Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩১

তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-৩১

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~৩১

পশ্চিমা আকাশে যেনো আগুন লেগেছে।সন্ধ্যা নেমে আসছে সূর্যের যেনো নিজেকে লুকানোর তাড়া পড়ে গেছে।ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।সামু জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে।ওর চুলগুলো বাতাসে হালকা উড়ছে।
সারাদিনে আদির কোনো খবর পায়নি।ফোন করেছে অনেকবার।কিন্তু ফোন তুলেনি।
মামনি বলেছে আদি ফোন করেছে কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।কিন্তু তার বলার পর দুপুর, বিকাল গিয়ে এখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে।কিন্তু আদি আসেনি।আদির মা সামুকে রেস্ট নিতে বলেছে।রুম থেকে বের হতেই দিচ্ছেনা।সামুর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রুমে রেখে গেছে।বারবার আদি আদি করে উত্তেজিত হয়ে বের হতে চাইছিলো তাই দরজা লক করে রেখে গেছে।আদি এসে দরজা খোলবে সেটাও বলে গেছে।
সামু সেই কখন থেকে আদির জন্য অপেক্ষা করছে।দরজার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ ক্লান্ত হয়ে গেছে।সামু জানালার গ্রিল ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে।
দুচোখ বন্ধ করতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

সামুর ঘুম হালকা হয়ে আসছে।ওর চোখের পাপড়িতে ফু দিচ্ছে কেউ।সামু চোখ বন্ধ রেখেই অনুভব করতে পারছে এটা আদি।সামু চোখ বন্ধ রেখেই অস্ফুটস্বরে বললো,
“আদি!!”

সামু ধীরে ধীরে চোখ খোলে আদিকে দেখতে পেলো।সামু আদির গালে হাত রেখে বললো,
—–আদি কোথায় ছিলে তুমি? জানো আমার কত টেনশন হচ্ছিলো? আমার ফোন রিসিভ করোনি কেন?কি হয়েছে তোমার? তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
সামু এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো।

আদি সামুর ঠোঁটে আংগুল দিয়ে বললো,
—–চুপ,এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?নিশ্বাস নেও।

আদি সামুর কপালে চুমু খেয়ে সামুকে উঠিয়ে বসিয়ে কোলে তুলে নিলো।সামু আদির এমন আচরণের কিছুই বুঝতে পারছেনা।কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ও?

—–আদি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

আদি সামুর কথার উত্তরে বললো,
—–গেলেই দেখতে পারবে।এখন চুপ করে থাকো।

আদি সামুকে ছাদের সিড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।সামু সেটা দেখতে পেয়ে বললো,
—–ছাদে কেন?

—–তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো তাই।এখন চোখ বন্ধ করো আমি না বলা পর্যন্ত খোলবে না।

সামু তাই করলো।আদি সামুকে ছাদের মাঝখানে নিয়ে নামিয়ে দিয়ে বললো,
—–চোখ খোলো।

সামু চোখ খোলে থ।ছাদ বেলুন আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো।আশেপাশে ক্যান্ডেল জ্বলছে।
মাঝে একটা টেবিলের উপরে কেক রাখা।সামু অবাক হয়ে দেখছে।তখনই ছাদের দরজা বন্ধ করার শব্দ পেলো।সামু পেছনে ঘুরে আদিকে দেখতে পেলো।সামু খুশিতে আদির কাছে দৌড়ে গেলো।

আদি সামুকে দৌড়াতে দেখে বললো,
—–সামু থামো।
বাট সামু দৌড়ে আদির কাছে চলে গিয়েছে।ওকে জড়িয়ে ধরলো।
—–থ্যাংকিউ আদি।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

আদি সামুকে ছাড়িয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
——তুমি আমাকে এতবড় একটা গিফট দিয়েছো এইটুকু সারপ্রাইজ তো দিতেই পারি।

সামু আদির কথা শুনে কেদে ফেললো।আদি সামুকে কাদতে দেখে বিচলিত হয়ে গেলো।
—–সামু কাদছো কেন?স্টপ ক্রায়িং।ইউ নো আই হেইট টেয়ারস।
আমি কিন্তু এখন রেগে যাবো।

সামু চোখের পানি মুছে বললো,
—–আমি ভেবেছি তুমি খুশি হওনি।হয়তো রাগ করেছো বেবির কথা শুনে।তাই সারাদিন কেদেছি।

—–হোপপপ বোকা মেয়ে।আমি বাবা হতে যাচ্ছি আর আমি হ্যাপি হবোনা কেন?হয়তো এমন নিউজের জন্য প্রিপিয়ার্ড ছিলাম না কিন্তু এর মানে তো এই নয় যে হ্যাপি হবোনা।আ’ম সো হ্যাপি।তুমি আমাকে গতকাল রাতে এটাই বলতে চেয়েছিলে?

সামু নাড়িয়ে বললো,হুম।বাট বলতে পারিনি।

আদি সামুকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো,
—–মিষ্টি মুখ করবে না?

আদি কেক কেটে সামুকে অতি যত্ন সহকারে খাইয়ে দিলো।সামুও আদিকে খাইয়ে দিলো।

সামুর অনেক খুশি লাগছে।সারাদিন কি সব ভেবে কেদে কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আদি নিজেই হ্যাপি।

সামু আদির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।
—–আদি আজ সারারাত এখানে থাকবো।

—–উহু।মা নিষেধ করে দিয়েছে।বেশি রাত পর্যন্ত ছাদে না থাকতে।
নয়তো থাকতাম।

সামু উঠে বসে বললো,
—–তার মানে মা সব জানতো?
আর মাও আমাকে বলেনি কিছু।তোমরা সবাই খারাপ।সারাদিন আমি কান্নাকাটি করলাম আর কেউ কিছু বললো না।

আদি সামুকে বললো,
—–সরি মেরি জান আর কখনো এমন হবেনা।আমি আর কখনো তোমাকে কাদাবো না।
এখন চলো তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।

সামু সারপ্রাইজের কথা শুনে লাফিয়ে উঠলো।
—–আরো??

আদি সামুর গাল টেনে বললো,
—–হুহ।আভি বাকি।

আদি সামুকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।আদির রুমের পাশের রুমের দরজা খোলছে।সামু কৌতুহল নিয়ে বললো,
—–এখানে কেন যাচ্ছি?

আদি দরজার লক খোলে সামুকে বললো,
—–চোখ বন্ধ করুন মেডাম।

সামু আদির কথামতো চোখ বন্ধ করে নিলো।
সামু আদিকে ভিতরে নিয়ে চোখ খোলতে বললো।সামু চোখ খোলে হা করে রইলো।রুমের চেহেরা পাল্টে গেছে।সারা রুম জুড়ে খেলনা।রুমের দেয়াল জুড়ে কার্টুন পেইন্ট করা।ছোট একটা বেড।বেডের উপর টেডি,ছোট বড় অনেক ডল।বুঝায় যাচ্ছে কোনো বাচ্চার রুম।

সামু অবাক হয়ে আদির দিকে ঘুরে বললো,
—–এসব কি আদি?

—–আমাদের বেবির রুম।আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাজিয়েছি।তোমার পছন্দ না হলে চেঞ্জ করে দেবো।

—–আরে না না।।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।খুব সুন্দর হয়েছে।কিন্তু এখুনি এসব তুমি কি পাগল?(হেসে দিয়ে)

আদি বললো,
—–আগে থেকেই সব রেডি করে রাখছি।দেখো এখানে দোলনাও আছে।আর এই যে বেবির জামাকাপড়,জুতো সব আছে।

সামু সব কিছু ছুয়ে ছুয়ে দেখছে সব কিছু।
—–সব তো দেখছি মেয়ে বেবির জামা,জুতো।

আদি মাথা চুলকে বললো,
—–আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের একটা প্রিন্সেস আসবে।বাবুই পাখি।আর আমি ওর নামও ঠিক করে ফেলেছি।

সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
—–এতো ফার্স্ট তুমি?
তা কি নাম রেখেছো শুনি?

—–তুমি আবার হিংসে করা শুরু করোনা।
আমি আমার মেয়ের নাম রেখেছি আদিবা।

—–বাহ নিজের নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছো?আমি কই?

—–বলেছিলাম না হিংসা করবে।ওয়েট তোমার জন্য কিছু ভাবছি।
আদি কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—–নাম তো আদিবাই থাকবে।তবু পুরো নাম হবে আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।

সামু হেসে বললো,
—–ঠিক আছে তাই হবে।

আদি সামান্তাকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাড় করালো।তারপর কাধ থেকে চুল সরিয়ে গলায় একটা নেকলেস পড়িয়ে দিলো।সামুর গলায় আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো।
সামু হাত দিয়ে ছুইয়ে দেখছে নেকলেসটা।
আদি সামুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
—–আচ্ছা তুমি শুধু মা নও আমিও তো বাবা হচ্ছি তাইনা?
তাহলে আমি একাই কেন তোমাকে গিফট দিচ্ছি,সারপ্রাইজ দিচ্ছি?আমারও তো কিছু পাওয়া উচিৎ তাইনা।

সামু ভ্রু কুচকে বললো,
—–আদিল চৌধুরী কারো কাছ থেকে গিফট আশা করে?বাহ! আরেকটা সারপ্রাইজ পেলাম।

আদি নাক ফুলিয়ে বললো,
—–কেন আমি এলিয়েন নাকি?
আমার গিফট পেতে মন চাইবে না?

—–শোনো আমি তোমাকে অনেক বড় গিফট দিতে যাচ্ছি।আর তাছাড়া আমি তোমার সবচেয়ে বড় গিফট।আমি দেখে তোমাকে বিয়ে করেছি নয়তো কোনো দিন বউ পেতে না।

—–তাই না?
আদি সামুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
তারপর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।

.
.

সামুর প্রেগ্ন্যাসির ৯মাস চলছে।সামনের মাসে ডেলিভারির ডেট দিয়েছে ডাক্তার।
পুরো ফ্যামিলি সামুর খেয়াল রাখছে।আদি অফিসের কাজ বাড়িতে বসেই করে।সামুর খেয়াল রাখছে।যতই দিন যাচ্ছে সামুর জন্য ভয় লাগছে।তাছাড়া সামু কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।খিটখিটে মেজাজ,হুট করে রেগে যাওয়া পাশাপাশি নতুন আরেকটা রোগ দেখা দিচ্ছে ভুলে যাওয়া।সামু ইদানীং সব ভুলে যাচ্ছে।

সামু বারান্দায় দোলনায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আদির অফিসে কাজ ছিলো সেটা সেরে এসে রুমে ঢুকে সামুর খোজ করে বারান্দায় দেখতে পায়।আদি সামুর পাশে গিয়ে আস্তে করে বসে।

সামু আদিকে দেখে বললো,
—-আদি চুল টেনে দেও।
মাথা কেমন ব্যথা করছে।

আদি সামুর মাথার চুল টানছে।আর তখনই সামু আহ শব্দ করে উঠলো।
আদি ওর চুল ছেড়ে দিয়ে বললো,
—–সরি সরি লেগেছে তোমার?

সামু হাসছে।ওর চোখে পানি এসে পড়েছে।
—–আদি তুমি নও আদিবা।
আদিবা আমাকে মারছে।পেটের ভেতরে ফুটবল খেলছে।দেখতে হবেনা মেয়ে কার?

আদি সামুর পাশে বসে বললো,
—–তোমার মতো বিচ্ছু হবে।তোমরা মা মেয়ে মিলে আমাকে জ্বালাচ্ছো আর মেয়ে তোমাকে জ্বালাচ্ছে।
বাবুই পাখি তোমার মাম্মাকে আর কষ্ট দিওনা।কদিন পরে তো আসছোই তখন আমরা নিহাদ ভাইয়াকে নিয়ে ফুটবল খেলবো।

আদির তখনই মনে পড়লো সামুর ওষুধ খাওয়ার কথা।
—–সামু ওষুধ খেয়েছো?

সামু অবাক হয়ে বললো,
—–কিসের ওষুধ?

—–কিসের মানে?রোজ যা খাও।আমি তোমাকে ফোন করেও বলেছি।

—–তুমি কখন ফোন করলে?তুমি তো আমাকে ফোন করোনি।
সামু ফোন চেক করে টাস্কি খেলো।
তারপর আদির দিকে চেয়ে অপরাধীর ভংগীতে বললো,
—–আমার আসলে মনে নেই।মানে মনে পড়ছেনা কখন কথা হয়েছে,কি কথা হয়েছে।

—–সামু তুমি আবার ভুলে গেছো?
ঠিক আছে ব্যাপার না।আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।

আদি ওষুধ এনে দেখে সামু কাদছে।
আদি বিচলিত হয়ে পড়ে।
—–সামু কাদছো কেন?শরীর খারাপ লাগছে?

সামু কান্নারত অবস্থায় বললো,
—–আদি আমি সব ভুলে যাই কেনো?
ইদানীং আমার সব গুলিয়ে যায়,সব ভুলে যাই।

আদি বললো,প্রেগ্ন্যাসির সময় এমন হয়।আমি আছি তো।।

—–না আদি আমার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অন্য কিছু।

—–মানেহ?

—–এক্সিডেন্ট!
সামু ছোট করে শ্বাস নিলো তারপর বললো,
—–এক্সিডেন্টের সময় আমার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগে।সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও আমি মাথা ব্যথায় ভোগতাম।নিশি আপুকে বলার পর নিশি আপু সবাইকে বলে দেয়।যার ফলে আমাকে ডক্তরের কাছে নিয়ে যায়।

হটাৎ আদির মনে পড়লো,
—–হ্যা।আমার মনে পড়েছে।একদিন তুমি মাথা ব্যথা বলে ডিনার করতে আসোনি।তারপর বাবা-মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে আর তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে।তারপর?

—–ডাক্তার দেখে আমাকে বলেছিলো স্ট্রেস ফ্রি থাকতে আর কিছু মেডিসিন দিয়েছিলো।বলেছিলো ৩মাস কন্টিনিউ করতে।কিন্তু আমি ওষুধ খেতে ভুলে যেতাম,আলসেমি করতাম তারপর বিয়ে নিয়ে আমার লাইফে যে ঝড় এলো তাতে করে ডিপ্রেশনে ভোগতাম আর এসব ট্রিটমেন্টের কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।এখন মনে হচ্ছে….

আদি সামুকে বলতে না দিয়ে বললো,
—–রিপোর্ট তোমার কাছে আছে?

—–হ্যা গেস্ট রুমে আছে।

আদি উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–চলো রেডি হয়ে নিবে।আমরা এখুনি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।তোমার ব্যাপারটা খোলে বলবো।রিপোর্ট দেখতে চাইলে দেখাবো।দরকার পড়লে টেষ্ট করবো।দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।ডাক্তার বলবে সব ঠিক আছে।(সামুকে আশ্বস্ত করলো)

আদি-সামু ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে।এর আগে উনার কাছেই সামু ট্রিটমেন্ট করেছে।উনি সমস্ত ঘটনা শুনে বললেন,
—–আমরা বাঙালীরাই এমন।একটু সুস্থ হলেই আর ওষুধ খেতে চাইনা।এমন একটা সেন্সেটিভ বিষয়ে কেউ গাফলতি করে?
মি.চৌধুরী আমার মনে হচ্ছে মিসেস চৌধুরীর কিছু টেস্ট করা জরুরী।

—–জ্বি যা করার করুন।তাড়াতাড়ি করুন।আমি আমার ওয়াইফকে সুস্থ দেখতে চাই।

ডাক্তাররা এটা সেটা করে দুই ঘন্টা পর আদিকে জানালো পূর্বের সমস্যা এখন দেখা দিয়েছে।উনার আগের সমস্যা রয়ে গেছে।তবে চিন্তার কারণ নেই তেমন নিয়মিত মেডিসিন কন্টিনিউ করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।আর হ্যা নিয়মিত চেকাপ করতে হবে,ওর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

আদি সামান্তাকে এসব কিছুই জানায়নি।শুধু বলেছে কিছু মেডিসিন দিয়েছে ওগুলো নিয়মিত নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

আদি গাড়ি ড্রাইভ করছে।ওর মন বারবার অন্যদিকে চলে যাচ্ছে।টেনশন লাগছে খুব।তখনই আদির ফোন বেজে উঠলো।
আদি ফোন রিসিভ করে কানে দিলো।

সামু চেচিয়ে বললো,
—–তোমাকে কতদিন নিষেধ করেছি গাড়ি চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলবেনা।ফোন রাখো।

—–অফিসের ফোন।২মিনিট প্লিজ।

—–আদি তুমি আমার কোনো কথা শুনোনা।খুব দরকারী ফোন হলে গাড়ি থামিয়ে কথা বলো।এভাবে কত এক্সিডেন্ট হয় জানো?
বেবির কথা অন্তত ভাবো।

আদি এক আংগুল দেখিয়ে বললো ইশারায় এক মিনিট বললো।আদি অফিসের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলছে ওর পুরো খেয়াল সেদিকে।সামুর চিতকারে আদির হুশ হয়।সামুর চিতকারে সামনে তাকায়।একটা ট্রাক ওদের গাড়ির বরাবর।আদি ব্রেক করতে নিবে তার আগেই ট্রাকের সাথে গাড়ি ধাক্কা খায়।
.
আদির শরীরে কাচের টুকরো বিধে আছে।আদি সামুকে জড়িয়ে আছে কোনো রকমে।সামুর মাথা বেয়ে রক্ত পড়ছে।চোখ বন্ধ।সামুর বিরবির শব্দ আদির কানে আসছে।সামু বিরবির করে বলছে,
“আমার বেবির কিছু হলে ক্ষমা করবোনা তোমাকে।”

আদি চোখ খোলে রাখার অফুরন্ত চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।আশেপাশে থেকে মানুষের চিতকার চেচামেচির শব্দ ভেসে আসছে।শব্দগুলো জোরালো হচ্ছে।ধীরে ধীরে আদির শরীর অসার হয়ে আসে চোখ বন্ধ হয়ে যায়।

জ্ঞান ফিরে আদি নিজেকে হসপিটালের বিছানায় শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করে।মাথায় হাতে,পিঠে,পায়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছে।
আদি চোখ মেলে আশেপাশে তাকায়।তখনই ওর মনে পড়ে সামুর কথা,এক্সিডেন্টের কথা।আদি উঠে বসার চেষ্টা করে।কিন্তু উঠতে পারছেনা।
আদি সামু সামু বলে ডাকায় নার্স আদির কাছে ছুটে আসে।

আদি নার্সকে দেখে বলে,
—–আমার ওয়াইফ ও কোথায়?আমার সামু কোথায়?আমার বেবি?

আদি উঠার চেষ্টা করলে নার্স ওকে বাধা দেয়।
—–প্লিজ এমন উত্তেজিত হবেন না।প্লিজ শান্ত হোন।

আদি রেগে গিয়ে বলে,শান্ত মাই ফুট।আমার ওয়াইফ কোথায় আমি ওর কাছে যাবো।

—–উনি আছেন পাশের কেবিনে।

আদি কিছুটা উঠে বলে,
—–আমি যাবো ওর কাছে।আমি ওকে দেখতে চাই।

তখনই ডাক্তার আসে।আদি ডাক্তারকে দেখে অস্থির হয়ে বললো,
—–আংকেল,আমার ওয়াইফ সামান্তা,,সামান্তা কোথায়? ও ঠিক আছে তো?আর বেবি?
আদি এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো।

ডাক্তার আদির কাছে এসে বললো,
—–রিলেক্স আদি।আগে রিলেক্স হও সব বলছি।

আদি বললো,
—–আংকেল আমি রিলেক্স হয়েছি আপনি বলুন।

—–আদি তোমাদের বেবি ভালো আছে।তোমাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে।

আদির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।অস্ফুটস্বরে বললো,আদিবা!

তারপর আদির মনে পড়লো সামান্তার কথা।
—–আংকেল সামান্তা?

—–সামান্তা পাশের কেবিনে।আদি বুঝার চেষ্টা করো।তোমাদের একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।আর সামান্তা প্রেগন্যান্ট ছিলো।তোমার এই অবস্থা তাহলে নিশ্চয়ই সামান্তার অবস্থা ভালো আশা করোনা।ওর কন্ডিশন খারাপ দেখে আমরা ইমার্জেন্সি সিজার করি।
ওর এখনো জ্ঞান ফিরেনি।একে তো এক্সিডেন্ট হয়েছে আর প্রেগন্যান্ট ছিলো ওর উপর অনেক প্রেশার গেছে।জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছিনা।

আদি আকুতিভরা কন্ঠে বললো,
—-প্লিজ এ কথা বলবেন না।ওকে বাচিয়ে দিন।ওকে সুস্থ হতে হবে আমার জন্য বেবির জন্য।আমি ওকে দেখতে চাই প্লিজ।

—–আদি তোমার এই অবস্থায় মুভ করা ঠিক হবেনা।এছাড়া সামান্তার রুমে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা।ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
তুমি বরং বেবিকে দেখো।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ডাক্তার আদিকে শান্তনা দিয়ে চলে গেলো।বেবিকে দেখলে যদি একটু শান্ত হয়।
আদির মা আদি আর সামুর অবস্থা দেখে কান্না করতে করতে বেহুশ হয়ে গেছে।নিশি বেবিকে তোয়ালে পেচানো অবস্থায় কোলে নিয়ে আদির কেবিনে ঢুকলো।

আদি উদগ্রীব হয়ে আছে বেবিকে দেখার জন্য।
নিশি বেবিকে ওর কাছে নিয়ে যায়।আদি বেবির দিকে তাকাতেই ওর অশান্ত মন কিছুটা হলেও শান্ত লাগছে।
গায়ের রং সাদা ধবধবে।ঠোঁট দুটো চেপে ঘুমাচ্ছে।আদি ওর গালে হাত রাখতে চেয়েও রাখলো না।
যদি বেবির গায়ে জীবাণু লাগে।তবুও আদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা।আদি বেবির কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।বেবি কিছুটা নড়ে-চড়ে উঠলো।আদি তারপর কানের কাছে গিয়ে বললো,
—–তোমার নাম আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।
তোমার মাম্মা জলদি সুস্থ হয়ে যাবে দেখো।তোমাকে অনেক আদর করবে।

আদি আংগুল দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।
নিশির শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই।তবুও নিজেকে সামলে বললো,
—–ভাইয়া সামু সুস্থ হয়ে যাবে চিন্তা করোনা।

—–ওকে সুস্থ হতেই হবে।

আজ দুদিন হয়ে গেছে সামান্তার জ্ঞান ফিরেনি।আদি এখনো হসপিটালেই আছে।নিশি আদিবাকে সামলাচ্ছে নিজের বাচ্চা ছেলের সাথে।
আদি ছটফট করছে।জোর করে উঠে গেছে।বেড থেকে নেমে দাড়িয়েছে।আদি বের হতে চাইছে।নার্সরা ওকে থামানোর চেষ্টা করছে।আদির মা দৌড়ে এলো।
আদি ওর মাকে দেখে বললো,
—–সামুর জ্ঞান কেন ফিরছেনা?
আমি ওকে দেখতে চাই।কথা বলতে চাই।কেউ আমাকে কিছু বলছেনা কেন?

—–আদি আমিও জানি না বাবা সামুর জ্ঞান কেন ফিরছেনা।তোমার ডাক্তার আংকেল গিয়েছে চেক করতে।উনি এসে বলবেন কি করতে হবে।
তুই একটু শান্ত হ।সব ঠিক হয়ে যাবে।

—–সামুকে যতক্ষণ না ঠিক দেখছি আমি শান্ত হতে পারছিনা।

ডাক্তার আদির রুমে এলো।আদির মা এগিয়ে গিয়ে বললো,
—–সামুর কি হয়েছে? এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন?

ডাক্তার একবার আদির দিকে তাকালো।তারপর বললো,
—–আপা চলুন বাইরে গিয়ে কথা বলি।

আদি বললো,নো আমার সামনে সব কথা হবে।

আদির মা বললো,
—–ভাই এখানেই বলো।

ডাক্তার কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বললো,
—–আসলে সামান্তার ব্রেইনের সেলগুলো কাজ করছে না।ওর কোনো রেসপন্স নেই।ওর মাথায় পুরনো আঘাত+নতুন করে আঘাত আর আতংকের কারণে ব্রেইনের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
আমার মনে হচ্ছে সামান্তা….
ডাক্তার থেমে গেলো।

আদি আতংকিত হয়ে বললো,
—–সামান্তা কি?

—–আদি তোমাকে কথাটা কি করে বলি।আমরা কোনো আশা দেখতে পাচ্ছিনা।ওর লাইফ রিক্স আছে আর বেচে থাকলেও কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।আমি বিদেশের বড়বড় হসপিটাল,ডক্তরের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেছি।সামান্তার অবস্থা ক্রিটিকাল।বাকিটা আল্লাহর হাতে।

—-নাহ এ হতে পারেনা।কিছুতেই না।
আদি ভাংচুর শুরু করে দেয়।রুমের সব কিছু ফেলে দিচ্ছে।ওর হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে।ব্যান্ডেজ করা জায়গা গুলো ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।আদির মা আদিকে থামালো।ডাক্তার ওকে তাড়াতাড়ি একটা ইনজেকশন দিয়ে দেয়।আদি ওর মায়ের বুকে মাথা রেখে বললো,
—–আমি আমার সামান্তাকে মেরে ফেললাম।আমি খুনি।

আদিকে বেড়ে শুইয়ে দিতেই নার্সরা চিতকার করছে।সামান্তার রুম থেকে চিতকার ভেসে আসছে।ডাক্তার তাড়াতাড়ি সেখানে গেলো।
সামান্তার পার্লস উঠানামা করছে।ডাক্তাররা সামান্তাকে চেকাপ করছে।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার মলিন মুখে বেড়িয়ে এলো।আদির মায়ের কাছে এসে দাড়ালো।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু…

আদির মা চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে।তার শরীর কাপছে।কিছু শোনার অবস্থায় নেই।

আদির বাবা কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
—–কিন্তু কি ডক্টর?

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—–ও কোমায় চলে গেছে।জানি না কোনো দিন ফিরবে কিনা।

আদির মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।সামুর বাবা কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেছে।আদির মায়ের আহাজারিতে পুরো হসপিটাল ভারী হয়ে গেছে।আদিকে কি জবাব দেবে?আদি কি করে মেনে নিবে?

চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ