Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩৪

তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩৪

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~৩৪

সামু আদিবাকে জিজ্ঞেস করলো,
—–তোমার নাম কি বাবু?

আদিবা সামুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সামুর দিকে।
তারপর গাল ফুলিয়ে বললো,
—–তুমি আমার নাম জানো না?আমার নাম ভুলে গেছো?আমার নাম আদিবা।
নেও এইবার কোলে নেও।

সামু কোলে নিতে গিয়েও থেমে গেলো।ওর বাবা-মা যদি দেখে আর সামুকে ছেলেধরা ভাবে।তাই সামু আশেপাশে দেখছে।ওর বাবা-মাকে খোজছে।
আদিবা সামুর জামা টানছে আর বারবার বলছে কোলে নেও।
সামু ওর কথা অগ্রাহ্য করতে পারছেনা।তাই এতো না ভেবে কোলে তুলে নিলো।আর কোলে উঠেই আদিবা সামুর গলা জড়িয়ে ধরলো।আদিবাকে কোলে নিতেই সামুর সারা শরীর হালকা কেপে উঠলো।অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।

সামু আদিবার গালে চুমু দিয়ে বললো,
—–বাবু তোমার বাবা-মা কোথায়?

আদিবা বললো,
—–পাপা কাজ করছে আর তুমিই তো আমার মাম্মা।

সামু আদিবার মুখে মাম্মা ডাক শুনে থমকে গেলো।ওকে কোলে নিয়ে আশেপাশে খোজছে ওর মা-বাবাকে কিন্তু কাউকে পেলোনা।
সামু কি করবে বুঝতে পারছেনা।

আদি ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিচ্ছে।ও যতই কাজে ডুবে থাকতে চাক না কেন পারছেনা।বারবার ওর মাথায় একি জিনিস ঘুরছে সামু মিসিং।

“সে কি জানে তার নিখোজে
আমার শহরে রাত্রি নামে?
সেকি জানে তার বিরহে
আমার হৃদয় পুড়ে?
সে কি জানে তার ফেরার
আশায় মন দিন গুনে?”
—-ফাবিহা

আদি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই এসিস্ট্যান্ট ছুটে এলো।তারপর যা শুনলো তাতে ওর পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।

সামু আদিবাকে ভেতরে নিয়ে যায়।সামু আদিবাকে দেখে বুঝতে পারছে ও হারিয়ে গেছে।আদিবা ওর কোল থেকে নামতেই চাইছেনা।
সামুকে আশ্রয় দেওয়া আন্টি সামুকে আদিবার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো।
সামু আদিবাকে অনেক কষ্ট করে ছাড়িয়ে সোফায় বসালো।
আদিবা সামুকে উঠে যেতে দেখে বললো,
—-মাম্মা কোথায় যাচ্ছো?

সামুর আদিবার মুখে মাম্মা ডাক খারাপ লাগছেনা তাই বাধা দিচ্ছেনা।
—–তুমি বসো ২মিনিটে আসছি।

তারপর উঠে গিয়ে আন্টিকে ফিসফিস করে বললো,
—–বাচ্চাটা মনে হচ্ছে হারিয়ে গেছে।গেটের বাইরে ওকে একা পেয়েছি।আর আমার মনে হচ্ছে ওর মা নেই তাই আমাকে মাম্মা বলছে।

—–হয়তো তাই হবে।তবে বাচ্চাটা অনেক সুন্দর।এখন কি করবে?

—–ওকে নিয়ে থানায় যাবো।তোমাকে জিনিসপত্র দিতে এলাম আর জানিয়ে গেলাম।আমার দেরি হলে টেনশন করোনা।

—–আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস।

সামু আদিবার কাছে যেতেই বললো,
—–মাম্মা আমার ক্ষুধা পেয়েছে।

সামু আদিবার দিকে চেয়ে মায়া হলো।খ্যব ক্ষুধা পেয়েছে হয়তো কিন্তু কি খেতে দিবে?বাচ্চারা কি খেতে ভালোবাসে।
সামু ফ্রুটস আর চকলেট এনে দিলো।আদিবা ফ্রুটস দেখে বললো,
—–এগুলো আমি খাবোনা।

আদিবা চকলেট খেয়ে বললো,
—–আমি আরো চকলেট খাবো।

—–না বাবু বেশি চকলেট খাওয়া ভালো না।দাতে পোকা হবে।

—–তুমিও পাপাইয়ের মতো।পাপাও আমাকে বেশি চকলেট খেতে দেয়না।
তাহলে আমি কি খাবো?

—–কেক খাবে?

আদিবা মাথা নাড়িয়ে বললো,
—–নাহ।

—–বিস্কুট খাবে?

—–নাহ।

—–তাহলে কি খাবে তুমি?নুডলস খাবে?

—–হ্যা খাবো।

সামু আদিবার জন্য নুডলস বানাতে চলে গেলো।আদিবাও পেছনে পেছনে গেলো।ও ওর মাম্মাকে ছাড়তে চায়না।
সামু নুডলস বানাচ্ছে কিচেনে।আদিবা ঘুরঘুর করছে।
—–মাম্মা তুমি কি রোজ আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে?আমি পিহুকে দেখিয়ে বলবো এটা আমার মাম্মা।ও শুধু আমাকে বলে আমার মাম্মা নেই।

সামুর ওর কথা শুনে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।ওর নিজেরও মা নেই ও জানে মা ছাড়া বড় হওয়ার যন্ত্রণা কি।

সামু আদিবাকে জিজ্ঞেস করলো,
—–তোমার বাসার ঠিকানা বলতে পারো?

আদিবা মাথা নাড়িয়ে না বললো তারপর বললো,
—–তুমিও আমার মতো বাড়ি চিনোনা মাম্মা?

—–শুনো বাবু তোমার পাপা চিন্তা করছে।তার কাছে তোমাকে দিয়ে আসতে হবে।

—–পাপা তো কাজ করছে।তুমি আমার সাথে না গেলে আমিও যাবোনা।

—–আমি তোমাকে দিতে যাবো।

—–থাকবে না আমার আর পাপার সাথে?

—–বাবু আমি তোমার মাম্মা নই।আমার তো বিয়েই হয়নি।

—–মিথ্যা বলছো কেনো?আমি পাপাকে বলে দিবো।দেখো পাপা তোমাকে বকে দেবে মিথ্যা বলার জন্য।পাপা বলেছে মিথ্যা কথা বলা ভালো না।যারা পচা তারা মিথ্যা কথা বলে।তুমি কি পচা?

সামুর কৌতুহল হলো তাই জিজ্ঞেস করলো,
—–তোমার পাপার নাম কি?

—–আদিল চৌধুরী।

সামু হেসে দিয়ে বললো,
—–এই নাম তো আমি প্রথম শুনছি।

আদিবা কাদো কাদো হয়ে বললো,
—–তুমি আমার মাম্মা।

সামু আদিবাকে কষ্ট পেতে দেখে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বললো,
—–হ্যা হ্যা আমি তোমার মাম্মা।কাদেনা বাবু।চলো তোমার নুডলস রেডি।

সামু অতি যত্ন সহকারে আদিবাকে খাইয়ে দিলো।আদিবা চোখ ঢলছে।ওর ঘুম পাচ্ছে।সামুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো।
সামু ভাবছে ওকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে যাওয়া দরকার কিন্তু ও তো ঘুমিয়ে পড়লো।
বিকেল সাড়ে ৫টায় ঘুমিয়েছে।রাত ৮টা বাজতে চললো আদিবার ঘুম ভাংগার লক্ষণ নেই।

—–আন্টি কি করি বলো তো?ওর তো ঘুম ভাংগার লক্ষণই নেই।কি করে পুলিশ স্টেশনে যাবো?

—–সামু এতো রাতে তোমার ওকে নিয়ে বাইরে যাওয়া নিরাপদ না।তুমি বরং আগামীকাল সকালে যাবে।

সামু ভেবে দেখলো ঠিকি এতো রাতে একা মেয়ে বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।তাই সকালেই যাবে।

আদি আদিবাকে না পেয়ে পাগলের মতো করছে।ওর বেচে থাকার অবলম্বন।ওর অন্ধকার জীবনের শানসাইন হারিয়ে গেছে।
আদি ওর মাকে জড়িয়ে কাদছে।
“মা আমার আদিবা কোথায় চলে গেলো? সামুকে খোজে পাচ্ছিনা আর এখন আদিবাকে হারিয়ে ফেলেছি।আমি কেন ওকে জোর করে নিজের কাছে রাখলাম না।কেন ওকে ওর ইচ্ছে মতো বাইরে যেতে দিলাম?আমি পারিনি আমার দায়িত্ব পালন করতে।আমার বাচ্চা মেয়েটা কোথায় আছে?কি করছে? কি অবস্থায় আছে?
আমার সাথেই কেনো এমন হচ্ছে? কি পাপ করেছি আমি?আমার কাছ থেকে সব একে একে আল্লাহ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে কেন?আমি কি নিয়ে বাচবো?”

আদির মা আদিকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু আদি শুনছেইনা।আদির মাও কাদছে।তার সাজানো সংসারটা কেন এভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে?প্রথমে সামুর কোমায় যাওয়া,সামুর মিসিং আর এখন আদিবা।

আদিবা ৮টা ১২ তে ঘুম থেকে উঠে।উঠে বসে চোখ ঢলছে।
সামু পাশেই বসে ছিলো।আদিবার ঘুম ভেঙেছে দেখে বললো,
—–কি বেবি ঘুম ভেঙেছে?অনেক লম্বা ঘুম দিয়েছো।

আদিবা ঘুমঘুম চোখে বুঝতে পারছেনা কোথায় আছে,কি বলছে,কে বলছে।সামুর দিকে চেয়ে আছে।সামুকে চিনতে পেরে বললো,
—–মাম্মা, পাপা কোথায়?

সামু ভাবছে বাচ্চা মেয়ে ঘুম থেকে উঠেছে এখন যদি পাপার জন্য কান্না জুড়ে দেয়?তাহলে কি করবে?
তাই ওকে বুঝানোর জন্য বললো,
—–পাপা কাজ করছে।

আদিবা মুখ ভার করে বললো,
—–এখনো কাজ করছে?আমাদের নিতে আসবে না?

সামু ওকে নিজের কোলে বসিয়ে বললো,
—–হ্যা আসবে তো।সকালে নিতে আসবে।তোমার পাপা তো অনেক কাজ করছে।আমাকে ফোন করে বলেছে তুমি যেনো আজ আমার সাথে থাকো।আমি যেনো তোমাকে খুব আদর করি।পাপার জন্য যেনো কান্না না করো।আগামীকাল সকালে এসে নিয়ে যাবে।
তুমি আমার সাথে থাকবে তো?

—–হ্যা থাকবো।

—–তাহলে চলো তোমার মুখ ধুইয়ে দেই।তারপর আমরা কার্টুন দেখবো।
সামু আদিবার হাত মুখ ধুইয়ে দিয়ে চুল বেধে দিলো।তারপর কোলে বসিয়ে কার্টুন দেখছে।আদিবার খুব ভালো লাগছে সামুর আদর গুলো।
—–বাবু,,চিপস খাবে?

আদিবা হ্যা বললো।সামু চিপস এনে দিয়ে আদিবা খাওয়াচ্ছে।আদিবা সামুর কোল ঘেষে রয়েছে।

আদি পাগলামি করছে খুব আদিবার জন্য।ওকে কেউ সামলাতে পারছেনা।তাই বাধ্য হয়েই ডক্টর ডাকা হয়েছে।ওকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।আদির বাবা একজন রাজনীতিবিদ।সে তার সকল সোর্স লাগিয়ে দিয়েছে।থানা পুলিশ সব করেছে।সব জায়গায় তন্ন তন্ন করে খোজছে।উনারাও হাত গুটিয়ে বসে নেই।সবাই সবার মতো খোজে যাচ্ছে।আদির মা আদির পাশে বসে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে।তার খুব চিন্তা হচ্ছে আদিবার জন্য।সামু বোঝ মান মেয়ে কিন্তু আদিবা তো বাচ্চা মেয়ে।

সামু আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আদিবা সামুকে জড়িয়ে ধরে আছে।সামু ভাবছে বিয়ে হলে ওর ও হয়তো একটা বাচ্চা থাকতো।সাত বছর কি হয়েছে আজো জানতে পারলো না।এসব ভাবলেই মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। আবছা কিছু ভেসে উঠে।

.

সকালে আদির ঘুম ভাংতেই আদি দৌড়ে নিচে গেলো।নিচে ড্রয়িংরুমে ওর বাবা,মা,জয় আর দু’জন পুলিশের পোশাক পড়া লোক,আরেকজন স্যুট পড়া লোক বসে আছে।
স্যুট পড়া লোকটি বললো,
—–আমরা চেষ্টা করছি আশা করছি খুব শীঘ্রই সন্ধান পেয়ে যাবো।আশেপাশের পুলিশ স্টেশনে ডিটেইলস পাঠিয়ে দিয়েছি।ওরা কিছু জানতে পারলেই জানাবে।কিডন্যাপিং হলে এতোক্ষণে ফোন চলে আসতো।যেহেতু আসেনি তার মানে কারো কাছে আছে।পেয়ে যাবো।চিন্তা করবেন না।

আদি ওদের সামনে গিয়ে বললো,
—–কি চেষ্টা করছেন আপনারা?আপনারা কোনো কাজের না।আজ ৪দিন যাবত আমার ওয়াইফ মিসিং।তাকেই খোজে বের করতে পারলেন না।আপনাদের আমি আর বিশ্বাস করি না।আপনাদের উপর ভরসা করেছিলাম।কিন্তু আপনারা তার যোগ্য না।আমার ওয়াইফ,স্ত্রীকে আমিই খোজে বের করবো কারো প্রয়োজন নেই।কারো দরকার নেই।

আদি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো।
ড্রাইভ করছে আর বা হাতে চোখের পানি মুছছে।
“সামু আই নিড ইউ।আমি আর পারছিনা।মরে যাচ্ছি আমি।আমি আমাদের মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছি সামু।ওকে খোজে পাচ্ছিনা।আমার কলিজা জ্বলে যাচ্ছে।কি করবো আমি? আমি আর এসব নিতে পারছিনা।প্লিজ কাম ব্যাক।প্লিজ।”
ওর চোখের পানি বাধ মানছেনা।এই চার বছরে যত কেদেছে যা পুরো জীবনে কাদেনি।৪টা বছর জীবনের অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।
আদি চোখের পানি মুছছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে।

সামু আদিবাকে নাস্তা করিয়ে দিয়ে রেডি করে দিলো।
তারপর আন্টিকে বললো,
—–আন্টি দোয়া করবেন আদিবা যেনো আজ ওর পরিবার ফিরে পায়।

—–অবশ্যই দোয়া করি আদিবা যেনো ওর পরিবার ফিরে পায় আর তুমিও যেনো তোমার পরিবার ফিরে পাও।আল্লাহ সহায় হোক।

সামু আদিবাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। একটা রিক্সা নিয়ে পুলিশ স্টেশনে গেলো।
আদিবা বসে বসে চিপস খাচ্ছে।সামু ইন্সপেক্টরকে সব ঘটনা খোলে বললো।
অফিসার সব শুনে পাশে থাকা একজনকে বললো,
—–সকাল সকাল পাশের থানা থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কেস এসেছিলোনা?
৪বছরের বাচ্চা নিখোজ হয়েছে মল থেকে?

—–জ্বি স্যার।
ছবি আর নাম ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছে।

সামু শুনে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলো।
—–স্যার প্লিজ দেখুন।

অফিসার পেপার চেক করে বললো,
——বাচ্চার নাম আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।বাবার নাম আদিল চৌধুরী।

সামু শুনে বললো,হ্যা ওর নাম আদিবা।আর ওর বাবার নাম আদিল চৌধুরী বলেছিলো।উনাদের তাড়াতাড়ি ইনফর্ম করুন।বাচ্চা মেয়েটাকে না পেয়ে জানিনা কি অবস্থা।

আদিবা সামুকে জিজ্ঞেস করলো,পাপা আমাদের নিতে আসছে না কেনো মাম্মা?

অফিসার সামুর দিকে তাকিয়ে বললো,
—–মাম্মা!!

—–জানি না গতকাল থেকে মাম্মা ডেকে যাচ্ছে।হয়তো ওর মা নেই।

অফিসার আর কথা না বাড়িয়ে ফোন দিলো পাশের থানার অফিসারকে।সব ইনফর্ম করলো।

আদির ফোন বেজে উঠলো।আদি তরিঘটি করে ফোন রিসিভ করলো।
যদি আদিবার বিষয়ে হয় তাই দেরি করলো না।
আদি ফোন রিসিভ করতেই ও পাশের কথা শুনে ওর মুখে হাসি ফুটলো।আদি এড্রেস নিয়ে থানায় চলে গেলো।খুশিতে ওর সারা শরীর কাপছে।ফ্যাকাসে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

আদিবা আর বসে থাকতে পারছেনা।উঠে গিয়ে হাটাহাটি করছে।এটা সেটা নাড়ছে।সামুর বসে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে।তবুও আদিবার পরিবারকে পাওয়া গেছে এটা ভেবেই শান্তি লাগছে।
আদিবাকে দেখছে ও।একদিনে কতটা মায়ায় পড়ে গেছে মেয়েটার উপর।বাড়িতে গেলে বাড়িটা ফাকা ফাকা লাগবে।

আদিবা লাফাচ্ছে।কলম দিয়ে খেলছে।কলম ফ্লোরে থেকে তুলে হাতে নিয়ে খুটে খুটে দেখছে।তখনই আদি দরজার সামনে এসে দাড়ালো।(কেন জানি আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো?)
আদিবা ওর পাপাকে দেখে হেসে দিলো।আদি হাটু গেড়ে বসে আদিবাকে ধরে অজস্র চুমু খেলো। তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।

—–কোথায় চলে গিয়েছিলে পাপাকে ছেড়ে?তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া পাপা থাকতে পারেনা?কলিজা আমার।আমার কি অবস্থা করে ফেলেছিলে তুমি।আমি মরেই যেতাম তোমাকে না পেলে।পাপা কি জান আর এমন করোনা।তাহলে আমি মরে যাবো।

সামু আদিকে দেখে উঠে দাড়ালো।বাবা-মেয়ের ভালোবাসা দেখছে।অফিসারও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।

আদিবা ওর পাপাকে এভাবে কাদতে দেখে ভড়কে গেলো।
—–ওমা!! পাপা তুমি কাদছো?
আমি তো মাম্মার সাথে গিয়েছিলাম।মাম্মাকে আনতে।

আদি আদিবার কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
তাই জিজ্ঞেস করলো,
—–কোথায় গিয়েছিলে?

—–মাম্মাকে আনতে আর এই যে নিয়ে এসেছি।
সামুর দিকে ঘুরে সামুকে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে বললো।

আদি আদিবার দেখানো দিকে চেয়ে শকড।ও সামুকে এভাবে এখানে আশা করেনি।ওর মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।আদি উঠে দাড়ালো।সামুর অস্বস্তি লাগছে।আদি আদিবাকে ছেড়ে সামুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তারপর কাপা কাপা গলায় বললো,
—–সামু!!

সামু আদির মুখে নিজের নাম শুনে চমকে গেলো।
ওর নাম কি করে জানলো?তাও ডাক নাম?এ নাম তো শুধু কাছের মানুষেরা ডাকে।
আদি সামুর দুবাহুতে হাত রেখে বললো,
—–কোথায় ছিলে তুমি? কেন চলে গিয়েছিলে?

সামু আদির হাত সরিয়ে বললো,
—–কে আপনি? গায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?

আদি সামুর কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,
—–আমাকে তুমি চিনতে পারছোনা?

সামু মাথা নাড়ালো।

—–সামু আমি আদি,তোমার হাসব্যান্ড।আর এই যে আদিবা আমাদের মেয়ে।তুমি চারদিন আগে হসপিটাল থেকে মিসিং হয়ে গিয়েছিলে।।

সামুর মনে হচ্ছে এদের সাথে ওর কোনো সম্পর্ক আছে।প্রথমত ওর নাম জানে।আর চারদিন আগে থেকেই ওর সাথে এসব ঘটনা ঘটছে।ওর গায়ে হসপিটালের পোশাক ছিলো।তার মানে ওরা ঠিক বলছে।
সামু আদিবার দিকে চেয়ে বললো,
—–আমি কাউকে চিনি না।না আমার কিছু মনে পড়ছে।

আদি হতাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।আদি পেছনে ঘুরে কয়েক কদম এগিয়ে আবার সামুর কাছে গেলো।
——সামু মনে করার চেষ্টা করো।ইউ ক্যান ডু ইট।
তুমি সামান্তা সেহনুজ।তোমার বাবা সাজিদ আহমেদ।তোমার বাবার বাড়ি সিলেট।সাত বছর আগে তুমি তোমার বাবার পছন্দে বিয়ে করবে না তাই বাড়ি থেকে পালিয়েছো।তারপর তোমার বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলে।

সামু মাথা নেড়ে বললো,
—–হ্যা অরিনের বাসায়।

আদি সামুর কথা শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলো।যাক সব ভুলেনি।
—–হ্যা তারপর তোমার আমার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়।

সামুর মনে পড়ছে ওর সেই দিনের কথা।একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে।রাস্তায় পড়ে যায়।সারা শরীর অবশ হয়ে আসছিলো।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা।মাথা তুলতে পারছেনা।হাত নাড়াতে পারছেনা।কিছু বলতে পারছেনা।কি বিভৎস মুহুর্ত।চারপাশে মানুষেরা চিতকার করছে।

সামু বললো,
—–হ্যা তারপর আমি হসপিটালের পোশাক পড়ে রাস্তায় বসে ছিলাম।এক আন্টি আমাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে।

আদি সামুর কথা শুনে বুঝতে পারলো এটুকুই ওর মনে আছে তারপর কি হয়েছে কিছুই মনে নেই।
—–নো সামু নো।এর পর সাত বছর কেটে গেছে।তোমাকে হসপিটাল থেকে আমার মা তোমার মামনি,আর আমার বোন নিশি তোমার নিশি আপু ওরা তোমাকে হসপিটাল থেকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে।তুমি আমাদের বাড়িতেই থাকতে শুরু করলে।তোমার সাথে আমার ঝগড়া হতো।দেন আমাদের বিয়ে হয়।তুমি আমাকে একদম পছন্দ করতে না।তারপর আস্তে আস্তে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করলে।আদিবা তোমার পেটে এলো।নয় মাসের সময় তুমি পূর্বের এক্সিডেন্টের কারণে সবকিছু ভুলে যেতে শুরু করলে আমি তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।ডাক্তার বলে তোমাকে সাবধানে রাখতে কিন্তু আমি পারিনি।আমার ভুলের জন্য গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।আদিবা সুস্থ থাকলেও তুমি কোমায় চলে যাও।চার বছর তুমি কোমায় ছিলে সামু।চার বছর পর তোমার জ্ঞান ফিরে চারদিন আগে।আর তারপর তুমি মিসিং।

সামুর মাথা কেমন ঘুরছে আদির কথা শুনে।সামু ফ্যালফ্যাল করে আদির দিকে চেয়ে আছে।
আদি সামুকে ঝাকাচ্ছে।
সামু মনে করার চেষ্টা করো প্লিজ।আদিবার জন্য হলেও মনে করো প্লিজ।আমি আর পারছিনা।
সামুর শরীর অসার হয়ে আসছে।মাথা ভনভন করছে।চোখের সামনে আদির কথাগুলো ঘটনা হয়ে ভেসে উঠছে কিন্তু সামু ধরতে পারছেনা।আদির কোনো কথা ওর কানে যাচ্ছেনা।
ওর চোখ বন্ধ হয়ে এলো।আদির কোলে ঢলে পড়লো।

চলবে…..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ