#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~২৫
সামু শাওয়ার নিচ্ছে আর ভাবছে ও এটা রাজের সামনে কি করলো?
আদি এবার ওকে ছাড়বেনা কিছুতেই।কি করে আদির সামনে গিয়ে দাড়াবে।লজ্জায় মিশে যাচ্ছে।
সামু চেঞ্জ করে আস্তে করে দরজা খোলে যাতে কোনো শব্দ না হয়।তারপর চোরের মতো মাথা বের করে পুরো রুমে চোখ বুলায়।
রুমে কেউ নেই।সামু হাপ ছেড়ে দরজা খোলে বাইরে গেলো।নিচে যেতেই দেখলো আদি ওর ফ্রেন্ড,কাজিনদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে সাথে জয়ও আছে।
সামু নিশিকে আশেপাশে না দেখে নিশির রুমে গিয়ে দরজায় টুকা দিলো।
নিশি ভেতরে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
—–কে?
—–নিশিপু আমি সামু।কি করছো তুমি?
নিশি দরজা খোলে দিলো।নিশির গায়ে কোনো গয়না নেই।লেহেঙ্গার উপরের পার্ট আর একটা প্লাজু পড়া।এলোমেলো চুল থেকে ক্লিপ খোলছে।মুখে এখনো মেকাপ।
নিশি সামুকে বললো,
—–তাড়াতাড়ি ভেতরে আয়।আমার চুল খোলতে হেল্প কর।
নিশি আয়নার সামনে বসে আছে আর সামু ওর চুল খোলে দিচ্ছে।চুল খোলা শেষ করে চুলের জট ছাড়িয়ে আচড়িয়ে দিলো।
নিশি চুল ছাড়িয়ে বাচলো।এতোক্ষণ দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।টিস্যু দিয়ে কিছুটা মেকাপ তুলে বললো,
—–লং শাওয়ার নিতে হবে।বিয়ে যে কি ঝামেলা।তিনদিন যে কি গেলো…উফফ অস্থির লাগছে।
সামু ড্রেসিং টেবিলের উপরে বসে চোখ মেরে বললো,
—–অস্থিরের দিন শেষ এখন শুধু রোমান্স হবে।
নিশি চুলে খোপা বাধতে বাধতে বললো,
—–তাই নাকি?এখন তাহলে আমার ভাবীর দিনরাত শুধু রোমান্স হচ্ছে।
সামুর দিকে চেয়ে ভ্রু নাচালো।
সামু উঠে দাড়িয়ে বললো,
—-তুমি না শাওয়ার নিবে?যাও শাওয়ার নেও।
সামু সেখান থেকে কোনো মতে পালালো।
সামু নিশির পাশে বসে সবার সাথে গল্প করছে।তখনই সামুর চোখ গেলো উপরের দিকে।আদি এক দৃষ্টিতে সামুকে দেখছে।
সামুর কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে সাথে লজ্জাও।চোখ সরিয়ে নিলো।আবার চোখ পড়তেই আদি ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিলো।সামু ভ্যাবাচেকা খেয়ে চারদিকে চোখ বুলালো কেউ দেখছে কিনা।আদির দিকে তাকাতেই দেখে আদি হাসছে।আবারো ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিলো।সামু চোখ বড়বড় করে আদির দিকে চেয়ে পেছন ঘুরে বসলো।
.
.
সারাদিন আদির কাছ থেকে দূরে দূরে থেকেছে।কিন্তু এখন?এখন তো ডিনার শেষ।সবাই ঘুমাতে চলে গেছে।এখন তো ঘুমানোর জন্য হলেও যেতে হবে।
সামু রুমের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো।দোয়া পড়ে বুকে ফু দিয়ে সাহস সঞ্চার করে দরজা খুলল নিঃশব্দে।তবুও হাল্কা শব্দ হলো।সামুর রাগ হচ্ছে এতো সাবধানতা পরেও কেন শব্দ হবে?
সামু দরজা খোলে চমকে গেলো।পুরো রুম অন্ধকার।
সামু ঠোঁট কামড়ে ভাবছে,
—–রুমে কেউ নেই?আদি কোথায়? আর না থাকলেই বা কি?রুমের লাইট অফ হবে কেন?সব সময় তো অন থাকে।
বারান্দায়ও লাইট অফ।জানালা ভেদ করে চাদের হালকা আলো আসছে।বাগানের আলোর ছটাও কিছুটা রুমে এসে পড়েছে।দরজার বাইরের আলো বারান্দার দরজা পর্যন্ত গিয়ে পড়েছে।সেই হালকা আলোয় সামু অতি সাবধানে পা ফেলে লাইট অন করতে আগাচ্ছে।আর তখনই হেচকা টান অনুভব করলো।অন্ধকারে হেচকা টানে সামু ভয় পেয়ে চিতকার করে উঠলো।
পরিচিত একটা কন্ঠস্বর ফিসফিস করে বললো,
—–হিসসসস!
সামু থমকে গেলো।এই ফিসফিস কন্ঠস্বর আর স্পর্শ আদি ছাড়া আর কারো নয়।তবুও কিছুক্ষণ আগে চমকে যাওয়ার কারণে বুক এখনো ঢিপঢিপ করছে।শরীর কাপছে।সামু নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠেই বললো,
—–রুম অন্ধকার কেন?লাইফ অন করুন।
—–তোমার শরীর কাপছে কেন?
—–ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
এই অন্ধকারে এভাবে কেউ ভয় দেখায়?
আদি সামুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।সামু কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে কাপুনিটা কমে গেছে।আদি সামুকে নিয়েই পা দিয়ে ঠেলে দরজা বন্ধ করলো।
সামুর খোপা করা চুল খোলে দিলো।চুলের ঘ্রাণ নিয়ে বললো,
—–রাজের সামনে কি বলছিলে?
সামান্তার বুক আবার ঢিপঢিপ করছে।আদি ওকে কি প্রশ্ন করলো? কিভাবে উত্তর দিবে?
দুজনের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা।আদি সামুর কাধে,ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়ালো।
সামু কেপে উঠলো।
আদি বললো,
—–আরেকবার বলোনা প্লিজ?
সামু কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
—–কি বলবো?
আদি মিনতির সুরে বললো,
—–প্লিজ।সারাদিন অপেক্ষা করে আছি এই কথাটা শোনার জন্য।
সামু ভাবছে ওদের সম্পর্ক ঠিক করে নেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
সামু কাচুমাচু হয়ে আস্তে করে বললো,
—–বলেছিলাম যে..
আমি…
—–তুমি?তারপর?
সামু দ্রুত বললো,ভালোবাসি!
আদি বাকা হেসে বললো,
—–কাকে?
সামু আদির কথা শুনে রেগে গেলো।দাতে দাত চেপে বললো,
—–এই ৬ফুটের সাদা জিরাফকে।
আদি কিছুটা শব্দ করে হাসলো।তারপর সামুর ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
—–আমিও ভালোবাসি এই ধানী লংকাকে।
সামু লজ্জা পেয়ে আদির বুকে মুখ লুকালো।ওর নিশ্বাস উঠানামা করছে।আদি সামুর উষ্ণ নিশ্বাসে মাতাল হয়ে যাচ্ছে।
সামুকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো।
পূর্ণতা পায় দুটো মানুষের ভালোবাসার।
.
সামুর ঘুম ভেঙে যায় ভোরবেলার দিকে।নিজেকে আদির বুকে আবিস্কার করে।মাথা তুলে আদির দিকে তাকায়।আদি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সামু টুপ করে আদির গালে চুমু খায় তারপর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আছে।
সামু উঠার জন্য নড়াচড়া করার কারণে আদির ঘুম হালকা হয়ে যায়।আদি নড়ে-চড়ে ঘুমঘুম চোখে বললো,
—–আর ১০মিনিট ঘুমাতে দেও প্লিজ।খুব ঘুম পাচ্ছে।
—–১০মিনিট কেন ১০ঘন্টা ঘুমান আই হেভ নো প্রব্লেম।শুধু আমাকে ছাড়ুন।
আদি কোনো উত্তর না দিয়ে সামুকে নিচে ফেলে ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
সামু কোনঠাসা হয়ে বললো,যাহ বাবা!এটা কি হলো?
চলবে….