#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-৮
ফাবিহা নওশীন
??
সামান্তা ডিনার শেষে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোন বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বার থেকে ফোন।হয়তো আদি।আদির নাম্বার সেভ করা হয়নি।এতরাতে আদি ছাড়া আর কে ফোন দিবে?
–হ্যালো,,
–হায়,কি করো?
সামু ভড়কে গেলো এতো আদির নাম্বার নয়।
–কে আপনি?
–সামু তুমি আমার নাম্বার এই পর্যন্ত সেভ করোনি?আমি রাজ।
–(এই ব্যাটা ফোন দিছে কেন)না আসলে বিজি ছিলাম ফোন হাতে নেওয়া হয়নি।
–কি নিয়ে এতো বিজি থাকো?
–ফ্যামিলি,পড়াশোনা এই,,
–ডিনার করেছো?
–কিছুক্ষণ আগে।
–ঘুমাবে কখন?
–ফ্রেশ হয়েছি,এখনি ঘুমাবো।আগামীকাল ভার্সিটিতে ক্লাস আছে।
–কাল তোমার ভার্সিটিতে অপেক্ষা করবো।
–আপনি আমার ভার্সিটিতে অপেক্ষা কেন করবেন?
–দেখা করতে?
–আমার কম্পিউটার, ল্যাপটপ সব ঠিক আছে।আপনি প্লিজ আমার ভার্সিটিতে আসবেন না।
–আচ্ছা তাহলে অন্য কোথাও?
–আমার সময় হবেনা।কাল ক্লাস,কোচিং শেষ করে সন্ধ্যা হবে বাসায় ফিরতে।
–তাহলে অন্য দিন।
–দেখা যাবে।
–তুমি কি আমাকে এভয়েড করছো?নিশিতা ভাবী তো এমন করেনা।
–(আমি তো আপনার নিশি ভাবী না)না তা কেন করবো?আমি আপনার সাথে দেখা কেন করবো?আমি বিবাহিত একটা মেয়ে,এটা খারাপ দেখায়।
–কেন খারাপ দেখাবে?আমরা ফ্রেন্ডশিপ করেছি।
–(কখন করলাম)আমার এটা ঠিক মনে হচ্ছেনা তাই।যাইহোক এখন রাখছি।
–আচ্ছা,বায়।
উফফ বাবা বাচা গেলো।ফোন রেখে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে বেনি করছে সামান্তা।তখন আবার ফোন বেজে উঠলো।সামান্তা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে বললো,
–আমি এখন ঘুমাবো প্লিজ।
–এটা কেমন কথা? ফোন রিসিভ করেই আমি এখন ঘুমাবো প্লিজ।আগে আমার কথা তো শুনবে?
সামু ফোন কান থেকে সরিয়ে স্কিনের দিকে তাকালো।এটা কে?আদির কন্ঠ।
–না মানে।
–কি মানে?
–আপনার কয়টা নাম্বার?একেকদিন একেক নাম্বার,,
–তিনটা।তারমানে তুমি জানতে না এটা আমার নাম্বার?
–না,,
–তাহলে কাকে মনে করে বলেছিলে ঘুমাবে?(রাগান্বিত স্বরে)
–(হায় আল্লাহ ধরা খাইছি)আপনাকে মনে করেই।কারণ এই রাত দুপুরে আপনি ছাড়া আর কে ফোন দিবে?
–ওহহ,,যাইহোক ছাদে এসো।
সামান্তা ভাবছে
(কিসের জন্য ছাদে ডাকছে?তখন যে বললো,,,)
সামান্তা ঢোক গিলে বললো,
–আমি আসতে পারবোনা।
–আরে ভয় পেওনা কিছু করবোনা জাস্ট একটু কথা বলবো।খুব জরুরি কথা।
–রাতদুপুরে কিসের কথা?
–সেটা জানতে হলে আসতে হবে।সময় ৫মিনিট।
বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।
সামু কনফিউশনে যেন না পরে তাই রাজ ও আদির নাম্বার নাম দিয়ে সেভ করে নিলো।
সামু টিশার্ট চেঞ্জ করে একটা কামিজ পরে ওরনা জড়িয়ে দৌড়।
আদি ছাদের রেলিংয়ে বসে আছে।পড়নে নেভি ব্লু টিশার্ট আর নেভি ব্লু টাওজার।চুলগুলো এলোমেলো।সামু ধীর পায়ে ছাড়ে উঠে।আদিকে রেলিংয়ে বসে থাকতে দেখে।এক পলক ওর দিকে চেয়ে ভয়ে ভয়ে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তারপর আবার থেমে গেলো।ওর ভয়ের কারণ এত রাতে ছাদে একা।আর সেদিন আদির যে রুপ দেখেছে।এখনি নিজের গাল দুটো ঢেকে রাখতে ইচ্ছে করছে।
ওখানে দাড়িয়েই রাত পার করে দিবে?না এই দিকে আসবে?
আদির কথায় ঘোর কাটলো সামুর।সামু সোজা ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো।
–বলুন।
আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামুর চোখের দিকে চেয়ে আছে।সামুর কেমন জানি লাগছে।এ দৃষ্টি অন্য দিনের চেয়ে আলাদা।তাই চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
–থুম মেরে না থেকে যা বলার বলুন।
–আমি আমার আর তোমার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সামান্তা অবাক হয়ে বললো,
সিদ্ধান্ত?(ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলবেনা তো)
–হ্যা,
আদি সামনে থাকা রাস্তাটা দেখছে।তারপর সামান্তার হাত ধরে কাছে এনে সামান্তার দুহাত নিজের দুহাতে আবদ্ধ করে।সামান্তা অবাক হয়ে আদির কার্যকলাপ দেখছে।
সামান্তার চোখে চোখ রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,
–আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?
সামান্তা আদির চোখের দিকে চেয়ে আছে।অদ্ভুৎ দৃষ্টি সে দৃষ্টিতে কিছুটা কৌতুহল আর অসহায় ছাপ স্পষ্ট।সামু কিছুক্ষণ পর ওর চোখ থেকে চোখ নামিয়ে গম্ভীর ভাবে বললো,
–কিসের জন্য?
–ফর এভরিথিং।
আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।কিন্তু ওই মুহুর্তে আমি আর কি করতাম।বিদেশ থেকে এসেছি।হটাৎ করে বললো গ্রাম দেখাতে নিয়ে যাবে,গেলাম।বিয়ের আগের রাতে বলছে আমাকে আগামীকাল সকালে বিয়ে করতে হবে।যাকে আমি চিনিনা,জানিনা,কখনো দেখিওনি।হুট করে কোনো প্রিপারেশন ছাড়া,,,
আমি মেনে নিতে পারিনি।
সামান্তা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,আমিও তো আপনার সিচুয়েশনেই ছিলাম।আমাকেও তো আগে জানানো হয়নি।কিন্তু আমি তো আপনাকে অপমান করিনি।আপনি আমাকে ঘর থেকে টানতে টানতে বের করে দিয়েছেন।অনেক কথা শুনিয়েছেন।কেন?কারণ আমি মফস্বল থেকে উঠে আসা সাধারণ একটা মেয়ে।আপনার সাথে আমার যায়না,তাইনা?
দুইমাসে একবারো খোজ নেন নি।যে মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিলেন তার কি খবর?কি করছে?আপনার দায়িত্ব ছিলো না।বিয়ে করেছিলেন এটাই হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন? নিজের লাইফ নিয়ে বিজি ছিলেন।কে বাচলো কে মরলো আই ডোন্ট কেয়ার,,এমনটাই তো তাইনা?
আপনি আমাকে একটা মানুষ হিসেবেও মূল্যায়ন করেননি।না মানতে পারতেন,একটু রেস্পেক্ট তো করতে পারতেন?একটা মানুষ হিসেবে,,,
আদি মাথা নিচু করে আছে।কারণ ওর প্রতিটা কথা সত্যি।সামুকে গ্রাম্য মেয়ে বলে অবহেলা করেছে।কিন্তু পরে ওর এটিটিউট দেখে ইম্প্রেশ হয়েছে।ওর প্রেমে পরেছে।কিন্তু আদি আপাতত এটা স্বীকার করতে চায়না।যে করেই হোক সামান্তাকে নিজের দিকে আনতে হবে।
–আমি সব মানছি সব,,আমি অন্যায় করেছি সেটা স্বীকার ও করছি তাহলে ক্ষমা কি পেতে পারিনা?প্লিজ একটা সুযোগ দেও,,আমি সব ঠিক করে দেবো।
–কি ঠিক করবেন?
–যা যা ভুল করেছি সব ঠিক করার চেষ্টা করবো।প্লিজ।আমি আর পারছিনা এভাবে জীবন চলেনা।আমি তোমাকে হ্যাপি একটা লাইফ দিতে চাই,,
–আমি হ্যাপিই আছি।
–কিন্তু আমি নেই।আমি তোমাকে আমার পাশে চাই।তোমার অবহেলা মেনে নিতে পারছিনা।আমি তোমাকে অবহেলা করেছি সে শাস্তি দিচ্ছো?যদি তাই হয় তবে প্লিজ অন্য শাস্তি দেও,,কিন্তু অবহেলা করোনা।দূরে সরিয়ে দিওনা।প্লিজ।
সামান্তার চোখে পানি ছলছল করছে।মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবে কিন্তু অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রাখছে।আকাশের দিকে চেয়ে বললো,,
–আমি আমার ভাগ্য মেনে নিয়েছি তাই আমার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।আর যেখানে অভিযোগ নেই সেখানে শাস্তির কথা কোথা থেকে আসে,,
আমি যাচ্ছি।
সামান্তা দু কদম আগাতেই আদি পিছন থেকে চিতকার করে বলে উঠলো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি সামান্তা”
সামান্তা থমকে গেলো।পা যেন আটকে গেছে।না সামনে যেতে পারছে না পিছনে ঘুরতে পারছে।কি করবে?
সামান্তা কিছু সময় পর পিছনে ঘুরে বললো,
–এটা আপনার ভালোবাসা নয়,মোহ।
আদি অবাক হয়ে বললো,
মোহ??না সামান্তা এটা আমার মোহ নয়।মোহ হলে তোমার মোহের ঘোর অনেক আগেই কেটে যেত।কিন্তু আমি তোমার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিনা।
–নিজেকে সময় দিন।তাহলেই কেটে যাবে।আমি হতে পারি শক্ত মনের,,কিন্তু মন তো আছে।মন ভাংলে কষ্ট আমিও পাবো।
–আমি তোমার মন ভাংবোনা।বিশ্বাস করো।
–আগে বিশ্বস্ততা অর্জন করুন।যেটাই তো আমার আপনার উপর নেই।সময় নিন মোহ এমনিতেই পালিয়ে যাবে।আমি আর যাই হই অন্তত কারো কিছুদিনের মোহ হয়ে থাকতে চাইনা।
বলেই সামান্তা সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো।আদি হাতের মুঠো শক্ত করে বিরবির করে বললো,
মোহ,ভালোবাসা কিচ্ছু বুঝিনা।শুধু এটুকু জানি আমি তোমাকে চাই।তোমাকে সারাজীবনের জন্য চাই।অন্য কারো কখনোই হতে দেবোনা।তোমাকে তো হাসিল করেই ছাড়বো প্রমিস।
সামু কুশনে মুখ গুজে কাদছে।কেন কাদছে জানা নেই।আজ আদি ওকে ভালোবাসি বলেছে কিন্তু কেন জানি আদিকে মেনে নিতে পারছেনা।কেন জানি ওর মনে হয় আদির কাছে ও শুধুই মোহ।কেন জানি এ শহরের কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা।কেন জানি মনে হয় এ শহরে ভালোবাসা নেই।এ শহরের ভালোবাসায় বড্ড এলার্জি।
ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।মাথাটা ভারী ভারী লাগছে।টাইম চেক করে দেখে ৮ঃ৪০,,ওহ নো,,আমার ক্লাস।দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেরুন রঙের একটা টপস,জিন্স,টপসের উপর কটি,চুলগুলো কোনো রকমে ব্রাশ করে,জুতা পড়ে হাতে ব্যগ,ব্যাচ,ঘড়ি আর ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো।গলায় ব্যাচ পড়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে ভার্সিটির জন্য হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে পিছন থেকে আদির মা বারবার সামান্তাকে নাস্তা করে যেতে বলছে।
–মা,আজকে অনেক দেরি হয়ে গেছে।ক্যানটিনে কিছু নিবো।
সামান্তা বাইরে এসে দেখে আদি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সামুকে দেখে গাড়ির দরজা ওপেন করে বললো,
–গাড়িতে বসো।আমি তোমাকে ড্রপ করে দেবো।
সামান্তা এদিক সেদিক চেয়ে কোনো গাড়ি না দেখে ওর গাড়িতেই উঠে পড়ে।এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে তর্ক করার মানে হয়না।
আদি ড্রাইভ করছে আর বারবার আড়চোখে সামান্তার দিকে তাকাচ্ছে।সামু বিরক্ত হয়ে বললো,
–এইভাবে বারবার না তাকিয়ে ভালো ভাবে ড্রাইভ করুন।আমার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
–তুমি কি করে বুঝতে আমি তোমার দিকে তাকাচ্ছি?তারমানে তুমিও,,(বাকা হেসে)
–জ্বী না,,এটা মেয়েদের একটা গুন।দূর থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারে কোন ছেলে কিভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে।হুম মাঝে মাঝে একটু ভুল হতেই পারে।
–আচ্ছা,এত গুন জানতাম নাতো?
তারপর রহস্যময় হাসি হেসে বললো, তা কি দেখছিলাম জিজ্ঞেস করবে না?
সামান্তা থতমত খেয়ে গেলো।কি দেখছিলো মানে কি,,।কি দেখছিলো।আমার জামাকাপড় তো ঠিকই আছে।
–মা,,,নে?
–কার জন্য রাতভর কেদে বুক ভাসিয়েছো?
এমন কথায় সামু চমকে গেলো।আমতা আমতা করে বলল,
–কাদবো কেন?
–সে আমি কি করে জানবো?তোমার চোখ ফুলে আছে।সারারাত কেদেছো তার প্রমাণ।
–জ্বী না,ঘুম বেশি হয়েছে তাই এমন।
–বেশি ঘুমালে চোখ এমন দেখায় জানতাম না তো,,।
সামু রেগে বললো,
–আপনার এতো জানতে হবেনা।মি.আদিল চৌধুরী যদি আর একটা কথা বলেন তাহলে মুখে ক্লিপ লাগিয়ে দেবো।
–হাহা,,,,
তুমি আমাকে এতবড় নামে ডাকো কেন?আদি বলে ডাকতে পারোনা?
–না পারিনা।এখন চুপ থাকুন।
???
রাতের বেলা-
আদির ঘুম আসছেনা।বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে।তারপর উঠে বসলো ধুরর ঘুম আসছে না কেন?আমি তো এখন তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করে ফেলেছি।এখন যদি ঘুম না আসে তবে তো আগামীকাল সামকে ড্রপ করতে যেতে পারবোনা।
আদি উঠে সিরি বেয়ে নিচে নেমে এলো।সামান্তার রুমের দরজা নক করে।সামান্তা দরজা খোলতেই চমকে যায়।আদি ওর চমকানো অবস্থায় পাশ কাটিয়ে ওর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।সামান্তা ভিতরে এসে বলে,
–এত রাতে আমার ঘরে কি?আর বিছানায় শুয়ে পড়লেন কেন?
–আমি এখানেই ঘুমাবো।
–কি!!মগের মুল্লুক নাকি?
–না বাবার মুল্লুক।আমার ঘরে ঘুম আসছেনা তাই আমি আজ এখানেই থাকবো।
–ঠিক আছে,আপনি এখানে থাকেন আমি নিশি আপুর রুমে যাচ্ছি।
বলেই সামু যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।আদি বিছানা থেকে উঠে সামুকে ধরে ফেলে।
–আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো?আমি তোমার ঘরে না তোমার সাথে ঘুমাতে এসেছি।
–অসম্ভব।
আদির এবার সামুর দিকে নজর যায়।সামু শর্ট টিশার্ট আর প্লাজো পড়া।
আদি দুষ্টুমি হাসি হেসে বললো,, বাহ!!তোমাকে তো হট লাগছে,,এখন তো আরো যাবোনা।
সামু আদিকে ছাড়িয়ে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো।
তারপর সিরিয়াল ভাবে বললো,
–দেখুন অনেক রাত হয়েছে,আপনি আপনার রুমে গিয়ে ঘুমান আর আমাকেও,,,
–আমি যাবোনা।
ওয়েট ওয়েট,,রাত বাজে ১টা।তুমি এত রাত পর্যন্ত জেগে আছো কেন?তুমি না আরো আগে ঘুমাও।
–আমার কাজ ছিলো।
আদি ভ্রু কুচকে বললো, কি কাজ?
–আপনাকে কেন বলবো?
তখনই সামুর ফোন বেজে উঠে বেডের উপর মোবাইলটা ছিলো।দুজনেই ফোনের দিকে চেয়ে স্তব্ধ।সামু তো অলরেডি ভয়ে ঘামছে।ফোনের স্কিনে রাজের নামটা পূর্ণিমা রাতের চাদের মতো চকচক করছে।
আদি ফোন হাতে নিয়ে ঘাড় কাত করে আবার সোজা করে শীতল কণ্ঠে বললো,
এই হলো তাহলে তোমার কাজ তাইনা?রাতভর রাজের সাথে ফোনে,,,
আদির শীতল কন্ঠ যেন সামুর শিরদাঁড়া বেয়ে এক টুকরো হিমশীতল বরফ প্রবাহ বয়ে গেলো।
সামান্তা আমতা আমতা করে বললো,
–আপনি যা ভাবছে তা নয়,,,
আদি চিতকার করে চোয়াল শক্ত করে বললো,
–শাট আপ,,আমাকে বোকা মনে হয় তোমার?এতবড় ধোকা দিতে পারলে? কিভাবে সামান্তা কিভাবে?কাজটা তুমি একদম ঠিক করোনি।একদম না।
সামান্তা চুপ করে আছে।আদি ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন বিছানায় ছুড়ে ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো।ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো কিন্তু এতেও ওর শান্তি হলোনা।সর্বশক্তি দিয়ে দরজায় লাথি মারলো।তারপর রাগে ফুসফুস করতে করতে বললো,
“আই ডোন্ট স্পেয়ার ইউ সামু,ইউ চিট মিট।”
সামু ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।রাজকে মনে মনে গালাগাল করছে।বজ্জাত ছেলে ফোন দেওয়ার টাইম পেলোনা।এখনি দিতে হলো।কি টাইমিং।একদম বাশ দেওয়া টাইমিং।কিন্তু আদি তেমন কিছু বললো না কেন?ঘটনা কি?
সামান্তার ফোন আবার বেজে উঠলো।রাজের ফোন।সামান্তার ইচ্ছে করছে রাজকে মৌমাছির চাকের মধ্যে বেধে রেখে দিয়ে আসতে।
রাগে ফুসফুস করতে করতে ফোন রিসিভ করলো।
–সামান্তা ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
–আমার হাসব্যান্ড চায়নি তাই।
–হাসব্যান্ড মানে?(দশ বস্তা অবাক হয়ে)
–হাসব্যান্ড মানে হাসব্যান্ড।আদিল ইস মাই হাসব্যান্ড।আপনি তো জানেন।
–হ্যা কিন্তু তোমার হাসব্যান্ডের সাথে তো তোমার সম্পর্ক,,
–হ্যা আগে প্রব্লেম ছিলো কিন্তু এখন আর নেই।আমাদের সম্পর্ক এখন খুব ভালো।দোয়া করবেন।আর প্লিজ রাতের বেলায় ফোন দিবেন না।
–সরি বায়।
রাজ ফোন কেটে দিলো।সামান্তা বিজয়ের হাসি দিলো।
অপরদিকে রাজ,,
ফোন কেটে দিয়ে আয়নার দিকে ফোন ছুড়ে মারলো।আয়না ভেঙে কাচের টুকরো গুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো।
তারপর চিতকার করে বললো,
“এটা হতে পারেনা,কিছুতেই না।সামান্তা আদির হতে পারেনা।আমি হতে দিবো না।”
??
কোচিং শেষে সামান্তা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু গাড়ি আসার নাম ই নেই।বাসায় ফোন করে জানতে পেরেছে গাড়ি পাঠিয়েছে।কোচিংয়ের সবাই চলে গেছে।সামান্তা একা একা ই দাড়িয়ে আছে।এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে।
হটাৎ ওর মুখে কেউ রুমাল চেপে ধরে।কেমন কড়া একটা স্মেল।সামান্তা ছুটার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু পারছেনা।হটাৎ ওর শরীর নিস্তেজ হয়ে এলো।হাতের ফোন আর ব্যাগ নিচে পড়ে গেলো।শরীরের ভর ছেড়ে দিতেই কেউ ওকে ধরে ফেলে।চোখ মেলার চেষ্টা করছে কিন্তু চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।সামনে সব ধোয়াশা লাগছে।মাথাটা ভারী হয়ে গেছে।চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।কেউ ওকে কোলে করে গাড়িতে তুলছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে।কিন্তু নড়তে কিংবা চোখ মেলতে পারছেনা।অতঃপর সামান্তা জ্ঞান হারালো।
চলবে,,
(সামান্তাকে কিডন্যাপ কে করলো?আদি না রাজ? না অন্য কেউ?)