প্রিয় বেগম পর্ব-১৪

0
1516

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_১৪
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

শেহজাদের গাড়ি বের মহল প্রাঙ্গন ছাড়িয়ে যেতেই অপরূপা অন্দরমহলে চলে গেল। সিভান কোথা হতে ছুটে এসে বলল,

সুন্দর বউ কোথায় গিয়েছ?

অপরূপা তার দিকে পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকিয়ে বলে,

বাইরে।

সিভান একগাল হাসলো। অপরূপা সেই হাসি দেখে আবারও ভড়কে গেল। খপ করে সিভানের হাত ধরে বলল,

তোমার কোনো মামা আছে?

সিভান মাথা দোলায়।

হ্যা, আছে। মামাকে দেখবে?

কোথায় দেখব?

মামাকে আসতে বলব এখানে। মামা অনেকদিন আসে না।

অপরূপা তার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে। গাল ছুঁয়ে বলে,

তোমার মামা কি করে?

মামা জাহাজ চালায়। ইয়া বড় জাহাজ।

অপরূপা হাসে। বলে,

তোমার মামাকে কিভাবে আসতে বলবে?

চিঠি পাঠাবো। তুমি আমাকে একটা চিঠি লিখে দেবে?

হ্যা। দেব।

চলো আমরা চিঠি লিখবো। কিন্তু আম্মা না দেখেমতো।

কেন তোমার আম্মা দেখলে কি হবে?

সিভান কানেকানে ফিসফিস করে বলে,

আম্মা চায় না মামা এখানে আসুক।

এমা কেন?

কারণ মামা এখানে এলে আর যেতে চায় না।

অপরূপা ফিক করে হাসে। বলে,

তাই? চলো চিঠি লিখবো। পাঠাবে কি করে?

ডাকপিয়ন চিনি।

বাবাহ খুব চালাক তুমি।

সিভান হাসে। অপরূপার আঙুল ধরে অপরূপাকে নিয়ে যেতে থাকে। যেতে যেতে অপরূপাকে মহলের দক্ষিণে নিয়ে যেতে থাকে সে। ওদিকের কক্ষগুলোতে তালা ঝুলানো। অপরূপা একসময় থেমে যায়। বদ্ধকক্ষগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এদিকে তো একবারও সে আসেনি তাই হয়ত দেখতে পায়নি। কক্ষের লোহার দরজাগুলো মেরামতবিহীন থাকায় ঝং ধরে গিয়েছে। দরজার সম্মুখে আড়াআড়িভাবে দুটি প্রকান্ড তলোয়ার গাঁথা। সেই কক্ষটির দু কক্ষের পরের কক্ষটিও একই। মাঝের দুটি কক্ষে শুধুই তালা ঝুলানো।

সিভান আঙুল ধরে টানে। চলো ওদিকে যাই। ওদিকে একটা ঘর খালি পড়ে থাকে। এখানে থেমো না।

অপরূপা কৌতুহলী হয়ে বলে,

এই কক্ষগুলো তালাবদ্ধ কেন সিভান?

সিভান ফিসফিস করে বলল,

সুন্দর বউ এগুলোতে ভূত থাকে। বড় বড় ভূত। হ্যা।

অপরূপা তার কথায় হেসে উঠে। বলে,

ভূতকে কেউ ঘরবন্দী করতে পারেনা পাগলা।

সিভান হতবাক হয়ে জানতে চায়।

ভূত ঘরবন্দি হয় না?

নাহ। ভূত তো অদৃশ্য হতে পারে। বন্দি করতে পারে মানুষকে। কারণ মানুষ তো অদৃশ্য হতে পারে না। তারমানে কি এখানে মানুষ বন্দি আছে?

সিভান উত্তর দিতে পারে না। মা তো তাকে ভূত আছে বলেছে তাই তো সে এদিকে আসতো না কখনো।

অপরূপা কক্ষটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তলোয়ারে হাত রাখতেই কোথা হতে মতিবানু ছুটে আসে। তার চোখেমুখে আগুনের লাভা যেন দাউদাউ করে জ্বলছে। কর্কশ স্বরে বলল,

করো কি? কেউ দেখলে তোমারে বাইর কইরা দিবো মহল থেইক্যা। এদিকে ক্যান আইলা? দক্ষিণ দিক আইবা না ভুলেও। যাও এহন।

অপরূপা শান্তকন্ঠে বলল,

আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি আসিনি। আমাকে সিভান এদিকে নিয়ে এসেছে।

মতিবানু হেঁকে বলে,

তোমার ভালোর জন্য কইছি। তুমি এইহানে হাত দিছো দেখলে মা বেগম মহল থেইক্যা এক্ষণি বাইর কইরা দিবো। তাড়াতাড়ি আহো।

বলেই অপরূপা আর সিভানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। সিভান হাত ঝাড়া মেরে দৌড়ে চলে যায়। অপরূপা হাত ঝেড়ে বলে,

এভাবে টানবেন না। আমি ব্যাথা পাচ্ছি।

বলেই হাত ছাড়িয়ে সে রসাইঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। বাকিরা বোধহয় সেদিকে। পথে ফজল সাহেবের সাথে দেখা হয়। ফজল সাহেব হাসেন। অপরূপা মুখ গোমড়া করে তাকায়। ফজল সাহেব মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করেন,

রূপা তোমার মায়ের নাম কি?

আমার কোনো মা নেই।

মুখ শক্ত করে কথাটা বলে হনহনিয়ে চলে যায় সে। ফজল সাহেব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। হাঁটার ধরণটাও উনার চেনা।

মতিবানু পেছনে এসে জানতে চায়,

ডাক্তার সাব আপনি ওরে চেনেন নাকি?

ফজল সাহেব চমকে তাকায়। বলে, না না। কিভাবে চিনবো?

*****

অপরূপাকে রসাইঘরে ঢুকতে দেখে খোদেজা কপাল কুঁচকে তাকায়। অপরূপা মাথা নত করে বলে,

আমি ভেবেছি ওরা এখানে।

সারাক্ষণ ওদের সাথে কি? তুমি হলে আশ্রিতা। তুমি আমাদের হাতে হাতে কাজ করে দেবে। কুমু টুনুদের সাথে থাকবে। আশ্রিতারা কাজ করেই খায়। নিজের চেহারা দেখে কি নিজেকে আসমানের পরী মনে করেছ নাকি? নাকি রাণী ভাবছো?

অপরূপা মাথা তুলে বলে,

আপনি আমাকে কোনো কাজ করতে বলেননি।

খোদেজা বিস্মিত হয়ে বলে,

আশ্চর্য! মুখে মুখে কথা বলছো।

শাহানা এগিয়ে আসে। হাসিমুখে বলে,

সর্ষে ইলিশ রাঁধতে জানো মেয়ে?

অপরূপা মিষ্টি আবদার শুনে মাথা তুলে। মাথা দুলিয়ে বলে,

হ্যা পারি। দাদীজান সব শিখিয়েছেন আমাকে।

বাহ খুব ভালো। তাহলে আজ ইলিশটা তুমিই রান্না করো। শেহজাদ আর সিভান পাগল সর্ষে ইলিশের জন্য। খেতে মজা হলে কিন্তু আমরা তোমার জন্য বখশিশ চেয়ে নিতে পারি সম্রাটের কাছ থেকে। ওরা সবাই পায়। তাই না?

কুমু, টুনু, আর ফুলকলি মাথা নাড়ায়। অপরূপা ফুলকলির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার থেকে বছর পাঁচেক বড় হবে হয়ত, কতবড় ঝড় বয়ে গেল তার উপর। অপরূপাকে জিজ্ঞেস করে

তোমার হাত শুকাইছেনি?

অপরূপা মাথা নাড়ায়।

তাইলে রাঁধবা কেমনে?

পারব। ডান হাতে।

আমি তোমারে সাহায্য করি তাইলে।

জ্বি।

অপরূপা সর্ষে ইলিশ রাঁধলো, খোদেজা, শাহানা আর হামিদা চেয়ে চেয়ে দেখলো। সে তাদের মতো করে রান্না করেনি। একদম ভিন্ন উপায়ে রেঁধেছে। গন্ধ শুঁকে শাহানা বলল,

খেতে ভীষণ মজা হবে মনে হচ্ছে।

অপরূপা হাসলো তার প্রশংসা শুনে। বলল,

সব আমার দাদীজানের কারিশমা। উনি অনেক জ্ঞানী ছিলেন। দাদাজানের অত বিষয়সম্পত্তি উনি তদারকি করেছিলেন দাদাজানের মৃত্যুর পর। উনি বেতের পাটি বুনতে পারেন, পাট দিয়ে চট, তালপাতা দিয়ে হাতপাখা, আর কচি বাঁশ দিয়ে ঝুপড়ি, মোটা রশি পাকিয়ে বসার জন্য মোড়াও বানাতে পারতেন এমনকি কাঁথাও সেলাই করতে পারেন। উলের সুঁতো দিয়ে সোয়েটার এবং মাথার টুপি সব। দাদীজানের পিতা অনেক বড় একজন হস্তশিল্পী ছিলেন। উনার নামটা আমি ভুলে গিয়েছি। আপনারা চিনতে পারবেন শুনলে। লোকেমুখে উনার অনেক নাম।

শাহানা মুগ্ধ হয়ে বলে,

তোমার দাদীজান তো অনেক গুণী মানুষ তাহলে।
তুমিও সব পারো?

হ্যা। বললাম না দাদীজান আমাকে সব শিখিয়েছেন। দাদীজানের মতো পারিনা, তবে যা পারি তা আমার জন্য অনেক।

তুমিও গুণী।

অপরূপা মাথা নামিয়ে নেয়। রহমান তার ওসব কাজকর্ম মোটেও পছন্দ করতো না। সে বলতো আমি তোমাকে রাণীর মতো করে রাখবো। ওসব কাজ করে, খেটে খাওয়া মানুষ।

অপরূপার ভাবনায় চিড় ধরে শাহানার প্রশ্নে,

তোমার দাদীজান কিভাবে মারা গিয়েছেন? অসুস্থ ছিল?

অপরূপা শাহানার মুখ বরাবর তাকায়। বলে,

অসুস্থ ছিল না। তবে মারা যাওয়ার আগের দিন আমাকে রাগ করে বলেছিল ” তোর জন্যেই আমি মরে যাব”।

পুরো রসাইঘর স্তব্ধতায় খাঁ খাঁ করে উঠে মুহূর্তে। খোদেজা তেড়ে এসে বলে,

কেন? কেন এরকম বলেছে তোমার দাদী?

অপরূপা নিষ্পাপের মতো মাথা নাড়ে।

জানিনা। তখন আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। দাদীজান আমাকে অসুস্থ দেখলেই অমন বলতো, কিন্তু তা সত্যি হবে কে জানতো?

______________

পরিচিত এক মসজিদের ইমামের সাথে অপরূপার বিষয়ে শলাপরামর্শ করে মহলে ফিরতে ফিরতে গভীর রাত নেমে গেল। শেহজাদের অপেক্ষায় কেউ খেতে বসেনি। দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। তার ফিরতে বিলম্ব হওয়া সবাইকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

শেহজাদ ফিরতেই সাফায়াত ছুটে এসে বলল,
ভাইজান কোথায় ছিলে? আমাকে রেখে চলে গেলে সবাই দুশ্চিন্তা করছিল।

শেহজাদ ওর কাঁধে হাত চাপড়ে নিজের কক্ষের দিকে পা বাড়ায়। যেতে যেতে একটি কক্ষ হতে যুবতীদের হাসির শব্দ ভেসে আসে। সে কক্ষের বাইরে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে চোখ বুলাতেই অপরূপাকে সেখানে দেখতে পায় না। সায়রাকে ডাক দেয়,

সায়রা!

হাসির শব্দ থেমে যায়।

সায়রা তড়িঘড়ি করে ছুটে আসে।

জ্বি ভাইজান। আপনি কবে এসেছেন? আম্মজান আপনার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন। আমায় কিছু বলতে চান?

রূপা কোথায়?

সায়রা প্রশ্নটা আশা করেনি। খানিকটা ভীত হয়ে মিনমিন স্বরে বলে উঠলো,

আম্মা তাকে ফুলি আপাদের সাথে থাকতে বলেছেন। আমি তাকে জোর করেছি। সে আসছে না। বলছে তার জায়গা নাকি ওখানে। ফুলি আপাদের সাথে থাকতে নাকি তার ভালো লাগছে।

মুহূর্তেই গমগমে গলার স্বরে কক্ষের ভেতরে থাকা সবাই আঁতকে উঠে।

তাহলে এত হাসাহাসি হচ্ছিল কেন ভেতরে?

সায়রা মাথা নামিয়ে রাখে। শেহজাদ প্রস্থান করে সেখান থেকে। সাফায়াত এসে বলে,

কি হয়েছে? ভাইজানের বকা খেলে নাকি?

সায়রা হাঁফ ছেড়ে বড়সড় দম ফেলে বলে,

এই অপরূপা মেয়েটা এত জেদী।

জেদী না হলে কি রহমানের সাথে পালাতে পারতো? ওকে দেখে কিছু শেখো।

সায়রা ভুরু কুঁচকে বলে,

কি শিখবো?

অপরূপা কিভাবে রহমান রহমান করছে তা।

আমিও কি রহমান রহমান জপ করবো?

তুমি রহমানের জায়গায় অন্য নাম দিতে পারো। আমার নাম হলে তো আরও ভালো।

আচ্ছা!!!

সাফায়াত হেসে উঠে চলে গেল।

__________________

রান্না ভালো হয়েছে শেহজাদ?

হ্যা।

শাহানা পুনরায় তাকালো হামিদার দিকে। হামিদা বলল,

কেমন মজা হয়েছে? ভালো নাকি খুব ভালো?

খুব ভালো।

তারা হাসে।

আজ কিন্তু রান্না যে করেছে তার বখশিশ চায়।

ফুলকলি রেঁধেছে?

নাহ।

কে?

আগে বখশিশ দাও। তারপর নাম বলব।

শেহজাদ খেতে খেতে শাহজাহান সাহেবের দিকে তাকালো। বলল,

আব্বাজান আপনি অনুমান করতে পারছেন?

শাহাজাহান সাহেব মাথা নাড়ে।

বড় চাচা আপনি?

শেরতাজ সাহেবও না বলে।

সাফায়াত তুমি?

সাফায়াত বলে,

অতকিছু জানিনা।

ছোট ভাইজান আপনি?

সিভান চট করে তাকায়। দাঁত দেখিয়ে হেসে আঙুল চেটেপুটে খেতে খেতে বলে,

নতুন বউ রেঁধেছে ভাইজান।

শেহজাদ শাহানার দিকে তাকায়। আবারও সিভানকে প্রশ্ন করে,

কি করে বুঝলে তুমি?

কারণ ইলিশটা নতুন বউয়ের মতো সুন্দর।

সবাই কলকলিয়ে হেসে উঠে একসাথে। শেহজাদ পকেট থেকে পয়সা বের করে দেয়। শাহানা নিয়ে বলে,

যাই, অপরূপাকে বলে আসি তার রান্না খেয়ে সম্রাট খুশি হয়েছেন।

শেহজাদ খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বাবা জেঠাদের উদ্দেশ্যে বলে,

জমির কাগজপত্র কাল হাতে চলে আসবে ।
আর একটা মালবাহী জাহাজ ইতোমধ্যে তাদের ঘাটে গিয়ে পৌঁছে গেছে। টাকাও চলে এসেছে। কৃষকেরা এবার নায্যমূল্য পাবে ।

শেরতাজ সাহেব আর শাহজাহান সাহেব শব্দ করে বলে উঠেন,

আলহামদুলিল্লাহ।

সাফায়াত বলল,

নগরে এবারও ভালো ফসল হয়েছে। সবাই ঠিকঠাক খাজনা জমা দিয়ে গিয়েছে। প্রতিবেশী গ্রামের তার একভাগও হয়নি। তারা পানি জমা করে রাখেনি ফলসরূপ পানির অভাবে চারা নষ্ট হয়েছে। তার আগেরবার পানিতে ভেসে গিয়েছে সব। কিন্তু আমাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো ছিল। তাই দ্রুত পানি সরাতে পেরেছি। ভাইজান বোধহয় রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

শেহজাদ মাথা দুলায়।

শেরতাজ সাহেব বলেন,

আব্বাজান সঠিক মানুষকে রূপনগরের দায়ভার তুলে দিয়েছেন। তাই তো আজ পর্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছ শেহজাদ। আমি চাই ধুমধাম করে তোমার অভিষেকের দিনটা স্মরণ করতে। সেদিন সমস্ত নগরের সব মানুষকে খাওয়াবো। তারাও তোমাকে নিয়ে অনেক সন্তুষ্ট।

আমি যেন সন্তুষ্টি ধরে রাখতে পারি। অল্পস্বল্প আয়োজন হোক কিন্তু আমি চাই না অনেক অর্থ ব্যয় হোক এর পেছনে। ক’দিন হলো ডাকাত আক্রমণ হয়েছে মহলে। অনেক অর্থ লুটপাট করে নিয়ে গেছে তারা। আমি তা নিয়ে চিন্তিত আছি। মহলের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। সুরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করতে হবে। নগরে ডাকাতদলের প্রবেশপথে পাহাড়া বসাতে হবে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আমসিপড়া শেখানোর মাদ্রাসাটিও মেরামতে হাত দিতে হবে। আপনাদের খুশি করতে আমি অল্পবিস্তর আয়োজনের করতে রাজী আছি। মানুষকে একবেলা খাওয়াতে আমার আপত্তি নেই। তারা আমাদেরই মানুষ। কিন্তু অন্যান্য আয়োজন করে অর্থনষ্ট করে আমি নগরের অর্থনৈতিক ভীত নড়বড় করে দিতে চাই না। আশা করি আপনারা আমার সাথে সহমত পোষণ করবেন।

সবাই সমর্থন জানায়।

শাহজাহান সাহেব বলে,

কাল পালাও শেষ হবে। তাহলে আয়োজন পরশু হোক।

শেহজাদ মাথা ঝাঁকায়। খোদেজা, হামিদা, শাহানাকে ডেকে তা জানায় শাহজাহান সাহেব। খোদেজা খুশি হয়। পরক্ষণে বলে উঠে,

পুত্র তার আগে অপরূপা মেয়েটির একটা বিহিত করো।

শেহজাদ এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না। অপরূপা সুস্থ হওয়ার পর সে যা সিদ্ধান্ত নেবে শেহজাদ তাই মেনে নেবে। অপরূপা এখন স্বাভাবিক নয়।

শেহজাদের দেয়া পয়সাগুলো নিয়ে বসে থাকে অপরূপা। ফুলকলি বলে, খুশি হয়ছো? আমারেও এমন দিতো ভাইজান। আমারে খুব দেখতে পারে।

জানি। কিন্তু আমি এ পয়সা দিয়ে কি করব?

কি আর করবা? এই পয়সা দিয়া অভিষেকের দিন ভাইজানরে কিছু একটা উপহার দিবা। সবাই ওইদিন ভাইজানরে কিছু না কিছু দিবো।

ওইদিন কি হয়?

ওইদিন নগরের মানুষ দাওয়াত খাইতে আসবো। ভাইজানের জন্য আসার সময় কিছু না কিছু লইয়্যা আসে। সম্মানি দেয় আর কি বুঝো না?

এই পয়সা তো উনার।

তা কিতা হয়ছে? এই পয়সা তে তুমি কামাই করে নিছো। রান্ধনে কষ্ট হয়ছে না?

হ্যা তা হয়েছে।

তো? এই পয়সা এহন থেইক্যা তোমার। বুঝলা?

হ্যা।

হুড়মুড়িয়ে সায়রা, তটিনীরা পাঁচজন ঢুকে পড়ে ফুলকলিদের কক্ষে। অপরূপা চৌকির উপর শুয়েছিল। তাদের দেখে উঠে বসে। বলে,

কি হয়েছে?

তটিনী তার পাশে এসে বসে। বলে, আম্মা বলেছে তুমি নাকি সুতোর টুপি বানাতে পারো?

জ্বি।

তটিনীর চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠে। সে বলে,

আমাকে একটা বানিয়ে দেবে? পরশু রাত অব্দি সময় আছে। দিতে পারবে রূপা? আমি তোমাকে পয়সা দেব। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় যে টুপিগুলো পড়ে তার চাইতে একটু ব্যতিক্রম। যাতে ওটা আলাদা মনে নয়। কারণ ওটা সম্রাট সাহেব পড়বেন। দেবে?

অপরূপা মাথা ঝাঁকায়।
এত কম সময়ে টুপি?

তটিনী খুশি হয়ে তার গাল দুটো টেনে ধরে সুঁই-সুতোর খোঁজে বেরিয়ে যায়। শবনম বলে

এখন আমরা কি দেব?

সায়রা বলল,

আমার কাছে একটা আতর কেনা আছে। ওটা দেব আমি ভাইজানকে।

সোহিনী বলে,

আমি কি দেব? ভাইজান কতকিছু দেয় আমাদের, আমরা কিছুই দিতে পারিনা।

আয়শা বলে,

আমার কাছে একটা রূপোর কলম আছে। আব্বাজান বিদেশ থেকে এনেছিলেন আমার জন্য। আমি ওটা দেব। ভাইজান তো পরিচালক সবসময় লেখালেখি করে। ভাইজানের কাজে লাগবে ওটা।

অপরূপা হাসে আর ভাবে একটা মানুষকে কতগুলো মানুষ ভালোবাসে!

কি দেবে ভাবতে ভাবতে সবাই বেরিয়ে পড়ে। অপরূপা ভেবে পায় না সে কি দেবে? যদি সবার সম্মুখে কিছু চেয়ে বসে তখন তো সে লজ্জায় পড়ে যাবে। পরক্ষণে ফিক করে হেসে উঠে ভাবে চুরি করার মতো কিছু দেয়া যাবে যাতে চুরি করতে সহজ হয়?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে