নতুন জীবন পার্ট;১১

0
1289

নতুন জীবন
‌ _______________
লেখিকা:বাবুনি
________________
(পার্ট:১১)

সকালে রাইফ ঘুম থেকে উঠে তানছিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।হাতের মুঠোয় তাসবিহ ধরে রেখে ঘুমিয়ে আছে তানছিয়া।রাইফ আনমনে বলে উঠলো,

– কি সুন্দর লাগছে তোমায়। একদম ভোরে ফুটে উঠা কোনো অপরুপ সুন্দর ফুল।যার গায়ে কোনো পাপ নেই একদম নিষ্পাপ। হাতের তাসবিহ তার প্রমাণ বহন করছে। যদিও আমি জানি তুমি তাসবিহ পড়তে জানো না। সমস্যা নেই। আমি শিখিয়ে দিবো আজ।লাভ ইউ আমার কিউট পাগলি বউ টা।

এসব কথা বলে,সে বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
তানছিয়া এবার চোখ খুললো আর মনে মনে বলল,
– বজ্জাত বেটা কি লুচ্চামি করছে। লুকিয়ে চুরের মতো আমাকে দেখছিল। আবার প্রশংসা করতে আসছে আমার। আমি না কি পাগলি বউ, দাঁড়া তোর বউ বলা আমি ছাড়াচ্ছি।

‘ রাইফ, ওয়াশ রুম থেকে বের হলে।তানছিয়া ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে চলে গেল ওয়াশ রুমে।
রাইফ বলল, জানি তো তুমি কেন এমন করলে। আমার সব কথা শুনে নিয়েছো তাই না।ভালোই হলো, তোমার জানা হয়ে গেল আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তানছিয়া, ওয়াশ রুম থেকে বের হলে, দুজন কেউ কারো সাথে কথা না বলে নামাজ আদায় করে নিলো।
তারপর তানছিয়াকে পড়া শিখিয়ে দিলো রাইফ। তানছিয়া একমনে পড়ে যাচ্ছে,আর রাইফ আড়চোখে ওকে দেখছে। তাসবিহ পড়া ও শিখিয়ে দিলো রাইফ আজ।

পড়া শেষ হলে রাইফ নাস্তা করে রেডি হলো অফিসে যাওয়ার জন্য। তারপর তানছিয়াকে নামাজ পড়ে পড়তে বসতে বলে সে চলে গেল।
তানছিয়া কোনো কথা বলল না রাইফের সাথে শুধু ওকে বলল।


‘ রাইফ অফিসে বসে বসে ভাবছে, আজ ই তানছিয়াকে নিয়ে গেইম টা খেলতে হবে। এভাবে তো চলা যায় না,তাই না!

তানছিয়া, নামাজ পড়ে আরবি পড়া গুলো রিভিশন দিয়ে নিলো। তারপর ফোন টা হাতে নিয়ে নিজের ফেইসবুক একাউন্টে ঢুকলো।
কিছু একটা ভেবে নিজের সব পিক ডিলিট করে দিলো আইডি থেকে। তারপর কিছু বাজে আইডি ব্লক করছিল, হঠাৎ ই ফোন টা বেজে উঠলো। নাম্বারের দিকে চোখ পড়তেই বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলো।

– এ কি এটা কিভাবে সম্ভব! আমি কি ফোন টা রিসিভ করবো_! না করবো না।
এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন টা কেটে গেলো। তারপর একটা মেসেজ আসলো এই নাম্বারে।

‘ আমি জানি তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গে সুখী নয়। তুমি আমার ই অপেক্ষায় প্রহর গুনছো। তোমার স্বাধীনতা তুমি হারিয়ে ফেলেছো। একমাত্র আমিই পারি তোমার স্বাধীনতা তোমায় ফিরিয়ে দিতে। যদি তুমি এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাও। তাহলে কাল চলে এসো এই ঠিকানায় আমার কাছে_——–।’

তানছিয়ার বুঝতে বাকি রইল না কে এই মানুষ টা। কারণ এই মানুষ টা কে সে ৫০ বছর পর ও চিনতে পারবে। মানুষ টা যে অন্তরে গেঁথে আছে।বেশ খুশি হলো তানছিয়া সেই পুরনো ঠিকানা টা দেখে।
আনমনে হেসে উঠে বলল,
– তুমি আসলেই আমায় অনেক ভালোবাসো।তা না হলে এমন করে আগের পুরোনো ঠিকানায় যেতে বলতে না।

তানছিয়া খুশিতে ফোন টা বুকের সাথে চেপে ধরলো।
ইতিমধ্যে রাইফ চলে আসলো রুমে। তানছিয়া এমন হঠাৎ করে রাইফের আগমন আশা করে নি। ফোন টা বিছানায় রেখে বলল,
-” আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে_!”
-” ঘরে এতো মিষ্টি একটা বউ রেখে কি করে অফিসে থাকি বলো।(কথা টা একটু আস্তে আস্তে বলল।)”
-” মানে_!”
-” মানে কিছু না ম্যাডাম তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।আজ মার্কেটিং করেছি সবার জন্য তাই তোমার জন্যে ও করলাম।আর সেই জন্য ই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলাম।
এই নাও তোমার জিনিস।”
তানছিয়ার দিকে শপিং ব্যাগ টা বাড়িয়ে দিল।
তানছিয়া হাতে নিতেই ,সে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
-তানছিয়া হ্যাঁ করে তাকিয়ে রইল।কি আজব মানুষ আমি কত খারাপ ব্যবহার করি লোক টার সাথে।অথচ লোকটা আমার জন্যে ও মার্কেট করেছে। আমার জন্য না আনলে কি হতো_! সত্যি তুমি অনেক বুঝো অনেক বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।

পরক্ষনেই তার খারাপ লাগতে শুরু করলো।
একটু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
– সরি রাইফ আমি তোমার হয়ে থাকতে পারবো না।আর না তো আমি তোমাকে ভালোবাসি না তো কোনোদিন বাসতে পারবো।
আমি জানি কাল তুমি অনেক কষ্ট পাবে, তোমার ফ্যামিলি ও অনেক মর্মাহত হবে। কিন্তু তোমার এবং তোমার ফ্যামিলির সুখের জন্য। আমি আমার সুখ বিসর্জন দিতে পারবো না।
আমি আমার সুখের সংসার শুরু করতে যাচ্ছি আগামী কাল। দোয়া করি খুব শিগগিরই যেনো, তুমি ও তোমার সুখের সংসার শুরু করতে পারো।
পিছনে দাঁড়িয়ে রাইফ বলল,
-” অবশ্যই শুরু করবো।”
তানছিয়ে ভয় পেয়ে গেলো এবং আমতা আমতা করে বলল,
-” কি_!”
-” তুমি যা বলছিলে_!”
-” মানে_!”
-” মানে কি আবার তোমার তো কায়দা পড়া শেষ হবে আজ, এখন নাদিয়া কায়দা পড়ানো শুরু করবো।এটাই তো বলছিলে তাই না_!”

তানছিয়া মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।যাক রাইফ তাহলে শুনেনি সবকিছু।

-” কি হলো চুপ করে আছো যে_!”
তানছিয়া ভাবনার জাল ছিন্ন করে বলল,
-” হ্যাঁ এটাই বলছিলাম।”
রাইফ একটু হাসি এনে মুখে বলল,
-” চলো তাহলে পড়া টা নিয়ে নেই।”
-” কিন্তু আপনি তো অফিস থেকে এসে কিছু মুখে দেন নি এখনো।”
-” নাহ খেলেও চলবে তোমাকে হারানোর ভয় টা কাজ করছে, এখন খাবার ভেতরে যাবে না।”
-” কি বলছেন বিড়বিড় করে, খেয়ে নেন আগে তারপর পড়া দেবো।”
-” কিছু না বলছি যে খাবার টা কি আজ তুমি
বেড়ে দিবে_! প্লিজ না করতে পারবে না। তুমি খাবার বেড়ে দিয়ে সামনে বসবে আর আমি খাবো।”
-” কি সব বাচ্চাদের মত বায়না ধরছেন_!”
-” হ্যাঁ আমি বাচ্চা এখন বাচ্চাদের আবদার তো রাখতেই হয়।সো প্লিজ আমার এই আবদার টুকু রাখো।”
-” ঠিক আছে,এতো করে যখন বলছেন। চলুন তাহলে।”
-” থ্যাংকস ম্যাডাম থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
তানছিয়া মিষ্টি একটা হাসির রেখা টেনে ঠোঁটে,ভাত বাড়তে লাগলো।
রাইফ একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-” হাসি টা কিন্তু দারুন।”
তানছিয়া একটু রাগি কন্ঠে বলল,
-” কি_!”
-” যা সত্যি তাই বললাম।”
-” এতো কথা না বলে ভাত খেয়ে নিন।আম্মু বলেছে খাবার সময় এতো বক বক করতে নেই।”
-” আর আম্মু এটা বলেনি স্বামীর থেকে এতো দূরে দূরে থাকতে নেই।এতে করে স্বামী অন্যকারো হয়ে যেতে পারে।”
তানছিয়া একটু গম্ভীর গলায় বলল,
-” আপনি কি এখন কথা বলতেই থাকবেন না কি খাবেন।যদি কথা বলতে ই থাকেন তবে আমি গেলাম।”
-” না না এই যে খাচ্ছি। প্লিজ যেও না।”

রাইফ , চেয়ারে বসে খাচ্ছে, এবং একটু পর পর তানছিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। আর পাশেই তানছিয়া একরাশ বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।
একটু পর রাইফ এক লোকমা খাবার হাতে নিয়ে,তানছিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
তানছিয়া বসা থেকে উঠে গেলো। এবং বলল,
-” আপনি কিন্তু এবার ধৈর্য্যহীন করে দিচ্ছেন এবার আমাকে। আপনার আমার চুক্তির সীমা অতিক্রম করবেন না। মাইন্ড ইট।”
কথা গুলো বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো তানছিয়া।রাইফ, কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো।
খাওয়া শেষে রুমে এসে দেখলো , তানছিয়া ফোন টিপতে ব্যস্ত।
এদিকে তানছিয়া ঐ নাম্বারে টেক্সট দিলো,

‘ আমি কাল খুব ভোরে আসবো তুমি ও ঐখানে উপস্থিত থেকো।আর হ্যাঁ বিয়ে টা কিন্তু ঐ মুহুর্তেই করে নিবো আমরা।’

রাইফ হালকা কাশি দিয়ে বলল,
-” সরি।”
তানছিয়া ফোন টা হাত থেকে সরিয়ে বলল,
-” সরি কেন।”
রাইফ একটু গম্ভীর গলায় বলল,
-” একটু আগের ঘটনার জন্য। আসলে স্ত্রী কে খাইয়ে দেওয়া ও সুন্নাত তো তাই। কিন্তু আমি সরি বিশ্বাস করো আমার মনে ই ছিল না তখন। তুমি যে আমার সত্যিকারের স্ত্রী নয়,এসব জাস্ট অভিনয়।”
তানছিয়া বুঝতে পারলো রাইফ কষ্ট পেয়ে কথা গুলো বলছে।
-” ইটস্ ওকে, চলুন পড়া নিবেন।”
-” হুঁ চলো।”

একটু পর ওর শাশুড়ি শিরীনা বেগম রুমে আসলেন। এবং বললেন,
-“রাইফ পড়ানো শেষ কর তাড়াতাড়ি।বউমার সাথে আমার একটু দরকার আছে।
রাইফ একটু অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” ঠিক আছে মা আমি পরে পড়া নিবো, তুমি কথা বলে নাও। আমি বাইরে যাচ্ছি।”
রাইফ চলে গেলে,শিরীনা বেগম তানছিয়াকে চোখ বন্ধ করতে বললেন।
তানছিয়া অবাক হয়ে জানতে চাইলে কেন_!
তিনি বললেন,
-” বোকা মেয়ে চোখ বন্ধ করো আগে পরে বুঝতে পারবে।”
তানছিয়া আর কথা বাড়ালো না।ওর শাশুড়ি ওর গলায় হাত স্পর্শ করে কি যেনো করলেন। এবং পরে বললেন,
-” এবার চোখ খুলো মা।”
তানছিয়া চোখ খুলে নিজের গলায় হাত বুলিয়ে তাকিয়ে দেখলো। খুব সুন্দর ডিজাইন করা একটা সোনার চেইন ওর গলায় ঝুলছে।
ও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” এটা কেন আম্মু_!”
-” বাহ্ রে মা বুঝি মেয়েকে গিফট দিতে পারে না।আর শুনো পাগলি মেয়ে এইরকম আমি বড় বউমাকে ও গিফট দিয়েছি। তোমাকে ও আজ দিলাম, ভালোবেসে ছেলের বউ করে এনেছি তোমাকে। দুইনজরে দেখি কি করে!”
-” আম্মু সত্যি অনেক ভালো আপনি।”
-” হয়েছে এতো প্রশংসা করতে হবে না। শুধু বাবার বাড়ি যাবার, বায়না ধরো না সবসময় এই বুড়ো মাকে রেখে। আমি চাই আমার বউমারা আমার চোখের সামনে থাকুক সবসময়। ঘর টা হাসি খুশিতে ভরে রাখুক।”

তানছিয়া মাথা নাড়ল। তারপর মনে মনে বলল, আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না আম্মু।কাল ই এই বাড়ির মায়া ত্যাগ করতে হবে আমাকে। কিন্তু আমি তো আরো বেশি মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি।

‘ রাতে নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে,পড়তে বসলো তানছিয়া। আচমকা রাইফ ওর হাত ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। তারপর আবার ছেড়ে দিয়ে ছাদে চলে গেলো।
যার কোনো মানে বুঝতে পারলো না তানছিয়া। তানছিয়া ভাবলো হয়তো বা আমার আজকের ব্যবহারের জন্য কষ্ট পেয়েছে লোক টা।তাই হয়তো এরকম করছে, কিন্তু আমার কিছু করার নেই। তানছিয়া পড়া শেষ করে
ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ঘুম আসছে না ,আর সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।তাই আর ঘুমাবে না ঠিক করলো।

রাইফ, প্রায় রাত ২টার সময় রুমে আসলো এবং চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ল।তানছিয়া সব টের পেয়ে ও ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো।

চলবে_!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে