প্রেমপ্রলয় পর্ব-০২

0
1467

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২

জিমি পিটপিট করে চোখ খুলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো কোথাও কোনো আলোর ছিটে ফোটাও নাই। হাতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো প্রচন্ড ব্যথায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু উঠে বসতে পারছে না। মুখ কিছু দিয়ে বাঁধা কথাও বলতে পারছে না শুধু উহু্ উহু্ শব্দ ছাড়া কিছুই পারছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানি এসে চোখে লাগলো চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে চোখ খুললো জিমি। চোখ খুলে সামি’কে শয়তানি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখলো। নিজের অবস্থান দেখে আর-ও হতভম্ব হয়ে গেলো জিমি চেয়ারে বসা হাত দুইটা সামনের টেবিলে পেরেক দিয়ে বাঁধা আটকানো তা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। সামি জিমির সামনে টেবিল বরাবর চেয়ার টেনে বসলো। হাতে পেরেক আর হাতুড়ি জিমি ভয় পেয়ে যায়। মাথা নাড়িয়ে বারবার বাঁধা দিয়ে না না ইশারা করতে লাগলো। সামি শুনলো না বলল

-‘বলেছিলাম না হাত গুড়ো করে দিবো এই হাত দিয়ে তুই সামির কলোয়ার টেনে ধরছিলি তাই না? দেখ তোর হাতে কি অবস্থা করি’

সামি জিমির হাতের ওপর একটা পেরেক রেখে হাতুড়ির বারি দিতেই। জিমি গলা ফাটানো চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে নিজের হাতের এপিট ওপিট দেখে বুকে জড়িয়ে ধরলো। জিমির চিৎকার শুনে বাসার সবাই দৌড়ে জিমির বদ্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মিলি বলল

-‘জিমি কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করলি কেনো? জিমি দরজা খোল’

জিমির মা চিন্তিত গলায় বললেন

-‘জিমি কি হলো দরজা খুলছিস না কেনো? কথা বলছিস না কেনো? জিমি, এই জিমি, কি হলো দরজা খোল’

-‘এই জিমিআপু কই তুই দরজা খোল’

সবাই ডাকাডাকি করতে লাগলো। জিমি এদিকে ঘেমে নেয়ে একাকার কথা বলার অবস্থা তেই নেই যেনো। বিরবিরিয়ে বলতে লাগলো ‘কি ভয়ংকর স্বপ্নটা’

জিমি নিজেকে সামলিয়ে গ্লাসে থাকা পানিটা ঢকঢক করে খেয়ে বলল ‘আমার কিছু হয় নি আমি ঠিক আছি যাও তোমরা’

জিমির মা বলল ‘ঠিক আছিস মানে? ঠিক থাকলে কেউ এমন চিৎকার দেয়? দরজা খোল আমি দেখবো তোকে’

জিমি কথা না বাড়িয়ে দরজা খুলে দেয়। ও জানে দরজা না খুললে জিমির মা-ও নড়বে না ওখান থেকে। দরজা খুলে দিতেই সবাই হুড়মুড়িয়ে রুমে ডুকে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে সন্দেহজনক কিছু না দেখতে পেয়ে জিমির মা চোখ ছোট ছোট করে বলল

-‘ওমন করে চিৎকার দিলি কেন?’

জিমির দাদি ফোড়ন কেটে বলল

-‘ওর আবার কি হইবো দেখতাছনা এই ছেরি ঠিক ঔ আছে খালি আমাগো চিন্তায় ফ্যালোন যায় কেমনে সেই ফন্দি আঁটে হেরে আমি খুব ভালা কইরা চিনি’

জিমিও ওর দাদির মতো করে বলল

-‘হ হ বুড়ি তুমি আমারে চিইনয়া উল্টায় ফ্যালছো খালি উল্টাফাল্টা কথা কও ক্যান’

-‘এই ছেরি তুই আমারে একদম কফি করবি না কইয়া দিলাম ভালা হইবো না কইয়া দিলাম’

-‘ক্যান বুড়ি ঠুমি আমারে আবার কি করবা? আর তোমারে কফি করতে আমার বইয়ায় গেছে’

জিমি মা রেগে বললেন

-‘আহ জিমি কি হচ্ছেটা কি?’

জিমি আফসোস সুরে হেয়ালি করে বলল

-‘আমার কি আবার হইবো আমার মরণ হইবো তোমাগো জ্বালায়’

লিমন, মিলি এতোক্ষণ জিমির কাজে মজা নিলেও মরার কথা শুনতেই মুখ থেকে হাসি উড়ে গিয়ে আঁধার নেমে আসে। জিমির দাদিও মুখ গম্ভীর করে বলল

-‘এই ছেরি মরণের কথা কস কেন? আমার বুক খান কেমন কইরা ওঠে’

-‘ক্যান আমি মরলে তো তোমাগো ভালা হইবো আমার জন্য কত কি শুননো লোকের কাছে আমি না থাকলে তো আর কারোর কাছে কথা শুনোন লাগবো না’

জিমির মা লিলি জিমিকে হঠাৎ বুকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে বলল

-‘মা’রে তুই কি আমার ওপরে রাগ করে কথাগুলা বলছিস? তোকে বকি বলে তুই এসব বলবি? আমার কষ্ট হই জানিস না তোরা এই ক’জন ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো তোরাই তো আমার সব’

জিমি মায়ের বুকে গুটিগুটি হয়ে বলল

-‘আম্মু আমি তো মজা করে বলেছি ডোন্ট বি সিরিয়াস আম্মু আমি আছি আর থাকবো, মরে গিয়েও ভুত হয়ে থাকবো কোথাও যাবো না’

মিলি জিমির বাহুতে চাপড় মেরে বলল

-‘সবসময় ফাইজলামি তাই না বিয়াদপ একটা’

-‘হু আর ইউ? ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে আপনি তো জামান সাহেবের প্রথম বড় কন্যা সন্তান কনেবউ কেমন আছেন আপনি?’

-‘আম্মু দেখেছ তুমি সবসময় ভাল্লাগে না আমাকে পর করে দিচ্ছো থাকো তোমরা আমি আর আসবোই না তোমাদের কাছে’

কথাটা বলে রাগে গজগজ করতে করতে দুপদাপ পা ফেলে চলে গেলো মিলি। মিলি যেতেই জিমির মা লিলি বলে উঠলো

-‘ওর পিছনে না লাগলে হয় না তোদের আর ক’দিন পরে চলে যাবে মেয়েটা’

জিমিরও মন খারাপ হয়ে গেলো। লিলি টেবিলের ওপর খাবারগুলা দেখে রেগে বলল

-‘দুপুরের খাস নাই এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে না খেয়ে খেয়ে কি অবস্থা করছিস নিজের দেখেছিস একবার আয়নায়?’

-‘আম্মু যাও আপুকে খাইয়ে দিয়ে আসো আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিচ্ছি এতো টেনশন করা লাগবে না আমাকে নিয়ে’

_________________________

জিমি ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে দেখলো লিলি ভাত মেখে জিমির জন্য অপেক্ষা করছে জিমি মুচকি হেসে খেতে বসলো মিলিও লিলির অন্য পাশে বসে আছে। লিমন আর দাদি বসে টিভি দেখছে।
জিমি খেতে খেতে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো বন্ধুমহল থেকে কতগুলো ফোন। জিমির ভ্রু কুচকে গেলে সাথে সাথে কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে সবুজ চিল্লিয়ে বলল

-‘ঔ হা/রা/মি মাইয়া তোর কাছে কতবার ফোন দিয়েছি সে খেয়াল আছে তোর? আবার তোর বাসায়ও যেতে পারছি না এসব ফেলে’

জিমি ভাতগুলো পানি দিয়ে গিলে বলল

-‘কেনো? কি হয়েছে? এতো জরুরি তলব যে’

-‘আরে বস কি হইনি সেটা বলল লটারি লেগে গেছে বইন তুই তাড়াতাড়ি বানানিতে চলে আয়’

-‘ওখানে কেনো? তাও আবার এখন? আগে বল হয়েছেটা কি?’

-‘বাইক আর সাইকেল স্ট্যান্ড/রেস প্রতিযোগিতা জিততে পারলেই ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার যেহেতু তোর টাকার প্রয়োজন আর আজ-ই কাগজ পত্র জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট আমি সব জমা দিয়ে দিছি তোর শুধু একটা সই লাগবে তারাতাড়ি চলে আই ১০ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে’

জিমি তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে বলল

-‘বলিস কি দোস্ত আমি এখনি আসছি এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে আমি ঠিক পৌঁছে যেতে পারবো’

লিলি প্রশ্ন করলো

-‘কি হয়েছে এখন আবার কোথায় যাবি?’

-‘আম্মু আমাকে এখনি বের হতে হবে আমার আসতে রাত দেরি হবে আমাকে নিয়ে টেনশন করো না আমি ঠিক থাকবো’

লিলিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঝড়ের বেগে রেডি হয়ে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো লিলি বাঁধা দিলেও শুনলো না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে