ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১০
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে দরজা আফিয়া বেগম দরজা খুলতেই তাকে জড়িয়ে ধরে একটি মেয়ে বললো
– কেমন আছো, আন্টি?
আফিয়া বেগম মেয়েটির চেহেরা দেখে তাকে চিনার চেষ্টা করছে, কিন্তু চিনতে পারছে না।
আফিয়া বেগমকে এমন অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি বললো
– চিনতে পারছো না বুজি, আমায়?
– নাহ মানে, মনে করতে পারছি না।
– আমি তোমার সেই ছোট্ট রূপা। তোমার তৃতীয় মেয়ে।এখন চিনতে পেরেছো?
আফিয়া বেগম মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে বললো
– রূপা। সেই আমার ছোট্ট রূপা এতো বড় হয়ে গেছে।
বলেই আবার জড়িয়ে ধরলো রূপাকে।
– কিন্তু তুমি আমায় চিনতে পারো নি, আন্টি। ভেরি বেড।
মুখটা গম্ভীর করে বললো রূপা।
– আরে চিনবোই বা কিভাবে, সেই কতো ছোট থাকতে দেখছিলাম তোকে।
– হ্যা, আর সেই রূপার এখন বিয়ে হতে চলেছে।
পেছন থেকে রূপার বাবা বললো কথাটা।
– আরে অবিনাশ দাদাও এসেছেন যে। সেই কতো বছর পর দেখা হলো আপনার সাথে।
আর বাহিরে কেনো আপনারা, ভিতরে আসুন। পাপড়ি দেখ কে এসেছে।
বলে ডাকতে লাগলো আফিয়া বেগম।
– কে এসেছে মা?
রূপাকে দেখিয়ে আফিয়া বেগম বললো
– দেখতো চিনতে পারিস কিনা?
পাপড়ি কিছুক্ষণ রূপাকে দেখে তারপর চিনতে পেরে দৌড়ে এসে রূপা জড়িয়ে ধরে বলে
– রূপা….
কতদিন বাদে তোকে দেখলাম। তুই এখান থেকে যাওয়ার পর তোকে খুব মিস করেছি আমি।
– আমিও রে পাপড়ি। পুষ্প কোথায়?
– সে কাজ থেকে এখানো বাসায় ফিরে নি। একটুপরই চলে আসবে।
– হুম আর নীল কই? তোর চুল ধরে যে টান দিতো?
– নীল!! ওরাতো এখন এ পাড়ার দক্ষিণ দিকের বাসায় ওঠেছে।
– সব কিছু কতো পাল্টে গেছে?
– হুম তুইও।
– হয়েছে হয়েছে দুই বান্ধবী মিলে পরে কথা বলিস, এখন মেয়েটাকে একটু বসতে দে। কতো দূর থেকে এসেছে তারা।
আফিয়া বেগমের এমন কথায় পাপড়ি আর রূপা দুজন দুজনকে ছেড়ে দাড়ায়।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে হসপিটালের ভিতরে যায় রাইয়ান। রাইয়ানকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো রাইয়ানের বাবা। রাইয়ানেরও চোখ ছলছল করছে।
– হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেলো, বাবা। আজ সকালেই তো দাদাভাই আমার সাথে কথা বলেছে। আমরা একসাথে হাসাহাসি করেছি।
– জানি না আমি। হঠাৎ করেই তোর দাদা অজ্ঞান হয়ে যায়। হসপিটালে আনার পর ডাক্তার বললো, ব্রেইন স্টোক করেছে। ব্রেইনের একপাশ ডেমেজ হয়ে গেছে। বাবার হাতে আর বেশি সময় নেই।
রাইয়ান তার বাবার মুখে এ কথা শুনে দুকদম পিছিয়ে যায়।
– না এ হতে পারে না। দাদাভাই এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।
– ঐদিন রূপার মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট্ট রূপাকে যদি আপনি না সামলাতেন, তাহলে হয়তো আমার মেয়েটা আর বাঁচতোই না। এর জন্য আমি আপনার কাছে সারাজীবন ঋণী থাকবো।
রূপার বাবার মুখে এসব শুনে আফিয়া বেগম বললো
– ছি,ছি অবিনাশ দাদা, এসব কি বলছেন আপনি। রূপা তো আমার পুষ্প-পাপড়ির মতোই।
– আমাদের ধর্ম ভিন্ন থাকলেও আপনি রূপাকে যে আদর দিয়েছেন তা হয়তো আর কেউই করতে পারতো না।
– এসব বলে আপনি আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন দাদা। আমি কখনই আমার আদরের মাঝে ধর্মকে আনি নি। রূপাকে আমি আমার মেয়ের মতোই আদর করেছি।
– হুম, এতো আদর দিয়ে কি হলো সেই পরে আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন আংকেল।
পেছন থেকে কথাটি বললো পুষ্প।
-পুষ্প চলে এসেছিস, তোর অপেক্ষাই ছিলাম আমি।
– তুমি আর কথা বলো না আংকেল, সেই যে চলে গেলে আমাদের ছেড়ে এরপর তো আর খোজখবরই নেই তোমাদের।
– কি করবো পুষ্প মা, চাকরির ট্রান্সফার না হলে কি তোমাদের ছেড়ে যেতাম? আর তোমাদের কোন ফোন নাম্বারও ছিলো না আমার কাছে যোগাযোগ করার জন্য।
-রূপা কোথায়?
– পাপড়ি আর রূপা তোদের রুমে আছে যা।
– ওকে মা। আমি একটু দেখা আসি ওর সাথে।
কথা শেষ করে পুষ্প রুমের ভেতরে যায়।
– কেমন আছো দাদাভাই?
কান্নাজড়িত কন্ঠে রাইয়ান কথাটা বললো।
রাইয়ান দাদা রাইয়ানের মুখে হাত রেখে বললো
– বেশিদিন থাকতে পারলাম না আর তোদের সাথে।
পেছন থেকে রাইয়ানের বাবা বললো
– এভাবে কেনো বলছো তুমি?
– যা সত্যি তাই বলছি। তোরা না বললেও আমি বুঝে গেছি আমার হাতে বেশি সময় নেই।
রাইয়ান তার দাদা কথা শুনে অবাক হয়ে তার বাবা দিকে তাকালো।
রাইয়ানের দাদা রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো
– ভেবেছিলাম আমার নাতির জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ এনে দেবো। কিন্তু বউ আনা তো দূরের কথা তাকে দেখাও বোধ হয় আমার ভাগ্যে জুটবে না।
– তুমি এভাবে বলো না বাবা, তোমার এ ইচ্ছা পূরণ হবে। আগমী ৩/৪ দিনের মধ্যে তোমাকে তোমার নাতি বউ এনে দিবো।
রাইয়ান তার বাবার কথা শুনে আর কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো।
– তা এতোদিন পর কিভাবে মনে পড়লো আমাদের অবিনাস বাবু?
পুষ্প দাদীর কথা শুনে অবিনাস বাবু হাসি দিয় একটা বিয়ের কার্ড বাড়িয়ে দিলো আফিয়া বেগমকে।
– রূপার বিয়ে কার্ড। আগমী ১০ তারিখ রূপার বিয়ের লগ্ন পড়েছে।
কথাটা শুনে আফিয়া বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন
– সেই আমার ছোট্ট রূপার আজ বিয়েও হতে চলছে।
পেছন থেকে রূপা বললো
-হ্যা। তাইতো সাতদিন আগেই তোমাদের নিতে চলে এসেছি।
রূপার মুখে এ কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
– মানে? এত তাড়াতাড়ি যেয়ে আমরা কি করবো?
রূপা একটু অভিমান করে বললো
-ছোট থেকে তোমাদের আদর পেয়ে বড় হয়েছি, তোমাদের ছাড়া আমি বিয়ে করবো না।
– শুনো মেয়ের কথা, আরে আমরা সবই চলে গেলে ঘরে কে থাকবে? আমরা না হয় বিয়ের আগের দিন চলে আসবো?
– আমি এতো কিছু জানি না, তুমি না যেতে পারলেও পাপড়ি-পুষ্পকে আমি নিয়েই যাবো আমার সাথে।
রূপার কথা শুনে পুষ্প বললো
– আরে আমি চলে গেলে আমার ক্যাফে কে দেখবে?আর তোদের বাড়ি তো কাছে না যে কোন সমস্যা হলেই এখানে চলে আসতে পারবো। এক রাত ট্রেনে থাকতে হবে। আমি বরং মায়েদের সাথেই যাবো।
রূপা মনটা খারাপ করে বললো
– তাহলে কি কেউই যাবে না আমার সাথে?
পুষ্প বললো
– যাবে তো, পাপড়ি যাবে।
-কিহ! আমার তো অফিস আছে?
– ছুটি নিয়ে নিবি, আর তুই তো বলিসই যে তোর বস নাকি খুব ভালো, সবসময়ই প্রশংসা করিস। আর এখন ৭ দিনের ছুটি নিতে পারবি নাহ?
পাপড়ি কিছুটা চিন্তার ছাপ মুখে নিয়ে বললো
– আচ্ছা দেখি কাল।
রূপা একটু ঘোমরা মুখ করে বললো
– নিতে এসেছি সবাইকে, আর এখন শুধু পাপড়ি যাবে। তাও সিওর না।
রূপার এমন কথায় পুষ্প বললো
– নীলকে কি দাওয়াত দিবি না?
-হ্যা দেবো তো, কিন্তু সেও যদি না যাই?
পুষ্প কিছুটা মুচকি হেসে বললো
– পাপড়ি গেলে নীলও যাবে। চিন্তা করিস না, আমি নীলকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।
চলবে…..