বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
_____________________________
গল্প:নতুন জীবন
__________________
লেখিকা:বাবুনি
________________
(পার্ট:১)
বাবা মা ছোট ভাই আর ওকে নিয়েই তানছিয়াদের পরিবার।
বেশ সুখী পরিবার ওদের বাবার একটা বেসরকারি অফিস আছে। সেই অফিসের মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে ওর বাবা।
বড়লোক বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে ও।
বাবার যথেষ্ট টাকা ও আছে। সেই টাকা যখন খুশি যেভাবে খুশি খরচা করছে সে ইচ্ছে মতো। কেউ নেই থাকে কিছু বলার মতো ভাই টা ও ছোট। বাবার কাছে টাকা চাইলে ওনি কখনো না করেন নি।কারণ ওনার সন্তানদের জন্য ই তো ওনার সবকিছু। তবে মতিন সাহেব, বেশকিছু দিন যাবত লক্ষ্য করে দেখছেন।তানছিয়ার চালচলন বেশভুষায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। প্রথমত বিষয় টি স্বাভাবিক ভাবে ই নিলেন তিনি, কারণ নতুন নতুন কলেজে ভর্তি হলে।সবার মধ্যে ই এরকম পরিবর্তন আসে।
কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে ততই তানছিয়ার বিলাসীতা বেড়েই চলছে। যখন তখন মতিন সাহেব কে, কল করে অথবা সামনাসামনি মোটা অংকের টাকা চেয়ে বসছে।মেয়ের খুশির জন্য কনো প্রশ্ন না করেই তিনি টাকা দিয়ে গেছেন এতো দিন।
কিন্তু এবার আর সহ্য করতে পারছেন না, চুপ করে থাকতে পারলেন না। এতো টাকা তিনি দিতে ও অস্বীকার করলেন। কারণ তানছিয়া এবার ১ লক্ষ্য টাকা চেয়ে বসেছে। আজ শুক্রবার ছুটির দিন ,তাই মতিন সাহেব বিকেলে নিজের ঘরে বসে আছেন। হঠাৎ আগমন ঘটে তানছিয়ার।আজ ছুটির দিন তাই বাড়িতে আছে,নয়তো সেই সকালে বের হয়ে যায় আর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে।
“তাছিয়া, বাবা তুমি তাহলে টাকা দিচ্ছো না আমাকে__!” ( কিছু টা রাগি কন্ঠে কথা টা বলল)
“মতিন সাহেব, ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন। দিচ্ছি না কে বলল__!”
“তানছিয়া, তাহলে কাল চেয়েছি টাকা এখনো দিচ্ছো না কেন__!”
“মতিন সাহেব, এতো টাকা দিয়ে কি করবে তুমি জানতে পারি__!”
“তানছিয়া, বলা যাবে না, টাকা টা আমার খুব প্রয়োজন । তুমি দিবে কিনা সেটা বল।”
“মতিন সাহেব, তুমি কারণ টা না বললে এতো গুলো টাকা আমি দিতে পারবো না।”
“তানছিয়া, আমি কারণ বলতে পারবো না লাগবে না তোমার টাকা।যাও এই বাড়ি তেই আমি থাকবো না ।যেই বাড়িতে আমার সামান্য কিছু ইচ্ছা ও পূর্ণ হয় না। থাকো সবাই আরাম করে নিজেদের ইচ্ছামত টাকা উড়াও আমি বললেই টাকা দিতে সমস্যা।”
বাবাকে আরও কয়েকটা কথা শুনিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল সে।
মতিন সাহেব , জানেন তানছিয়া এখন কি করবে। প্রথমে বাসা থেকে বের হয়ে সোজা বাইক নিয়ে ওর বান্ধবী কলির বাসায় চলে যাবে। তারপর ঐখানে ই রাতে থাকবে এবং কাল সকাল হতেই বাসায় চলে আসবে।
‘
‘ তানছিয়া , জামাকাপড় চেঞ্জ করে নিলো, হাইহিল কালো জুতা টা পরে নিলো। সাথে কালো সানগ্লাস , কড়া ঘ্রাণ যুক্ত পারফিউম স্প্রে করে নিলো গায়ে। তারপর ব্যাগে কিছু জামাকাপড় আর টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পরলো সে বাইক নিয়ে।
কিছুক্ষণ পর ওর মা ফারজানা বেগম, মেয়ের রুমে এসে ওকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন।
“মতিন সাহেব, রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন। কি হয়েছে এতো চিৎকার করছো কেন__!”
“ফারজানা বেগম, চিৎকার কি আর এমনি এমনি করছি।আজ ছুটির দিনে ও তোমার মেয়ে বাইরে বের হয়েছে।তাও আবার সন্ধ্যার সময়।ওর কি একটুও জ্ঞান বুদ্ধি হবে না,এই সন্ধ্যার সময় একা একা বাইক নিয়ে চলে গেল। কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ ও মনে করলো না।”
“মতিন সাহেব, আহ্ ছাড়ো তো এসব জানোই তো ও এরকম।ও তো আমাদের মেয়ে না যেনো ছেলে। আর ছেলেদের কখন কোথায় যেতে হবে তা কি কাউকে বলে যেতে হবে__!”
“ফারজানা বেগম, হ্যাঁ মেয়েকে মাথায় তুলে রেখে দাও, বিয়ে দিতে হবে না তো। আমি তো ভাবি মাঝেমধ্যে এইরকম মেয়েকে কে বিয়ে করবে __!”
“মতিন সাহেব, কেন হাজার হাজার ছেলে আমার মেয়ের পিছনে ঘুরে। তুমি দেখে নিও আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ছেলের অভাব হবে না। তাছাড়া আমার মেয়ে কি দেখতে কম সুন্দর, মাশাআল্লাহ রাজকন্যাকে ও হার মানায়।”
“ফারজানা বেগম, হয়েছে মেয়ের এতো প্রশংসা করো না। এখন বল তোমার রাজকন্যা গেলেন কোথায় __!”
” মতিন সাহেব, কেন রাজকুমারের খুঁজে। মুখে একটা দুষ্টু হাসি দিলেন কথা টা বলে।”
“ফারজানা বেগম, মানে__! কিছু টা রাগি কন্ঠে।”
“মতিন সাহেব, একটু মুচকি হেসে বললেন আরে মজা করছিলাম। তারপর সবকিছু খুলে বললেন।”
‘
‘
এদিকে তানছিয়া বাইক নিয়ে বসে আছে মেইনরোড এর পাশে। বারবার কল করেই যাচ্ছে তামিন কে ।সে কল ধরছেই না।
(তামিন হচ্ছে ওর বয়ফ্রেন্ড।) হঠাৎ তামিন পিছন থেকে ওর চোখ চেপে ধরল।
“তানছিয়া, তামিন হাত সরাও আমি বুঝতে পারছি তুমি ই চোখ ধরেছো।”
“তামিন, চোখ থেকে হাত সরিয়ে বলল , কিভাবে বুঝলে__!”
“তানছিয়া, একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, মনের টানে।”
“তামিন,তা হঠাৎ ঘর ছাড়ার ইচ্ছে হলো কেন ম্যাডামের__!”
“তানছিয়া, বাবা কে বললাম এক লক্ষ্য টাকা দিতে আমাকে। দিবে না বললেই হতো উল্টো আরও প্রশ্ন করে কি করবো আমি টাকা দিয়ে। এতো টাকা কার জন্য এসব __! আমাদের জন্য ই তো, এই সামান্য কিছু টাকার জন্য এরকম ব্যবহার করার কি প্রয়োজন ছিল__!”
“তামিন, মনে মনে বলল এতো টাকা কে সামান্য টাকা বলছে।এতো শুধু বড়লোকের মেয়েদের মুখে ই শুভা পায়। তারপর বলল, হুমম তা ঠিক। আচ্ছা বাবাকে বল নি আমাকেও কি বলা যাবে না__!”
“তানছিয়া, কি__!”
“তামিন, এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবে__!”
“তানছিয়া, বড় করে একটা পার্টি দেবো ভাবছিলাম বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু বাবা কি করলো এটা এখন আমি সবাইকে কি বলবো। মুখ দেখাবো কিভাবে, আমি আমার কয়েকজন বন্ধু কে বলে ও ফেলেছি।”
“তামিন ,ওর পাশে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে শান্তনা দিল।”
তারপর দুজন মিলে ঠিক করলো আপাতত একটা হোস্টেলে উঠবে তারা। এবং বিয়ে করে নিয়ে পরবর্তীতে তামিনের বাসায় যাবে। তখন হয়তো ওর মা-বাবা ওদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
‘
‘
এইদিকে সকাল ১২টা বাজে কিন্তু তানছিয়ার বাসায় আসার নাম গন্ধ নেই। এইদেখে ফারজানা বেগম , স্বামীর কাছে ছুটে আসলেন ছাদে। মতিন সাহেব চেয়ারে বসে আরামসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন,আর পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন।আজ অফিসে যান নি তিনি তেমন কোন কাজ নেই তাই।
“ফারজানা বেগম, এখানে বসে আরাম করো, এদিকে যে মেয়ে এখনো বাসায় ফিরে নি তার খবর রাখতে হবে না।”
“মতিন সাহেব, স্ত্রীর কথা শুনে চায়ের কাপ টেবিলে রেখে পত্রিকা থেকে চোখ তুলে বললেন।কি বলছো ও এখনো বাসায় আসে নি__!”
“ফারজানা বেগম, না ।”
“মতিন সাহেব, ও তো কখনো এতো লেট করে না আজ কি হলো__! তুমি একটা কাজ করো তো ওর বান্ধবী কলিকে কল করে দেখো।”
“ফারজানা বেগম, ঠিক আছে, বলে চলে গেলেন।”
‘
‘ কিছুক্ষণ পর তামিম এর চিৎকারে মতিন সাহেব, দৌড়ে নিচে গেলেন। গিয়ে দেখেন ফারজানা বেগম নিচে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। তামিমকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে ওনার। তামিম বলল আব্বু ,আম্মু হঠাৎ করে পড়ে গেলো নিচে। কোনো রকম ওনাকে ধরে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলেন মতিন সাহেব। তামিমকে বললেন পানির গ্লাস নিয়ে আসতে। মুখে পানির ছিটা দিতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালেন। অতঃপর কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
মতিন সাহেব জানতে চাইলেন কেন কান্না করছেন তিনি।
‘
‘
“ফারজানা বেগম, তানছিয়া__?”
“মতিন সাহেব, কি হয়েছে তানছিয়ার_!”
“ফারজানা বেগম, তানছিয়া কাল কলির বাসায় যায় নি ।”
“মতিন সাহেব, কলির বাসায় যায় নি অন্য কারো বাসায় গেছে হয়তো।”
“ফারজানা বেগম,ওর সব বন্ধুদের ফোন দিছি ও কারো বাসায় যায় নি। তাছাড়া__!”
“মতিন সাহেব, তাছাড়া কি__!”
“ফারজানা বেগম, ওর রুমে এই চিরকুট টা পেলাম।”
মতিন সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন চিরকুট টা। মতিন সাহেব চিরকুট টা খুলে পড়তে পড়তে, চোখের কোণে জল জমতে শুরু করলো ওনার।
এই সামান্য কারণে সে ঘর ছেড়ে চলে গেছে। তাও একটা ছেলের সাথে ওনার যেনো কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তামিম, তানছিয়ার ছোট ভাই ।ও কি ই বা বুঝে তারপর ওর চোখেও জল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। সুখের সংসারে অশান্তির ছায়া নামলো।
‘
‘ এদিকে আজ একরাত পার হয়ে গেছে, যদিও তানছিয়ার সাথে খারাপ কিছু করে নি তামিন। তবুও একসাথে ছিল দুজন রাতে তামিন সোফায় ঘুমিয়ে ছিল।আর তানছিয়া বিছানায়। সকালে নাস্তা আনার জন্য বাইরে বের হলো তামিন , তানছিয়া কে হোস্টেলে রেখে। তানছিয়া হোস্টেলের রুমে বসে আছে রুমটা বড়সড় তবুও তার জন্য এই রুম যথেষ্ট নয়। ছোট বেলা থেকেই এর চাইতে দিগুন বড় রুমে থেকে অভ্যাস তার। মনে মনে রাগ হচ্ছে তানছিয়ার, কারণ তামিন বলেছে আজ ও এইখানে থাকতে হবে সারাদিন। রাতে ওর বন্ধুরা আসবে তারপর ওদের সাক্ষী রেখে বিয়েটা করবে। তানছিয়া মনে মনে ভাবছে, এই ছেলের সাথে বাকি জীবন কাটাব কিভাবে। হোস্টেলের ভাড়া এমন কি সকালের নাস্তার টাকা টা পর্যন্ত আমার কাছ থেকে নিলো। একটা টাকা ও নিজে খরচা করছে না। আমি ই বা কেন নিজের টাকা পয়সা নষ্ট করছি এইভাবে। তাহলে কি এটাই ভালোবাসা__!
সন্ধ্যায় ওর সব চিন্তা ভাবনা পাল্টে গেল তামিনের কথা শুনে।
চলবে__!