তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-১৯

0
2407

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
…….{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~১৯

??
সামু নিজেকে নরমাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।লিফট ৫তলায় যেতে বেশি সময় নিবেনা।এখানে চিতকার চেচামেচি করে কোনো লাভ নেই।তাই সামুর দৃষ্টি লিফটের গেইটের দিকে।৫তলায় পৌছানোর পর কোনো ভাবে রাজকে ওভারটেক করে বেড়িয়ে যাওয়া সামুর একমাত্র উদ্দেশ্য।
এখন এটা সেটা বলে জাস্ট রাজকে ব্যস্ত রাখতে হবে।সামু ভয়টা ভিতরে দমিয়ে রেখে রাজের দিকে শান্ত চাহুনি দিয়ে বললো,
—–আপনি এখানেও?এখানেও চলে এসেছেন?কি চাই আপনার?

কথা বলার বাহানায় গেটের সামনে এগিয়ে গেলো।

রাজ সামুকে সিরিয়াস ভংগীতে বললো,
—–সামান্তা আমি আজ কোনো বেহুদা কথা বলতে আসিনি।আমি আজ যা বলতে এসেছি সেটা তোমার জানা জরুরী।তাই আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো।

সামু বললো,
—–আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবো?হাও ফানি!! আমার কিছু জানার প্রয়োজন নেই।আপনি আপনার কথা আপনার কাছেই রাখুন প্লিজ।

—–সামান্তা আমিই শুধু তোমাকে ঠকাইনি।তুমি এখনো ঠকছো।ভুলের মধ্যে আছো।তুমি আদিকে বিশ্বাস করে ভুল করছো।আদি…

—–আদি খুব খারাপ ছেলে,বাজে ছেলে।তো!!
আপনি এসব বাদ দিয়ে নিজের চরকায় তেল দিন।এই বাজে খারাপ ছেলেকেই আমি ভালোবাসি।

—–ভুল করছো তুমি।ও একটা ফ্রড….

সামু হুট করে রাজকে ধাক্কা মেরে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। রাজ কথার মাঝে এতটা ব্যস্ত ছিলো লিফট থেমে গেছে সেটা খেয়ালই করে নি।

সামু দোড়াচ্ছে।রাজ উঠে দাড়িয়ে সামান্তা বলে সামুকে এদিক সেদিক খোজছে।আর সামু নিশিকে খোজছে।ফোন বের করে ফোন করলো।আর রাজ সামুকে খোজছে।সামু ড্রেসের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে।নিশি ফোন রিসিভ করতেই সামু নিশিকে সব বলে।নিশি ওর বলা লোকেশনে আসার কথা জানায়।

হটাৎ রাজ সামুর হাত ধরে টান মেরে বের করে বললো,
—–ছিহ! সামান্তা।তুমি লুকিয়ে আছো?আমাকে ভয় পাচ্ছো?তোমার কাছে আমি এটা আশা করিনি।

সামান্তা ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,
—–আপনাকে আমি ভয় পাইনা।আমার জাস্ট আপনাকে ঘৃণা লাগে।কথা বলতে ঘৃণা হয়।

সামু চলে যেতে নিলেই রাজ আবারো সামুর হাত ধরে।সামু নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হচ্ছে।সামু রাজকে ধাক্কা মেরে তাড়াতাড়ি সরে যেতে গিয়ে হুচট খেয়ে সামু পড়ে গেলো।
রাজ কিছু বলতে যাবে নিশি সামু বলে চিতকার করে দৌড়ে এলো।

নিশি রাজকে দেখে দাতে দাত চেপে বললো,
—–হাও ডেয়ার ইউ?সিকিউরিটি গার্ড কই?কেউ আছেন?হেল্প?

নিশি সামুর হাত ধরে সামুকে তুললো।সামু দাড়াতে পারছেনা।
রাজ তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে গেলো।

নিশি নার্সিংহোমের কডিটোর জুড়ে পাইচারি করছে আর জয়কে ফোনে ঝাড়ছে।
“তোমার ভাই এতোটা নির্লজ্জ কেন?সেদিন একটা ঘটনা ঘটিয়েছে আর আজ সামুকে হেরেজ করেছে।ওর জন্য কি সামু বাসা থেকে বের হতে পারবেনা?ও এখন হসপিটালে।পা মচকে গেছে।হাত থুতনি কেটে গেছে।ভাইয়াকে আমি কি বলবো?ভাইয়া যদি জানে কি হবে সেটা ভেবেই আমার ভয় লাগছে।আমি কি জবাব দেবো?বারবার ও এমন করছে।কেন করছে?ভাইয়া যদি বিয়েতে কোনো প্রব্লেম করে তাহলে আমার কিছুই করার নেই।আমি তোমাকে বলে রাখলাম।”

—–নিশি এখানে আমার দোষটা কোথায়?আমি রাজের সাথে সমস্ত যোগাযোগ অফ করে দিয়েছি।ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।চাচাও ওকে থামাতে পারছেনা।এখন আমি…

—–তুমি ফোন রাখো।

নিশি ফোন কেটে সামুর কাছে গেলো।ওর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।থুতনিতে ব্যান্ডেজ করা।হাতের কনুই ছিলে গেছে।

নিশি ওকে ধরে ধরে গাড়িতে বসালো।
সামু পা তুলে পায়ের নিচে কুশন দিয়ে বসে আছে।
নিশি খুব টেনশনে আছে।সেটা ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
—–নিশিপু কি হয়েছে?

নিশি চিন্তিত ভংগীতে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
—-ইয়ার অনেক ভয় লাগছে।ভাইয়া জানতে পারলে কি রিয়েক্ট করবে?সেটা ভেবেই আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

—–আদিকে জানানোর দরকার নেই।হাই টেম্পার কিছু না বুঝেই উল্টো পাল্টা ডিসিশন নিয়ে নিবে।সামনে তোমার বিয়ে আপু।আদি জানতে পারলে ঝামেলা হবে।আমি তোমার বিয়েতে কোনো ঝামেলা চাইনা।

—–কিন্তু সামু এতো বড় ঘটনা ভাইয়াকে না জানানো উচিত হবে?

—–আর উনি জানার পর যে রিয়েক্ট করবে সেটা উচিত হবে?

নিশি সেটাও ভাবছে।তারপর বললো,
—–রাজের সমস্যা কি?ও কি তোকে কোথাও শান্তি দিবেনা?ওর জন্য কি তোর লাইফে কোনো নিরাপত্তা নেই।ফ্রিলি চলাচল করতে পারবিনা?নাহ এর একটা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

—-হ্যা এভাবে চলা যায়না।একটা কিছু করতে হবে।

নিশি আর সামু বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই নিশির মা সামুকে দেখে আঁতকে উঠে।
সামুর কাছে এসে সামুকে ধরে বললো,
—–ওর কি হয়েছে? পায়ে থুতনিতে ব্যান্ডেজ কেন? কি হয়েছে পায়ে?পা খুড়িয়ে হাটছিস কেন?

নিশি সামুকে সোফায় বসিয়ে সব খোলে বললো।
সামু তখনই বললো,
—–প্লিজ মামনি এসব যেনো আপনার ছেলে না যানে।তাহলে খুব ঝামেলা করবে।কিছুদিন পর আপুর বিয়ে এখন এসব নিয়ে কিছু না বলাই ভালো।আর পায়ে সামান্য লেগেছে।ডাক্তার বলেছে দুতিন দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।আদি

—–কিন্তু আদি তোর এই অবস্থা দেখে জানতে চাইলে কি বলবো?

—–বলবে পড়ে গিয়েছি সিড়ি থেকে।

নিশি সামুকে ধরে রুমে দিয়ে এলো।

রাতে ডিনার টাইমে টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।আদি সামুকে না দেখে আকুপাকু করছে।কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।ওর জন্যই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে সবার সাথে ডিনার করতে।কিন্তু সামু নেই।আদি বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
আদির বাবা সামুকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—–সামু কই খাবেনা?

আদির বাবা আদির মনের কথা বলেছে।যেটা এতক্ষণ জিজ্ঞেস করতে পারেনি সেটা জিজ্ঞেস করে ওর উপকার করেছে।আদির ইচ্ছে করছে ওর বাবাকে চুমু খেতে।কিন্তু সেটা করা যাবেনা।

নিশি আমতা আমতা করে বললো,
—–ওর ক্ষিদে পেয়েছিলো তাই আগেই খেয়ে নিয়েছে।

আদির মনটা খারাপ হয়ে গেলো।সামু খেয়ে নিয়েছে তার মানে আজ আর দেখা হবেনা।আদি মন খারাপ করে খাচ্ছে।

সামু পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
থুতনিতে হাত দিয়ে বলছে,
ইশশশ কি অবস্থা হয়েছে চেহারার।১৬-১৭দিন পর আপুর বিয়ে।যদি দাগটা না যায় কত বাজে লাগবে দেখতে।উফফ,,।আর পা নিজেকে ল্যাংড়া মনে হচ্ছে।মনে হওয়ার কি আছে সামু তুই ল্যাংড়াই হয়ে গেছিস।দেখিস না খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিস।ডাক্তার বলেছে তিন-চার দিন লাগবে।এর মানে তিন চার দিন আমার বাড়িতেই থাকতে হবে।ভাল্লাগে না।
ওহহ সামু এসব না ভেবে ভাব তোর বর মশাই যখন দেখবে তখন তুই মিথ্যা কথাটা সুন্দর করে বলতে পারবি কিনা।

হটাৎ সামু দরজা খোলার শব্দ পেলো।মনে হচ্ছে কেউ অতি সাবধানে দরজা খোলছে।
সামু পেছনে ঘুরে দেখতে লাগলো কে আসছে।আদি আস্তে করে মাথা ঢুকালো।আদিকে দেখে সামু বিদ্যুতের গতিতে মাথা ঘুরিয়ে নিলো।ও ভেবেছে নিশি এসেছে।
সামুর ঘুরেও লাভ হয়নি।সামনে যেহেতু আয়না।
আদি সামুর রুমে ঢুকে আয়নায় সামুকে দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে।
আদি সামুর সামনে এসে বলে,
—–সামু কি হয়েছে তোমার থুতনিতে?

সামু আমতা আমতা করে উত্তর দিলো।
—–ওই একটু লেগেছে।

—–কিভাবে লাগলো?ব্যান্ডেজ করতে হয়েছে রক্ত জমে আছে আর তুমি বলছো সামান্য? কেউ আমাকে বলে নি কেন?কেন বলেনি?

আদি সামুকে দ্রুত নিজের দিকে ঘুরাতেই সামু আহ শব্দ করে তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরে।
আদি বুঝতে পারছেনা সামু ঠিক কোথায় ব্যাথা পেলো।
সামু পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।কিন্তু চুপ করে আছে।আদি সামুর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—–কোথায় লাগলো তোমার?

—–ওই ইয়ে মানে..এই যে হাতে লেগেছে।

কনুইয়ের ছিলে যাওয়া স্থান দেখালো।
—–এখানেও?

——এসো।বেডে এসে বস।

সামু দাঁড়িয়ে আছে।নড়ছেনা।হাটতে গেলেই ধরা খাবে।ধরা খাওয়া ব্যাপার না।আদিকে মিথ্যা বলতে গিয়ে না ধরা পড়ে যায়।আর তাছাড়া আদি চিন্তিত হয়ে পড়বে।

—–কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন?

—–আসলে আমি ফ্রেশ হবো।আপনার এতো চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন গিয়ে।

—–আমি কোথাও যাচ্ছিনা।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।(আদির স্পষ্ট উত্তর)

সামু পড়েছে বিপদে।এখন কি করবে?
বাধ্য হয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে।সামুকে এভাবে হাটতে দেখে আদি সামুর পায়ের দিকে চোখ রেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।
—–সামু তোমার পা!!

আদি তাড়াতাড়ি সামুকে কোলে তুলে নেয়।তারপর বেডে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
—–এসব কি করে হলো?আমাকে কিছু বলোনি কেন?কেন বলোনি?আমি তোমার হাসব্যান্ড।আমাকে তোমার জানানো উচিত ছিলো।আর তুমি আমাকে কিছুই বলোনি।লুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছো?হোয়াই?টেল মি।

—–আসলে আমি আপনাকে চিন্তায় ফেলতে চাইনি।সিড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।(দৃষ্টি লুকিয়ে)

আদি সামুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
—–কিভাবে পড়ে যাও?চোখ কোথায় থাকে?
আদি সামুর পায়ের দিকে চেয়ে আছে।
—–ডক্তর কি বলেছে?মেডিসিন নিয়েছ?

—–বলেছে তিন-চারদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।মেডিসিন নিয়েছি।

—–মিথ্যা বলছো না তো?রিপোর্ট কই?

—–মিথ্যা কেন বলবো?

—–বাড়ির কেউ আমাকে কিছুই জানালো না।
নেও চুপচাপ শুয়ে পড়ো।

সামু শুয়ে পড়তেই আদি সামুর পায়ের নিচে কুশন দিয়ে দিলো।
—–শুনো বেশি কথা বলবেনা।আগেই বলে দিচ্ছি আমি যাচ্ছিনা।চলে যান চলে যান বললে খবর আছে।

সামু কিছু বললো না কারণ জানে বলে লাভ নেই।তার হাব্বি আজ আর তাকে ছেড়ে যাচ্ছেনা।
আদি লাইট অফ করে হালকা শেডের আলো জ্বালিয়ে দিলো।
আদি সামুর পাশে শুয়ে পরলো।ওর কেমন ডাউট হচ্ছে।
—–আচ্ছা তুমি পড়ে কি করে গেলে?

—–ভিডিও করে রাখা উচিত ছিলো।তাহলে বুঝতে পারতেন কিভাবে পড়েছি।

—–সব সময় উদ্ভট কথা বলো কেন?

সামু চুপ করে রইলো।কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে নীরবতা বিরাজ করলো।আদি নীরবতা ভেঙে বললো,
—–তুমি কি আমার রুমকে মিস করোনা?

সামান্তা আদির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।
—–আপনার রুম না আপনাকে?
আদি মাথা চুলকে বললো,ওই একি।

সামান্তা আবারো হেসে বললো,
—–হুম আপনার রুমকে মিস করি।

আদি মুখ কালো করে বললো,
—–আর আমাকে?

—–আপনি আমার পেছনে যেভাবে পড়ে থাকেন মিস করার উপায় আছে।

আদি সামুর গালে হাতের তিন আংগুল দিয়ে স্লাইড করতেই সামু হাত ধরে ফেললো।
—–উম একদম ছুবেন না।হাত সরান।
সামু আদির হাত সরিয়ে দিলো।

—–আমার বউকে আমি ছুয়েছি তোমার কি?

সামু মনে মনে বলছে আসছে আমার বর।

আদি সামুর আরেকটু কাছে গিয়ে ওর গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে ওর কাধেই মাথা রেখে বললো,
—–সামু আমাকে কি হাসব্যান্ড হিসেবে মেনে নেওয়া যায়না?
কতদিন আর এ ঘরে থাকবে? তোমার ঘরে ফিরে চলো?

সামু কোনো উত্তর দিচ্ছেনা।উত্তর দিবে কি?ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে।প্রথমত আদি ওর এতো কাছে।যেখানে প্রতিটি নিশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে ওর শরীরে।আদি মুখ তুলে সামুর দিকে তাকালো।তারপর কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।

—–তোমাকে আগামীকাল সকালেই রুমে নিয়ে যাবো।না গেলে জোর করে নেবো।পা ভাংগা লাফাতেও পারবেনা।আমার সুবিধাই হয়েছে।কি বলো?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে