ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৯
– পাপড়ি, ফুচকা খাবি?
– খাবো না মানে, তুই খাওয়াবি নীল?
– হুম।
– বাহ! কতো ভালো তুই।
– হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। বোনাস পেয়েছি তাই বললাম। নাহলে তোর মতো শাকচুন্নিকে ফুচকা খাওয়াবে কে?
– এ্যাহ, যে ভাব ধরেছে মনে আমার কাছে ফুচকা খাওয়ার টাকা নাই।
– নাই তো, প্রমোশন যে পেলি একবারও ট্রিট দিছস? কিপটা একটা।
– কিহ! আমি কিপটা। চল আজকেই ট্রিট দিবো তোকে।
– নাহ! লাগবে না তোর ট্রিট।
– ট্রিট তো আমি তোকে আজ দিয়েই ছাড়বো। আমাকে কিপটে বলা।
বলেই পাপড়ি নীলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
দূর থেকে তাদের দেখছে রাইয়ান। তাদের এমন হাসাহাসি করতে রাইয়ান ভেবে নিয়েছে যে নীল পাপড়ির বিএফ। নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। মনের সব আনন্দ দুঃখে পরিণত হয়ে গেলো। নিরাশ হয়ে গাড়িতে ওঠে চলে যায় বাসায় রাইয়ান।
আজও একটা বিয়ের সমন্ধকে তুই রিজেক্ট করেছিস। এমন করলে তোর তো বিয়েই দিতে পারবো না।
দাদী এমন কথায় মনে মনে খুশিই হচ্ছে পুষ্প।
– আমি তো তাই চাই দাদী। আমার বিয়ে না হোক।
– দেখেছো তোমার মেয়ের কথা বউমা, কি বলছে। একে কি তুমি বিয়ে-সাদি দিবে নাহ?
– দেবো মা। কিন্তু আজকের বিয়ের সমন্ধটা আমারো এতো ভালো লাগে নি।
– টেনটেনা…… অনেক হয়েছে বিয়ের আলাপ। এখন দেখো আমি কি নিয়ে এসেছি?
পাপড়ি এমন কথায় সবাই পাপড়ির দিকে তাকালো।
-মা এই নাও। এগুলো তাড়াতাড়ি সার্ব করো তো। আমি ফ্রেস আসছি।
– এগুলো আবার কী?
– আরে মা, বিরিয়ানী এনেছি গো বিরিয়ানী আর সাথে ফুচকা।
ফুচকার কথা শুনে দাদীর মুখে হাসি দিয়ে বললো
– কতদিন হলো ফুচকা খাই না।
– হুম, জানি তো আমার দাদীর ফুচকা পছন্দ তাই একটু বেশিই এনেছি।
– তা কোন খুশিতে এসব এনেছি?
পাপড়ি পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
– প্রমোশনের ট্রিট মনে করতে পারিস, আপু।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে রাইয়ান
– অনেক লেট করে ফেলেছি। আর একটু আগে কিছু করতে পারলে হয়তো আজ অন্য কাহিনী হতো।
হঠাৎ শায়নের ফোন আসে
– হ্যালো
– কিরে বলেছিস?
মুখটা কালো করে রাইয়ান বললো
– নাহ! ওর বয়ফেন্ড আছে।
– হাই পোড়া কপাল তোর। আচ্ছা, কষ্ট পাস না। এমন অনেক মেয়ে পাবি জীবনে।
– হুম।
– আর ভাবিস না, ঘুমিয়ে পড়। রাখি।
অফিসে বসে বসে ফোন ঘাটছে রাইয়ান। খুব বোরিং লাগছে তার। প্রতিদিনের মতো আজ তার পাপড়ি চেহেরা দেখে মন ভালো হচ্ছে। পাপড়িকে ইচ্ছে করেই দূরে দূরে রাখছে নিজের কাছ থেকে।
পাপড়ির কাছেও রাইয়ানের বিহেভ অদ্ভুত লাগছে। অন্যদিনের মতো আজ তার সাথে ভালো করে কথা বলছে না, তার কথা ভালো করে শোনছে না। তাকে কেমন ইগনোর করে চলছে রাইয়ান।
দেখতে দেখতে অফিস ছুটির টাইম হয়ে এসেছে। ক্যাবিনের জানালা দিয়ে রাইয়ান লক্ষ্য করলো সেই ছেলেটি আজকেও অফিসের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। মুখটা বিষম করে বললো
– পুষ্পের জন্যই অপেক্ষা করছে ছেলেটা।
-মে আই কামিন, স্যার
-ইয়েস পুষ্প।
– স্যার, একটা কথা বলবো?
– বলো?
– আপনার কি মন খারাপ?
পাপড়ির মুখে তাকিয়ে রাইয়ান আস্তে করে বললো
– নাহ।
-তাহলে হঠাৎ এতো চুপচাপ হয়ে আছেন যে?
রাইয়ান মনে মনে বলছে, উফ এতো প্রশ্ন করে কেনো মেয়েটা? মনটা তো ভেঙ্গে দিয়েছে এখন জানতে আসছে আমার মন খারাপ কিনা।
– কি হলো স্যার, কিছু বলছেন না যে?
– এমনি কথা বলছি না, তোমার কোনো সমস্যা তাতে?
একটু রাগী স্বরেই কথাটা বললো রাইয়ান।
– না মানে, সমস্যা নেই। আমি সব কাজ শেষ করে ফেলেছি, স্যার। আমি আসি তাহলে?
রাইয়ান একবার জানালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,
বিএফ এর সাথে দেখা করার জন্য কতো তাড়া মেয়েটার, দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
– শুনো পুষ্প, এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো?
– স্যার, আমি চা বানাবো?
– হ্যা তুমি। তোমার কি কোনো সমস্যা হবে তাতে?
– না মানে, এখন তো অফিস ছুটি হয়ে গেছে। আপনি বাসায় গিয়ে না হয়….
– তোমাকে আমার পিএ কেনো বানিয়েছি? আমার সব কিছুর খেয়াল রাখার জন্য, নাকি আমাকে উপদেশ দেওয়ার জন্য। যাও, চা বানিয়ে নিয়ে এসো।
পাপড়ি হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একবার, চা বানাতে গেল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অফিসের বাহিরে নীল দাড়িয়ে দাড়িয়ে পাপড়ির অপেক্ষা করতে লাগলো।
– উফ, এই মেয়েটা আসছে না কেনো? সবাইকেই তো দেখছি বের হচ্ছে শুধু পাপড়িকে দেখছি না। ভালো লাগে না আর এভাবে দাড়িয়ে থাকতে।
এদিকে পাপড়ি চা বানাতে গিয়ে দেখে চায়ের লিগার শেষ হয়ে গেছে।
-ধ্যাত, লিগারটাও এখনি শেষ হতে হলো? ঐদিকে নীল বাহিরে অপেক্ষা করছে। বেশি দেরি হলে পরে আমার রক্ত চুষে খাবে।
এসব বলতে বলতে চায়ের লিগার বানাছে।
কিছুক্ষণ পর চা বানিয়ে পাপড়ি ক্যাবিনে আসলো
– মে আই কামিন, স্যার?
– হুম আসো।
– স্যার, আপনার চা।
এমন সময় পাপড়ির ফোনে কল আসে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নীল কল দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফোনটা কাট করে দেয় সে।
বেচারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে নিচে। স্যারের সামনে ফোনটাও ধরতে পারছি না।
মনে মনে বলছে পাপড়ি।
রাইয়ান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পাপড়িকে দেখছে।
– পুষ্প, আমার ঐ ডেস্কের ফাইলগুলো নিয়ে আসো তো?
– জ্বী স্যার।
পেছনে ফিরেই পাপড়ি মনে মনে বলছে আজকে স্যার কি আমায় বাসায় যেতে দিবে না? নীল হয়তো অনেক রেগে আছে। আমাকে কাঁচা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে আজ নীল।
– কি হলো, দাঁড়িয়ে আছো যে?
– হ্যা স্যার, যাচ্ছি।
এমন সময় আবার নীলের ফোন আসে। পাপড়ি আবার ফোন কাট করে দেয়।
ফাইলগুলো তাড়াতাড়ি নিয়ে দেয় রাইয়ানকে।
একটুপর আবার ফোন বাজে পাপড়ির। ফোনটা কাট করতেই রাইয়ান আড়চোখে একবার পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
– বারবার কি তোমার বয়ফেন্ড কল করছে?
বয়ফেন্ডের কথাটা শুনে পাপড়ি চমকে ওঠে।
– বয়ফেন্ড?
– অফিসের বাহিরে যে ছেলেটা দাড়িয়ে থাকে রোজ তোমার জন্য সেই তো কলটা করছে?
পাপড়ি কিছুটা অবাক হয়ে বলে
– সে আমার বয়ফেন্ড হতে যাবে কেনো,স্যার।
সে তো আমার কাজিন, নীল। আমাদের অফিস পাশাপাশি বলে আমরা একসাথে যাওয়া আসা করি।
কথাটা শুনে রাইয়ান মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। চায়ের কাপটা হাত থেকে রেখে দাড়িয়ে ওঠে বলে,
– সত্যিই কি তাই?
রাইয়ানের এমন অবস্থা দেখে পাপড়ি কিছুটা অবাক হয়ে বলে
– হুম সত্যি।
রাইয়ান নিজের ইমোশনগুলো আর ধরে রাখতে পারবে না পাপড়ির সামনে তাই সে পাপড়িকে বলে,
– ওহ, তাহলে তুমি বাসায় যাও এখন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– কিন্তু স্যার, এগুলো..
– এগুলো আমি করে নিবো। তুমি বাসায় চলে যাও।
একটু আগেই তো স্যার একদম চুপচাপ হয়ে ছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিলো মুড ভালো না হঠাৎ স্যারের এমন মুড চেঞ্জ হলো কিভাবে কিছু বুজতে পারলাম না।
এই কথাগুলো ভাবতে পাপড়ি অফিস থেকে বের হয়।
দূর থেকে পাপড়ি আসতে দেখে নীল দৌড়ে পাপড়ির কাছে যায়
– কিরে, কোথায় ছিলি? বারবার কল কেটে দিচ্ছিলি কেনো?
কিছুটা রেগেই বললো নীল।
– সরি। আমার কাজ শেষ করতে করতে একটু লেট হয়ে গেছে। আর তুই যখন ফোন দিচ্ছিলি তখন আমি বসের সামনে ছিলাম, তাই কল কাট করচ্ছিলাম।
– ওহ! আচ্ছা এখন চল।
পাপড়ির কোন বয়ফেন্ড নেই জানতে পেরে রাইয়ান মহাখুশি। আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। কি করবে সে বুজতে পারছে না এখন। হঠাৎ তা