Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় অভিমান পর্ব-২৫+২৬

প্রিয় অভিমান পর্ব-২৫+২৬

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-২৫|

রুহানি শুকনো পাতাগুলো পদতলে পিষে আনমনে হাঁটছে। হটাৎ করে ওর কানে মরমর শব্দ ঝড় তুলছে। রুহানি ঝরে পড়া শুকনো পাতার দিকে তাকাল। নিজেকেও ওর আজকাল তাই মনে হয়। স্বচ্ছ পানির দিকে চেয়ে সিড়িতে বসে পড়ল।

কিছুক্ষণ পর ফালাক হন্তদন্ত হয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াল। ফালাককে দেখে ওর ধ্যান ভাঙলো।
“তুমি এখানে বসে আছো আর আমি তোমাকে কখন থেকে খুঁজছি। ফোন করছি রিসিভও করছো না।”

রুহানি তখনও কিছুটা আনমনে কিছু ভাবছে।
“ওহ, আসলে খেয়াল করি নি।”

ফালাক রুহানিকে ভালো করে দেখল। মুখটা শুষ্ক, চুলগুলো এলোমেলো, চোখগুলো কেমন ভাবনায় ডুবে আছে, কথাও বলছে কেমন করে। মনে হচ্ছে নিজের মধ্যে নেই।

ফালাক রুহানির পাশে বসে ওর হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
“এমন এলোমেলো বেখেয়ালি লাগছে কেন? তোমাকে এমন চুপচাপ, মনমরা ভালো লাগে না। তুমি হাসবে, তোমার চোখ হাসবে, চারপাশ প্রাণবন্ত উৎসবমুখর মনে হবে। কিন্তু তা নয় তুমি সব টেনশন নিজের মধ্যে নিয়ে রেখেছো। আমি আছি তো।”

রুহানি অসহায় ফেস করে বলল,
“তুমি আছো জানি কিন্তু ব্যাপারটা এখন তোমার, আমার, আহিল তিনটা পরিবারের সাথে জড়িয়ে গেছে। তোমার বাবা-মা কিছুতেই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে না। আর এদিকে আহিলও আমার পেছন ছাড়বে না। মহা ঝামেলায় পড়ে গেছি।”

ফালাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“রুহানি দেখো আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমাকে নিয়েই তাদের যত স্বপ্ন। মা তোমাকে চেনে না, জানে না তাই তোমার সম্পর্কে অন্য রকম ধারণা পোষণ করেছে।”

“আমি তোমার মা’কে দোষ দিচ্ছি না। তার এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক। আমাকে যদি কেউ এসে কারো সম্পর্কে এমন কিছু বলে আমি তোমার মা’য়ের মতো সেম মনোভাব পোষণ করতাম।”

ফালাক স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে রুহানির দিকে চেয়ে বলল,
“আমি মায়ের সাথে কথা বলব। মা’কে বুঝাবো। তিনি যদি বুঝে যান তবে ঠিক আছে আর যদি না বুঝে তাহলে….!”

রুহানি ফালাকের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকাল। ফালাকের ‘তাহলে’ শব্দটা শুনে ওর বুকটা ধুক করে উঠল। ফালাক কি ওর মা’য়ের জন্য ওকে ছেড়ে দিবে?
রুহানি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“তাহলে কি ফালাক?”

ফালাক বলল,
“তাহলে আমরা বিয়ে করে ফেলব। একবার বিয়ে করে ফেললে বাবা-মা মেনে নিতে বাধ্য। কিছুদিন হয়তো রাগ করে থাকবে তারপর মেনে নিবে। একমাত্র ছেলেকে কতদিন দূরে সরিয়ে রাখবে? দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“ফালাক পাগল হয়ে গেছো? ইউ মিন আমরা নিজেরা একা বিয়ে করব? মানে যাকে বলে পালিয়ে?”

“এমন কি হয় না? অহরহ হচ্ছে। ফ্যামিলি রাজি না থাকলে নিজেরা বিয়ে করে নেয় তারপর ফ্যামিলি মেনে নেয়। ”

“কিন্তু ফালাক…..

ফালাক রুহানিকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
” পরেরটা পরে ভাবা যাবে। তুমি সকালে কিছু খাওনি তাই না? চলো ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খেয়ে নেই।”

রুহানি ফালাকের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“আমার ক্ষিধে নেই।”

“আমি জানি তোমার ক্ষিধে পেয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আর তোমার মাথা কাজ করবে না। আমার হাত কামড়াতে শুরু করবে।” (মজা করে)

রুহানি ফালাকের কথা শুনে ফালাককে মারতে শুরু করল। সেটা দেখে ফালাক বলল,
“দেখেছো তোমার মাথা কাজ করছে না।”

রুহানি নাক ফুলিয়ে বলল,”ফালাক, ভালো হচ্ছে না।”

ফালাক আলতো হেসে বলল,
“তাহলে চলো, আমারও ক্ষুধা পেয়েছে। নাস্তা না করেই কারো সাথে দেখা না করেই চলে এসেছি।”

রুহানি ফালাকের হাত ধরে উঠে দাঁড়াল।

.

ফালাক খাবার অর্ডার করে রুহানির দিকে আড়চোখে তাকাল। তারপর নিজের ফোন বের করতে করতে বলল,
“আহিলকে কোথায় পাওয়া যাবে?”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে চমকে গেল। তারপর ফালাকের দিকে চেয়ে ওর মনোভাব বুঝার চেষ্টা করে বলল,
“কেন?”

ফালাক আলতো হেসে বলল,
“ওর সাথে হিসেব মিটাতে হবে না?”

রুহানির আহিলের নাম শুনেই সবকিছু আবার নতুন করে মাথায় ঘুরছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ওর জন্য আমিও যথেষ্ট। ও যে বহুরূপী গিরগিটি জানাই ছিল না। আমারই ভুল। ওকে আমার এতকিছু বলাই উচিত হয়নি। ওকে তো এর জবাব দিতেই হবে। আই হোপ বাবা আর মাও ওর বিপক্ষে কথা বলবে।”

“ওকে, তুমি তোমার কায়দায় জবাব নিও। তবে আমি ওকে ছাড়ছি না। আর হ্যাঁ তোমার কাছে ওর কোনো পিকচার আছে? আমি তো ওকে আজ পর্যন্ত দেখিনি। সামনে এলেও চিনবো না।”

রুহানি ফোন ঘেটে আহিলের একটা পিকচার খুঁজে পেতে সক্ষম হলো। ফোনটা ফালাকের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“এই যে আহিল।”

ফালাক ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে ভালো করে দেখছে। আহিল সব দিক দিয়ে ওর চেয়ে সুন্দর। দেখেই মনে হচ্ছে ড্যাশিং আর স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ। যেকোনো মেয়েই প্রেমে পড়ে যাবে।
ফালাক রুহানির দিকে চেয়ে বলল,
“তোমার ফোনে ওর পিক কি করছে?”

রুহানি ওর প্রশ্নে যেন ভরকে গেল। নিজেই দেখতে চাইলো আর এখন বলছে ওর পিকচার কি করছে।
রুহানি কি উত্তর দিবে ফালাকের প্রশ্নে। ফালাক বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

“অনেক আগের। এই একটা পিকচারই আছে। অনেক সময় লাগে না, তাই আর কি। এখন যেমন তোমাকে দেখাতে পারলাম।
না থাকলে কি করে দেখাতাম?”

ফালাক পালটা প্রশ্ন করল,
“আমার কয়টা পিকচার আছে তোমার ফোনে?”

রুহানি চুপ করে গেল। কারণ ফালাকের কোন পিকচারই ওর ফোনে নেই। প্রায় রোজই দেখা হয়, সোসাইল সাইটে ওর পিকচার দেখে কিন্তু কখনো সেভ করে রাখেনি।
ফালাক রুহানির চুপ করে থাকায় উত্তর পেয়ে গেছে। আহিলের পিকচার ডিলিট করে রাগে ফুসফুস করতে করতে বিড়বিড় করে বলল,
“বয়ফ্রেন্ডের পিকচার নেই, অন্য ছেলের পিকচার ফোনে রেখে দিয়েছে।”

“আরে তুমি এত রিয়েক্ট করছো কেন? এখন থেকে গ্যালারি ভর্তি তোমার পিকচার রেখে দেব। ভাল্লাগে না। হুদাই রাগ দেখাচ্ছে। আমার ক্ষুধা পেয়েছে। খাবার দেও।”

রুহানি এখন নিজেই রেগে গেছে। ফালাক তাই নিজেকে সংযত করে নিল।

.

রুহানি ক্লাস শেষে আহিলের অফিসে যাচ্ছে। অফিসে গিয়ে আহিলকে পায়নি। তাই আহিলকে ফোন করল। ফোন করে জানতে পারল ও ওদের বাড়িতে যাচ্ছে। রুহানির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে যদি উড়ে চলে যেতে পারত। আহিল বাড়িতে গিয়ে ওর অনুপস্থিতিতে কি বুঝাবে ওর বাবা আর মা’কে।

আহিল ওদের বাড়িতে ঢুকলে রুহানির মা ভালো ভাবে ওকে গ্রহণ করেনি। প্রতিবার ওকে দরজার বাইরে দেখলে হাসিমুখে ভেতরে আসতে বলে কিন্তু আজ মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আহিল কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
“কিছু হয়েছে আন্টি?”

রুহানির মা উত্তরে বলল,
“ভেতরে এসো।”

আহিল ভেতরে যাওয়ার পর রুহানির মা সবকিছু বলার পর প্রশ্ন করল,
“আহিল কেন করেছো এমন? তোমার কাছে এমন কিছু সত্যিই আশা করিনি। আমাদের সম্মান তোমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছি আর তুমি তার সম্মানটা কোথায় রাখলে?”

“আন্টি সবকিছুর পেছনে একটা কারণ থাকে। আমাকে এক্সপ্লেইন করতে দিন।”

পেছনে থেকে রুহানি বলল,
“এক্সপ্লেইন তো আপনাকে করতেই হবে। তো করুন আমিও শুনছি।”

সবার দৃষ্টি রুহানির দিকে। মনে হচ্ছে দৌড়ে এসেছে৷ কেমন হাপাচ্ছে, কপাল আর নাক ঘর্মাক্ত।

আহিল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“রুহানি, ফালাক আর ফালাকের ফ্যামিলি তোমার জন্য পারফেক্ট না। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আর সে অনুযায়ী আমি ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।”

“কথা বলতে গিয়েছিলেন না আমার বদনাম করতে গিয়েছিলেন? যাতে ফালাকের সাথে আমার সম্পর্ক না থাকে তার ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলেন?”

আহিল ধমকে বলল,
“শাট আপ! যা বুঝো না তা নিয়ে কথা বলো না। আবেগে ভেসে বেড়াচ্ছো তুমি তাই বাস্তবতা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই তোমার। তুমি নিজের হাতে দুর্ভোগ টেনে আনতে চলেছো।”

রুহান ওর বাবাকে নিয়ে এসেছে। ওর বাবাও পুরো ব্যাপারটা শুনছে। আহিল রুহানির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আংকেল, রুহানির এই সত্যটা প্রকাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। আমি ফালাকের ব্যাপারটা জানার পরে ওর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম কথা বলে ওদের মনোভাব বুঝার জন্য। আমি কিছুই গোপন করিনি। গোপন না করার একটাই কারণ একদিন সবার সামনে সত্যিটা আসবে৷ সেদিন তাদের কি মনোভাব হবে? ওর মায়ের অনেক দেমাক। ফালাক তার একমাত্র ছেলে। তার ছেলের জন্য তিনি নিজেদের স্ট্যাটাস অনুযায়ী বউ আনবে। তিনি বলেছেন তার কিসের অভাব? ধন-সম্পদ, নাম,খ্যাতি,যশ,প্রভাব-প্রতিপত্তি, সামাজিক মর্যাদা কোন কিছুর অভাব নেই। তার কথাও ঠিক আছে। তিনি তার স্ট্যাটাস অনুযায়ী আত্মীয়তা করতে চাইবেন। ফালাক একমাত্র ছেলে তার, আমার মতো আরো একজন ভাই নেই। আমার বাবা-মায়ের সব আশা আমাকে ঘিরে নয় বরং আমাদের দুই ভাইকে ঘিরে। আর আমরা দুই পরিবার একে অপরের পরিচিত তাই সবাই সবাইকে খুব কাছ থেকে চিনি, জানি। যেটা ফালাকের পরিবার জানে না। ফালাকের পরিবার যেখানে তোমাকে মেনে নিবে না সেখানে তুমি কি করে সুখী হবে? রোজ লড়াই করবে রুহানি?”

“ফালাক আমার সাথে থাকলে আমি সব করতে পারব।”

আহিল তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“ফালাক কতদিন থাকবে তোমার সাথে? প্রথম দু’চার দিন। তারপর ও নিজেই বিরক্ত হয়ে যাবে। তুমি দুদিনের জন্য বিয়ে করছো না, সারাজীবন তোমাকে থাকতে হবে এটা মাথায় রেখো। ফালাক তোমাকে ভালোবাসে? না,এটা ওর মোহ। বাবা-মায়ের আদরের একমাত্র ছেলে, ওর অল্প বয়স, তোমাকে ভার্সিটিতে কাছে থেকে দেখেছে, তোমার এটিটিউট, রুপ দেখে মুগ্ধ হয়েছে তাই সব কিছু মেনে নিয়েই তোমাকে চাইছে। কিন্তু যখন ওর মোহ কেটে যাবে তখন? তখন তোমার কি হবে রুহানি? তোমার নাচ করার কথা শুনে ওর মা তোমার সম্পর্কে বাজে একটা ধারণা পোষণ করে নিল। আর আমার পরিবারকে যখন এই ব্যাপারে বলেছি তারা হতাশ হয়েছে কিন্তু তোমার চরিত্র নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করে নি। তোমাদের আর্থিক অবস্থার জন্য প্রথমে অমত করলেও এখন তারা মেনে নিয়েছে। ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবে না। কারণ আমি নিজে এসেছি তোমার কাছে, তোমাদের কাছে। তফাত দেখো আর কোনটা ভালোবাসা সেটা বুঝার চেষ্টা করো। আবেগে ভেসে গিয়ে জীবনটা ভাসিয়ে দিও না। মাথাটা কাজে লাগাও, একটু ভাবো উত্তর পেয়ে যাবে।”

রুহানির বাবা আর মায়ের দিকে তাকাল। তারা আহিলের কথায় গলে যাচ্ছে।
“বাবা, ফালাক খুব ভালো ছেলে। ও বলেছে ওর মায়ের সাথে কথা বলবে। পরিবারকে রাজি করাবে। ফালাক আমাকে ভালোবাসে।”

আহিল রুহানির কথা শেষ হতেই বলল,
“আসলে কি জানো রুহানি, তোমার খারাপ সময়ে আমি তোমার পাশে ছিলাম না তাই আমার প্রতি তোমার একটা ক্ষোভ কাজ করে। নয়তো বরাবরই আমাকে বিয়ে করার জন্য তুমি রাজি ছিলে। তুমি কষ্ট পেয়েছো আর ওই সময় ফালাক হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সাপোর্ট দিয়েছে তাই ওকে তোমার আপন মনে হচ্ছে। কিন্তু এই মনোভাব সব সময় থাকবে না। আমি তোমার বাগদত্তা। আমি তোমাকে এমন সিচুয়েশনে পড়তে দিতে পারি না। ওদের সাথে জড়ালে তোমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। ফালাকের ফ্যামিলি রাজি থাকলে আমি আপত্তি করতাম না। ইনফ্যাক্ট এখনো করব না। তুমি বলো ওর বাবাকে এসে তোমাদের ব্যাপারে কথা বলতে। যদি তারা আসে, তোমাকে মেনে নেয় তবে আমি কথা দিচ্ছি সরে যাব তোমার জীবন থেকে।”

আহিল দাঁড়িয়ে গেল। তারপর রুহানির বাবা-মার উদ্দেশ্যে বলল,
“আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে ও। আমি শুধু এটুকুই বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু করতে পারছি না বুঝানো ছাড়া,ওয়ার্ন করা ছাড়া। আর যখন ও এসব দুর্ভোগের সাথে জড়িয়ে যাবে তখন আমার এটুকু করারও থাকবে না। কারণ সেটা হবে অনধিকার চর্চা। মূল্যহীন। তখন আহিলকে ওর আশেপাশেও পাবে না। সিদ্ধান্ত আপনাদের। আমি আসছি।”

রুহানির আর কিছুই করার থাকল না। আহিল যে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে বুঝে গেছে। আর এও বুঝে গেছে ওর বাবা-মার ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলেছে। রুহানি দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করছে।

.

রুহানির বাবা আর মা ওকে আর কিছুই বলল না। সারারাত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে রুহানিকে একটা সুযোগ দিবে। তবে শুধু একটা সুযোগ। যদি ফেল হয় তবে ওকে আর ওর জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিবে না। আহিল আর আহিলের পরিবার ওদের পূর্বপরিচিত। একে অপরকে খুব ভালো করে চিনে। কিন্তু ফালাকের পরিবার ওদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। ওদের চাল-চলন, আচার-আচরণ,পছন্দ-অপছন্দ কিছুই জানে না। আহিলের সাথে বিয়ে হলে রুহানি ভালো থাকবে, আহিল সব জেনেও রুহানিকে বিয়ে করতে চাইছে। এতে প্রমাণ হয় আহিল রুহানিকে কতটা ভালোবাসে আর রুহানির জন্য ভবিষ্যতে কি কি করতে পারবে। আহিল ম্যাচিউর ছেলে।
বিয়ের পর রুহানি নিজের মতো আহিলের সাথে আমেরিকা থাকবে। কোনো ঝামেলা নেই। তবে তারা রুহানিকে একটা সুযোগ দিতে চায়। ফালাকের সাথে কথা বলবে।

চলবে……!

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-২৬|

রুহানি বসে বসে নখ কামড়াচ্ছে। কপালে চিন্তার রেখা পড়েছে। মনে হচ্ছে মাথাটাও ধরেছে। রুহানি দু’হাতে চুল গুলো হালকা টেনে টেনে মাথাকে আরাম দিচ্ছে। সামনেই চায়ের কাপ। কাপ ভর্তি দুধ চা অনাদরে পড়ে আছে। রুহানির নজর গেল কাপের দিকে। চুল থেকে হাত সরিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অতি আগ্রহের সহিত চুমুক দিল। মুহুর্তেই ওর চেহারার রং পালটে গেল। ঠান্ডা চা বিদঘুটে লাগছে। রুহানি না গিলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফেলে দিল।
বারান্দায় এসে দাঁড়াল। প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। ওর মা ফালাকের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। রুহানি যেতে চাইলে নেয়নি। এখন বসে বসে টেনশন করা ছাড়া উপায় নেই।

.

ফালাক রুহানির মা’য়ের আপ্যায়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রুহানির মা ওকে থামিয়ে বলল,
“ব্যস্ত হয়ো না। আমি তোমার সাথে দুটো কথা বলতে চাই।”

ফালাক চেয়ার টেনে বসে বলল,
“জি বলুন।”
ফালাক ভেতরে ভেতরে নার্ভাস ফিল করছে। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।

রুহানির মা ভনিতা না করেই বলল,
“রুহানিকে তুমি ভালোবাসো?”

ফালাক থমকে গেল। এই প্রশ্ন করতে এসেছে এখানে। ফালাক উত্তর দেওয়ার জন্য ঠোঁট ফাক করতেই উনি বললেন,
“রুহানি বলেছে তুমি ওকে ভালোবাসো। ও যেহেতু বলেছে ধরেই নিলাম ভালোবাসো। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিও তুমি জানো। এমন পরিস্থিতিতে নতুন কোন বিপদ কিংবা সন্তানের ক্ষতি মেনে নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি আমাদের নেই। সব হারিয়ে রুহানি আর রুহানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছি। তাই ওদের কোনরূপ ক্ষতি মেনে নিতে পারব না। রুহানি আর রুহানই এখন আমাদের সব। রুহানি ছোট থেকেই একটু রাগি,জেদি টাইপ মেয়ে। যা বলে তাই করে, যেটা চায় সেটা পেয়েই ছাড়ে। বাবার আদর-আহ্লাদে বড় হয়েছে তো তাই। এখন পরিস্থিতির কারণে নরম হলেও অনেক কিছুই আগের মতো আছে। ওর কথা ভেবেই এখানে আসা। তুমি এটাও জানো যে দু’বছর আগে রুহানির সম্মতিতেই আহিলের সাথে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে ঠিক করেছি। আহিল তখন আমেরিকা থাকতো। দুই পরিবারের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক ছিল। কিন্তু হটাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে পড়ল। আমাদের এই অবস্থা পাশাপাশি ওর বিয়ে ভেঙে যাওয়া। মেয়েটা একদম ভেঙে পড়ে। আমাদের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত রেখে ঘুরে দাঁড়ায়। তারপর তুমি এলে ওর জীবনে। তোমার প্রতি দুর্বল হতে হতেই আহিল চলে এলো। কিন্তু রুহানি আহিলের ফিরে আসা ভালোভাবে নিতে পারেনি। আহিলের প্রতি ওর একটা রাগ,ক্ষোভ কাজ করত। প্রথমে আমাদেরও করেছিল যাইহোক বাদ দেই সে-সব কথা৷ আমরা আহিলের সাথেই বিয়ের কথা আগাচ্ছিলাম মাঝখানে রুহানি বাঁধ দিল। তোমার কথা বলল। রুহানির কথা ভেবে সেটাও মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু তোমার ফ্যামিলি, তারা তো মানবে না। যে ফ্যামিলি আমার মেয়েকে চায় না সেখানে জোর করার উপায় নেই।”

ফালাক মাথা নিচু করে চুপচাপ কথাগুলো শুনছে। উনার কথার মাঝে কোন বাঁধা সৃষ্টি করেনি।
“এখন মেইন কথায় আসি। তুমি কি রুহানিকে বিয়ে করতে চাও?”

ফালাক নম্রস্বরে বলল,
“জি আন্টি অবশ্যই চাই। আমি সত্যিই রুহানির সাথে, রুহানির পাশে থাকতে চাইছি। আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলব। আমার বিশ্বাস তারা আপত্তি করতো না যদি না আহিল রুহানির কিছু সিক্রেট ওপেন না করত। কিন্তু এখন ব্যাপারটাই জটিল হয়ে গেছে।”

“হ্যাঁ হয়তো জটিল হয়েছে। কিন্তু রুহানি তোমার প্রতি দিন দিন আরো সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। পরে দেখা গেল পরিস্থিতি, পরিবারের চাপে তুমিও ওকে ছেড়ে চলে গেলে এটা কিন্তু ও মেনে নিতে পারবে না। আমার মেয়েটা মরে যাবে। তাই বলছি যদি ওকে বিয়ে করা সম্ভব না হয় তবে সম্পর্ক আর এগিও না। আর যদি বিয়ে করার হয় তবে তোমার বাবা-মাকে বিয়ের কথা বলতে আমাদের বাড়িতে পাঠাও। তোমাকে এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। এর বেশি সময় আমি নিতে পারব না। কারণ আমি কিছুতেই রুহানির জীবনটা ধ্বংস হতে দেখতে পারব না। এমনিতেই আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।”

ফালাক থ হয়ে আছে। এক সপ্তাহে পারবে তো বাবা-মাকে মানাতে। যদি না পারে তাহলে? ফালাকের মুখ শুকিয়ে গেল।

ফালাক শুকনো মুখে বলল,
“আমি চেষ্টা করব। কিন্তু আন্টি একটা কথা আমি সত্যিই রুহানিকে ভালোবাসি। ওকে বিয়ে করতে চাই। সত্যিই চাই।”

রুহানির মা কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু বলল,”হয়তো চাও। কিন্তু তোমার বাবা-মায়েরও একটা চাওয়ার ব্যাপার আছে। সেটাও তোমাকে দেখতে হবে। আমারও আমার মেয়ের কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে।”

ফালাক খুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

.

ফালাক অনবরত চেষ্টা করছে ওর মা’কে বুঝানোর। ওর বিশ্বাস মা মেনে নিলেই বাবা মেনে নিবে। কিন্তু এখন ওর সাথে মায়েরই মনোমালিন্য শুরু হয়ে গেছে। তাই ফালাক রাগ করে কয়েক দিন যাবত বাড়িতে যাচ্ছে না। ওর বাবা এসে জোর করে বাড়িতে নিয়ে গেছে। সেখানে ওর মায়ের সাথে আবারও নতুন করে তর্কাতর্কি চলতে থাকে।

রাতের বেলা ওর বাবা ওকে ডেকে নিয়ে বলল,
“কেন এমন করছিস? কেন পরিবারের সাথে সম্পর্কগুলো উদ্ভট করছিস? কিছুদিন যাবত কি অশান্তি চলছে এই বাড়িতে। এভাবে চলতে পারে না। কি দরকার এমন একটা সিচুয়েশনে নিজেকে ফেলার? ফালাক সব ভুলে যা। মেয়েটাকে ভুলে যা। আমরা তোর জন্য অন্য একটা মেয়ে দেখছি। তাকে বিয়ে করে সুখে থাক। দয়া করে আর কথা বাড়াস না। বাড়িতে অশান্তি করিস না। আর ভালো লাগছে না।”

ফালাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলতো হেসে বলল,
“অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে আমি যদি ভালো থাকতাম তাহলে কেন এতদিন ধরে তোমাদের সাথে লড়াই করে যাচ্ছি? আমার ভালো থাকাটা রুহানির উপর নির্ভরশীল।”

ফালাকের বাবা দাঁড়িয়ে গেল। তারপর বাজখাঁই গলায় বলল,
“তুই থাক তোর জেদ নিয়ে। দুনিয়াতে আর মেয়ে নেই? তোকে ওই মেয়ের পেছনেই পড়তে হলো?”
একা একা বিরবির করে রুহানির সমন্ধে দু’চারটে মন্দ কথা বলতে বলতে চলে গেলেন।

রুহানি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। ফালাক শুকনো মুখে ওর পাশে এসে বসল। ফালাকের শুকনো মুখ দেখে রুহানি উদ্বেগ- উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
“কি হয়েছে? খারাপ কিছু হয়েছে?”

“তুমি ওসব বাদ দেও। সামনের সপ্তাহে পরীক্ষা না তোমার। পড়াশোনায় মন দেও।”

রুহানি ভারি কন্ঠস্বরে বলল,
“আংকেল, আন্টি কি বলেছেন? রাজি হয়নি তাই না?” রুহানির গলা ধরে এলো।

ফালাক ওর দিকে চেয়ে বলল,
“আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

রুহানি শুকনো হেসে বলল,
“আর চেষ্টা! এক সপ্তাহ হয়ে গেছে ফালাক।”

“এতদিন বাড়িতে যাইনি। মায়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে খুব। গতকাল বাবা জোর করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। তারপর আবার নতুন সমস্যা শুরু হয়। আমি বুঝতে পারছি না কবে পর্যন্ত সব ঠিক হবে। মায়ের এক কথা আমি সব মেনে নিতাম, আমার কোনকিছুতে সমস্যা ছিল না কিন্তু হোটেলে নাচ? সমাজে দাঁড়াব কোন মুখে? মানুষ তো থুথু ছিটাবে।”

রুহানির চোখ জোড়া জলে ভরে উঠছে। গলা ধরে আসছে। মনে হচ্ছে খুব বড় পাপ করে ফেলেছে। যে কারণে সেই পাপ স্বরুপ এত কথা শুনতে হচ্ছে।

রুহানি উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল,
“সব শেষ।”

ফালাক ওর কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“কিছু শেষ হয়নি। আমি শেষ হতে দেব না।”

রুহানি ফালাকের দিকে ছলছলে চোখে বলল,
“এর পরেও কি করে বলছো? তুমি দেখতে পাচ্ছো না সব শেষ হয়ে যাচ্ছে? আমি তো দেখতে পাচ্ছি।”

রুহানি ফালাককে রেখেই চলে যাচ্ছে। ফালাক ওর পেছনে পেছনে গিয়ে ওকে বাঁধা দিল। ফালাক বাঁধা দেওয়ায় রুহানি প্রচন্ড রেগে গেল। রেগে গিয়ে বলল,
“প্লিজ আমাকে একটু একা ছেড়ে দেও। প্লিজ।”

“কিন্তু রুহানি তুমি ওভার রিয়েক্ট করছো। রাগ কেন দেখাচ্ছো আমাকে?”

রুহানির আসলেই খুব রাগ হচ্ছে। রাগটা ঠিক কার উপর বুজতে পারছে না। তবে রাগ হচ্ছে। মাথায় আগুন জ্বলছে।
রুহানি চিৎকার করে বলল,
“আমি রাগ দেখাচ্ছি কারণ আমি খারাপ মেয়ে। আমার থেকে দূরে থাকো।”

রুহানি একটা রিকশা নিয়ে উঠে গেল। ফালাক শেষ বারের মতো ওকে ডেকে চুপ হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

.

ফালাক তিন দিন রুহানির সাথে যোগাযোগ করেনি। প্রথম দুদিন ফোন করে, হাজার চেষ্টা করেও ওর দেখা পায়নি। তাই আর ওকে ফোন করেনি রাগ করে। তারপর ফোন করল। ফোন করতেই রুহানি রিসিভ করল।

দু’পাশেই পিনপতন নীরবতা। ফালাক নীরবতা ভেঙে বলল,
“একটু দেখা করবে আমার সাথে?”
ফালাকের কন্ঠে আকুলতা স্পষ্ট। রুহানি সে আকুলতা উপেক্ষা করতে পারল না। তাই বলল,
“আসছি।”

রুহানির এই ছোট্ট আসছি কথায় যেন ফালাক পুরো পৃথিবী পেয়ে গেল। মুখে হাসি ফুটল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল রুহানির আগমনের আয়োজনে।
রুহানি ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকে কারো কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না। কয়েকবার ফালাকের নাম ধরে ডাকতেই দুজন মেয়ে একটা রুম থেকে হাসি মুখে বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,
“আপনার নাম কি রুহানি?”

রুহানি কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। তারপর ওরা ওর হাত ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে গেল। রুহানিও রোবটের মতো ওদের সাথে চলে গেল। মেকাপ, শাড়ি-গয়না পড়ে আছে খাটের উপর। একটা লাল শাড়ি রুহানির সামনে এনে বলল,
“শাড়িটাাতে আপনাকে বেশ মানাবে। স্যারের পছন্দ আছে।”

রুহানি অবাক হয়ে বলল,
“কিসের শাড়ি? শাড়ি দিয়ে কি হবে?”

“স্যার বলেছে আপনাকে পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে।”

“কিন্তু কেন?”

“তা তো জানি না৷ আমাদের যেটুকু বলা হয়েছে ততটুকুই করব।”
ওদের জোড়াজুড়িতে রুহানি শাড়ি পরে নিল। কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। ওরা সাজিয়ে দিচ্ছে কিন্তু রুহানির সেদিকে খেয়াল নেই। ও ভাবনায় বিভোর। ফালাককেও কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।

সাজানো শেষে রুহানির নিজের দিকে খেয়াল হলো। একদম বউ মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ নিজেকেই মুগ্ধ হয়ে দেখল। ওরা সাজানো শেষে চলে গেল। রুহানি আর না পেরে ফালাককে ফোন করল। ফোনের টোন কাছেই বাজছে৷ পেছনে ঘুরতেই ফালাককে দেখতে পেল। ফালাক স্যুট কোর্ট পরা। ঘোরলাগা চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুহানির একটু একটু ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ফালাক রুহানির দিকে এগিয়ে এল। ফালাক যতই এগিয়ে আসছে ওর হৃদপিণ্ডের গতি বাড়তে থাকল। ফালাক ওর কাছে এসে কানের ঝুমকায় টুকা মারল। রুহানি সাথে সাথে কেঁপে উঠল। ফালাক রুহানির চুলের বাঁধন এক টানে খুলে ফেলল। তারপর দূরে গিয়ে দাঁড়াল। রুহানিকে দু-চোখ ভরে দেখে বলল,
“পারফেক্ট। আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোমাকে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে। তাই আজ সে ইচ্ছে পূরণ করে ফেললাম।”

রুহানি স্বস্থির নিশ্বাস নিল। ও ভেবেছিল ফালাক না ওকে আজ জোর জবরদস্তি করে বিয়েই করে নেয়। কিন্তু ওর ভাবনায় পানি ঢেলে রুহানিকে শান্তি করে দিল।

ফালাক আবার রুহানির কাছে গেল। চুলে হাত ডুবিয়ে বলল,” তোমার জন্য সুখবর আছে। তোমার কেসটা অনেকটা এগিয়েছে। ইনভেস্টিগেশনে অনেক নতুন তথ্য উঠে এসেছে যা সবটাই তোমাদের পক্ষে।”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে মুচকি হাসল। ওর চোখে প্রাপ্তির খুশি।

ফালাক হটাৎ জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছো?”

রুহানির হাসি মিলিয়ে গেল। মলিন মুখে ওর দিকে তাকাল। তারপর চোখ নামিয়ে নিল। ওর চোখ ছলছল করছে।
ফালাক রুহানিকে নিজের সাথে আলতো করে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“রুহানি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। এতটাই ভালোবাসি যে কারো এতটা কাছে তোমাকে যেতে দিতে পারব না।”

রুহানি ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমিও কারো এতটা কাছে যেতে পারব না। প্লিজ কিছু করো ফালাক। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। দেখবে একদিন মরে গেছি।”

ফালাক ওর ঠোঁটে আঙুল ছুইয়ে মৃদুস্বরে বলল,
“হিশশ! এ কথা বলো না। মরে গেলে একা কেন মরবে? আমাকে নিয়েই মরবে। আমিও আর নিতে পারছি না।”

রুহানি ফালাককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিল। ফালাক রুহানিকে ছাড়িয়ে ওর চোখের পানি মোছানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রুহানি কেঁদেই চলেছে। ফালাক দু’হাতে রুহানির মাথা চেপে ধরে। কপালের সাথে কপাল মিলিয়ে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,
“চুপ! একদম চুপ! সব ঠিক হয়ে যাবে।” আচমকা রুহানির ঠোঁটের কোনে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে বুকে চেপে ধরল। যেন হারিয়ে না যায়।

চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ