প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৩

0
1261

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৩

রাতের নিস্তব্ধতা ঘিরে রেখেছে চারিদিকে রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁঝি পোকারা ডেকে চলেছে সমান তালে ল্যামপোস্টের আলোয় দুই মানব-মানবী দু’জনের দিকে ক্রোধনল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস নিচ্ছে যেনো এখনি দুজন দু’জনকে ভর্স করে দিবে। নিরবতা কাচ ভাঙ্গার মতো ঝনঝনিয়ে শব্দ তুলে সামি ক্রোদ নিয়ে বলল

-‘ সাহস তো কম না আমার গাড়ির লাইটের কাজ ভেঙ্গে দিলেন? বাইক চালাতে পারেন না তো চালান কেনো? ডিজগাস্টিং’

জিমি চুপ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়াশ চালাছে। জিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘আপনি বুঝি ভালো গাড়ি চালাতে পারেন? তাই তো এসেই আমার বাইকের সাথে লাগিয়ে দিলেন। আমার বাইকেরও তো মিরর ভেঙে গিয়েছে আমি কি আপনাকে সেটা নিয়ে কিছু বলছি? পায়ে পা লাগিয়ে ঝামেলা বাড়াছেন কেনো?’

-‘দোষটা আপনার আপনি মাঝ রাতে মাঝ রাস্তায় বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো? এখানে আমি না এসে অন্য কেউ আসলে লাগিয়ে দিতো’

-‘আজ্ঞে জী না। আসলে আপনার চোখ থাকতেও চোখ নাই তাই মাঝ রাস্তায় জলজেন্ত মানুষ দেখেও আপনি দেখতে পান নি’

-‘আপনি আমাকে ইনডিরেক্টলি ঝগরুটে আর অন্ধ বলছেন? তাহলে আপনি নিজে কি হ্যাঁ দেখছিলেন গাড়ি আসছে সরে যেতে পারলেন না আপনি অন্ধ’

-‘এই শুনুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন নিজে হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন তো আমি কেমনে সরতাম’

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাদের মতো মানুষদের না আমার খুব ভালো করেই চেনা আছে’

জিমি ভ্রু কুচকে বলল

-‘হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আমাদের মতো মানুষ?’

-‘এই যে এখন ক্ষতিপূরণের জন্য টাকা চাইবেন আপনার হাতে লাগছে, পায়ে লাগছে, গাড়ি ভাংঙ্গে কি চাইবেন না? ওকে চাওয়া লাগবে না আমি-ই দিচ্ছি’

কথাটা বলে সামি জিমির হাতে একহাজারের পাঁচটা নোট ধরিয়ে দিলো। জিমি দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে চোখ খুলে সামি’কে টাকাগুলো রিটার্ন ফেরত দিয়ে শান্ত গলায় বলল

-‘আমরা মধ্যবিত্ত হতে পারি। কিন্তু আপনার মতো নিচ মনমানসিকতা আমাদের নাই। টাকা কিন্তু আমাদেরও আছে হতে পারে আপনাদের থেকে কম কিন্তু টাকা আছে গাড়ি ঠিক করার সামর্থ্যও আছে আর না থাকলেও আপনার কাছে অনন্ত চাইতাম না। নেক্সট টাইম আপনার এই টাকার গরম আমাকে দেখাতে আসবে না’

কথাটা বলে সবাইকে ইশরা করতেই যে যার বাইকে উঠে গেলো জিমিও বাইক তুলে স্টার্ট দিয়ে তিনটে বাইক সো করে চলে গেলো চোখের সামনে থেকে। অপমানে সামির চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে উঠেতে নিলেই সামির ফেন্ড রানা সামিকে আঁটকে দিয়ে বলল

-‘ভাই থাম আমি ড্রাইভ করছি তুই ড্রাইভ করলে আজ নিশ্চিত ইননাল্লিলা হয়ে যাবো’

সামি রক্তিম চোখে রানার দিকে তাকালো। রানা সেটা পাত্তা না দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গেলো। সামিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল

-‘আরে ওঠ দেরি হচ্ছে আমাদের তোকে বাসায় পৌঁছে আমিও বাসায় যাবো’

সামি রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে উঠে বসলো। রানাও ড্রাইভ করতে লাগলো।
.
সামিদের পারিবারিক বিজনেস আছে যেটা সামির বাবা শহিদ খান নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন সেটাতেই সামি আর সামির বড়ভাই জাকি সবসামলাচ্ছে জাকি পুরনো হলেও সামি নতুন জয়েন্ট করেছে। রানা সামির ফেন্ড বলতে গেলে বেষ্ট ফেন্ড রানা সামির পিএ। অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয় সামি। জিমি আর ওর বন্ধুরাও জিমির জন্য প্রতিযোগিতার সব কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় আর রাস্তা ফাঁকা থাকায় বল্টু জিমিকে স্ট্যাড করে দেখাতে বলতেই জিমিও রাজি হয়ে যায়। প্রস্তুতি নিয়ে সবে শুরু করতে যাবে তখনি সামির গাড়ি ঝড়ের বেগে আসে।
.
রানা মধ্যবিত্ত বলে জিমির ব্যপাটা বুঝতে পেরছে এটা কতটা অপমানজনক। রানা বলল

-‘দোস্ত মেয়েটাকে ওভাবে তোর বলা উচিত হয়নি।’

সামি রেগে গজগজিয়ে বলে উঠলো

-‘তুই ঔ মেয়ের হয়ে সাফার গাইছিস? তুই আমার ফেন্ড নাকি ওর ফেন্ড’

-‘দেখ আমি কারোর হয়ে কথা বলছি না যেটা আমার কাছে খারাপ লাগছে আমি সেটাই বলছি। মেয়েটাকে এভাবে টাকা দেখানোর কি ছিলো? মেয়েটা তো টাকা চাই নি’

-‘টাকা চাইতো না তার কি গ্যারান্টি আছে?’

-‘সবাই তার এক না যদি চাইতো তখন দিতি আগ বাড়িয়ে দিতে গেলি কেনো? আর দোষটা কিন্তু দু’পক্ষেরই আমাদের ও তাড়া ছিলো বলে জোরে গাড়ি চালাছিলি আর মেয়েটাও বুঝে উঠতে পারি নাই এভাবে হুট করে গাড়ি চলে আসবে। আর তুই তো এমন ছিলি না কি হলো তোর এমন বিহেভিয়ার করছিস কেনো? জানি তুই রাগি। তাই বলে এভাবে মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে তর্ক?আসলেই কি তুই এটা?’

সামির চুপ মুখে কোনো উত্তর নাই। কি-ই বা উত্তর দিবে নিজেই তো জানে না। একদিনেই দুইবার দেখা হলো তাও ঝগড়া। ব্যাপারটা অদ্ভুত না?

_________________________________

জিমি বাসার কাছে আসতেই। দেখলো বাসার মেনডোর খোলা সাথে সাথে ভ্রু কুচকে এলো। কিছু না ভেবেই বাসায় ডুকে পড়লো। এসেই ঘাবড়ে গেলো রাগের চোটে ভুলেই গেছিলো। এতো রাত করে ফিরলে লিলি লাঠি নিয়ে জিমি জন্য বসে থাকে। ঔ বলে না যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না লিলি লাঠি নিয়ে জিমির সামনে দাঁড়িয়ে আছে জিমি ড্রায়ইং রুমে চোখ বুলাললো না কেউ নেই হয়ত মা-ই থাকতে দেয় নি ধমকে সবাইকে ঘুমাতে পাঠিয়েছে। কিন্তু কেউই ঘুমাইলি লিমন ছাড়া।

-‘কখন বেড়িয়েছিস?’

-‘৬টা’

-‘আর এখন কয়টা বাজে?’

-‘২টো’

-‘বাহ ভালো না ব্যাপারটা। তো বাসায় ফিরলি কেনো? আর কয়েকঘন্টা বাকি মাত্র সকাল হওয়ার ফেরার দরকার ছিলো না’

-‘আম্মু আসলে…..’

-‘হাত পাত’

জিমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে দু-হাত বাড়িয়ে দিলো। বেশিক্ষণ যেতেই কিছু হলো না জিমি চোখ খুলে দেখলো লিলি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। এমন-ই হয় লিলি কখনো মা*রে আবার কখনো না মে*রে চলে যায় না হলে বসে থাকে জিমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে প্লেটে করে খাবার এনে লিলির পাশে বসে একলোকমা মুখের কাছে ধরে বলল

-‘আম্মু হা করো খাইয়ে দি’

লিলি কথা না বলে মুখে নিয়ে নিলো। খাওয়া শেষ হতেই লিলি বলল

-‘এমন করে রাত করে ফিরিস কেনো বলতো টেনশন হয় আমার তোর যদি কেউ ক্ষতি করে দেয়? বুঝিস না তুই ছেলে না মেয়ে ছেলেদের মতো জামা প্যান্ট আর চুল লাগালেই সে ছেলে হয়ে যায় না’

-‘আমি জানি আম্মু আমি মেয়ে কিন্তু আমার এভাবে থাকতে ভালো লাগে আর আমি যদি নরম হই তাহলে সবাই চেপে ধরবে আমরা এখানে ঠিকতে পারবো না। সমাজের অনেকে আছে আম্মু আমাদের সামনেই থাকে ভালোর মুখশ পড়ে আসলেই কি তারা ভালো? সবাইকে এতো বিশ্বাস করো না আম্মু’

-‘জানি আমি তাই বলে পড়াশোনাও করবি না? সারাদিন রাত ই তো টো টো করে ঘুরে ব্যরাস আমাদের নিয়ে ভাবিস কখনো নিজেকে নিয়ে ভেবেছিস তোর কি হবে?’

-‘আমার কিছু হবে না এভাবেই চলে যাবে। আর পড়ছি তো এক্সাম আসলে একটু পড়লে হয়ে যাবে আমার পাশ নম্বর উঠলেই হবে আমার ওতো পড়ে কি করবো বলো তো?’

-‘পড়াশোনা, টাকা ছাড়া এখানে তোকে কেউ চিনবে না সবাই ভুলে যাবে’

-‘যাক চাই না কেউ আমাকে মনে রাখুক’

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে