নতুন জীবন
________________
লেখিকা:বাবুনি
________________
(পার্ট:৮)
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছেন তানছিয়ার আব্বু আম্মু।তানছিয়াকে দেখেই মতিন সাহেব অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন ওর দিকে।
তানছিয়া অনেক ভয়ে ভয়ে ধীর পায়ে হেঁটে ওনাদের সামনে গেলো।
‘
‘ “মতিন সাহেব, ভেবেছিলাম ফারজানা তোমার মেয়ে ভালো হয়ে যাবে। এইরকম একটা ফ্যামিলিতে গিয়ে ও ভালো হয়নি তোমার মেয়ে। মানুষ তো অন্যকে দেখে কিছু শিখে তোমার মেয়ের মধ্যে সেটাও নেই। বুঝতে পারছো তুমি_! তোমার মেয়েকে ভালো করার মতো মানুষ এই পৃথিবীতেই হয়তো নেই।আর থাকবেই বা কিভাবে যেখানে আমরা ওর বাবা মা হয়েও ওকে ভালো করতে পারিনি।”
“ফারজানা বেগম, আহ্ কি সব বলছো, মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে।ওকে এরকম করে না বলে আগে জিজ্ঞেস তো করো কোথায় ছিল। আচ্ছা কোথায় ছিলি তুই_!”
“তানছিয়া, আমতা আমতা করে বলল, ইয়ে মানে মা। আমি বাইক রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিলাম। এই যে ট্রফি নিয়ে আসলাম, আমি ফাস্ট হয়েছি প্রতিযোগিতায়।”
“মতিন সাহেব, শুনেছো!শুনেছো তোমার মেয়ের কথা ও বাইক রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিল। এই মেয়ে তো দেখছি আমার মানসম্মান এর কথা একবার ও ভাববে না। এমনিতেই তো মানসম্মান সবকিছু ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এখন আবার যা আছে তা ও শেষ করে দিতে এসেছে। এখন ওর শশুড় বাড়ির লোকজন জানতে পারলে কি হবে ব্যপারটা বুঝতে পারছো_!”
“তানছিয়া, শশুড় বাড়ির লোকজনকে না বললেই তো হয়।”
“ফারজানা বেগম, চুপ কর বেয়াদব মেয়ে। ঘটনা একটা ঘটিয়ে তো এসেছিস এখন আবার মুখের উপর কথা বলছিস। আমার চোখের সামনে থেকে যা তুই।”
‘
‘ তানছিয়া ট্রফি টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল কাঁদতে কাঁদতে।
মতিন সাহেব ও ফারজানা বেগম সিদ্ধান্ত নিলেন এই ব্যপারটা গোপন রাখবেন।
প্রায় ৪টার দিকে রাইফ বাসায় ফিরলো। ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই, চোখে পড়লো পায়ের কাছে দু টুকরো হয়ে পড়ে থাকা ট্রফির দিকে। ট্রফি টা হাতে তুলে নিয়ে, আরেকটু সামনে এসে দেখলো।তামিম সোফায় বসে টিভি দেখছে।
‘
‘
” রাইফ গলা ঝেড়ে বলল, তামিম কি করছো_!”
“তামিম, টিভি থেকে চোখ সরিয়ে বলল, এই তো ভাইয়া টিভি দেখছি। তুমি কখন এলে_!”
“রাইফ, এইতো এলাম। আচ্ছা তোমার আপু কোথায়_!”
“তামিম, আপু তো উপরে নিজের রুমে বসে কান্না করছে।”
“রাইফ, কেনো কান্না করছে কেনো_! আচ্ছা তার আগে বলো তুমি কি এই ট্রফি সম্পর্কে কিছু জানো_! মানে এই ট্রফি টা কার_! কিভাবে এসেছে বাসায়_!”
“তামিম, তার আগে তুমি বলো এসব জেনে তুমি কি করবে_!”
“রাইফ, ট্রফি টা অনেক দামি তো তাই জিজ্ঞেস করছি।”
“তামিম, এইটা সম্পর্কে বলতে পারি কিন্তু, আমাকে কি দিবে যদি আমি বলি এর সম্পর্কে_!”
“রাইফ, তুমি যা চাইবে।”
“তামিম, সত্যি তো প্রমিজ!”
“রাইফ, হুমমম সত্যি প্রমিজ।”
“তামিম, আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে কিন্তু।আপু বাইক রেসিং প্রতিযোগিতায় গিয়েছিল। এই ট্রফি টা আপু ফাস্ট হয়ে এনেছে।কিন্তু আম্মু আব্বু আপুকে বকেছে তাই আপু ট্রফি ছুঁড়ে ফেলে, নিজের রুমে গিয়ে কান্না করছে।”
রাইফের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।তানছিয়া এরকম একটা কাজ করবে তার জানা ছিল না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তানছিয়ার উপর ,কিন্তু রাগ টাকে কন্ট্রোল করে নিলো সে।তামিমকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে দিল আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। তারপর ওকে টিভি দেখতে
বলে,সে তানছিয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালো।
রুমে প্রবেশ করে রাইফ দেখতে পায় তানছিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।
তানছিয়ার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই রাইফ ওয়াশ রুমে চলে গেল।
‘
‘
‘তানছিয়া ইতিমধ্যে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমের দিকে রওনা দিল। দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে অবাক হলো।এ কি দরজা কিভাবে বন্ধ হলো, আমার ওয়াশ রুমে আবার কে ঢুকলো!
তানছিয়া আর কিছু না ভেবেই দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,
-” কে আমার ওয়াশ রুমে কে__?”
ভিতর থেকে রাইফ বলল,
-” আরে আমি শাওয়ার নিচ্ছি। একটু ওয়েট করো।”
তানছিয়া মনে মনে বলল, বজ্জাত বেটা তরে সাথে এনেই ভুল করছি। এখন আমার সবকিছুতে ভাগ বসাচ্ছিস।
‘
‘ রুমে প্রবেশ করলো তামিম।
-” আপু তোমাকে আর রাইফ ভাইয়া কে নিচে ডাকছে আম্মু আব্বু।”
তানছিয়া বলল
-” তুই যা আমি আসছি।”
-” আরে আপু তুমি একা না ভাইয়া কে ও নিয়ে আসো খাবে।”
তামিম চলে গেলে, তানছিয়া রাগে নিজের চুল ধরে টানতে লাগলো।কি যন্ত্রণা এই বজ্জাত বেটা কে নিয়ে এখন খেতে হবে একসাথে।
কিছুক্ষণ পর রাইফ ওয়াশ রুম থেকে বের হলে ,তানছিয়া একটু মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল ওয়াশ রুমে।
রাইফ, তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। মনে মনে ভাবলো, কি আজব মেয়েরে বাবা এতো বড় বড় কান্ড করেও অহংকার কমেনি একটুও। তারপর রাইফ আসরের নামাজ পড়ে নিলো, জানে তানছিয়াকে বলে লাভ নেই। ও নামাজ পড়বে না তাছাড়া এইটা ওর বাড়ি, এইখানে এসে এইভাবে অধিকার কাটানো টা ঠিক হবে না।তাই ওকে নামাজ পড়ার জন্য জোর না করে, নিজে নামাজ পড়ে নিলো।
কিছুক্ষণ পর তানছিয়া এসে বলল,
-” নামাজ শেষ হলে নিচে চলুন, আম্মু আব্বু ওয়েট করছে।”
রাইফ ভাবলো হঠাৎ এতো ভালো ব্যবহার কেন করছে তানছিয়া_! যদিও তানছিয়ার উপর রাগ টা এখনও রয়ে গেছে তার।তাই খুশি হবার কথা হলেও হলো না সে তানছিয়ার মুখে ভালো ভাবে কথা শুনে।
মাথা নাড়িয়ে বলল সে,
-” চলো।”
‘
‘ খাবার খেতে খেতে রাইফ, মতিন সাহেব ও ফারজানা বেগম কে বলল। আজ ই বাসায় ফিরবে সে ও তানছিয়া।
মতিন সাহেব কারণ জানতে চাইলে সে বলল, তার কিছু জরুরী কাজ আছে।তাই সে আর থাকতে পারবে না।
তানছিয়া কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-” আমি যাবো না।”
পরক্ষনেই বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ওনার লাল চোখ দুটো দেখে। নিচের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল,
-” নাহ মানে বলছিলাম যে আমি আরও কয়েকটা দিন থাকতে চাই এখানে।”
রাইফ একটু ভারী গলায় বলল,
-“মায়ের শরীর টাও বেশ ভালো না। তুমি এই সময় এইখানে থাকাটা কি ঠিক হবে_!”
সাথে সাথে মতিন সাহেব বললেন,
-” কি বলছো বাবা বেয়াইনের শরীর খারাপ_! কি হয়েছে বাবা বড় কোনো রোগ নয় তো_!”
রাইফ খাবার খেতে খেতে বলল,
-” না তেমন কিছু নয় বোধহয় তবে শরীরের অবস্থা বেশ ভালো না। বয়েস হচ্ছে তো তাই।”
মতিন সাহেব তবুও বললেন,
-” অবস্থা যদি বেশি ভালো না হয় আমাকে জানিও ,আমিও তানছিয়ার মা দেখতে যাবো।”
ফারজানা বেগম বললেন,
-” তানছিয়া, তুই ও রাইফের সাথে যাবি।বেয়াইনের শরীর ভালো না ,তুই এখানে থাকাটা ঠিক হবে না জামাই বাবাজি ঠিক ই বলছেন। পরে না হয় এসে থাকবি তর যতোদিন খুশি।”
তানছিয়া হ্যাঁ করে তাকিয়ে তাকলো সবার দিকে, সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সে ভাবছে, রেখে আসলাম শাশুড়ি মাকে সুস্থ।এতো তাড়াতাড়ি অসুস্থ হলেন কিভাবে। কিছু তো একটা আছে, আমার বিষয়টা খটকা লাগছে।
সন্ধ্যায় প্রায় ৭টার দিকে তানছিয়া ও রাইফ রওনা দিলো। বাসায় পৌঁছে রুমে প্রবেশ করতেই তানছিয়ার চোখ তো চড়কগাছে উঠে গেল।
চলবে_!