থিতি সামালাতে এগিয়ে এসে মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল

-‘আরে বেয়ান আপনি কখন আসলেন? আমি তো কিছুই জানি না’

জুলি তখন চুপ। জুলি বেগম তখনোও চুপ! লিলি বেগম মনে মনে ভয় পেলেন মিলির দিকে কঠিন চোখে তাকালেন। মিলি নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো ওর কিছু যায় আছে না যা হবে সেটাই মেনে নিবে। নিরবতা চলল মিনিট দশেক কিছুক্ষণ পর জুলি বেগম বলেন

-‘মিলি তোমার বোন তো দেখছি একদম কিউট বাচ্চা মাশাআল্লাহ’

জিমি সহ লিলি, মিলি চমকালো। মিলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। জিমি, লিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তা দেখে জুলি বলল

-‘কি বেয়ান ভয় পাইছিলেন না-কি? আর ছোট একটা মেয়ে আছে আমাদের বলেন নি কেনো হ্যাঁ? কতদিনই বা লুকিয়ে রাখতেন? একদিন না একদিন তো জানতে পারতামই না-কি?’

-‘আসলে বিয়ান….’

-‘বিয়ান আপনার অবস্থাটা বুঝছি এতো টেনশন নিয়েন না আপনার বড়মেয়ে, ছোটমেয়ে মাশা-আল্লাহ। আর এই যে জিমি আম্মু তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনলাম এতটুকু বয়সে কত স্ট্রাগল করছো মাশা-আল্লাহ তোমার আপু আমাকে সবই বলেছে’

মিলি বলল

-‘আসলে আন্টি আমি চাইনি বিয়ের পর কোনো ঝামেলা হোক বা দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হোক। আর আমি চাই না অন্য কারোর কাছ থেকে এগুলো শুনে কোনো অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হোক।’

-‘মিলিআম্মু তো দেখি ভালো গুছিয়ে কথাও বলতে পারো বিয়ে ওর শাশুড়ী বউমার ঝ/গ/ড়া ভালোই জমবে’

কথাটা বলে জুলি বেগম, লিলি বেগম, মিলি হেসে উঠলো। জিমি এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো ও কোনো স্বপ্ন দেখছে। মিলি জিমির বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল

-‘এটা স্বপ্ন না সত্যি’

জিমি মায়াবী জলহীন চোখে তাকালো মিলির দিকে মিলি হাসলো। লিলি বেগম মেয়ের শাশুড়ির খাবার-দাওয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। জুলি বেগম অবশ্য বাঁধা দিয়ে বেশ কয়েকবার বললেন ‘আহ বেয়ান এতো ব্যস্ত হবেন না’

কিন্তু লিলি বেগম তো কোনো কথা শোনার পাত্রী নয়। সারাদুপুর জুলি বেগমের ক্ষেদমত চললো। বিকালের দিকে তিনি বাড়ি রওনা দিলেন। লিলি বেগম অবশ্য ভয়ে ভয়ে ছিলেন এনা বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ে বলেন ‘আপনাদের মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসেবে মানবো না বিয়ে ক্যান্সাল’

কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। রাতে জিমি মিলি শুয়ে ছিলো। মিলি শুয়ে জাকির সাথে চ্যাট করছিলো। তখন জিমি বলল

-‘আপু তুই ক্যান হুটহাট এমন করিস বলতো কবে জানি হার্ট অ্যা/টা/ক করে মা/রা যায়’

মিলির এদিকে কোনো খেয়াল নাই সে ফোনে মগ্ন আর মিটমিট করে হাসছে জিমি সেটা খেয়াল করে আস্তে আস্তে মিলি মাথার পাশে গিয়ে দেখে মিলি জাকির সাথে চ্যাট করছে। জাকি তিনটা চু/ম্মু ওয়ালা স্টিকার দিয়েছে। জিমি বড়বড় চোখ করে ফোনে স্কিনে তাকিয়ে আছে। মিলির ধ্যান আসতেই মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। জিমিও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আস্তে বলতে গিয়ে জোরে বলে উঠলো ‘নাউজুবিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ’

মিলি রেগে বলল ‘জিইইমির বাচ্চা!’

জিমি চোখ বন্ধ করে একটা ‘আপু বিশ্বাস কর আমি পড়ি নি’

জিমি চোখ খুলে মিলির দিকে তাকাতেই ফিক করে হেঁসে ফেললো সাথে মিলিও।

-‘বিয়ের আগে অরেঞ্জম্যারেজে এতো প্রেম বাবাহ্ আগে কোথাও দেখিও নি শুনিও নি বলে কি না ‘আমাকে আদর দাও”

কথাটা বলে জিমি আবারও হেসে ফেললো। মিলি রাগার ভান করে বলল

-‘জিমি ভালো হচ্ছে না কিন্তু শ/য়/তা/ন মেয়ে সবসময় আমার পিছনে লাগা’

জিমি ভ্যাংগিয়ে টেনে টেনে বলল

-‘আমাকে আদর দাও’

-‘জিমিকা বাচ্চু’

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে