Monday, October 6, 2025







প্রিয় বেগম পর্ব-৩৩+৩৪

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_৩৩
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

বহুদিন পর ভাইজানকে দেখে খুশিতে আত্মহারা সকলে। সায়রা, শবনম, আয়শা ছুটে এল। সালাম দিতেই শেহজাদ সালামের উত্তর দিয়ে তাদের মাথায় হাত চাপড়ে বলল,

‘ কি অবস্থা সবার?

সায়রা বলল,

‘ ভালো। আপনি আসায় সবাই খুব খুশি হয়েছি।

সিভান কোল থেকে নেমে গিয়ে পালকি দেখে পালকির কাছে ছুটে গেল।
সাফায়াত এসে শেহজাদকে বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ তুমি ছাড়া এই মহলটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল ভাইজান। সব আনন্দ নিয়ে গেলে। দেখো তোমার আগমনে সবাই খুশিতে মেতে উঠেছে। তোমার শত্রুকেও স্বীকার করতে হবে তুমি এই মহলের প্রাণ। ‘

শেহজাদ ওর পিঠ চাপড়ে বলল, ‘ শেরহাম সুলতান কি আমাকে দেখে খুশি হয়েছেন?

সাফায়াত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হেসে বলল,

‘ হ্যা। তুমি ফিরছো না তাই তো অভিষেকের সময় ঘোষণা করেছে।

শেহজাদ বক্রহেসে বলল, ‘ এই খুশি বেশিক্ষণ থাকবে না। রূপাকে দেখলে উবে যাবে। ‘

সাফায়াত হাসলো। শেহজাদ চিঠিতে সাফায়াতকে সবটা জানিয়েছিল। বোন জামাতা হিসেবে সে মনেপ্রাণে শেহজাদকে চাইলেও যেদিন রূপার প্রতি ভাইজানের দুর্বলতা দেখেছে ঠিক সেদিন থেকে সে চেয়েছিল রূপাই যেন ভাইজানের হয়। বড় ভাইজানের কাছে সে খেলার পুতুলের মতো। তার একমাত্র উদ্ধারকারী শেহজাদ ভাইজানই হতে পারে। বোনের অনুভূতি সম্পর্কে জানার পরও সে অপারগ। ভাইজান অবশ্যই তটিনীকে সুপাত্রে নিকাহ দেবেন তা সম্পর্কে সে অবগত। সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছেতে ঘটবে।

খোদেজা এগিয়ে এল। শেহজাদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। শেহজাদ বলল,

‘ আমি আপনাদের ছেড়ে আর কোথাও যাব না আম্মা। ‘

খোদেজা মাথা তুলে বলে,’ সত্যি বলছো? ‘

‘ জ্বি সত্যি। ‘

খোদেজা অশ্রুজলে হাসলো। খোদেজা পালকির দিকে তাকালো। চোখমুখ মুছে বিস্মিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

‘ পালকিতে করে কে এসেছে? ‘

‘ শেহজাদ পালকির দিকে তাকালো। সিভান পালকির পর্দা সরিয়ে অপরূপাকে দেখে বলল,

‘ সুন্দর বউ! কি মজা! সুন্দর বউ এসেছে। ‘

উপস্থিত সকলেই হতভম্ব চোখে তাকায়। শেরহাম এগিয়ে আসে। তার কপালে ভাঁজ। চোখে কৌতূহল। সকলেই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। শেহজাদ পালকিতে বসা অপরূপাকে বলল,

‘ এসো। ‘

অপরূপা পালকি হতে নামলো। সায়রা,সোহিনী,শবনম এসে অপরূপার সামনে দাঁড়ালো। সায়রা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ উফফ ভেবেছিলাম তোমায় আর কখনো দেখবো না। কত খুশি লাগছে তোমাকে দেখে। ‘

অপরূপা কোনো কথা বললো না।
সায়রা অপরূপাকে ছেড়ে ওর মুখ অনাবৃত করে দিল। শেরহাম এগিয়ে এসে বলল,

‘ তুমি তারমানে ওর সাথে ছিলে? এই তুই ওকে কোথায় পেয়েছিস? ‘

শেহজাদ উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। সায়রাকে বলল,

‘ রূপাকে অন্দরমহলে নিয়ে যাও। ‘

‘ নাহ ও অন্দরমহলে যাবে না। আমার কথার উত্তর দে। ‘

সায়রা সোহিনীরা ওর গর্জনে সরে দাঁড়ালো। খোদেজা এগিয়ে এসে অপরূপার সামনে দাঁড়ালো। সকলে যা লক্ষ করেনি খোদেজা তা লক্ষ করলেন। গায়ের ভারী পোশাক, নাকের টানানথ, মাথার টায়রা পরখ করে অত্যধিক কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? এই সাজে কেন? তোমার নিকাহ হয়েছে? ‘

অপরূপা উপর-নীচ মাথা দুলালো।
খোদেজার বক্ষঃ কেঁপে উঠলো। চট করে শেহজাদের দিকে তাকালেন উনি। শেহজাদ শান্ত। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে
শেরহামের দৃষ্টিজোড়া হতে বিস্ময় গলে পড়ছে। বাকি সবাইও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে অপরূপার দিকে। শাহানা আর হামিদা ফিসফিস করতেই তটিনী বলল,

‘ আম্মা রূপা এসব কি বলছে?’

শেরহাম এগিয়ে এসে খপ করে অপরূপার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলল,

‘ মিথ্যে বলছো? কিসের নিকাহ? কার সাথে? এসব নিকাহ আমি মানিনা। ‘

শেহজাদ এসে তার হাত থেকে রূপাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

‘ আমার সাথে। ও আজকের পর থেকে তোমার ছোট ভাইয়ের বেগম। দৃষ্টি আর মুখ সংযত করো। নইলে আমাকে শেখাতে হবে। ‘

সকলেই বিস্ময়ে কিম্ভূতকিমাকার। শেরহামের মাথার উপর যেন বাঁজ পড়ার শব্দ হলো। হাতের মুঠো, চোয়াল, চিবুক শক্ত করে ভয়ংকর হয়ে উঠলো সে। অপরূপা শেহজাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

খোদেজা এসে বলল,

‘ পুত্র কি বলছো এসব? ‘

‘ ঠিক বলছি আম্মা। আমি রূপার দায়িত্ব নিয়েছি কালেমা স্বাক্ষী রেখে । এই সম্পর্ক সত্যি। ‘

শেরতাজ সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,

‘ শেহজাদ! এতবড় ভুল করতে পারো না তুমি। এই মেয়ে নিষ্পাপ হতে পারে। কিন্তু ও তোমাকে আর তোমার রাজ্যের ধ্বংসকারী অস্ত্র হয়ে এসেছিল।’

তটিনী মুখে ওড়নার আঁচল গুঁজলো। শাহানা বলল,

‘ শান্ত হও কন্যা। খোদাবান তোমার কষ্টের উত্তম প্রতিদান দেবেন মা। ‘

তটিনী চলে গেল দৌড়ে। শাহানা তার পিছুপিছু চলে গেল।

শেরতাজ সাহেবের কথার প্রত্যুত্তরে শেহজাদ বলল,

‘ আমি ঠান্ডা মাথায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বড়চাচা। সায়রা রূপাকে অন্দরমহলে নিয়ে যাও। আম্মা আপনিও যান।’

শেরহাম অপরূপার পথ আটকে বলল,

‘ সত্যি কথা বলো। ও তোমাকে জোরাজোরি করে নিকাহ করেছে?’

অপরূপা দৃঢ় কন্ঠে বলল,

‘ নাহ। ‘

শেরহাম বাজখাঁই গলায় বলল,

‘ আবারও প্রশ্ন করছি। সত্যিটা বলো। তুমি আমাকে ভালোবাসতে আর ওকে নিকাহ করতে রাজী হয়ে গেলে? আমার হয়ে আমার পিঠে ছুরি মেরেছ? আমার শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছ? ‘

অপরূপা বলল,

‘ আপনি ছলনা বন্ধ করুন। ‘

শেহজাদ গর্জন করে বলল,
‘ রূপা ভেতরে যেতে বলেছি। সায়রা নিয়ে যাও। ‘

সায়রা একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল অপরূপাকে। শেহজাদ শেরহামের পথ রুদ্ধ করে বলল,

‘ যুদ্ধ আমার সাথে। আর যুদ্ধ নারীঘটিত কোনো ব্যাপার নয় । সুপুরুষ হয়ে থাকলে আমার সাথে জিতে দেখাও। রূপার দিকে হাত বাড়ালে আমি এবার হাত কাটতে দু’বার ভাববো না।’

‘ শেরহাম ধাক্কা দিয়ে ওর কলার চেপে ধরে বলে,

‘ আমার সবকিছুর উপর তোর নজর। ভিখিরিনীর ছেলের নীচু নজর তো হবেই।

দেহরক্ষীরা এসে শেরহামের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। টেনে ধরে সরিয়ে নেয়।

শেহজাদ কলার ঝেড়ে বলে,

‘ তোমার এসব ফালতু কথায় আমার কিছু যায় আসে না। তোমার সবকিছুতে নয় বরং আমার সবকিছুতেই তোমার নজর ছিল। তোমার মতো মানুষকে রূপা ঘেন্না করে। তুমি দিনদিন নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়েছ। প্রতিহিংসা তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। তুমি আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। কিচ্ছু না। ‘

শেরহাম সারা মহল কাঁপিয়ে বিকটশব্দে গর্জে বলল,

‘ এবার করব। তোর ধ্বংস না দেখা অব্দি আমি শান্ত হবো না। তুই আর তোর রূপা দুটোকেই মারব আমি। ‘

শেহজাদ গটগট পায়ে হেঁটে ভেতরে চলে গেল। যেতেই অন্দরমহলে মহিলা আসরের কক্ষে কেদারায় বসা খোদেজা তাকে বলল,

‘ তুমি স্বেচ্ছায় ধ্বংস ডেকে এনেছ নিজের। তুমি একটা জ্বলজ্যান্ত মানুষ। আর ও জাদুকর। মায়ের মতো হিংস্র, ভয়ংকর, নিষ্ঠুর ও । তুমি জানতে এই মেয়েকে নিকাহ করলে সে আগুন হয়ে যাবে তারপরও তুমি তাকে দেখানোর জন্য নিকাহ করে নিয়ে এলে। এটা খুব দরকার ছিল পুত্র? ছেলে মানুষী হয়ে গেল না? ‘

শেহজাদ নিজ অবস্থানে অটল থেকে বলল,

‘ আমি কাউকে দেখানোর জন্য নিকাহ করিনি আম্মা। আর কাউকে ভয়ও পাইনা। আপনি এসব বলে তাকে সুযোগ করে দেবেন না। মনে রাখবেন রূপা এখন আশ্রিতা নয় আপনার পুত্রবধূ। যদি আমাকে পুত্র মনে করেন। ‘

খোদেজা আহতকন্ঠে ডাকলেন,

‘ শেহজাদ! ‘

‘ সত্যিটা বলেছি আম্মা। পুত্রবধূ কন্যাসম। আমি আশা করছি আপনি রূপার প্রতি নিজের ক্ষোভ রাখবেন না। তাকে চেনার চেষ্টা করুন। ‘

‘ যেন তুমি তাকে অনেক চিনে ফেলেছ? ‘

‘ মানুষ চিনতে অনেক বছর সময় লাগেনা আম্মা। ‘

‘ তার ক্ষমতা আছে তোমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার? ‘

‘ আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে রক্ষা করতে পারেনা। আমরা উছিলা মাত্র। রূপা আমার উছিলা-য়। আমি তা অস্বীকার করতে পারব না। আপনি জানেন গত একমাস সে কোথায় ছিল? আপনার কোনো ধারণা আছে ও মহল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কাদের হাতে পড়েছিল? সন্ন্যাসী রূপী জাদুকরের কাছে একটামাস কাটিয়ে আসা আপনার কাছে ছেলেখেলা মনে হয়? আপনি ভাবতে পারছেন কি দূর্বিষহ কষ্টের মধ্যে তার দিন কেটেছে? একজন মা হয়ে কন্যাসম একটা মেয়ের কষ্ট কি আপনি অনুভব করতে পারেন আম্মা? আপনি আমার জন্মদাত্রী না হয়েও মা হয়ে উঠেছেন। তেমনি ভাবে রুপারও মা হয়ে উঠুন। আমি নিজেই আপনাকে নিশ্চিত করছি ও আপনার বিরুদ্ধে কখনো কথা বলবে না। আমি ক্লান্ত। বিশ্রাম নিতে যাচ্ছি। ‘

শেহজাদ তার কক্ষে চলে গেল।
কক্ষে গিয়ে অপরূপাকে দেখলো না। রূপাকে কি এই কক্ষে নিয়ে আসা হয়নি? সে পুনরায় আসরে ফিরে গিয়ে সায়রাকে বলল,

‘ রূপা কোথায়? ‘

সায়রা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে খোদেজার দিকে তাকালো। খোদেজা বলল,

‘ সে আমার পুত্রবধূ। তাই তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে যোগ্য করে নেয়া অব্দি আমি তাকে তোমার কক্ষে যাওয়ার অনুমতি দেব না। তুমি আমাদের মাঝে এসো না। আমি সবকিছু বরদাস্ত করব না। ‘

শেহজাদ রুক্ষস্বরে বলল,

‘ আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন। কিন্তু অবিচার করবেন না। আপনি যদি অবিচার করেন তার প্রতি তাহলে শেরহাম সুলতান আরও বেশি প্রশয় পাবেন। আশা করছি আপনি আমাকে হতাশ করবেন না। আমি নগর পরিদর্শনে বের হবো। সায়রা রূপার প্রতি যত্নশীল হবে। সোহিনী, শবনম আর আয়শাকে বলছি তোমরা রূপাকে সঙ্গ দেবে। তটিনী তুমি ওর প্রতি কোনো প্রকার দ্বেষ পুষে রাখবে না। ফুপু আপনিও না। ছোটমা আপনি ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেবেন। আসি। ‘

তটিনী, শাহানা সকলেই মুখ গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে রইলো। খোদেজা হেঁটে গেল মতিবানুদের কক্ষে। শেহজাদ এসেছে ভেবে অপরূপা দরজার কাছে ছুটে এসে দরজা খুলে দিতেই খোদেজাকে দেখে চোখ নত করলো। খোদেজা তার মুখের উপর একটা শাড়ি ছুঁড়ে কুপিতস্বরে বলল,

‘ এসব রাণীর পোশাক ছাড়ো। পোশাক পড়লেই রাণী সাজা যায় না। নিজেকে প্রমাণ করো। তার আগে শেহজাদের সাক্ষাৎ পাবেনা তুমি। প্রমাণ করো তুমি তার কতটা ভালো চাও। কতটা আপন ভাবো তাকে। তার সরলতা, কোমলতা আর অন্ধ ভালোবাসাকে পুঁজি করে তুমি ওর ক্ষতি করবেনা তার নিশ্চয়তা কি? এত সহজ নয় বেগমে শেহজাদী হওয়া। সহজে তার ভালোবাসা পেয়ে গিয়েছ বলে এমনটা ভেবোনা তার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতাও তোমার হয়ে গেছে। যদি কোনোদিন যোগ্য হয়ে ওঠো সেদিনই আমি তোমাকে মুকুট পড়িয়ে দেব। তার আগে ভাবা বন্ধ করো তুমি এই সম্রাটের বেগম। ‘

অপরূপা শাড়িটা নিয়ে কান্না গিলে দাঁড়িয়ে রইলো শূন্য চোখে। তার চোখে কান্না না দেখে খোদেজা বিভ্রান্ত হলো। অদ্ভুত! স্বামীর কাছ থেকে দূরে রাখার পরও তার চোখে জল নেই? এই মেয়ের জন্য সম্রাট এতটা উতলা?

চলমান….

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_৩৪
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

বড়সড় লাউটির গায়ে তলোয়ার বসিয়ে দুফাঁক করতেই বেরিয়ে এল একটি বিষাক্ত ছুরি। কয়েকটা বন্ধুকের গুলি। একে একে সবজিগুলো সব কাটতে লাগলো শেরহামের লোকগুলো। সেগুলো কেটে তার ভেতরে অস্ত্র ঢুকিয়ে পুনরায় শিরীষ লাগিয়ে তা আনা হয়েছে জাহাজে করে। পুলিশের নজর এড়াতে এই ব্যবস্থা। প্রায় দুশোর কাছাকাছি অস্ত্র আনা হয়েছে।
বাইরে থেকে অতিথিশালার কক্ষে এসে কেদারায় জোরেসোরে লাতি বসিয়ে বিড়ির মুখে আগুন ধরালো শেরহাম । অস্ত্র’র দিকে তার মনোযোগ নেই। তার মাথার রগ দপদপ করছে অপার স্পর্ধা দেখে। আর শেহজাদের সাহস দেখে। অপাকে ব্যবহার করে সে শেহজাদকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। নিজের অধিকার আদায় করে শেহজাদের পতন দেখতে চেয়েছিল।
কিন্তু অপা যে পালিয়ে গিয়ে শেহজাদের হাতে পড়ে যাবে এটা বিলক্ষণেও ভাবেনি সে।
চোখদুটো দিয়ে তার আগুনের লাভা ঝড়ছে। হাতের মুঠো বারংবার শক্ত হচ্ছে। শেহজাদের বলা’ তোমার ছোট ভাইয়ের বউ’ কথাটা তাকে স্থির হতে দিচ্ছে না। ক্রোধের অনলে জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে সবকটাকে। ঠিক যেমন তার মা পুড়েছিল।
সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্রগুলো বের করে যথাস্থানে গোপন করার কাজে লেগে পড়লো। সেখানে যে লোকদুটি তার দেহরক্ষী হিসেবে পাশে থাকে তাদের দুজনের নাম সামাদ আর মুরাদ। গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ দেখতে স্বাস্থ্যবান লোকদুটির মুখশ্রী ভারী ভয়ংকর। তাদের নাম দিয়েই শেরহাম এতদিন যাবত কাঁচা শাকসবজির ভেতর করে অস্ত্র পাচার করতো।
দুজনেই তার সামনে মাটিতে বসে লাউ কুমড়োর গায়ে দা’ এর কোপ বসাতে বসাতে বলল,

‘ ওই মেয়েকে সরিয়ে দেন ওস্তাদ। সিন্ধিপুরে নিয়ে যাই আমরা। সেখানে গুদাম করে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখলে আপনার ভাই খোঁজও পাবেনা। মেয়েটারও শিক্ষা হবে আর আপনার ভাইও জব্দ হবে। ওই মেয়েকে বিপদমুক্ত করতে পেরে সে চিন্তামুক্ত। এখন নগর পরিদর্শনে বের হয়েছে। গত একমাস যাবত আমরা যা যা করেছি তা সব জেনে এসে আপনার অভিষেক হতে দেবে মনে হচ্ছে না। সে কিছুতেই তার অধিকার ছাড়বে না। ‘

ছোট ভাইয়ের কাছে অপমানিত হওয়ার আস্ফালিত রাগ, ক্রোধে কুপিত স্বরে সে বলল,

‘ চোপ। আরেকটা কথা বললে শরীর থেকে মু*ন্ডু আলাদা করে দেব। সে অধিকার না দেয়ার কে? কেউ না। আমি আমার অধিকার নিয়েই ছাড়বো।’

ছাইদানি ভরে উঠলো বিড়ির শেষাংশে। আদেশ দিল,
‘ জাহাজ রেডি রাখবি মাগরিবের পর ওকে তুলে নিয়ে যাবি। নিকাহ করা বের করব। শেরহাম সুলতানের সাথে পাল্লা দেয়া? ‘

সামাদ কাঁটা লাউকুমড়ো গুলো বস্তায় ভরতে ভরতে বলল,

‘ ঠিক আছে ওস্তাদ। কিন্তু সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই মেয়েকে মহল থেকে বের করবেন কিভাবে? ‘

প্যাকেট হতে বিড়ি নিয়ে দুঠোঁটের ভাঁজে রেখে শেরহাম অদ্ভুত রহস্যময় দৃষ্টিতে তাকাতেই সামাদের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো। চোখ নত করে নিয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সে ভুলেই বসেছিল তার ওস্তাদের সকলকে সম্মোহন করার শক্তি আছে।

দানবীয় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সকলে মিলে।
হঠাৎ পায়ের শব্দ সরে যেতে দেখলো অতিথিশালার বারান্দা হতে। শেরহাম খট করে দরজা মেলতেই পায়ের আওয়াজটা দ্রুত মিলিয়ে গেল। শেরহাম কয়েক পা দ্রুতপায়ে এগোতেই পালিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটিকে দেখতে পেল।
পেছনে তার লোক এসে দাঁড়িয়ে বলল, হুজুর মেয়েটা বলে দেবে না? তাকে তুলে নেব? ‘
শেরহাম অতি বিশ্বাসের সাথে বলল,
‘ বলবে না।
___________

শেহজাদ ঘোড়া থেকে নেমে সদর কক্ষে প্রবেশ করতেই শেরহাম তেড়ে এসে বলল, ‘ তুই নাকি বলেছিস আমাকে দলিলপত্র দিবি না। তোর সাহস কি করে হয় ভিখিরিনীর ছেলে? ‘
শেহজাদকে অগ্নিতুল্য দেখালো। সকলেই ভয়ে আছে। আবারও কি ঝামেলা বাঁধবে। কোন সময় কার হাতে কার প্রাণ যায় কে জানে?
শেহজাদ চড়া মেজাজে শেরহামের সমস্ত কুকর্মের হিসেব দিয়ে আঙুল তুলে বলল,
‘ তোমার মতো রাজা কেউ চায় না। তারা তোমার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। অথচ সমস্ত কুকর্ম করেছ আমার নাম দিয়ে। আমি আদেশ দিয়েছি বলে বেরিয়েছ সবাইকে। সবকিছুতে শেহজাদ সুলতানকে না জড়ালে তোমার শান্তি হয় না? ‘

শেরহাম খেঁকিয়ে উঠে বলল,

‘ সেদিন তো চলে গেলি। আজ এত শক্তি কোথা হতে এল? আমি যা করেছি, বেশ করেছি। আমার হাতে সব কাগজপত্র তুলে দে। নয়ত আমি কি করব তুই ভাবতেও পারছিস না। ‘

‘ তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। আমি থাকতে আর কোনো অরাজকতা করতে পারবে না তুমি। পারলে করে দেখাও। এবার যুদ্ধে নামবো তারপরও তোমার হাতে রাজত্ব তুলে দেব না। যে তার অনৈতিক কর্মকান্ডে তাল মিলানো লোকজনকে শিখিয়ে দেয় দিনেদুপুরে গোয়ালের গরু চুরি করতে। সে কেমন নিকৃষ্ট রাজা হবে তা আমার বুঝা হয়ে গেছে। তোমার লোকজনকে লেলিয়ে দিয়েছ যুবতী মেয়েদের দিকে? বোন তো তোমারও আছে। ‘

‘ চুপ থাক। ওসব ফালতু কাজে মাথা ঘামানোর সময় আমার নেই বুঝলি? তুই আমার হাতে সব দলিলপত্র তুলে দিবি কি দিবিনা বল। ‘

‘ এককথা কতবার বলব? তুমি আমার কথায় আসলে তোমার উপর ভরসা করে সব দিয়ে দেব। কিন্তু তুমি তো মানুষই না। তোমাকে ভরসা করব কেন? ‘

শেরহাম চেঁচিয়ে উঠলো এবার। কেদারায় জোরেসোরে লাতি বসিয়ে বলল,

‘ তুই কে দেয়ার না দেয়ার। সব দিবি আমার হাতে তুলে। শুধু দেখতে থাক।’

শেহজাদ দ্বিগুণ চেঁচিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ কালকের অভিষেক আমি অঘোষিত করলাম। আমার প্রাণ যাবে তবুও তোমার হাতে আমি মহল, আর নগরের সুরক্ষাভার দেব না। দেব না মানে দেব না। কানে ভালো করে ঢুকিয়ে নাও। ‘

শেরহাম হো হো করে হাসতে হাসতে ওর কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বলল,

‘ দেখা যাক। ‘

____________

রসাইঘর হতে অপরূপার ডাক এল খুব ভোরে। ফজরের আজানের পরপরই মহলের সবাই জেগে ওঠে। নামাজ কালাম জিকির শেষ করে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই রসাইঘরে রুটি হালুয়া বা মাংস পাকানো হয়। সকালের খাবার হিসেবে রুটি হালুয়া বা রুটি মাংস খাওয়া হয়। মাঝেমধ্যে ব্যতিক্রম কিছু রান্না করা হয়।

অপরূপা খুব ভোরেই জেগে উঠেছে কুমু, টুনুর সাথে। শেহজাদের আদেশে তারা বেশ যত্ন করে অপরূপার বিছানা আরামদায়ক করে দিয়েছে। সেইসাথে ওর কখন কি দরকার পড়ে তা তাকে জানাতে বলেছে। সম্রাটের আদেশ তাদের কাছে অনেক বড় দায়িত্ব। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। সম্পর্কের প্রতি বরাবরই তিনি যত্নশীল। অপরূপার ক্ষেত্রে একটু বেশিই। মনের মানুষ বলে হয়ত!

নামাজ পড়া শেষে যখন অপরূপা জায়নামাজ ভাঁজ করে রাখছিলো ঠিক তখনি মতিবানু এসে বলল মা বেগম ডাক পাঠিয়েছেন। অপরূপা আদেশমতো রসাইঘরে গেল। ময়দার ডো মাখছে ফুলকলি। সকালেই কেউ হয়ত আগরবাতি জ্বালিয়েছে তার গন্ধ মাখোমাখো হয়ে আছে রসাইঘর। সাথে গোলাপজলের গন্ধ। দাউদাউ করে চুলোর আগুন উপরে উঠতেই পুরো রসাইঘর রক্তিমবর্ণ ধারণ করলো। চুলোয় পাতিল তুলে দিতেই স্বাভাবিক হয়ে এল। অপরূপাকে দেখে সকলেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। আজ রান্নাঘরে সায়রা সোহিনীরা সবাই আছে। শুধুমাত্র তটিনী ছাড়া। শাহানার মুখ ভার। শুধু শাহানার নয় প্রায় সকলেই তার সাথে কথা বলতে অনিচ্ছুক। অপরূপা খোদেজার পেছনে গিয়ে বিনয়ী সুরে বলল,

‘ আমাকে ডেকেছিলেন? ‘

খোদেজা তার দিকে ফিরে তাকালো।
একরাতের মধ্যে তার চোখের নীচটা খালিতে ভর্তি হয়ে গেছে। তাছাড়া মুখের দুপাশে কাঁটাছেড়ার চিহ্ন, দাগ, সরু হয়ে আসা চেহারা জানান দিচ্ছে গত একমাস যাবত সে কেমন দুরাবস্থার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে। এতকিছুর মধ্যেও তার চেহারার জৌলুশ কোনোদিক দিয়ে একফোঁটাও কমেনি। চোখের মায়ায় খোদেজা কন্ঠ শীতল হয়ে এল। তিনি চোখ সরিয়ে ফুলকলিকে আদেশ দিলেন যাতে অপরূপাকে পরোটা বানাতে দেয়। আজ মোগলাই পরোটা আর হারিসা বানানো হবে। ভাঙাগম, ঘি, এলাচ এবং মুলতানি ভেড়ার মাংস দিয়ে হারিসা রান্না করা হয়। সাথে ফিরনী রান্না হবে । বহুদিন পর শেহজাদ ফিরেছে মহলে। তারজন্য ভালো মন্দ খাবার। সে মোগলাই পরোটা আর হারিসা খেতে পছন্দ করে সকালে।
তাছাড়া দুপুরের জাফরান বিরিয়ানি হবে, ইলিশ মাছের পাতুয়া, ভেড়ার মাংসের পসন্দ, ডিম কাসুন্দি আর দু’রকমের ভর্তা। অপরূপাকে সবটা জানিয়ে দিলেন খোদেজা।
ফিরনিটা আগেই বসানো হয়েছিল চুলোয়।মোগলাই পরোটা আর হারিসা একা হাতে রান্না করলো অপরূপা। মন ভালো থাকলে তার রান্না ভালো হয়। আজ তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে রান্না যাতে ভালো হয় । শেহজাদের পছন্দ শুনে কাজের প্রতি স্পৃহা বেড়ে গিয়েছে তার। সে রেঁধেছে শুনে নিশ্চয়ই তৃপ্তি নিয়ে খাবেন! অদ্ভুত একটা আনন্দের স্রোত বয়ে গেল মনপঞ্জরে।
কাজের বুয়ারা ছাড়া আর কেউ তেমন কথা বললো না তার সাথে। আপনমনে খুবই যত্ন করে কাজ করে গেল সে।
খোদেজা আঁড়চোখে দেখতে লাগলো তাকে। তার তার চেহারায় বিন্দুমাত্র রাগ,ক্ষোভ কিংবা বিরক্তি দেখা গেল না। গায়ে জলপাই রঙের সেলোয়ার কামিজ। মাথায় ওড়না জড়ানো। মাথায় বাঁকা সিঁথি। সহজসরল মুখ। নাকের মাথায় জ্বলজ্বল করছে সাদা একটা পাথর।
সুচিক্কন ঠোঁটজোড়া সারাক্ষণই এঁটে আছে একে অপরের সাথে। দরকার ছাড়া কোনো কথায় বেরোয়না সে মুখ দিয়ে। পিঠ বেয়ে নেমে পড়া চুলগুলোর আগা দেখা যাচ্ছে ওড়নার নীচে কোমরে। চুলগুলো ভেজা। তা হতে পানি ঝড়তে ঝড়তে কোমর ভিজে গিয়েছে খানিকটা। খোদেজা কাল শাড়ি দিয়েছে। গোসল করে সে শাড়ি পড়েনি। শাড়ি পড়ে সে কাজ করতে পারবে না তাই। খোদেজা এতেই সন্তুষ্ট। তাকে বেগম সেজে ঘুরঘুর করতে হবে না।

খাবার পরিবেশন করার পর মতিবানু আর ফুলকলি মিলে খাবারঘরে খাবার নিয়ে চলে গেল। অপরূপা খোদেজা, হামিদা, আর শাহানাকেও খেতে দিল। তটিনী রসাইঘরে আসেনি। তার জন্য পরোটা, হারিসা আর ফিরনি পাঠিয়ে দিল সায়রার মাধ্যমে। শবনম, আয়শা আর সোহিনীও খেতে বসলো। সায়রা তটিনীর কক্ষ থেকে এসেই শুনতে পেল আয়শা বলছে, ‘আজকের খাবার দারুণ হয়েছে আম্মা।’
পরে শাহানার দিকে চোখ যেতেই চুপ হয়ে গেল সে। আয়শার সবে পনের বছর। সে অপরূপার ছোট। শবনম, সায়রা আর সোহিনী অপরূপার সমবয়সী। তটিনী বছর দুয়েকের বড়। তটিনীকে আপু বলেই সম্বোধন করেছিল মহলে আসার পর। বাকিদের নাম ধরে সম্বোধন করেছে।
সায়রা বলল, ‘ তাহলে খেতেই হচ্ছে। রূপা! দুঃখীত দুঃখীত।’
ফোড়ন কাটলো সে। জিভে কামড় দিয়ে বলল,
-‘ ভাবীজান, চলো আমরা একসাথে খাই। তুমিও খেয়ে নাও। তারপর কাজ করো। ‘
অপরূপা সকলের চেহারা পরখ করতে ব্যস্ত। হারিসা ভালো হয়েছে। সে ছেঁকে দেখেছে। সুগন্ধি আর রঙটাও ভালো এসেছে। কিন্তু পরোটা ছেঁকে দেখেনি। কে জানে কেমন হয়েছে?
খোদেজা, শাহানা চুপচাপ খাচ্ছে। হামিদা অপরূপাকে অমন চোখা দৃষ্টিতে বারংবার তাকাতে দেখে বলল,
-‘ সব ভালো হয়েছে খেতে। তুমি খেয়ে নাও। ‘
অপরূপা স্বস্তি পেল। টুনু হেসে বলল,
-‘ আজও বোধহয় পয়সা পাইবো সে সম্রাট ভাইজানের কাছ থেইকা। ‘
অপরূপা খানিকটা বিব্রত চোখে তাকালো। কথাটায় মজা পেল সবাই। শাহানা বলল,
-‘ পেতেও পারে। সম্রাট কাজের মানুষদের পয়সা দিতে ভুলে না।’
অপরূপা অপমানিত বোধ করলেও তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সায়রাকে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ তোমাকে খেতে দেব? ‘
সায়রা টুনুর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে দ্রুত চোখের রঙ পাল্টে অপরূপার সাথে হেসে বলল,
‘ হ্যা দাও। তুমি কিন্তু রাতে কিছু খাওনি। এখন আমার সাথে বসে পেট ভরে খাও। না খেলে কাজ করার শক্তি পাবে না।’
অপরূপা স্মিত হেসে ‘ তুমি শুরু করো, আমি নিচ্ছি। ‘ খোদেজা সায়রাকে কড়া গলায় বলল,
-‘ সায়রা তোমাকে এত গুজুরগুজুর কে করতে বলেছে? খাবারঘরে যাও। দেখো তোমার ভাইজানের কিছু লাগে কিনা। ‘
-‘ আমি খাচ্ছি আম্মা।’
-‘ তো কি আমাকে যেতে বলছো? ‘
-‘ আমিও যাব না। আপনাকেও যেতে হবে না। উনার বেগমকে পাঠান।’
খোদেজা গরম চোখে তাকালো তার দিকে।
অপরূপা খেতেই থাকলো। সে কথা কানে তোলেনি অমনভাবে টেবিল হতে মরিচ মশলার বাটিগুলো গুছিয়ে রাখতে লাগলো খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে। খোদেজা তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছে।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে নিজেই ইচ্ছুক না। যদিও এই মুহূর্তে এভাবে যেতে রাজী নয় সে কিন্তু সম্রাটকে দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে না তাও নয়। একটিবার দেখা হলে খুব খারাপ হতো না। সে খেতে খেতে আনমনা হয়ে ভাবে এই যে দূর থেকে হলেও একবার দেখার এমন তীব্র ইচ্ছে, বাসনা এটাকেই কি টান বলে? পবিত্র বন্ধনের জোরে হয়ত! এই শক্তিবলেই হয়ত একটা অচেনা মানুষের হাত ধরে পিতৃগৃহ ত্যাগ করে মেয়েরা। বছরের পর বছর কাটিয়ে সেই মানুষের সাথে। আর সে শুধু একটা রাত কাটিয়েছে। আর সেই একরাতের মধ্যে মনে হলো একদম যতটা কাছে আসার পর, দূরে গেলে কষ্ট হয় ঠিক ততটাই কাছে ছিল তারা। সেই জ্যোৎস্নামাখা রাতে ভাঙা ছাদের নীচে তেরপালের মোড়া ছোট্ট কুঠুরিতে সীমিত জায়গার সেই কাঠের চৌকিতে দুটো মানুষের একে অপরের সাথে লেপ্টে থাকা, গায়ের সাথে লেগে থাকা মিষ্টি আতরের সুবাসে হারিয়ে যাওয়া, সেই তপ্ত নিঃশ্বাসের আঁচড়, সেই উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া, শরীরের তাপ, বাহুবন্ধনের চাপ, মোহনীয় চাহনি । ভাবতেই কেমন এলোমেলো হয়ে পড়ে সে। না শুধু ভালোবাসা পেতে নয় তাকে সম্রাটের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। সে পাশে থাকতে চায়। সম্রাটের ভালোবাসার পূর্ণ মর্ম বুঝতে খোদাতায়ালা তার পরীক্ষা নিচ্ছে। খুব কাছে যাওয়ার জন্য খুব দূরে যেতে হয় তা সে মানে। তাই কোনো দুঃখ নেই।

খোদেজা কড়া চোখে তাকাতেই সায়রা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল, আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
সায়রা চলে গেল। চলজলদি ফিরে এসে ওড়নার কোণা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে খোদেজার কাছে আবদার পাড়লো ভীত গলায়।

‘ আম্মা রূপাকে একটু নিয়ে যাই? ‘

খোদেজা কড়া গলায় প্রশ্ন করলো, ‘ তার অনেক কাজ আছে আমার সাথে। কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না। ‘

খোদেজা সায়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অপরূপাকে বলল, কাল শুক্রবার । জামায়াত হবে মহিলাদের। প্রত্যেক শুক্রবারে হতো। আমি বন্ধ রেখেছিলাম কয়েকমাস। তোমাকে তার জন্যও খাবারের আয়োজন করতে হবে কাল। ‘

‘ কি খাবার? ‘

‘ সেসব বলে দেব। ওখানে তুমি উপস্থিত থাকবে। এখন আমার সাথে এসো। ‘

অপরূপা খোদেজার পিছুপিছু উনার কক্ষে গেল। পথে তটিনীর সাথে দেখা হলো। তার চোখমুখের অবস্থা বিধস্ত। লালচে ফোলাভাব। অপরূপার দিক থেকে ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিয়ে হনহনিয়ে পাশ কেটে চলে গেল।

অপরূপা খোদেজার পিছু যেতে যেতে প্রশ্ন করলো।

‘ জামায়াতে কি আপনি হাদিস পড়িয়ে শোনান? আমি বুখারি হাদিস পড়েছি। আমার দাদীজানও সবাইকে হাদিস পড়িয়ে শোনাতেন। উনি অনেক জ্ঞানী ছিলেন। ‘

‘ নিজের নাতনীকে তে বোকা বানিয়ে রেখে গেলেন। পরপুরুষের সাথে ঘর ছাড়তে নেই সেটা শেখাননি? ‘

কক্ষে প্রবেশ করলেন উনি। উনার কক্ষে দামী রাজকীয় আসবাবপত্রের বাহার। অপরূপার নড়চড় না দেখে পেছনে ফিরে অপরূপাকে দরজার কাছে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,

‘ দোষ করেছ। আর আমি বলতে পারব না? ‘

অপরূপা নম্রমুখী হয়ে বলল,

‘ আমি অনুতপ্ত। তওবা করেছি। ‘

খোদেজা একটা মোটা খাতা বের করলেন। বেশ ভারী। পুরোনো মলাট। মলাটের উপর আরবী অক্ষরে কিছু লেখা। অপরূপার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন,

-‘ যেহেতু পড়েছ সেহেতু তোমার জানার কথা। দেখি বলোতো প্রথম বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ কোনটি?

অপরূপা উত্তরটা পারবে তাই উৎসাহি হয়ে বলল,
-‘ইমাম মালিকের “মুয়াত্তা” সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান প্রামান্য হাদীসগ্রন্থ।’

-‘ আর বুখারী শরীফে হাদিস সংখ্যা কত? ‘

অপরূপার উত্তর,
-‘ইবনে আল সালাহ-এর হিসাব মতে: “দ্বিরুক্তি সহ বুখারী শরীফে হাদীসের সংখ্যা সাত হাজার পাঁচশত তেষট্টি। মাত্র একবার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা দু হাজার দুইশত ত্রিশ। ‘

খোদোজা গম্ভীরমুখে হাতের ভারী খাতার পৃষ্ঠা উল্টোতে লাগলেন। অপরূপা সংকুচিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

‘ আমি কি ভুল বলেছি? ‘

‘ পুঁথিবিদ্যা ভালোই শিখেছ। যেটা খুব দরকার সেটা শেখোনি। এক ভাইয়ের বিরহে কাতরাতে কাতরাতে মহলে এলে, তারপর আরেক ভাইকে নিকাহ করে নিলে। কি বলা যায় বলোতো তোমাকে? তোমার মুখটা দেখলে আমি আর কিছু বলতে পারিনা। আমার মেয়ে হলে চড়াতে চড়াতে সোজা করে দিতাম। এই খাতাটা নাও। সবকিছুর হিসেব লেখা আছে। মহলের মাসিক বাজারের হিসেব থেকে শুরু করে সমস্ত নিয়ম-কানুন। নাও পড়ো। তারপর দুপুরের রান্নার আয়োজন করো।’

অপরূপা খাতাটা নিয়ে চোখ বুলাতে লাগলো। সায়রা এসে তার সঙ্গ দিল।
দু’জনে মিলে খাতার পৃষ্ঠা উল্টে রসাইঘরের দিকে এগোচ্ছিল। আর দোয়াত কালির লেখাগুলো পড়ছিলো । শেহজাদ সাফায়াতের সাথে কথা বলতে বলতে সেই সেই পথে দিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের দেখে থমকে দাঁড়ালো। সায়রার চোখ তাদের দিকে পড়তেই সাফায়াত মাথার পেছনে চুলকাতে চুলকাতে বলল, আমি বাইরে আছি ভাইজান। তুমি এসো।
অপরূপা হতচকিত। বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো শেহজাদের মুখদর্শন করতেই। শেহজাদ চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে।

সায়রাও অপরূপাকে অজুহাত দিয়ে দ্রুত চলে গেল। অপরূপা খাতাটা বুকে জড়িয়ে শেহজাদের পাশ দিয়ে যেতেই শেহজাদ পথ আটকে বলল,

‘ পড়াশোনা দেখি ভালোই চলছে। ‘

অপরূপা আঁড়চোখ তুলে বলল,

‘ হ্যা। কিন্তু আপনাকে দেখার পর সব ভুলে গিয়েছি। ‘

শেহজাদ আর কিছু বলার আগেই সে একফাঁকে ছুটে পালালো। আর থামলো শেরহামের সামনে গিয়ে। শেহজাদ ঘাড় ফিরিয়ে হাসতেই শেরহামকে দেখে হাসি টুকু মিলিয়ে গেল। শেরহাম শিঁষ বাজাতে বাজাতে শেহজাদের সামনে এসে বলল,

‘ কালকের এমন সময়ে আমি এই মহলের রাজা। তোর পতন দেখে আমি সিন্নি বিলাবো।’

শেহজাদ বক্রহেসে বলল,

‘ শুভকামনা।’

______________

মাগরিবের নামাজ পড়ে অপরূপা টিংটিংকে দেখবে এমন উদ্দেশ্যে মহল থেকে বেরিয়েছে। সাথে সিভান আসতে চেয়েছিল। খোদেজা টের পাবেন ভেবে অপরূপা একা এসেছে। টিংটিং ওকে দেখে বরাবরের মতো খুশিতে আত্মহারা। অপরূপা তার গলা জড়িয়ে ধরে আদর করলো। টিংটিং তার কাঁধে মুখ ঘষতে লাগলো। অপরূপা হাসতে হাসতে বলল,
‘ আমাকে যেতে হবে বন্ধু। সবাই খুঁজবে এতক্ষণে। ‘
আচম্বিত ধপধপ পায়ের শব্দ কানে এল তার। পেছনে ফিরতেই দেখলো মুখোশ পড়া সাত আট জন লোক।
তার উপর হামলে পড়লো পাউডার জাতীয় কিছু একটা ছুঁড়ে দিয়ে । অপরূপা অচেতন হয়ে গেল প্রায়। তাকে অচেতন করে তারপর তুলে নিয়ে গেল শেরহামের লোকজন।

তার সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেল মহলে। শেহজাদ সবেমাত্র মসজিদ হতে মহলে ফিরেছে। গায়ে চাদর জড়িয়ে বাইরে বেরোচ্ছিল সায়রার মুখে অপরূপার অনুপস্থিতির কথা শুনে খাপ হতে তলোয়ার বের করে বেরিয়ে এল । অস্থিরচিত্তে নীচে গিয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে শেরহামের পোশাক চেপে ধরে বাজখাঁই গলায় বলল,
‘ রূপা কোথায়? ‘
শেরহাম ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ খুঁজে বের কর। আমি কি জানি? ”
শেহজাদ ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সবাইকে একেএকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কেন রূপাকে একা ছাড়লো সবাই।
কেউ উত্তর দিতে পারলো না। শেহজাদ সবার উপর চড়াও হলো। সেই তলোয়ার হাতে বেরিয়ে গেল মহল থেকে। তটিনী এতক্ষণ চুপ করে ছিল। গতরাতে সবটা শুনেছে সে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে সত্যিটা বলার জন্য শেহজাদের পেছনে ছুটে গেল সে। ঘোড়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল,
‘ আমি জানি রূপা কোথায়।’
বেশিদূর যাওয়ার আগেই শেরহামের লোকজন তাকে বন্দি করলো। একটা গুদাম কুঠরিতে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখলো । শেহজাদ ছুটে চললো নদীর ঘাটের দিকে। কুঠুরিটি মহল থেকে দূরের বসতিতে। তটিনী অন্ধকারে বন্দি হওয়ার পর ভয়ে শব্দহীন বসে আছে। শেরহাম ওই কক্ষে প্রবেশ করে তটিনীকে সাবধান করতে যাবে তটিনী একটা শক্ত কাঠ তুলে শেরহামকে আঘাত করলো মাথায়। শেরহামকে মাথা চেপে পড়ে যেতে দেখবে তা ভুলেও ভাবেনি সে।
অন্যদিকে কক্ষের দরজা খোলা দেখে বাহির হতে শেরহামের একজন রক্ষী দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল। অত্যধিক ভয়ে তটিনী ধপ করে বসে মাথার চুল টেনে ধরলো।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে দলে দলে মানুষ ছুটে এল মশাল হাতে। সন্দেহ জাগলো এই গুদামঘরের ভেতর চোর ডাকাত আছে। কক্ষের দরজা খুলে তারা দেখলো একটা মেয়ে কাঁদছে ভয়ে, আর আলো দেখে চোখমুখ কুঁচকে মাথার পেছনে চেপে শেরহাম খেঁকিয়ে শোয়া থেকে উঠে বলল,

‘ এই কারা তোরা? ‘

তটিনী এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল সেই কক্ষ হতে। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। সাফায়াতকে পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠতেই সাফায়াত তাকে আগলে ধরে বলল,

‘ কিছু হবে না। কেঁদো না। ‘

তটিনী কাঁদতে লাগলো। মশাল হাতে দাঁড়ানো মানুষগুলো একসাথে ছিহ ছিহ করতে লাগলো।

চলমান….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ