প্রিয় অভিমান পর্ব-০৮

0
1016

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৮|

ভোরের আলো ফুটেছে। পাখিরা ডাকছে, প্রজাপতিরা ফুলে ফুলে উড়ছে। নিরশ একটা সকালের আবির্ভাব। রুহানির পরিবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। আজ এ-ই বাড়ি, বিষয় সম্পত্তি সব নিলামে উঠবে। এত বছরের কষ্টে অর্জিত সম্পত্তি আজ অন্য কেউ মালিক হবে। কি করে ওই চোখের পাতায় ঘুম আসবে? রুহানি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নিজের রুমটা চোখ বুলায়। আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো গুছানো রুমটা। আজকের পর প্রতিটা দেয়াল অন্য কারোর অধীনে থাকবে। এই রুম অন্য কারো হয়ে যাবে। সে তার নিজের মতো রুম সাজাবে। ছোট থেকে যে রুমটায় বড় হয়েছে, হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে, প্রতিটি জিনিসে ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে তার সবকিছু অন্য কারো হয়ে যাবে। রুহানির কোন অধিকার থাকবে না। চাইলেও আর আসতে পারবে না। ছুতে পারবে না জানালার কাচ। রুহানির চোখের পাতা ভারী হয়ে এলো। মুখ চেপে ধরে কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ল। দু’হাতে কার্পেট খামচে ধরে শব্দ করে কাঁদছে।

রুহানি বিষন্ন মুখে মায়ের রুমে গেল। ওর মা বিছানার উপর পাথরের মতো বসে আছে। যেন সমস্ত বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। রুহানির সাহস হলো না মায়ের কাছে যাবার। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুহানের রুমের দিকে গেল। রুহানের বিছানা পরিপাটি করা। এর মানে রুহানও সারারাত বিছানায় শরীর এলায় নি। রুহানি পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও রুহানকে দেখতে পেল না। রুহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর দৃষ্টি বাগানের বড় প্যান্ডেলের দিকে। রুহানি নিঃশব্দে ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।

রুহান বোনের উপস্থিতি টের পেয়ে প্যান্ডেলের দিকে চোখ রেখেই বলল,
“আপু, কিছুক্ষণ পরেই ওরা চলে আসবে তাই না? তারপর আমাদের বাড়িটাও চলে যাবে।”

রুহানির বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। ভাইয়ের কথায় কি জবাব দেবে জানা নেই।

রুহান ওর দিকে ঘুরে বলল,
“আমরা কোথায় যাব আপু? আতাউর আংকেলের দেওয়া ঠিকানায়?”

রুহানি প্যান্ডেলের দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“হয়তো।”

“ওখানে আমরা কি করে থাকব? আমি স্কুলে কি করে যাব? বন্ধুরা জানতে পারলে কি হবে? আমি আর স্কুলে যাব না।”

রুহানির গলা ধরে আসে। ভাইকে বুকে জড়িয়ে বলল,
“এমন কথা বলে না। দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আবার এই বাড়িতে ফিরে আসব।”

দু’দিন গোছগাছ করার পর ভাড়া বাড়িতে উঠেছে। রনকও এসেছে। দায়িত্ব নিয়ে সকল আসবাবপত্র নিয়ে আসা থেকে শুরু করে সেট করা সব কাজ দেখছে। রুহানি, রুহান আর ওদের মা ভাড়া বাড়িতে এসেছে। আসবাবপত্র সব সেট করা হয়ে গেছে।

ওদের দেখে রনক মুচকি হেসে বলল,
“রুহানি বাড়িটা অত বড় না হলেও যথেষ্ট সুন্দর এবং পরিপাটি। আমার কিন্তু খুব পছন্দ হয়েছে।”

রুহানি প্রতিউত্তরে মুচকি হাসল। ও জানে রনক কেন এ কথা বলল। এই বাড়ি দেখে যেন মন খারাপ না করে তাই। রুহানি ঘুরে ঘুরে রুম গুলো দেখে নিল। বেড রুম, ড্রয়িংরুম, কিচেন, বারান্দা সব দেখে নিল। সব জায়গায় আসবাবপত্র সেট করা হয়েছে কি-না। রুম গুলো ওদের বাড়ির তুলনায় যথেষ্ট ছোট।

রুহানি মায়ের কাছে গেল। ওর মা থম মেরে বসে আছে। লাগেজ গুলো মেঝেতে রাখা। রুহানি গিয়ে মা’য়ের পাশে বসল। তারপর হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“মা, সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।”

ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিছু ঠিক হওয়ার নেই রে রুহানি। তোর বাবার এই অবস্থা। তোর কি হবে? রুহানের কি হবে? তোদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভেবেই আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। কি করে দুটো সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যত মেনে নেব?”

“আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছেন তাই হবে। এ নিয়ে ভেবে কি হবে? যেটা হওয়ার হবেই।”

রুহানির মা চমকে রুহানির দিকে তাকাল। রুহানি কবে থেকে ভাগ্যে বিশ্বাস শুরু করল। তার মেয়ে হটাৎ করে বড় হয়ে যাচ্ছে। বড়দের মতো কথা বলছে তাও কত ঠান্ডা স্বরে।

সেদিন রাতে রুহানি মায়ের সাথে ঘুমায়। ওর মা রুহানিকে বুকে জড়িয়ে সারারাত কেঁদেছে। একটুও ঘুমায় নি। রুহানি চুপ করে ছিল। একবারও বলে নি মা কেঁদো না।

হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়ে রুহানির বাবাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ভাড়া বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি থামতেই রুহানির বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“রুহানির মা আমরা কোথায় এসেছি?”

রুহানি আর ওর মা দুজন দুজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। রুহানি হালকা হেসে বলল,
“বাবা, আগে ভেতরে যাই তারপর সব বলছি।”

রুহানির বাবা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কোথায় এসেছে তাও বুঝতে পারছে না। অন্যের সাহায্য নিয়ে ওর বাবাকে উপর তলায় নেওয়া হলো।

ওর বাবা বাড়ির সাজসজ্জার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকাচ্ছে। ওর বাবাকে রুমের ভেতরে নিতেই গম্ভীরমুখে বলল,
“এটা তাহলে আমাদের নতুন আশ্রয়স্থল। নিলামে সব কবে উঠেছে?”

রুহানি বাবার কথা শুনে চুপ করে গেল। তারপর মায়ের দিকে একবার চেয়ে বলল,
“আমি বাবার জন্য পানি নিয়ে আসছি।”
রুহানি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

রুহানির মা বিছানায় বসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“দুদিন আগে।”

“আমাকে বলো নি কেন?”

রুহানির মা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার শরীরের এ অবস্থা। তাছাড়া এসব তো হওয়ারই ছিল।”
রুহানির বাবা রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
“আমাদের ছেলেমেয়েরা এখানে থাকবে? আমি ওদের আদর-আহ্লাদে প্রাচুর্যের মাঝে বড় করেছি। সবকিছু চাওয়ার আগেই হাতের কাছে পেয়ে গেছে। ওরা এখানে কি করে থাকবে? আমি কি করে ওদের কষ্ট পেতে দেখব? আর এখন তো আমি নিজেই বোঝা। (হুইল চেয়ারে আঘাত করে) কেন আমি মরে গেলাম না। হসপিটাল থেকে কেন ফিরে এলাম? তাহলে তো নিজ চোখে আমার আদরের ছেলে-মেয়ের দুর্দশা দেখতে হতো না। এ-সব আমি দেখতে পারব না।”
(কাঁদতে কাঁদতে)

রুহানির মা নিজের কান্না আঁটকে শান্তনা দিয়ে বলল,
“তুমি এমন করছো কেন? কেন এভাবে ভেঙে পড়ছো? তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। শুধু কিছুদিন ম্যানেজ করে নিতে হবে। তোমার ছেলেমেয়ে অনেক স্ট্রং। ওরা সব সামলে নিতে পারবে। তুমি যদি এভাবে ভেঙে পড় ওদের সাহস কে দিবে? সন্তানের উপর বাবার ছায়া না থাকলে সে সন্তান যে কতটা দূর্ভাগা তুমি জানো না? বাবা যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন সন্তানের মাথার উপর তার ছায়া থাকাটা জরুরী। তবেই ছেলেমেয়েরা সে ছায়ার ভরসায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। চোখের পানি মুছো। ওরা তোমাকে কাঁদতে দেখলে আতংকিত হয়ে পড়বে। আমি ওদের শক্ত, সাহসী দেখতে চাই।”

রুহানি চোখের পানি মুছে গ্লাস, জগ নিয়ে হাসিমুখে রুমে এলো। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে বাবার দিকে এগিয়ে দিল। ওর বাবা গ্লাসের দিকে অপলক চেয়ে আছে। যে মেয়ে নিজে এক গ্লাস পানি ঢেলে খায় না সে আজ নিজের হাতে গ্লাস, জগ বয়ে এনে পানি ঢেলে খাওয়াচ্ছে।
“কি হলো বাবা? নেও।”

রুহানির কথায় চমকে গ্লাস নিয়ে পানি খেল। তারপর রুহানির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি দ্রুত সব ঠিক করে দেব। তুই চিন্তা করিস না। আগের মতোই হাসিখুশী থাকবি। আমি সব সময় তোর চোখেমুখে খুশির ঝলক দেখতে চাই। তোকে খুশি দেখতে চাই।”

রুহানি বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বলল,
“আমি জানি তুমি সব ঠিক করে দেবে। আমি জানি আমার বাবা সুপারম্যান।” তারপর মিষ্টি হাসল।

এদিকে রুহানিকে দীর্ঘদিন ভার্সিটিতে না পেয়ে ফালাক অস্থির হয়ে পড়ছে। রোজ এটুকু আশা নিয়ে আসে রুহানি আজ এসেছে কিন্তু না আসে না রুহানি। অপেক্ষা শব্দটা ফালাকের কাছে অনেক ভারী মনে হচ্ছে। রুহানি না আসায় ওর সমস্যা হওয়ার কথা না। না আসলেই বরং ভালো। বিরক্ত করার কেউ নেই। কিন্তু আজকাল ফালাক রুহানির বিরক্ত করা গুলো খুব মিস করছে। রুহানিকে ছাড়া ভার্সিটির প্রতিটি স্থান নীরব, নিস্তব্ধ লাগে। রুহানি পুরো ভার্সিটি মাতিয়ে রাখত। ওর পদচারণায় সব মুখরিত থাকত। কিন্তু ও না থাকায় মনে হচ্ছে কি জানি নেই। ভার্সিটি তার প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে। ফালাক কাকে জিজ্ঞেস করবে, কি করে খোঁজ নিবে রুহানির জানা নেই। কাউকে জিজ্ঞেস করলে কি মনে করবে।

ফালাক একদিন রনককে জিজ্ঞেস করেছিল রুহানির কথা। রনককে রুহানি ওর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করেছিল। তাই রনক বলেছে,
“ফ্যামিলির সাথে ব্যস্ত আছে। কিছুদিন পর থেকে আসবে।”

ফালাক রনকের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারে নি। অপেক্ষা করে যাচ্ছে রুহানির জন্য। এদিকে রুহানি ঠিক করেছে আর পড়াশোনা করবে না। পরিবারের একটা রোজগারের পথ খুঁজতে হবে। ও হিসাব করে দেখেছে যা ক্যাশ টাকা আছে তাতে বাড়ি ভাড়া, বাবার ওষুধ-পথ্য, ভাইয়ের পড়াশোনা আর সংসার খরচ নিয়ে তিনমাস আরামসে কেটে যাবে কিন্তু তারপর কি হবে? এছাড়া ভার্সিটিতে যাওয়া মানে নিজের হাতে নিজের বেজ্জতি করা। তাই এখন ওকে একটা কাজ খুঁজতে হবে।

.

রুহানি রান্নাঘরে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছে। ওর মা হালুয়া বানাচ্ছে। রুহান ড্রয়িংরুম থেকে চিল্লিয়ে রুহানিকে ডাকছে।
“আপু কখন থেকে ফোন বাজছে তোমার।”

রুহানি হাতে কিছু বাদাম নিয়ে নিজের রুমে গেল। বিছানার উপর থেকে ফোন তুলে নিল। নুশা ফোন করেছে। রুহানি কেটে দিতে গিয়েও কি মনে করে রিসিভ করে নিল।

রুহানি ফোন রিসিভ করতেই নুশা বলে উঠল,
“তুই তোর ফ্যামিলির সাথে বাইরে সময় কাটাতে গিয়েছিস তাই না? তোকে যেন ডিস্টার্ব না করি আমরা।”

রুহানি চুপ করে আছে। কোন উত্তর দিচ্ছে না। নুশা উত্তর না পেয়ে খেকিয়ে বলল,
“কথা বলছিস না কেন? এমনই তো মেসেজ করে বলেছিলি।”

রুহানি আবারও চুপ করে আছে। নুশার কান্নার শব্দ পাচ্ছে।
নুশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমি সব সময় তোর সব কাজে, কথায় সাপোর্ট করেছি। তুই যা বলেছিস তাই করেছি। তায়েফের সাথে পর্যন্ত সব যোগাযোগ অফ করে দিয়েছি। এতদিনের সম্পর্ক আমাদের, সবকিছু এক সাথে করি। শপিং করতে পর্যন্ত একা যাই না। অথচ তুই আমাকে কখনো আপন মনে করিস নি। বিশ্বাস আর ভরসা করিস নি। এতকিছু হয়ে গেল তুই আমাকে কিছুই বলিস নি?”

রুহানির আর বুঝতে বাকি নেই নুশা সব জেনে গেছে। রুহানি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“রনক বলেছে?”

নুশা অবাক হয়ে বলল,
“রনক! ও জানে! অথচ আমি কিছুই জানি না। আমি তোর বাড়িতে গিয়েছিলাম। যে মেয়ে একদিন বন্ধুদের ছাড়া থাকতে পারে না সে ১০-১২দিন ধরে লাপাত্তা। তাই খটকা লেগেছে। তুই এখন কোথায় আছিস?”

রুহানি শুকনো মুখে বলল,
“আছি।”
“রুহানি এড্রেস চেয়েছি আমি।” রুহানি নুশার রাগ ফোনের অপর পাশ থেকেই অনুভব করতে পারছে। রুহানি এড্রেস দিয়ে দিল।

দু’ঘন্টার মধ্যে রুহানি এসে হাজির। এসেই রুহানিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল কিছুক্ষণ। রুহানি উল্টো নুশাকে শান্তনা দিচ্ছে।
হাজারো কথার মাঝে রুহানিকে ভার্সিটির কথা বললে রুহানি সরাসরি বলে দেয়, ও আর ভার্সিটিতে যাবে না। পড়াশোনা শেষ।

নুশা অনেক বুঝিয়েছে, রুহানির বাবা-মাও অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু ওর একি কথা ও আর যাবে না।
নুশা রুহানিকে এটাও বলেছে, ভার্সিটির কেউ কিছু জানে না। আর ওর বন্ধুরাও কিছু জানে না। কার এত সময় আছে অন্যের খোঁজ করার? ও আগের মতোই থাকতে পারবে কিন্তু রুহানি এক কথায় অটল।

নুশা কয়েকদিন পর পর ওদের বাড়িতে আসে। ওদের খোঁজ খবর নেয়, রুহানির সাথে সময় কাটায়, রুহানিকে বুঝায়।

রুহানির বাবা রুহানিকে অনেকবার বলার পর রুহানি ভার্সিটিতে যেতে রাজি হয়েছে। সব সময়ের মতো দামি গাড়ি চড়ে, দামী পোশাকেই ভার্সিটিতে গেল। কিন্তু কেমন অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে দামি পোশাকের আড়ালে ভেতরটা লুকাতে পারছে না। গুটিগুটি পায়ে মাথা নিচু করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। আগে যে জায়গা দিয়ে রুহানি হেঁটে যেত ওই জায়গা যেন চিৎকার করে বলতো রুহানি গিয়েছে এই জায়গা দিয়ে। কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম।
রুহানি বারান্দার কাছে যেতেই ওর উপর তরল কিছু পড়ল। রুহানি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ওর উপর পানি ফেলা হয়েছে। চুল, জামার কিছু অংশ ভিজে একাকার। রুহানি হাত দিয়ে মুখের উপর থেকে ভেজা চুল সরালো। তারপর উপরের দিকে তাকাতে চেয়েও পারল না। মাটির দিকে চেয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে মানুষের ভিড় জমাতে শুরু করেছে। রুহানির চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি পড়ল। ভেজা থাকার কারণে কেউ বুঝতেও পারল না। দু’হাতে নিজের ভেজা শরীর ঢাকার চেষ্টায় রত। মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কাঁদছে।
কেউ দৌড়ে এসে ওর গায়ে কোর্ট জড়িয়ে দিল। রুহানি সামনের মানুষটাকে না দেখে মাথা নিচু করে কোর্টটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নিল।
নুশা খবর পেয়ে দৌড়ে এসেছে। সাথে ওর বন্ধুরাও। সবাই অবাক হচ্ছে রুহানির বিহেভিয়ার দেখে। ও এতটা শান্ত কি করে। ওর যেখানে চিৎকার চেঁচামেচি করে পুরো ভার্সিটি মাথায় তোলার কথা সেখানে নীরব পরিবেশ বিরাজমান। এটা কি করে সম্ভব?
তবে সে পরিবেশ বেশিক্ষণ নীরব থাকতে পারল না। ফালাকের হুংকারে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশ থমথমে রুপ নিল।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে