#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~৩৬(শেষ)
কিছুদিন পর।
আদি আর সামু ডক্তরের চেম্বারে বসে আছে।ডাক্তার মনোযোগ দিয়ে রিপোর্টগুলো দেখছে।আদিকে কিছুটা টেন্স লাগছে।সামু আদির দিকে চেয়ে আছে।
ডক্তার নীরবতা ভেঙে বললো,
—–রিপোর্ট নরমাল।টেনশন করার আর কোনো কারণ নেই।আর কোনো সমস্যা হবেনা ইনশাআল্লাহ।
সামু ততক্ষণে আদির থেকে চোখ সরিয়ে ডাক্তারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
আদি এতটা এক্সাইটেড হয়েছে যে সময়,সিচুয়েশন ভুলে সামুকে জড়িয়ে ধরলো।
—–সামু সব সমস্যা শেষ।তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছো।আমার যে কি খুশি লাগছে।
সামু চোখ বড়বড় করে আছে।আদি ডাক্তারের সামনে কি করছে।
সামু আদিকে সরানোর চেষ্টা করছে।
ডাক্তার গলা খাকাড়ি দিলো।
—–এহেম!এহেম!
আদি সামুর মোচড়ামুচড়ির কারণ বুঝতে পারলো।তারপর তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো।সামু চোখ পাকিয়ে তাকাচ্ছে আর ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলছে স্লো সাউন্ডে যা আদি কিংবা ডাক্তারের কানে পৌছে নি।
আদি বোকার মতো হেসে ডাক্তারের দিকে চেয়ে বললো,
—-আসলে ডক্তর….
খুশিতে এতোটা আত্মহারা হয়ে গেছি যে সময়,স্থান কোনো কিছু মাথায় ছিলোনা।
ডাক্তার মুচকি হেসে বললো,
—–ইটস ওকে।৪বছর পর স্ত্রীকে সুস্থ দেখছেন।এটা আপনার জন্য কতবড় খুশির খবর সেটা তো আমি জানি।এই চার বছরে আপনার স্ত্রীর প্রতি আপনার ভালোবাসা,পাগলামি সব দেখেছি।মিসেস চৌধুরী ইউ আর সো লাকি।
সামু প্রতিউত্তরে মুচকি হাসলো।
আদি ডাক্তারকে মজা করে বললো,
—–অবশ্যই।আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতো দিনে আরেকটা বিয়ে করে ফেলতো।বউ কোমা থেকে করে বের হবে সেজন্য ওয়েট করতোনা।
এটা শুনে সামু ক্ষেপে গিয়ে বললো,
—–তাই না মেরে তক্তা বানিয়ে দিতাম।
ডাক্তার ওদের কথা শুনে হাসছে।
আদি বললো,
—–দেখেছেন কি ভয়ংকর জল্লাদ মেয়ে? মেরে নাকি তক্তা বানিয়ে দিতো।
ডক্টর চোখের চশমা খোলে বললো,
—–আপনারা খুব লাকি কাপল।প্রে করি আজীবন এমন থাকুন।
—–জ্বি অবশ্যই।দোয়া করবেন।
আজ আসি।ভালো থাকবেন।আর হ্যা ধন্যবাদ।
ডক্তর স্মিত হেসে বললো,
—–এটা আমাদের দায়িত্ব।
দুজনেই চেম্বার থেকে বের হয়ে এলো।সামু গাল ফুলিয়ে বসে আছে।ওকে ডক্তরের সামনে জল্লাদ বলেছে।সামু সারা রাস্তায় আদির সাথে একটা কথাও বলেনি।
.
.
সামু আদিবাকে হোম ওয়ার্ক করাতে বসেছে।আদিবা বিছানায় বসে বসে লিখছে।সামু আদিবার ব্যাগ গোছাচ্ছে।
আদি রুমে এসে সামুকে একবার পর্যবেক্ষণ করে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় এক পাশে বসলো।সামু আদিকে দেখে উঠে গিয়ে সোফায় রাখা আদিবার জামাকাপড় গোছানো শুরু করলো।
আদি আদিবার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—–তোমার মাম্মা গাল ফুলিয়ে রেখেছে।
আদিবা পাপার কথা শুনে মাম্মার দিকে তাকালো।তারপর আদিবা বিছানা থেকে নেমে সামুর পেছনে গিয়ে দাড়ালো।
—–মাম্মা তুমি গাল ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?
সামু ঘুরে আদিবাকে বললো,
—–কই গাল ফুলিয়ে রেখেছি?
—–কিন্তু পাপা তো তাই বললো।
সামুর আদির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলো।আদি টেডি স্মাইল দিলো।
তারপর আদিবাকে বললো,
—–তোমার পাপা কি বলেছে জানো?
আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তোমার পাপা নাকি আরেকটা বিয়ে করতে চেয়েছিলো।
আদিবা চিন্তিত ভংগীতে বললো,
—–পাপা আরেকটা বিয়ে করলে কি হতো?
সামু আদির দিকে চেয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
—–কি আর হতো আমার একটা সতিন হতো আর তোমার নতুন মা আসতো।
আদিবা উৎফুল্ল হয়ে বললো,
——আরেকটা মাম্মা?কি মজা দুটো মাম্মা হলে খুব ভালো হতো।আমাকে দুজন মাম্মা আদর করতো।মাম্মা পাপাকে বলোনা আরেকটা বিয়ে করতে।
সামু মেয়ের কথা শুনে টাস্কি খেলো।আদি মিটমিট করে হাসছে।সামুর গা জ্বলে যাচ্ছে।
—–কি মেয়েরে বাবা!! মায়ের সতিন আনতে চাইছে।
ঠিক আছে থাক তোরা বাপ-মেয়ে।আমি চললাম বাপের বাড়ি।থাকবো না এখানে।
আমি এখুনি ব্যাগ গোছাচ্ছি।
সামু আলমারির সামনে গেলো।আদিবা অসহায় ফেস করে পাপার দিকে তাকালো।
আদি ইশারা করলো সামুকে জড়িয়ে ধরতে।
আদিবা পেছনে থেকে সামুকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।
—–মাম্মা তুমি একা যাবে?আমিও যাবো নানা ভাইয়ের কাছে।আর পাপাও যাবে।
সামু আদি দুজনেই টাস্কি খেলো আদিবার কথা শুনে।
সামুর কপালে হাত।আদি হোহো করে হেসে দিলো।
.
সামু আদিবাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে বের হতেই সামুর আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়ে আদিবার কাছে গেলো।কিন্তু আদিবা নেই।
—–এ মেয়ে আবার কোথায় গেলো?
আদিবা!!
সামু আদিবাকে ডাকতে ডাকতে দরজার কাছে গেলো।সকালে স্কুলে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমানো প্রয়োজন।
দরজার সামনে যেতেই আদি দরজা লাগিয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে গেলো।
সামু ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
—–কি হলো?
সরো আদিবাকে আনতে যাবো।
—–আদিবা দিদার কাছে ঘুমাবে।আমি দিয়ে এসেছি।
—–কেনো?ওকে কেনো দিয়ে এসেছো?ওকে নিয়ে এসো।আমি একা তোমার সাথে থাকবোনা।
—–ছিহ! ছিহ!
মেয়ের সামনে…
তারপর আদি বাকা হাসলো।
সামু নাক ফুলিয়ে চোখ ছোট ছোট করে আদির দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করছে।
আদি আচমকা সামুকে দরজায় চেপে ধরলো।
—–মেরি জান,আদি কিন্তু তার সামুর জন্য আগের মতোই আছে একটুও বদলায়নি।আর সারাজীবন থাকবে।মাথায় রাখবে।
আমি আমারটা হাসিল করে নিতে পারি ইউ নো।
—–আরে বাহ! তুমি তো দেখছি গিরগিটি।সেকেন্ডে রং পাল্টিয়ে ফেলো।
আদি সামুকে চোখ মেরে বললো,
—–তর্ক করার মুড নেই।
আদি সামুর গালে আলতো করে চুমু খেলো।
আদি তিন আংগুল দিয়ে সামুর গালে স্লাইড করতেই সামু চোখ বন্ধ করে নিলো।
আদি সামুর গলায় গভীর ভাবে কয়েকটা চুমু খেলো।
সামুকে নিয়ে পাড়ি জমালো ভালোবাসার শহরে আরো একবার একে অপরকে পূর্ণ করতে।
.
.
ভালোবাসা,খুনসুটি,দায়িত্ব-কর্তব্য,ব্যস্ততার মাঝে কেটে গেছে আরো অনেক গুলো দিন।আজ আদিবার ৫ম জন্মদিন।খুব ধুমধামে জন্মদিন পালন করা হচ্ছে।এই প্রথম আদিবার জন্মদিনে এতো আয়োজন।আদি ৪র্থ জন্মদিনে আদিবাকে কথা দিয়েছিলো পরের বছর সামু ওকে কেক খাইয়ে দিবে।ওর জন্মদিনে থাকবে।আল্লাহ ওদের আশা পূর্ণ করেছে।শুধু সামুই নয় পরিবারের নতুন অতিথিও সাথে আছে।সামু ৪মাসের প্রেগন্যান্ট।
সেদিনের কথা।
আদি ল্যাপটপে অফিসের একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছে।আদিবা বারবার আদিকে বিরক্ত করছে।কিন্তু আদি একবারো রাগ করেনি,না রুড সাউন্ড করেছে।নরম গলায় বারবার আদিবাকে দূরে পাঠাচ্ছে।সামু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছে সব।
“আমি হলে দু-চারটে ঝাড়ি খেতাম।আদিবাকে কি সুন্দর করে বারবার ম্যানেজ করছে।মেয়ের সাথে রুড আচরণ করছেনা,আদিবার বেলায় যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল।বাবা-মাকে এমন হওয়া উচিত।নয়তো বাচ্চারা ভয় পেয়ে যায়।ছোটদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি ভয় ঢুকাতে নেই।তবে তারা কোনো কিছু শেয়ার করতে চায়না।ফলে বিপদে পড়ে।”
সামুর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো।ও গিয়ে আদির পাশে বসলো।আদির মুখের দিকে চেয়ে আছে।আদি কাজ করলেও সামুর বসে থাকা ও টের পাচ্ছে।
আদি ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে সামুকে বললো,
—–সমস্যা কি?
একটু আগে মেয়ে বিরক্ত করে গেলো।আর এখন তুমি এসেছো?তোমরা মা মেয়ে কি আমাকে শান্তি দিবেনা?
সামু এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলো তাই বললো,
—–আমি জানতাম।জানতাম আমি আমাকে এভাবে ধমকাবে।কই কিছুক্ষণ আগেও তো আদিবা তোমাকে কতবার বিরক্ত করে গেলো।ওকে কিছু বললে না আর আমাকে ধমকাচ্ছো?
—–তুমি জন্ম দিয়েছো তাই ওর ভাগেরটা তোমাকে দিলাম।এখন যাও এখান থেকে আর আদিবাকেও নিজের কাছে সামলে রেখো।বিচ্ছু জন্ম দিয়েছো একটা।
—–কি বললে তুমি?বেশ করেছি।পেটে যেটা আছে সেটাকেও বিচ্ছু বানাবো।তারপর তিনজন মিলে তোমাকে জ্বালাবো।
সামু ঘুরে চলে যেতে লাগলো।আদির ব্রেইন মাত্র কাজ করতে শুরু করেছে।
পেটে যেটা আছে মানে।আদি ল্যাপটপ বন্ধ করে দাড়িয়ে গেলো।
—–সামু শুনো,,
সামু শুনবে না।দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আদি সামনে গিয়ে দাড়ালো।
—–এই দাড়াও,দাড়াও।কি বললে?পেটে যেটা আছে মানে?
—–বলবোনা।
—-প্লিজ প্লিজ বলো।
—–আদি তোমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।কাজ করো।আমি আর আমার মেয়ে তো শুধু তোমাকে জ্বালাই।
—–সামু সরি সরি।প্লিজ বলো।আমি কি
আবারো……পাপা হতে যাচ্ছি?(উৎফুল্ল হয়ে)
সামু লজ্জা মাখা মুখে মাথা নিচু করে নিলো।
আদি যা বুঝার বুঝে গেলো।
আদি আনন্দে আত্মহারা।সামুকে উচু করে তুলে ঘোরাতে লাগলো।আর চিতকার করে যাচ্ছে।
চিতকার শুনে সবাই ঘরে চলে এসেছে।আদিবা গোলগোল চোখ করে ওদের দেখছে।
আদি সবাইকে দেখে সামুকে নামিয়ে দিলো।আদিকে এমন অদ্ভুত কাজের জন্য দিতো একটা মার কিন্তু মানুষ দেখে চুপ করে আছে।
আদির মা কিছু বলার আগেই আদি বললো,
—–মা আবারো দিদা হতে যাচ্ছো?আমি আবারো পাপা হতে যাচ্ছি।
আদিবাকে কোলে তুলে ঘোরাতে লাগলো।
আদিবা চিতকার করছে।
—–পাপা থামো।
আদি থেমে গেলো।আদিবা প্রশ্ন করলো,
—–তোমরা সবাই এতো হ্যাপি কেনো?
—–কারণ তোমার ছোট ভাই অথবা বোন আসছে।তুমি আপি হতে যাচ্ছো।তুমি ওর সাথে খেলবে,আদর করবে।
আদির মা আদিকে জড়িয়ে ধরে মন ভরে দোয়া করে দিলো।
আদিবা কিছুই বুঝতে পারছেনা।তাই পাপার কোলে বসে চুপচাপ সবার কান্ড দেখে যাচ্ছে।
.
.
সামু সুস্থ সবল ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।সামুও সুস্থ আছে।ওর নাম রেখেছে সাদিব।
সাদিব এখন দু-মাসের বাচ্চা।সামু শাওয়ার নিতে গিয়েছে।সাদিব কান্না করছে।সামু ওয়াশরুমের দরজা খোলে মাথা বের করে বললো,
—–আদি সাদিবকে দেখো।কান্না করছে কেনো।একটু দেখো।
আদি সাদিবকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু সাদিব কান্না থামাচ্ছে না।কেদেই যাচ্ছে।
সামু তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ভেজা চুল নিয়েই চলে এলো।
—–কাদছে কেনো?খাইয়েই তো শাওয়ার নিতে গেলাম।১৫মিনিট হবে।
আদি সামুকে বললো,
—–কোলে নেও তারপর বলছি কেনো কাদছে।
সামু সাদিবকে কোলে নিতেই আদি বলল,
—–সাদিবের ডায়াপার চেঞ্জ করো।ও ডায়াপার নষ্ট করেছে।
সামু আদির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—–এটা তো তুমি নিজেই করতে পারতে।চেঞ্জ করো।
আমি চুলে তোয়ালে পেচাবো পানি পড়ছে।চেঞ্জ করো।
—–পারবোনা।আদিবার সব ডায়াপার আমি চেঞ্জ করেছি।সাদিবেরটা তুমি করবে।
—–আজীব লোক তো।
তোমার ছেলেমেয়েই তো।এতো হিংসা করছো কেনো?
বাবুর ডায়াপার চেঞ্জ করো।
সাদিবের কান্না শুনে আদিবা চলে এসেছে।
—–ভাইয়ের কি হয়েছে কাদছে কেনো?
সামু বললো,
—–তোমার পাপার জন্য।বাবুর ডায়াপার চেঞ্জ করে দিচ্ছেনা।তাই কাদছে।তোমার পাপা ইচ্ছে করে কাদাচ্ছে।
আদিবা নাক মুখ কুচকে বললো,
—–পাপা তুমি আমার ভাইকে কাদাচ্ছো?তুমি না সুপারম্যান?তুমি না সব পারো?আমার পারফেক্ট পাপা?
আদি পড়লো বিপদে।এখন যদি সাদিবের ডায়াপার না চেঞ্জ করে তবে আদিবার কাছে যে ইমেজ তৈরি হয়েছে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে।
আদিবা সাদিবের পাশে বসে আছে।আদি দাতে দাত চেপে সাদিবের ডায়াপার চেঞ্জ করছে।সামু চুলে তোয়ালে পেচাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে।
-সমাপ্ত