#প্রিয়_অভিমান
পার্ট: ৩
লেখা: নিশাত সিদ্দিকা
‘
পার্টি শেষে বাসায় আসতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া
এসে হাজির হলেন।উনাকে দেখে আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম ,উনার চোঁখ দুটি ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে আছে , দেখে ভয়ে আমি ঘাঁমতে লাগলাম।আজ যা সাহস দেখিয়েছি তার জন্য উনি যে আমায় কি শাস্তি দেন সেটা উনিই ভালো জানেন,ভালোই ভালোই বাসায় চলে যেতে পারলেই বাঁচি।
আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে কাব্য ভাইয়ার চোঁখের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় ভস্ম হয়ে যাবো ।
উনি বারবার যে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন আমার দিকে।
ভয়ে আমার প্রান যায় যায় অবস্তা।
মাকে তাড়া দিতে লাগলাম বাসায় ফিরার জন্য।
কিন্তু মা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে কাব্য ভাইয়া কি বলতে চাইছেন সেটা শুনতে লাগলেন,
উনি মাকে অত্যন্ত মিষ্টি ভাষায় বলতে লাগলেন,
অনেক রাত হয়ে গেছে আমরা যেন এখানে থেকে যাই,
মা বললেন সুহার বাবা বাসায় একা রয়েছেন থেকে গেলে হবে না।
এটা শুনে উনি বললেন তাহলে এতো রাতে আমাকে নিয়ে যাওয়া
ঠিক হবে না আমাকে যেন এখানে রেখে যান,
উনার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম,
আমি চাইছি সিংহের গুহা থেকে বের হয়ে যেতে ,
আর সিংহ কিনা গুহার পথ আগলে দাঁড়তে চাইছে।
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম আমি এখানে কিছুতেই থাকেবোনা ।উনি যে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাখতে চাইছেন সেটা আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া আমার দিকে রক্তচুক্ষু
নিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
বড়দের কথার মাঝে যেন নাক না গলাই ,বড়রা যা ডিসাইড করবে সেটাই হবে।
আমার মা আবার ওল্ড ফ্যাশনের উনি জীন,পরি এগুলিতে ভীষন ভাবে বিশ্বাস করেন ,কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে এখানে রেখে যাবেন ,আমার মায়ের চোঁখে আমি বিশ্বসুন্দরী তাই উনি আমাকে নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকেন ,বলাতো যায় না উনার এতো সুন্দর মেয়ের উপর আবার কখন কিসের নজর লেগে যায়।তার সাথে যোগ দিলেন আমার
বোন ও সেও নাকি আমাকে এতো রাতে যেতে দেবে না।
আমি অনেক করে কাকুতি মিনতি করলাম আমি এখানে থাকবো না কিন্তু আমার মা জননি আমাকে সিংহের গুহায় রেখে চলে গেলেন।
মা চলে যেতেই কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে চলে গেলেন ,যে তাকানোর মানে ছিল আমার আর রক্ষা নেই।
ভেবেছিলাম বাড়িতেই তো চলে যাবো শাস্তি দেওয়ার জন্য সে আর আমাকে পাচ্ছে কোথায়।শেষ পরিনতিটা যে এমন হবে আমি ভাবতেই পারিনি।
উনার এমন তাকানো দেখে আমি একটা শুকনো ঢুক গিললাম।
।
অনেক রাত হয়ে গেছে রুমে আসলাম ,
শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন কাব্য ভাইয়ার স্পর্শ শরীরে লেগে আছে গা ঘিন ঘিন করছে শাওয়ার না নিলে শান্তি পাবো না।
হারামজাদাটার জন্য এতো রাতে ও গোসল করতে হচ্ছে ,
কাব্য ভাইয়াকে হাজারটা গালি দিতে দিতে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম।
শাওয়ারে যাওয়ার পর পানি লেগে ক্ষত জায়গাগুলিতে অনেক জ্বালা করলো সেগুলো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলাম।
।
শাওয়ার সেরে ভেজা চুলগুলো শুকাচ্ছি আর ভাবছি।
কাল কাব্য ভাইয়ার সাথে দেখা হওয়ার আগেই বাসায় চলে যাবো।কিছুতেই উনার সামনে পরা যাবে না।
মনে মনে প্ল্যানিং করতে লাগলাম কিভাবে কাব্য ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাবো।
এই সবই ভাবছি হঠাৎ দরজায় নক হওয়ার শব্দে আমার ভাবনায় ছেদ পরলো।
আমি শব্দ শুনে চমকে উঠলাম,
এতো রাতে কে এসেছে,নিশ্চই আপু কোনো দরকারে এসেছেন তাছাড়া এতো রাতে কে হবে?
কাব্য ভাইয়া নিশ্চই এতো রাতে আমাকে শাস্তি দিতে আসবেন না।
দরজার মাঝে ক্রমাগত নক হচ্ছে ,
হয়তো জরুরি কিছুর জন্য আপু ডাকছেন
,আমি দ্রুত উঠে দরজা খুলতে লাগলাম।
দরজা খুলে আমি অবাক ,কাব্য ভাইয়া একটি নীল টি শার্ট আর হোয়াইট কালারের থ্রি কোটার পরে দরজার ওপারে দাড়িয়ে রয়েছেন।
কি যে সুন্দর লাগছে উনাকে দেখতে ,যে কোনো মেয়ে উনার এমন সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য ।
মুখেএমন একটা ইনোসেন্ট ভাব রাখে দেখে বুঝারই উপায় নেই যে এই ছেলে শত শত মেয়ের সাথে প্রেম করে আর সে এতোটা বদ রাগী।
উনার এমন স্বভাবের জন্য উনার এমন মনমুগ্ধ করা
সৌন্দর্য কখনই আমায় আকর্ষিত করে না।
না হলে নির্ঘাত আমি এই ছেলেটার প্রেমে পরে যেতাম।
উনাকে দরজা ওপাশে দেখে আমি আতংকিত হয়ে পরলাম যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।এই প্রবাদটা হুবোহুব আমার সাথে মিলে গেল।
যেই দরজাটা লক করতে যাবো ,
উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলেন।
উনার এমন কান্ডে ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।
উনি আমার বিছানায় আয়েশী ভঙ্গিতে পায়ের উপর
পা তুলে বসে পা নাচাতে লাগলেন,
আমি রুমের এককোনে দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে চোরা চোখে
উনাকে দেখতে লাগলাম,
উনি আমার দিকে তাকিয়ে খোশ মেজাজে পা নাচিয়ে নাচিয়ে বলতে লাগলেন,কি ভেবে ছিলে আমাকে অপমান করে আমার নাকের ডগা দিয়ে নাচতে নাচতে বাসায় চলে যাবে আর আমি কিছু করতে পারবো না।
এই কাব্য মেহরাবকে তুমি চিনতেই পারো নি সুহারানী।
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভয়ংকর হাসি দিলেন ।
যেটা দেখে আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো,
উনি দাড়িয়ে গেলেন ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,
সেটা দেখে ভয়ে আমি চোঁখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
‘ভাইয়া!ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে এইবারের মতো ক্ষমা করে দাও !!এই জীবনে তোমাকে অপমান তো করা দূরের কথা তোমার সামনেই কখন আসবো না।
বলেই চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম ভয়ে তাকানোর সাহসই পাচ্ছিনা ।
হঠাৎ ঠোঁটে হাতে স্পর্শ পেয়ে চোঁখ খোলে তাকালাম,
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।
উনাকে এভাবে আমার এতো কাছে দেখে ভয়ে আমার মাথা ঘুরছে,আমি কাতর চোখে উনার দিকে তাকালাম ,
আমার তাকানো দেখে আমার মুখ চেপে ধরে রেখেই ব্রু কুচকে বলে উঠলেন,
‘এই মেয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা এতো চিৎকার করে বলার কি হলো ,তোমার এতো সাহস আমাকে কালা ভাবো,এখনতো আরো একটা শাস্তি এড হলো,আচ্ছা তোমার কি ধারনা আমি কানে কম শুনি,
উনার এমন কথা শুনে আমি চোঁখ বড় বড় করে দু দিকে মাথা নাড়তে লাগলাম যে এমটা আমি কখনই ভাবি না।
আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে উনি বলতে লাগলেন,
‘আমার শর্ত মানলে তোমার শাস্তি কিছুটা কমতে পারে।
আমি উনার কথা শুনে কিছু না ভেবে দ্রুত বলে উঠালম,
‘আমি তোমার সব শর্তে রাজি প্লিজ আমার সাথে উল্টোপাল্টো কিছু করো না।
আমার কথা শুনে উনি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললেন,
‘যা বলছো ভেবে বলছো তো?
ভাবা ভাবির কি আছে রে রাক্ষস আমি তো ভালোভাবেই জানি তর শর্ত মানলেও আমি বিপদে পরবো না মানলেও বিপদে পরবো ।শর্ত মেনেই বিপদে পরি তাহলে হয়তো শাস্তির মাএা কিছুটা কম হতে পারে।আমি যে আজ বাজে ভাবে ফেসে গেছি সেটা ভালোই বুঝতে পারছি ।
এখন মাথা ঠান্ডা রেখে উনার কথা শুনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নি:শ্বাস নিয়ে বললাম ,
‘হ্যা আমি তোমার শর্ত মানতে রাজি।
‘ওকে ! আমার শর্ত হলো আমি যা যা বলবো সেটাই তোমাকে করতে হবে।কোনো প্রশ্ন না করে।
বলেই উনি খাটে গিয়ে হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে পরলেন,
উনার এমন কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম উনি কি আজ আমার বিছানায় শুনবেন ,
এটাই কি উনার শর্ত ছিলো।
হায়!হায়! একি ভুল করে ফেললাম শর্ত মেনে।
আমি ভয়ে ভয়ে উনার কাছে গিয়ে অনুনয়ের সুরে বললাম,
‘ভাইয়া আমাকে কি করতে হবে?
আমার কথা শুনে উনি বলে উঠলেন,
‘আমার পা টা একটু টিপে দাও তো সুহা ।ইশ!ভীষন ব্যাথা করছে।
উনার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো।
আমি উনার কোন জন্মের চাকরানি যে উনার পা টিপে দিবো।
এটা শুনে রাগে আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে।
আমি রাগি রাগি দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
‘কি হলো কথা কানে যায় না ,
কি আর করা এখন মাথা গরম করলে চলবে না ভালোই ভালোই এটাকে বিদায় করলে বাঁচি।
এক রাশ বিরক্তি লাগা নিয়ে উনার পা টিপটে লাগলাম ,
আর মনে মনে উনাকে অভিশাপ দিলাম,
তর জীবনেও বিয়ে হবে না,তর কপালে বউ ঝুটবে না,
তর সব গার্ল ফ্রেন্ড তকে চ্যাকা দিয়ে চলে যাবে, তুই সারা জীবন দেবদাস হয়ে ঘুরবি।
মনে মনে উনাকে বকছি আর পা টিপে দিচ্ছি।
পা টিপতে টিপতে হাত ব্যাথা হয়ে গেল।
তাতে উনার কোনো হেলদোল নেই উনি মহা শুয়ে শুয়ে ফোন
টিপছেন।
তারপর আমাকে দিয়ে কফি বানিয়ে আনালেন ।
ইচ্ছে হচ্ছিল কফিনে বিষ মিশিয়ে দেই ।
উনার চুলগুলো ও টেনে দিতে হলো।
সমস্ত চুল ছিড়ে উনাকে নেড়া বানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল।
আমার জন্য নাকি পার্টিতে খেতে পারেনি,
এখন খেতে ইচ্ছে করছে ,নিচে গিয়ে খাবার গরম করে আনতে বললেন।
দাঁতে দাঁত চেপে উনার সব কথা মেনে চলছি।
নবাবের মতো হুকুম করছে আর আমি চাকরানির মত
সেটা পালন করছি।
সব কাজ করে উনার দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বললাম,
ভাইয়া অনেক রাত হয়ে গেছে আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে,
আমার কথা শুনে উনি বলে উঠলেন,
ঘুম পাচ্ছে তো মেঝেতে ঘুমিয়ে পরো ,আমি আজ এই বিছানা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
উনার কথা শুনে আমার সমস্ত ধৈর্য ভেঙ্গে গেল,
আমি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলাম ,
এবার কিন্তু তুমি সব কিছু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো,
আমার কথা শুনে উনার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল,
রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে,আমার কাছে এসে
আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন উনার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে ,
আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম যতই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ততই উনি শক্ত করে চেপে ধরছেন।
ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না ,
উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কটমটিয়ে বলতে লাগলেন,
‘তখন আমার রুমে আমাকে কি বলেছিলে তোমাকে কোন অধিকারে আমি টাচ করি।কিসের অধিকারে আমি তোমাকে উপদেশ দেই।আমার অধিকার নেই তাহলে কার আছে ,যেই অধিকার দেখাতে আসবে তাকেই আমি খুন করে ফেলবো।আর কি যেন বলেছিলে ,
আমি যেন আমার সীমার মধ্যে থাকি,নিজের সীমা যেন না ছাড়াই ।
আজ আমি তোমাকে দেখাবো সীমা ছাড়ানো কাকে বলে,
বলেই উনি আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট মিশিয়ে দিলেন ,
এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম।
যতই নিজেকে বাঁচানো চেষ্টা করতে লাগলাম ততই উনি আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরতে লাগলেন।
যেন উনার সমস্ত রাগ আমার ঠোঁটের ওপর মিটাতে লাগলেন।
আমি কিছুতেই উনার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারলাম না।
উনি উনার কাজ শেষ করে ধাক্কা দিয়ে আমায় বিছানায় ফেলে দিলেন।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,
‘শেষ বারের মতো অনাধিকার চর্চা করে গেলাম।
কালকের পর থেকে শুধু অধিকার ফলাবো ।কালকের পর থেকে পৃথিবীতে আমার থেকে বেশী অধিকার তোমার উপর কারো থাকবে না।
বলেই উনি হনহনিয়ে চলে গেলেন।
আর আমি ছলছল চোঁখে শূণ্য মস্তিস্ক নিয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
(চলবে)