নতুন জীবন পার্ট-০৯

0
1209

নতুন জীবন
___________________
লেখিকা: বাবুনি
_________________
(পার্ট:৯)
ওর শাশুড়ি ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছেন।
তানছিয়া মনে মনে বলল, ওহ আচ্ছা ব্যপারটা তাহলে এই দাঁড়ালো। রাইফ আমাকে মিথ্যা বলে বাসায় নিয়ে এসেছে। মনে মনে তো ভেবেছিলাম লোক টা অনেক ভালো। এখন তো দেখছি আস্ত শয়তানের হাড্ডি।

ওর শাশুড়ি শিরিনা বেগম ওদেরকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বললেন।
-” সে কি রে বউমাকে নিয়ে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি_!”
রাইফ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
-” আমার একটু জরুরী কাজ আছে তাই চলে আসলাম।”

কথাটা বলেই সে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। শিরিনা বেগম হ্যাঁ করে তাকিয়ে রইলেন, ছেলের এইরকম ব্যবহার দেখে।
তানছিয়া রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেল।
রাইফ, ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই।
তানছিয়া বলল,
-” আমাকে মিথ্যা বলে নিয়ে এসেছেন কেন_?”
রাইফ চুপ করে আছে , তা দেখে তানছিয়া আরও উচ্চ শব্দে বলে উঠলো।
-” কি হলো চুপ করে আছেন কেন_!‌ উত্তর দেন।”
এবার রাইফ কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,
-” চুপ কর একদম চুপ এইটা তর বাবার বাড়ি না যা ইচ্ছা তাই করবি। এইটা ভদ্র লোকের বাড়ি ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বল।”
তানছিয়া রাইফের মুখে এইভাবে কথা শুনবে কখনো আশা করেনি।
তানছিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,রাইফ আবার বলতে শুরু করলো।
-” তকে নিয়ে এসেছি এই কারণে যাতে ঐখানে থেকে আর নষ্টামি করতে না পারিস। বুঝতে পেরেছিস_!”
তানছিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
-” আমি নষ্টামি করছি কি নষ্টামি করছি আমি_!”
রাইফ আরো বেশি রেগে গেলো এবার ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি নেশা করে এসেছে। তারপর আরেকটু রাগি কন্ঠে বলল,
-” কি নষ্টামি করছিস জানিস না তুই_! বাইরে বেপর্দা হয়ে ,পরপুরুষের সামনে গিয়ে বাইক চালিয়ে বলছিস কি নষ্টামি করছিস_! তর তো নূন্যতম জ্ঞান থাকা উচিত ছিল যে তর এখন এসব করার সময় রয়ে যায় নি। তুই এখন অন্যের স্ত্রী।”
তানছিয়া এবার মুখ খুললো,
-” আমি যাই করি না কেন তাতে আপনার সমস্যা কোথায়_! আর আমি শুধু লোক দেখানো আপনার স্ত্রী বাস্তবে নয়। কথাটা ভুলে যাবেন না, আমি প্রথম দিন ই বলেছি আমার উপর অধিকার দেখাতে আসবেন না। কি সম্পর্ক নিয়ে অধিকার দেখাতে আসছেন।আর কেন এসব আমাকে বলছেন কেন_!”

রাইফ কিছুটা চুপসে গেল এই কথা গুলো শুনে। সে দ্রুত গতিতে রুম ত্যাগ করলো।


‘ রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল রাইফের আসার নাম গন্ধ নেই।
শারিনা বেগম, প্রথমে খুব চিন্তিত হলেও, পরবর্তীতে ছেলের ফোন পেয়ে শান্তিতে শুয়ে রইলেন।
তানছিয়ার মনেও ভাবের উদয় হয়েছে।
– লোক টা গেল কোথায় এতো রাত করে ঘরে ফিরে না তো কখনো। আমি কি তাহলে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।
নাহ মোটেও না আমি ঠিক কাজ ই করেছি।আর এই লোকটার প্রতি আমার মায়া দেখানোর প্রশ্ন ই ওঠে না, যাক যেখানে খুশি। কারণ আমি তো লোক টা কে ভালোই বাসি না। আর ভালোবাসার ও ইচ্ছে নেই এইরকম একটা গাইয়া ছেলেকে। আমি ভালোবাসি হ্যাঁ ভালোবাসি শুধু একজন কে। যে আমার সমস্ত মনপ্রাণ জুড়ে বিরাজ করছে। তানছিয়া বালিশ ঠিক করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।


‘ এইদিকে রাইফ বন্ধুর বাসায় এসেছিল ৯ টার দিকে। এশার নামাজ আদায় করছে আসার পথে মসজিদে। আজ এইখানেই থাকবে মনস্থির করেছে। বন্ধুর সাথে খাওয়া দাওয়া শেষে গল্প করে, টিভি দেখে, ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
-কিন্তু বালিশে মাথা লাগিয়ে কিছুতে ঘুম আসছে না রাইফের। খুব খারাপ লাগছে তানছিয়ার বলা কথা গুলো বার বার কানে বাজছে। কিন্তু কেন!আমি তো ওর কেউ না, ওর সাথে তো আমার সত্যিকারের কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে কেন ওর কথায় আমার খারাপ লাগছে_! কেন আমি কষ্ট পাচ্ছি_! তবে কি আমি__ না না এটা হতে পারে না।

পাশেই শুয়ে ছিল তার বন্ধু সাগর। সে রাইফের কথা বলা শুনে বলল,
– “কি রে তুই এখনো ঘুমাস নি ভাবির কথা মনে পড়ছে বুঝি_! আর কি হতে পারে না বলছিস কিছু হয়েছে না কি_! কি হয়েছে তোর বলতো আমাকে, এখানে আসার পর থেকে দেখছি কেমন বিষন্ন দেখাচ্ছে তকে।”

রাইফ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।
-” দোস্ত কি আর বলবো সবি আমার কপাল। (তারপর সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু খুলে বললো।) শুনলি তো সবি তুই ই বল এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও, কেন আমার খারাপ লাগছে ওর কথায় আজ!”
সাগর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-” সবি তো শুনলাম। দোস্ত কিন্তু সত্যি বলতে তুই আসলে ভাবিকে ভালোবেসে ফেলেছিস।”
-” কি বলছিস তুই আমি তানছিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
-” শুন, আমি বুঝিয়ে বলছি।আমরা কখন কষ্ট পাই কারো আঘাত যুক্ত কথায়_! যখন আমরা কারো খুব কাছাকাছি থাকি সবসময়। এবং যাকে সবসময় চোখের সামনে দেখি, যাকে নিয়ে চিন্তা করি। যাকে আমাদের ভালো লাগে অর্থাৎ যাকে আমরা ভালোবাসি।”
-” কিন্তু তানছিয়ার সাথে পরিচয় বা একসাথে থাকায় তো বেশিদিন হয়নি। বা এমন কিছু ঘটে নি যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলবো।”
-” দোস্ত ভালোবাসা অনেক সময় নিজের অজান্তেই কারণ ছাড়াই হয়ে যায়। আর হতে পারে এই কয়দিনে ই তোর ওর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। অসম্ভব কিছু নয় তো।”
-” চল মানছি তোর কথা,কিন্তু ওকে ভালোবেসে ই কি লাভ হবে।ও তো আমাকে স্বামী ই মানে না ভালোবাসবে কি_!”
-” শান্ত হয়ে বস তো, ভালোবাসে না বাসবে।”
-” কিন্তু কিভাবে_! ও তো আমার মনে হয় এখনো তামিনকে ভালোবাসে।আর ওর চলাফেরা আমার মোটেও পছন্দ নয়।”
-” আরে দূর তামিনের প্রতি ওর এইটা সত্যিকারের ভালোবাসা না শুধু মায়া মাত্র। মায়া কেটে গেলেই দেখবি ও আর তামিনের নাম পর্যন্ত নিবে না। আর চলাফেরার কথা বললি তো ঐটা তর ভালোবাসা দিয়ে ঠিক করে ফেলবি।”
-” সব বুঝলাম কিন্তু দোস্ত ও যদি তামিন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলে, ওর কাছে চলে যায় তখন!”
-” ঐটা আমি দেখছি আর শুন তামিন এতো সহজে জেল থেকে ছাড়া পাবে না। ওকে যেদিন ধরেছি এরপরের দিন, আদালত ওকে ২০ বছরের জেল দিয়েছে হাফ মার্ডার কেসে। সো তুই নিশ্চিত মনে কাজ চালিয়ে যা আমি যেভাবে বলছি। ইনশাআল্লাহ সফল হবি। তবে এই ক্ষেত্রে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে আরও।”
-” কি কাজ!”
-” এদিকে কান টা বাড়িয়ে দে।”
কান টা বাড়িয়ে দিল রাইফ সাগরের দিকে। সাগর ফিসফিস করে কিছু বলল রাইফকে,যা শুনে রাইফ বলল।
-” কেয়া বাত হে দোস্ত। সত্যি তর জবাব হয় না”
হাসতে হাসতে কথা টা বলল, সাগর ও হেসে বলল,
-” চল তাহলে ঘুমানো যাক।”


‘ এইদিকে তানছিয়ার ঘুম আসছে না বার বার দরজার উপর চোখ যাচ্ছে না চাওয়া সত্বেও। কেমন যেনো অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।
– রাত তো প্রায় ২ টা বাজে ভয় ও করছে যদি লোক টা কিছু করে ফেলে! আসলেই আমার এইভাবে কথা বলা টা মোটেও ঠিক হয়নি। লোকটি এতোটা ও খারাপ না, যদি হতো তাহলে বাসর ঘরে এইভাবে চুপচাপ আমার কথা মেনে নিতো না। অপেক্ষা করি আসলে না হয় সরি বলে দিবো।

এসব ভাবতে ভাবতে ফোন বের করে সে মিউজিক ভিডিও দেখতে লাগলো।


‘ এইদিকে শিরিনা বেগম ভাবছেন,
– আমার ছেলেটা বাড়িতে নেই যদিও সে বলেছে ফোনে তার বন্ধু সাগরের বাড়িতে থাকবে। কি না কি জরুরী কাজ আছে। কিন্তু বউমা তো খাবার টেবিলে আসলো না। এমন কি একটা বার বললো না যে রাইফ বাসায় আসবে না আজ। তাহলে কি বউমার সাথে সবকিছু ঠিকঠাক নেই রাইফের_!
নাহ আমাকে জানতে হবে ব্যাপারটা আসলে কি। কাল রাইফ আসুক ওর কাছ থেকেই জেনে নিবো।

চলবে_!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে