Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩২

তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩২

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~৩২

কেটে গেছে দুমাস।
রাত তিনটা।আদি আদিবাকে বুকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।ভাবছে সেই দিনগুলোর কথা।প্রথম দেখা,প্রেমে পড়া,বিয়ে করা,ওদের ভালোবাসা, কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো।
সামান্তার রাগ,অভিমান,সামান্তার কথা বলার ধরণ,সামান্তার সাথে ঝগড়া,খুনসুটি,সামান্তার ঝাজালো সব কথা,ওর প্রতি সামান্তার ভালোবাসা, কেয়ারিং,আদি রেগে গেলে আদিকে ভালোবেসে সামলানো সব কিছু আদি স্মৃতির পাতা থেকে আওড়ে নিচ্ছে।সামান্তার বলা মি.জিরাফ,সাদা হনুমান,মি.সরিষা ক্ষেত এই শব্দগুলো খুব মিস করছে।
এসব ভেবে আদির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।পরক্ষণেই আদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
“সামু তুমি খুব নিষ্টুর।খুব।এভাবে আমাকে শাস্তি দিতে পারলে?”

আদি এসব ভাবতে ভাবতে আদিবা ঘুমের মধ্যে কেদে উঠলো।আদি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বললো,
—–তুই আমাকে কাদতেও দিবিনা?কে শিখিয়েছে এসব?মাম্মা?তোর মাম্মা খুব পঁচা।মাম্মার কথা একদম শুনবে না কেমন?

আদি আদিবাকে বুকে নিয়ে উঠে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।ওকে নিয়ে বারান্দায় পাইচারি করছে তবুও কান্না থামছেনা।আদি আদিবার ডায়াপার চেক করে নিলো।সব ঠিক আছে তবে কাদছে কেন?
আদির মনে হচ্ছে আদিবার ক্ষুধা পেয়েছে।আদি আদিবাকে শুইয়ে দিলো।
তারপর ওর ফিটার রেডি করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আদিবা কেদেই যাচ্ছে।
আদি ফিটার বানাতে বানাতে বললো,
“মামনি কাদেনা।পাপা আসছে তোমার ফিটার নিয়ে।একটু সবুর করো।”

আদি ফিটার এনে বললো,
“এই তো হয়ে গেছে তোমার ফিটার।এখন কান্না বন্ধ করো।বড় হলে তোমাকে রাজপুত্র এনে দেবো কাদেনা মা।”

আদি আদিবার মুখে ফিটার দিলো।আদিবা খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলো।
“আহারে আমার প্রিন্সেসের ক্ষুধা পেয়েছে।আর এমন হবেনা।”

আদির মা আদিবার কান্নার শব্দ পেয়ে দরজায় টুকা দিচ্ছে।
“আদি কি হয়েছে? আদিবা কাদছে কেন?দরজা খোল ওকে আমার কাছে দে।”
আদির রুম আগে সাউন্ডপ্রুফ ছিলো কিন্তু আদিবার জন্য চেঞ্জ করে ফেলেছে।যাতে আদিবার কান্নার শব্দ বাইরে থেকে পাওয়া যায়।

আদি ভেতর থেকে বললো,
—–মা আদিবা ঠিক আছে।আমি ওকে খাওয়াচ্ছি তুমি ঘরে গিয়ে ঘুমাও।

—–আমাকে দেখতে দে।দরকার পড়লে নিশিকে ডাকি।

—–উফফ মা কাউকে ডাকতে হবেনা।তুমি যাও।রাত জাগতে হবেনা।

আদি আদিবার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—–আমার বাবুই পাখির জন্য আমি একাই একশ।কি মাই সানশাইন?

আদিবা ওর পাপাকে দেখছে আর খাচ্ছে।

আদির মা হতাশ হয়ে ফিরে গেলো।
“এই ছেলেটা দিনদিন কেমন হয়ে যাচ্ছে।ও কি পারে এসব?একটা বাচ্চা লালন করা এতো সহজ?কিন্তু কে শুনে কার কথা?মেয়েকে ছাড়া নাকি ওর ঘুম আসেনা।ওর মেয়ে ওর সাথেই ঘুমাবে।নয়তো সামু রাগ করবে।
সামু তুই কেন আমার এই পাগল ছেলেকে একা ফেলে দিলি?”
আদির মা চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেলো।

আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।আদিবা ওর কাছে থাকলে মনে হয় সামু ওর সাথে আছে।সামু অনেক হ্যাপি আছে।
সকাল ন’টায় বাপ-মেয়ের ঘুম ভাংলো।
আদি আদিবার চোখ-মুখ মুছিয়ে সুন্দর জামা পড়িয়ে নিচে নিয়ে এলো।আদির মা এগিয়ে এসে আদিবাকে কোলে নিলো।আদিবার কপালে চুমু খেয়ে আদর কর‍তে লাগলো।

—–আদি খাইয়েছিস ওকে?

—–হ্যা মা।

আদিকে ফিটফাট দেখে বললো,
—–কোথাও যাচ্ছিস?

—–হ্যা মা।
সামুকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছি।কিছু কথা না ওর কাছে জবাবদিহি চাইতে যাচ্ছি।

আদির মা ছেলের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–আচ্ছা যা।
কেননা এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।তার ছেলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে একা একা কথা বলা,সামুর প্রতি অভিযোগ করা।তাই তিনি বাধা দিলো না।বাড়ির বাইরে গেলে হয়তো মন একটু ভালো হবে।

আদি বেড়িয়ে গেলো তার হাজারো অভিযোগ নিয়ে।সামুর কাছে জবাব চাইতে।

.

“সামু কেমন আছো?অবশ্যই ভালো আছো।শান্তির ঘুম যে ঘুমাচ্ছো।ভালো থাকারই কথা।এতো রাগ আমার প্রতি তোমার?আমার প্রতি নাহয় রাগ কিন্তু আদিবা?ওর কি দোষ ছিলো?সেদিন তুমি বলেছিলে আদিবার কিছু হলে আমাকে ক্ষমা করবেনা।সেদিন আদিবা তো ঠিক ছিলো কিন্তু তুমি কেন ঠিক হলেনা?
আদিবাকে আমি সামলাচ্ছি,ওর সব দায়িত্ব পালন করছি।তোমার খুব মজা লাগছে তাই না? সেলফিশ।আমাকে একা কষ্ট দিচ্ছো আর তুমি আরাম করে ঘুমাচ্ছো?আচ্ছা ঘুমাও।আমার কথার উত্তর দিবেনা তো?না দিলে আমি আর উত্তর চাইবোনা।আর আসবো না।যাচ্ছি।”
আদি হনহন করে হেটে চলে এলো।তারপর বাড়িতে চলে এলো।

.

আদিবা এখন বসতে পারে।আদি আদিবাকে বসিয়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে আদিবার সাথে খেলছে।আদিবা ডল নিয়ে খেলায় ব্যস্ত।
আদির চোখ লেগে এসেছে তখনই চুলে টান অনুভব করে।আদি মাথা তুলে দেখে আদিবা ওর চুল ধরে টানছে।আদি আদিবাকে চুল টানতে দেখে হেসে ফেলে।আদিবা পাপাকে হাসতে দেখে নিজেও খিলখিল করে হেসে দেয়।

আদি আদিবার গাল টেনে বলে,
“একদম মায়ের মতো হচ্ছো দেখছি।আমার শান্তির ঘুম একদম সহ্য হয়না।ঘুমাচ্ছি তাই চুল ধরে টানছো।”
আদিবা পাপার মুখের দিকে চেয়ে আছে আর মুখ দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ করছে।

আদি বেডসাইড টেবিল থেকে সামু আর ওর একটা ছবির ফ্রেম নিয়ে সামুকে দেখছে।সামুর মুখমণ্ডল ছুয়ে দিচ্ছে।তারপর বললো,
—–আদিবা একদম তোমার মতো হচ্ছে।আমি চাই ও তোমার মতো হোক।আমি ওর দেখাশোনায় কোনো গাফিলতি করছিনা।ওর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখছি।বিশ্বাস হচ্ছেনা?আচ্ছা তাহলে ওকে এবার নিয়ে আসবো তোমার সাথে দেখা করতে।

আদি সামুর ছবিটা আদিবার সামনে রেখে বললো,
—–আদিবা তোমার মাম্মা তোমার পাপা।দেখো তো কেমন লাগছে?
সুন্দর লাগছে?লাগতেই হবে আদিবার পাপা মাম্মা বলে কথা।

আদি আদিবাকে সাথে নিয়ে গেছে সামুর কাছে।
হসপিটালের পরিচিত নার্স,ডাক্তাররা আদিবাকে সাদরে গ্রহণ করলো।
আদি আদিবাকে নিয়ে সামুর কেবিনে ঢুকলো।
সামুর পাশে বসে বললো,
—–সামু দেখো আমাদের মেয়ে।ওকে আজ নিয়ে এসেছি।এর পর থেকে সব সময় নিয়ে আসবো।
আদি আদিবার হাত দিয়ে সামুর চোখ মুখ ছুইয়ে দিচ্ছে।
সামান্তার হাত আদিবার গালে,মাথায় পিঠে রাখে।তারপর বললো,
—–সামু আদিবা।।তোমার কি ইচ্ছে করে না আদিবাকে দেখতে?আদিবাকে কোলে নিতে,আদর করতে?
আমার শাস্তি আদিবাকে কেন দিচ্ছো?ওকে কেন ওর মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করছো?ওর অন্যায়টা কি?প্লিজ সামু আদিবার জন্য হলেও উঠে যাও।নাকি আমি আদিবার এতো খেয়াল রাখি তাই তুমি নিশ্চিন্তে আছো?উঠতে চাওনা?
সামু তাহলে কিন্তু আমি আর আদিবার খেয়াল রাখবোনা তখন বুঝবে।

সামুর কোনো হুশ নেই।আদি সামুর সাথে দেখা করে এভাবেই নিজে নিজে কথা বলে।নিজের দুঃখ কষ্টের কথা বলে।ওকে কতটা মিস করে এসব বলে।তারপর আবার চলে যায়।মাঝেমধ্যে রাগ করে চলে যায়।

.
.

“পাপা উঠো,ও পাপা উঠো।”

—–উমম! উঠছি।

আদি উঠছি বলে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো।আদিবা কোমড়ে দু হাত রেখে আদির দিকে চেয়ে রাগে গজগজ করছে।
তারপর কানের কাছে গিয়ে চিতকার করলো।
—–পাপায়ায়ায়ায়ায়া!

আদি চিতকার শুনে লাফিয়ে উঠলো।কানে আংগুল দিয়ে ঘষছে।
ওর কানে মনে হচ্ছে তালা লেগে গেছে।কানের মধ্যে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে।
আদি আদিবার দিকে চেয়ে আছে।আদিবা ঠোঁট ফুলিয়ে রাগে ফুসফুস করছে।
আদি বিরবির করে বলছে মা কা বেটি।

আদিবা আদির দিকে চেয়ে বললো,
—–পাপা কখন থেকে ডাকছি।উঠছো না কেনো?মাম্মা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।আর তুমি ঘুমাচ্ছো?উঠো।
তাড়াতাড়ি রেডি হও।আমার বার্থডের কেক চলে এসেছে।

আদি আদিবাকে ভালো করে খেয়াল করলো।আদিবা লাল টুকটুকে প্রিন্সেস ড্রেস পড়ে দাড়িয়ে আছে।ওর চুলে ঝুটি বাধা,লাল ফুলের হেয়ার ব্যান্ড পড়া।পুরো লাল পরী লাগছে।

আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—–হ্যাপি বার্থডে মাই সানশাইন।

আদিবা খিলখিল হেসে বললো,
—–থাংকিউ পাপা।তাড়াতাড়ি রেডি হও।মাম্মা ওয়েট করছে।

আদি আদিবার তাড়ায় ফ্রেশ হতে চলে যায়।আদি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ওর চোখ চড়কগাছ।
আদিবা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে লিপস্টিপ লাগাচ্ছে।ঠোঁট মেখে ফেলেছে।
আদি আদিবার সামনে গিয়ে হেসে ফেললো।

আদিবা ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকালো।
—–পাপা তুমি হাসছো কেনো?

—–এগুলো কি করছো দেখো মুখ মেখে গেছে।

আদিবা সামুর দেয়ালে বাধানো একটা ছবির দিকে দেখিয়ে বললো,
——আমি মাম্মার মতো লিপস্টিক দিয়ে সাজবো।

আদি আদিবার ঠোঁটে সুন্দর করে লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো।মেখে যাওয়া অংশ টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো।
আদি রেডি হয়ে আদিবাকে নিয়ে নিচে গেলো।

আদিবার দাদা আদিবাকে কোলে নিয়ে বললো,
—-আমার ছোট গিন্নি দেখি লিপস্টিক দিয়েছে।

—–দাদাই আমাকে কি মাম্মার মতো সুন্দর লাগছে?

—–হ্যা একদম লাল টুকটুকে পরী লাগছে।
বাবাইয়ের সাথে ঘুরে এসো তোমার জন্য গিফট এনেছি অনেক গুলো।বাড়ি ফেরার পর দেবো।
নিহাদ ভাইয়াও আসছে।

আদিবা আচ্ছা বলে দাদার কোল থেকে নেমে গেলো।আদি আদিবাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
হসপিটালে আদিবা সামুর কেবিনর সামনে যেতেই আদির হাত ছেড়ে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেলো।
ঢুকে গিয়ে বেডে শুয়া সামুকে কিছুক্ষণ দেখে বেডের উপর উঠে গেলো।তারপর সামুকে জড়িয়ে ঘেষে শুয়ে রইলো।আদিবার রোজকার অভ্যাস।ছোট থেকেই এমন করে আসছে।
“মাম্মা দেখো আজ আমি তোমার লিপস্টিক দিয়েছি।দাদাই বলেছে আমাকে তোমার মতো লাগছে।”

আদি ভেতরে ঢুকলো।একজন লোক কেক রেখে গেলো।আজ আদিবার ৪বছর পূরণ হলো আর সামুর শয্যাশায়ীর ৪বছর।
আদি আদিবাকে উঠতে বলে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
—–আজ তোমার মেয়ের জন্মদিন।ওকে দোয়া করো।

আদি আর আদিবা মিলে কেক কেটে নিলো।এই চার বছরে আদিবার জন্মদিন এইভাবেই পালন করেছে কোনো জাকজমক কিংবা অনুষ্ঠান করা হয়নি।
আদিবা কেক মুখে দিয়ে সামুর দিকে মন খারাপ করে তাকালো তারপর আদিকে বললো,
—–মাম্মা আর কত ঘুমাবে?আমাকে কবে কেক খাওয়াবে পাপা?

আদি মুচকি হেসে বললো,
—–সামনের বার জন্মদিনে মাম্মা তোমাকে নিজ হাতে কেক খাওয়াবে।
এখন ডাক্তার দাদুর সাথে গল্প করে এসো।আমি তোমার মাম্মার সাথে কথা বলে আসি।

—–আচ্ছা।
আদিবা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আদি সামুর পাশে বসে ওর হাত ধরে বললো,
—–সামু আর কত?আর কতদিন আমার উপর রাগ করে থাকবে?৪বছর হয়ে গেলো।উঠো,উঠে আমাকে বকা দেও,আমার উপর চেচাও।তবুও প্লিজ উঠো।আমি আর পারছিনা।ক্লান্ত হয়ে গেছি।
আমার জন্য আমার জন্য সব হয়েছে।আমাকে উঠে শাস্তি দেও।আমি ভুল করেছি।আর এই ভুলের সাজা এভাবে দিচ্ছো?
দেখো আদিবাও বড় হয়ে যাচ্ছে।আমি ওর পুরো খেয়াল রাখছি।ওকে আমি মানুষের মতো মানুষ বানানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ওর তোমাকেও প্রয়োজন।
জানো আমি ওর চোখে পানি আসতে দেইনা।আদিবা কাদলে আমার খুব কষ্ট হয়।মনে হয় তুমি কাদছো।তুমি কষ্ট পাচ্ছো।তাই আমি ওকে কষ্ট পেতে দেইনা,কাদতে দেইনা।ও একদম তোমার মতো হয়েছে।আমাকে অনেক শাসন করে।ঘুমাতে দেয়না বেলা পর্যন্ত।কিছু হলেই তোমার মতো কোমড়ে দুহাত রেখে নাক ফুলিয়ে ফুসফুস করে।
আদি হেসে দেয়।
তারপর বলে সামু তুমি সব মিস করছো।তাড়াতাড়ি উঠে যাও প্লিজ।
আদি সামুর হাতের উপরে ঠোঁট ছোয়ালো।

আদি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলো।
—–ডক্তর আপনি বলছেন আমার ওয়াইফ রিকভার করছে।কিন্তু কই?আর কতদিন?
৪বছর হয়ে গেলো।

—–আপনার ওয়াইফ সত্যিই রিকভার করছে কিন্তু আমি তো ভয় পাচ্ছি অন্যকিছু।

আদি ডক্তরের কথা শুনে বললো,
—–এ কথার মানে কি?

ডক্তর কিছু এক্স-রে আর পেপার দেখিয়ে বললো,
—–এসব আপনাকে দেখালে বুঝবেন না।আমি সহজ ভাষায় বলি উনি সুস্থ হলেই যে সব আগের মতো হয়ে যাবে তার গ্যারান্টি নেই।
এমন হতে পারে উনি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারেন,এমনও হতে পারে কয়েক বছরের স্মৃতি মুছে যেতে পারে আবার এমনও হতে পারে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

আদি ডক্তরের কথা শুনে বললো,
—–ও সম্পূর্ণ সুস্থ হবে।অনেক হয়েছে আর না।ও সম্পূর্ণ সুস্থ হবে।

.

আদিবাকে স্কুলে ভর্তি করেছে।আদি আদিকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে।পাশাপাশি বসে আদি ড্রাইভ করছে আর আদিবা পাশে বসে মোবাইলে কার্টুন দেখছে আর খিলখিল করে হাসছে।

“পাপা পাপা দেখো।”
আদিবা আদিকে বললো।

আদি সামনে চোখ রেখেই বললো,
—–না বাবুইপাখি।ড্রাইভ করার সময় ফোন ইউস করতে নেই।কারো সাথে কথা বলতে নেই।ড্রাইভের দিকে মনোযোগ দিতে হয়।তুমি দেখো।

জ্যামের কারণে আদি হটাৎ গাড়ি থামায়।
কিছুক্ষণ পরে সামনের গাড়িগুলো ছাড়ে।হটাৎ আদির পাশের গাড়ির দিকে চোখ যায়।ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটা ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছে।আদির সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
আদি নিজের গাড়ি স্টার্ট দিলো।ফাকা জায়গায় গিয়ে ওই গাড়ির পাশে গাড়ি স্লো করে ডাকতে লাগলো।গ্লাস খোলা থাকায় লোকটা শুনতে পেয়ে গাড়ি থামালো।

আদি আদিবাকে রেখে ওই গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর বললো,
——ভাই গাড়ি চালানোর সময় ফোন ইউস করবেন না প্লিজ।
চার বছর আগে আমি এই ভুলটা করেছি যার কারণে আজ আমার স্ত্রী আমার পাশের সিটে বসতে পারেনা।আমার মেয়ে তার মায়ের আদর পায়না।ওর পাপা আর মাম্মার মাঝে বসতে পারেনা,ঘুমাতে পারেনা।তাই প্লিজ ভাই গাড়ি চালানোর সময় ফোন ইউস করবেন না।ইটস এ রিকুয়েষ্ট।

লোকটা আদির দিকে চেয়ে বললো,
—–সরি ভাই এন্ড থ্যাংকস।আমারও একটা মেয়ে আছে,স্ত্রী আছে,বাবা-মা,একটা পরিবার আছে।আমার কিছু হলে আমার ফ্যামিলি শেষ হয়ে যাবে।ধন্যবাদ ভাই।

আদি স্নিগ্ধ হেসে গাড়িতে এসে বসলো।আদিবা তখনো কার্টুন দেখছে।আদি আদিবাকে জিজ্ঞেস করলো,
—–কি পড়িয়েছি মনে আছে?

—–হুম পাপা মনে আছে।

আদিবাকে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে গেলো।

~আদিবার ক্লাস~
মিস একে একে সবাইকে পড়া জিজ্ঞেস করলো তারপর আদিবাকে জিজ্ঞেস করলো,
—–আদিবা তোমাকে সবচেয়ে কে বেশী ভালোবাসে?

আদিবা না ভেবেই বললো,
—–পাপা।

—–আর তুমি সবচেয়ে বেশী কাকে ভালোবাসো?

—–পাপাকে।

—–আচ্ছা তোমার পাপাকে নিয়ে কিছু বলো।

আদিবা ঠোঁট কামড়ে ভাবার ভংগী করে বললো,
—–আমার পাপা সুপারম্যান।আমার পাপা আমাকে অনেক ভালোবাসে।পাপা গাড়িতে বলেছে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ওয়ার্ড হচ্ছে লাভ।আর সবচেয়ে পবিত্র হচ্ছে শিশুরা আর তাদের হাসি।মানে আমার হাসি।
আর শিশুরা তখনই হাসে যখন তারা মাম্মা-পাপার মুখে হাসি দেখে।তাদের খুশি দেখে।কিন্তু আমার পাপা তেমন হাসেনা আর মাম্মা সে তো হাসেই না।আমার সাথে কথা বলে না,আদর করেনা,আমার সাথে ঘুমায়না,খাইয়ে দেয়না,গোসল করিয়ে দেয়না,আমার সাথে স্কুলেও আসেনা।সারাক্ষণ ঘুমায়।পাপা বলেছে সামনের বার্থডেতে আমাকে মাম্মা কেক খাইয়ে দিবে।আচ্ছা মিস মাম্মা কি সত্যিই আমাকে কেক খাইয়ে দিবে?
আমার পাপা কখনো মিথ্যা বলে না।পাপা বলেছে মাম্মা আমাকে খুব ভালোবাসে।

মিস আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
—–তোমার পাপা ঠিক বলেছে।
তুমি বসো।

মিস পিহুকে জিজ্ঞেস করলো,
—–তুমি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো?

—–মাম্মাকে।কারণ মাম্মা আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায়,সুন্দর জামা কিনে দেয়,চকলেট দেয়,খেলনা কিনে দেয়।স্কুলে নিয়ে আসে।আমাকে খাইয়ে দেয়,ঘুম পাড়িয়ে দেয়,গোসল করিয়ে দেয়,আমাকে অনেক আদর করে,পাপ্পি দেয়।

আদিবা ঠোঁট ফুলিয়ে কাদছে।ওর মাম্মা ওকে কেন এভাবে আদর করে না?কেন সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে?কেন উঠেনা?

মিস আদিবাকে কাদতে দেখে ঘাবড়ে যায়।আদিবার কান্না থামানোর চেষ্টা কতেও কান্না থামাতে পারছেনা।তাই বাধ্য হয়েই আদিকে ফোন দিলো।আদি ফোন পেয়ে সব কাজ ফেলে আদিবার স্কুলে চলে আসে।

আদিবা হেডম্যামের রুমে বসে আছে।তিনি আদিবাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
আদি তাড়াতাড়ি রুমে এসে আদিবাকে কোলে তুলে নেয়।ওর জান যেনো বের হয়ে যাচ্ছিলো।
—–আদিবা কি হয়েছে মা কাদছো কেনো?আমাকে বলো কি হয়েছে?কেউ বকেছে?

আদিবার হেচকি উঠে গেছে কাদতে কাদতে।দীর্ঘ সময় চেষ্টা করার পর আদিবাকে শান্ত করতে সক্ষম হলো।
আদিবা কান্না থামিয়ে বললো,
—–আমি আর মাম্মার সাথে কথা বলবো না।মাম্মা সারাক্ষণ ঘুমায় কেনো?মাম্মা অনেক পচা।

আদির বুক ধুক করে উঠলো আদিবার কথা শুনে।

চলবে…..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ