Monday, October 6, 2025







নীলফড়িং পর্ব-০৬

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং 🧚‍♂️🧚‍♂️
#পর্ব ৬
.
.
কয়েক মাস বাদে একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম একা, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে এক পাশে বসার জায়গা দেখে একটু বসে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছে, সামনের দেখলাম একটা #নীলফড়িং উড়ে এসে বসলো। আমি তাকে দেখে ভাবছিলাম শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা। আর মুচকি মুচকি হাসছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কেউ কিছু টান দিল। তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশ থেকে কেউ ছুটে গেল। আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার ব্যাগটা নেই, ওহ গড আমার ব্যাগ নিয়ে গেছে লোকটা।

আমিও তার পিছু নিলাম অনেক দূর অব্দি তাকে ফলো করতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতে অনেকটা পথ পারি দিয়ে এলাম। বাট হঠাৎ করে লোকটা গায়েব হয়ে গেল। আমি চারিপাশে তাকে খুঁজতে লাগলাম, বাট সে কোথাও নেই আমি হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে পড়লাম, কারণ আমার ফোন, টাকা, সব ওই ব্যাগেই ছিল। আমি এখন কী করব ভেবে পাচ্ছিনা।

আমি আস্তে আস্তে বাসায় চলে এলাম। দরজা নক করতেই মামী এসে দরজা খুলে দিল।

…….কী রে পুস্পিতা তোকে এমন কেনো দেখাচ্ছে?

……মামী আসলে আমার ব্যাগটা সিনতাই হয়ে গেছে।

এরপর মামী কে সব খুলে বললাম মামী সব শুনে বলল।

…….চল পুলিশ এর কাছে যাবো এখানের আইন খুব কড়া।

…….না থাক মামী ভালো লাগছে না।

আমি রুমে চলে এলাম, মামা বাড়িতে এসে আমাকে জোর করে শপিংয়ে নিয়ে গেল, একটা ফোন কিনে দিল সাথে আগের সিমকার্ড তুলে দিল। বাট বাংলাদেশের সিমটা?

আমি বাসায় এসে ফোনে গুগল একাউন্ট ওপেন করলাম। সব চলে এলো আমি ফেসবুক একাউন্ট ওপেন করতেই দেখলাম, ইরোর দেখা যাচ্ছে। মানে কী? বুঝা যাচ্ছে কেউ হয়ত হ্যাক করে রেখেছে আমার ফেসবুক একাউন্ট। ম্যাসেঞ্জারে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখলাম, ম্যাসেঞ্জারেও সেইম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমি এখন কী করব? শুভাকাঙ্ক্ষী কে কীভাবে খুঁজব? এই আইডিটাই তো ছিল তার সাথে আমার পরিচয়ের একমাত্র প্রমাণ, আর কিছু নেই তার আমার কাছে, আমি কীভাবে তাকে চিনবো? প্রোফাইলে যাচ্ছি আবার ম্যাসেঞ্জারে যাচ্ছি কিন্তু কোনো কিছু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। এখন আমার খুব কান্না পাচ্ছে, নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। আমি এখন তাকে কোথায় খুঁজে পাবো, এই আইডি ছাড়া তার সাথে যোগাযোগ করার কোনো অপশন আমার কাছে নেই। আমি এখন তাকে কোথায় খুঁজব?

……আপু তুমি কাঁদছ কেনো?

…….(চোখ মুছে) কিছু না ভাই।

……..তোমার বাসার কথা মনে পড়েছে?

…….হ্যা ভাই।

…….আপু কান্না করে না আমি আছি তো।

আমার চোখ মুছে দিয়ে মাইনুল বলল। আমিও কান্না থামিয়ে নিলাম। ওর সাথে দুষ্টুমি করলাম অনেক সময়, এরপর মাইনুল পড়তে চলে গেল। আমি ফোন হাতে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় আবার নতুন আইডি খুললাম সব সেইম ইনফরমেশন দিয়ে যাতে সে আমাকে চিনতে পারে। আমি ফোন নিয়ে তার নাম সার্চ দিয়ে দেখতে পেলাম ২টা আইডি সেইম ছিল সব কিছু রিকোয়েস্ট দেবো কী দেবো না ভাবছি বাট ভেবে পাচ্ছিনা। সে কোনটা হবে? যদি সে না হয়? আমি ফোন রেখে আবার চুপিসারে বসে রইলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পরে ফোনে টুং করে ম্যাসেজ আসলো, তড়িঘড়ি করে চেক করতেই দেখলাম হ্যা শুভাকাঙ্ক্ষী নামের আইডি দিয়ে রিকোয়েস্ট এসেছে, আমি এক্সেপ্ট করলাম।

…….কে আপনি?

…….ভুলে গেছেন আমাকে? আমি আপনার সেই চির চেনা শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….হুম চিনেছি।

…….আচ্ছা আমি আনফ্রেন্ড হলাম কীভাবে?

…….আসলে আমার আইডিটা কেউ নষ্ট করে দিয়েছে, তাই।

……ওহ আচ্ছা?

আমি শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে কথা বলতে বলতে ভাবছি এমনটা কে করল? আমি শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে কথা বলছিলান এমন সময় আর একটা রিকোয়েস্ট ম্যাসেজ এলো, রিকোয়েস্ট অপশনে গিয়ে দেখলাম সেইম নাম, আইডিতে গিয়ে দেখলাম সব সেইম ইনফরমেশন, আমি সব দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেই সে ম্যাসেজ দিল।

…….কী হলো আমাকে আনফ্রেন্ড করেছেন কেনো?

আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমি তবে কার সাথে কথা বলছি কে? দুজন কোথা থেকে আসলো? আমি কাকে বিশ্বাস করব? ওদিকে প্রথম শুভাকাঙ্ক্ষী ম্যাসেজ দিল।

…..কী হলো কথা বলছেন না যে?

……(দ্বিতীয় শুভাকাঙ্ক্ষী) কী হয়েছে পুস্প? আমি কী কোনো ভুল করেছি?

আমি ফোন বিছানায় ছুড়ে মেরে কান্না করতে করতে মেঝেতে বসে পড়লাম।

রাত তখন ১১ টা বাজে আমি ফোন আর হাতে নিলাম না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে ফোনের সব ইনফরমেশন লিখে রেখে আমার সব ইনফরমেশন গুগল একাউন্ট থেকে ডিলিট করে ফোনে রিস্টার্ট দিলাম। এরপর সব আবার নতুন করে শুরু করলাম। আইডিটা ওপেন করে দেখলাম অনেক ম্যাসেজ জমা হয়েছে দুজনের, আমি কোনো রিপ্লাই দিলাম না। ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে কাজে চলে এলাম।

এভাবেই কাটতে থাকল বাকি দিন গুলো। প্রায় আরও মাস খানেক চলে গেল, ইদানীং আব্বু, মা, আর স্যার এদের সাথেই কথা হয়, শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে আর কথা হয় না। আমি কাকে সত্যি ভাবব? স্যার ও একটু ভাড় ভাড় কথা বলে।

আমি শুভাকাঙ্ক্ষী কে বলে ছিলাম একটা অন্ততপক্ষে প্রমাণ দিতে কে সে? সে বলে ছিল আমার খুঁজতে হবে না সে চলে আসবে আমার কাছে। তবে থাকনা সেই অপেক্ষাই দুজনার মাঝে। আমি এখন পড়াশোনার দিকে ভীষণ মনযোগী হয়েছি।তাই এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই এখন আমার।

পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মন খারাপ বাড়ছে বয়ে কমছে না। কিন্তু মাইনুলের সাথে সময় কাটিয়ে সেই মন খারাপটা কমিয়ে নিচ্ছি। ভাবছি এখানে তাকে না পাই, দেশের মাটিতে গিয়ে খোঁজ করে নেবো। এভাবেই ব্যস্ততায় সময় কেটে যাচ্ছে। ভাবলাম আমার এসব নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। আমার বাবা মাকে ছেড়ে এতদূর থাকার, এত কষ্ট করেছি যেই সফলতার জন্য, সেই সফলতা অর্জন করতেই হবে। তাই খুব খুব মনযোগী হয়ে পড়লাম পড়াশোনার দিকে, এত ব্যস্ততার মাঝে সব কিছুই জেনো ভুলে গেছি।

যখন মন খারাপ বেশি হয় তখন স্যারের গিফট-টার খোঁজ করি। সবার দেওয়া গিফট গুলো দেখা হয়েছে অনেক আগেই বাট স্যারের গিফট-টা কোথায় জানো হারিয়ে গেছে, অনেক খুঁজেও পেলাম না। আজও অনেক খুঁজলাম বাট পেলাম না। কোথায় যেতে পারে বুঝতে পারছি না।

আজ রাইয়ানের হাতে একটা জিনিস দেখলাম খুব অবাক লাগছে যা দেখে। রাইয়ানের হাতে #নীলফড়িং এর একটা ট্যাটু লাগানো ছিল। যা দেখে আমি অবাক হলাম কিছুটা।

বাসায় চলে এলাম, ফোনটা হাতে নিয়ে খুব নিঁখুত ভাবে ম্যাসেজ গুলো চেক করতে নিলাম, বাট সেইম ম্যাসেজের ধরণ দুজানার, কীভাবে বুঝব আমি? দুজনেরই অনেক অনেক ম্যাসেজ জমে ছিল ফোনে। আমি ভেবেই অবাক হচ্ছি কে এই অন্য লোকটা? যে কিনা একেবারে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীর মতো। আমাদের দুজনের সব কথা জানে সব একই রকম কথা, কথার ধরণ। আমি কীভাবে জানব কে সত্যি কে মিথ্যা?

এভাবেই চলতে লাগল, দিন গুলো। পরিক্ষা ভালোয় ভালোয় শেষ হয়ে গেল। এখান থেকেই অনেক অফার আসতে শুরু করল, বাট আমি এই দু-বছরই অনেক কষ্টে কাটিয়েছি, আর থাকতে পারব না কোনো ভাবে। মামা ছুটি নিলো, তারাও আমার সাথে যাবে দেশে, দু-মাস থেকে আবার ফিরে আসবে। যেহেতু আমি এখানে এতদিন ছিলাম এখন চলে গেলে তাদের মন খারাপ লাগবে তাই। আর অনেক দিন হয়েছে তারা দেশে যায়ও নি তাই যাবেন সবাই মিলে।

যাওয়ার জন্য জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছিলাম, ঠিক তখনই মামী ড্রয়ারের নিচ থেকে কিছু একটা বের করে নিয়ে এগিয়ে আসলো।

……..পুস্পিতা এটা কী তোর?

আমি তাকিয়ে দেখলাম স্যারের সেই গিফটের বক্সটা। তাই মামীর হাত থেকে বক্সটা নিয়ে।

……হ্যা মামী এটা আমার হারিয়ে গিয়ে ছিল বাট আপনি কোথায় পেলেন?

…….ওই তো ড্রয়ারের নিচে মাইনুলের বল চলে গিয়েছিল তা আনতে গিয়ে পেলাম।

…….ধন্যবাদ মামী আমি অনেক খুঁজেছিলাম বাট ওখানে খোঁজ করা হয়নি।

মামী চলে যেতেই গিফটা খুলতে নিলাম। এর মধ্যে ফোন বেজে উঠল। তাই গিফট-টা সুটকেসে রেখে ফোন রিসিভ করলাম।

…….হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

……🤫

…….জ্বি বলছি।

…….🤫

…….অবশ্যই ওকে ওকে।

ফোন রেখে মামীর কাছে চলে এলাম। মামীর সাথে মিলে বাকি সব গুছিয়ে নিলাম। সব গুছানো শেষ করলাম। সবার জন্য কিছুনা কিছু গিফট নিয়ে নিলাম। মামী আর আমি শপিং করলাম।

আমরা প্লেনে উঠে রহণা দিলাম। কাউকে না জানিয়েই আসলাম, ভাবলাম এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো।

আমরা সরাসরি বাসায় চলে এলাম। খুব আনন্দ লাগছে কতদিন পরে সবাইকে দেখব ভেবে। খুব এক্সাইটেড হয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলাম, দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বড় একটা তালা ঝুলে আছে। যা দেখে একটু চিন্তিত হলাম, বাট ভাবলাম হয়ত কোথাও গিয়েছে। তাই নিচের ফ্লাটের ভাড়াটিয়া আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম।

…….আসসালামু আলাইকুম আন্টি উপর তালার সবাই কোথায়?

…….আরে তুমি পুস্পিতা না?

……জ্বি আন্টি।

……আরে তোমার মা তো অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই তাকে কাল সকালে হসপিটালে নিয়ে গেছে সবাই মিলে।

……হোয়াট? কোন হসপিটালে আন্টি?

……ওই যে পাশের বিল্ডিংয়ে ডক্টর ফাইয়াজ সেই তো হসপিটালে নিয়ে গেছে। আমিও গিয়েছিলাম কাল বিকেলে দেখে এলাম।

…….আন্টি কয় তালায় কোন ক্যাবিনে?

আন্টি সব ডিটেইলস বলল। তার থেকে সব জেনে আমি মামা মামী মাইনুল কে নিয়ে রহণা দিলাম। সুটকেস গুলো আন্টিদের বাসায় রেখে গেলাম। সুটকেস যেহেতু লক করা সমস্যা হবে না।

আমরা সিএনজি নিয়ে হসপিটালে রহণা দিলাম। চিন্তায় বুক ভাড় হয়ে যাচ্ছে। আমি তো কান্নাই করে যাচ্ছি অনবরত। মামী শান্তনা দিচ্ছেন।

……..মামী হঠাৎ করে কী হলো মায়ের?

…….তেমন কিছু নয়। দেখবি আপা ঠিক আছে, হয়ত প্রেশার বেড়ে ছিল।

…… মামী তাই জেনো হয়। এতদিন পড় দেশে ফিরেছি কই সবাইকে হাসি মুখে দেখব, তা নয় মাকে ওই হসপিটালে দেখতে হবে এখন আমার?

…….চিন্তা করিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

অনেক সময় পড়ে আবার ফিরে এলাম সেই চির চেনা জায়গায়। হসপিটালে এসে আন্টির বলা অনুযায়ী ফ্লোরে গিয়ে ক্যাবিনে ঢুকলাম। ক্যাবিনের দরজা ভ্যাজানো ছিল নক না করেই প্রবেশ করলাম, এতটা চিন্তিত ছিলাম সেদিকে খেয়ালই ছিলনা, যে নক করি বা কিছু, ভেতরে গিয়ে দেখলাম আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন মা বেডে শুয়ে আছে স্যালাইন চলছে। আর ফাইয়াজ স্যার মায়ের পাশে চেয়ারে বসে মায়ের প্রেশার মাপছিল। আমার ভেতরে প্রবেশ করার শব্দে সবাই ঘুরে তাকাল। আমাকে দেখে সবাই অবাক প্রায়। আমার চোখে পানি ছিল, মায়ের কী হয়েছে সেই ভেবে। আমি কোনো ভাবেই নিজের চোখের পানি থামিয়ে রাখতে পারছিলাম না। আব্বু আমাকে দেখে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা তুই এখানে কীভাবে?

…….আব্বু মায়ের কী হয়েছে?

…….আরে তেমন কিছু না, ওই একটু ব্লাডে কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। এখন ঠিক আছে।

……পুস্পিতা এসেছিস? আমার কাছে আয়।

স্যার উঠে সরে দাঁড়ালেন। আমি মায়ের সামনে গিয়ে ফ্লোরে আধবসা হয়ে বসে পড়লাম, মায়ের মাথার কাছে। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠল।

…….তুই আগে জানাস নি কেনো আসবি?

…….আমি তো তোমাদের সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছিলাম, বাট নিজেই যে সারপ্রাইজ পেয়ে যাব ভাবতে পারিনি।

……এই পাগল আমি একদম ঠিক আছি, বিশ্বাস না হলে ফাইয়াজ কে জিজ্ঞেস কর।

…….সে তো তোমাদের মুখের কথাই বলবে, তবে আমার থেকে কোনো কথা লুকিয়ে লাব হবে না, আমি নিজেই যাচাই করে নেবো।

…….আচ্ছা বাবা নিস।

আমি চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালাম, মামা-মামী এসে মায়ের সাথে কথা বলল। স্যার ক্যাবিন থেকে চলে যেতে নিলো, তাই আমিও স্যারের সাথে বের হলাম। স্যার চলে যাচ্ছিল, তাই পিছু ডাকলাম।

…….স্যার।

…….(স্যার পিছু ফিরে) আমাকে বলছ?

……জ্বি স্যার। ধন্যবাদ।

……কী জন্য?

……এই যে আপনার দেওয়া কথা আপনি রেখেছেন তাই।

……(স্যার হালকা হাঁসল) তাই? আচ্ছা তবে চলি।

……স্যার আপনি কী বেশি ব্যস্ত?

……না তো কিন্তু কেনো?

……না আসলে চলে যাচ্ছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম।

……হুম কারণ আন্টির এখন আমাকে প্রয়োজন হবে না। তার ডক্টর মেয়ে এখন চলে এসেছে, সেই এখন আন্টির খেয়াল রাখতে পারবে।

…….বাট স্যার আমি তো এসব বিষয়ে নতুন তাও গাইনি ও সার্জারী নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমি অতটা বুঝব না, আপনি যতটা বুঝবেন, তার মধ্যে আপনি পুরাতন সব বিষয়ে, তাই আপনার প্রয়োজন অপরিসীম।

…….পুস্পিতা আমি যতটুকু জানি তুমি পারবে, তাই আমার আর প্রয়োজন পড়বে না। যেহেতু আন্টির ওষুধ সব লেখা আছে, কখন কোনটা দিতে হবে সব কিছু লেখা রয়েছে, এর থেকে বেশি কিছু মনে হয় না আর প্রয়োজন পড়বে।

…….স্যার আপনি কী কোনো বিষয় আমার উপর রেগে আছেন?

……(হালকা হেসে) তোমার উপর? কোথায় না তো। আচ্ছা দেরি হচ্ছে আমি এখন আসছি।

স্যার চলে গেলেন, কেমন জানি মনে হচ্ছে স্যার কোনো বিষয়ে রেগে আছে হয়ত আমার উপর।

আমি ক্যাবিনে এসে মায়ের পাশে বসলাম। মায়ের হাত ধরে মায়ের সাথে কথা বললাম। বাট মা খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। উঠে বসতেও পারছে না ঠিক মতো, আমি রিপোর্ট গুলো সব দেখলাম। সবই ঠিক আছে। আব্বু আমাকে বাসায় যেতে বলল, বাট আমি তাকে মামা মামীকে নিয়ে যেতে বললাম। আমি মায়ের কাছে আছি বললাম। আব্বু সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন। রাত হয়ে গেছে।

আমি মায়ের এক পাশেই আধশোয়া হয়ে বসে রইলাম। মাথা দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে, তখন রাত ১০:৩০ মিনিট ঘড়িতে। আমি চোখ বন্ধ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ দরজা নক করে কেউ আসলো ক্যাবিনে, আমি তড়িঘড়ি করে উঠে ঠিক করে বসে পড়লাম। তাকিয়ে দেখলাম স্যার ছিল, সে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে, মাকে ভালো করে দেখল, প্রেশার মাপলো, ডায়াবেটিস মাপলো সব নিজের হাতেই করল। যা অন্যের বেলায় কখনো করত না একজন ডক্টর।

স্যার মাকে দেখে চলে যেতে নিলো, ঘুরে গিয়ে বলল,

……আমি হসপিটালেই আছি কোনো প্রবলেম হলে ডেকে নিও।

…….জ্বি স্যার।

স্যার চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে একজন ওয়ার্ড বয় এসে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে গেল। খুলে দেখলাম কিছু খাবার, বিরানির প্যাকেট ছিল। আমার যতটুকু মনে আছে আব্বু কে বারণ করেছিলাম খাবার দিতে, মায়ের জন্য নিয়ে আসা রুটি সবজি রাখা ছিল ওতেই হবে বলে ছিলাম, কিন্তু এগুলো কে দিল? আব্বু কে মায়ের ফোন থেকে একটা ফোন দিলাম। সে জানাল সে পাঠায় নি। তবে ফাইয়াজ স্যার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল আমার জন্য কী, খাবার দিয়ে গেছে আব্বু? বুঝতে পারছি হয়ত স্যারই পাঠিয়েছেন।

সারারাত মায়ের পাশে বসে থাকতে থাকতে বোর ফিল করছিলাম। অর্ধ রাতে একটু ক্যাবিন থেকে বের হলাম। দেখলাম চারিদিকে সবাই ঘুমিয়ে আছে, নার্সরা কেউ নেই না আছে কোনো ইন্টার্নি ডক্টর। হটাৎ দেখলাম একজন ছোটাছুটি করছে, যা দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

…….এক্সকিউজমি কী হয়েছে এভাবে আতঙ্কিত হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

…….আসলে কোনো নার্স কে দেখছি না। আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

…….নার্স-রা হয়ত সবাই ওই রুমে। কিন্তু তারা তো বুঝবে না। আচ্ছা ওনার কী সমস্যা?

…….আমার ওয়াইফের বাচ্চা হবে, সিজারের জন্য সন্ধ্যায় ভর্তি করেছি, গাইনি ডাক্তার নাকি আজ আসে নি, তাই সিজার হয়নি, ওনারা বলেছে সময় আছে এখনো হাতে। কিন্তু ওর তো অনেক কষ্ট হচ্ছে।

…….আচ্ছা আমি যাচ্ছি চলেন।

…….কিন্তু আপনি?

…….আপনি চলেন আপনার স্ত্রী যেহেতু একা সেখানে যাওয়া সব থেকে জরুরি।

…….ঠিক আছে চলেন।

আমি ওনার সাথে ক্যাবিনে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখলাম ওনার স্ত্রী ব্যথায় ছটফট করছেন। ওনাকে বাহিরে যেতে বলে, আমি দেখে যতটুকু বুঝতে পারছি, ওনার সিজারের প্রয়োজন হবে না। নর্মাল ডেলিভারিতেই বাচ্চা হবে। তাই রুম থেকে বেড় হয়ে আমি বললাম।

…….আপনি ওই খানের রুমে গিয়ে একজন নার্স কে ডেকে নিয়ে আসেন, না আসতে চাইলে বলবেন ফাইয়াজ স্যার ডেকেছে ওকে?

……..জ্বি

লোকটা এগিয়ে গেল, অল্প সময়ের মধ্যে নার্স এগিয়ে এলো।

……জ্বি ফাইয়াজ স্যার কোথায়?

…….আচ্ছা আপনারা এভাবে সেবা দেন? এই পেশেন্ট এর কতটা খারাপ অবস্থা জানেন? আপনাদের তো পড়ে দেখছি। এখন কাগজ কলম আছে আপনার সাথে?

……..জ্বি কিন্তু আপনি কে?

…….আমার পরিচয় ফাইয়াজ স্যারের থেকে পড়ে জেনে নিবেন আগে যা চেয়েছি তা দিন। আর ওনাকে এখনি ওটিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেন।

…….কিন্তু আপনার কথায় আমরা কিছুই করতে পারব না সরি।

…….তবে কার কথায় পারবেন? তাকে গিয়ে এখনি ডেকে নিয়ে আসেন যান।

…..জ্বি নিশ্চয়ই।

.নার্স এগিয়ে গিয়ে ফাইয়াজ স্যার কে ডেকে নিয়ে আসলো। স্যার এসে আমাকে দেখে।

…….পুস্পিতা তুমি এখানে?

…….স্যার ওনার পেইন শুরু হয়েছে এখনি কিছু একটা করতে হবে। প্লিজ স্যার।

……হুম আমি দেখছি। নার্স ম্যাডাম যা বলছে তা করেন।

……জ্বি স্যার।

নার্স গিয়ে সব ব্যবস্থা করে এলো স্যারও সাহায্য করল। আমি পেশেন্ট এর সাথে ওটির ভেতর চলে এলাম। পেশেন্ট এর হাতে স্যালাইন পুশ করলাম।

অল্প সময়ের মাঝেই একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হলো ওনাদের। কিন্তু বাচ্চা শ্বাস নিচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করছিলাম। শেষ মেশ দিসা না পেয়ে মুখের ভেতর শ্বাস দিলাম। অনেক সময় পড়ে বাচ্চা কান্না করে উঠল। যা দেখে আমার ভয় নিমিষেই মিটে গেল। আমি বাচ্চাকে তার মায়ের গালের সাথে ধরলাম। মা দেখল তার নবাগত সন্তান কে। নার্স কে বাচ্চা পরিষ্কার করতে দিয়ে সব গুছিয়ে নিলাম।

…….নার্স ওনাকে ওনার রুমে শিফট করার ব্যবস্থা করেন।

আমি গ্লাভস দুটো ফেলে হাত পরিষ্কার করে বাচ্চা নিয়ে এগিয়ে গেলাম হাসি মুখে। স্যার আমার মুখে হাসি আর কোলে বাচ্চা দেখে সেও হাসল। বাচ্চা কে তার বাবার কোলে দিলাম।

……ধন্যবাদ ম্যাডাম।

…….ইটস ওকে। এটাই আমার কাজ।

…….Congratulations ডক্টর পুস্পিতা, এটা তোমার প্রথম লড়াই ছিল।

…….ধন্যবাদ স্যার। আসলে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

……হুম এটাই স্বাভাবিক।

এরপর হাঁটতে হাঁটতে স্যারের সাথে আরও অনেক কথা বললাম ক্যাবিনের সামনে এসে স্যার আমাকে এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি মায়ের ক্যাবিনে চলে এলাম। স্যার তার ক্যাবিন রুমে।



চলবে……….।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ