তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-১৪

0
2444

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~১৪

??
সামু আদিকে হুট করে ছেড়ে দিলো।আদির দিকে তাকাতে পারছেনা।দৃষ্টি নত করে সরি বলে বারান্দা থেকে চলে গেলো।
আদি সামুর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।
আদি মনে মনে ভাবছে,
“সময় হয়েছে ওকে সবটা জানানোর।আমি ওকে ভালোবাসি।”

ডিনার শেষ করে সামু নিশির রুমে গেলো।নিশি চোখ বন্ধ করে আধশোয়া অবস্থায়।
সামু নিশির পাশে বসে নিশিকে মৃদুস্বরে ডাকলো।
নিশি চোখ খোলে সামুকে দেখে শুকনো হাসি দিলো।

সামু নিশির কাছে বসে বললো,
—–নিশিপু…জয় ভাইয়ার সাথে তোমার কথা হয়?

নিশি থুতনি উঁচু নিচু করে বললো,হ্যা।

সামু নিশির দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলো মিথ্যা বলছে।
—-নিশিপু মিথ্যা বলোনা।তুমি কেন শুধু শুধু নিজেকে আর জয় ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছো?

নিশি কথা এড়ানোর জন্য বললো,
—–তোর না পরীক্ষা চলছে?পড়াশোনা করছিস?

—–তুমি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করোনা।আমি তোমাকে এই ম্যাটার এড়িয়ে যেতে দেবোনা।আজ এর একটা রফাদফা করেই যাবো।

—–কি রফাদফা করবি?

—–নিশিপু ভুলে যেওনা আমি তোমার ভাবি হই।বুঝেছো?তুমি বেশি ত্যাড়িং ব্যারিং করবে তো বিয়ে দিয়ে দেবো।

—-ওরেএএ…বলে কি?

—-হ্যা তাই ঠিক ঠিক বলো জয় ভাইয়ার সাথে কেন কথা বলছোনা?দেখো দেব রানী বানাতে চেয়েছো ভাবি হয়ে গেছি।আর কি চাই তোমার?

—–তুই ভালো আছিস?

—–কেমন আছি জানিনা।তবে মজায় আছি।তোমার ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করতে হেব্বি লাগে।

নিশি সামুর কথা শুনে হেসে দিলো।তারপর বললো,মেইড ফর ইচ আদার।কেউ কারো থেকে কম নয়।আচ্ছা ভাইয়াকে কি ভালোবাসা যায়না সামু?

সামান্তা নিশির কথা শুনে চুপ করে গেলো।তারপর মিনমিন করে বললো,
—-হয়তো যায় হয়তো বা না।যাইহোক নিশিপু জয় ভাইয়াকে ফোন করো।ফোন করে কথা বলো।সব মিটিয়ে নেও প্লিজ।তোমাকে আমি আর এভাবে দেখতে পারছিনা।নিজেকে অপরাধী লাগে।দেখো আমি ভালো আছি।

সামু জোর করে নিশির হাতে ফোন গুজে দেয়।
—–নেও কথা বলো।
নিশি সামুর জোরাজুরিতে জয়কে ফোন করে।একবার রিং হতেই জয় ফোন রিসিভ করে।আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
—–ভালো আছো?

নিশির জয়ের কন্ঠস্বর শুনে কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
নাম নিশি মুচকি হেসে বললো,
—-হ্যা তুমি?

সামু নিশির কাছে গিয়ে বললো কাবাব মে হাড্ডি হতে চাইনা।টাটা।

সামান্তা হাসি হাসি ভাব নিয়ে রুমে ঢুকলো।ওর মন একটু হলেও ভালো হয়েছে।নিশির কেইসটা তো সলভ করা গেছে।

আদি সামান্তাকে এতো খুশি দেখে ওর দিকে চেয়ে আছে।কিছুটা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে।
তারপর প্রশ্ন করলো,
—–তুমি এতো খুশি কেন?

সামু আদির দিকে চেয়ে বললো,
—–লাভ বার্ড এক হয়েছে তাই।

আদি সামুর কথা শুনে বেক্কলের মতো চেয়ে রইলো।
—–মানেহ??

—–নিশিপু আর জয় ভাইয়ার মধ্যে সমস্যা চলছিলো সেটা মিটিয়ে এলাম।

মাঝরাতে সামুর ঘুম ভেঙে গেলো।ওর ঘুম আসছেনা।আদির দিকে তাকালো।আদি ঘুমে বিভোর।
“আচ্ছা মানুষের জীবনে স্পেশাল একজন কি থাকা জরুরী?যার কারণে মুখে হাসি ফুটবে আবার তার কারণেই মেঘের ঘনঘটা দেখা দিবে?আমার জীবনেও কি এমন একজন প্রয়োজন? হ্যা প্রয়োজন।আচ্ছা সেটা কি আদি?”

সামু আদির দিকে চেয়ে আছে।তারপর নিজেকেই প্রশ্ন করছে
“আদির জন্য কি আমার বিশেষ কোনো অনুভূতি কাজ করে?না শুধুই মোহ?জানিনা।কিছু জানিনা।”

.

আদি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো।৮টা ২০বাজে সামু এখনো উঠে নি।আদি সামুকে ধাক্কা মারলো।সামু ঘুমঘুম চোখে বললো,
—-কি হয়েছে মাঝরাতে ধাক্কাচ্ছেন কেন?

—–হিহিহি।মাঝরাত!!সকাল ৮টা বাজে।ভার্সিটিতে যাবেনা?

সামু চাদর জড়িয়ে ঘুমঘুম চোখে বললো,
—–ঘুমান,আমাকেও ঘুমাতে দিন।

সামুর কথা শুনে আদি টাস্কি খেলো।এই মেয়ে তো আজ ওর চেয়েও বেশি ঘুম পাগল হয়ে যাচ্ছে।

আদি সামুকে এক প্রকার টেনে উঠালো।সামু বসে চোখ মুখ খিচে বললো,
“হয়েছে কি হুহ??এভাবে টেনে তুললেন কেন?আপনি কি আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দেবেন না?”

—–আরে তুমি ভার্সিটিতে যাবেনা।

—–আমি কি রোজ রোজ ভার্সিটিতে যাবো?আজকে আমার অফ জানেন না?প্রতিদিন তো আপনাকে টেনে তুলা যায়না।আর আজকে আপনি আমাকে টেনে তুলছেন?হাও ডিজগাস্টিং!!

সামু ধপ করে আবারো শুয়ে পরলো।আদির ফোন বেজে উঠলো।আদি ফোনের স্কিনে নাম্বার দেখেই ফোন কেটে শুয়ে পরলো।আবারো ফোন বেজে উঠলো।আদি ভ্রু কুচকে ফোনটা কেটে সাইলেন্ট মুডে রেখে দিলো।

সামু মুখ বের করে বললো,
—–কি হলো ফোন বাজছে তুলছেন না কেন?ফোন বেজেই চলেছে।বিরক্ত লাগছে।

আদি বললো,তেমন ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না।

সামুর কেমন সন্দেহ হচ্ছে।
নওমী ফোন করেছে।যার নাম্বার দেখে আদির মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর আদির ফোনে মেসেজ এলো।আদি ওপেন করে দেখলো।
“আদি তুমি নাকি বিয়ে করেছো?আমি আজ আসছি তোমাদের বাড়িতে।”

নওমীর মেসেজ দেখে আদির মাথা চক্কর দিচ্ছে।এ মেয়ে নির্ঘাত কোনো ঝামেলা পাকাবে।ওর নেকামি ওর সহ্য হয়না।আর ও সামুর সামনে নেকামি করবে দেন সামু ওর সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা নিবে সেটা হতে পারেনা।আদি তাই বাড়িতে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলো।


সামু শাওয়ার নিয়ে হেয়ার ড্রাই করার জন্য ড্রায়ার অন করতেই সাদা কিছু এসে পুরো চুল মুখ মেখে গেলো।সামু আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলো।কালো চুলগুলো সাদা পাউডার দিয়ে মাখা।মুখেও কিছুটা পড়েছে।
সামু দুহাত দিয়ে যতটা পারলো মুখ মুছে চুলগুলো ঝেড়ে নিলো।তারপর ঘুমন্ত আদির চেয়ে রাগে ফুসফুস করছে।ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে আদির উপর ঢেলে দিলো।আদি লাফিয়ে উঠে বললো,,হোয়াট দ্যা হেল??

তারপর সামুকে দেখে হোহো করে হেসে দিলো।
—–আরে সকাল সকাল বুড়ি হয়ে গেছো?হা হা।

সামু রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
—–খুব হাসি পাচ্ছে না?এইসব ফালতু কাজ কই থেকে শিখেছেন?

—–তোমার থেকে।আমি সব তোমার থেকে শিখেছি।এসব উদ্ভট কাজ একমাত্র তুমিই করো।

—–আচ্ছা তাহলে আপনিও রেডি থাকুন।

.

আদি নিচে যেয়েই ওর ফুপু আর নওমীকে দেখতে পেলো।নওমী আদিকে দেখে ছুটে চলে এলো।সামু হা করে দেখছে নওমীকে।ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আদি আদি করছে।সামুর কেমন জানি জ্বলা জ্বলা ফিল হচ্ছে।ওর কি তাহলে হিংসা হচ্ছে?
আদির প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে নওমীকে।আগে যখন পেছনে পেছনে ঘুরতো তখন পৈশাচিক আনন্দ পেতো কিন্তু আজ বিরক্ত লাগছে।

নওমী আদির পাশে বসে বকবক করে যাচ্ছে আর আদি ফোনের দিকে চেয়ে হু হা করে যাচ্ছে।
সামু দূর থেকে নওমীকে আদির সাথে চিপকে থাকাকে ভালো চোখে দেখছেনা।ওর মনে হচ্ছে কিছু একটা গড়বড় আছে নওমীর মধ্যে।নওমী সামুর সাথে একবারো কথা বলে নি।
আদির ইচ্ছে করছে উঠে যেতে কিন্তু পারছেনা।আদির মা বলে দিয়েছে আজকে সবাই একসাথে লাঞ্চ করবে তারপর যেনো আদি বাইরে যায়।
আদি শুধু অপেক্ষায় আছে কখন লাঞ্চ টাইম হবে, টেবিলে খাবার দিবে।

নওমী আদিকে অমনোযোগী দেখে বললো,
—-আদি লাঞ্চ শেষে চলো আমরা বাইরে কোথাও ঘুরে আসি।

আদি ফোন থেকে চোখ তুলে নওমীর দিকে ঘুরে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-নওমী এখন আমি বিবাহিত তাই কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে বেরুলে ওয়াইফের পারমিশন নিতে হবে।কিন্তু সামু আমাকে কিছুতেই তোমার সাথে যাওয়ার পারমিশন দিবেনা।আর আমারও বউ ছাড়া অন্য কারো সাথে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।

—–আদি কিসের ওয়াইফ?তুমি মামির জোরাজুরিতে বিয়ে করেছো?আচ্ছা তুমি কি ওকে তোমার রুমে থাকার পারমিশন দিয়েছো?

—–অবশ্যই।আমার বউ আমার রুমেই থাকবে।আর কেউ আমাকে জোর করে নি আমি নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছি।দোয়া করো যেনো খুব শীঘ্রই ফুপি ডাক শুনতে পারো।

আদি আবারো ফোনের দিকে চোখ দিলো।নওমী আদির কথা শুনে থ হয়ে গেলো।তারপর রাগী চোখে সামুর দিকে তাকালো।সামু নিশির সাথে হাসাহাসি করছে।নওমীর ইচ্ছে করছে ওর ভেতরের আগুন দিয়ে সামুকে জ্বালিয়ে দিতে।আদির কাছে কোনো দিন পাত্তা পায়নি কিন্তু একটা আশা ছিলো এখন সেটাও নেই।

সামু বারবার কথার বলার ফাকে ফাকে আদি আর নওমীকে দেখছিলো।তারপর উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–নিশিপু কফি খাবে?

আদি সেটা শুনে বললো,আমার জন্য ব্ল্যাক কফি।নওমী আদির কথা শুনে বললো, আমার জন্যও সেম।আর হ্যা বি কেয়ারফুল সবকিছু যেনো ঠিক থাকে।

সামু আদির দিকে নাক ফুলিয়ে চেয়ে আছে।আদি ওকে অর্ডার করতে পারে কিন্তু নওমী?নওমীর অর্ডার ওর মোটেও ভালো লাগছে না।আদি সেটা বুঝতে পেরে বললো,
—–নওমী কফি সার্ভেন্ট বানাবে।তোমার চয়েজ তুমি তাকে গিয়ে বলো।ওকে কেন বলছো?

সামু পা বাড়ালো কিচেনের দিকে।কফি ও নিজেই বানাচ্ছে।জম্মের কফি খাওয়াবে দুটোকে।
সামু বিরবির করে বলছে,আমাকে কি স্টার জলসার শ্রীময়ী(আম্মুর ফেবারিট) পেয়েছে যে সব মুখ বুজে সহ্য করে নিবো?

সামু ভালো করে কফি বানিয়ে আদির কফি আলাদা করে আবারো চুলায় দিলো।আজ ওকে পোড়া তেতো কফি খাওয়াবে আর নওমীর জন্য অন্য ব্যবস্থা।নওমীকে ময়লা কাপে কফি দিবে।নওমী কিছু বুঝতে পারবেনা অথচ সামুর প্রতিশোধ ডান।

.

আদি কফি মুখে দিয়ে মুখ থেকে ফেলে দেয়।
নাক ছিটকে বললো,এটা কিহ??

সামু কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,কি?

—–অখাদ্য তুমি বানিয়েছো?

সামু নিশিকে বললো,
—–নিশিপু কফি অখাদ্য হয়েছে?

নিশি বললো,
—–না তো।কফি তো বেশ হয়েছে।ভাইয়া তুমি ইচ্ছে করে সামুকে পচাতে চাইছো।সব ঠিকঠাক যাকে বলে ফার্স্টক্লাস।

আদি অবাক হয়ে নিজের কফির দিকে চেয়ে আছে।সবার ভালো লাগছে তাহলে ওর কেন এতো তেতো আর জঘন্য লাগছে।
আদি সামুর দিকে তাকালো।সামু বাকা হাসি দিলো।আদি যা বুঝার বুঝে গেলো।

সামু সিড়ি দিয়ে উঠতেই হেচকা টান অনুভব করলো।চিতকার করতে নিলে আদি ওর মুখ চেপে ধরে।সামু চোখ বড়বড় করে ওর দিকে চেয়ে আছে।সামু নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও ছাড়াতে না পেরে আদির হাতে কামড় দিলো।আদি আহ শব্দ করে হাত মুখ থেকে সরালো।
আদি নিজের হাতের দিকে চেয়ে বললো,
—–জঘন্য কফি খাইয়েছো এখন আবার হাতে কামড় দিচ্ছো?

—-আপনি আমার মুখ চেপে ধরেছেন কেন?আর ছাড়ুন আমাকে কেউ দেখলে কি ভাববে?

—–কি ভাববে?সবাই জানে আমরা বিবাহিত।সো ভাবাভাবির কোনো ওয়ে নাই।

সামু নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আদি আরো চেপে ধরে বললো,
—–আর ইউ জেলাস?

আদির প্রশ্ন শুনে সামু থমকে গেলো।আদি কি করে বুঝলো?সামু পলকহীন ভাবে আদির মুখের দিকে চেয়ে আছে।
তারপর আমতা আমতা করে বললো,
—–জেলাস!! মানে কিহ??

আদি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–বারবার আড়চোখে কি দেখছিলে?তুমি কি ভেবেছো আমি কিছুই দেখিনি?কিছুই বুঝিনা?

সামু চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—–নো ওয়ে,হুহ!!আমার বয়ে গেছে জেলাস হওয়ার।

আদি সামুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—–সামথিং সামথিং??

কি বললো সেটা সামুর কানে যাওয়ার আগে কানের লতি থেকে ভেতরের অনেকটা জায়গা শিরশিরিয়ে উঠলো।এমন ফিসফিস শব্দ শরীরে কাপন ধরিয়ে দিলো।সামু আদির চোখের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।ছেয়ে আছে নীরবতা।সামু আদিকে সরিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে