রফিক মুখ কালো করে শ্বশুর বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিউ ইয়ার উপলক্ষে শ্বশুর বাড়িতে প্রোগ্রাম। অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছে। সবাই ব্যস্ত একজন আরেকজনকে নিউ ইয়ার ম্যাসেজ পাঠানোতে। কিছুক্ষন আগে রফিকের শালা রফিককে তার ফেসবুক দেখালো
দুলাভাই এই পর্যন্ত ২২০ জন নিউ ইয়ারের ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।
রফিকের মন খারাপ। তাকে কেউ ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে না। কিছুক্ষন আগে একটা ম্যাসেজ এসেছিলো রফিক খুশী হয়ে খুলে দেখে এলাকার দোকানদার কুদ্দুসের ম্যাসেজ। হ্যাপি নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা। তার সাথে রফিকের কাছ থেকে কত টাকা পায় তার একটা হিসেব। রফিক আরেকটু হলেই সেই ম্যাসেজ শালাকে দেখাতে গিয়েছিলো।
দেখো মানুষ একের পর এক ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে। আমিতো স্ট্রেইট ম্যাসেজ পাঠাতে মানা করি। মোবাইল লোড হয়ে যায়।
কিন্তু কুদ্দুস যে ম্যাসেজের নীচে বাকির হিসাবও উল্লেখ করবে তা কি ভাবা যায়। আরে বাবা এটা কি নববর্ষ যে তুই হালখাতা খুলতেছিস। শয়তানের শয়তান।
রফিক তার মেজো শালীর রুমে উকি মারে। দেখে শালী মেজাজ খারাপ করে বসে আছে। রফিক মনে মনে খুশী হয় যাক একজন মেজাজ খারাপ পাওয়া গেলো।
কি ব্যাপার? মেজাজ খারাপ কেন?
দুলাভাই এই বচ্ছরটা আমার খুব বাজে কেটেছে।
কেন? কি হয়েছে?
এই বচ্ছর আমার জীবনে দশটা প্রেম এসেছিলো। কিন্তু দেখেন বচ্ছর শেষে আমি একলা ভেরেন্ডা ভাজতেছি। সব চাইনিজ মার্কা প্রেম। একটাও টিকে নাই।
শুকরিয়া। অনেক প্রেম এসেছিলো তার জন্য। তোমাকে নিয়েইতো কবি লিখিয়া ছিলেন
জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। তুমিতো দয়ার সাগর। কাউকে মানা করতে পারো নাই।
দুলাভাই মস্করা করবেন না। আমার জন্য খাস দিলে দোয়া করেন। নতুন বচ্ছরে যেন প্রেম টিকে।
চিন্তা করো না। আমি দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পারছি যে নতুন বচ্ছরে তোমার জীবনে অনেকগুলো প্রেম এসেছে এবং সবগুলো টিকে আছে।
দুলাভাই কি বলেন। সবগুলো টিকলে আমি সামাল দিবো কিভাবে?
তুমি পারবে। দোয়া রইলো।
রফিক শালীর চোখে মুখে খুশির ছায়া দেখতে পায়। যাক খুশী থাকুক শালী। এখনকার দিনে একটার সাথে একটা ফ্রি পাওয়া যায়। সেখানে প্রেম একটা করলে পোষায় না।
রফিক এইবার ছোট শালীর ঘরে ঢুকে। ছোট শালীরও মেজাজ খারাপ।
তোমার আবার কি হয়েছে? প্রেমের সমস্যা?
দুলাভাই আর বইলেন না। সেই তখন থেকে ফেসবুক লাইভে আছি। আমি আজকে দেখাচ্ছি বিড়ালকে কিভাবে ডায়াপার পরাতে হয়। কিন্তু দেখেন মানুষজনের লাইক কমেন্ট নাই।
কাকে ডায়াপার পরাবা?
বিড়ালকে?
রফিক অসহায় অনুভব করে। শ্বশুর বাড়ি যে পাগল আগে থেকেই জানতো। বিয়ের সময় আরেকটু খোজ খবর নেয়া উচিত ছিলো। বড় ভুল হয়ে গেছে।
বিড়াল কই? রফিক জিজ্ঞেস করে।
আরে আমাদের নীচতালার বিড়াল মিনি। কিন্তু সে একটা বদের হাড্ডি। দুইবার আমাকে খামচি দিয়েছে। এখন খাটের নীচে গিয়ে লুকিয়েছে। কত রিস্ক নিয়ে লাইভ করছি অথচ লাইক কমেন্ট নাই। একজন কমেন্ট করেছে
আপু ডায়াপার কি দেশি না বিদেশী? আরেকজন কমেন্ট করেছে; বিড়ালের হাগু করার স্বাধীনতা চাই। দিয়ে দাও, দিতে হবে। ইশ আমাদের দেশের মানুষের কি চিপ মেন্টালিটি।
রফিক তাড়াতাড়ি শালীর রুম থেকে বের হয়। বিড়ালকে রফিকের বড় ভয়। শ্বশুরের রুমে গিয়ে দেখে শ্বশুর মিটিমিটি হাসছে।
বাবা হাসছেন যে।
হুম। আজকে মজা হবে।
কিভাবে?
শুনো আমি টিকটক ভিডিও বানাচ্ছি।
কি বলেন সেটা কেমন?
শ্বশুর আবার মুখ টিপে হাসে। শুনো নাই আজকে ছাদে আতশবাজি হবে। ব্যোম ফুটানো হবে। সেই সময় একজনের পাছায় আগুন লাগিয়ে দেয়া হবে। সে আতংকিত হয়ে ছাদের টাঙ্কির মধ্যে ঝাপ দিবে। শীতের রাত। পাছায় আগুন। কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে ঝাপ। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজবে।
তাড়াপ তাড়াপ ইস দিল সে
আহ নিকালতি রাহি
মুঝকো সাজা দি পেয়ার কি
এইসা কেয়া গুনা কিয়া
তো লুট গায়ি হা লুট গায়ি
রফিকের গলা শুকিয়ে আসে। বাবা ঠিক হইছে কার পাছায় আগুন লাগানো হবে।
রফিকের শ্বশুরের মুখে অট্রহাসি। না এখনো ঠিক হয় নাই। ছাদে গেলে ঠিক হবে।
রফিক তাড়াহুড়া করে রুমের বাইরে আসে। রফিকের ভাগ্য খুব একটা ভালো না। দেখা গেলো এই টিকটক ভিডিওর নায়ক রফিক।
নীলার সাথে রফিকের দেখা।
এই চলো তাড়াতাড়ি বাসায় যাই।
নীলা খুব অবাক হয়।
কি বলো। এতো তাড়াতাড়ি বাসায় যাবো। এখনতো অনুষ্ঠানই শুরু হয় নাই। আতশবাজি আছে। আরও কত কিছু আছে।
আমার না চাপ এসেছে। নিরুপায় হয়ে রফিক মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
তোমারতো যখন তখন চাপ আসে। এখানে মার্বেল দেয়া বাথ্রুম আছে। সেরে আসো।
বাসারটা ছাড়া আমার হবে না। প্লিজ বাসায় চলো।
নীলা রফিককে পাত্তা না দিয়ে। এই যে দেখো পরিচয় করিয়ে দেই। আমার কাজিন রুম্মন ভাই। বহুদিন বিদেশে ছিলো। খুব ভালো হাত দেখতে পারে। তোমার হাতটা দেখাওতো।
রুম্মন রফিকের কথার অপেক্ষা করে না। রফিকের হাত নিয়ে হাত দেখতে থাকে।
ভাই এই বচ্ছরের শুরুতো আপনার সেই রকম হবে। আপনার সেলিব্রেটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বচ্ছরের প্রথমেই।
এইবার রফিকের চাপের বাপ এসেছে। বাসায় যেকোন ভাবেই হউক যেতেই হবে।
#আমিনুলের_গল্প_সমগ্র