নাজনিন বিছানার উপর পা তুলে বসে খুব আগ্রহ নিয়ে নাফিসকে মাহিমার ছবি দেখাচ্ছে। সদ্য যৌবনে পা রাখা মেয়েদের শরীরে মাংস লাগে, অপুষ্ট কিশোরী দেহে নারীত্ব জেগে ওঠে। এ সময়েই মেয়েদের শাড়িতে ভালো মানায়। তখন তাদের দিক থেকে চোখ ফেরানো কঠিন হয়ে যায়। প্রথমে অনিচ্ছায় ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালেও এখন মাহিমার ছবি থেকে চোখ ফেরানো কঠিন মনে হচ্ছে নাফিসের।
কি ভাইয়া তোর পছন্দ হয়েছে?, নাজনিনের প্রশ্ন শুনে নাফিস ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ভাইয়া বল না তোর পছন্দ হয়েছে বলতে বলতে নাজনিন নাফিসের পেছন পেছন আসছিলো। বারান্দায় বাবাকে দেখে নাজনিন চুপ করে গেল। এই লোকটাকে বাসার সবাই ভয় পায়। হাফিজুর রহমান চায়ে চুমুক দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ওর মতো ফালতু ছেলে জীবনেও দেখিনি। দোকানদার টাকা চাইলো সে বলে কি না, টাকা নাই, টাকার বদলে আমাকে জরিয়ে ধর। জানোয়ার একটা।
বাবার কথা শুনে নাফিস একটু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আব্বা কার কথা বলছেন?
‘আর কার, ওই যে সায়েদ। লজ্জা শরম বলতে কিচ্ছু নাই। দোকানে বউকে বসিয়ে বাজারে কোমর দুলিয়ে হেঁটে বেড়ায়।’
বাবার কথা শুনে নাজনিন হাসতে শুরু করলো। হাফিজুর রহমান ভ্রু কুচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই এখানে কী করছিস? পড়তে বসিসনি কেন? সারাক্ষণ হাতে মোবাইল দেখি। ওটা আমার কাছে দিয়ে পড়তে বস, যা।
.
নাফিস বাসা থেকে বের হয়ে এসে সায়েদের দোকানের বেঞ্চে বসলো। শোবার ঘরের এক সাইড টিনের পার্টিশন দিয়ে দোকানটা করা। ছোট্ট দোকানটায় হাতে গণা কিছু মালামাল অথচ সারাদিন লোকজনের ভীড় লেগেই আছে। পরিচিত অপরিচিত কত মুখ দেখা যায়। এর পেছনের কারন স্পষ্ট। গত কয়েক মাস ধরে সায়েদের স্ত্রী শবনম দোকানে বসছে। এলাকার সব ছ্যাচড়া লোকজন এসে দোকানে বসে। পান চিবুতে চিবুতে গল্প করে। চায়ের কাপ নেয়ার সময় শবনমের আঙুলে আঙুল ছোঁয়াতে ভুলে না। এইত সেদিন আব্বাস চাচাকে এই কাজ করতে দেখেছে। নাফিসের ইচ্ছে করছিলো জুতাটা খুলে বুড়ার পিঠে চটাশ চটাশ করে কয়েকটা মারতে। পরোক্ষণে মনে হলো বুড়োকে মারলে নিজেকেও মারা উচিত। কলেজে পড়ার সময় শবনম ভাবিকে নিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় কম কথা বলেনি সে। সব কুরুচিপূর্ণ কথা। এসব কথা মনে পড়লে তার শবনম ভাবির সামনে দাঁড়াতে অপরাধ বোধ কাজ করে।
শবনম টিভি দেখায় এতটাই মগ্ন ছিল যে নাফিসের উপস্থিতি টের পায়নি। উর্মি এসে যখন জানালো বাবু কাঁদছে তখন চোখ ফিরিয়ে দেখলো নাফিস বসে আছে। উর্মিকে দোকানে বসিয়ে শবনম বাসার ভেতরে চলে গেল।
উর্মি দোকানে বসেই নাফিসের জন্য চা বানাতে শুরু করলো। উর্মি কখনো তাকে জিজ্ঞাসা করে না। সে এসে বসলেই চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। নাফিস অনেকক্ষণ ধরে সিগারেটটা জ্বালানোর চেষ্টা করছে। লাইটারটা জ্বলছে না। উর্মি দেশলাই এগিয়ে দিয়ে বলল, এই নিন।
নাফিস হাত বাড়িয়ে দেশলাই নেয়ার সময় দেখলো উর্মি রেশমি চুড়ি পরেছে। নাফিসের ইচ্ছে করছে উর্মির দিকে তাকাতে কিন্তু সাহস হচ্ছে না। ইদানিং এই মেয়ের দিকে তাকাতে তার সঙ্কোচ বোধ হয়। মেয়েটা যেন হুট করে বড় হয়ে গেছে। অথবা কারনটা ভিন্ন।
দু’টো ছেলে এসে দোকানের সামনে দাঁড়ালো। একজন বলল, একটা বেনসন দাও। নাফিস ছেলে দু’টোর দিকে তাকালো। যেই ছেলেটা সিগারেট চেয়েছে সে সাথে থাকা ছেলেটাকে চোখের ইশারায় উর্মিকে দেখিয়ে দিলো। ছেলে দু’টোর ঠোটে চাপা হাসি। সিগারেট জ্বালিয়ে সাথে সাথে ছেলে দু’টো চলে গেলো না। যাওয়ার আগে যেন দু’জনে উর্মিকে একটু ভালো করে দেখে নিলো। ছেলে দু’টো চলে যেতেই উর্মি বলল, আপনার চা ঠান্ডা হচ্ছে।
নাফিস লক্ষ্য করলো তার সামনে চায়ের কাপ রাখা। হুট করে যেন নাফিস রেগে গেলো। ধমকের স্বরে বলল, তোমাকে চা কে দিতে বলেছে? চা চেয়েছি তোমার কাছে?
নাফিসের কথা শুনে উর্মি অবাক হয়ে নাফিসের দিকে তাকালো। উর্মির চোখে চোখ পরতেই নাফিস দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। ওই চোখ জোড়ার দিকে তাকানো যায় না। ও চোখ কূয়োর মতো। যে কূয়োয় সূর্যের আলো পড়ে না। যে কূয়োর পানি গাঢ় কালো। দেখলে গা ছমছম করে। ঠিক তেমনি উর্মির চোখের দিকে তাকালে গা ছমছম করে। ষোড়শীর চোখের দিকে তাকিয়ে গভীরতা মাপা যায় না। অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, দম বন্ধ হয়ে আসে।
উর্মি বলল, থাক চা খেতে হবে না।
‘চা খেতে হবে না মানে? তুমি জিজ্ঞাসা না করে চা দিবা কেন?’
‘আপনি এতো রাগ করছেন কেন? আচ্ছা এবার থেকে জিজ্ঞাসা করে চা দিবো।’
উর্মি চায়ের কাপটা নিয়ে চা মাটিতে ফেলে দিলো। নাফিসের রাগটা যেন আরও বেড়ে গেল। নাফিস কিছুটা তাচ্ছিল্য করে বলল, দেমাগ দেখাচ্ছো কাকে? তোমার ভাই কই? শুনলাম বাজারে কোমর দুলিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।
‘ভাইয়াকে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না। ভাইয়ার কী দরকার?’
‘দরকার আছে বলেই জিজ্ঞাসা করেছি। দরকার না থাকলে বলতাম না। তুমি যে সেজেগুজে দোকানে বসো, আলতু ফালতু ছেলে দোকানে আসে সেটা নিয়ে কখনো কিছু বলেছি? দরকার নেই বলেই বলিনি। তোমার ভাইয়ের কাছে পাঁচশ টাকা পাবো। সেই কবে নিয়েছে ফেরত দেয়ার নাম গন্ধ নেই। সে তো আবার জড়িয়ে ধরে টাকা শোধ দেয়। আমার ক্ষেত্রে ওসব চলবে না বলে দিয়ো।’
কথা শেষ করে নাফিস চলে যাচ্ছিলো। কয়েক পা যাওয়ার পরে ফিরে এসে পকেট থেকে দেশলাই বের করে ছুঁড়ে দিলো। উর্মির চোখ ছলছল করছে। অনেক কষ্টে সে চোখে জল আটকে রেখেছে। নাফিস চলে যেতেই উর্মি নিজের ঘরে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি দিলো। ওড়না দিয়ে ঠোটের লিপিস্টিক তুলে ফেলল। চুড়িগুলো খুলে একটা একটা করে ভেঙ্গে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলো। নতুন কেনা লিপিস্টিকটা জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলল। চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগে সাবধানে চোখ মুছে নিলো। এ যেন নিজের কান্না নিজের কাছে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
.
গত তিন দিন নাফিস সায়েদের দোকানে যায়নি। সায়েদ আর ওই ছেলে দু’টোর রাগ উর্মির ওপর ঝেড়েছে। রাগ কমার পরে তার মনে হয়েছে মেয়েটার কোন দোষ নেই। নাফিস বাসার কাছাকাছি চলে এসেছিলো। কেউ একজন তার নাম ধরে ডাকছে শুনে থমকে দাঁড়ালো। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। দিনের আলোকে রাতের অন্ধকার গ্রাস করে ফেলছে। স্ট্রিট লাইটগুলো এখনো জ্বালানো হয়নি। যে তার নাম ধরে ডাকছিলো সে দ্রুতপায়ে কাছে চলে এসেছে। হুট করেই স্ট্রিট লাইটের আলো জ্বলে উঠলো। উর্মি হাত বাড়িয়ে বলল, নিন।
নাফিস তাকিয়ে আছে উর্মির মুখের দিকে। কারো শুষ্ক ঠোট এতখানি সুন্দর হয় জানা ছিলো না তার। নাফিসকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উর্মি বলল, কি হলো নিন?
নাফিস অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কী?
‘আপনার টাকা।’
‘কিসের টাকা?’
‘ওই যে ভাইয়া আপনার কাছে ধার নিয়েছিলো।’
‘উর্মি দেখ সেদিন আমি ওভাবে বলতে চাইনি। হঠাৎ রেগে গিয়েছিলাম তাই…’
উর্মি নাফিসকে কথা শেষ করতে দিলো না। হাতের মুঠোয় থাকা নোটগুলো নাফিসের হাতে গুঁজে দিলো। উর্মির কোমল ঠান্ডা হাতের স্পর্শ নাফিসের শরীরে কাটা দিলো। নাফিস উর্মিকে কয়েকবার ডাকলো, এই উর্মি শোন। উর্মির পেছন পেছন যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখলো পাশের বাসা থেকে সিদ্দিক চাচা বের হয়েছেন। নাফিস থমকে দাঁড়ালো। ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর উর্মির দেয়া টাকাগুলো রাখলো। পাঁচটা একশত টাকার নোট। সে রাতে নাফিসের ঘুম হলো না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ফজরের আযান শুনতে পেলো। এর মধ্যে সে কয়েকবার লাইট জ্বেলে উর্মির দেয়া টাকাগুলো নেড়ে-চেড়ে দেখেছে। হয়তো টাকাগুলো সে জমিয়েছিলো পছন্দের কিছু কিনবে বলে। সকালে নাজনিনের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গলো নাফিসের। দরজা খুলতেই নাজনিন বলল, জানিস ভাইয়া কি হয়েছে? সায়েদ ভাইয়ের বউ পালিয়ে গেছে।
নাজনিনের কথা শুনে নাফিস কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। নাজনিন ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাইকে চুপ থাকতে দেখে নাজনিন বলল, ভাইয়া চল না সায়েদ ভাইয়ার বাসায় যাই। বাবা বাসায় আছেন। আমাকে ওখানে যেতে বারন করেছেন। তুই গেলে তোর সাথে যাবো। চল না ভাইয়া।
নাজনিন ভাইয়ের হাত ধরে টানতে শুরু করলো।
সায়েদের বাসার সামনে লোকজনের ভীড়। মহিলারা মুখ টিপে হাসাহাসি করছে। একজন আরেকজনের কানে ফিসফিস করে কি যেন বলছে। অন্যজন হালকা ধাক্কা দিয়ে হাসছে। সায়েদ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু’চারজন মুরুব্বি তাকে সান্তনা দিচ্ছেন। এসবে নাফিসের কোন আগ্রহ নেই। সে ভীড়ের মধ্যে উর্মিকে খুঁজছে।
.
সেদিনের পরে সায়েদের মাঝে অনেক খানি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন সেই দোকানে বসে। উর্মিকে দেখা যায় না। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় নাফিস সায়েদের দোকানে বসে। চা খায়। দোকানে বসার সময় সায়েদকে জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছেন সায়েদ ভাই?
কথাটা একটু জোরেই বলে যাতে বাসার ভেতর থেকে শোনা যায়। আগে নাফিসের কণ্ঠ শুনতে পেলেই উর্মি দরজা দিয়ে উঁকি দিতো। এখন সেটা করে না। নাফিস দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।
উর্মির সাথে দেখা হয় না বহুদিন। দুপুর দেড়টা। নাফিস অফিস থেকে বের হয়েছে লাঞ্চ করার জন্য। রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে রাস্তার অপর পাশে উর্মিকে দেখতে পেলো। নাফিস তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হয়ে উর্মির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘এখানে কি করছো?’
নাফিসকে দেখে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে উর্মি বলল, একটা কাজে এসেছিলাম। আপনি এখানে?
‘আমার অফিসই তো এখানে। ওই যে রাস্তার ওপাশে। কাজ শেষ?’
‘কিসের কাজ?’
‘যে কাজে এসেছিলে।’
‘ও আচ্ছা। হ্যাঁ কাজ শেষ।’
‘দুপুরে খেয়েছো?’
‘না।’
‘চলো খেতে খেতে কথা বলি।’
‘আমি খাবো না।’
‘কেন?’
‘আমি বাসায় যাবো।’ কথাটা বলে উর্মি এক দন্ড দাঁড়ালো না। সামনের দিকে পা বাড়ালো। একটা রিকশা উর্মির গা ঘেষে দাঁড়ালো। উর্মি রিকশাওয়ালার দিকে তাকাতেই রিকশাওয়ালা বলল, আপা উঠেন।
‘আমি হেঁটে যাবো।’
‘স্যার আপনাকে নিয়ে যাইতে বলল। ভাড়া দিয়ে দিছে।’
উর্মি রিকশায় উঠার আগে নাফিসের দিকে তাকালো। নাফিস এখনো দাঁড়িয়ে আছে। উর্মির ইচ্ছে করছে আবার নাফিসের কাছে ফিরে যেতে। নাফিসকে কিছু কথা বলতে। সে তার জন্যই সাজতো। ঠোটে হালকা লিপিস্টিক, চোখে কাজল দিতো। চুড়িগুলো সেদিন তাকে দেখানোর জন্যই পরেছিলো। কিন্তু সে তা করলো না। রিকশায় উঠে বসলো।
.
মাহিমার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গলো নাফিসের। চোখ খুলেই দেখতে পেলো অসম্ভব রূপবতী এক যুবতী তার মুখের কাছে ঝুকে আছে। মেয়েটার কাঁধের একপাশে দিয়ে চুলগুলো তার মুখের উপর পরেছে। চুল থেকে অনেক সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। নাফিসকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহিমা বলল, কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো। অফিসের জন্য লেইট হচ্ছে। নাফিস হাসলো। বিছানায় উঠে বসলো। বালিসের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো। ঠোটে একটা সিগারেট দিয়ে লাইটার খুঁজতে খুঁজতে মাহিমাকে ডাক দিলো, এ্যাই লাইটারটা কোথায়?
মাহিমা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, সকাল সকাল সিগারেট খাওয়া চলবে না। লাইটার পাবে না।
নাফিস সিগারেটটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার সামনে আসলে ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ায় সে। চোখের সামনে সেদিনের দৃশ্য ভেসে ওঠে, উর্মি আর সায়েদ তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে জিনিস পত্র বের করছে। পাশের বাড়িটা ভাঙ্গা পড়েছে। এবার তাদেরটা পালা। চিনি কল থেকে সবাইকে অনেক আগেই নোটিশ দেয়া হয়েছিলো, তাদের জায়গা দখল করে যারা ঘর তুলেছে তারা যেন জাগয়া খালি করে দেয়। নোটিশে কাজ হয়নি তাই এ ব্যবস্থা।
নাফিস সেদিন মাকে ডেকে বলেছিলো সে উর্মিকে পছন্দ করে। মা নাফিসের হাত ধরে বলেছিলো, তুই এসব কি বলছিস বাবা। তোর বাবা জীবনেও মেনে নিবেন না। ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হয় না। কারো কাছে মুখ দেখানো যাবে না। কথাগুলো বলতে বলতে মা অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেন। নাফিস কোলে করে মাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ডাক্তার নিয়ে আসা হলো। জ্ঞান ফিরেই মা নাফিসকে বারবার ডাকতে লাগলেন। নাফিস পাশেই বসে ছিলো। মায়ের এমন অবস্থা দেখে নাফিস উর্মিকে নিয়ে আর কোন কথা বলেনি। নাফিস খুব করে চাচ্ছিলো চলে যাওয়ার আগে উর্মিকে একবার দেখতে কিন্তু মা নাফিসের হাত শক্ত করে ধরে শুয়ে ছিলেন।
প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো কিন্তু সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। মাহিমা নামের অসম্ভব রূপবতী এক মেয়ে তার স্ত্রী। সে একজন সুখী মানুষ। কিন্তু মাঝে মাঝে অফিস থেকে ফেরার সময় যখন স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বালানো থাকে না। আবছা অন্ধকারে কোন মেয়েকে হেঁটে আসতে দেখে তখন হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি অপুষ্ট শরীরের এক ষোড়শী এসে তার সামনে দাঁড়াবে। কোমল ঠান্ডা হাত দিয়ে তার হাতটা ধরে বলবে, আমার কথা মনে আছে আপনার? সেদিন চলে যাওয়ার আগে কেন শেষবারের মতো দেখতে আসলেন না। জানেন আমি ভীড়ের মাঝে শুধু আপনাকেই খুঁজছিলাম।
এমনটা হয় না কখনো। স্ট্রিট লাইটগুলোর আলো জ্বলে ওঠার আগ মুহূর্ত অবদি নাফিস চুপচাপ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে।।
.
Written by:- MD Noor Islam