প্রেমপ্রলয় পর্ব-০১

0
2421

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
সূচনা পর্ব

শার্টের প্রথম দু’টো বোতাম খুলতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দের জিমি পিছন ফিরে নিজের রুমে অপরিচিত সুদর্শন পুরুষকে দেখে ঘাবড়ে গেলো। জিমি নিজের দিকে তাকিয়ে শার্টের কলার দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে আবার ও সুদর্শন পুরুষটির দিকে ভীতু দৃষ্টিতে তাকালো। সুদর্শন পুরুষটিও জিমির দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। জিমি যেই না গলা ফাটানো চিৎকার দিতে যাবে ওমনি ছেলেটি এসে জিমি’র মুখ চেপে ধরে শ্বাস টেনে বলল

-‘আর ইউ ম্যাড? কোনো কমন সেন্স নাই আপনার এই ভরা বাড়িতে আপনি চিৎকার দিতে যাচ্ছিলেন? কি হতো এখন সবাই ছোট জিনিসটাকে তিল থেকে তাল বানাতো!’

জিমি ছেলেটার স্পর্শে বরফের মতো স্থির হয়ে জমে যায়। ছেলেটার কথা শুনে জ্ঞান আসতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে ঝটপট বোতাম লাগিয়ে ছেলেটার সোজাসোজি হয়ে দাড়িয়ে রেগে বলল

-‘আপনার কমন সেন্স নাই কারোর রুমে আসতে গেলে তার পারমিশন নিতে হয়। তা-ও একটা মেয়ের রুম!’

-‘ও হ্যালো মিস ওয়াট? কি বললেন আপনি?’

জিমিকে পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করে ঠোঁট বাঁকিয়ে আবারও বলল

-‘আপনি মেয়ে? কই আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না’

জিমি রেগে জোরে বলল

-‘You Shurtup! আপনার সাহস তো কম না আমার রুমে দাঁড়িয়ে আমাকেই উল্টো পাল্টা কথা বলছেন?’

-‘এই! You Just shurtup! ওকে তোমার মতো ফালতু মেয়ে আমাকে এই সামি’কে চোখ রাঙিয়ে গলা উঁচু করে কথা বলছো? হাও? I kill…!’

সামির কথা শেষ হওয়ার আগে দরজায় আস্তে আস্তে টোকা পড়লো। জিমি রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সামি জিমির হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল

-‘এই stupid! আ..!

জিমি এবার ভয়ানক রেগে গেলো। রেগে সামির কলোয়ার টেনে ধরে বলল

-‘সেই First থেকে দেখে আসছি আপনি আমাকে। ম্যাড, স্টুপিট বলেই যাচ্ছেন কিছু বলছি না দেখে আর-ও বলছেন’

জিমি সামির কলোয়ার টেনে ধরায় সামিও রেগে গেলো। এক ঝটকায় জিমির হাত কলোয়ার থেকে সরিয়ে হাত মুচড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘এই হাত আমি ভেঙ্গে গুঁড়ো করে ফেলবো। আর আপনি যা আমি সেটাই বলছি কোন সেন্স নিয়ে আপনি দরজা খুলতে যাচ্ছিলেন?’

জিমি নিভলো। মনে মনে বলল ‘সত্যিও এখন যদি আমাদের দু’জনকে একসাথে একরুমে বাইরের লোক দেখে ব্যপারটা খারাপ দেখায়’

আবারও দরজায় টোকা পড়লো। দরজার ওপাশ থেকে জিমির ছোট ভাই লিমন ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো।

-‘আপু দরজা খোল তোর রুমের ওয়াসরুমে সামি ভাইয়া আছে মিলিপুর দেবর’

লিমনের কথাটা কানে শ্রবন হতেই জিমির রাগী দৃষ্টি আস্তে আস্তে ভীতি দৃষ্টিতে পরিনত হলো। সামির দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায় দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে চারিদিকে এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের হাত বলিষ্ঠ হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সফল হলো না সামি তীক্ষ্ণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিমির দিকে জোরে জিমির হাত ধরে রাখছে যেনো নিজের সব রাগ জিমির হাতের ওপর ঝাড়ছে। জিমি হাতে তীব্র ব্যথায় টনটন করছে কিন্তু সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো কেননা এমন ব্যথা সে প্রতিনিয়ত পেয়ে থাকে তার মাথায় চলছে অন্য চিন্তা মনে মনে বলল ‘আপুর বিয়েটা যদি আবারও আমার জন্য ভেঙে যায় তবে কি হবে? সবাই কষ্ট পাবে না না কিছুতেই এটা হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই না’

জিমি এবার চোখ ছলছল করে তাকিয়ে বলল ”Sorry!’

সামি জিমির মুখে সরি শব্দ শুনে দমে গেলো। জিমির দৃষ্টি নত করে আছে। নিজের দূর্বলতা কাউকে দেখাতে চাই না। সামি জিমির হাত ছেড়ে দিয়ে বলল

-‘ Next time আমার সাথে লাগতে আসবে না। ব্যাপারটা খুব একটা শুভকর্ম হবে না তোমার প্রাণটাও যেতে পারে।’

সামির কথার প্রেক্ষিতে জিমি কিছুই বলল না কেননা এখানে আপুর হবু দেবর না থেকে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে জিমি তাকে এতোক্ষণে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলতো।

সামি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো লিমন দরজার সামনেই দারিয়ে ছিল। লিমন সামিকে দেখে সৌজন্যে মূলক হাসি দিলো। কিন্তু সামির মুখ গম্ভীর লিমন কিছু মনে করলো না কেননা সামি আসার পর থেকেই মুখ এমন গম্ভীর করে আছে। সামি ভাবলো সব ঠিক আছে এখনো জিমি আসে নি নিজের মনে কথা সাজিয়ে ড্রাইংরুমের উদ্দেশ্য পা এগিয়ে নিতেই। রুমে ভিতর থেকে জিমির কন্ঠ ভেসে আসলো লিমন থমকালো দৌড়ে রুমে ভিতরে চলে আসলো জিমিকে দেখে বলল

-‘আপু তুই? কখন আসলি?’

জিমি রেগে বলল

-‘যখন আপনি আমার রুমে ছেলেটাকে রেখে চলে গেছিলেন তখন’

লিমন ভীতু গলায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বলল

-‘আপু আসলে সামি ভাইয়ার গায়ে জুস পড়েছিল আর আম্মু আমাকে ডেকেছিলো তাই…’

-‘তাই কি? হ্যাঁ? আর কোনো ওয়াশরুম ছিলো না? এবার যদি এই ছেলে কাউকে কিছু বলে দেয় তাহলে তো আপুর বিয়ে ভেঙে যাবে!’

জিমির কথায় লিমনও বেশিক্ষণ ভয় পেলো। এটা প্রথমবার নয় এর আগের বারও জিমিকে দেখে পাত্রপক্ষ বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে গেছে। আজ ছিল জিমির বড়বোন মিলির পাকাদেখা এনংঙ্গেজমেন্ট বাংলায় যাকে বলে আংটি বদল। জিমি লিমন বেশি কিছুক্ষণ নিরব হয়ে বসে রইলো ড্রায়ংইনরুম থেকে চিল্লাপাল্লা আওয়াজের অপেক্ষায় কিন্তু বেশিক্ষণ যাওয়ার পর ও তেমন কিছুই হলো না। জিমি লিমন মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। নিরবতা ভেঙে জিমি বলল

-‘যা দেখে আয় তো সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না’

লিমন বিনাবাক্যে এদিক-ওদিক মাথা নাড়িয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান করলো। জিমির আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে। মাথা ব্যথা করছে, চোখ দু’টো ঘুমে ভেঙ্গে আসছে। জিমি আর কিছু ভাবতে পারছে না ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ-মুখে পানি দিলো তা-ও ক্লান্তি কমছে না। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে পানির নিচে দাঁড়িয়ে পড়লো। মাথায় ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেতেই যেনো শান্তি পেলো।

মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে রুমে আসতেই। লিমনকে খাটের ওপর পা দুলিয়ে রিল্যাক্সে আংঙ্গুর খেতে দেখে জিমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল

-‘কি হয়েছে সব ঠিকঠাক তো’

-‘ইয়েস বস। আমার মনে হয় সামি ভাইয়া ব্যপারটা ধরতে পারি নাই যে তুই মিলি আপুর বোন’

জিমি সস্থির শ্বাস নিলো। রুমের জানালার পর্দা গুলা টেনে দিতে দিতে বলল

-‘তা আমার রুমে কি করিস ঢ়া দূর হ আমি এখন ঘুমাবো কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে’

লিমন উঠে দাড়িয়ে যেতে যেতে বলল

-‘যাচ্ছি যাচ্ছি সবসময় দূর দূর করে তাড়িয়ে দিস কেন? তোর রুমে আসছি কি স্বাদে আম্মু তোর জন্য খাবার পাঠিয়েছে খেয়ে নে’

লিমন রুম থেকে যেতেই জিমি ধড়াম করে রুমের দরজা আটকে দিলো। এতে লিমন লাফিয়ে উঠলো।

জিমি খেলো না খাবারটা ডেকে রেখে শুয়ে পড়লো। মাথায় চিন্তারা এলোমেলো হয়ে হানা দিলো। জিমি মনের সাথে এলোমেলো হয়ে কথা বলতে লাগলো ‘এই কষ্টের অবসান কবে হবে? আদেও কি হবে? সুখের সন্ধান কি মিলবে কখনো? আপুর বিয়ের এতো খরচ কিভাবে জোগাড় হবে? আমি তো আপুর বিয়েতে থাকতে পারবো না। ইশশ কত ইচ্ছে ছিল আপুকে ধুমধামে বিয়ে দিবো বিয়েতে সবকাজ নিজের হাতে করবো। কিন্তু সেসব কিছুই হবে না।’

জিমি ঘুর্নিয়মান ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল ‘তুমি আমার ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারলে? আমার বুঝি ক্লান্তি, কষ্ট, মান-অভিমান কিছুই নাই? আমাকে কি যন্ত্রমানব মনে করে সবাই? আমিও তো মানুষ না-কি! আমার ও অভিমান রাগ কষ্ট হয়?’

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে