ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৮
– দাড়াও,কোথায় যাচ্ছো পুষ্প?
রাইয়ানের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর খুজে পাচ্ছে না পাপড়ি। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
রাইয়ান আবার বললো
– আমার সাথে আসো।
রাইয়ান অফিসের ভিতর যেতেই সবাই চুপচাপ হয়ে যায়। রাইয়ান ঐ দুটো মেয়েকে কাছে ডেকে বললো
– তা এতোক্ষণ তো খুব ভালোই ভাষণ দিলেন দেখলাম। তো তখন কোথায় ছিলেন আপনারা যখন পুষ্প অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো? আপনাদের যখন আমার জন্য এতোই কষ্ট হয়েছিল তো ঐদিন কেনো এসে পুষ্পকে ধরলেন না ? ঐদিন তো আপনারা আমাদের নিয়ে হাসি-তামশায় মেতে ছিলেন, কোথায় কেউ এসে আমাকে একটু সাহায্য করলেন না?
– না মানে স্যার!
– আর কি বললেন, থার্টক্লাস মেয়ে? ও যদি থার্টক্লাস মেয়ে হয় তো আপনারা কি? ধোয়া তুলসি পাতা? এই অফিসে কে কেমন তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। পুষ্পর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমার কর্তব্য হিসেবে আমি তাই করতাম যা ঐদিন পুষ্পর সাথে করেছি। আর মনে রাখবেন, পুষ্প এখানে নিজের যোগ্যতায় এসেছে, কারো সুপারিশে নয় যে যার যা মনে হয় তাকে তাই বলতে পারবেন। সে নতুন জয়েন করছে বলে তাকে আপনারা এসব কথা শুনানোর কোন অধিকার পান না। আই ওর্য়ারিং ইউ এন্ড অল, নেক্সট টাইট থেকে কেউ যদি পুষ্পর সাথে এমন বাজে বিহেভ করেছে তো তার চাকরি চলে যাবে। আর পুষ্প তুমি তোমার কাজ করো, আর কেউ যদি তোমাকে কিছু বলে তো আমাকে বলবে।
বলেই হনহনিয়ে নিজের ক্যাবিনে ঢুকে পড়ে রাইয়ান।
রাইয়ানের কথা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেছে। আর তা দেখে পাপড়ির মনে শান্তি আসে। তার প্রতি রাইয়ানের এমন সিনসিয়ারিটি দেখে পাপড়ি মুগ্ধ। তবে মনের ভিতর একটা খোট রেখেই গেলো যে সে এখানে নিজের যোগ্যতায় নয়, তার বোনের যোগ্যতায় এসেছে।
ক্যাবিনে গিয়ে চেয়ারে বসে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে রাইয়ান। এক গ্লাস পানি এক ঢুকে খেয়ে নিল সে।
পুষ্পর অপমান আর তার চোখের জল একবারেই সহ্য করার মতো ছিলো না তার কাছে। রাগের মাথায় যা এসেছে তাই বলে এসেছে বাহিরে। কিন্তু এমন কেনো হলো তার সাথে? ওর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও কি সে তাই করতো?
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে রাইয়ান।
৩ মাস পার হয়ে যায়। পাপড়ির কঠোর পরিশ্রম দিয়ে কাজ করায় সে ৩ মাসেই প্রমোশন পেয়ে যায়। রাইয়ান তাকে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট বানিয়েছে, যেন সবসময় পাপড়িকে চোখের সামনে দেখতে পারে। পাপড়িকে দেখলে রাইয়ানের মনটা ভালো থাকে।
এ ৩ মাসে পুষ্পর জন্য অনেক বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছে তার দাদী। তবে পুষ্প সব সমন্ধকেই কোন না কোনভাবেই ভেঙ্গেই দেয়।
পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে কখন ল্যাংরা হওয়ার অভিনয় করে পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটা শুরু করে, কখনো পাগল সেজে সামনে যায় আর কখনো বা পাত্রপক্ষকে ভয় দেখিয়েই বিদায় করে দেয়। তার এসব আচরণের জন্য অনেক বকাও খেয়েছে মা আর দাদীর কাছে সে।
পুষ্প জীবনে তার পরিবারের দায়িত্ব ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব কাধে নিতে চায় না। সে মা,দাদী,পাপড়িকে ছাড়া আর কোথাও যেতে চায় না।
তবে ঘটক আর দাদী পুষ্পর বিয়ে করিয়ে ছাড়বে বলেই পণ করে বসেছে।
রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করছে রাইয়ান আর তার বন্ধু শায়ন। অনেকদিন পর তারা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।
– তো বিয়েটা করছিস কখন, রাইয়ান?
কথাটা শুনে রাইয়ান ভ্রু কুচকে তাকায় শায়নের দিকে।
– নিজের বিয়ে খেয়ে ইচ্ছা মিটে নি যে এখন আমার বিয়ের কথা বলছিস?
– আরে, বন্ধুর বিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।
– আমি এখন বিয়ে টিয়ে করছি না।
– তো একটা প্রেম টেম কর, আর কতোদিন সিংগেল থাকবি? কোনো মেয়েকেই কি তোর পছন্দ হয় নি কখনও?
– পছন্দ হয় নি এমন না।
– তার মানে কাউকে পছন্দ করিস?
– হুম।
– কাকে? কোন মেয়ে? কি করে? কোথায় থাকে?
– শান্ত হ। বলছি। মেয়েটির নাম পুষ্প। আমার অফিসেই কাজ করে আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে।
– বাহ! কতোদিন ধরে চলছে প্রেম? আমাকেও একটু পরিচয় করিয়ে দিস?
– আরে, আমি এখনো প্রোপজই করতে পারি নি সে আসছে প্রেম নিয়ে।
– তোর কাছে এটাই এসপেক্ট করছিলাম আমি। তোর মতো ভিতু আমি এর আগে দেখি নাই।
– এই আমি ভিতু না, বুজসিস। শুধু সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় আছি।
– তা মহাশয়, সেই সুযোগটা কখন আসবে শুনি, মেয়েটা যখন অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যাবে তখন?
– না মানে, আমি কিভাবে শুরু করবো তাই তো বুজতেসি না। তুই একটু হেল্প কর?
– তুই একটা কাজ কর। মেয়েটাকে ডিনারে নিয়ে যা। সেখানে সুযোগ বুঝে প্রোপজ করে ফেলিস।
– ওকে।
সকাল থেকে পাপড়ি জন্য অপেক্ষা করছে রাইয়ান। কিভাবে ডিনারের কথাটা বলবে তার বারবার প্রেকটিসও করছে। নিজেকে অনেকভাবে তৈরি করছে। কখন আসবে যে পুষ্প।
একটুপরই পাপড়ি চলে আসে অফিসে। সে এসেই নিজের কাজ শুরু করে দেয়। রাইয়ান পাপড়িকে ডাক দেয়।
কিভাবে কথাটা শুরু করবে বুজতে পারছে না সে।
– তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো পুষ্প?
– জ্বি বলেন, স্যার?
মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে যেই কথাটা বলতে যাবে তখনি ক্লায়েন্টের ফোন আসে। রাইয়ান ফোনটা কেটে আবার বলতে যাবে,
আবার ফোন আসে।
বাধ্য হয়েই ফোনটা রিসিভ করে রাইয়ান। ফোনে কথা শেষ করে পেছনে ফিরতেই দেখে পাপড়ি অন্য কাজে বিজি হয়ে গেছে।
রাইয়ান আবার ডাক দিতে যাবে তখনি একজন স্টাফ পাপড়িকে ডেকে নিয়ে যায়।
– উফ! সুযোগই পাচ্ছি না একটু কথা বলার জন্য। আমি বরং অফিস ছুটির পরই পুষ্পকে বলবো তখন কেউ আর ডিস্টার্ব করতে আসবে না।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে রাইয়ান। কোন কাজেই তার মন বসছে না তার। কখন অফিস ছুটি হবে সে অপেক্ষায় আছে সে।
– এখনো দশ মিনিট বাকি। এই দশ মিনিট দশ ঘন্টা লাগছে আমার কাছে।
– মে আই কামিন, স্যার?
– হে, আসো পুষ্প।
– স্যার আমি সব কাজ শেষ করে ফেলেছি। আর কোনো কাজ থাকলে বলবেন।
– নাহ, আর কাজ নেই। আসলে, একটা কথা….
বলতেই শায়নের ফোন আসে।
– স্যার, আপনি ফোনে কথা বলেন আমি আসছি।
বলেই চলে যায় পাপড়ি।
-ইশ, এরও এখনি ফোন দিতে হলো।
হ্যালো।
– কিরে, বলেছিস?
– কিভাবে বলবো? বলতে যাবো তখনি তোর ফোন চলে আসলো।
– সেকি এখনো এখনি বলিস নি। তোর মতো মানুষ হয় না বটে।
– এখন কি ফোনটা রাখবি? নাহলে আর বলা হবে না আমার।
– আচ্ছা রাখি।
ফোনটা রেখেই রাইয়ান দেখলো অফিস ছুটি হয়ে গেছে। ক্যাবিন থেকে বের হয়ে দেখে সবাই অফিস থেকে বের হচ্ছে কিন্তু পুষ্প কোথায়?
বাহিরে তাকিয়ে দেখলো পাপড়ি বাহিরে চলে গেছে।
রাইয়ান দৌড়ে বাহিরে গিয়ে ডাক দিবে এমন সময় দেখতে পেল পাপড়ি একটা ছেলের কাছে গিয়ে দাড়ালো। তারা একসাথে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে।
চলবে….