নতুন জীবন
________________
লেখিকা:বাবুনি
_________________
(পার্ট:৫)
নিচে দুজন পুলিশ রয়েছে, একজন হাতকড়া পরিয়ে দিচ্ছে তামিনের হাতে।
তার মানে তামিন এখানে ঝামেলা করতে এসেছিল। চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষ কে এইভাবে দেখলে কার না কষ্ট হবে। তানছিয়ার ও কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু সেই কষ্ট কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে।
তামিনের মতো জঘন্য লোকের এরকম শাস্তি হওয়া উচিত নয় কি। অবশ্যই উচিত শিক্ষা এটা ওর জন্য।
তানছিয়া মনে মনে বলল,একে তো আমার জীবন টাকে বরবাদ করে দিয়েছে।এখন আবার আমার বিয়েতে ঝামেলা পাকাতে এসেছে। তারপর বুঝার চেষ্টা করল , পুলিশ কে খবর দিলো কে এতো তাড়াতাড়ি।
‘
‘ এর মধ্যেই কলি দ্রুত রুমে প্রবেশ করে , দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর হাঁপাতে লাগলো।
“তানছিয়া, টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল। কি রে এতো হাঁপাচ্ছিস কেন কি হয়েছে।যেনো সে কিছুই জানে না এমন একটা ভাব নিলো।”
“কলি, গ্লাস টা হাতে নিয়ে এক নিমিষেই সবটুকু পানি খেয়ে নিল। তারপর বলল, কি হয়নি তা বল। তামিন এসেছিল এখানে।”
“তানছিয়া, কিছু টা অবাক হয়ে জানতে চাইল কেন ও কেন আসবে এখানে।কোনো ঝামেলা করে নি তো_!”
“কলি, করে নি মানে আরেকটু হলেই তো রাইফ ভাইয়া লাশ হয়ে যেত,আর তুই বিধবা হয়ে যেতি।”
“তানছিয়া, দূর কি সব অলক্ষণে কথা বলছিস। বিয়ের আগেই বিধবা।কি হয়েছে সব খুলে বল তো।”
“কলি, তামিন এসে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল সবার সামনে।সে নাকি এই বিয়ে হতে দিবে না। তুই নাকি শুধু তার। তারপর বরের সামনে গিয়ে ওর দিকে পিস্তল ঠেকায়। গুলি ছোড়ে দিবে ঠিক তখনই পুলিশ ওর হাত থেকে পিস্তল ফেলে দেয় গুলি করে।”
“তানছিয়া, কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি পুলিশ আসলো কোথা থেকে।কে খবর দিলো।”
“কলি, আরে পুলিশ তো আগে থেকেই ছিল।”
“তানছিয়া, মানে_!”
“কলি, রাইফ ভাইয়ার দুজন বন্ধু পুলিশ অফিসার। রাইফ ভাইয়া আগে থেকেই মনে হয় পজিশন নিয়ে ই আসছিল। যাক বাবা আল্লাহ রক্ষা করছেন। শয়তান টাকে জেলে নিয়ে গেছেন।এখন আর কোনো ভয় নেই।”
‘
‘
ইতিমধ্যে দরজায় নক করলেন তানছিয়ার আম্মু। কলি দরজা খুলে দিল। তিনি দ্রুত পায়ে তানছিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
“ফারজানা বেগম, তানছিয়া এসব কি_! তুই কি আমাদের মানসম্মানের কথা একবার ও ভাবলি না।”
“তানছিয়া, বেশ অবাক হলো মায়ের কথা শুনে।কি হয়েছে আম্মু আমি আবার কি করলাম!”
“ফারজানা বেগম, তুই তামিন কে ফোন করে এখানে আসতে বলিস নি_!”
“তানছিয়া, তুমি এসব কি বলছো আম্মু, আমি কেন ওকে এখানে আসতে বলবো।ওর সাথে তো আমার কোনো যোগাযোগ নেই।”
“ফারজানা বেগম, কিছুটা ধমকের সুরে বললেন, মিথ্যুক মেয়ে। আবার মিথ্যা কথা বলছিস। আমি জানি তুই ঐ ছেলেটাকে এখনো ভালোবাসিস।না করতে পারবি।”
“তানছিয়া, এই কথা শুনে কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।”
“ফারজানা বেগম, তকে আমার জন্ম দেয়াটাই ভুল ছিল।যদি ছোট থাকতে গলা টিপে হত্যা করে ফেলতাম। তাহলে হয়তো আজ এই দিন দেখতে হতো না।”
‘
‘
ফারজানা বেগম কথা গুলো বলে দ্রুত পায়ে চলে গেলেন।
তানছিয়া, মনে মনে বলল, একবার বিয়ে টা হয়ে যাক তোমরাও বুঝবে আমি কি ছিলাম।
কলি, ওকে শান্ত হয়ে বসতে বলে চলে গেল রুম থেকে।
ফারজানা বেগম নিজের রুমে বসে কান্না করছেন।
‘
‘
“কলি, আন্টি কিছু কথা বলার ছিল।”
“ফারজানা বেগম, বলো।”
“কলি, কাল রাতের সব কিছু খুলে বলল।”
“ফারজানা বেগম, তার মানে তানছিয়া এইসবের কিছু জানে না। আমি শুধু শুধু ভুল বুঝেছি ওকে।”
“কলি, হ্যাঁ আন্টি।”
“ফারজানা বেগম, কিন্তু সবার কাছে যে আজ আমাদের বদনাম হলো।”
“কলি, কিছুই হয়নি আন্টি এখানে তো আর আপনি আংকেল বা তানছিয়া কারো দোষ নেই।”
‘
‘ ঘরের মধ্যে রেখেই কাবিননামায় সই করানো হলো তানছিয়াকে। তিনবার কবুল বলার পর বোরখা পরানো হলো তাকে।
এবার বিদায়ের পালা।সবার চোখ ই অশ্রু সিক্ত। ফারজানা বেগম ,তো রিতিমত স্যান্সলেস হয়ে পড়ে আছেন নিজের রুমে।
মতিন সাহেব, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না আটকে রাখতে পারলেন না। তানছিয়াও, বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
“মতিন সাহেব, রাইফের হাতে ওর হাত রেখে বললেন। বাবা আমার বড় আদরের মেয়ে তানছিয়া। আমার পাগলি মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।ওর বয়েস কম যদি কোনো ভুল করে মনে ধরে রেখো না বাবা।ওকে ঠিক করার দায়িত্ব কিন্তু এখন তোমার বাবা।বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।”
“রাইফ, চিন্তা করবেন না আপনি ওর সব দায়িত্ব এখন আমার।”
“তানছিয়া, শেষ বারের মতো নিজের ভাইকে জড়িয়ে ধরল। ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।”
“তামিম ও , কান্না করতে করতে বলল, আপু তুমি আর কবে আসবে।”
“তানছিয়া, ওর মুখে এমন কথা শুনে, হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।”
‘
‘ একটা বোন ও ভাইয়ের জন্য এইদিন টা অনেক কষ্টের।কত মারামারি ঝগড়া খুনসুটি ঘেরা ভালোবাসা, থাকে ভাই বোনের সম্পর্কে।
এইদিন টা এসব থেকে দূরে সরিয়ে দেয় দুজন কে। হ্যাঁ অনেক মিস করবে তানছিয়া পূর্বে ভাইয়ের সাথে কাটানো দিন গুলি।তামিম ও হয়তো মিস করবে।
কলিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আবার, কলিও কান্না করছে।
‘
‘ তানছিয়াকে গাড়িতে তুলার পর ই সে স্যান্সলেস হয়ে যায়। তানছিয়ার মাথা রাইফের কাঁধে।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।
বাসার সামনে এসে গাড়ি থামানো হলো।একে একে সব নেমে গেলো গাড়ি থেকে।
কিন্তু রাইফ নামতে পারছে না, কারণ এখনো তানছিয়ার মাথা ওর কাঁধে।
রাইফের বোন” সুমাইয়া বলল, ভাইয়া ভাবিকে খুলে করে নিয়ে আসো।”
রাইফ কিছু একটা ভেবে , তাই করলো।
তানছিয়াকে খুলে করে নিয়ে রুমে বিছানার উপর রাখলো।
তারপর দরজা নক করে , ফ্রেশ হতে চলে গেল।আজ সারাদিনে অনেক দখল গেছে।
সন্ধ্যায় সুমাইয়াকে বলল, যাতে তানছিয়ার স্যান্স আসছে কি না দেখে আসতে।
‘
‘ তানছিয়া চোখ মেলে তাকালো, অপরিচিত একটা রুমে নিজেকে আবিষ্কার করলো।ওর পরনে এখনো বোরখা। খুব অস্বস্তি বোধ করছে, ভেতরে ভারি শাড়ি তার ওপর বোরখা।
ইতিমধ্যে রুমে প্রবেশ করলো একটা মেয়ে। হ্যাঁ আসার সময় এই মেয়ে টা বলেছিল ভাবি এতো কেঁদো না। নতুন বউয়ের সাজ টা যে চলে যাবে।তার মানে ও রাইফের বোন। সুমাইয়া একটু কাছে এসে বললো।
“সুমাইয়া, ভাবি বোরখা খুলে ফেলো তো গরম লাগছে নিশ্চয়ই।”
“তানছিয়া, চুপ করে বসে আছে।”
“সুমাইয়া, এতো লজ্জা পেতে হবে না আমি এ ঘরের ই একজন সদস্য।”
“তানছিয়া, আস্তে করে বলল, জানি। কিন্তু তোমার নাম_!”
“সুমাইয়া, আমার নাম সুমাইয়া তোমার একমাত্র ননদ। চলো তো আমার সাথে তোমাকে ওয়াশ রুম দেখিয়ে দেই।”
তানছিয়া বাধ্য মেয়ের মতো ওর পিছু নিলো।
‘
‘ কিছুক্ষণ পর, ওর শাশুড়ি ওর রুমে আসলেন।
“শিরীনা বেগম, বউমা তোমাকে তো আনতে যেতে পারলাম না। বুঝতেই তো পারছো মা একা মানুষ তোমার শশুড় ও বেঁচে নেই। সবদিক দেখতে হয় একা আমাকেই।”
“তানছিয়া, ওনার কথা শুনে বুঝতে পারলো ওনি ওর শাশুড়ি হন।তাই দ্রুত গিয়ে ওনার পা ছুঁয়ে সালাম করলো।”
“শিরীনা বেগম, থাক থাক মা সালাম লাগবে না বেঁচে থাকো।”
তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে তিনি রুম থেকে চলে গেলেন। সুমাইয়া পাশে বসে আছে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা ও মেয়ে এসে দেখে গেছে ওকে।
সুমাইয়া বাসার সবার কথা বলছে তানছিয়াকে।
“সুমাইয়া, ভাবি আমাদের বাসায় কে কে আছেন জেনে নাও।আম্মু, দাইফ ভাইয়া,ওনি বিদেশ আর একজন তো জানোই রাইফ ভাইয়া, আমি আর ভাবি।এখন ভাবির একটা পুঁচকে হয়েছে। তাই তো বিয়েতে যেতে পারে নি ভাবি। বেশিদিন হয়নি ভাবির বেবি হয়েছে।আর এখন তোমাকে নিয়ে এই আমাদের ফ্যামেলি।”
“তানছিয়া,ওর কথা বলার ধরণ দেখে একটু মুচকি হাসলো। সহজ সরল মেয়ে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
‘
‘ হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো রাইফ। সুমাইয়া বলল ভাইয়া তুমি_!
তানছিয়া তাড়াতাড়ি ঘোমটা টেনে নিলো আরেকটু। এখনো তানছিয়া রাইফকে দেখে নি।রাইফ দেখেছে কি না তাকে তা সে জানে না।
“সুমাইয়া , ভাইয়া তোমার কিছু লাগবে_!”
“রাইফ, না তর ভাবিকে বল নামাজ পড়ে নিতে। ”
কথাটা বলে সে চলে গেল।তানছিয়া রাগে কটমট করছে।কি করবে এখন,সে তো নিয়মিত নামাজ পড়ে নি কখনো। তাছাড়া আজ কত দখল গেছে ইচ্ছে করছে ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু তাও পারছে না, এখন আবার নামাজ। তারপর ও কিছু একটা ভেবে অযু করে নামাজ পড়ে নিলো।
‘
‘ রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল।তানছিয়াকে রুমের ভেতরে ই খাওয়ানো হলো।
রাত প্রায় ১টা সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে এখন।তানছিয়ার বাসার সবার কথা খুব মনে পড়ছে এখন। এতোক্ষণ হয়তো ব্যস্ত থাকায় মনে পড়েনি। কিন্তু এখন একা থাকায় খুব মনে পড়ছে, কান্না ও পাচ্ছে। সে চোখ মুছে নিলো মুহূর্তেই।কারণ ঐবাড়িতে আর যেতে চায় না ও বড্ড অভিমান জমেছে এই কয়দিনে ওদের উপর।
হঠাৎ দরজার শব্দে একটু নড়ে চড়ে বসলো সে। কে আসবে এতো রাতে বুঝতে পারলো।তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইল।
রাইফ দরজা টা বন্ধ করে ওর দিকে এগিয়ে আসলো।
চলবে!