#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
……..{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~২৬
ঘড়িতে ঘন্টার কাটা ১০টা ছুইছুই।সামু আড়মোড়া ভেঙে নড়ে-চড়ে উঠে চোখ মেলে।
দেয়াল ঘড়িতে চোখ পড়তেই চোখ ছানাবড়া।সামু লাফিয়ে উঠে।আদিকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছে।সরাতে না পেরে আদিকে ডাকছে।
“আদি এই আদি একটু সরুন”
আদি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সামুর কথা ওর কান দিয়ে প্রবেশ করছে কিনা সন্দেহ।
“হায় আল্লাহ!এর কি ঘুম?মানুষ চিতকার করতে করতে মরে গেলেও উনি শুনবেন না।”
সামুর প্রচন্ড রাগ লাগছে।সামু চিতকার করে আদির শরীর ঝাকিয়ে ডাকছে।।
“আদিইইইইই!”
আদি সামুর চিতকারে নড়ে-চড়ে চোখ মেলে বিরক্তি নিয়ে বললো,
—–তুমি আবার এমন করছো?বললাম তো একটু ঘুমাবো।
সামু দাতে দাত চেপে বললো,
—–আপনি সারাদিন ঘুমান।তার আগে আমাকে উঠতে দিন।১০টা বেজে গেছে।সবাই নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে।না জানি কতবার ডেকে গেছে।ছিহ!!
আমি কিন্তু প্রচন্ড রেগে যাচ্ছি।
আদি ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
—–উমম,রাগতে থাকো।আমার ঘুম পাচ্ছে।
সামু আবারো ধাক্কা মেরে বললো,
—–আমি কিন্তু সত্যিই রেগে যাচ্ছি।
আদি মাথা তুলে পিটপিট করে চোখ মেলে বললো,
—–রেগে গেলে কি করবে?কামড়ে দিবে?
—–দেখুন…
আদি মাথা আবারো নামিয়ে হাই তুলে বললো,
——দেখা শেষ।
সামু আদিকে মারতে শুরু করলো,
—–অসভ্য,ফাজিল,লুচু ছেলে।
জলহস্তী আমাকে যেতে দিন।
—–এমন রুড ভাষায় আমি যেতে দেবোনা কিউট করে একটু সুইট মিশিয়ে বলো ছেড়ে দিচ্ছি।
সামু টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—–প্লিজ।
আদি মুচকি হেসে ছেড়ে দিলো।সামু কোনো রকম শাওয়ার নিয়ে ভো দৌড়।
নিচে গিয়ে দেখে মেহমানরা বিদায় নিতে শুরু করেছে।
সামু ডাইনিং এর সামনে যেতেই নিশি ওর সামনে এসে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে।
সামু নিশিকে দেখে ওর দিকে চেয়ে বললো,
—–কি ব্যাপার আপু?
—–তুই বল তোর কি ব্যাপার? সকাল ১০টা ৩৬ এ তোর চাদ মুখ দেখা গেলো? এত বেলা পর্যন্ত ঘুম?নতুন বউ আমি না তুই?
সামু কাচুমাচু করে বললো,
—–ইয়ে মানে আপু আসলে গতকালের প্রোগ্রাম এর জন্য অনেক টায়ার্ড ছিলাম আর তাছাড়া বাড়িভর্তি মেহমান, ঘুমাতেও লেট হয়ে গেছে।কিভাবে এতো বেলা হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।
নিশি শব্দ করে হেসে বললো,
—–বাহ!!ভাবি আমার কৈফিয়ত দিচ্ছে।
সামু নাক ফুলিয়ে বললো,
——নাস্তা করেছো?
——হ্যা ডান।যাই জয়কে তুলি।শ্বশুর বাড়িতে আরাম করে ঘুমাচ্ছে।ওর আরামের ঘুমের ১২টা বাজিয়ে আসি।
নিশি জয়কে ঘুম থেকে তুলতে চলে গেলো।
সামু ভাবছে,
—–আমি কি করবো আদিকে তোলা আমার সাধ্য নয়।তারচেয়ে আমি নাস্তা করে নেই।
লাঞ্চে নিশি আর আদির ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করা হয়েছে।বাড়ির অন্য মেহমানরা চলে গেছে।নিশি আর আদির ফ্রেন্ডরা আসতে শুরু করেছে।
নিশি সবার মধ্যমণি হয়ে বসে আছে।আর ওর ফ্রেন্ডরা ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ছে কথার ঝুলি নিয়ে।
আদির ফ্রেন্ডরাও আসতে শুরু করেছে।আদি তখনও ঘুম।
আদির মা আদির ফ্রেন্ডদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে সামুকে বললো যাতে আদিকে ডেকে আনে।
সামু আদিকে ডাকতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আদির সব ফ্রেন্ডরা সামুকে ঘিরে ধরলো।
—-এই যে আপু মানে ভাবী…ভাবী না আপু সেটাই বুঝতে পারছিনা।
সামু মুচকি হেসে বললো,
—–ভাবী..
—–আপনি সত্যিই আদির ওয়াইফ?
সামু ওদের কথা শুনে অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।তারপর বললো,
—–কেনো আদি আপনাদের কিছু বলে নি?
—–হ্যা বলেছে কিন্তু ও কি মজা করছে না সিরিয়াস বুঝতে পারছিনা।ও বিয়ে করেছে আর আমরা জানি না এটা কি হবে সম্ভব? কবে,কিভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো?
—-সেটা আপনারা জিজ্ঞেস করে নিবেন।
সামু পা বাড়ালো।কিন্তু ওরা নানা রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছে।সামু কি বলবে?কোথায় থেকে বলবে?আদি আবার রিয়েক্ট করবে কিনা।বিরক্ত লাগছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা।
আদি হুড়মুড় করে সিড়ি দিয়ে নেমে ওদের সামনে এসে দাড়ালো।তারপর সামুর দিকে তাকালো।সামুকে ইশারা করলো চলে যেতে।
সামু চলে যেতেই আদি বললো,
—–আমার বউয়ের কাছে তোদের কি চাই?এভাবে ঘিরে ধরেছিস কেন?
অয়ন বললো,
—–ইয়ার কেমনে কি?
তুই বিয়ে করলি দাওয়াত পেলাম না কিছু জানলাম ই না।
—–এই যে আজ জানলি।আজ কেন ২-৩ দিন ধরে জানিস।আর দাওয়াত? এই যে খাওয়াচ্ছি তোদের পেট ভরে না?
—–শালা বিয়ে করে নিলি আর এখন খাওয়ার খুটা দিস?তোর না মেয়েতে এলার্জি?
—–হুম বাট সামুতে আমার এলার্জি নেই।সামু ছাড়া সব মেয়েতে আমার এলার্জি।সামু আমার আসক্তি,নেশা এন্ড মাই লাভ।
অয়ন আদির কাধ চাপকে বললো,
—–ভাই আমার গায়া।একদিন বলেছিলাম না নেশায় ডুবে মরবি।দেখেছিস অয়ন মিথ্যা বলে না।কিন্তু কি এমন দেখলি ভাবীর মাঝে সেটা জাতি জানতে চায়।
আদি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—–ইটস সিক্রেট বলা যাবেনা।
আর হ্যা হুট হাট আমার বউকে এভাবে ঘিরে ধরবিনা।দূরে থাকবি।আদির প্রপার্টিতে আদি কাউকে ভাগ দেয়না।গট ইট।
—–জ্বি বস।
আদি সামুকে আড়ালে ডেকে নিলো।সামু চুপ করে দাড়িয়ে আছে।আদি সামুকে মনভরে দেখে নিয়ে খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে বললো,
—–আমার বন্ধুদের থেকে দূরে থাকবে।
বুঝলে?
সামু মাথা নাড়িয়ে শায় দিলো।
—–গুড গার্ল।
আদি সামুর ঘাড়ের চুল সরিয়ে চুমু দিতে নিবে তখনই কারো আসার শব্দে সামু ছিটকে সরে গেলো।
আদির মা আসছে।আদিকে দেখে বললো,
—–তোর উঠার সময় হয়েছে?বন্ধুদের দাওয়াত করে ঘুমাচ্ছিস?যা দেখা করে আয়।
—-মা অলরেডি ডান।
—-ওহহ আচ্ছা।তাহলে নাস্তা করে নে।সামু যাও আদিকে নাস্তা দেও।
—–হ্যা মামনি।
চলুন।(আদিকে উদ্দেশ্য করে)
আদি ফিসফিস করে বললো,
—–আরে আমার কাজ তো এখনো শেষ হয়নি।আমি এখন নাস্তা করবোনা।
আদির মা আদিকে ফিসফিস করতে দেখে বললো,এই ফিসফিস করছিস কেনো?
সামু মুচকি হেসে বললো,
—–উনি বলছেন উনার খুব ক্ষিধে পেয়েছে তাড়াতাড়ি খাবার দিতে।
চলুন চলুন আপনাকে নাস্তা দেই নয়তো ক্ষুধায় বাড়িঘর সব খেয়ে নিবেন।
আদি দাতে দাত চেপে বললো,
—–চলো।
আদি নাস্তা করতে বসেছে।আদি সামুকে ডেকে পাশে বসালো।
—–সামু আমি শুধু একবার চান্স পাই।তারপর দেখো।
সামু ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আদিকে ভেংচি কেটে দেয়।
আদির বন্ধুরা লাঞ্চ করছে।আদির মা সব তদারকি করেছে।সামু আদিকে ওদের আশেপাশে আসতে দেয়নি।
—–আন্টি আমাদের বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেলো আর আমরা না খবর পেলাম না দাওয়াত?ও আমাদের কিছুই জানায়ওনি।আমরা ওর বন্ধু হই।এটা কি ঠিক হলো?
আদির মা স্নিগ্ধ হেসে সৌজন্যতার সাথে বললো,
—–আসলে বাবা হয়েছে কি,,হুট করেই আদির বিয়েটা হয়ে যায় বেশ ঘরোয়া ভাবে।
আদির বন্ধুরার আদির মায়ের কথা শুনে থমকে গেলো।
—-কি বলেন আন্টি?আদির বিয়ে এতো সাধারণ ভাবে?
এই শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলের বিয়ে এতো সাধারণ ভাবে?
আদির মা ওদের কথা শুনে দমে গেলো।সাথে আদিও।খাওয়া বন্ধ রেখে ওর মায়ের দিকে চোখ রাখলো।তিনিও ভাবনায় বিভোর।
আসলেই তো মেয়ের বিয়ে এতো ধুমধামে দিলেন আর ছেলের বিয়ে?
সেদিন মহল্লার কিছু মানুষ আর কাছের আত্মীয় স্বজনরা সামুর বিয়েতে উপস্থিত ছিলো।রাজের সিনের পর অনেকে চলেও গিয়েছিলো।
সামু আর আদির বিয়ে নিজেদের মধ্যেই হয়েছিলো।বাইরের তেমন কেউ ছিলো না।অনেকেই জানেনা আদি বিয়ে করেছে এমন কি সামুকে সামাজিক ভাবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।
নিশি সালাদ মুখে তুলে বললো,
—–বলছি কি মা ভাইয়া আর সামুর বিয়েটা আরেকবার দিয়ে দেও।
কি বলেন আপনারা?
(আদির বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে)
ওরা আস্কারা পেয়ে নিশির হ্যা তে হ্যা মিলালো।
নিশি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
——ওয়াও!!বাড়িতে আবারো একটা অনুষ্ঠান হবে।
নিশির মায়ের দিকে চোখ পড়তেই দেখে তিনি ভ্রু কুচকে নিশির দিকে চেয়ে আছে।
——না মানে মা বলছিলাম তোমরা সবাই যদি চাও তবেই।কিছু না হোক একটা রিসিপশন তো হতেই পারে।সামু আর ভাইয়ার।মেহেদী, হলুদ নিজেরা করলাম।
আদির এক ফ্রেন্ড বললো,
—–এটা কিন্তু বেশ বলেছো নিশি।
সবার দৃষ্টি আদির দিকে।আদি নির্লিপ্ত ভাবে খেয়ে যাচ্ছে।যেনো এসবে ওর কিছু আসে যায়না।
ওর যা পাওয়ার পেয়ে গেছে।
দুপুরের খাবার খেয়ে নিশি আর আদির ফ্রেন্ডরা সব চলে গেছে।আদির মামা আর ফুপিরা এসেছে।সেদিনের পর নওমী আর এ বাড়িতে পা রাখেনি।নিশির বিয়েতেও আসেনি।
রাতে সবাই বসে আদি আর সামুর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছে।সামু এসবের এক বিন্দুও জানেনা।এসব আলোচনা কেউ ওর কানে তুলেনি।
ডিনার শেষ করে আদি সবার আড়ালে সামুকে বললো,
—–তাড়াতাড়ি রুমে এসো।
আদি তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।
অনেকটা সময় কেটে গেছে সামুর খবর নেই।আদির মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এই মেয়ে ওর একটা কথাও শুনেনা।আদি রাগ কন্ট্রোল করার জন্য রুম জুড়ে পাইচারি করছে।সামু দরজা ঠেলে রুমে আসতেই আদি ওর কাছে গিয়ে ওকে চেপে ধরলো।
—–এত দেরি হলো কেনো?তোমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলিনি?নিচে এতোক্ষণ কি করছিলে?
সামু আমতা আমতা করে বললো,
—–মামারা,ফুপিরা ছিলো।উনাদের রেখে কিভাবে চলে আসি।আমি এ বাড়ির বউ একটা দায়িত্ব আছে।
—–আর আমি? তুমি প্রথমে আমার বউ তারপর বাকিটা।তাই আগে আমার দিকে নজর দেও।দেখছো না কতটা পাগল হয়ে যাচ্ছি?
সামু আদির বুকে মাথা মিশিয়ে নিয়ে বললো,
—–ওকে বাবা ওকে।আ’ম হেয়ার নাও।
আদি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
—-জানো নিচে আমাদের দ্বিতীয়বার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে?
সামু আদির কথা শুনে চমকে গেলো।মাথা তুলে আদির দিকে তাকালো।আদির মুখের উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেলো।সামুর চেহারার এক্সপ্রেশন বলে দিচ্ছে সামু ওর মতো এক্সসাইটেড না।
—–আবারো বিয়ে মানে?
আদি কৌতুহল নিয়ে বললো,
—–তুমি খুশি নও?
সামু তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
—–খুশি হওয়ার মতো কিছু দেখছিনা।আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে আবার কি?
—–হয়েছে।বাট সাদামাটা।আদিল চৌধুরীর বিয়ে এমন নিরামিষ হতেই পারেনা।আমার মেহেদী, হলুদ,রিসিপশন কিছুই হয়নি।হুট করে যে পোশাকে ছিলাম সেই পোশাকে বিয়ের আসরে বসে কবুল বলে বিয়ে করে নিয়েছি।বাট এইবার মেহেদী,হলুদ,বিয়ে,রিসিপশন সবকিছুতেই আমাদের অধিকার থাকবে।আমাদের নাম থাকবে।
সামান্তা কিছু বলছেনা।কেননা সবাই যদি চায় ওর কিছুই করার নেই।হোক আরেকবার বিয়ে।সবকিছু আদির নামে।
.
আদি সামুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।এর মাঝে সামুর ফোন বেজে উঠলো।সামু ফোনের শব্দ পেয়ে আদিকে সরিয়ে দিলো।কিন্তু আদি সামুকে যেতে দিচ্ছেনা।
——আদি ফোন বাজছে।
——বাজুক।এতরাতে কিসের ফোন?
——সেটা জানার জন্য ফোনটা দেখতে হবে।
সামু বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফোন হাতে নিলো।জানভির ফোন।সামুর কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।এতে রাতে হটাৎ করে ফোন কেন দিলো।
আদি সামুর পেছনে পেছনে উঠে গেলো। সামুকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলো,
—–কার ফোন?
—–জানভীর।
—-এই মেয়ে এতো রাতে কি চায়?
সামু আদির কথার উত্তর না দিয়ে ফোন রিসিভ করতে নিলো।
কিন্তু ফোনটা কেটে গেলো।সামু ফোন হাতে বারান্দায় চলে গেলো।তারপর জানভির নাম্বারে ফোন দিতেই জানভি মৃদু স্বরে হ্যালো বললো।
সামু বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
—–জানভি সব ঠিক আছে? এতো রাতে ফোন কোনো সমস্যা?
—–হ্যা সমস্যা।অনেক বড় সমস্যা।আমার ভালো লাগছেনা ঘুম আসছেনা।
তাই তোকে ফোন দিলাম।
সামুর মেজাজ চড়ে গেলো।
—–আমি তোর ঘুমের ওষুধ? না আমি তোর বয়ফ্রেন্ড?ঘুম আসছেনা বয়ফ্রেন্ডকে ফোন করে বিরক্ত কর।আমাকে বিরক্ত করিস না।আমি ব্যস্ত আছি।বায়।
সামু খট করে ফোন রেখে দিলো।ফোন রেখে ঘুরতেই আদির সাথে ধাক্কা খেলো।সামু ধাক্কা খেয়ে নাকে হাত দিলো।নাকে ব্যথা পেয়েছে।
আদি ঘনঘন পলক ফেলে বললো,
—–আহারে আমার বউটা ব্যথা পেয়েছে
এত সুন্দর নাক দুমড়ে মুচড়ে গেলো।
সামু আদির কথা শুনে মৃদু হাসি দিলো।
আদি সামুর নাকে ঠোঁট ছোয়ালো।সামুকে কাধ থেকে চুল সরিয়ে ঠোঁট ছুয়াতে নিবে তখনই আবার ফোন বেজে উঠলো।আদি সামুর দিকে চোখ মুখ শক্ত করে চেয়ে ওকে ছেড়ে সরে দাড়ালো।
সামু ফোন কেটে সাইলেন্ট মুডে রেখে দিলো।
আদি সামুকে বললো,
—–এই মেয়ের সমস্যা কি?কোনো ম্যানারস নেই?একটা বিবাহিত মেয়েকে এতো রাতে আজাইরা গল্প করার জন্য ফোন দিচ্ছে।একটু কমন সেন্স নেই।কি ধরনের ফ্রেন্ড তোমার?
অবশ্য এমনই হওয়ার কথা সেদিন তো দেখলাম কি পরিমাণ গায়ে পড়া।
সামু এতক্ষণ চুপ থাকলেও বললো,
—–আদি ওরা মোটেও গায়ে পড়া না।সেদিন তো ইচ্ছে করে এমন করেছে।তোমার সাথে মজা করেছে।আর তার আগে আমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়েছে।
আদি অবাক হয়ে বললো,
—–তুমি পারমিশন দিয়েছো?তুমি তোমার হাসব্যান্ডকে অন্য মেয়ের কাছে মজা করার বস্তু বানিয়ে দিয়েছো?
সামু আদিকে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।আদি যেমন ভাবছে তেমন কিছু নয়।
——আদি তুমি ভুল ভাবছো।আসলে ব্যাপারটা সের…
সামুকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে সামুর হাত টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
—–যাও মাফ করে দিলাম সবকিছুর জন্য।
সামু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কিসের জন্য মাফ করলো তাও হটাৎ করে।
সামু আদির মুখের দিকে বোকার মতো চেয়ে আছে।
আদি মুচকি হেসে বললো,
—–বুঝতে পারলেনা তাই না?
তুমি আমাকে তুমি করে বলেছো।আর তোমার মুখে তুমিটা একদম বুকে গিয়ে লেগেছে।প্রচন্ড ভালো লেগেছে।
আদি সামুকে কোলে তুলে নিলো।বালিশে সামুর মাথা রেখে আদি একপাশ হয়ে শুয়ে হাতের উপর মাথা ভর দিয়ে সামুর দিকে ঝুকে বললো,
—–তোমার ছেলে ফ্রেন্ড আছে?
আদির প্রশ্ন শুনে সামু চুপ করে গেলো।হটাৎ ছেলে ফ্রেন্ড আছে কিনা জানতে চাইছে কেন?
সামু আমতা আমতা করে বললো,
—–হটাৎ?
—–এমনি বলোনা।
সামু জানে আদি ওর ছেলে ফ্রেন্ড আছে সেটা মেনে নিবেনা।
—–হ্যা সিলেটে ছিলো বাট এখন আর যোগাযোগ নেই।
আদি সামুর চুল নিয়ে খেলছে।
—–গুড।আর এখানে?
সামু আদির দিকে একবার চেয়ে দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবছে আদিকে কি বলবে?তবে মিথ্যা বলবে না।
সামু আদির দিকে চোখ রাখতেই দেখে আদি অধীর আগ্রহে সামুর উত্তর শোনার জন্য চেয়ে আছে।
—–ফ্রেন্ড নেই।তবে দুজন ক্লাসম্যাট আছে যাদের সাথে টুকটাক কথা হয়।
আদি সামুর দিকে আরেকটু ঝুকে বললো,
—–আজকের পর আর কোনো ছেলে তোমার লাইফে থাকবেনা।নো ছেলে ফ্রেন্ড।অনলি আদিল চৌধুরী।
সামু বিস্ময় নিয়ে কিছু বলার জন্য ঠোঁট নড়াতেই আদি নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।সামুকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা।সামুর ঠোঁট ছাড়ার পরও সামু আর কিছু বলতে পারলো না।কারণ আদি ওকে গভীর ভাবে আলিংগন করে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে।
~পরেরদিন সকাল ~
সামু আদি দুজন একসাথে নামছে।নাস্তা শেষে নিশি সামুকে বললো,
—–বেবি সেকেন্ড বিয়ের জন্য রেডি হও।
আদি ভ্রু কুচকে বললো,
—–সেকেন্ড বিয়ে মানে কি?সামুকে কি অন্য কারো সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
নিশি জিহবায় কামড় দিলো।আসলেই তো।
—–না মানে ওই আর কি?তোমাদের দুজনের বিয়েই হচ্ছে বাট সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো।আগামী সপ্তাহে তোমাদের রিসিপশন।এগেইন বাসর সাজানো হবে।সে পর্যন্ত তোমাদের আলাদা রুম।
আদি চোখ বড়বড় করে বললো,
—–এটা কেমন কথা?
সামু মনে মনে হাসছে।
“বুঝো ঠেলা,করো বিয়ে।বেশ হয়েছে।”
(মনে মনে)
সামু স্মাইল দিয়ে বললো,
—–এটাই কথা মানে নিয়ম।আমি রাজি।
আদি আন্দোলন করার ভংগীতে বললো,
—–মানি না মানবো না।
আদির মা পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো আদির কথা শুনে ওর সামনে এসে বললো,
—–কিরে আদি কি হয়েছে?কি মানবি না।
আদি ওর মাকে দেখে কাচুমাচু হয়ে বললো,
——না মানে মা কিছু না।এমনি আরকি।
আদির মা আদির মুখের দিকে চেয়ে সবার দিকে একবার তাকালো।হয়তো ওরা নিজেদের মধ্যে কিছু বলছে তাই তিনি আর কথা বাড়ালেন না।আদির মা যেতেই সামু শব্দ করে হেসে দিলো।
আদি সামুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।সামু চুপ করে গেলো।আদি যেতেই সামু আবারো শব্দ করে হেসে দিলো।
.
“এই মেয়ে তুমি দেখছি বড্ড খুশি?”
সামুকে আদি বললো।
সামু পেছনে ঘুরে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—–অবশ্যই খুশি।তিন দিন পর আমার বিয়ে বলে কথা।
সামু নিজের জিনিসপত্র গুছানোতে ব্যস্ত।
আদি সেগুলো সামুর হাত থেকে রেখে দিলো।
—–তুমি ওদের কথা শুনছো কেন?আমরা এক সাথেই থাকবো।
সামু আদির দিকে ঘুরে বললো,
—–দেখো আমরা এক সাথে থাকলে বিয়ে বিয়ে ফিল হবেনা।তাই আলাদা থাকাই ভালো।উফফ কয়টা দিন শান্তিতে থাকা যাবে।
আদি বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–কেন আমি তোমাকে জ্বালাই?
—–প্রচুর।আমি এখন ওই রুমে গিয়ে রিলেক্স মুডে ঘুম দেবো।
আদি সামুর দুহাত ধরে বললো,
—–তুমি এখানেই থাকবে।কোথাও যাবেনা।প্লিজ।
সামু কিছুক্ষণ ভাবার ভংগী করে বললো,
—–উমম তুমি যদি সবাইকে ম্যানেজ করতে পারো তবে আমার কোনো সমস্যা নেই।
আদি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—–কিসের ম্যানেজ?আমার বউ আমার ঘরে থাকবে।তাতে কার দাদার কি?
—–তবে একটা শর্তে।
—–আবার কিসের শর্ত?হায় আল্লাহ বাচাও।
—–নো রোমান্স।
আদি সামুর মুখের দিকে চেয়ে আছে।
—–তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন?এতো সুন্দর একটা বউ পাশে থাকবে আর রোমান্স পাবেনা?
——তাহলে বায়।তিনটা দিন কষ্ট করো।শপিং,মেহেদী,হলুদ দেখতে দেখতে চলে যাবে বেবি।
চলবে…..