Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩৩

তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩৩

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~৩৩

??
আদি জরুরী কাজ পড়ে গেছে যেকারণে আদিকে লন্ডন যেতে হবে।আদি এই চার বছরে আদিবার জন্য কোথাও যায়নি।যার ফলে অনেক বড় বড় ড্রিল হাতছাড়া করতে হয়েছে।
কিন্তু এইবারের যাওয়াটা আর্জেন্ট।আর লন্ডনের ওয়েদার আদিবার জন্য ভালো নয় তাই আদিবাকে সাথে নিবেনা। আদি সেখানে কাজে ব্যস্ত থাকবে, আদিবার দেখাশোনা করতে পারবেনা।
আদি আদিবার দায়িত্ব ওর বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে লন্ডন যাচ্ছে।নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে।
আদিবা বসে বসে দেখছে সব।কিছু বলছেনা গাল ফুলিয়ে রেখেছে।

আদি আদিবার পাশে বসে বললো,
—–কি হয়েছে আমার বাবুই পাখির?
মন খারাপ করে বসে আছে কেনো?

আদিবা আদির দিকে একবার চোখ তুলে চেয়ে আবার নামিয়ে নিলো।
আদি আদিবার গাল টেনে বললো,
—–মন খারাপ করেনা?তুমি না স্ট্রং গার্ল।মাত্র দুদিন।দুদিন পর আমি চলে আসবো।তোমার জন্য সুন্দর সুন্দর জামা আনবো,চকলেট আনবো,ডল আনবো।তুমি দুদিন দাদাই,দিদার সাথে থাকবে।তোমার নিশিফুপ্পি আসছে নিহাদ ভাইয়াকে নিয়ে।নিহাদ ভাইয়ার সাথে খেলবে,অনেক মজা করবে।আর আমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলবে।ওকে?

আদিবা স্মাইল দিয়ে বললো,
—–ওকে পাপা….

—–এই না হলে আমার মেয়ে?

.

আদি এয়ারপোর্টে বসে আছে।ওর মন একদম শায় দিচ্ছেনা আদিবাকে রেখে যেতে।আদিবাকে ছাড়া কোনো দিন থাকেনি।
আদি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই আদিবা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।হাজার চেষ্টা করেও কেউ ওর কান্না থামাতে পারছেনা।রাত হয়ে গেছে না খাচ্ছে,না ঘুমাচ্ছে।কেদেই যাচ্ছে।এতোক্ষণ নিহাদের সাথে খেলেছে আর এখন ঘুমানোর সময় হতেই কেদে যাচ্ছে।নিশি ওকে থামানোর চেষ্টা করছে।

—–আদিবা সোনা,পাপা চলে আসবে।চলো এখন কান্না থামাও তুমি না পাপার লক্ষী মেয়ে?পাপা জানতে পারলে কষ্ট পাবে।

আদিবা কাদতে কাদতে বললো,
—–ফুপ্পি আমি পাপার কাছে যাবো।আমাকে পাপার কাছে নিয়ে চলো।

আদির অস্থির লাগছে।মনে হচ্ছে কলিজাটা এখানে রেখে চলে যাচ্ছে।আদি বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে চেকিং এর জন্য এগুচ্ছে তখনই ফোন বেজে উঠলো।আদি ফোন বের করে দেখে স্কিনে নিশির নাম ভেসে উঠছে।
আদি তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলো।

—–হ্যা নিশি কোনো সমস্যা?আদিবা কোথায়? কি করছে?ঘুমিয়েছে?

—–ভাই আদিবা কেদেই চলেছে।ওর কান্না থামাতে পারছিনা।সবাই মিলে চেষ্টা করেছি।না কান্না থামাচ্ছে,না খাচ্ছে,না ঘুমাচ্ছে।তাই তোমাকে ফোন করতে বাধ্য হলাম।
আদিবা কাদতে কাদতে নিশির কাছে এলো।আদির কানে আদিবার কান্নার শব্দ ভেসে এলো।

—–নিশি আদিবাকে ফোন দে।তাড়াতাড়ি।

—–হ্যা।

আদিবার কানে ফোন দিতেই আদি বললো,
—–পাপা কি জান কাদছো কেন?কান্না থামাও।ইউ নো আই হেইট টেয়ারস।

আদিবা কাদতে কাদতে বললো,
—–মাম্মার মতো তুমিও চলে যাচ্ছো আমাকে ছেড়ে?তুমিও আমাকে ভালোবাসো না মাম্মার মতো?

আদি আদিবার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।ও কি বলবে ভাষা খোজে পাচ্ছেনা।
—–আদিবা আমি কোথাও যাচ্ছিনা।এখুনি আসছি।

আদিবা কান্নারত অবস্থায় হেসে বললো,
—–সত্যি?

—–হ্যা তুমি খেতে থাকো।খাওয়া শেষ হলেই আমাকে দেখতে পাবে।

আদিবা নিশির হাতে ফোন দিয়ে বললো,
—–আমাকে খেতে দেও ফুপ্পি।

আদিবার কথা শুনে নিশি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কি এমন বললো যে খেতে চাইছে।

আদিবা খাওয়া শেষ করে মেইন গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।আদি দৌড়ে বাড়িতে ঢুকলো।ওর চুল এলোমেলো,চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।আদিবাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হেসে দিলো।তারপর দৌড়ে গিয়ে আদিবাকে কোলে তুলে নিলো।
বাড়ির সবাই আদিকে দেখে অবাক।আদির এখন প্লেনে থাকার কথা।আর আদি বাড়িতে চলে এসেছে।

আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে ঘোরাচ্ছে।আর আদিবা খিলখিল করে হাসছে।
—–আমি আমার সানশাইনকে রেখে কোথাও যাবোনা?
হ্যাপি?

—–ইয়েস পাপা।
আদিবা আদির গলা জড়িয়ে ধরলো।

আদির বাবা-মা আদির সামনে এসে দাড়ালো।
আদি কিছু না বলে টেডি স্মাইল দিয়ে আদিবাকে কোলে নিয়ে চলে গেলো।
আদির বাবা-মা আদির চলে যাওয়ার পর হেসে দিলো।
আদির মা আদির বাবাকে বললো,
—–তোমার ছেলে পাগল পাগলই রয়ে গেলো।

.

সামুর কেবিনে মধ্যবয়সী একজন নার্স বসে বসে পত্রিকা পড়ছে।হটাৎ করে তার মনে হচ্ছে কিছু একটা নড়ছে।
নার্স পত্রিকা রেখে মেশিনের দিকে না চেয়ে তাড়াতাড়ি সামুর দিকে তাকালো।
সামুর হাতের আংগুল হালকা নড়ছে, ঠোঁটও নড়ছে।নার্স চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।৪বছর যাবত দেখছে সামুকে।সামু এই প্রথম রেসপন্স করছে।খুশিতে ডাক্তারকে ডাকতে ভুলে গেলো।যখন হুশ এলো তখন ডাক্তারকে ডাকতে চলে গেলো।

আদির পুরো ফ্যামিলি হসপিটালে এসে জড়ো হয়েছে।আদিবা এদিক সেদিক দেখছে আর আদিকে বলছে,
—–পাপা মাম্মা কখন উঠবে?
আদিবা সেম প্রশ্ন বেশ কয়েকবার করে ফেলেছে।
আর আদির সেম উত্তর জানিনা মা।সামুর রুমে দু-তিন জন ডক্টর চেকাপ করছে।
কিছুক্ষণ পর রুমের দরজা খোললো।
একজন ডক্টর হাসি মুখে বের হলো।আদি এগিয়ে গেলো।
—–মিস্টার চৌধুরী।আপনার ওয়াইফ রেসপন্স করছে।দুই একদিনের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে আশা করছি।

খুশিতে আদির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেছে।
—–ধন্যবাদ ডক্টর।

আদি আদিবাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
—–মাম্মা দু একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে।তোমার সাথে কথা বলবে।

আদিবার মুখে হাসি ফুটলো।সবার মাম্মার মতো ওর মাম্মাও ওকে আদর করবে।সবাইকে বলতে পারবে ওর মাম্মা আছে।

ডক্টর সবাইকে চলে যেতে বললো।সামুর জ্ঞান ফিরলে জানাবে।আদি যেতে না চাইলেও আদিবার জন্য চলে যেতে বাধ্য হলো।আদিবা ছোট বাচ্চা।এতোক্ষণ হসপিটালে থাকা ওর জন্য সেফ নয়।আদিবা আদিকে ছাড়া যাবেওনা তাই আদি চলে যেতে বাধ্য হলো।

দুদিন পর।
হসপিটাল থেকে খবর এলো সামু মিসিং।এই নিউজ শোনার পর আদির হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।আদির মা ছুটে এলো।আদি স্তব্ধ হয়ে আছে।ওর মা ওকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু আদি কোনো উত্তর দিচ্ছেনা।
আদি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।আদির মা ফোন তুলে ডায়েল নাম্বার চেক করছে।
আদি হসপিটালে গিয়ে চিতকার চেচামেচি করছে।
—–আপনারা এতোটা কেয়ারলেস কিভাবে হলেন?একজন পেসেন্ট কিভাবে মিসিং হতে পারে?আপনারা কি করছিলেন?

ডক্টর আদিকে রিলেক্স করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছেনা।
আদি রিলেক্স।হ্যা এটা ঠিক যে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি বাট তোমাকে কিছু দেখানোর আছে।
ডক্তর আদিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে।
সামুর জ্ঞান ফেরার পর সামু আশেপাশে দেখে আতকে উঠে।সবকিছু ভয়ে ভয়ে দেখছে।বেড থেকে নেমে যায়।তারপর আশেপাশে ভয়ার্ত,আতংকিত চেহারা নিয়ে তাকায়।
আদি অবাক হয়ে সামুকে দেখছে।ওর এতটা আতংকিত চেহারা কখনো দেখেনি।সামু দরজার সামনে গিয়ে উকি ঝুঁকি দিচ্ছে।ওর মুখ কেমন থমথমে অদ্ভুত আচরণ করছে।
তারপর সামু জানালার পাশে গিয়ে উকি ঝুঁকি দিচ্ছে।থাই খোলে একবার পেছনে ঘুরে দেখে জানালার উপরে উঠে গেলো।তারপর সবার আড়ালে চলে গেলো।

আদি অবাক হয়ে আছে সামুর আচরণ দেখে।
—–ডক্তর ও এমন করছিলো কেন?পালালো কেনো?

ডক্টর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–ওর মেমোরি লস হয়েছে।ওর কোনো ঘটনা মনে নেই।ভয় পেয়ে পালিয়েছে।পেছনের অংশ প্রায়শই ফাকা থাকে।দুতলা তাই পালাতে কষ্ট হয়নি।

আদি এক হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে বসে আছে।এতক্ষণে আদির মা আদিবাকে নিয়ে চলে এসেছে।
আদির মা আদির কাছে এসে বললো,
—–শুনলাম সামু মিসিং?

—–হ্যা মা।ওকে খুজতে হবে।আমার মনে হচ্ছে ও বাড়িতে গেছে।বাড়িতে চলো।

সামু বাড়িতেও যায়নি।আদি যত জায়গায় সম্ভব খোজ নিচ্ছে।সামুর বাবাকেও ফোন করেছে।সেখানেও যায়নি।সামুর বাবা ঢাকায় আসছেনা এটা ভেবে যদি সামু সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় তাই।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে।কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আজান দিবে।চারপাশে ঝিঝি পোকারা ডাকছে।মশারা সামুকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে ওর হুশ নেই।মনে হচ্ছে কেউ ওকে সম্মোহন করে রেখেছে।
সামু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।হটাৎ সামুর জ্ঞান হলো।ও আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো।রাস্তার পাশে নিরিবিলি একটা জায়গায় ও বসে আছে।
ও ভাবতে লাগলো কি করে এখানে এলো।
“আমি কি করে এখানে এলাম?আমি কোথায় আছি?কিছুই তো চিনতে পারছিনা।আমার গায়ে হসপিটালিটি পোশাক কেনো?আমি তো ভর্তি হওয়ার জন্য ভার্সিটিতে যাচ্ছিলাম তারপর একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে।আমি এখানে কি করে এলাম?আর অরিন?আমার পার্স কই?ফোন?আমি কি করে ওকে ফোন দেবো?রাত হয়ে আসছে আমার ভয়ও লাগছে।”

সামু উঠে দাড়ালো।বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।একজন মহিলা যার বয়স চল্লিশ বছরের বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে।উনি এসে সামুকে জিজ্ঞেস করলো,
—–মা কাউকে খোজছো?

——আসলে আন্টি আমার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।আমার ফোন,ব্যাগ কিচ্ছু পাচ্ছিনা।একটা ফোন করতাম আপনার ফোনটা দিবেন?

মহিলা ফোনটা বের করে দিলো।সামু অরিনের নাম্বার অনেক কষ্ট করে মনে করে ডায়েল করলো কিন্তু সুইচড অফ বলছে।সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
—–ফোন কেন ঢুকছেনা?আমার খুব ভয় করছে।রাত হয়ে যাচ্ছে।

মহিলাটি সামুর কাছে সব শুনে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলো।
সামু মহিলার সাথে উনার বাড়িতে গেলো।উনি সামুর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারলো ওর খুব ক্ষুধা পেয়েছে।উনি খাবার এনে দিতেই সামু গপগপ করে খেয়ে নিলো।প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে।

খাওয়া শেষ করে বললো,
—–আর কে কে থাকে এখানে?

উনি স্নিগ্ধ হেসে বললো,
—–আমি একাই।আমার একমাত্র মেয়ে শ্বশুর বাড়ি আর হাসব্যান্ড বছর খানের হবে মারা গেছে।একাই থাকি।তোমাকে ক্লান্ত লাগছে।তোমার রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।
তারপর উনার মেয়ের রুমে নিয়ে কিছু জামাকাপড় বের করে দিয়ে বললো,
—-চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ো।

সামু চেঞ্জ করে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো কি হয়েছিলো ওর সাথে।কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না।ঘুম ওকে সেই সুযোগ দিলোনা।ক্লান্ত শরীর ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

আদি আদিবাকে বুকে নিয়ে কাদছে।আদিবাও কাদছে।একটু পর পর ওর শরীর কেপে কেপে উঠছে।বাচ্চা মেয়েটাও বুঝে গেছে ওর মাম্মাকে পাওয়া যাচ্ছেনা,হারিয়ে গেছে।আদি সারাদিন সামুকে খোজে বেরিয়েছে কিন্তু কোথাও পায়নি।আদিবার কান্নাও থামানোর চেষ্টা করছে না।

আদিবা কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে বললো,
—–পাপা মাম্মা কি আর আসবে না?
তুমি আমার মাম্মাকে এনে দেও প্লিজ।

আদি চোখের পানি মুছে বললো,
—–নিয়ে আসবো।শীঘ্রই নিয়ে আসবো।এখন ঘুমাও।তোমার মাম্মা চলে আসবে।
“আর কত শাস্তি দেবো আমাকে?এই বাচ্চা মেয়েটাকে?আবারো কেন হারিয়ে গেলে?এতদিন তো কথা না বললেও কাছে ছিলে কিন্তু এখন তো হারিয়ে গেলে।” (মনে মনে)

আদি চারদিকে লোক লাগিয়েছে।পুলিশও খোজে বেড়াচ্ছে সামুকে।রাস্তাঘাট,বাস স্ট্যান্ড সব জায়গায় খোজ লাগিয়েছে।

সামু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।ও সকালে আন্টির সাথে অরিনের ফ্ল্যাটে অরিনের খোজ করে এসেছে কিন্তু অরিন নেই আর না কিছু আগের মতো আছে।ও কিছুই বুঝতে পারছেনা।
হটাৎ কি মনে হলো আন্টির কাছে গেলো।উনি কিচেনে রান্না করছেন।

—–আন্টি আজ কত তারিখ?

—–নয় অক্টোবর।

—–নয় অক্টোবর!!! কি বলছেন?আর সাল?

—–২০২০।

সামুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।
আন্টির ফোন নিয়ে ক্যালেন্ডার চেক করছে।নেট ঘাটছে।আজ ৯অক্টোবর ২০২০।
সামু হিসাব করে দেখলো সাত বছর ওর লাইফ থেকে হারিয়ে গেছে।
“এই সাত বছর কোথায় ছিলাম?কিভাবে ছিলাম? কি হয়েছিলো আমার সাথে?আমার কিছু কেনো মনে পড়ছেনা?”

সামুর সারা শরীর কাপছে।মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া ঘুরছে।ওর মাথাটা ঘুরছে।সাত বছর!!

সামু নিজের ফেসবুক আইডিতে লগ ইন করার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুই মনে পড়ছেনা রাগে ওর শরীর কাপছে।সবকিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।
সামু একা একা বসে কাদছে।

.

আদি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিচ্ছে।আদিবা ঘুমাচ্ছে।গত তিন দিন ধরে সামুকে পাগলের মতো খোজে যাচ্ছে।ফলাফল শূন্য।
আদি ভুলতে চাইছে যে সামু মিসিং।ও মনে করতে চাইছে সামু হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছে।
সামু তিন দিন নিজের অতীত খোজার অনেক চেষ্টা চালিয়েছে।এখনো চালাচ্ছে।কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছেনা।তবে বিশ্বাস হারায়নি।

.

আদি ফরমাল ড্রেসে বের হচ্ছে।আদির মা আদির এই গেটাব দেখে জিজ্ঞেস করলো,
—–কোথাও যাচ্ছিস?

—–হ্যা,মা বিদেশী বায়ারদের সাথে একটা ড্রিল করার আছে তাই একটা মিটিং এরেঞ্জ করেছি রেস্টুরেন্টে।
আদিবাকেও নিয়ে যাচ্ছি।

আদির মায়ের আদির কথা মাথায় কিছুই ঢুকছেনা।আদি এক রাতে এতোটা চেঞ্জ কিভাবে?এতোটা নরমাল কিভাবে?

আদি চাইছে কাজের মাঝে ডুবে থাকতে।যাতে কষ্টটা কিছুটা হলেও ভুলে থাকা যায়।

আদি মলের একটা রেস্টুরেন্টে বায়ারদের সাথে কথা বলছে।ওর এসিস্ট্যান্টকে আদিবার দায়িত্ব দিয়েছে।আদিবা ছটফট করছে।এক জায়গায় বসতেই চাচ্ছেনা।একটার পর একটা আবদার করেই যাচ্ছে।আদির এসিস্ট্যান্ট বেকায়দায় পড়ে গেছেন।

আদিবা বাইরে ঘুরছে।এসিস্ট্যান্টকে বললো,
—–আংকেল আইসক্রিম আনো।

—–ঠিক আছে চলো আমার সাথে।

—–আমি এখানে আছি।তুমি নিয়ে এসো।

—–আচ্ছা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে কিন্তু।

—–আচ্ছা।

আদিবা দাঁড়িয়ে আছে।আর এদিক সেদিক দেখছে।
সামু আন্টির দেওয়া লিষ্ট অনুযায়ী কেনাকাটা করে মল থেকে বের হচ্ছে।ওর খুব তাড়া আছে তাই পা চালিয়ে যাচ্ছে।কোনো দিক দেখার প্রয়োজন কিংবা সময় তার নেই।
আদিবার চোখ সামুতে আটকে গেলো।বারবার হসপিটালে ঘুমিয়ে থাকা চেহারার সাথে মিলাচ্ছে।
তারপর আদিবা জোরে ডাক দিলো।
—–মাম্মা!!

কিন্তু সামু থামেনি।ও ওর গন্তব্যে হেটে যাচ্ছে।আদিবা দৌড়ে ওকে ধরার চেষ্টা করছে।মল থেকে বাড়ি সামনেই তাই সামু হেটেই যাচ্ছে।আদিবা পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে।দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।ওর যেখানে হেটে অভ্যাস নেই সেখানে দৌড়াবে কিভাবে?তাই সামুকে ধরতে পারছেনা।আর না মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে।সামু গেইটের সামনে যেতেই আদিবা পেছন থেকে জোরে ডাক দিলো।
——মাম্মা!!
এই মাম্মা শব্দটা রাস্তায় অনেকক্ষণ ধরে শুনছে।কিন্তু বাড়ির সামনে কে মাম্মা বলে ডাকবে।সামু ঘুরে দাড়ালো।
একটা বাচ্চা মেয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সামুর কেমন অস্থির লাগছে।বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো।সামু না চাইতেও দুপা এগিয়ে গেলো আদিবার দিকে।

আদিবা সামনে এসে দুহাত বাড়িয়ে বললো,
—–পা ব্যথা করছে কোলে নেও তাড়াতাড়ি।

সামান্তা আদিবার কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।

চলবে…..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ