Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৪

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৪

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৪

ফাবিহা নওশীন

??
৫বছর পর আদি নিজের বাড়িতে পা রেখেছে।দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।ভিতরে ঢুকতে পারছেনা।পা কেমন কাপছে।

আদিকে পুরনো এক সার্ভেন্ট দেখে চিতকার করে উঠলো,
–ছোট সাহেব এসেছে,,ছোট সাহেব এসেছে।

চিতকার শুনে আদির মা আর নিশি বের হয়ে আসে।নিশি বাবার পাশে বসে ছিলো।
আদিকে দেখে সবাই অবাক।আদি যে আসবে সেটা কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও কল্পনা করেনি।নিশি বুঝে নি ওর কথাগুলো শুনে রিয়েক্ট করে এভাবে চলে আসবে।
আদির মা ছেলেকে এত বছর পর দেখে কেদে ফেলেন।দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরেন।আদিকে ধরে কাদতেই থাকেন।

–তুই এতো পাষাণ কেন?একবারো কি আমাদের কথা মনে পড়েনি?তোর বাবা-মা এই বাড়িতে একা কেমন আছে জানতে ইচ্ছে করে নি।তোর বাবা,,,

নিশি ছলছল চোখে পিছনে গিয়ে দাড়ালো।

আহনাফ চৌধুরী বিছানায় শুয়ে আছে।আদি পাশে গিয়ে বসে হাত ধরলো।আদির বাবা পিটপিট করে চোখ মেলে আদিকে দেখে।আদিকে দেখে ছলছল চোখে আদির দিকে তাকায়।
–বাবা!!

আহনাফ চৌধুরী অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো।বড্ড অভিমান জমেছে ছেলের প্রতি।
–বাবা,মুখ ফিরিয়ে থাকবে?আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?অনেক শাস্তি তো পেয়েছি।যদি চাও আরো শাস্তি দিতে পারো,,তবুও ক্ষমা করো।আমি আর নিতে পারছিনা।বাবা দয়া করো।

আদির বাবা আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারলো না।আদির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।একে অপরের প্রতি জমা হাজার অভিমান অশ্রু হয়ে ঝড়লো।

নিশি ওর ছেলের কান্না থামাতে পারছেনা।নিশি কোলে নিয়ে নানান কথায় কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।আদি এগিয়ে এলো।
–কি হয়েছে মামা কাদছো কেন?

নিহাদ আদির দিকে চেয়ে কান্না থামালো।নতুন মানুষের উৎপত্তি।তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।তা দেখে আদি হেসে বললো,
–নিহাদ,,আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি,,?আমার কোলে
এসো,,(হাত বাড়িয়ে)
নিহাদ আদির কোলে এলো।আদি ওকে কোলে নিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলছে,
–আমার লক্ষী মামা,তোমার জন্য কি এনেছি জানো,,,অনেক খেলনা এনেছি,জামা এনেছি,,তুমি খেলবা,,,
পেটে কাতুকুতু দিলো।দুজনেই খিলখিল করে হাসছে।

আদির মা আদিকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।সব ঠিক থাকলে ওর ও ফ্যামিলি পূর্ণ থাকতো।

–আদি তুই আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।ওর সাথে পড়ে খেলিস,,ওরা কিছুদিন আছে এখানে।

আদি নিশির কাছে নিহাদকে দিয়ে উপরের দিকে যেতে নিলেই আদি মা বললো,
–তোর রুম অগোছালো।তুই কিছুদিন অন্য রুমে থাক।তারপর ঠিকঠাক করে নিজের রুমে আসিস।চল তোকে অন্য রুম দেখাই।(রুমের সবকিছু আগের মতোই আছে।সামুর জিনিসপত্র দেখে যদি মন খারাপ হয়না)

–সমস্যা নেই মা।আমি ম্যানেজ করে নিবো।(আমি জানি কি জন্য এসব বলছো)

আদি নিজের রুমের দরজার লক ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো।জোরে শ্বাস ফেলে দরজা খোলে দরজার সামনে দাড়িয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলালো।সবকিছুই আগের মতোই আছে।সামু নিজের হাতে পুরো ঘরের ডেকোরেশন করেছিলো।সবকিছুতেই সামুর ছোয়া আছে।চোখ গেলো বিছানার পাশের ওর আর সামুর বড় করে বাধানো বিয়ের ছবিটার দিকে।ধীর পায়ে সেখানে গিয়ে সামুর মুখের উপর হাত বুলালো।

তুমি এখন যারই হওনা কেন,,এখানে যে আছে সে শুধু আমার আর সারাজীবন থাকবে।

আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খোলে।সেখানে ভাজে ভাজে সামুর জামাকাপড় রাখা।সব সেভাবেই আছে।সাজানো গুছানো।এত বছরে কেউ হয়তো ছুয়েও দেখেনি।আদি আলমারি বন্ধ করে ফ্রেশ হতে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে পেচিয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই একটা বক্স দেখলো।সেই বক্স যেটায় করে নাক ফুল,চেইন,চুরি,আংটি এনেছিলো।আদি বক্সটা খোলে সবকিছু ভিতরেই পেলো।

তুমি সব রেখে গেছো সামু,,তুমি যে খালি হাতে এবাড়ি থেকে বেরিয়েছো বুঝতে বাকি নে।যেখানে আমি তোমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছি সেখানে এসব দিয়ে কি করবে,,ঠিকই তো।
আদি বক্সটা আলমারিতে যত্ন করে রেখে দিলো।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
আদি নিচে গিয়ে খাবার সেরে উপরে চলে এলো।বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।কিছুই ভালো লাগছে না।
উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।সেখানেও সব একি আছে।সেই বেড,,সামুর দোলনা ওর রকিং চেয়ার,শুধু কিছুটা পুরনো হয়ে গেছে।কেউ যে ব্যবহার করে নি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।ফুলের টপ গুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।ওদের সেই ছোট্ট বাগান।
আদি গিয়ে দোলনায় গিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

“আমার এ আপসোস আজীবনের।যতদিন বেচে থাকবো ততদিনের।কেন আমি তোমাকে ডিভোর্স লেটার দিয়ে গিয়েছিলাম,,।কেন তোমাকে বেধে রাখতে পারলাম না।চলে গেলে আমাকে ছেড়ে, তোমার আদিকে ছেড়ে।তোমার কথা মনে হলে বুকের ভিতরটা জ্বলে যায় সামু।তুমি কোথায় আছো?”
আদির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শার্টের হাতা দিয়ে মুছে নিলো।

????

“ইট পাথরের এ শহরে

গাড়ি বাড়ির এ বহরে

খুজছে এ মন ভীষণ করে

দ্বীপান্বিতা….”?

????

“তুই আর যাবি না তো?”আদির মায়ের প্রশ্ন।

আদি মুখে খাবার তুলে বললো,
–না মা,,আমি এখানেই থাকবো।

আদির কথা শুনে খুশিতে তার চোখ চকচক করছে।
–সত্যি বলছিস?
–হুম,,আমি ছাড়া তোমাদের আর কে আছে?আর স্বার্থপর হতে পারবোনা।তোমাদের সাথেই থাকবো।বিজনেস দেখাশোনা করবো।আবার সব দায়িত্ব নিবো।

আদির মা কিছু বলার জন্য আকুবাকু করছে।তা দেখে আদি বললো,
–কিছু বলবে?

–হ্যা,মানে,,তুই আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারিস না?

–নতুন করেই তো শুরু করেছি।এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করোনা।

আদির মা আর কিছু বলতে পারলোনা।ছেলে যদি আবার রাগ করে চলে যায়।সেটা আর এ বয়সে মেনে নেওয়া সম্ভব না।পরে আস্তেধীরে বুঝিয়ে বলা যাবে।যদি আবার বিয়ে করে নতুন করে সব শুরু করে।
–আচ্ছা,তুই যেমন চাস।

আদির বুঝতে বাকি নেই আদির মা কি বলবেন।কিন্তু বিয়ে যে আর ওর দ্বারা সম্ভব নয়।সামান্তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারবেনা।অসম্ভব।

আদি বাইরে থেকে ফিরে রুমে যেতেই ধাক্কা খেলো।সার্ভেন্টরা মিলে ওর আর সামুর বিয়ের ছবিটা খুলছে।
–স্টপ ইট।(কিছুটা চিতকার করে)
সার্ভেন্টারা ভয় পেয়ে থমকে গেলো।আদি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল,
–এটা কেন খুলছেন আপনারা?

–ম্যাডাম বলেছেন।

–তার দরকার নেই।আপনারা যান।আমি মা কে বলে দিবো।

ওরা চলে গেলো।আদি ছবিটার পাশে গিয়ে ছবিটা ঠিক করে রেখে বললো,,
তুমি এখানেই থাকবে।তোমাকে রাখতে পারিনি বলে কি তোমার ছবি,তোমার স্মৃতি রাখতে পারবোনা।

“মা,,আমার ঘরে সব যেমন আছে তেমনই থাকবে।কোনো কিছু সরানো কিংবা এড করার প্রয়োজন নেই।প্লিজ।”

–কিন্তু,,,

–প্লিজ,,মা।

–আচ্ছা,,।

–আর হ্যা,আমি কয়েকদিনের জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি অফিসের কাজে।আগামীকাল ই যাচ্ছি।

–ঠিক আছে।আমি তোর সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছি।

আদি মৃদু হেসে বললো,
–তার আর প্রয়োজন নেই মা,,তোমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে।সে এখন নিজের কাজ নিজেই করতে পারে।আমিই প্যাকিং করে নেবো।তুমি শুধু বাবা আর নিজের খেয়াল রেখো।

–আচ্ছা,,(ছেলেটা আমার সত্যিই বড় হয়ে গেছে,বদলে গেছে।)

আদি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।অফিসের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ততায় সময় কাটিয়েছিলো।হোটেলে এখন ল্যাপটপে বসে কাজ করছে।কিছু কাজ আছে শেষ করে বিকেলের দিকে সমুদ্রের ধারে যাবে।সূর্যাস্ত দেখবে।সামুর ইচ্ছে ছিলো আদির সাথে সূর্যাস্ত দেখবে।আদি কথাও দিয়েছিলো নিয়ে যাবে কিন্তু কাজের জন্য আর সময় হয়নি।

.
.
.
.

সামুর ফোন বেজেই চলেছে।সামু রান্না করছে।আজ শুক্রবার।অফিস নেই।মন ভালো লাগছে না কেমন অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে।তাই আদিবার জন্য নিজ হাতে রান্না করছে।দৌড়ে গিয়ে ফোন তুলে,
–হ্যা ভাইয়া বলো।

–সামু আদিবাকে নিয়ে রেডি থাকিস।বিকেলে ঘুরতে বের হবো।সাথে তোর ভাবিও আছে।

–তোমরা যাও না,,তোমাদের মধ্যে কাবাবের হাড্ডি হতে কেন যাবো?

–এই চুপ কর তো।তোর ভাবিই বলেছে।

–ভাইয়া,ভালো লাগছে না আজ।মন ভালো নেই।অন্য সময়।

–বাইরে চল ভালো লাগবে।

–প্লিজ ভাইয়া।

–আচ্ছা,ঠিক আছে।আদিবাকে দে,,

সামু আদিবাকে ফোন দিলো।
–হ্যালো মামা,,

–হ্যা মামা শোন,আমরা আজকে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে যাবো।তোমাকে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার আম্মু যাবেনা বলছে।আমরা ওখানে অনেক মজা করবো।ঝিনুক কুড়াবো কিন্তু তোমার মাম্মা তো রাজিই হচ্ছেনা।

আদুবা ফোন কান থেকে সরিয়ে কান্না শুরু করে দিলো, মাম্মা যাবো,,
সামু মেয়ের কান্না দেখে বললো
–আচ্ছা,যাবো।দেও ফোন দেও।

–ভাইয়া এটা কি হলো,,

–তোর দূর্বল জায়গায় খুচা দিলাম নয়তো যেতে না।বিকেলে রেডি থাকিস।

–হুহ,,আচ্ছা।

সমুদ্রের পাড়ে শো শো বাতাস বইছে।কিছুটা রোদ আছে।সামু পার্পেল কালার ফোরপিচ পড়েছে।সিল্কি চুলগুলো উচু করে ঝুটি করেছে।হালকা সাজ,চোখে সানগ্লাস।আদিবাকেও পার্পেল কালার ফ্রক পড়িয়েছে।চুলগুলো ঝুটি করা।সামনে ফুলের ব্যান্ড লাগানো।শখ করে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছে সামু।
সামুর চুলগুলো উড়ছে।ঝুটি করেও শান্তি নেই।সামুর বড় মামার ছেলে,সাদ ভাইয়া,,আর তার বউ একসাথে বসে গল্প করছে।আদিবা আর সামু সমুদ্রের পাড়ে হাটছে।আদিবা খুব খুশি মনে কি যেন কুড়াচ্ছে।আর নরম বালিতে আকা আকি করছে।সামু দাঁড়িয়ে মেয়ের কান্ড দেখছে।
ওর ও ইচ্ছে হলো কিছু লিখতে।ছোট বেলায় ভেজা মাটিতে,বালিতে কত কিছু লিখতো।আকা আকি করতো।

সামান্তা আদিবার কিছুটা দূরে গিয়ে লাভ সেপের মধ্যে লিখলো।
সামান্তা
+
আদিল
. +
আদিবা

সামান্তা পানিতে হাত ধুয়ে আদিবাকে দেখতেই দেখে ও আকা আকি রেখে এক দৃষ্টিতে কিছু দেখছে।সেদিকে তাকাতেই দেখে দুজন বাচ্চা ছেলে তার বাবার সাথে খেলছে।বাবা দৌড়াচ্ছে বাচ্চারা তাকে ধরার চেষ্টা করছে।

আদিবার অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কাছে গিয়ে বললো,
–আমার সানসাইনের খেলতে ইচ্ছে করছে।চলো আমরা দুজন খেলি।

আদিবা খুশি হয়ে সামুর দিকে তাকালো।তারপর বললো,
–তুমি আমার সাথে খেলবে মাম্মা?

–হুম,অবশ্যই তুমি জানো তোমার মতো ছোট থাকতে আমি কি পরিমাণ দৌড়াদৌড়ি করেছি।তুমি আমাকে কখনোই ধরতে পারবে না।

–আমি পারবো,,আমি অনেক স্টং।তোমাকে আমি ধরে ফেলবো।

–ঠিক আছে লেটস সি,,বেবি।

সামু বলেই দৌড়।সামু কিছুটা জোরেই দোড়াচ্ছে যাতে আদিবা ওকে ধরতে না পারে।যাতে আরো বেশি চেষ্টা করে।
সামু পিছনের দিকে চেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কারো সাথে ধাক্কা খায়।
সামনে ঘুরে মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে অপরাধীর ভংগীতে বলতে লাগলো,,
–সরি আসলে আ,,,,,
আর বলতে পারলোনা।

বাকি কথাটা গলায় এসে আটকে যায়।পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যায়।ওর সামনে আদি দাড়িয়ে।আদি একদৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।নিজেরা যেন নিজেদের ভুলে,পুরো পৃথিবীকে ভুলে একে অপরকে দেখায় ব্যস্ত।
দুজনের ভিতরেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।সবকিছু যেন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে।পুরো পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।নিশ্বাস যেন ভারী হয়ে আসছে।দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে।বুকের ভিতর খুব দ্রুত হার্টবিট হচ্ছে।এতো দ্রুত হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী হার্টবিটের ধুকধুকানি শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
সামুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে বারবার।চোখের কোনে পানি জমেছে।পলক পড়লেই যেন পানি ঝড়ে পড়বে।তবুও যেন শান্তি পাচ্ছেনা।কিছু বলতেও পারছেনা।ওর মধ্যে প্রিয়কে এত বছর পর দেখার যেমন তৃপ্তি আছে তেমনি ভয়টাও বেড়ে যাচ্ছে।
আদির সামুকে এতবছর পর দেখে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কি বলবে খোজে পাচ্ছেনা।আর বলার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে।হাজার চেষ্টা করে ঠোঁট ও নড়াতে পারছেনা।
সামু বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।ওর এই মুহুর্তে কি করা উচিত কি বলা উচিত বুঝতে পারছেনা।কিছু কি বলা উচিত, না চলে যাওয়া উচিত,, না ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য যে অভিমান,রাগ সৃষ্টি হয়েছে তা ঝাড়া উচিত না জানতে চাওয়া উচিত কেন এমন করলো,,
নাহ,,এসবের কোনো মানেই হয়না এখন।না এখন আর সেই রাগ অভিমানের কোনো মূল্য আছে।
আদি নিজেকে সামলে কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবা এসে সামুর হাত ধরে টেনে বললো,
–ধরে ফেলেছি!!
আদিবার টানে সামুর ঘোর ভাংলো।আদিবার দিকে তাকালো ঠিকই কিন্তু কি বললো তা কান অব্ধি পৌছে নি।
আদি একবার সামুর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আদিবার দিকে।সামু আদিবাকে একবার দেখে আড়চোখে আদিকে দেখে নিলো।
আদি আদিবার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামুকে শুখনো মুখে বললো,
–তুমি এখানে,,

সামান্তা ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
–এই শহরেই আমার সংসার।

–মাম্মা তুমি কি আর খেলবে না?
আদিবা সামুর হাত ধরে বললো।

আদি মাম্মা ডাক শুনে চমকে আদিবার দিকে তাকালো তারপর সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–তোমার মেয়ে?

সামু মাথা নিচু করে মাথা উপর নিচ ঝাকিয়ে সায় দিলো।এমন কিছুই হওয়ার ছিলো তবুও আদির ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে সামলে আদিবার সামনে হাটু গেরে বললো,
–বাবু তোমার নাম কি?

আদিবা মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো,
–আদিবা,,(টেনে টেনে)
সামু চোখে হাত দিয়ে মনে মনে বলছে, কেলো করেছে।এমনিতে নাম জিজ্ঞেস করলে উল্টা পাল্টা নাম বলে আর আজ,,
আদি নাম শুনে চমকে সামুর দিকে তাকায়।সামু জানতো এমন কিছুই হবে।সামু আদির দিকে চেয়ে বললো,
–কোনো একদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম মেয়ের নাম আদিবা রাখবো তাই রেখেছি।সুন্দর হয় নি নামটা?
আদি আর বলার মতো ভাষা খোজে পাচ্ছেনা।
তখনই ডাক পড়লো।

–সামু!

দুজনেই উৎসের দিকে তাকালো।পিছনে ঘুরে দেখে সাদ দাড়িয়ে আছে।
–সামু যেতে হবে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।

সামু সমুদ্রের দিকে চেয়ে দেখে সূর্য ঢলে পড়েছে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
–আসছি।
সামু আদির দিকে একবার চেয়ে আদিবার হাত ধরে বললো,চলো।

আদির মনে হচ্ছে ওর হৃদপিন্ডটা কেউ কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়ে গেলো।সামুর আর পিছনে ঘুরে দেখার সাহস হয়নি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।অনেক কষ্টে,অনেক যুদ্ধ করে আটকে রেখেছিলো।কিন্তু আর পারছেনা।বারবার ওড়না দিয়ে মুছে নিচ্ছে।আদিবা দেখলে নানান প্রশ্ন করবে।
কিছুটা আড়ালে যাওয়ার পর পিছনে ঘুরে দেখে আদি ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।সামুর খুব কষ্ট হচ্ছে।

আদি দাড়ানো থেকে বসে পড়ল।

“আদি এমনটাই তো হওয়ার ছিলো।তুই তো জানচিস তবুও কেন কষ্ট পাচ্ছিস?তুই তো চেয়েছিলি ও ভালো থাকুক।ও ভালো আছে।সুখে আছে।তবুও কেন আমার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে।”
আদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।এতদিন পর দেখেও কিছু বলতে পারলোনা।মন ভরে দেখতে পারলো না।
আদি সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে।
সামু এত তাড়াতাড়ি নিজেকে গুছিয়ে কিভাবে নিলো?এটাই ওর মাথায় ঢুকছেনা।হাসব্যান্ড ঠিক আছে কিন্তু এতো বড় বাচ্চা।ওদের ডিভোর্সের পর পর ই কিভাবে বিয়ে করতে পারলো?এটা কি সম্ভব?সামু শক্ত হলেও এতটা পাষাণ নয় যে সবকিছু মাটিচাপা দিয়ে কয়েকমাসের মাথায় বিয়ে করে নিবে।নিজেকে সামলাতে কম করে হলেও একবছর সময় প্রয়োজন।
কিন্তু এতবড় বাচ্চা,,কিভাবে?তাও ওর নামে,,আদি কোনো হিসাব মিলাতে পারছেনা নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।

পরক্ষণেই ভাবলো,
হয়তো সামলে নিয়েছে।আমাকে ঘৃণা করে ভালোভাবে বাচার জন্য বিয়ে করে নিয়েছে।হয়তো বা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।তবে করেছে তো,ভালো তো আছে।সামু আমাকে ভুলে গেছে কিন্তু আমি কেন পারছিনা,,,।

রাত হয়ে গেছে।আদি দু’হাতে বালি খামচে ধরে চিতকার করে কাদছে।ওর চিতকারের শব্দ সমুদ্রের গর্জনের মাঝে মিলিয়ে যাচ্ছে।হয়তো কেউ শুনতে পারছেনা।কেউ জানতে পারছে না কোনো এক প্রেমিক তার প্রেয়সীকে হারানোর ব্যথায় আহাজারি করছে।

গুটিগুটি পায়ে সমুদ্রের জলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।বড়বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।ওর ইচ্ছে করছে সমুদ্রের মাঝে নিজেকে বিসর্জন দিতে।কিন্তু না পারবে না।এতটা স্বার্থপর হতে।নিজের পরিবারকে আরো একবার শোকের ছায়ায় ভাসাতে পারবেনা।আদি চোখ মুছে জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে চিতকার করে বললো, ভালোবাসি সামু,,অনেক ভালোবাসি।
ওর চিতকারের শব্দ মিলিয়ে গেলো।

চারদিকে অন্ধকার।ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে সমুদ্র থেকে উঠে পাড় দিয়ে হেটে চলেছে।হটাৎ কিছু দেখে চমকে যায়।তারপর ধপ করে বালিতে বসে ভালো ভাবে আলো ফেলে পরখ করে দেখে নেয়।
আদির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।আদির মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে,,
“আই নিউ ইট সামু,,আই নিউ ইট,আমার সামু আমাকে ভুলতে পারেনা।আমি আসছি।পুরো কক্সবাজার তন্নতন্ন করে হলেও তোমাদের খোজে বের করবো।হে মাবুদ আমি যা ভাবছি তাই যেন হয়।”

চলবে….?

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ