Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় অভিমান পর্ব-১৪

প্রিয় অভিমান পর্ব-১৪

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-১৪|

রাতের পার্টির জন্য রুহানি তৈরি হচ্ছে। দুদিন যাবৎ যেন জীবনের হারানো সুখগুলোর সন্ধান মিলেছে। পেছনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকতে চাইছে। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। নুশা কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

গলা খাকাড়ি দিতেই রুহানি পেছনে ঘুরে। নুশা মিটমিট করে হাসছে। রুহানি ভ্রু প্রসারিত করে বলল,
“তোর সমস্যা কি? গলায় ব্যাঙ ঢুকেছে? অপারেশন করে বের করে দেব?”

নুশা মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“তুই কি ডাক্তার?”

“গলা কাটতে ডাক্তার হওয়া লাগে না। বল কেটে দেই। আমার ব্যাগে চাকু আছে।”

নুশা চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“সব সময় বাজে কথা। এখন বল এত মনোযোগ দিয়ে কার জন্য সাজগোজ করছিস?” (ভ্রু নাচিয়ে)

রুহানি আবারও নিজেকে আয়নায় দেখে বলল,
“নিজের জন্য। সবাই অন্যকে দেখানোর জন্য সাজগোজ করলেও আমি নিজের খুশির জন্য নিজেকে সাজাই। তোর ফালতু কথা শেষ হলে চল যাই।”

নুশা মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে, “এই মেয়ে মজাও বুঝে না৷ সব সময় সিরিয়াস মুড।”

ওরা ট্রুথ অর ডেয়ার গেম খেলছে। চুপিসারে বিদেশি ড্রিংকের আয়োজন করেছে। বোতল ঘুরাতেই রুহানির দিকে পড়তেই তায়েফ রুহানিকে ডেয়ার দিল ড্রিংক করার জন্য। কিন্তু রুহানি নারাজ। এসবে ওর অভ্যাস নেই। তারপর দেখা যাবে মাতাল হয়ে উল্টো পাল্টা কাজ করে ফেলবে। আর সবাই মজা নিবে। নিজের পায়ে কে কুড়াল মারতে চায়?

রুহানি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“অন্য কোন ডেয়ার দেওয়ার হলে কেউ দিতে পারো অর আমি চলে যাচ্ছি। আমাকে ফাঁসানো অত সহজ না।”

কেউ আর ওকে ডেয়ারের জন্য জোরাজুরি করে নি। ফালাক দূরে দাঁড়িয়ে রুহানির দিকে নজর রাখছে আর কোল্ড ড্রিংকে চুমুক দিচ্ছে। সবার সাথে রুহানি হাসছে, গল্প করছে। ফালাক পার্টি ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য নিজের রুমে চলে গেল।

সবাই কোল্ড ড্রিংক পান করছে। রুহানিও গলা ভিজিয়ে নিল। রুহানির কাছে ড্রিংকটা কেমন অদ্ভুৎ লাগছে। সফট ড্রিংকস এমন হতে পারে না। রুহানি চুপ করে এক জায়গায় বসে আছে। নড়ছে না। নুশা বারবার ওকে ধাক্কাধাক্কি করছে কিন্তু ও থম মেরে বসে আছে।

রুহানি নুশাকে বলল,
“আমি একটু রুম থেকে আসছি।” রুহানি দ্রুত উঠে দাঁড়াল। কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। নিজের ব্যালেন্স রেখে দ্রুত বাইরে চলে গেল। রুহানি বুঝতে পারছে কোনভাবে ওর ড্রিংক বদল হয়ে গেছে। না জানি এখন ও কি করবে। তাই দ্রুত নিজেদের রুমে চলে যেতে চায়। কিন্তু শরীর চলছে না। সিড়ি বেয়ে উঠছে। চোখ ছোট ছোট হয়ে আসছে। কোথায় যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। রেলিঙ শক্ত করে ধরে এক পা এক পা করে আগাচ্ছে। কতটা সিড়ি পাড় করেছে সেটাও জানা নেই। কডিটোর জুড়ে হাঁটছে কিন্তু ওর রুম খুঁজে পাচ্ছে না। ফালাক ডিনার করার জন্য রুম থেকে বের হয়ে রুহানিকে দেখে ওর চোখ ছানাবড়া। রুহানি চোখ ছোট ছোট করে আঙুল তুলে দুইটা রুমের দরজার দিকে রাখছে। একবার ডান পাশের রুমের দরজা আরেকবার বাম পাশের রুমের দরজা। ফালাক কিছুই বুঝতে পারছে না। রুহানি কি টস করছে, না কি করছে। ফালাক দরজা খোলা রেখেই রুহানির দিকে গেল।

রুহানি একটা ছেলেকে দেখে বলল,
“আমার ঘর কোথায় গেল? কে চুরি করে নিয়ে গেল?”

ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারল না। রুহানির দিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলল,
“পাগল না কি?”

ছেলেটা চলে গেল। রুহানি পেছনে থেকে চেঁচামেচি করছে,
“তুই পাগল, তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল।”

ফালাক ওর সামনে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে রুহানি?”

রুহানি ফালাককে দেখে বলল,
“তুমি চুরি করেছো? আমার রুম কই?” তারপর রুহানির চোখ গেল ফালাকের রুমের খোলা দরজার দিকে। তারপর বলল,
“পেয়ে গেছি। এই তো আমার রুম।”

রুহানি ফালাকের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তাল সামলাতে না পেরে দরজা ধরে নিচে পড়ে গেল। ফালাক ওর অবস্থা দেখে বুঝতে পারল ও ড্রিংক করেছে। ফালাক ওকে ধরে দাঁড় করাল। রুহানি ফালাকের কাঁধে হেলে পড়ল। ফালাক ওকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। রুহানি ভেতরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ফালাক দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রুহানির নেশা কি করে কাটাবে? আর রুহানিকে এভাবে ওর রুমে দেখলে মানুষ উল্টো পাল্টা কথা বলবে। ফালাক দরজা ভিড়িয়ে দিল। রুহানির নাম ধরে বারবার ডাকছে। রুহানি পিটপিট করে তাকাল। ফালাক ওকে ধরে বসাল।

রুহানি ছোট ছোট চোখ করে ফালাকের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে চেনা চেনা লাগছে। কে তুমি?”

ফালাক রুহানির কথা শুনে হতবাক।
“আমি ফালাক, জুনায়েদ ফালাক।”

রুহানি কিছুক্ষণ ফালাকের দিকে চেয়ে রইল। ফালাক কনফিউজড রুহানি কি ওকে চিনতে পারছে?

রুহানি কনফিউশান নিয়ে বলল
“তুমি সেই অসভ্য, খাটাস ছেলেটা না? আমাকে অনেক জ্বালিয়েছো। এখানে কি চাও? আমার রুম থেকে চলে যাও। নয়তো….!”

রুহানি নয়তো এর পর আর কিছু বলতে পারছে না। কি বলবে মাথায় আসছে না। মাথা চুলকাচ্ছে। ফালাকের রুহানির কথা শুনে বেহুশ হবার উপক্রম। ওর রুমে ওকে হুমকি দিচ্ছে।

রুহানি হটাৎ করে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর দু’হাত মেলে বলল,
“আমি পাখি হয়ে গেছি। আমি আকাশে উড়ছি। ইয়াহু! আকাশটা কত সুন্দর!” রুহানি ফালাকের দিকে ঘুরে বলল,
“তুমি গান গাও, আমি নাচব।”

ওর কথা শুনে ফালাকের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ভর করল। রুহানির মাতলামি বেশ উপভোগ করছে। ফালাক ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
“আমি তো গান পারি না।”

রুহানি নাক মুখ কুচকে বলল,
“গতকাল গেয়েছো আমি শুনেছি। মিথ্যা বলো না।”

“কিন্তু আমি তো ভালো গাই না।”

রুহানি ফালাকের কাছে এসে ওর গাল টেনে ধরে বলল,
“কে বলেছে তুমি ভালো গাও না? তুমি যেমন কিউট তারচেয়ে বেশি কিউট তোমার কন্ঠ।”
ফালাক রুহানির আচরণে বেশ অবাক হচ্ছে।
“আমি কিউট!”

“হুমমম,অনেককককক!”
রুহানি গাল ছেড়ে দিয়ে বলল,
“আরে গাও না, ঠিক আছে গাইতে হবে না।”

ফালাক গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুহানি হাত পা নাড়িয়ে নাঁচতে শুরু করল। জোরে জোরে গান গাইতে শুরু করল। ফালাক ওর মুখ চেপে ধরে বলল,
“আস্তে আস্তে, বাইরে কেউ শুনতে পেলে দু’জনের অবস্থাই খারাপ হবে। চুপ। একদম চুপ। গান গাইবে না। এখানে ভালো মেয়ের মতো শুয়ে থাকো।”

রুহানিকে জোর করে ফালাক শুইয়ে দিল। কি করা যায় তাই ভাবছে আর পাইচারি করছে৷ রুহানি ওর ভাবনার মাঝে উঠে গিয়ে বলল,
“আমি এখন গান গাইব।”
ফালাক আবারও গিয়ে রুহানির মুখ চেপে ধরল।
ওর মুখের কাছে গিয়ে বলল,
“হিসস, একদম না। তুমি ভালো মেয়ে না? এমন করে না। তাহলে মান-সম্মান কিছুই থাকবে না।”

রুহানি ধীরে ধীরে বলল,
“মান-সম্মান? আছে মান-সম্মান? আর আমি ভালো মেয়ে? হিহি। আমি না কি ভালো মেয়ে। হিহি।” রুহানি হাসতে শুরু করল।

ফালাক ধমক দিয়ে বলল,”চুপ! আর একটা কথা বললে বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দেব। তারপর ডানা মেলে উড়তে থেকো।”

রুহানি ওর ধমক খেয়ে কেঁদে দিল। ফালাক রুহানির কান্না দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল।
“রুহানি!”

রুহানি কাঁদতে কাঁদতে কাতর হয়ে বলল,
“রুহানি মরে গেছে। আমি মরে গেছি। ওরা আমাকে মেরে ফেলেছে। ওদের আমি কখনো ক্ষমা করব না।”(চোখের পানি মুছতে মুছতে)

ফালাক ওর কথার মাথামন্ডু কিছুই বুঝতে পারল না৷ তবে কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পারছে। ফালাক পানি এনে রুহানিকে দিয়ে বলল,
“পানি খাও।”

রুহানি পানি খেলো না। ফালাক গ্লাস রেখে শীতল কণ্ঠে বলল,
“কে মেরে ফেলেছে তোমাকে? আমাকে বলো।”

রুহানি বলল,”জানি না।” তারপর ওর চোখ গেল বারান্দার দিকে। রুহানি সেদিকে যাচ্ছে আর ফালাকের মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে কে মেরে ফেলেছে ওকে?

রুহানি বারান্দায় গিয়ে চিৎকার করে বলছে,”আমি মরে গেছি।”
ফালাক দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরল। রুহানিকে জোর করে রুমে নিয়ে এল। রুহানির এখানে থাকা নিরাপদ নয়। কেউ জানলে বদনাম হয়ে যাবে। ফালাক সব জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দিল। রুহানির হাত বাঁধল বেল্ট দিয়ে, শার্ট দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলল। রুহানি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। মুখ দিয়ে গোঙাতে শুরু করল।
ফালাক ওকে বলল,
“চুপ করে বসে থাকবে। আমি যাব আর আসব।”

ফালাক দ্রুত রুমের বাইরে চলে গেল৷ বাইরে থেকে লক করে গেল। দৌড়ে নিচে নামল। কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। রুহানি কত নাম্বার রুমে থাকে তাও জানে না আর না ওর কোন বন্ধুদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে। ফালাক বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে পারল না। ফালাকের তখনই মনে পড়ল রুহানি কি করছে। নিশ্চয়ই হোটেলের পুরো তিনতলা মাথায় তুলে ফেলেছে। বিশাল হাঙ্গামা ক্রিয়েট করে ফেলেছে। ফালাক দৌড়ে তিনতলায় গেল। না ওর রুমের সামনে নীরবতা বিরাজমান। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে রুহানি ঘুমিয়ে পড়েছে। ফালাক ওর হাত, মুখের বাঁধন খুলে ওকে বারবার ডাকছে কিন্তু ও ঘুমে বিভোর। ফালাক সিদ্ধান্ত নিল রুহানি এখানেই থাকবে। রুহানির গায়ে চাঁদর দিয়ে দিল। এলোমেলো চুলগুলো এক পাশে এনে রাখল। রুহানির হাতটা শক্ত করে ধরল।

“রুহানি, আমি তোমার প্রতি একটা টান অনুভব করছি। কিন্তু এই টানের কোন নাম দিতে পারছি না। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। নিজের মনকে মানাতে পারি না। কারণ মন আমার বশে নেই।” ফালাক রুহানির হাত ছাড়তে গিয়ে খেয়াল করল রুহানি ওর হাত শক্ত করে ধরে আছে।
ফালাক রুহানির হাতটা ছাড়িয়ে নিল।

ঘুম ভাঙতেই রুহানি পিটপিট করে চোখ মেলে। মাথাটা খুব ভারী লাগছে। হুট করে উঠে বসে। চারদিকে চেয়ে বুঝতে পারল এটা ওদের রুম নয়। তবে কার রুম? রুহানি ব্রেইনকে একটু প্রেসার দিতেই মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা। সিড়ি বেয়ে উঠছিল তারপর কি হলো মনে নেই। কার রুমে এসেছে, কিভাবে এসেছে কিছুই মনে নেই। রুহানি হটাৎ ফালাককে দেখতে পেল। ওর বুক ঢিপঢিপ করছে। ফালাক মেঝেতে বালিশে মাথা রেখে চাঁদর জড়িয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। রুহানির বুক ধুক করে উঠল। নিজের দিকে তাকিয়ে জামাকাপড় দেখে নিল। সব ঠিক আছে। এটা ফালাকের রুম। ও কি করে এলো কিছুই মনে করতে পারছে না। কোন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটিয়েছে কি-না তাও জানা নেই। রুহানি ফালাককে ফেস করতে চায় না। এখান থেকে পালাতে হবে। রুহানি বিছানা থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে চাদরে পা লেগে ধপাস করে পড়ে যায়। রুহানির পড়ে যাওয়ার শব্দে ফালাকের ঘুম ভেঙে যায়।

রুহানিকে পড়ে থাকতে দেখে তরিঘটি করে উঠে রুহানির পাশে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“নেশা কি এখনো কাটে নি?”

রুহানি চাদর ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফালাকের কথার উত্তর দিল না।
রুহানি দৃষ্টি নত করে নিচু স্বরে বলল,
“আমি এখানে কি করে এসেছি?”

“পায়ে হেঁটে এসেছো। দুম করে আমার রুমে ঢুকে নিজের রুম বলে দাবি করেছো।”

রুহানি মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। মাথা চুলকে বলল,
“তারপর?”

“তারপর আর কি পুরো রাত দৌড় করিয়েছো। কি জিনিস তুমি! হাড় জ্বালিয়ে খেয়েছো। যেসব খেয়ে নিজেকে সামলাতে পারো সেগুলো কে খেতে বলেছে?” (শেষের কথাগুলো রাগী কন্ঠে বলল)

রুহানি ফালাকের দিকে তাকাল। তারপর আবার চোখ নামিয়ে বলল,
“আমি এসব কখনো খাই নি তাই অভ্যাস নেই।”

ফালাক কর্কশ গলায় বলল,
“গতকাল রাতে কেন খেয়েছো? ভদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা এসব ছুয়েও দেখে না।”

রুহানি হাত ঘষতে ঘষতে বলল,
“আমি জেনে বুঝে খাই নি। আমি তো সফট ড্রিংক মনে করে খেয়েছি।”

ফালাক সরু চোখে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“ঠিক তো?”

রুহানি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
“নেক্সট টাইম থেকে সাবধান। তুমি একটা মেয়ে। মেয়েদের সম্মান অনেক দামি। অনেক কষ্টে তোমাকে সামিলিয়েছি। তোমাকে আমি বাইরে মাতলামি করতে দেখি কিছু জিজ্ঞেস করতেই তুমি আমার রুমে চলে এসেছো। ভাগ্যিস আমার রুমে এসেছো। যদি অপরিচিত কারো রুমে চলে যেতে? সবাই কিন্তু আমার মতো না। তোমার অবস্থার সুযোগ নিতো। আর যা শুরু করেছিলে তুমি তাতে যার তার মাথা খারাপ হয়ে যেত।”

সব কথা রুহানি অপরাধী ভঙ্গিতে শুনলেও শেষের কথাগুলো শুনে চমকে গেল। ফালাকের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“কি করেছি আমি?”

রুহানির বলার ভঙ্গি দেখে ফালাকের রাগ মাটি হয়ে গেল। ওর এই মুহুর্তে হাসি পাচ্ছে।
“বললে তুমি বিশ্বাস করবে না। আমার এই গাল দুটো টেনে রাখো নি। দেখো লাল হয়ে আছে এখনো।” (গাল দেখিয়ে)

রুহানি অসহায় ফেস করে ফালাকের দিকে তাকাল। তারপর অস্বীকার করে বলল,
“অসম্ভব! আমি এমন কিছুই করি নি। তুমি মিথ্যা বলছো। আমার কিছু মনে নেই তাই সুযোগ নিচ্ছো। আমি সব বুঝি।”

“শুধু গালই না। গান গেয়েছো, ড্যান্সও করেছো।”

রুহানি ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“অসম্ভব! এসব বলে আমাকে বোকা বানাতে পারবে না।”

“আমি জানি তুমি অস্বীকার করবে। তাই সব প্রমাণ রেখেছি। ওয়েট।”
ফালাক ফোন এনে ভিডিও অন করে রুহানির সামনে ধরল। রুহানির চোখ বড়বড় করে চেয়ে মুখে হাত দিয়ে আছে। একটু দেখেই চোখ সরিয়ে নিয়ে কাদো কাদো ফেস করে বলল,
“ছিহ! আমি এমন করেছি? ছিহ!”
ফালাক হাসছে রুহানির দিকে চেয়ে।

হটাৎ রুহানি বাঘিনীর মতো গর্জে উঠে বলল,
“তুমি এসব ভিডিও কেন করেছ?”

“আরে ওয়েট, ওয়েট। আমার খারাপ কোন উদ্দেশ্য নেই। জাস্ট তোমাকে দেখানোর জন্য। প্রমাণ ছাড়া তো আমাকে বিশ্বাস করতে না। তাই প্রমাণ রেখেছি। দাঁড়াও তোমার সামনেই ডিলিট করে দিচ্ছি।” ফালাক রুহানিকে দেখিয়ে ডিলিট করে দিল।

রুহানি সন্দেহ নিয়ে বলল,
“আর কোন ভিডিও নেই তো?”

ফালাক নিজের ফোনটা রুহানির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি নিজেই চেক করে দেখো।”

রুহানি ইতস্তত করে বলল,
“তোমার ফোন আমি কেন চেক করব? অন্যের ফোন ঘাটাঘাটি করা ঠিক না।”

“আমি তো পারমিশন দিলাম। নেও চেক করো। তোমার মনও শান্তি আমার মনও শান্তি।”

রুহানি ফালাকের ফোন নিয়ে চেক করে কোন ভিডিও পায় নি। রুহানির হটাৎ মনে হলো কোন পিক তুলে রাখে নি তো। তাই ফালাকের দিকে একবার চেয়ে ফটো গ্যালারি চেক করে শকড। এর ঘুমন্ত একটা পিক। রুহানি আঙুল দিয়ে বাম দিকে সরাতেই ওর আরো পিক পেল। একে একে অনেকগুলো পিক পেল। তবে সবগুলো পিকই মার্জিত।
রুহানি ফালাকের দিকে ফোন ঘুরিয়ে বলল,
“এগুলো কি?”

ফালাক ছু মেরে ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,”তুমি গ্যালারিতে গিয়েছো কেন?”

“ভাগ্যিস গিয়েছিলাম। এখন কি বলবে? এগুলো কি? দ্রুত ডিলিট করো নয়তো ভালো হবে না।”

কিন্তু ফালাক কিছুতেই ডিলিট করবে না।
“আমি পরে ডিলিট করে দেব। আমার ফোনে কি রাখব কি ডিলিট করব সেটা একান্তই আমার মর্জি। যাইহোক যাও এখন তোমার বন্ধুরা খুঁজছে হয়তো। রাতে ওদের কাউকে খুঁজে পাই নি তাই বাধ্য হয়েই তোমাকে আমার রুমে রেখেছি এবং নিশ্চিত থাকো নিজের সীমা অতিক্রম করি নি।”

রুহানি পিকের ব্যাপারটা পরে দেখে নিবে। আপাতত ওর যাওয়া দরকার। আটটা বাজছে। রুহানি ফালাকের দিকে একবার তাকাল। ফালাক ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। রুহানি চুল বেঁধে জামাকাপড় ঠিক করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুহানি যেতেই ফালাক হাফ ছেড়ে বাঁচল।

রুহানি রুমে গিয়ে দেখে সব এলোপাথাড়ি হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ওদের ঘুমাতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই নুশাকে একটা চেয়ারে বসে থাকতে দেখল।
“রুহানি কোথায় ছিলি তুই?”

রুহানি আমতা আমতা করে বলল,
“এখানেই ছিলাম। আবার কোথায় থাকব?”

নুশা ভ্রু কুচকে বলল,
“কিন্তু আমরা এসে তোকে পাই নি। তুই কি আমাদের ঘুমানোর পরে এসেছিস?”
রুহানি ওর কথার সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত বলল,
“হ্যাঁ এসে দেখি তোরা সব ঘুম।”

“কিন্তু তুই এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি? আমরা রুমে প্রায়ই আড়াইটার দিকে এসেছি।”

রুহানি কথা ঘোরানোর জন্য বলল,
“আরে ছিলাম কোথাও। এখন এসব বাদ দে। ফ্রেশ হয়ে নে। আমি এদের তুলি। খুব ক্ষিধে পেয়েছে। কত বেলা হয়েছে দেখেছিস?”

নুশা আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। রুহানি হাফ ছেড়ে বাঁচল।

.

ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুহানি একা একা বাগানে হাঁটছে। তায়েফ হটাৎ ওর সামনে এসে বলল,
“রাত কেমন কাটল?”

রুহানি চমকে তায়েফের দিকে তাকাল। ও বিশ্রীভাবে হাসছে। ওর হাসির কারণ ধরতে পারছে না। আর রাতের কথা কেন বলল? রুহানি প্রশ্নবোধক চাহনি দিল।

তায়েফ আবারও হাসল তারপর বলল,
“ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করছিস? লাভ নেই। কারণ আমি সব জানি। তুই সারারাত ফালাকের সাথে ছিলি। আর এদিকে সতী সাবেত্রী সেজে ঘুরিস।”

রুহানি চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তায়েফ! সবাই তোর মতো নয়। আজেবাজে কথা বলার আগে দশ বার ভাববি।”

তায়েফ ফোন বের করে বলল,
“সব প্রমাণ আছে আমার কাছে। আমি তোকে যেতে দেখেছি আর আমার ফোনও। দেখ তোর কি হাল করি। কোথাও মুখ দেখাতে পারবি না।”

রুহানি ওর কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। তায়েফ ওর প্রতি এতটা ক্ষিপ্ত যে যেকোনো কাজ করতে ওর বাঁধবে না। লোক জানাজানি হলে ব্যাপারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কেউ ওকে বিশ্বাস করবে না। রুহানি নিজের ভয়টা তায়েফের সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না। ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে চাইলে তায়েফ ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তারপর দৌড়ে চলে যায়।

ফালাক দূর থেকে ওদের কাড়াকাড়ি দেখছিল। এগিয়ে আসতে আসতে তায়েফ রুহানিকে ফেলে চলে গেছে। ফালাক দৌড়ে গিয়ে রুহানিকে ধরে দাঁড় করালো।

“রুহানি কি হয়েছে?”

রুহানি দাঁড়িয়ে কাদো কাদো ফেস করে বলল,
“তায়েফ আমাকে রাতে তোমার রুমে যেতে দেখেছে আর সেটা ভিডিও করে প্রমাণ রেখেছে। সবাইকে গিয়ে বলবে আমি খারাপ চরিত্রের মেয়ে, সারারাত তোমার সাথে থেকেছি। সবাই এসব জানলে আমি মুখ দেখাতে পারব না। আমার মনে হচ্ছে তায়েফ ইচ্ছে করে আমার ড্রিংকস চেঞ্জ করেছে।”
রুহানির কথা শুনে ফালাকের চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
রুহানি মাটিতে বসে পড়ল। ওর চোখ টলমল করছে। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে দিবে। রুহানির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না কিন্তু শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ফালাক রুহানিকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখে ওর পাশে বসে পড়ল।

“রুহানি কিছু হবে না। আমি আছি। ডোন্ট ওরি। আমি তায়েফের সাথে ড্রিল করব।”

চলবে……

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ