ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্ব- ৭
অফিসে বসে বসে পাপড়ির কথা ভাবছে নীল। আমি যদি পাপড়িকে বৃষ্টিতে ভিজতে বারণ করতাম তাহলে হয়তো আজকে এতো জ্বর ওঠতো না ওর। না জানি কেমন আছে এখন মেয়েটা। যাওয়ার সময় মেয়েটাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যাবো বাসায়।
ডাক্তার পাপড়িকে একটা ইনজেকসন দিয়ে আর কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বললো
– চিন্তা করবেন না, একটু পরই জ্ঞান ফিরবে। জ্বরটা মাথায় চড়ে গেছিলো বিধায় এ অবস্থা হয়েছে। এই ঔষধগুলো খেতে বলবেন আশা করি একদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।
একটুপরই পাপড়ির জ্ঞান ফিরে। পাশে রাইয়ান আর নিজেকে হসপিটালে দেখে চমকে ওঠে বসতে চাইলে রাইয়ান বলে ওঠে
– কি করছো, ওঠো না। শুয়ে থাকো কিছুক্ষণ। ডাক্তার তোমাকে ইনজেকশন দিয়েছে। একটু রেস্ট নাও তারপর তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো।
– আমার কি হয়েছিলো স্যার?
– তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলে। আর ডাক্তার বলছে এখন তুমি আগের থেকে বেটার আছো।
-হুম।
-কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, শাকচুন্নি ফোনই ধরছে না। অফিস তো ছুটি হয়ে গেছে দেখছি কিন্তু পাপড়িকে তো কোথাও দেখছি না।
মাথায় চিন্তার ছাপ নিয়ে কথাগুলো বলছে নীল।
গাড়ি থেকে আস্তে আস্তে নামলো পাপড়ি।
-এখন বাসায় যেতে পারবে তো?
রাইয়ান প্রশ্ন করলো পাপড়িকে।
-হুম। পারবো। আপনিও বাসায় আসেন, একটু চা-নাস্তা করে যান?
-নাহ। আজ নয়, আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্য একদিন না হয় আসবো।
রাইয়ানের এমন কথায় পাপড়ি মনে মনে খুশিই হয়েছে। কারণ বাসায় গেলে তার নামের রহস্যটা হয়তো রাইয়ান জেনে যেত।
-আর শোনো, একদম সুস্থ হয়ে অফিসে আসবে। আর ঔষুধ গুলো ঠিকমতো খেয়ে নিও কেমন?
– ওকে স্যার।
– তাহলে আমি আসি।
বলেই রাইয়ান চলে গেল। পাপড়িও বাসায় চলে যায়।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ।
– এই সন্ধ্যাবেলায়, কে আসলো আবার?
আফিয়া বেগম বলতে বলতে দরজা খুলে অবাক হয়ে বলে
– নীল!
– জেঠিমা, তোমার মেয়ে কই?
রাগী কন্ঠে কথাটা বলে নীল।
– কোন মেয়ে?
– আরে ঐ শাকচুন্নিটা কই?
– ওতো রুমে
নীল আর কিছু না বলে হনহনিয়ে পাপড়ির রুমে ঢুকে। নীলের পেছন পেছন আফিয়া বেগমও যায়।
নীলকে দেখেই পাপড়ি জিহ্বা কামড় দেয়।
– এই শাকচুন্নির বাচ্চা, তুই চলে এসেছিস এটা আমাকে ফোন করে বলিস নি কেনো? তোর ফোন কই? কতগুলো ফোন করছি দেখতো? আমার ফোনটা কি তোর একবারো ধরতে ইচ্ছা হয় নি? সেই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোর অফিসের বাহিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছি তোর জন্য। আর তুই বাসায় এসে পায়ের ওপর পা তুলে বিশ্রাম করছিস?
অনেকটা রাগ নিয়েই কথাটাগুলো বলেছে নীল।
পাপড়ি কিছুটা অনুনয়ের কন্ঠে বললো
– সরি, আমার তোর কথা একদম মনে ছিলো না। আর ফোনটা ব্যাগেই পড়ে আছে তোর কল দেখতে পারি নি। মাফ করে দে আমায়?
– এই কাজটা তুই মোটেও ঠিক করছিস নি পাপড়ি। ছেলেটা অনেকক্ষণ তোর জন্য অপেক্ষা করেছে আর তোর ওর কথা মনেই নেই?
মায়ের এমন কথাই পাপড়ি তার মাথাটা নিচু করে ফেলে।
– শুধু এটা নয়, ওকি এটা বলেছে যে ওর অফিসে আজ কি হয়েছে?
নীলের এমন কথায় সবাই অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকায়
অবাক দৃষ্টি নিয়ে আফিয়া জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছ?
– পাপড়ি আজ অফিসে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।
– কিহ!
– হ্যা জেঠিমা, অনেকক্ষণ দাড়িয়ে যখন ওকে না পেয়ে অফিসের গার্ডকে জিজ্ঞেস করি, তখন তিনি এই কথা বলেন।
– পাপড়ি নীল যা বলছে সব সত্যি?
মায়ের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় পাপড়ি।
পুষ্প বললো
– কিন্তু ওতো আমাদের বলেছে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় চলে এসেছে।
– মিথ্যা বলেছে। আর ওকে না পেয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো।
– আমি যদি আমার অজ্ঞান হওয়ার কথা বলতাম তো মা আর আপু তোমরা দুজনেই আমাকে নিয়ে টেনশন করতে তাই বলিনি। আর আমি তো এখন ভালো আছি।আর ডাক্তারও দেখিয়েছি।
পাপড়ির এমন কথা শুনে পুষ্প বললো
– তবুও তোর কি এই কথাটা আমাদের জানানোর একবারো প্রয়োজন মনে করলি নাহ? এতোটা বড় হয়ে গেছিস তুই?
– সরি মা, সরি আপু। আর কখনো এমন হবে না। প্লিজ মাফ দাও?
– এখন আর মাফ চেয়ে কি হবে যা হবার তো হয়েই গেছে
বলেই আফিয়া বেগম রাগে রুম থেকে চলে যায়।
পাপড়ি নীলের দিকে তাকিয়ে বলে
– এখন কি তোর পা ধরে মাফ চাইলে, মাফ করবি?
– হ্যা, ঠিক আছে। আর মাফ চাইতে হবে না। নিজের খেয়াল রাখিস। আমি গেলাম। মা হয়তো টেনশন করছে আমাকে নিয়ে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দুদিন পর সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে অফিসে যায় পাপড়ি। পাপড়িকে দেখে অফিসের সবাই হাসি-তামশা শুরু করে দিলো। পাপড়ি প্রথমে কিছুই বুজতে পারছিলো না, কারণ ঐদিন কি হয়েছিলো তার কিছুই মনে নেই। দুইটা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে একজন বললো
– তা, ঐদিন বসের কোলে ওঠে কেমন লাগলো তোমার?
পাপড়ি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
– কি বলছেন এসব? আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না?
– এ্যাহ! ন্যাকা। কিছুই বুজে না। ঐদিন তো ভালোই অজ্ঞান হওয়ার নাটক করে একবারে বসের কোলেই ওঠে পড়েছো আর এখন কিছুই বুজে না।
আরেকজন বলে ওঠে
– আরে, এসব থার্টক্লাস মেয়েদের প্লানই এটা থাকে। এসব করে বসেদের কাছে যাবে যেন খুব তাড়াতাড়ি প্রমোশন পেতে পারে। এসব মেয়েদের খুব ভালো করেই চিনা আছে আমার।
এসব কথা শোনার পর পাপড়ির চোখে পানি ছলছল করতে লাগলো। এতোটা অপমান আজ পর্যন্ত কেউ কখনো তাকে করে নি। আর এক মুহুর্তও এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না সে। পাপড়ি ব্যাগটা হাতে নিয়ে মাথাটা নিচু করে অফিস থেকে বের হতে যাবে তখনি তাকিয়ে দেখে পেছনে রাইয়ান দাড়িয়ে আছে। সে এতোক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখছিলো পেছন থেকে।
চলবে……