Monday, October 6, 2025







প্রিয় বেগম পর্ব-২৫+২৬

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_২৫
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

সিভান কেঁদে উঠলো। বলল, ব্যাথা পেয়েছি ভাইজান। শেরহাম তাকে তুলে। বলে,

‘কেঁদোনা। ‘

চিরকুটটা কুড়িয়ে নিয়ে মেলে ধরে সে । লেখাগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠে তার। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংবরণ করে।

সিভান বলল,

‘এটা আমার। দাও ভাইজান।’

শেরহাম কন্ঠ শীতল করে বলল,

‘দেব। আচ্ছা তার আগে বলো তুমি মিঠাই খাবে?’

সিভান দু’পাশে ঘাড় হেলিয়ে বলল,

‘হ্যা। এই কাগজটাও দাও। সুন্দর বউকে দেব। ‘

শেরহাম তাকে বলল, ‘তুমি বসো। এক্ষুণি মিঠাই আর কাগজটা দিচ্ছি।’

সিভান মাথা দুলিয়ে বলল, ‘আচ্ছা। ‘

শেরহাম তার কক্ষে চলে গেল দ্রুতপায়ে। পাঁচ মিনিটেই ফিরে এল। হাতে মিঠাই আর দুটো কাগজ। মিঠাই বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই নাও।
সিভান মিঠাই খেতে খেতে নাচ দেখতে লাগলো।

শেরহাম উপরে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই তেমন। সে হাঁটুমুড়ে বসলো। বলল,

‘সিভান। আমার দিকে তাকাও।’

সিভান মিঠাই খেতে খেতে তার দিকে তাকালো। চোখের দিকে।

শেরহাম জিজ্ঞেস করলো,

‘মিঠাই খুব মজা?’

সিভান মাথা দুলালো। চোখের দিকে স্থির চেয়ে থাকতে থাকতে তার মাথা দুলে উঠলো। শেরহাম আতরের ঘ্রাণ সিভানের নাকের কাছে শুঁকিয়ে বলল,

‘খুব সুগন্ধ না?’

সিভান পুনরায় মাথা দুলিয়ে বলল, ‘খুব।’

শেরহাম বলল,

‘নীল কাগজটা দেবে সুন্দর বউকে, লাল কাগজটা দেবে তোমার শেহজাদ ভাইজানকে। মনে থাকবে?’

সিভান মাথা দুলিয়ে বলল,

‘হ্যা।’

‘আমার নাম উচ্চারণ করবে না। ঠিক আছে? ‘

‘আচ্ছা।’

‘যদি শেহজাদ ভাইজান জিজ্ঞেস করে কাগজটা কে দিয়েছে, তাহলে বলবে সুন্দর বউ দিয়েছে। আর সুন্দর বউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, শেহজাদ ভাইজান দিয়েছে। মনে থাকবে? ‘

সিভান পুতুলের মতো মাথা নাড়ে। শেরহাম বক্রহেসে বলে,

‘মিঠাই খাও। এখন দেবে না। যখন সুন্দর বউ কক্ষে চলে যাবে তখন।’

সিভান মিঠাই খেতে খেতে নাচ দেখতে লাগলো।
গান বাজনা নাচ শেষ হওয়ার পর অপরূপাকে কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। সবাই তার হাতে বাটা মেহেদী পড়াবে। শেহজাদ নীচে এসে দেখলো সিভান নেই। অপরূপাকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রূপা নিশ্চয়ই এতক্ষণে কাগজটা পেয়ে গিয়েছে? কাগজটাতে সে লিখেছিল সে এই বিয়েতে খুশি কিনা? রূপার উত্তর যদি হয় “হ্যা” তাহলে যা হচ্ছে তা হতে দেবে। আর যদি “না” হয় তবে এই বিবাহ কিছুতেই হবে না।

সিভান এসে একটা লাল রঙের চিরকুট দিল। বলল,

‘সুন্দর বউ দিয়েছে। ‘

শেহজাদ উত্তেজিত হয়ে চিরকুটটা মেলতেই দেখলো রূপা সেখানটাতে লিখেছে,

‘আমি স্বেচ্ছায় বিয়েটা করছি। আমি উনাকে ভালোবাসি। উনার সব অপরাধ আমি ক্ষমা করেছি। ভালোবাসায় সাত খুন মাফ সেখানে উনি নিজের অধিকারের জন্য লড়ছে। আপনি উনাকে উনার অধিকার ফিরিয়ে দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।’

শেহজাদ চিরকুটটি পড়া শেষে হাতের মুঠোয় পিষে ফেললো। ক্রোধের তাড়নায় গলার শিরা উপশিরা ভেসে উঠলো। চোখের কোণায় রক্তকণিকা জমাট বাঁধলো। এমন মানবীর প্রেমে পড়লো কিভাবে সে? অথচ প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল সে দুর্লভ, অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা রূপাতে আছে তা কোথাও নেই। আজ মনে হলো তার জীবনের সবচাইতে বড় ভুলটি ‘রূপা’। কাগজটি দূরে ছুঁড়ে ফেললো সে।

শেরহাম শিঁষ বাজাতে বাজাতে প্রবেশ করলো সদর কক্ষে। শেহজাদকে দেখামাত্র কপাল ভাঁজ করে তাকালো। কাছে এসে কাঁধ চাপড়ে বলল,

কি ব্যাপার? এত হৈহল্লার মাঝেও তোর মন খারাপ কেন? খুব কষ্ট হচ্ছে অপরূপার জন্য? দুঃখীত দুঃখীত রূপার জন্য?

বলেই হেসে উঠলো সে।
শেহজাদ চেয়ে রইলো শাণিত দৃষ্টিতে। শেরহাম কাঁধ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,

‘কোনো ব্যাপার না ভাই আমার। রূপনগরের অলিতে-গলিতে তোর জন্য অসংখ্য প্রেমিকা পাওয়া যাবে। অসংখ্য যুবতী কিশোরী সম্রাটের প্রেমে মজে আছে। তাছাড়া তটিনীর মতো এত সুন্দরী যুবতী রেখে বড় ভাইয়ের ভাবী বেগমের দিকে নজর দিয়ে কোনো লাভ আছে?’

শেহজাদ ওর দিকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চিবুক শক্ত করে কাঁধ থেকে হাত ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলল,

‘তুমি রূপাকে ঠকিয়েছ।’

‘কি বলিস। আমি ওর জানপ্রাণ সব। আমাকে কত ভালোবাসে জানিস না? প্রমাণ দেব? দেব প্রমাণ?’

শেহজাদ দাঁতে দাঁত কটমট করে বলল,

‘খোদার কসম করে বলতে পারি তোমার কোনো জিনিসের প্রতি আমার কভু লোভ ছিল না। বরঞ্চ আমার সবকিছুর উপর তোমার নজরদারি ছিল। বলতে বাধ্য হচ্ছি রূপাও তার একটা। ‘

শেরহাম ওর কলার চেপে ধরে বলল,

‘নিজেকে সবকিছুর রাজা মনে করা বন্ধ কর। তোর কিছু নেই। না রাজত্ব না অন্য কোনোকিছু। তুই একটা কোথাকার ভিখিরিনীর ছেলে হয়ে আমার সাথে নিজের তুলনা দিচ্ছিস? রূপা সঠিক মানুষকে ভালোবেসেছে। তোকে ভালোবাসলে আজকে ওর আফসোস হতো যে কেন ও এমন ভিখিরিনীর ছেলেকে ভালোবাসলো? ‘

শেহজাদের দেহরক্ষী কাশিম আর কামীল একলাফে ছুটে এসে বন্দুক তাক করলো শেরহামের দিকে। পরপর হুড়মুড়িয়ে ঢুকে এল শেরহামের দেহরক্ষীরাও। একপ্রকার হৈচৈ পড়ে গেল। সায়রা, তটিনীরা সবাই ছুটে এসে শেরহামকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানালো। শেহজাদ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল শেরহামকে। বলল,

‘তোমার অহংকার চূর্ণ বিচূর্ণ হবে একদিন। ঠিক হবে। আমার কথা মিলিয়ে নিও। আমি ভিখিরিনীর ছেলে হতে পারি তোমার মায়ের মতো পাপীর সন্তান নই।’

কিছু বুঝে উঠার আগেই শেরহাম ওর মুখ বরাবর ঘুষি বসালো সাথে সাথে। সায়রা চেঁচিয়ে উঠে শেহজাদকে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিল। খোদেজা, শাহানা সকলেই ছুটে এল। আঁতকে উঠলো।
শেহজাদও পাল্টা দুটো ঘুষি বসিয়ে দিল। সাথে সাথে শেরহাম ছিটকে পড়লো। শেহজাদ হাতের কব্জিতে মুখ মুছে নিয়ে গর্জে বলল,

আমার সাহস আর বীরত্বের পরীক্ষা নেবে না খবরদার। হাতের সাথে পাও চলতো যদিনা তুমি আমার বড় ভাই হতে।

তটিনী ওর হাত ধরে টেনে ধরে বলল,

দয়া করে শান্ত হও। এখান থেকে চলো।

শেহজাদ ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। শাহাজাহান সাহেব এসে ওর হাত ধরে ডাকলো,

পুত্র চলো এখান..

শেহজাদ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

পুত্র ডাকবেন না, ছাড়ুন।

শেরহামের দিকে অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল সে।

অপরূপা সমস্তটা দেখলো চুপচাপ। সিভানের দেয়া চিরকুটটা হাতে নিয়ে শেহজাদের যাওয়া দেখলো। চিরকুটটিতে লেখা ছিল

‘মোবারক বাদ রূপা। নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা। আমি ভাইজানকে একটা সুযোগ দিয়েছি। তুমিও দাও। ভাইজান তোমাকে ভালোবাসে।

ইতি
শেহজাদ সুলতান।

অপরূপার গাল বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো নীরবে। এখন সে কোথায় যাবে? যার উপর ভরসা করেছে সেও এমন কথা বললো। এ কেমন ভালোবাসা! সত্যি কি তাকে কেউ আদৌ ভালোবেসেছিল?

_________________

‘তোমার ঠোঁট ফেটে গেছে। মলম লাগিয়ে দিই। দয়া করে জেদ করো না। ‘

তটিনীর হাতটা খপ করে ধরে ফেললো শেহজাদ। কেদারা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল,

‘ভেতরে যাও। আর আমাকে নিয়ে চিন্তার কোনো দরকার নেই।’

‘আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তা করব না? ‘

‘নাহ। বললাম তো যাও। ‘

তটিনী কেঁপে উঠলো। শেহজাদ পুনরায় কেদারায় বসে চোখ বুঁজে বসে রইলো। তটিনী তার গাল মুছে বলল,

‘তুমি রূপাকে ভালোবাস কিন্তু আমাকে নিকাহ করবে বলেছ কেন?’

শেহজাদ ঝট করে চোখ মেলে তার দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘কি বললে?’

তটিনী ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় ‘ জানি আমি সবটা। ‘

‘যাও এখান থেকে। আমি কাউকে ভালোটালো বাসিনা। এসব কাজ আমার জন্য না। তোমাকেও আমি নিকাহ করব না। আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে না। আমি শূন্য। আমি পালিতপুত্র। আমি ভিখিরিনীর ছেলে। এখান থেকে যাও এখন নইলে আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না। যাও। ‘

তটিনী কেঁপে কেঁপে উঠলো। কামীল এসে বলল,

‘আপনি ভেতরে যান’।

তটিনী কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। শেহজাদ হাওয়ায় একের পর এক বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ক্লান্ত হয়ে বন্দুক হাত থেকে ফেলে দিল। তারপর মন্থরগতিতে দাঁড়িয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো তার লোকবল সবাই মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। শেহজাদ গর্জে বলল,

‘তোমরা এখনও আমার সাথে কি করছো? আমি তোমাদের সম্রাট নই। যাও এখান থেকে। ‘

সকলেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। কাশিম বলল,

‘আপনি আমাদের সম্রাট। আমাদের গন্তব্য আপনার কাছে। আপনি ছাড়া আমাদের গতি নেই। ‘

‘সবারই বিকল্প গতি থাকে। খুঁজে নাও। যা বলছো সবটা মিথ্যে। আমাকে ছাড়া ঠিকই দিন কেটে যাবে। কেউ কাউকে ছাড়া মরে না। দিব্যি ভালো থাকে। এখান থেকে যাবে কি যাবে না? নাকি বন্দুক তুলতে হবে? ‘

সকলেই হাঁটুভেঙে মাটিতে বসে অস্ত্র নীচে রেখে দিল। বলল,

‘আমাদের মাফ করুন। আমরা আপনাকে রেখে কোথাও যাব না। ‘

শেহজাদ তাদের দিকে চেয়ে রইলো রোষাগ্নি দৃষ্টিতে। তারপর গটগট পায়ে হেঁটে মহলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর হেঁটে চলে গেল।

________________

অপরূপা চুপচাপ বসে আছে স্তব্ধ হয়ে। ওর হাতে বাটা মেহেদী পড়াচ্ছে একদল যুবতী। সোহিনী আছে তাদের সাথে। সে খুব খুশি। সেও মেহেদী পড়বে।
শেরহাম আশেপাশেই আছে। অপরূপাকে সে চোখেচোখে রাখছে। একটুও আড়াল হতে দিচ্ছে না। কাল আকদ পড়ানো শেষ হলেই তবে শান্তি। নিকাহ সম্পন্ন হোক আজকের ঘুষি দুটোর মূল্য সে সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেবে শেহজাদকে।

হঠাৎ হট্টগোলের শব্দ ভেসে এল মহল প্রাঙ্গন হতে। একজন রক্ষী এসে বলল, হুজুর আমাদের রক্ষীদের উপর অত্যাচার চলছে। বন্দি করছে সম্রাটের রক্ষীরা। আপনি দ্রুত চলুন।

শেরহাম হন্তদন্ত পায়ে চলে যেতেই খোদেজা এসে অপরূপার হাত টেনে নিয়ে গেল। সোহিনী বলল,
বড় মা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?

সায়রা বলল, দয়া করে চুপ থাক। খোদা এত অন্যায় সইবেন না। রূপাকে ব্যবহার করছে বড় ভাইজান।

সোহিনী বলল,কি বলছিস এসব?

শবনম আর আয়েশার সাহায্যে সোহিনীর হাতমুখ বেঁধে কক্ষবন্দী করলো সায়রা। সোহিনী গোঙাতে লাগলো। সায়রা বলল, আমায় মাফ কর বোন। এছাড়া উপায় নেই।

মহলের পেছন দিকে নিয়ে যেতে দেখে
অপরূপা খোদেজাকে বলল, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।

খোদেজা তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, তুমি কি এই বিয়ে করে সারাজীবন এই পাষাণ ছেলেটার হাতে মরবে? নাকি পালাবে? সিদ্ধান্ত নাও।

অপরূপা আশ্চর্য হয়ে বলল, পালাবো? আমি? কিভাবে? আমি পালাতে চাই। আমাকে সাহায্য করুন। কিন্তু এতে আপনার কি লাভ?

খোদেজা তাকে টেনে এনে সামনাসামনি মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলল, আমার লাভ? আমি লাভ-লোকসান বুঝিনা। আমি বুঝি আমার পুত্রের সুখ। আমার পুত্রের শান্তি। তুমি এই মহলে থাকলে ও শান্তি পাবে না। ও ভেঙে গিয়েছে আরও ভেঙে পড়বে। আমি ওকে এত কষ্ট পেতে দেখতে পারব না। তুমি ওর ভাইয়ের বেগম হয়ে এই মহলে থাকার চেয়ে ওর চোখের সামনে না থাকাটাই ভালো। দয়া করে চলে যাও।

অপরূপার গাল বেয়ে জল গড়ায়। নিঠুর পৃথিবীর সবাই তার কাছ থেকে মুক্তি চায়। মা চেয়েছিল, তারপর চাচী, এখন শেহজাদ সুলতান।

খোদেজা তার দিকে একটা পুটলি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এখানে দুটো পোশাক, কিছু পয়সা, কিছু শুকনো খাবার আর পানি আছে। আমি মা হয়ে তোমাকে অনুরোধ করছি তুমি পালিয়ে যাও এখান থেকে। আমার সাধ্য নেই তোমাকে পুত্রবধূ করার। তুমি ওর জীবনে এলে ওকে শান্তি দেবেনা শেরহাম। প্রাণে মেরে ফেলবে। পালাও।

অপরূপা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
কিন্তু এমন অন্ধকারে আমি পালাবো কি করে?

দপদপ পদধ্বনির শব্দ কানে আসতেই খোদেজা সহ সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কামীল এসে চোখ নত করে বলল,

সালাম মা বেগম।

খোদেজা নিজেকে শান্ত করলো। উনার আদেশেই মহল প্রাঙ্গনে ঝামেলা বাঁধিয়েছে কাশীম। কামীল বলল,

সম্রাটের আদেশ না পাওয়া অব্ধি আমি উনাকে পালাতে সাহায্য করতে পারব না।

আমি সম্রাটের মাতা। আমার আদেশ তোমাকে মানতেই হবে।

কামীল মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকলো। খোদেজা বলল,

ওকে পালাতে সাহায্য করো। ঘাটের কাছে নিয়ে যাও। আমি সম্রাটের ভালো চেয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাও।

কামীল আদেশ পালনে রাজী হলো। পুটলিটা নিয়ে অপরূপাকে বলল,

চলুন।

সায়রা এসে অপরূপার মুখ বেঁধে দিল কালো রঙের ঝালরযুক্ত কাপড় দিয়ে। গায়ে সাদা রঙের চাদর জড়িয়ে দিল। বলল, বিদায়। সাবধানে থেকো। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই অপরূপার সাথে সেও কাঁদতে লাগলো।

খোদেজা শেষমুহুর্তে অপরূপাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি নিরুপায়।

অপরূপা বারংবার পিছু ফিরে চাইতে চাইতে মহল ত্যাগ করলো কামীলের পিছু পিছু।

অন্ধকারে মিলিয়ে যেতেই খোদেজা সায়রাকে বলল, সোহিনীকে ছেড়ে দাও এবার।

সায়রা বলল, শেরহাম ভাইজানকে কি জবাব দেবেন?

‘আমি বলব যা বলার। ও কি আমায় মেরে ফেলবে নাকি? ‘

‘উনি সব পারেন আম্মা। আমার ভয় করছে। ‘

‘ভয় পেওনা। আল্লাহ আছেন। উনি সব দেখছেন। নিশ্চয়ই আমাদের রক্ষা করবেন।’

সায়রা মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। শাহানা এসে বলল,
‘পালিয়েছে?
খোদেজা মাথা হেলিয়ে বলল,
‘হ্যা।
হামিদা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এল। বলল,
‘ভাবীজান সিভান কেমন যেন হয়ে আছে। আমার খুব ভয় করছে। ও আমার সাথে কথা বলছে না। ‘
সায়রা বলল, কি বলছেন ছোটমা? কি হলো ওর?
‘জানিনা। আমার ভয় করছে। শেহজাদকে একটু খবর দাও কেউ।’
সায়রা আর দাঁড়ালো না। সিভানকে নিয়ে কান্নাকাটির রোল পড়ে গেল। সাফায়াত ডাক্তার নিয়ে এল। শেহজাদের খোঁজ করলো। কিন্তু শেহজাদের খোঁজ পেল না। কাশীমকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই কাশীম বলল,

সম্রাট মহল ছেড়েছেন।

তা শুনে খোদেজা ধপ করে বসে পড়লো।

সাফায়াতের দিকে একটা চিরকুট বাড়িয়ে দিল কাশীম। বলল,

যাওয়ার পূর্বে এটি আপনাকে দিতে বলেছেন উনি।

সাফায়াত সেটি নিয়ে খুললো। দেখলো শেহজাদ লিখেছে,

আমার ভাই, আমার প্রিয় বন্ধু সবাইকে আগলে রাখার দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। আমাকে শান্তিতে বিরতি নিতে দাও। বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি এই হার জিতের খেলায়। আমাদের আবার দেখা হবে। ততদিন সাবধানে থেকো। ভালো থেকো। ভালো রেখো।

ইতি
তোমার ভাইজান।

সাফায়াত কাগজটা হাতের মুঠোয় মুড়িয়ে বলল,
এ কেমন গোলকধাঁধায় আমাকে ফেলে গেলে ভাইজান?

________

অপরূপা কামীলের পিছু পিছু যেতে যেতে বলল, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ঘাটে?

‘ঘাটে যাওয়া যাবে না। শেরহাম সুলতানের রক্ষীরা ওখানে আছে। ‘

‘তাহলে?’

‘আপাতত চুপ থাকুন। আমি দেখছি। ‘

অপরূপা চুপ করে রইলো। এই দানবের মতো লোকটির আতঙ্কে এমনিতেই সে চুপসে আছে। তন্মধ্যে রাত।
ভাগ্য তাকে আবারও কোথায় নিয়ে গিয়ে ছুঁড়ে ফেলবে জানা নেই। তবে সে ভয় পাবে না এবার। চোখের জল মুছে শক্ত করে নিজেকে। সাহস পুষে ভেতরে। আল্লাহকে স্মরণে রাখে।

তারমধ্যে হইহই করে ছুটে এল ঘোড়ার গাড়ির গাড়ি। একটা নয় দুটো নয়। পরপর অনেক।
কামীল তাদের থামিয়ে দিয়ে বলল,

সুলতান মহলের অতিথি আমরা। থামুন। সাহায্য চাই।

ঘোড়ার গাড়িগুলো থেমে গেল। কামীল তাদের সাথে কথা বলতে গেল। অনেকক্ষণ কথা বললো। তারপর অপরূপাকে বলল,

গাড়িতে উঠে বসুন। ওরা সুন্দরপপুরে যাচ্ছে। যেখানে যাচ্ছে সেখানে আপনার থাকার ব্যবস্থা করে দেবে তারা।

অপরূপা বলল, নাহ। আমি চিনিনা জানিনা। কি করে ওদের সাথে যাব?

আর কিছুক্ষণ থাকলে শেরহাম সুলতানের লোক এসে ঘিরে ফেলবে। আপনার পালানোর পথ থাকবে না। এবার আপনার সিদ্ধান্ত।

ঘোড়ার গাড়িতে থাকা কয়েকটা যুবতী মহিলা খিকখিক করে হাসিতে ফেটে পড়ে বলল,

এসো এসো। তাড়াতাড়ি এসো।

অপরূপা দুরুদুরু বুকে উঠে গেল। যুবতীগুলো গায়ে সেলোয়ার-কামিজ আর হিজাব পড়া। ঘোড়া ছুটে চলতেই তারা গল্পে মজে গেল। অপরূপাকে পাত্তাও দিল না।

দুপাশে বনজঙ্গল, পাহাড় পর্বত, দূরের ছাউনির ঘর, ধূ ধূ বিল, পথ পান্তর পেরিয়ে এক নতুন দেশে পা রাখলো ঘোড়ার গাড়ি। অপরূপা নব্য চন্দ্রের আলোক ছটায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় ডুবে গেল। চারপাশটা কি সুন্দর! কি অপূর্ব!

ঘোড়া ক্ষণিকের জন্য থামলো। ঘোড়াকে পানি খাইয়ে পুনরায় তীব্র বেগে ছোটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো গাড়ি চালক। হঠাৎ উল্কাবেগে পাশ দিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগিয়ে ছুটে গেল কালো চাদরে মোড়ানো এক তেজস্বী অশ্বারোহী। বাতাসের কম্পনে অপরূপার নাসিকারন্ধ্র ভেদ করে গেল সেই পরিচিত আতরের সুগন্ধি।

চলবে…

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_২৬
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

সোহিনীকে ছেড়ে দিল সায়রা আর শবনম মিলে। ছাড়া পাওয়ামাত্রই সায়রার গালে কষে একটা চড় বসালো সে। চেঁচিয়ে উঠে বলল,
‘তোর সাহস কি করে হয় আমাকে কক্ষে বন্দি করার? রূপাকে কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছিস? ‘

সায়রা ওর মুখপানে ছলছল নেত্রে চেয়ে রইলো। আয়শা বলল,

‘ তুমি সায়রা আপুকে ভুল বুঝছো। রূপা এমনিতেই পালাতে চাচ্ছিলো। ‘

‘একদম চুপ। আমি ভাইজানকে গিয়ে বলছি তোরা রূপাকে পালাতে সাহায্য করেছিস। ‘

সায়রা ওর হাত ধরে আটকে বলল,

‘আগে সিভানকে সুস্থ হতে দে। ‘

সোহিনী কপাল ভাঁজ করলো। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

‘কি হয়েছে সিভানের?’

শবনম বলল,

‘কেউ জানেনা কি হয়েছে? ও অজ্ঞান হয়ে ছিল অনেকক্ষণ। হুশ ফেরার পরেও কোনো কথা বলছেনা।’

সোহিনী ত্রস্ত পায়ে হেঁটে চলে গেল। দেখলো হামিদা কাঁদছে। খোদেজার বুকে সিভান। তার চোখ দুটো নিভুনিভু। সোহিনী গিয়ে ওর সামনে বসে বলল,

‘কি হয়েছে ভাইজান? কি হয়েছে তোমার?’

খোদেজা কান্না চেপে বলল,

‘ ওর সামনে কেঁদোনা। ও ভয় পাচ্ছে।’

‘বাবু এই বাবু চোখ খোলো। দেখো বড়মা ডাকছে তোমায়। শেহজাদ ভাইজান এসেছে। ওঠো।’

সিভান অনেকক্ষণ পর বিড়বিড়িয়ে বলল,

‘এটা সুন্দর বউ দিয়েছে। ‘

খোদেজা বলল,

‘কি?’

হামিদা ওর মুখ ধরে বলল,

‘কি বলছো এসব? সুন্দর বউ কি দিয়েছে? তোমাকে কিছু দিয়েছে? ‘

সিভান পুনরায় বলল,

‘এটা শেহজাদ ভাইজান দিয়েছে’।

কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। শাহাজাহান সাহেব আর শেরতাজ সাহেব কক্ষে প্রবেশ করে বললেন,

‘কথা ফুটেছে? ‘

সোহিনী বলল,

‘হ্যা কথা বলছে। ভাইজান তোমার কোথায় খারাপ লাগছে?’

সিভান মাথায় আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। খোদেজা তার মাথায় চুমু খেয়ে বলল,

‘কিছু খাবে তুমি?’

সিভান বলল,

‘শেহজাদ ভাইজানের কাছে যাব। ‘

খোদেজা তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। ওড়নার আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে বলল,

‘তোমার শেহজাদ ভাইজান বিরতি নিয়েছে এই ঝঞ্জাট থেকে। তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ‘

তন্মধ্যে বিকট শব্দে কি যেন ঝনঝন শব্দ করে উঠলো। শেরহাম খাবারঘরের সমস্ত বাসনকোসন, জগ গ্লাস ফেলে দিয়েছে। তুমুল ভাংচুর করছে। সকলেই কেঁপে উঠলো। সোহিনী ছুটে গেল। সায়রা তটিনীরা সবাই আতঙ্কে চুপসে গিয়েছে।

‘অপা কোথায়? কোথায় ও? সোহিনী! ‘

সোহিনী তার সম্মুখে এসে মাথা নত করে বলল,

‘ ও শৌচাগারে যাবে বলেছিল ভাইজান। তারপর আর দেখা নেই। ‘

মেহেদী দিতে থাকা মেয়েগুলো বলল,

‘ওই পৌঢ়া মহিলা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছেন আপনার ভাবী বেগমকে। উনি ভালো জানবেন। ‘

শেরহাম দাঁত কটমট করে হিংস্র জন্তুর মতো গর্জে খোদেজার উদ্দেশ্যে হেঁটে গেল। সবাই তার পিছু পিছু ছুটলো। পথিমধ্যে পথ আটকে দাঁড়ালেন শেরতাজ সাহেব। বললেন,

‘আর নীচে নেমো না। যথেষ্ট হয়েছে শেরহাম। মায়ের কুশিক্ষায় তোমার কতটা অধঃপতন হয়েছে দেখেছ? তোমার মায়ের পেটের অন্য একটি সন্তান কিন্তু আমরা মানুষ করেছি। সোহিনীকে দেখো আর নিজেকে দেখো। তোমার পাশে কেউ নেই দিনশেষে। ‘

শেরতাজ সাহেবের কথাগুলোকে গ্রাহ্য করলো না শেরহাম। মুখ ঝামটা মেরে খ্যাঁক করে বলে উঠলো,

‘এইসব ফালতু কথাবার্তা শোনার সময় নেই আমার। অপা কোথায়? কোথায় লুকিয়েছ তাকে?’

সোহিনী পথরুদ্ধ করে দাঁড়ায়। ভীতু গলায় বলে,

‘ ও পালিয়েছে ভাইজান। ‘

কথা বলা শেষ করে উঠতে পারলো না সোহিনী। তার আগেই শক্তপোক্ত হাতের চড় খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। সকলেই আঁতকে উঠলো। সায়রা গিয়ে ধরলো তাকে। শেরতাজ সাহেব পাল্টা চড় বসালেন শেরহামকে। শেরহাম উনাকে কিছু বলতে দিলেন না। উনার গায়ের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই উনি পড়ে যাবেন তখুনি সাফায়াত এসে ধরলো। বলল,

‘অনেক সহ্য করেছি আপনার এসব বেয়াড়াপনা। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এই পা নিয়ে আর বেরুতে পারবেন না। ‘

শেরহাম ওর দিকে এগুতেই সায়রা এসে পথরুদ্ধ করে হাতজোড় করে বলল,

‘ভাইজান আপনার যদি এতই দরকার হয় তাহলে রূপার খোঁজ করুন। রূপা নিজেই পালানোর পথ খুঁজছিলো। ‘

শেরতাজ সাহেব বললেন,

‘খুঁজবেই তো। আমরা ওর আপন মানুষ হয়ে ওর কাছ থেকে নিস্তার চাইছি আর পরের মেয়েটা তো অবশ্যই চাইবে। ওই মেয়েকে আমরা ভুল বুঝেছিলাম। আসল ষড়যন্ত্রকারী ছিলে তুমি। ধিক্কার তোমাকে। তুমি একদিন সবার ঘৃণা পেতে পেতে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। তোমাকে ভালোবাসার মতো কেউ থাকবে না। একটা জীবও না। ‘

শেরহাম রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বলল,

‘এবার লা*শ ফেলবো। আর সবাইকে পথে টেনে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলবো। অনেক বাড় বেড়েছে সবার। ‘

‘যাও যাও। যা ইচ্ছে করো। যাকে দেখে হিংসেয় জ্বলেপুড়ে মরছিলে সে তোমাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মহল ছেড়েছে। এবার নাচো তুমি তোমার রাজত্ব নিয়ে। ‘

শেরহাম তেড়ে গিয়ে বলল,

‘অ্যাই শেরতাজ সুলতান..

তটিনী এসে ওর কলার চেপে ধরে বলল,

‘আপনার এসব অনেক সহ্য করেছি। আপনার কারণে ‘ও’ মহল ছেড়েছে। জানে মে*রে ফেলবো ।’

শেরহাম ওর গলা চেপে ধরে ছুঁড়ে ফেলতেই সাফায়াত চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ভাইজান এবার রক্তারক্তি শুরু হবে কিন্তু । ‘

শেরহাম সকলের উদ্দেশ্যে আঙুল তুলে বলল,

‘আমি যদি অপাকে না পাই। তাহলে এখানে কাউকেই জীবিত রাখবো না বলে দিলাম। এই চল সবাই। ‘

নিজের দলবল নিয়ে মহল ত্যাগ করলো সে।

এমন দুঃসময়ে সবার দরকার ছিল শেহজাদকে। সে সবার শক্তি ছিল । তার এক কথায় সকলেই পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতো। কোনো ভয়ভীতি তাদের ছুঁতে পারতো না। কিন্তু তার অনুপস্থিতি সকলকে আরও অসহায়, দুর্বল, ভীত, শঙ্কিত করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতি হবে জানলে ও কখনোই মহল ছাড়তো না।

সাফায়াত সবাইকে ভরসা যুগিয়ে বলল,
ভাইজান কালপরশু নিশ্চয়ই চিঠি পাঠাবেন। আমাদের সবুর করতে হবে।

সোহিনী হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো। এতদিন পর ভাইকে পেয়ে সে সব ভুলে ভাইয়ের আপন হতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাইজান কেন এতটা পাষাণ?
শেরতাজ সাহেব ওর সামনে গিয়ে বসে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

‘তোমার ভাইয়ের জন্য তো অনেক কিছু করলে। দেখলে সে তোমার গায়ে হাত তুলতেও পিছপা হলো না। এমনই পাষাণ সে। আজ অব্দি একটুও পরিবর্তন ঘটেনি। ‘

সোহিনী আরও জোরে কাঁদতে লাগলো। সাফায়াত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

‘আর কেঁদোনা। শান্ত হও। ‘

_______________

ঘোড়ার গাড়ি এসে থামলো একটি বিশাল মসজিদের সামনে। মসজিদের পাশেই মাজারের দিকটাতে আলোকবাতি জ্বলছে। দলেদলে লোকজন আসা যাওয়া করছে। মসজিদের মাইকে
খতমে গাউসিয়া শরীফ পাঠ হচ্ছে।

চিঁহি চিঁহি শব্দ করে ঘোড়াগুলো শূন্যে পা তুলে শান্ত হয়ে দাঁড়ালো। অপরূপা মেয়েগুলোর সাথে গাড়ি থেকে নামলো। গাড়ি চালক বলল

‘ওদের সাথে সাথে যাও। ‘

মেয়েগুলো হি হি করে হেসে বলল,

‘তুমি তো ভয় পেয়ে আছ দেখছি। ভয় পেওনা। আমাদের সাথে আসো। ‘

অপরপা বিনয়ী ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে ওদের পিছু পিছু গেল।
মেয়েগুলো নিজেদের সাথে কথা বলছে। অপরূপাকে কোনোরূপ প্রশ্ন করছে না কিংবা কথা বলছে না। অপরূপার ভয় হলো। সে কোনো বিপদে পড়বে না তো? পরক্ষণে এখানকার পরিবেশ দেখে মনটা আনন্দে আত্মহারা হলো। বাতাসে পবিত্র খুশবু। আগরবাতি আর গোলাপজলের তীব্র সুঘ্রাণ।
চাদরটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে সে দেখলো অসংখ্য বোরকা পরিহিত হিজাবী যুবতী, মহিলা আর বাচ্চা মেয়ের আনাগোনা।
গাউসিয়া শরীফ পাঠ শেষে এশার আজান পড়লো। ‘আল্লাহু আকবর’ প্রতিধ্বনি কানে আসতেই অপরূপার সমস্ত ভয়ভীতি কেটে গেল।
ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি আর লোকজনের সমাগম, বাচ্চাদের ছোটাছুটিতে হৈচৈ মেতে আছে চারিপাশ। আবাল বৃদ্ধ-বণিতারা পায়েপায়ে হাঁটছে। মসজিদ থেকে কয়েক পথ দূরে নানান ধরণের অস্থায়ী দোকানপাটের মেলা বসেছে। বাচ্চারা সেসব দোকানের আশপাশে ছোটাছুটি করছে। অপরূপার ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সত্যি এটা সুন্দরপুর! রূপনগরের একটি অংশ।

শান বাঁধালো প্রকান্ড দিঘীর মতো একটি পুকুর। দুপাশে দুটি ঘাট। মহিলা আর পুরুষের জন্য আলাদা ঘাট। আজানের ডাকে সকলেই দলে দলে অযু করার জন্য ঘাটের দিকে নেমে গেল।
অপরূপা সবকিছু মুগ্ধ চোখে দেখতে দেখতে হঠাৎ করে হারিয়ে ফেললো মেয়েগুলোকে। প্রথমেই ভয় হলো। খুঁজে দেখলো। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর মনে হলো তারা আশেপাশেই আছে। সে ওই মহিলাগুলোর সাথে অযু করে নামাজ পড়ে নিতে পারবে। খোদার অশেষ মেহেরবান শেরহাম সুলতানের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সে। এবার তার মুক্তি। দুর্ঘটনা ভেবে ভুলে যাবে সুলতান মহলের সবাইকে। ভাগ্য তাকে যেদিকে নিয়ে যায় সেদিকে যাবে।

মুখ থেকে পর্দা সরিয়ে অযু করে নিল সে। যুবতী,মহিলাগুলোর পেছনে নামাজঘরের দিকে যেতে যেতে কেউ একজন খপ করে তার হাত ধরে বলল,

তুমি পালাচ্ছ কোথায়?

অপরূপা দেখলো ওই মেয়েগুলোর একজন। দেখতে চিকনচাকন সুন্দর চেহারার অধিকারিণী। অপরূপা ম্লানমুখে বলল,

‘নামাজ আদায় করব।’

‘আচ্ছা। ঠিক আছে। আমরা পেছনে সারিতে থাকবো। ‘

আনন্দে অপরূপার মুখশ্রী জ্বলজ্বল করে উঠলো।

‘আমার সাথে আসুন না।’

‘আমার সইরা এখনো ঘাটে। তুমি যাও।’

অপরূপা ঘাড় হেলিয়ে বলল, ‘জ্বি’।

কয়েকজন মেয়েদের সাথে একসারিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলো অপরূপা। দুটো বাচ্চা মেয়ে তার পাশে এসে বসলো। বলল,

‘এই এই তুমি কি বউ?’

অপরূপা চমকিত হলো। মোনাজাত শেষ করে মেয়ে দুটির দিকে তাকাতেই মেয়েগুলো হাসলো। অপরূপা মিষ্টি হেসে বলল,

‘আমাকে বউয়ের মতো লাগছে?’

‘হ্যা।’

‘তাহলে বউ।’

মেয়েদুটি হাসলো। তাদের মায়ের সাথে টুকটাক কথা হলো অপরূপার। সে সবার কাছ থেকে নিজের নাম গোপন করছে যদি শেরহাম সুলতান এখানে অব্দি চলে আসে? সবাইকে নাম বলেছে হুমায়রা।

মহিলাটির কাছ থেকে অপরূপা জানতে পারলো আজকে এখানে ছোটখাটো একটা মাহফিল হয়েছে। সুন্দরপুরের সবচাইতে বড় মাজার শরীফ আর বড় মসজিদ এটি। বেশিরভাগ সময় এটি লোকসমাগমে মেতে থাকে। প্রায়সময়ই এখানে আসেন তিনি। বাড়িও বেশিদূরে নয়। কিছু মানত ছিল তা দিতে তিনি আজ মাজারে এসেছেন। অপরূপার সময়গুলি চমৎকার কাটলো।

নামাজ কক্ষ থেকে বের হতেই দূরে কয়েকটা ঘোড়ার গাড়ি আর ঘোড়ার দেখা মিললো। মেয়েগুলোকে খুঁজলো সে। হঠাৎ করে এত এত ভীড় হয়ে গেল মেয়েগুলোকে সে খুঁজে পেল না। কোথায় গেল তারা? সে কোথায় খুঁজবে তাদের?

নামাজ আদায় করে মসজিদের ভেতর হতে পুরুষেরা বের হতে লাগলো দলে দলে। সকলের গায়ে পাঞ্জাবি। মাথায় সাদা টুপি। কি সুন্দর দৃশ্য! অপরূপা মসজিদের ভেতরে চোখ দিতেই আচম্বিত বেখেয়ালে চোখ পড়ার পর চোখ সরিয়ে নিয়ে পুনরায় চমকিত হয়ে সামনে তাকাতেই হৃৎস্পন্দন থেমে গেল তার। শ্বাস পড়লো না। না চোখের পলক।
মাথায় রুমাল জড়ানো, সাদা পাঞ্জাবির উপর কালো চাদর পরিহিত সুদর্শন পুরুষটির দিকে চোখ আটকে গেল। পুরুষটির সুস্থির বদনখানিতে লেপ্টে আছে প্রচন্ড গাম্ভীর্যতা। চোখের দৃষ্টি নিরুত্তাপ।
ভয়ে, আতঙ্কে গলার পানি শুকিয়ে এল অপরূপার। নামাজ পড়া শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে কালো চাদর দুকাঁধে জড়িয়ে পেছনে হাত রেখে ডানে-বামে তাকাতে হেঁটে বেরিয়ে এল শেহজাদ। অপরূপা সাদা চাদর তুলে নিজেকে ঢাকলো। মুখের পর্দা নামিয়ে দিল। বুকটা ধুকপুক করে কাঁপছে। হাত পা শীতল হয়ে এসেছে। উনি এখানে কেন? তার খোঁজে এসেছে? না এ হতে পারেনা। সে এমন কেউ নয় যাকে খুঁজতে উনি মহল ছেড়ে সুন্দরপুরে চলে আসবেন। তার জন্য অতটা দরদীও নন উনি। তাহলে এখানে কি?
শেহজাদের পাশে দুজন ইমাম সাহেব এসে দাঁড়ালেন। উনারা বিনয়ী ভঙ্গিতে শেহজাদের সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটছেন।
এদিকে শিরনী দেয়া হচ্ছে। তাই সারিতে দাঁড়িয়েছে মানুষ। অপরূপার হাত ধরে সেই বাচ্চা মেয়ে দুটির মা সারিতে তাকে দাঁড় করিয়ে দিল। অপরূপার অন্য কোনো দিকে মন নেই। শেহজাদের দিকে তার চোখদুটো। কিছুতেই চোখে পড়া যাবে না। উনি কি তাকে মহলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুঁজতে বেরিয়েছেন?

অপরূপা কলাপাতায় শিরনী হাতে দাঁড়িয়ে থাকলো। হুট করে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল শেহজাদ। অপরূপা ডানে-বামে সামনে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেল কলাপাতায় করে ইমাম সাহেবদের সাথে দাঁড়িয়ে শিরনী খাচ্ছে শেহজাদ। এমন পরিস্থিতিতেও অপরূপার কেমন যেন হাসি পেয়ে গেল! সাথে অদ্ভুতও লাগলো। রূপনগরের সম্রাট কলাপাতায় শিরনী খাচ্ছেন?

অপরূপার খিদে পেয়েছে এমনিতেও। সে পর্দা তুলে মাথায় চাদর টেনে শিরনীটুকু খেতেই দেখলো শেহজাদ সে জায়গায় নেই। খাওয়া শেষে আবারও ডানেবামে হাঁটলো। দৌড়ালো। শেহজাদকে দেখতে পেল ঘোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য মানুষ। মেয়ে দুটির মা এসে অপরূপাকে বলল,

‘ওই দেখো রূপনগরের সম্রাট এসেছেন। সুলতান মহলের নাম শুনেছ? অনেকদিন কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে উনাকে। আজ সত্যিই অন্যরকম একটা দিন। দেখা পেয়ে গেলাম। কি সৌভাগ্য আমাদের!’

অপরূপার জবাব না পেয়ে মহিলাটি বললেন,

‘ তুমিও আজ প্রথম দেখছো না? আমি উনার অনেক নাম শুনেছি। শুনেছি উনার কাছে সবকিছুরই উত্তম ফায়সালা পাওয়া যায়, যা পরে সত্যি সত্যি মঙ্গলময় হয়। ‘

অপরূপা মহিলাটির প্যানপ্যানানিতে বিরক্ত হলো। সে আছে অন্য চিন্তায়। ওই মেয়েগুলো কোথায়? ঘোড়ার গাড়ি কখন ছাড়বে? তারা কোথায় যাবে? নাকি এখানে আশেপাশে থাকবে? যদি এখানে শেহজাদ সুলতানও থাকে? ওই মানুষগুলোকে কি তাকে খুঁজে দেয়ার কথা বলছে? অপরূপা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। এ আবার কোন বিপদ! শেহজাদের উদ্দেশ্য না জানা অব্দি তার শান্তি নেই। মহিলাটির বাচ্চা মেয়েদুটোকে শেহজাদের পাশে দেখা গেল। তারা শেহজাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই শেহজাদ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তা দেখে মহিলাটি আনন্দে আত্মহারা, পাগলপারা। তার দুচোখ চিকচিক করে উঠলো। মহিলাটির চোখ অনুসরণ করে অপরূপাও শেহজাদের দিকে তাকালো।
শেহজাদ মাথা থেকে রুমাল খুলে তাতে কয়েকটা পয়সা দিয়ে মেয়ে দুটোর হাতে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই মেয়ে দুটো হেসে দৌড়ে দৌড়ে মায়ের কাছে এসে বলল,
‘আম্মা সম্রাট পয়সা দিয়েছে। একটা রুমাল।’
মহিলাটি আবেগে আপ্লুত হয়ে রুমালটা নিয়ে সম্মানের সহিত কপালে ছুঁয়ে বলল, এটা তোমার আব্বাজানকে দেবে। সম্রাটের দেয়া রুমাল।’
বাচ্চা মেয়েদুটো ভীষণ খুশি হয়ে বলল,
‘কাল মেলায় যাব আম্মা।’
‘হ্যা যাব। এখন চলো। ‘
মহিলাটি পুনরায় অপরূপার দিকে চেয়ে বলল,
‘আসি কেমন? তুমি কোথায় যাবে?’
‘আমার সঙ্গী আছে। তারা আসবে। ‘
‘আচ্ছা। আসি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ। ‘
মহিলাটি চলে যেতেই অপরূপা পুনরায় শেহজাদের দিকে ফিরলো। ঘোড়ার লাগাম ধরে হাঁটতে হাঁটতে শেহজাদ ইমাম সাহেবের কথা বলছেন। সে যেদিকে হাঁটছে সেদিকের লোকজন সরে দাঁড়াচ্ছে। অপরূপা মনে সাহস পেল। তারমানে উনি চলে যাচ্ছেন। একমনে বলল উনি তাকে খুঁজতে আসেননি, অন্য মন বলল উনি তাকে মহলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে।
শেহজাদ ঘোড়ার উপর উঠে গেল। অপরূপা লম্বা একটি দম ফেললো। শেহজাদের ঘোড়া যেদিকে গেল সেদিকে ছুটলো সেও। মনে হলো শেহজাদ সুলতান আশেপাশে থাকলে সে নিরাপদ। উনি কি চলে যাচ্ছেন? কিন্তু তার পরিণতি কি হবে? কোথায় গেলে তার একটু শান্তি মিলবে? উনি তো উনার ভাইয়ের অপকর্ম সম্পর্কে অবগত থেকেও ভাইয়ের হাতে তাকে ছেড়ে দিয়েছে। অথচ শেরহাম সুলতান বলেছে শেহজাদ সুলতানের কারণেই রূপাকে সে হাতিয়ার বানিয়েছে। তারমানে রূপার আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কি শেহজাদ সুলতান দায়ী নন? কি করে ভাইয়ের হাতে থেকে ছেড়ে দিলেন নিশ্চিন্তে? চাপা রাগে, ক্ষোভে শেহজাদকে ভুলতে চাইলো সে। সুলতান মহলের কাউকেই সে আর স্মরণ করবে না। কিছুতেই না। কান্নারা এসে তার গলায় আটকে রইলো। যার কাছে নিজের আশ্রয় খুঁজে সে-ই তার ভাবনাকে পাল্টে দিয়ে অচেনা এক রূপে ধরা দেয়।

চলবে..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ