Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় অভিমান পর্ব-১২+১৩

প্রিয় অভিমান পর্ব-১২+১৩

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-১২|

সময় নিজ গতিতে প্রবহমান। সুখ অথবা দুঃখ, সময় নিজের মতো চলতে থাকে। কারো সুখে হিংসা করা কিংবা কারো দুঃখে ব্যথিত হওয়া সময়ের কাজ নয়। সময়ের কাজ শুধু বয়ে চলা।

রুহানির দুঃখময় জীবনও বয়ে চলছে। সময় ওর জীবনকে আরো কঠিন রুপ দিয়েছে। প্রতিনিয়ত কঠিন সংগ্রামের দিকে ধাবিত করছে।

রুহানি বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে ক্লাস শেষে বের হচ্ছে। আনমনে হাঁটছে। ওদের সংসারে টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেছে। এমন দুর্দিন যে দেখতে হবে তার সংশয় আগেই করেছিল। কিন্তু অভাব যে এত ভয়ানক তা বুঝতে পারে নি। আজ এই অভাব শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে পারছে।

ভার্সিটি ট্যুরে যাওয়ার জন্য সবাই উচ্ছ্বাসিত। ট্যুরকে আনন্দদায়ক আর স্মৃতিবহুল করার তোড়জোড় আয়োজন চলছে।
ফালাককে লিষ্ট তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রনককে দেখে ফালাক হাতের খাতা কলম রেখে ওকে ডাকল। রনককে দেখে মনে হচ্ছে তাড়াহুড়োর মধ্যে আছে।

রনক ফালাককে দেখে এগিয়ে এল। ফালাকও নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে গেল।
“জি ভাই! কিছু বলবেন?”

“এত তাড়াহুড়োয় কোথায় যাচ্ছো? তুমি কি ট্যুরে যাবে না?”

রনক ফালাকের কথা শুনে মুচকি হাসল। তারপর বলল,
“আমার মতো নিম্মবিত্তদের জন্য ট্যুর শব্দটা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না। আর এসবে আমার কোন আগ্রহও নেই। হাজার হাজার টাকা দিয়ে ট্যুরে যাওয়ার চেয়ে পরিবারের সাথে বসে একবেলা ভালোমন্দ খাওয়া আমার কাছে অধিক তৃপ্তিদায়ক এবং সুখকর।”

ফালাক রনককের কথা শুনে স্নিগ্ধ হেসে কাঁধে হাত রেখে বলল,
“সব সময় এমন থেকো। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করো। সুদিন আসবেই।”

“ধন্যবাদ ভাই। আমাকে এখন যেতে হবে টিউশনি আছে।”

“আচ্ছা আচ্ছা যাও৷ তোমাকে আর ধরে রাখব না।”

রনককে বিদায় দিয়ে ঘুরতেই রুহানিকে দেখল। ও কি জানি ভাবতে ভাবতে হাঁটছে। ওর কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। রুহানি কি নিয়ে এত চিন্তিত?

ফালাক এগিয়ে সামনের দিকে গেল। হটাৎ রুহানির বন্ধুরা রুহানিকে ঘিরে ধরে। ফালাক এক পাশে দাঁড়িয়ে গেল।
রুহানি আচমকা সবাইকে এক সাথে দেখে কিছুটা অবাক হলো। ওদের চোখ মুখের উচ্ছ্বাস দেখে বুঝল ওরা কোন কারণে খুব খুশি।

“কি রে তোরা এক সাথে ঘিরে ধরলি কেন? আর এত খুশি দেখাচ্ছে কেন?”

“আমরা ট্যুরে যাচ্ছি আর খুশি হব না? গতবার কত মজা করেছি। প্রতিবারের মতো এবারও খুব মজা করব।”

“ওহ আচ্ছা! ট্যুর না-কি? জানতাম না।”

রুহানির কথা শুনে সবাই অবাকের সপ্তকাশে। ট্যুরের কথা ও জানে না এটা কি করে সম্ভব?

“রুহানি তুই জানিস না? দিন দিন তুই এমন নিরামিষ হয়ে যাচ্ছিস কেন? কেমন দ্রুত বদলে যাচ্ছিস। কোন কিছুরই দেখছি খবর রাখিস না। যাই হোক ট্যুরের জন্য সব প্লানিং কিন্তু তোকেই করতে হবে।”

রুহানি শুকনো হেসে বলল,
“প্লানিং! এবার আমার যাওয়া হচ্ছে না রে। তোরা প্লানিং করে নে। আর খুব মজা করিস। আমি আসছি।”

ওর বন্ধুরা ওর কথা শুনে বাকরুদ্ধ। রুহানি ট্যুরে যাবে না। যে মেয়ে সব সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আজ সে নির্লিপ্ত ভাবে বলছে যাবে না।
রুহানি চলে যেতে চাইলে ওর পথ আগলে জিজ্ঞেস করে,
“রুহানি কি হয়েছে তোর? কেন যাবি না? তুই ইদানীং এমন করছিস কেন? কেমন চুপসে যাচ্ছিস। যে মেয়ে ট্যুর নিয়ে সব সময় এক্সসাইটেড থাকে, এটা সেটা প্লানিং করে আর আজ ট্যুরের কথা শুনে বলছিস যাবি না? কেন?”

“আসলে আমার ইচ্ছে করছে না যেতে। সব সময় সব মানুষ কিংবা মানুষের ইচ্ছে, মানসিকতা এক থাকে না। তোরা যা প্লিজ।”

“তুই না গেলে আমরা কি করে যাই? তোকে ছাড়া আমরা ট্যুরে গিয়ে মজা করতে পারব?”

রুহানি হালকা হেসে বলল,
“কেন পারবি না? আমি যাচ্ছি না তো কি হয়েছে সবাই তো যাচ্ছে। সবার সাথে দেখবি খুব মজা করবি আমার কথা মনেও পড়বে না।”

“কিন্তু রুহানি…

রুহানি থামিয়ে দিয়ে বলল,” প্লিজ জোর করিস না। আমি যাচ্ছি না।”
রুহানি আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। ফালাক সবটাই শুনল। ফালাক কেন জানি চাইছে রুহানি ট্যুরে যাক। কিন্তু রুহানি নিজেই চাইছে না।

.

নুশা রুহানির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রুহানি কিছুই বুঝতে পারছে না এভাবে টানাটানি করছে কেন।

রুহানিকে একটা রুমে নিয়ে কতগুলো ছেলে বসে আছে তাদের সামনে নিয়ে গেল। রুহানি ভালো করে দেখল সেখানে ফালাকও আছে। ওরা কি একটা লেখালেখি করছে।

নুশা রুহানিকে দেখিয়ে বলল,
“রুহানির নাম লিখুন। থার্ড ইয়ার। ইকোনোমিক গ্রুপ।”

রুহানি নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,
“আমার নাম কেউ লিখবে না। আমি যাচ্ছি না। নুশা তুই কিন্তু…

” রুহানি তুই যাবি।”

“আমি বলছি আমি যাব না।” রুহানি নুশার হাত ধরে এক পাশে নিয়ে গিয়ে বলল,
“কেউ না জানুক তুই তো জানিস আমি কেন যাব না? তবুও কেন এমন করছিস? আমি কিসের মধ্যে আছিস তুই জানিস না? এই মুহুর্তে আমার একটা জব প্রয়োজন। আর আমি ড্যাংড্যাং করতে করতে ট্যুরে যাব? ট্যুরে যাব টাকা পাব কই?”

“রুহানি টাকা নিয়ে তুই ভাবছিস কেন? আমি আছি তো। আর মানুষের জীবনে অনেক সমস্যা থাকে তার মানে এই নয় সে আনন্দ করতে পারবে না। নিজের মতো সময় কাটাতে পারবে না।”
রুহানি নুশার দিকে তাকাল। তারপর হালকা হাসল। অদ্ভুত হাসি। নুশা রুহানির হাসি দেখে অবাক চোখে চেয়ে আছে।
“এখন তোর টাকায় আমাকে ট্যুরে যেতে হবে। তাই তো? দয়া দেখাচ্ছিস?”

নুশা ওর কথা শুনে কটাক্ষ দেখিয়ে বলল,
“সব কথাকে ত্যারা ব্যাকা না করলে তোর হয় না? আচ্ছা তুই যখন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার বিল দিতি তখন দয়া দেখাতি? আর যখন শপিং করতে যেতাম তুই বিল দিয়ে বলতি এটা আমার পক্ষ থেকে গিফট তখনও দয়া দেখিয়েছিস? এতদিন যাবত দয়া দেখিয়েছিস অথচ আমি সেটাকে বন্ধুত্ব আর বন্ধুর দেওয়া উপহার ভেবেছি? তুই আমাকে এতভাবে দয়া দেখিয়েছিস?”

রুহানি নুশার চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। নুশা আবারও বলল,
“আজ যখন আমি সামান্য একটা ট্রিপের টাকা দিতে চাইছি তখন তুই দয়া শব্দটা আনছিস?”

রুহানি ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা সরি। কিন্তু নুশা ব্যাপারটা তেমন না। তুই আসলে বুঝতে পারছিস না।”

নুশা রুহানিকে রেখে ওদের সামনে যেতে যেতে বলল,
“আমি বুঝতে চাই না। তুই যাচ্ছিস ব্যাস। ইভান ওর নামটা লিষ্টে এড কর তো।”

রুহানি এসে বাঁধা দিয়ে বলল,
“এই না৷ আমি যাচ্ছি না সো আমার নাম যেন লিষ্টে না উঠে।”

ফালাক রুহানির নাম লিখেও কেটে দিল। মনে আবারও অভিমান জড় হলো। অভিমানের প্রেক্ষিতে ওদের দুজনের কথা কাটাকাটির দিকে চেয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“এক্সকিউজ মি. কি তামাশা শুরু করেছো তোমরা? নাম লিখতে বলছো আবার কাটতে বলছো? একজন যাবে না তাকে শুধু শুধু জোর করার তো আর মানে হয় না। যদিও এটা তোমাদের পার্সোনাল ব্যাপার তবুও বলতে বাধ্য হলাম কারণ এছাড়াও আমাদের আরো অনেক কাজ আছে। সব দায়িত্ব আমাদের উপর পড়েছে৷ তাই প্লিজ বাইরে যাও আর ঠিক করো যাবে কি-না তারপর এসো।”

নুশা রুহানির দিকে চেয়ে বলল,
“ঠিক আছে তোকে যেতে হবে না। আমিও যাচ্ছি না।”

তারপর হনহন করে বের হয়ে গেল। রুহানি একবার ফালাকের দিকে তাকাল। তারপর নুশার পেছনে পেছনে চলে গেল। ফালাক হাতের ফোনটা উঁচু করে ওদের দেখিয়ে বলল,
“আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি। হিসাবটা এগিয়ে নেও।”

ফালাক দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুহানি নুশাকে ডাকছে কিন্তু নুশা শুনছে না। ফালাক দৌড়ে গিয়ে রুহানির হাত ধরে আঁটকে দিল। রুহানি হা করে হাতের দিকে চেয়ে আছে। ওর চোখ যেন কোঠর থেকে বেড়িয়ে আসবে।

ফালাক সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“সরি, তোমাকে থামানোর জন্যই এটা করেছি। আমি কিছু কথা বলব একটু শোন প্লিজ।”

রুহানি নুশাকে গাড়িতে ওঠে চলে যেতে দেখল। তারপর সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফালাকের দিকে চেয়ে বলল,
“কি বলবে? আমি তামাশা করি এটাই তো? যাব না বলে ঢং করছি? তাই না?”

ফালাক ভ্রু চুলকে বলল,
“ঠিক তা না। আমার মনে হচ্ছে তোমার কোন প্রব্লেম আছে। তাই যেতে পারছো না। তোমার কি প্রব্লেম জানি না তবে একটা কথা বলব যদি সম্ভব হয় তবে যাওয়ার চেষ্টা করো। এতদিনে যা বুঝেছি তোমার বন্ধুরা তোমাকে অনেক ভালোবাসে, তোমার উপর অনেক ডিপেন্ড করে। তুমি না গেলে ওদের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। ওরা গেলেও ঠিক মতো আনন্দ করতে পারবে না। আগের বারের স্মৃতি গুলো ওদের বারবার আঁটকে দেবে। তাই প্লিজ যদি পারো, একটু চেষ্টা করে দেখো…”

রুহানি জানে ফালাক যা বলছে ঠিক বলছে।
“কিন্তু আপনি এত অনুরোধ কেন করছেন?”

ফালাক রুহানির দিকে চোখ তুলে তাকাল। রুহানি খেয়াল করল কেমন অদ্ভুত সে দৃষ্টি। গভীর কিছুর নিদর্শন, মাদকতায় পূর্ণ সে চাহুনি। রুহানি চোখ নামিয়ে নিল। ফালাক স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“ঠিক জানি না।”

রুহানি আবারও ফালাকের দিকে তাকাল। তারপর চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে বলল,
“ভেবে দেখব। আসছি।”

রুহানি ফালাকের দিকে আরেকবার তাকাল। তারপর সামনের দিকে অগ্রসর হলো। ফালাক রুহানির এমন কুল কুল বিহেভ দেখে কিছুটা হতবাক হলেও বেশ খুশি। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে নিজের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে আবারও দৌড়ে ওই রুমে চলে গেল।

রুহানি বাড়ি ফিরে মায়ের রুমে উঁকি দিল। ওর বাবা ঘুমাচ্ছে। মা রুমে নেই। রুহানি কিচেনের দিকে গেল। ওর মা রান্না করছে। ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে। রুহানি মা’কে ভালো করে দেখল। এই কয়েক মাসেই যেন অন্য মানুষে পরিণত হয়েছে। কি ছিল আর কি হয়ে গেছে। চেহারায় সেই উজ্জ্বলতা নেই। কেমন নেতিয়ে গেছে।

রুহানির মা রুহানিকে দেখে বলল,
“কি রে কখন এসেছিস? দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

রুহানি ভেতরে গিয়ে বলল,”এই তো মাত্রই এসেছি।”

“এসেই রান্না ঘরে এসেছিস কেন? ক্ষিধে পেয়েছে?”

রুহানি আমতা আমতা করে বলল,
“না আসলে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”

“হ্যা বল।” রুহানির নিচু স্বর আর মাথা নিচু করে বলা কথায় ওর মার একটু ডাউট হলো।
“কি রে বল!”

“আসলে ভার্সিটিতে ট্যুর। আমি যেতে চাচ্ছিলাম।”

রুহানির মা’র বুঝতে বাকি নেই মেয়ের আপাতত এক টুকরো শান্তি প্রয়োজন। যার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। রুহানির মা-ও চায় মেয়ে কিছুদিনের জন্য একটু নিজের মতো হাসি-খুশি থাকুক। একটু শান্তিতে থাকুক। এইসবের মধ্যে তো কম কষ্ট সহ্য করছে না।

রুহানির মা ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে যাবি। কত টাকা লাগবে?”

রুহানি মাথা তুলে আলতো হেসে বলল,
“টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন শুধু বাবা হ্যা বলুক।”

“তোর বাবা না করবে না। বরং খুশি হবে। কিছুদিন তো এই দুর্বিষহ জীবন থেকে দূরে থাকতে পারবি।”

রুহানির মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেল। তারপর মা’কে শান্তনা দিয়ে বলল,
“ট্যুর থেকে ফিরে আমি জবের ব্যাপারে ভাবব। এভাবে আর কতদিন? আমি যা পড়াশোনা করেছি তাতে ভালো জব না হলেও ছোটখাটো একটা জব পেয়ে যাব। তুমি একদম ভেবো না।”

রুহানির মা হালকা হেসে বলল,
“না ভাবি না। তুই এসব বাদ দিয়ে ট্যুরের প্লান কর। যা আগে ফ্রেশ হয়ে নে।”

রুহানি রুমে গিয়ে নুশাকে প্রথমে টেক্সট করল,
“আমি ট্যুরে যাব। তুই ব্যবস্থা কর। বাড়িতে পারমিশন পেয়েছি।”

রুহানি বিছানার উপরে ফোনটা রেখে ফ্রেশ হতে গেল। নুশা টেক্সট পড়তেই ওর ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির হাসি ফুটল।

চলবে…..

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-১৩|

বিকেল নাগাদ সবাই হোটেলে পৌঁছে গেল। রুহানি গাড়ি থেকে নেমে আড়মোড়া ভেঙ্গে দাঁড়াল। ও একটু জার্নিতেই হাপিয়ে যায়। ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। রুহানি নিজের লাগেজ হাতে নিয়ে বন্ধুদের সাথে হোটেলের গেট পাড় করে চারদিকে চোখ বুলালো। চারদিক নীরব,নিস্তব্ধ, কোলাহল মুক্ত। কোনো হোটেলের পরিবেশ যে এতটা নিরিবিলি হয় তা জানা ছিল না। বিস্তৃত লন, সুইমিং পুল সবটা জুড়ে নীরবতা।
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুহানি বিছানায় গা এলিয়ে দিল। রুহানির শান্তি লাগছে। কিন্তু সে শান্তিটা বেশীক্ষণ স্থায়ী হলো না। নুশা এসে ওর হাত ধরে টানতে লাগল।
“শুয়ে পড়লি কেন? খেতে যাবি না?”

রুহানি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“একটু রেষ্ট করতে তো দে।”

“রেষ্ট কর‍তে গেলে আর খাবার পাবি না। চল তাড়াতাড়ি। উঠ। খেতে চাইলে এখুনি যেতে হবে।” নুশা জোর করে রুহানিকে উঠিয়ে নিয়ে গেল।

খেয়েদেয়ে একটু আড্ডা দিয়ে রুহানি রুমে ফিরতে চাইলে নুশা আবারও ওর হাত ধরে নিচে নিয়ে যাচ্ছে।
“তুই কি আমার হাত ছিড়ে ফেলার প্লান করেছিস? আমার হাত ছাড়।”

“নিচে ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। গান-বাজনা করছে। আর আমরা রুমে বসে থাকব?”

“আমি একটু রেষ্ট করতে চাই। প্লিজ মাত্র কিছুক্ষণের জন্য।”

“আমরা এখানে রেষ্ট করতে আসি নি। মজা করতে এসেছি।”

নুশা রুহানিকে জোর করে নিয়ে বসিয়ে দিল। সারাটা দিন কাঠফাটা রোদ থাকলেও সন্ধ্যা থেকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। আকাশে একটা তারাও নেই। মেঘে মেঘে ঢেকে আছে পুরো আকাশ। সব মিলিয়ে যেন বৃষ্টির আয়োজন করছে প্রকৃতি।
বিভিন্ন ভাগে ভাগে ক্যাম্প ফায়ার করা হয়েছে। রুহানি ওদের ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের সাথে বসে আছে। ওরা হাসি-আনন্দে মেতে আছে।

গিটার হাতে ফালাক হোটেল থেকে বের হয়েছে। সবার দৃষ্টি ওর দিকে। হটাৎ রুহানির চোখ পড়ল সেদিকে। ফালাক গিটার হাতে হাত দিয়ে চুলগুলো ব্রাশ করতে করতে আসছে। শ্যাওলা রঙের টিশার্ট পরেছে, এলোমেলো চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। ঠোঁটের কোনে হাসি লেগে আছে। চোখে -মুখে কিছু একটা ঝলকাচ্ছে। হয়তো কোন কিছু পাওয়ার খুশি।

ফালাককে দেখে ওদের ডিপার্টমেন্টের একজন বলল,
“ভাইয়া গিটার হাতে যে গান পারেন?”

ফালাক মুচকি হেসে বলল,
“না তেমন না, একটু একটু চেষ্টা করি আর কি।”

সবাই অনুরোধ করতে লাগল গানের জন্য। রুহানি নুশার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,”ওরা এমন শুরু করেছে কেন? গান কি কখনো শুনে নি?”

নুশা রুহানির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“ফ্রিতে যদি একটা গান শুনতে পারি খারাপ কি? তাছাড়া এই সিনিয়র তো কম জ্বালায় নি। আজ যদি গান শোনার উছিলায় কোন বিনোদন ক্রিয়েট হয় তবে জমবে বেশ।”

রুহানি আর কিছু বলল না। ফালাক ওদের অনুরোধে ওদের সাথে বসল। তারপর গিটারে সুর ধরল।
“তুমি চাইলে বৃষ্টি,
মেঘও ছিল রাজি
অপেক্ষা শুধুই বর্ষণের।
মাতাল হাওয়া বইছে
দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান।। ”

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিন।)

এমন রোমান্টিক ওয়েদারে ফালাকের গাওয়া গান রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সবার মনেই এই মুহুর্তে হালকা প্রেম প্রেম অনুভূতি জাগছে। হারিয়ে যাচ্ছে দূর অজানায় কিংবা স্বপ্নের রাজ্যে। আর রুহানির এই গান শুনে ঘুম পাচ্ছে। ফালাক গান শেষ করে রুহানির দিকে তাকাল। রুহানি হাই তুলছে। রুহানিকে হাই তুলতে দেখে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

সবাই যখন ফালাকের প্রশংসা করতে ব্যস্ত। তখন রুহানি হাই তোলায় ব্যস্ত।
রুহানি নুশাকে বলল,
“দোস্ত ঘুম পাচ্ছে।”

“এত তাড়াতাড়ি? মাত্র তো সন্ধ্যা।”

“গান শুনে। সব দোষ এই গানের। গান শোনার পর পরই ঘুম পাচ্ছে।” রুহানি ফালাকের দিকে না তাকিয়েই কথাগুলো বলল।তারপর ফালাকের দিকে চেয়ে দেখে ফালাক ওর দিকেই চেয়ে আছে। ফালাক উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“তুমি কি মিন করতে চাইছো?”

রুহানিও উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল,
“আমি কিছুই মিন করছি না।”

“তাহলে বললে কেন আমার গান শুনে ঘুম পাচ্ছে?”

রুহানি ফালাকের কথার উত্তর না দিয়ে নুশাকে বলল,
“আমি তোকে একটা কথা বলেছি। সেই কথা নিয়ে উনি কাড়াকাড়ি করছেন কেন?”

নুশা ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক বলল,
“তোমার সাথে কথা বললেও কথাটার মধ্যে আমি ছিলাম। তাই ঢুকতে বাধ্য হয়েছি। ও আমার গানের ইনসাল্ট করেছে।”

“ইশশ আসছে! যেই গান তার আবার ইনসাল্ট।”

“নুশা তোমার ফ্রেন্ডকে বলো আমার চেয়ে ভালো গান শুনাতে। যদি পারে আর কি। মনে তো হয় না সে যোগ্যতা আছে।”

“নুশা তুই বলে দে, আমি যাকে তাকে গান শুনাই না।”

“পারলে তো শোনাবে।”
নুশা পড়েছে বিপদে। দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে ফেসে গেছে।

“উনি যে কি পারেন তা বুঝাই যায়। গান শুনে মানুষের ঝিমুনি চলে আসবে।”

“আর ইনি তো লাইব্রেরীতে গিয়েও ঘুমায়। সব জায়গায় ঘুমানোর অভ্যাস হলে যা হয়। কুম্ভকর্ণ! এখন আমার গানের দোষ।”

রুহানি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“নুশা, উনাকে মুখ সামনে কথা বলতে বল।”

নুশা ওদের মাঝখানে থেকে সরে বলল,
“গাইস, ওয়েট। ঝগড়া করবে নিজেরা সরাসরি করো।
আমি বেচারিকে কেন টানছো? নে সরে গেছি। এখন মন মতো ঝগড়া কর। আমি শুনি। দাঁড়া আমি বরং ফোন বের করে রেকর্ডিং করি। যারটা ভালো হবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে এন্ড ডোন্ট ওরি শান্তনা পুরস্কারের ব্যবস্থাও আছে।”(রুহানির দিকে চেয়ে)

রুহানি নুশার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল। তারপর বলল,
“আমি যার তার সাথে ঝগড়া করি না।”
তারপর ফালাকের দিকে তাকাল।

ফালাক তাচ্ছিল্য করে বলল,
“ঝগড়া করা তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়ের কাজ। আমার কাজ নয়।”

রুহানি নিচ থেকে ফোন তুলে হোটেলের ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। ফালাকও গিটার হাতে ভেতরে যাচ্ছে।

রুহানি পেছনে ফালাককে দেখে বলল,
“তুমি আমার পেছনে পেছনে আসছো কেন?”

ফালাক টেডি স্মাইল দিয়ে বলল,
“কারণ তুমি আমার সামনে সামনে হাঁটছো। রাস্তা ছাড়ো আগে যাই।”

রুহানি আরো জোরে জোরে হাঁটা শুরু করল। ফালাক ওর পেছনেই রয়ে গেল।

দোতলার সিড়ি পাড় করে তিনতলার সিড়িতে উঠেছে।

ফালাক পেছনে থেকে বলল,
“তোমার মতলব কি?”

রুহানি অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে বলল,
“মানে? মতলব! কিসের মতলব?”

ফালাক উপরের দিকে ইশারা করে বলল,
“তিনতলায় তো আমার রুম। তুমি তিনতলায় কেন যাচ্ছো? আমি যতটুকু জানি ভার্সিটি থেকে সব স্টুডেন্টদের জন্য পুরো দুতলা বুক করেছে।”

রুহানির হুশ হলো। ঝগড়া করতে করতে শুধু সিড়ি পাড় করেই যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে তার বোধ নেই৷ তিনতলার সিড়িতে চলে গেছে।
রুহানি ফালাকের দিকে একবার তাকাল। ফালাক মুচকি মুচকি হাসছে। এটুকুই যেন রুহানির শরীরে আগুন জ্বালাতে যথেষ্ট। তবুও ভদ্র মেয়ের মতো ফালাকের পাশ কাটিয়ে দু সিড়ি নিচে নেমে ফালাকের দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলল,
“তুমি তিনতলায় কি করতে যাচ্ছো? তোমার রুমও তো দোতলায়।”

ফালাক দু সিড়ি নিচে নেমে বাকা হেসে বলল,
“তা দিয়ে তোমার কি? এত খবরদারি কেন করছো? তুমি কি আমার জিএফ?”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে ফালাককে ধাক্কা মারল। ফালাক তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যাচ্ছিল। রুহানি সাথে সাথে দুহাত দিয়ে ফালাককে ধরে ফেলল। রুহানির বুক ঢিপঢিপ করছে। সারা শরীর কাঁপছে। ফালাক নিচে পড়ে ফেলে কি হত? ওর হাত, পা ভেঙে যেত অথবা মাথা ফেটে যেত। তুলকালাম কান্ড বেঁধে যেত। রুহানিও ফেসে যেত। লাইফে আরেকটা সমস্যা এড হত৷ ফালাকেরও ক্ষতি হত।

ফালাক অবাক হয়ে রুহানির ভয়ার্ত মুখের দিকে চেয়ে আছে। এর আগে কখনো এত ভয় পেতে দেখে নি রুহানিকে। বাদামি চোখগুলো যেন ভয়ে মাখামাখি। ফর্সা কপাল কুচকে আছে, সরু নাক
আরো সরু হয়ে গেছে। রুহানি ফালাকের হাত ছেড়ে জোরে জোরে শ্বাস নিল।
রুহানি কন্ঠস্বর মোলায়েম করে বলল,
“সরি, সরি। আমি ঝুকের মাথায় ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি। এখানে থেকে পড়ে গেলে কি হত সেটা ভাবি নি।”

ফালাক রুহানির ফেস দেখে নিজেও কন্ঠস্বর মোলায়েম করে বলল,
“ইট’স ওকে। পড়ে তো যাই নি। তুমিই হেল্প করেছো। এত সরি বলার কিছু নেই। আ’ম অলরাইট।”

রুহানি আর কিছু বলল না। নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। রুহানির আচরণ ফালাককে অবাক করছে। এ যেন সেই রুহানি নয়, কোথাও একটা পরিবর্তনের ছোয়া আছে। তবে এই রুহানিকে মন্দ লাগছে না।
ফালাক রুহানির যাওয়া দেখে বলল,
“শোন।”

রুহানি পেছনে ঘুরল। ফালাক রুহানিকে এক পলক দেখে বলল,
“আমি তিনতলায় আগে থেকেই একটা রুম বুক করে রেখেছি। আসলে আমি কারো সাথে রুম শেয়ার করতে পারি না তাই। শুভ রাত্রি।”

রুহানি কিছু না বলে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে বাড়িতে ফোন করে কথা বলল কিছুক্ষণ। তারপর আবারও ধাক্কা মারার কথা মনে পড়তেই নিজে নিজে বিড়বিড় করে বলল,
“রুহানি কোথাও না কোথাও তোর আগের ভয়ংকর অভ্যাসগুলো রয়ে গেছে। নয়তো ফালাককে ধাক্কা দিতে পারতি না। অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা জরুরী, নয়তো বিপদে পড়তে এক মিনিটও লাগবে না।”

পরের দিন সকালে আর ফালাকের সাথে দেখা হয় নি। নুশা ঝগড়ার জন্য বারবার রুহানিকে ক্ষেপাচ্ছে।
“আচ্ছা তুই ফালাক ভাইকে তুমি বলিস কেন?”

“কারণ প্রথম দিন থেকেই বলি। অভ্যাস হয়ে গেছে।”

“কিন্তু উনি তো সিনিয়র। আপনি বলা উচিত।” (টিপ্পনী কেটে)

“আরে রাখ তো, কে যাবে ওকে এত রেস্পেক্ট দিতে? আপনি! হুহ! আমি তুমি বলি আর তুমিই বলব আজীবন।”

নুশা বড় করে হা করে বলল,
“আজীবন! মাই গড! এত দূর!”

রুহানি চোখ ছোট ছোট করে নুশার দিকে তাকাল। নুশা এক দৌড় দিল। রুহানিও ছুটছে ওর পেছনে পেছনে।

চলবে……

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ