প্রিয়তমেষু – Md Nazmul Hasan

0
474

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগীতা।
#চিঠি_০২

প্রিয়তমেষু,

অাশাকরি বেশ ভালোই অাছো। অামি শারীরিকভাবে বেশ ভালো থাকলেও মনের দিক থেকে অনেকটাই ভালো নেই। এতক্ষণে তুমি হয়তো অামার সাথে রেগে অভিমানে চুপ হয়ে অাছো। কিছুই বলতে পারছোনা।মাঝে মাঝে ভাবি এ সময়টা যদি চিঠির হতো তাহলে বেশ ভালো হতো। একটু অবসরে তোমাকে নিয়ে লিখতে বসার সময় হতো। তোমায় নিয়ে ভাবনা জগতের মধুর সময়টিতে পৌছানো যেতো। কিন্ত দেখো, যোগাযোগের এতো এতো ব্যাবস্থা থাকা সত্তেও তোমার সাথে নিয়ম করে সময় দিতে পারিনা, কথা বলতে পারিনা। তবু, অামি যেনো ঠিক নব্বইয়ের দশকে বসবাস করা কেউ। যে একটু অবসরে তোমার মতো সুদর্শন ও অনেক গুণের অধিকারী ষোড়শী তরুনীকে নিয়ে অানমনে অনেক স্বপ্ন অাঁকি। অনেক কিছুই ভাবতে থাকি। যেখানে কোন অন্ত বলে কিছু থাকেনা।তোমাকে চিঠি লিখার সময় পাই। এমন অনেক চিঠি লিখি, যেগুলো অদ্যাবধি তোমাকে দিতেও পারিনি। অাধুনিকতার যুগে অামার এ বিষয়টি হয়তো অনেকে নিছক পাগলামি মনে করতে পারে, এমনকি করেও। এমনকি তুমিও ঠিক তাই করো। অামার চিঠি তোমার কাছে নিছক পাগলামি মনে হয়। অামাকে চিঠি লিখতে বললে হাজারটা অজুহাত সামনে তুলে ধরো।

শুরুতেই বলেছি অাজ অামার মনটা বিশেষ ভালো নেই। কেমন যেনো শুণ্য শুণ্য লাগছে সবকিছু। অাজ যখন সকল কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম, তখন খুব হতাশ হচ্ছিলাম নিজে নিজে। করোনা মহামারির কারনে অামাদের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেলো! পড়াশুনা থেকে যথেষ্ট ছিটকে গেলো মন। এদিকে বাবার বড়ো ছেলে হিশেবে যথেষ্ট বড়ো হয়েছি, এখনও বাবার থেকে পয়সাকড়ি নিয়ে চলতে হয়। কি করবো অাসলে? নিজের জীবনটাকে কিভাবে খুব দ্রুত একটা মোটামুটি স্থানে সচল করা যায়। গত চার বৎসর অামরা একটা প্রতিশ্রুতির মধ্যে অাবদ্ধ। অনেক কষ্ট করে তুমি কোন রকম উচ্চ মাধ্যমিক অবদি পড়তে পেরেছো। অার কতটুকুই পড়তে দিবে কে জানে! এবং ক’দিনই বা তোমার মা তোমাকে রেখে রাখবে অামার জন্য! এখনতো অষ্টম শ্রেণীর মেয়েদের ও বিয়ে হয়ে যায় শারীরিক সুন্দর অবকাঠামো গঠন হলেই।অার অামি তোমাকে চার চারটি বৎসর অপেক্ষা করিয়েছি। এখন যদি তোমাকে হারাতে হয় শুধু অামার কোন কাজ না থাকার কারনে,তাহলে কি করে অামি তা মেনে নিবো বলো! বড়ো রাস্তা পারাপার হচ্ছিলাম যখন, তখন এ কথাগুলো মনের হতাশা থেকে উত্তরণ হতে শুরু করে মনের হতাশা থেকে। তোমাকে কি করে পাবো তা নিয়ে হতাশা।এমন অবস্থায় হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখি প্রিয় জিনিসটি নেই। কথাটি তোমাকে কি করে বলবো বুঝতে পারছিনা। তুমি শোনে কতটা কষ্ট পাবে সেটিও জানিনা।কিন্ত অামি যতবারই কথাটি ভাবছি, অামার চোখে অজান্তেই জল চলে অাসছে। এমনিতেই তোমার অামার প্রতি হাজারটা অভিযোগ। সময় দেইনা,কথা বলিনা রোজ।তার উপর এ কথা বললে তুমি অামাকে কতটা অযত্নশীল ভাববে তা অামার অজানা। অাশাকরি অামার পরবর্তী কথাগুলো শোনে অামাকে উল্টোপাল্টা কিছু ভাববেনা। গত চার বৎসরে যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অামাকে ভালোবেসে এসেছো, সে বিশ্বাসটুকু অামার প্রতি এখনো রাখবে।কিছুদিন অাগে তুমি খুব যত্ন করে অামাকে একটা রুমাল বানিয়ে দিয়েছিলে।যেটি অামার অত্যন্ত পছন্দের এবং ভালোবাসার। রুমালটি এতোটা ভালো লেগেছিলো যে, এটি ব্যাবহার করার কোন ইচ্ছাই হচ্ছিলোনা। যদি নষ্ট হয়ে যায়! তাই অাজ ক’দিন যাবৎ ভাবছিলাম এটি অার ব্যাবহার করবোনা। বরং স্বযত্নে অাগলে রাখবো কোমল স্পর্শে ধুয়ে। কিন্ত দেখো! অাজ কাজের ফাঁকে হঠাৎ কোথায় পড়ে গেলো তা টেরই পেলামনা। অামার চোখ বেয়ে সাথে সাথে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। তাছাড়া কিছুই চিন্তা করে বের করতে পারলামনা কোথায় পড়তে পারে, কত জায়গায় গেলাম! কোথায় খুঁজবো? রুমালটি যে অামার খুব দরকার।
তোমার দেওয়া প্রতিটা জিনিস ই অামার কাছে মূল্যাবান। কিন্ত এই রুমালটির মতো করে অন্য কিছু নিয়ে এতোটা অাবেগ,ভালোবাসা কাজ করেনি।রুমালের প্রতিটা সুতোর মাঝে তোমার যত্নেমাখা ছোঁয়া অাছে।কত সুন্দর কারুকার্য! অাহা! কে দেবে অার! কত কষ্ট করে বানিয়েছো। ঠিক এটার মতো করে কি অার হবে! হবেনা তো। কারন,সব জিনিস যে সবসময় চাইলেই করা যায়না। অামার এ খারাপ লাগা কবে পুরোপুরি নিঃশেষ হবে জানিনা। যে জিনিসটি মানুষের মনে দাগ কেটে দেয়,মানুষ সেটির কথা অাজন্ম ভুলতে পারেনা। অামিও ঠিক পারবোনা। যেমন করে তোমাকে রেখেছি একজীবনের পুরোটা জুড়ে। অামার প্রতি তুমি রাগ করোনা। অামি হেয়ালিপনা করে হারাইনি, বরং খুব যত্নে যেভাবে তোমার প্রতিটা জিনিস অাগলে রাখি, সেভাবেই রাখতে চেয়েছিলাম।পারলামনা।ক্ষমা করে দিও।

ইতিঃ-
তোমার অভ্র

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে