#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_২০
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা
ফজল সাহেব বেরোবেন শুনে অপরূপা উনার কক্ষের কাছে ছুটে গেল। উনি অপরূপাকে দেখে হেসে বলেন,
আরেহ রূপা! কিছু বলবে?
অপরূপা পা টিপে টিপে কক্ষে প্রবেশ করে। ফজল সাহেব ব্যাগ গোছাতে থাকেন। অপরূপা জানতে চায়,
মিঠির মৃত্যুর কারণটা জানতে পেরেছেন?
হ্যা। কোকেইন পাউডার।
সম্রাট সাহেব সন্দেহ করছেন উনার কক্ষ হতে কোনো একটা ফুল মিঠির কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। আর সেই ফুলটি থেকে কোকেইন মিঠির পেটে গিয়েছে যার কারণে মৃত্যু। বুঝতে পেরেছ এবার? রহমান তোমার কতবড় ক্ষতি করতে চেয়েছে। তোমার দাদীজানের মৃত্যুর কারণ কিন্তু সে। ভুল মানুষকে ভালোবেসেছ রূপা। আর এর পরিণতি ভয়ানক।
অপরূপা চুপ করে থাকে। তার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়। গলার কাছে এসে কি যেন আটকে থাকে।
রহমান কেন এসব করবে? আমাকে নেশা করিয়ে ওর কি লাভ?
সেটা ও ভালো জানতে পারবে। চলি। ভালো থেকো তুমি। আমি আবার আসবো। ও হ্যা আরেকটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। যার পাশে সম্রাট আছেন তার কোনো বিপদআপদ আর হবে না।
অপরূপা চুপ করে রইলো। যদি দাদীজানের মৃত্যুর কারণ রহমান হয়ে থাকে তাহলে সে ছাড়বে না তাকে। রহমানকে এর শাস্তি পেতে হবে। ভ*য়া*নক শাস্তি।
ডাক্তার সাহেব চলে যান সেদিন।
অপরূপার সময়গুলো কাটতে থাকে মহলে। ওই কক্ষে যাওয়ার পথ খুঁজে পায়না সে। কতবার ওই চাবিদুটো হাতে কক্ষদুটির পথে পা বাড়িয়েছে। কেউ না কেউ চলে আসে।
চাবিদুটো আসলেই ওই কক্ষের কিনা সেটা জানতে পারলে হয়ে যেত। গভীর রাতে ভয় করে তাই সে যায় না। কিন্তু এভাবে চলতে পারেনা এবার রহস্য উদঘাটন করতেই হবে ভয় কাটিয়ে।
————
মহলের মেয়েদের অস্ত্র শেখার গুরু এসেছেন সপ্তাহ খানেক হলো। সবাই যখন অস্ত্র চালনার কলাকৌশল শেখে অপরূপা দরজার বাহির হতে তা দেখে। সেদিনও দেখছিল। হঠাৎ তার পাশে শাহজাহান সাহেবকে আবিস্কার করলো রূপা। বুকে থু থু ছিটাতেই উনি বলল,
ভয় পেয়েছ?
নাহ।
তুমি সাহসী মেয়ে। ভয় পাওয়ার কথা নয়। অস্ত্র চালানো শিখবে?
অপরূপা বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে ফিরলো। বলল,
অ*স্ত্র? আমি?
হ্যা।
অপরূপা মৃদু হাসলো। কৌতূহল দেখিয়ে বলল,
আমি পারব?
চেষ্টা করলে পারো। নিজের আত্মরক্ষার জন্য শিখে রাখাটা জরুরি।
কেউ যদি আহত হয় আমার হাতে?
হলে হোক।
না বাপু দরকার নেই।
শাহাজাহান সাহেব হেসে উঠে বলেন,
দরকার আছে। তটিনী মা একটা অস্ত্র দাও তো এদিকে।
তটিনী হাঁপাতে হাঁপাতে অস্ত্র নিয়ে দৌড়ে এল। শাহজাহান সাহেবের হাতে অস্ত্র দিতেই তিনি তা অপরূপার হাতে তুলে দিলেন। বলল,
বীরেরা মৃত্যুতেও সুখ খুঁজে পায়। আর ভীতুরা হাজার বছর বেঁচে থেকেও সে সুখ পায় না। বীরের মতো বাঁচতে শেখো অপরূপা।
অপরূপা চকচকে তলোয়ারটি হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ উল্টিয়ে দেখে। বেশ ভার। কিভাবে চালাবে সে? তুলতেই তো হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। সায়রার সাথে দু একবার তলোয়ার চালাতে গিয়ে হাত থেকে তলোয়ার খসে পড়ে গেল কয়েকবার। তারপর চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে বলল,
না না আমি পারব না।
শাহাজাহান সাহেব তাকে দেখে হাসতে হাসতে গুরুজীর উদ্দেশ্যে বলে,
তাকে তলোয়ার চালানো শেখানোটা আপনার কাজ। বাকিরা তো বেশ পারছে ।
গুরুজী মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
অবশ্যই সাহেব । আমার বিশ্বাস সেও পারবে।
তলোয়ার ধরা এবং চালানোর কলাকৌশল, শত্রু পক্ষের গতিবিধি বুঝে ফেলার প্রশিক্ষণ প্রায় অল্পদিনেই রপ্ত করে ফেলে অপরূপা। বাকিদের সাথে তুখোড় প্রতিযোগীতা চলতে থাকে। নেশায় পরিণত হয় অস্ত্র চালানো। অদ্ভুত একটা সাহস বুকের ভেতর হতে উদগম হয়। তেজীয়ান যোদ্ধার মতো অস্ত্র চালিয়ে পরাজিত শত্রুর ম্লানমুখ দেখার তীব্র ইচ্ছে বুকের ভেতর পোষণ করে।
খোদেজা শাহজাহান সাহেবের উপর চড়াও হয়।
কেন ঘরে এমন কালসাপ পুষছেন তিনি? এই অস্ত্র একদিন যদি তাদের উপর উঠে?
শাহজাহান সাহেব চুপ করে শোনেন। মেয়েটাকে দেখে তেমন মনে হয় না।
তাছাড়া শেহজাদ শুনেও তেমন কিছু বলেনি। তারমানে তার মত আছে।
মহলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাজ চলছে। সেইসাথে নদীর ঘাটগুলোতে কাঁটাতারের বেড়ি বাঁধানোর কাজ চলছে। ডাকাত প্রবেশের আর কোনো রাস্তা নেই। শেহজাদ সেসব কাজে তদারকি করা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। মাঝেমধ্যে মহলের ভেতর দুপাক হাঁটাহাঁটি করে। যুবতীদের তলোয়ার চালানোর ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং শব্দে থেমে যায় সেই কক্ষটির সামনে। একঝলক দেখে নিয়ে পুনরায় তার কাজে বেরিয়ে যায়।
________
ফুলকলির বিবাহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে তন্মধ্যে। মহলের ভেতর বিবাহকার্য সম্পন্ন হবে। সকাল থেকে পাটায় মশলা পিষে যাচ্ছে অপরূপা। মশলা বাটা শেষে তটিনী এসে বলল,
রূপা মেহেদী বেটে দিতে হবে। ফুলি আপার হাতে লাগাবো সেইসাথে আমরাও।
হামিদা বলল,
মেয়েটা তখন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। মেহেদী আমি বেঁটে নেব।
তটিনী বলল, তা কি করে হয়? রূপা আরেকটু কষ্ট করো দয়া করে।
অপরূপা কখনোই মুখের উপর না বলতে শেখেনি তাই বলতে পারলো না। মেহেদীও বেটে দিল। খোদেজা কিছু বলল না। অপরূপার নীরবতা তাকে স্বস্তি দেয়। মুখের উপর কথা বললে উনি সহ্য করতে পারেন না।
সন্ধ্যে যখন নামলো তখন মহলে ফিরলো শেহজাদ। সারাদিনের ক্লান্তি দেহে ভর করেছে। এদিকে ফুলকলির বিবাহ কাল। কাজের বুয়া হলেও তার তত্বাবধানে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে সেহেতু ওর উপস্থিত থাকাটা জরুরি। তাই নাওয়াখাওয়া সেড়ে সাফায়াতের সাথে ফুলকলির কক্ষের দিকে গেল। ফুলকলি সবার মাঝে বসে লাজুক লাজুক হাসছে। তার হাতে বাটা মেহেদী পড়িয়ে দেয়া মেয়েটাকে আজকাল দেখা যায় না তেমন। অথচ সে মহলেই থাকে। মাঝেমধ্যে মতিবানুর সাথে কথা বলার অজুহাতে ওই কক্ষের দিকে আসে শেহজাদ। তার কন্ঠস্বর শুনলেই মেয়েটাকে আড়াল হয়ে যেতে দেখে। এ যেন পূর্বের অপরূপা!
সাফায়াত রসিকতা করতে করতে ভেতরে প্রবেশ করে। শেহজাদ চলে আসে। রূপা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ুক সে তা চায় না।
বিবাহের দিন চলে এল। নিকাহ পড়ানো হবে রাতে। অপরূপার সারাটাদিন রসাইঘরে কেটে গেল। সে কাজে হাত দিলে খোদেজাকে চিন্তা করতে হয় না। তার ধোঁয়ামোছা পরিষ্কার। যা আদেশ পায়, তা করে, আগবাড়িয়ে বাড়তি কাজও করে দেয়। দেখে বুঝা যায় কাজের হাত পাকা। চুপচাপ বিনাবাক্যে কাজ করে যায়। খাওয়া-পরার হিসেব যেন সে চুকে দেয় কাজ করে।
খোদেজা অবশ্য খুশি অন্য কারণে। উনার কারিশমা বেশ কাজে লেগেছে। একবারও অমান্য হয়নি কথার। উনার আদেশ অনুযায়ী একবারও শেহজাদের কক্ষের দিকে পা বাড়ায়নি অপরূপা। ভুলেও শেহজাদের সামনে পড়েনি। বরং শেহজাদের কন্ঠস্বর কানে এলেই আড়াল হয়ে যায়। এতে তিনি সন্তুষ্ট তার উপর। একজন বহুরূপীকে ভালোবেসে যে ঘর ছাড়তে পারে সে অন্তত রূপনগরের সম্রাটের পায়ের যোগ্যও নয়। সে যতই রূপবানু হোক।
বিষয়টা উনার বুদ্ধিমান, আক্কেলমন্ত ছেলে বুঝতে পারেনি এমন না। বেশ বুঝেছে সে।
তাইতো মায়ের সাথে শলাপরামর্শ আজকাল সে কমিয়ে দিয়েছে।
কমিয়ে দিক। তাতে কি? ছোট থেকে এতবড় করেছেন অনেক কষ্টে। মায়ের মতো ভালো কেউ কখনো চাইবে না। আর অপরূপা! সে কোথাকার ছাই। না তার মনে শেহজাদের জন্য এতটুকু মায়া আছে, না আছে দরদ। কোনবলে উনি শেহজাদের পাশ ঘেঁষতে দেবেন মেয়েটাকে? ভালোবাসা যেখানে থাকে সেখানে চোখে হারানোর একটা বিষয় থাকে। তা শেহজাদের মাঝে দেখা গেলেও অপরূপার কাছে তা আশা করাটা নিছক হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া কিছুই নয়। তাকে দেখলেই বুঝা যায় মহৎপ্রাণ বলে শেহজাদের প্রতি তার অগাধ সম্মান আছে, অন্যকিছু নয়।
ফুলকলিকে বধূ সাজানো হয়। ঘোমটা টেনে দিয়ে বরের সামনে নিয়ে আসে অপরূপা সায়রা তটিনী সবাই মিলে। মাঝখানে হালকা গোলাপি রঙের পর্দা ঝুলানো।
শেহজাদ সবকিছু একঝলক দেখতে দেখতে এসে থামে সাফায়াতের পাশে। সাফায়াত মফিজের পাশে দাঁড়িয়েছে। শেহজাদ হঠাৎই পর্দার অন্যপাশে ফুলকলিকে ধরে এনে পাটিতে বসানো অপরূপাকে দেখতে পায়। বিয়ে উপলক্ষে সবার জন্য নতুন পোশাক আনা হয়েছে। তন্মধ্যে একটা রূপা পড়েছে। মাথা ঢাকা ওড়নার উপর পড়া টিকলিটা তার বাঁকা হয়ে গিয়েছে।
পর্দার ওপাশে চোখ ফেলতেই শেহজাদের দিকে চোখ পড়ার সাথে সাথে যেই চোখ নামিয়ে নিতে যাবে ঠিক তখনি শেহজাদ ইশারা করে টিকলিটা ঠিক করে নিতে। অপরূপা কপালে হাত দেয়, নাকে হাত দেয়, শেহজাদের ইশারা বুঝতে পারে না। শেহজাদ পর্দা একটুখানি সরিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে দিতেই অপরূপা টিকলিটা সোজা করে দেয়। শেহজাদ হাসে। অপরূপাও হাসে।
বিয়ে পড়ানো হচ্ছে ওদিকে। শেষ প্রায়। মিষ্টিমুখ চলছে। অপরূপা দেখলো সবাই বিয়ের আসর দেখতে মত্ত। পুরুষেরা বিয়ের আসরে। মেয়েরা আড়ালে দাঁড়িয়ে বিয়ে পড়ানো দেখছে। ফুলকলির আনন্দের শেষ নেই। শেহজাদ ভাইজানের ঋণ সে জীবনেও শেষ করতে পারবে না। তার চোখেমুখে উৎফুল্লতা। কোনো বেদনার ছাপ নেই। তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই কিছুদিন আগেও তার জীবনে একটা ঝড় বয়ে গেল। আর মফিজ একজন বাস্তব প্রেমিক আর এখন স্বামী।
অপরূপা সুযোগ বুঝে চাবি নিয়ে ওই কক্ষদুটির কাছে চলে গেল। কাওয়ালি বাজনা চলছে বাইরে। তাই দরজা খোলার আওয়াজ কারো কানে যাবে না। কিন্তু দুটো চোখের নজরদারিতে যে শুধুই সে তা সম্পর্কে সে অবগত নয়। তাই সে চোখের আড়াল হওয়ামাত্রই শেহজাদ উতলা হয়ে উঠলো। এবং খোঁজার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।
কক্ষদুটি একদম দক্ষিণ পাশে হওয়ায় ওদিকে কোলাহল কম। অপরূপা তলোয়ার দুটি বহুকষ্টে নামিয়ে নিল। হাত ছিলে গেল নামানোর সময়। অসম্ভব ভারী। তারপর তালায় চাবি ঘুরালো বার কয়েক। তালায় জং ধরেছে। সেইসাথে চাবিতেও। তালার ভেতর চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিতে গিয়ে হাতটা লাল হয়ে গেল অপরূপার। ঘাম ছুটে গেল সারামুখে। হাতে আর বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। দুরুদুরু বক্ষে আল্লাহ আল্লাহ জপতে জপতে যেই দরজাটি খুললো ঠিক তখনি কোনো পুরুষালী পদধ্বনি শুনতে পেল অপরূপা।
পুরুষটি আর কেউ নয়। স্বয়ং শেহজাদ।
ততক্ষণে অপরূপা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেছে। হাতের হারিকেনটি তুলে দেখলো কক্ষটিতে সব ছাই, ধোঁয়ার কালি, যেন পোড়ামাটির ঘর। কালি আর ছাই ছাড়া কিছুই স্পষ্ট নয়। পায়ের সাথে তক্ষুণি কিছু একটার আঘাত লাগলো । হারিকেন নামাতেই দেখলো একটি রূপোর ফ্রেমের ছবি। ছবিটা ময়লা। তার গায়ের পোশাক ময়লা হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। কালি লেগে গেছে হাতে পায়ে, পোশাকেও। ছবিটা তুলে দেখলো পুড়ে গেছে অনেকটা। হাত দিয়ে ছবিটা মুছতে গিয়ে পেরেক জাতীয় কিছু হাতের তালুতে বিঁধে গেল। গড়গড়িয়ে রক্ত ঝড়লো। অপরূপার সেদিকে ত্রুক্ষেপ নেই। সে ছবিটা পরিষ্কার করতেই দেখতে পেল একটি সাদাকালো তৈলচিত্র।
একজন রাণীর সাজে মহিলা দাঁড়িয়ে আছে শেরতাজ সাহেবের পাশাপাশি। উনাদের সামনে দু’জন শিশু হাসি-হাসি মুখ করে চেয়ে আছে। ছেলেটা দেখতে হুবহু সিভানের মতো, তার বয়স ন দশ বছরের কাছাকাছি হবে, মেয়েটি তখন অনেক ছোট। হৃষ্টপুষ্ট তার শরীর।
পায়ের কাছে আরও একটি তৈলচিত্র খুঁজে পায় অপরূপা । সেটি কুড়িয়ে নিয়ে পরিষ্কার করতেই দেখতে পায় তিনটে ছেলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একসাথে। একজন শেহজাদ, সাফায়াত অন্যজন সিভানের মতো দেখতে ছেলেটা।
অপরূপা কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ মড়মড় শব্দ হয়। ঘরের কোণায় রাখা লম্বা বাঁশ জাতীয় কিছু একটা অপরূপার গায়ে এসে পড়ে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায় সে। তৈলচিত্রটি হাত থেকে পড়ে যায়। আবারও কুড়িয়ে নিতে যাবে ঠিক তখনি কক্ষের দরজা খুলে যায়। চিৎকার করে উঠতে যাবে ঠিক তখনি শেহজাদ এগিয়ে এসে তার মুখ চেপে ধরে চাপাস্বরে জানতে চায়,
এখানে কি করছিলে রূপা?
মুখ চেপে ধরায় অপরূপা কিছু বলতে পারে না। ছটপট করে। শেহজাদ কক্ষের দরজা বন্ধ করে বলে, চুপ।
কক্ষের বাইরে দুজন লোক এসে দাঁড়ায়। বলে,
ভেতরে কে? বের হও নয়ত গুলি করব।
শেহজাদ শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়, আমি। তোমরা কাজে যাও। আমি কাজ শেষে বেরিয়ে যাচ্ছি।
জ্বি জনাব।
লোকদুটো চলে যেতেই শেহজাদ অপরূপাকে ছেড়ে দেয়। অপরূপা ততক্ষণে অচৈতন্য বরণ করে নিয়েছে। শেহজাদ তাকে কোলে তুলে নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।
অপরূপার যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি কাঠের দোলনায়। দোলনাটি লোহার শিকল দ্বারা ঝুলানো। অপরূপা শোয়া থেকে উঠামাত্রই শেহজাদকে দেখলো। দেখলো চারপাশরা অন্ধকারাচ্ছন্ন, মাথার উপর খোলা আকাশ, একটি চাঁদ, অগুনতি তারা, দূরে একটি জলপুকুরে স্বচ্ছ জল ঝলমল করছে, বাঁশবাগানের কাছে কয়েকটি জোনাকিপোকা উড়াউড়ি করছে! বুঝতে পারলো সে মহলের পেছনের দিকটায় আছে। শেহজাদ তার হাতের তালুতে ভেষজপাতার রস লাগিয়ে দিতে দিতে কাপড় বেঁধে দেয়। অপরূপা চেয়ে থাকে। শেহজাদ কাঁপড় বাঁধা শেষে ভুরু নাচিয়ে বলে,
ওই কক্ষে কি? কালি মেখে যা অবস্থা! দেখতে তো পেতনিদের মতো দেখাচ্ছে।
পেতনি?
হ্যা। আরও বেশি।
অপরূপা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। শেহজাদ হেসে উঠে। বলে,
এত কৌতূহল কিসের? আমাকে জিজ্ঞেস করলে তে সবটা বলে দিতাম। কি জানতে চাও বলো।
আপনার কোনো বড় ভাই ছিল?
শেহজাদ সোজাসাপটা জবাব দেয়।
হ্যা।
কি নাম?
শেরহাম সুলতান।
কোথায় সে?
মৃত।
চলবে…..