#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগীতা_২০২০
চিঠি নং:০৩
প্রিয় আম্মু,
বলতে পারছিনা কেমন আছো,কারণ আমার প্রতিটি লোমকূপ ও অনুভব করতে পারে কেমন থাকতে পারো তুমি।তোমার ঠোঁটে ফুটিয়ে তোলা কৃত্রিম হাসির সাথে আমি খুবই পরিচিত।তাহলে কেনই বা শুধু শুধু বলবো কেমন আছো,হয়তো সেটা কে উপহাস উপাধি দিবে আমার বিবেক।
একাকিত্ব ও অসহায়ত্বের বেড়াজালে যখন ব্যথিত তুমি আমি দু’জন দুজনের স্মরণে,প্রতিটি রাতে উষ্ণতার তৃষ্ণায় শূন্য বিছানায় যখন ছটফট করে দুটি প্রাণ তখন কি নিঝুম রাত্রি ও তাদের সাথে টুপটাপ কাঁদে না?
ফোনের দুই প্রান্তে যখন দুই অভিনয় কারী ভালো থাকার অভিনয়ে নিপুণ দক্ষতার পরিচয় দেয়,নিশুতিরাতে বিধাতার সন্তুষ্টি পেতে যখন একটা ছোট্ট প্রাণ স্নিগ্ধ চোখের বৃষ্টি সাথে দুই হাত তুলে বলে,”ভালো রেখো তাকে,সে আমার জন্যই আত্মসুখত্যাগী,
মায়াময়ী,মহিয়সী সে আমার মা।যেদিন তোমার দয়া হবে অমানিশার কাল এর সমাপ্তি ঘটিয়ে ফিরিয়ে দিয়ো আমার বুকে।”ছোট্ট প্রাণের মুখ চাপা আর্তনাদে বিধাতার আরশ কি কেঁপে উঠেনা?
হয়তো চোখ ছাপিয়ে জল আসে আশেপাশের দৃশ্য অদৃশ্য কীটপতঙ্গের ও।কিন্তু বিধাতার মন গলে না।কারণ তিনি যে মহান,পরীক্ষা নেন বান্দাদের।
জানো আম্মু তোমার জন্য খুব অভিমান জমিয়ে রাখি।একা একা তোমার সাথেই ঝগড়া করি।ভীষণ রাগ করি।কিন্তু আবার নিজেকেই নিজে শান্তনা দিই।
যখন তুমি আমার কাছে থাকো আমার একটুও অভিমান থাকে না।আমার মন চায় না আমি তোমাকে কোন ব্যাথা শেয়ার করি কারণ তোমার ব্যাথাগুলোই তো আকাশসম।আমি নিজেই তোমার ব্যাথাগুলোর ভাগ নিতে চাই।কখনো বলা হয়নি তোমাকে এ কথাটা।কারণ বলতে গেলেই নিজেকে আটকাতে পারবো না খুলে যাবে আমার কৃত্রিমতার মুখোশ।হয়তো তুমিও ঢেকে রাখো নিজেকে কৃত্রিমতার আড়ালে।
কিন্তু আমি ভালো আছি আম্মু,সত্যি বলছি আমি ভালো আছি।জানো তো তুমি, অপেক্ষার ফল মিষ্টি তাই আমি অপেক্ষা করি।এক অথবা দুই মাস অপেক্ষার পরে যখন তোমাকে পাই কাটানো মূহুর্তগুলো ভীষণ ভাবে উপভোগ করি আমি।সবসময় তোমাই পেলে হয়ত এই মূহুর্তগুলোর এতটা মূল্য তা বুঝতাম না।
তোমার বুকে মাথা রেখে শুলে আমি স্বর্গে বিচরণ করি।তোমার কোলে মাথা রেখে যখন আকাশ দেখি মনে হয় ঐ আকাশ এর মতোই বিশাল তোমার স্নেহ ভরা হৃদয়।
সবচেয়ে কষ্ট হয় কখন জানো,চলে যাবার সময় যখন তোমার হাতের বাঁধন থেকে আস্তে আস্তে আমার হাত টা ছেড়ে দাও,আসি আম্মু নিজের খেয়াল রেখো বলে প্রায় ছুটে চলার মতো যাও আর পিছু ফিরে চাওনা।যদি তুমি পিছু ফিরে দেখতে আমার বেঁধে রাখা অবাধ্য দুচোখের আছড়ে পড়া,তবে কি আর সামনে এগোতে পারতে,পা দুটো আটকে যেতোনা তোমার?
খুব ইচ্ছে করে সেখানকার কেবিনের একপাশের একটা বেডে রোগী হয়ে থাকতে।যেন মাঝে মাঝে এসে তুমি মাথায় হাত রেখে আমার খবর নিয়ে যাও,দেখে যাও আমাকে আর আমি দেখি তোমার হাসিমাখা মুখখানা। কিন্তু সেটাও তো ঘটেনা।দূর্ভাগ্য আমার।
তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো,মাঝে মাঝে আমার ডাইরির পাতা কাটা থাকে কেন,কেন পুরোনো ডাইরি গুলো আর খুজে পাওয়া যায় না?
তোমাকে তো সামনে থেকে এড়িয়ে যাই,কিন্তু ডাইরিতে আমার অনুভূতিগুলো না লিখলে যে আমার দম আটকে যায়।আমার তো প্রকাশ করার জায়গা নেই।আর সেসব আমি চাইনা কারোর সামনে আসুক তাই আড়াল করে ফেলি।
খুব অভিমান ঐ মহান বিধাতার উপর।কবে কাটবে এই অমানিশা কবে ফেরা হবে আমাদের সুখের ঘরে?
একটা কুড়ে ঘরে মলিন বিছানায় তুমি আমি পাশাপাশি,
পিছনে ফেলে আমাদের সকল বিষন্ন স্মৃতি।সামনে এগোবো সাফল্য ও উন্নতির পথে।
হ্যাঁ একদিন ঠিক আসবে আমাদের সমৃদ্ধি।
সেদিন আমাদের জীবন হবে শরৎ আকাশের মতো।দেখে নিও তুমি।
ততদিন না হয় ব্যথা দেওয়া নেওয়া হোক আকাশের ঠিকানায়।
ইতি
তোমার শরৎ আকাশ