Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৪

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১৪

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-১৪

ফাবিহা নওশীন

??
আদির মা,বাবা,সামান্তার মা,বাবা আদির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।আদির বাবা হটাৎ বলে উঠে,,

–আদি তুই বেশ করেছিস,,ওই কুকুরের বাচ্চাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিস।ও সুস্থ হলে আমি ওকে জেলে পুরব।ওর এত্ত বড় সাহস আহনাফ চৌধুরীর বাড়ির মেয়েদের ইজ্জতের দিকে হাত দেয়।আমি শুধু শুধু সামান্তার উপর অভিমান করে ছিলাম।এতটুকু বাচ্চা মেয়ে নিজের কথা না ভেবে,,নিশির কথা ভেবেছে,আমার পরিবারের মান সম্মান নিয়ে ভেবেছে।আর আমি ওর উপর অভিমান করে ছিলাম।ও কতটা সাহস দেখিয়েছে।

আদির মা কাদতে কাদতে বললো,,
–নিশি যেনো এসব না জানতে পারে।তাহলে ও অনেক কষ্ট পাবে।মেয়েটা আমার অনেক নরম মনের সামুর মতো সাহসী নয়।ওকে তোমরা জানিওনা।

আদি ওর মাকে শান্তনা দিয়ে বললো,
মা প্লিজ কান্না থামাও।নিশি এসব জানবে না।ওকে জানাবো না বলেই তো তোমাদের আলাদা করে নিয়ে কথা বললাম।সামুও এর জন্য তোমাদের কাউকে কিছু জানায়নি।যাতে নিশির কানে এসব না যায়।আমিও জানাতাম না কিন্তু তোমরা সামুকে ভুল বুঝতেছিলে তাই বাধ্য হয়েই বললাম।

আদির মা কান্না থামিয়ে বললো,
সামু আমাদের কিছু বলে নি,,আমরাও সত্যি না জেনে মেয়েটাকে ভুল বুঝেছি।

সামুর মা এসব শুনে অনুতপ্ত হচ্ছেন।কিছু না জেনেই নিজের মেয়েকে ঘরভর্তি মানুষের সামনে চড় মেরেছে।
–ভাবি,,আপনার কথা না হয় বাদ দিন।আপনার ছেলের শোকে মাথা কাজ করে নি কিন্তু আমি তো ওকে ঘরভর্তি মানুষের সামনে দুটো চড় মেরেছি।মেয়েটা আমার অনেক কষ্ট পেয়েছে।আমি ওর গায়ে হাত তুলেছি কবে মনে পড়ছেনা।ভুল করলে বকুনি দিয়েছি কিন্তু হাত তুলিনি,,কিন্তু কাল আমি ওর গায়ে,,,।

আদি,আদির বাবা,সামুর মা চড় মারার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

সামুর বাবা বলে,,কি বলছো?তুমি ওকে মেরেছো কেন?তুমি কি করে পারলে আমার মেয়ের গায়ে হা তুলতে? আমি ছোট থেকে ওর গায়ে ফুলের টুকাও পড়তে দেইনি আর তুমি,,,

আদির বাবা বললো,,
–কাজটা ভাবি আপনি আসলেই ঠিক করেন নি।

আদিও অনুতপ্ত।ও নিজেও সামুকে অনেক জোরে একটা থাপ্পড় মেরেছে।বেচারি কোনো দোষ না করেও তিনটি থাপ্পড় খেলো।

সামুর মা বললো,
–সামু কই,,আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইব।আমি তো ওর মা।আমি তো ওকে চিনি।আমার তো ওকে সাপোর্ট করার কথা ছিলো।

আদি সামুর মাকে বলে,
–আন্টি,,আমি সামুকে আপনার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ও নিশির সাথে নিশির রুমে আছে।

আদি নিশির রুমে গিয়ে সামুকে ডেকে নিলো।
–কাজ শেষ?
–হু,,তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও।তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।কিছু বলবে তোমাকে।

সামান্তার মুখ কালো হয়ে গেলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,
–যাচ্ছি।
আদি পিছনে থেকে বললো,
–উনি খুব অনুতপ্ত আমার মতো।
সামু আদির কথা শুনে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

সামু মাকে জড়িয়ে আছে।সামুর মা সামুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সামুর কাছে ক্ষমা চাইতেই সামু মাকে জড়িয়ে কেদে দেয় আর বলে,,
তোমার কোনো দোষ নেই আম্মু তোমার জায়গায় আমি থাকলে একি কাজ করতাম।ভুলে যাও,,আর আমাকে একটু আদর করে দেও।

নিশির মন খারাপ।আদি বিষয়টি খেয়াল করছে।আদি নিশির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো।ওর কি হয়েছে জানতে হবে।

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসেছে।আদির খাওয়া শেষ সামু তখনো খাচ্ছে।আদি সামুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–ডিনার শেষে আমার ঘরে এসো কথা আছে।

সামু মাথা না তুলে খেতে খেতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তারপর একবার মাথা তুলে সবার দিকে চাইলো।ওর ভিষণ লজ্জা লাগছে আদি এক টেবিল মানুষের সামনে ওকে ওর ঘরে যেতে বললো।আলাদাভাবে বললে কি হতো,,সবাই কি ভাবছে,,,পরক্ষণেই ভাবলো স্বামীর ঘরে যাবো লজ্জা কিসের?বউ স্বামীর ঘরে যাবে স্বাভাবিক।

আদি নিশির রুমে গেলো।নিশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আদি ওর কাধে হাত রাখতেই নিশি পিছনে ঘুরে আদির দিকে চেয়ে স্মিত হাসি দিয়ে বললো,
–ভাইয়া তুই,,কিছু দরকার?
–তার আগে বল আমার বোনের মুখে হাসি নেই কেনো?কি হয়েছে তার?সে কি তার ভাইয়ের কর্মের জন্য সাফার করছে?

–কি বলছিস ভাইয়া এসব?আমি ঠিক আছি।তুই এমন উল্টো পাল্টা ভাবছিস কেন?

–নিশি মিথ্যা বলিস না,আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কিছু হয়েছে।জয় কিছু বলেছে?তুই এখন আমাকে বলবি না জয়কে ফোন করে জানবো?
বলেই আদি ফোন বের করলো।

নিশি আদিকে বাধা দিয়ে বললো,
–ফোন দিস না,আমি বলছি,,জয় কিছু বলে নি কিন্তু ওর ফ্যামিলি ওর উপর অনেক প্রেশার দিচ্ছে।ওর চাচা মানে রাজের বাবা জয়কে অনেক প্রেশার দিচ্ছে।জয়ের বাবা-মা ও প্রেশার দিচ্ছে ওকে।রাজের ফ্যামিলি জয়কে তোর ব্যাপার নিয়ে,আমাদের ফ্যামিলি নিয়ে অনেক কথা শুনাচ্ছে।ও অনেক হেরিটেজ ফিল করছে।

আদি চুপ করে আছে।কি করা যায় তাই ভাবছে।
নিশি হটাৎ কেদে দেয়।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
–নিশি কাদছিস কেন?কান্না থামা।

–ভাইয়া আমি জয়কে খুব ভালোবাসি।ও যদি এখন ফ্যামিলির চাপে বিয়ে না করে,,আমার কি হবে?আমি কিভাবে ওকে ছাড়া থাকবো?আমি পারবো না।

–নিশি,,স্টপ ক্রায়িং।আমি যখন মেস করেছি আমিই সব কিছু ঠিক করে দেবো।তুই জয়কে বিয়ে করতে চাস তো,,আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি তোর ইচ্ছে পূরণ করবো।আমি কথা বলবো জয়ের সাথে।প্রমিস করছি সব ঠিক করে দেবো।তোর এই ভাইয়ের উপর তোর বিশ্বাস আছে তো?বল,,

নিশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

–তাহলে কান্নাকাটি বন্ধ কর।আমি কালকেই সব ঠিক করে দেবো।

.
.
.
.

সামান্তা আদির বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে আছে।আদি রুমে নেই।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।আকাশে কতশত তারা জ্বলজ্বল করছে।
আদি রুমে ঢুকে সামান্তাকে না পেয়ে রেগে গেলো।
–ওকে আমি সবার সামনে বলে এলাম আসার জন্য আর ও আসেনি,,।

আদি ফোন হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে যায় সামুকে ফোন করার জন্য।তখনই বারান্দায় কারো ছায়া দেখতে পায়।ফোন রেখে বারান্দায় আসে।সামু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছে।আদি সামুকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বিরবির করে বলে,
“পাখি আমার এতটাও অবাধ্য নয়”

আদি সামান্তার পাশে এসে দাড়ায়।সামান্তা মাথা না ঘুরিয়েই বললো,
–কোথায় ছিলে?
আমাকে আসতে বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে?
–নিশির ঘরে।

সামান্তা আদির কথা শুনে চমকে ঘুরে জিজ্ঞেস করে,
–নিশি আপুর ঘরে!!কেন?
তারপর আদি সামুকে সবকিছু বললো।

–এখন কি করবে?

–জয়ের সাথে কথা বলবো।ওর সাথে আমার কিছু হিসেব বাকি আছে,,সেটা পরিশোধ করতে হবেনা,,

–মানে কি?জয় ভাইয়া তো কিছুই জানে না।

–কেন জানবে না?ওর বাড়িতে আমার বোনের সাথে এতবড় ঘটনা ঘটে গেলো,,আর ও কোনো খবর ই রাখলো না।এভাবে আমার বোনের খেয়াল রাখবে,,সারাজীবন কি করবে,,এভাবে ছেড়ে দিবে একা?(রাগান্বিত সুরে)

সামান্তা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
–তোমার যা ভালো মনে হয় তাই কর।কিন্তু নিশি আপু যেনো কষ্ট না পায় সেটা দেখবে।

–বোন আমার অবশ্যই দেখবো।ওর ক্ষতি কিংবা কষ্ট আমি মেনে নিবোনা।

–তোমার উপর গতকাল থেকে অনেক ধকল গেছে রেষ্ট করো।আমি তাহলে এখন যাই,,
বলেই সামান্তা পা বাড়ালো।
আদি সামান্তার হাত ধরে ফেললো।

–কোথায় যাচ্ছো?আসল কথাই তো জিজ্ঞেস করা হলো না।

সামান্তা নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
–তার জন্য অনেক সময় আছে।আগামীকাল বলবে।

–না আমি এখনি জানতে চাই।আন্টি কি বলেছেন?তুমি কি ক্ষমা করেছো?

–কি বলছো এসব,,আমার আম্মু হয়।আমাকে শাসন করার অধিকার তার আছে।তাই বলে কি আমি আম্মুর উপর রাগ করে থাকবো?আম্মু যেমন বকেছে,মেরেছে তেমনি আদরও করে দিয়েছে।
বলেই সামু হালকা হাসি দিলো।

–আমিও তো মেরেছি তাহলে আমিও একটু আদর করে দেই।

সামান্তা আদির কথা শুনে ঢোক গিলে বললো,,
তুমি থাপ্পড় মেরে আবার সরি বলেছো,গালে কিস করেছো সব শোধ।আমি এখন ঘরে যাবো।

আদি সামুকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
এত্ত পালাই পালাই করো কেন?তুমি না সাহসী দ্যা গ্রেট সামান্তা?

–জ্বী আমি অনেক সাহসী।

–তাহলে আজকে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে।

সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
–কি বলছো?সবাই কি ভাববে?

–কি ভাববে?আমি কি পরপুরুষ? আমার ঘরে তোমাকে কেউ আসতে মানা করেছে?আমিই তো থাকতে দেইনি।এখন পারমিশন দিচ্ছি।তুমি থাকবে ব্যাস।

-…..

আদি সামান্তা ছেড়ে দিয়ে বললো,
আমার খুব ঘুম পেয়েছে,,,আমি গতকাল সারারাত ঘুমাইনি।(মুখে ইনোসেন্ট ভাব এনে)

–ঠিক আছে।

সামান্তা আদি পাশাপাশি শুয়ে আছে।ডিম লাইটের আলোয় আদি সামান্তার মুখটা দেখছে।

–এভাবে চেয়ে থাকলে ঘুমাবো কিভাবে?

–আমার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে কি করবো?

–তোমার না খুব ঘুম পাচ্ছে।

–হুম তোমার জন্য আসতে পারছেনা।

–তাহলে আমি চলে যাই?

আদি প্রতি উত্তরে সামান্তাকে টেনে বুকের মাঝে নিয়ে নিলো।
–এবার ঘুম আসবে।

সামান্তা মুচকি হেসে আদির বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো।আদি সামান্তার মাথায় একটা চুমু খেয়ে বললো,
–গুড নাইট মাই ডিয়ার।
–হুম।
আদি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে তলিয়ে গেল।দুদিনের ক্লান্তি,,সারারাত বাইরে ছিলো।সামু আদির নিশ্বাসের উঠা নামা অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।

সামুর ঘুম ভেঙে যেতেই নিজেকে আদির বুকে আবিষ্কার করলো।আদি ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।ওর নিশ্বাস সামুর চুলে এসে বাড়ি খাচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া।৮টা বাজে।সামু ভেবেছিলো সবার উঠার আগে ভোর বেলায় আদির রুম ছেড়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বে।কেউ কিছু বুঝতে পারবেনা।এখন??

সামু আদির কাছ থেকে নিজেকে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালো।তারপর আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে একবার আদির দিকে চেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আদি কিছুই টের পেলোনা।যে ঘুমকাতুরে ছেলে।সামান্তা সিড়ির কাছে গিয়ে আবার দৌড়ে ফিরে এলো।লিভিং রুমে সবাই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।নিচে নামতে দেখলেই হাজার প্রশ্ন করবে,,উপরে কি করছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও এসব সামান্তার ধারণা।

–এখন কি করি?আমার এতো লজ্জা লাগছে কেন?নিজের হাসব্যান্ডের রুমেই তো ছিলাম।লজ্জা লাগছে কি করবো?কেটে কুচিকুচি করে খেয়ে ফেলবো? উফফফ,,!!

সামান্তা উপায় না পেয়ে নিজের চুল নিজেই ছিড়ছে।তারপর গুটিগুটি পায়ে নিশির রুমে গিয়ে দেখে নিশি ঘুমাচ্ছে।সামু নিশির পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো নিজেও জানেনা।
নিশির ডাকে ঘুম ভাংলো।
–তুই কখন এলি?

–আদির সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে তোমার রুমে এসে শুয়ে পড়েছি।ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি।
নিশি মুচকি হেসে বললো,,
–ভাইয়ের রুমে থাকলেই তো পারতি।এমনিতেও ওই রুমেই থাকার কথা ছিলো গতকাল।

–(ও রুমেই ছিলাম,সেটা তোমাকে কি করে বলি)আমি যাচ্ছি।

সামু নিচে নামতেই আদির মা বললো,
–সকালে তোকে তোর রুমে গিয়ে খোজে এলাম কই ছিলি?
–নিশি আপুর রুমে।
–ফ্রেশ হয়ে আয়।নাস্তা করবি।
–আসছি।

জয় লিভিং রুমে বসে আছে।নিশির মায়ের সাথে কথা বলছে।সামু আদিকে ডাকতে গেছে।আদি তখনো ঘুমে।বেলা বাজে ১২টা তার উঠার নাম নেই।সামান্তা আদির কাছে গিয়ে আদিকে ডেকেও কোনো লাভ হয়নি।
সামু এবার ঝাকাতে লাগলো।
–আদি,,উঠো।আদি উঠো।
–…..???
সামু আদির কানের কাছে গিয়ে চিতকার করলো,
–আদিইইই,,,!!
–কি,,কি,,,হয়েছে।
–এক ঘন্টা ধরে ডাকছি।উঠার নাম নেই।
–এত সকাল সকাল কেন ডাকছো?
–১২টা বাজে ১২টা।উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।
–৩০মিনিট।
–জয় ভাইয়া এসে বসে আছে।
আদি জয়ের নাম শুনে লাফিয়ে উঠলো।
–আগে বলবা না?
–,সুযোগ পেলাম কই।
আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।

আদি ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে জয় বসে আছে।আদি ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–মা নিশি কই?
–ভার্সিটিতে গিয়েছে।
–গুড।জয় প্লিজ কাম উইথ মি।বিশেষ কথা আছে।
জয় উঠে দাড়ালো।আদি সামান্তাকে বললো,
–তোমার ফোন নিয়ে আমার রুমে এসো।

সামান্তা ফোনের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলো। আদি কি করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারছেনা।কি আর করার ফোন নিয়ে আদির ঘরে গিয়ে দেখে দুজনেই চুপ করে বসে আছে।সামান্তাকে দেখে আদি মাথা তুলে বললো,,
ভিডিও অন করে ফোন ওর হাতে দেও।
জয় বুঝতে পারছেনা কিসের ভিডিও,, ও প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো আদির দিকে।সামান্তা আদির দিকে চেয়ে আছে।
কি বলছে কি,,বোনের ভিডিও দেখাতে বলছে।সামু কাচুমাচু হয়ে বললো,
–কি বলছো?ওনাকে,,
–তুমি দেখাও কোনো সমস্যা নেই,,ও তো নিশির হবু স্বামীই।
সামান্তা হাতের আংগুল ঘষছে।কিছুক্ষণ পর আদি আবার ইশারা করলো।জয় তো কিছুই বুঝতে পারছেনা।

সামু ভিডিও অন করে জয়ের হাতে দিয়ে বললো,
ভিডিও প্রেস করুন।জয় ফোন হাতে নিয়ে প্রেস করে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় চোখ বন্ধ করে ফোন উল্টো করে টেবিলের রেখে দিয়ে চোখ রক্তবর্ণ করে বললো,
–হোয়াট দ্যা হেল,,এসব কি?(চেহারা স্পষ্ট না হলেও ওর বুঝতে বাকি নেই এটা নিশি)
আদি টেবিলে চাপড়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে চিতকার করে বললো,
–আমিও জানতে চাই এসব কি?
–মানে?
–মানে,,,এই সিকিউরিটি তুমি আমার বোনকে দিয়েছো?
–আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
–তোমার বাড়িতে,তোমার ভাই আমার বোনের ড্রেস চেঞ্জিং ভিডিও বানায় আর তুমি কি করছিলে?
–এসব রাজ করেছে?
–হ্যা,,ওই ব্লাডি বিচ এটা করেছে।আমার বোনের সম্মান নিয়ে খেলছে।
–রাজ,,
–হ্যা,,,ও নিশিকে ট্রাপে ফেলে ওর ভিডিও বানিয়ে, নিশির কাছ থেকে সামুর নাম্বার নিয়ে ওকে ভিডিও পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।আর এই জন্য আমি ওই কালপিটকে মেরেছি।

–কি!!!
একটা শব্দে সবাই দরজার দিকে তাকালো। নিশি দাড়িয়ে আছে ওর হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেছে।
সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।ওর ক্লাস শেষ হতে বিকাল কিন্তু এই সময়ে বাসায় ফিরবে কেউ বুঝতেও পারেনি।
নিশি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,, কিসের ভিডিও? তারমানে যা হচ্ছে সব আমাকে নিয়ে?সামু তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিস?
–না আপু,,,তুমি ভুল বুঝছো,,তুমি যা ভাবছো,,
–ভিডিও দেখা,,(কড়া গলায়)
সামু আদির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। আদি টেবিল থেকে ফোন তুলে পকেটে নিয়ে বললো,,
–কোনো ভিডিও নেই,,তুই ভার্সিটি থেকে ফিরেছিস,,ফ্রেশ হ।
–ভাইয়া তুই যদি না দেখাস এখন আমি কি করবো নিজেও জানিনা।

জয় শান্ত কন্ঠে বললো,
–আদি,ওকে ফোনটা দেও।
আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামুর হাতে ফোন দিলো।সামু ভিডিও বের করে কাপা কাপা হাতে নিশিকে দিলো।

নিশি ভিডিও দেখে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় হাত থেকে ফোন ফেলে দিয়ে দু’হাতে চোখ মুখ ডেকে মেঝেতে বসে পড়ল।ওর সারা শরীর কাপছে।দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।সামু ওর পাশে বসে বললো,
–নিশি আপু কান্না থামাও,,কেউ দেখেনি এসব।আদি রাজের ফোন,ল্যাপটপ থেকে ভিডিও নষ্ট করে দিয়েছে।প্লিজ।

জয় এগিয়ে এসে নিশির পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–আমাকে ক্ষমা করো নিশি,আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি,তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি।নিজের ভাইয়ের কুদৃষ্টি থেকে বাচাতে পারিনি।আমাকে মাফ করো।
নিশি ওকে ধাক্কা দেয়।
–ছুবেনা আমায় তুমি ছুবেনা।আমি কাউকে ক্ষমা করবো।
–নিশি প্লিজ এমন বলোনা,আমি ভালোবাসি তোমাকে,তোমায় ছাড়া থাকতে পারবোনা।প্লিজ।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো,,কিন্তু আমাকে ক্ষমা করো,আমাকে দূরে সরিয়ে দিওনা।

–আমি ওর বিচার চাই।এতে যা হবার হবে।আমার বদনাম হোক, তুমি আমাকে ছেড়ে দেও আই ডোন্ট কেয়ার।

সামুর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে।নিশি যে ভয় পেয়ে কুকড়িয়ে না গিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ও যদি ওর বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করে তবে শুধু নিশিই না অন্য সব মেয়েরাও বিচার পাবে।তারা নতুন করে বাচার আশা পাবে।

জয় বললো,,
–অবশ্যই,শাস্তি ওকে পেতেই হবে।ও তোমার সম্মান নিয়ে খেলেছে।আমার ভালোবাসা আমার হবু বউয়ের সম্মান নিয়ে খেলেছে।শাস্তি ওকে দিয়েই ছাড়বো।

সামু আদিকে ইশারা করলো বাইরে যাওয়ার জন্য।আদি সামুর পিছু পিছু বাইরে চলে এলো ওদের একা ছেড়ে।

জয় নিশিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে ওর মাথায় অসংখ্য বার ঠোঁট ছুইয়ে মাফ চাইলো।

সামান্তা মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সেটা খেয়াল করে বললো,
–তুমি এত খুশি কেন?
–আসলে আপনি যখন জয় ভাইয়াকে ভিডিও দেখাতে বলেছিলেন তখন আমি মনে মনে আপনাকে বেক্কল উপাধি দিয়েছিলাম।কিন্তু এখন দেখছি ভালোই হয়েছে,,নিশি আপু জেনে অন্য রকম রিয়েক্ট করেনি বরং সাহস দেখিয়েছে।জয় ভাইয়াও সাপোর্ট দিচ্ছে।সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে।সত্যিও সবাই জেনেছে।ওদের রিলেশনও ঠিক হয়েছে।

–তুমি আমাকে এতটা বেক্কল ভাবো জানতাম না তো,,

সামু দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,,
–আমি তো ভেবেছিলাম এই ছয় ফুটের জিরাফ রোমান্স ছাড়া আর কিছুই জানে না,,

আদি চোখমুখ কুচকে বললো,
–তুমি আমাকে আবার জিরাফ বললে,,দাড়াও,,

সামু বুঝতে পারছে অবস্থা খারাপ যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে তাই কেটে পড়াই শ্রেয়।
সামু মুখ ভেংচি কেটে দৌড়,,,

–ওই পালাচ্ছো কেন দাড়াও,,আজকে আমি তোমাকে দেখাবো রোমান্স কাকে বলে,,,
আদিও সামুর পিছে দৌড়,,,।

ওরা গোল্লাছুট খেলুক,,,, ?

চলবে,,,,,?

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ