Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১২

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১২

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১২

ফাবিহা নওশীন

??
সামান্তা গাড়িতে বসে আছে।রাজ ওর কাছে কি চাইতে পারে সেটা রাজের আচরণে স্পষ্ট।সামান্তার কিছুটা ভয় লাগছে।যদি রাজ ওর সাথে খারাপ কিছু করে।তাহলে?
কিছু ভাবতে পারছেনা।চোখের সামনে রাজের দেওয়া নিশির ভিডিওটা ভেসে উঠছে।সেদিন পার্টিতে এসব করেছে রাজ।যে পার্টিতে না যাওয়া নিয়ে আদি রাগ করেছিলো।
ভিডিওতে নিশি ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করছিলো।সম্ভবত ড্রেসে কিছু পরেছিলো আর এটা যে রাজ ফেলেছে সেটা অজানা নয়।নিশির ফেইস প্রথমে স্পষ্ট না হলেও শেষের দিকে টিস্যু নেওয়ার জন্য ক্যামেরার দিকে ঘুরে যেখানে নিশি স্পষ্ট।সামান্তাকে নিশি খুব ভালোবাসে।তাই সামুও নিশির সাথে কোনো প্রকার অন্যায় হতে দিবেনা।

অপরদিকে নিশি সামান্তাকে খোজে পাচ্ছেনা।বারবার ফোন করছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা।আদি নিশিকে চিন্তিত চেহারায় দেখে জিজ্ঞেস করে,,

–নিশি এনিথিং রং?

–না,,,

–কিছু তো হয়েছে,,,তোকে চিন্তিত লাগছে।

–ভাইয়া আসলে সামুকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
নিশি চোখ বুঝে একদমে বলে ফেলল।
আদি ফ্যালফ্যাল করে নিশির দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
–পুরো বাড়ি খুজেছি।বারবার ফোন করছি কিন্তু পাচ্ছিনা।

অজানা আতংকে আদির বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললো,, এদিকেই আছে কোথাও তুই টেনশন করিস না।আমি দেখছি।

আদি ফোন বের করে কল দিতে গিয়ে সামান্তার একটা মেজেস দেখে।সামান্তা পার্স নেওয়ার বাহানায় অনেক কষ্টে আদিকে ছোট করে একটা মেসেজ করে।
“আদি আমি রাজের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি”

আর কিছু লিখতে পারেনি কারণ তখন ওর দরজার সামনে কয়েকজন ছিলো এখন এরা কি মেহমান না রাজের লোক জানেনা।ফোন থেকে সাথে সাথেই মেসেজ ডিলিট করে বের হয়ে যায়।আদিকে রাজের কথা জানিয়ে রাখে যাতে কোনো বিপদে পড়লে ওকে রিস্কিউ করতে পারে।

মেসেজটা দেখে আদির গায়ে আগুন জ্বলে উঠে,চোখমুখ হিংস্র রুপ ধারণ করলো।সাথে সাথেই একজনকে ফোন করে।
–হ্যালো আমি মেসেজ করে একটা নাম্বার পাঠাবো সেটা ট্রাক করে লোকেশন জানাও এস সুন এস পসিবল।
–ওকে।

আদি নিশিকে বলে গেলো যাতে কাউকে কিছু না বলে।আদি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।সাথে কিছু গার্ডকে।

সামু,,হাও কুড ইউ ডু দিস?ইউ হেভ টু প্রে ফর দিস।আমার ভালোবাসা বুঝিস নি।দাম দেস নি।একবার তোকে পাই তোর যে কি হাল করবো?তুই বিয়ে রেখে আমাকে রেখে রাজের কাছে গিয়েছিস?এই জন্য ই আমাকে এতো অবহেলা করেছিস?সব কিছুর মূল্য দিতে হবে তোকে।চরম মূল্য।

সামু গাড়িতে বসে অতি সাবধানে গাড়িতে বসা লোককে ফাকি দিয়ে নিজের পার্সের ভিতরে অন্য একটা ফোনে রেকর্ডার অন করে রাখলো।তারপর নিজের ব্যবহৃত ফোনটা হাতে রেখে দিলো।
গাড়িটা একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে থামলো।সামু বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চার করে কাপা কাপা পায়ে গাড়ি থেকে নামলো।একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।ঢুকতে ইচ্ছে করছে না তবুও আল্লাহর নাম নিয়ে ঢুকে গেলো।ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে।কি করবে বুঝতে পারছেনা। কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।

অপর দিকে আদির ফোন বেজে উঠলো।
–পেয়েছো?
–…
–ধন্যবাদ।অনেক ধন্যবাদ।একাউন্টে বিল চলে যাবে।
আদি ফোন রেখে বিজয়ের হাসি দিলো।
আসছি সামান্তা,তোর আর তোর আশিকের কাছে।

ওয়েলকাম সামান্তা,ওয়েলকাম।আমি জানতাম তুমি আসবে,,দাঁড়িয়ে আছো কেন এসো,,ভিতরে এসো।

সামান্তা ঘৃণার দৃষ্টিতে রাজের দিকে চাইলো।

–এভাবে চেও না বুকে বড় লাগে,,,

–আপনি এতটা নিকৃষ্ট,,আপনি এভাবে কথা বলছেন কিভাবে?মানুষ এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হয়?
যাইহোক কি চান বলুন?

আগে তো বস।তোমাকে দেখে অনেক বিধ্বস্ত লাগছে।বস।
সামান্তা কিছু না বলে বসে পড়ল।
–ও হ্যা,,আজ তো তোমার গায়ে হলুদ ছিলো তাই না?ইসস সেটা আর হলো না।

–ফালতু না বকে বলুন কি চান?

–তোমাকে!!

–মানে কি হা?

–ওয়েট ওয়েট তোমার ফোন দেও,,দেখি কাকে ফোন দিয়ে রেখেছো।রাজ সামুর ফোন কেরে নিয়ে গেলো।সামু জানতো এমনটাই করবে।চেক করে কিছুই পেলোনা।তখনই আদির ফোন এলো।রাজ কেটে ফোন সুইচ অফ করে দিলো।
–গুড গার্ল।কি জানি বলছিলে কি চাই,,,আমি তোমাকে চাই।আই ওয়ান্ট টু মেরি ইউ।সিম্পল।

রাজের কথা শুনে সামুর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। চিতকার করে বললো,
–হাও ডেয়ার ইউ,,,আর ইউ ম্যাড?আমি মেরিড।ভুলে গেছেন?

–সো হুয়াট!!ডিভোর্স দেবে।

সামু দাতে দাত চেপে বললো,
–কালকে আমার আদির সাথে পুনরায় বিয়ে।আর আমি বিয়ে করবো।ডিভোর্স তো দূরে থাক।

–ভুলে যেওনা,,আমার কাছে কি আছে?

–কি আছে?(তাচ্ছিল্যের সুরে)

–তোমার নিশি আপুর চেঞ্জিং ভিডিও।

–যে ছেলে মেয়েদের ওয়াশরুমে ক্যামেরা সেট করে ভিডিও বানায়।আমি তাকে বিয়ে করার জন্য আদিকে ছেড়ে দিবো?হাসালেন আমায়।হাহা,,

–যা করেছি তোমার জন্য করেছি।

–কিভাবে করলেন,,আপনার ভাইয়ের বউ সে।আপনার ভাইকে কি জবাব দিবেন?আপনার একটুও ভয় হলোনা?

–প্রথমত,ট্রাপটা তোমার জন্য ছিলো।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তুমি যাওনি।তাই নিশি ভাবিকেই ফাসাতে হলো।আর জয় জানবেওনা।

–তার ড্রেস আপনি নষ্ট করেছেন ইচ্ছে করে?

–হ্যা,আমি ওনার উপর পুরো ট্রে ভর্তি ড্রিংক ফেলে দিয়েছি।যাতে ওয়াশরুমে যেতে বাধ্য হয়।চেঞ্জ করতে হয়।

–ছিঃছিঃ

–হাহা,,নাইচ প্ল্যানিং তাই না??

–খুবই জঘন্য কাজ করেছেন আপনি এর জন্য আপনার শাস্তি পাওয়া উচিত।আপনি আপুর ভিডিও কিছুই করবেন না।আমি এখন বাসায় যাবো ফোন ফেরত দিন।

–তোমার কি মনে হয় তোমাকে এমনি এমনিই এখানে এনেছি?তুমি আর ফিরে যেতে পারবেনা।তুমি এখানেই থাকছো।না আজ তোমার হলুদ হবে না কাল তোমার বিয়ে।পরশুদিন ফিরে যাবে আর বলবে তুমি ডিভোর্স চাও আর আমাকে বিয়ে করবে।

–কখনো না,,আপনি আমাকে যতটা দূর্বল ভাবছেন আমি তা নই,,

–আই নো দিস।বাট তোমার কাছে আর কোনো রাস্তা নেই।কন্ডিশন এটাই।তুমি আদিকে বিয়ে করছোনা আমি নিশিতা ভাবির ভিডিও ও ভাইরাল করবোনা।অন্যথায়,,,,

সামান্তা কি করবে বুঝতে পারছেনা।রাজকে কিছু সময়ের জন্য থামিয়ে রাখতে হবে।যাতে কিছু না করে বসে ভিডিও নিয়ে।কারণ সামুর কাজ শেষ।এখন কাউকে প্রয়োজন কিন্তু কিভাবে কি করবে।এখানে কতক্ষন বসে থাকবে।বাসায় সবাই চিন্তা করছে।মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।

তখনই হুড়মুড় করে আদি ভিতরে ঢুকে।রাজ তা দেখে বলে,,
–ইউ চিট অন মি,,
সামান্তা আদিকে দেখে প্রান ফিরে পায় তবে খুশি হতে পারে না আদির রক্তিম হিংস্র ফেইস দেখে।আদির চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে ওই চোখ দিয়ে সামুকে পুরিয়ে ধ্বংস করে দিবে।সামান্তা ভয়ে ভয়ে উঠে দাড়ায়।আদি সামান্তাকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরে বসে।সামান্তা অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তারপর চিতকার করে বলে,,

–তোর এত বড় কলিজা তুই আমাকে ধোকা দিস।কিছুক্ষণ আগেও তোকে সাবধান করেছিলাম কিন্তু তুই শুনিসনি।না করা স্বত্তেও এই ছেলের সাথে তুই প্রেমলীলা চালিয়ে গিয়েছিস?একবারও আমার কথা ভাবলি না?আমার ভালোবাসা তোর চোখে পড়লো না?তুই বিয়ে করবিনা বলে প্রেমিকের কাছে চলে এসেছিস?পালিয়ে থাকতে পারবি?তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে এই ছেলের হাতে তুলে দেবো?এতটা মহান আমি নই,,আমার বিয়ে করা বউকে তার প্রেমিকের হাতে তুলে দেবো।
সামান্তার চোখে পানি ছলছল করছে।

গার্ডদের ইশারা করে বললো,, ওকে(রাজকে)নিয়ে যাও তোমরা।ওকে তো পড়ে দেখবো আগে একে(সামু) দেখে নেই।

সামান্তার আদির সাথে কথা বলার সাহস হচ্ছেনা।আদি সামুকে টানতে টানতে গাড়িতে ছুড়ে মারে।তারপর নিজেও গাড়িতে উঠে বসে।সামনে ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।পাশেই আদি।সামুর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।আদির সারা শরীর রাগে কাপছে,,হাতের মুঠো শক্ত করে আছে।রাগে নাকের ডগা এতটাই লাল হয়ে আছে যে সে লাল আভা পুরো মুখ জোরে ছড়িয়ে পড়েছে।দাতের সাথে দাত চেপে বসে আছে।সামান্তা ঢোক গিলে বললো,,
–আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন,,,।আপনি যা ভাবছেন তা নয়,,ওর সাথে,,

আদি দাতে দাত চেপে সামনের দিকে চেয়েই বললো,,
–চুপ করবি তুই??না চাইছিস এই লোকগুলোর সামনে তোকে অপদস্ত করি।মুখ দিয়ে যদি আর একটা টু শব্দ বের হয় তবে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।
সামান্তা ভয়ে চুপ হয়ে গেলো কারণ ও জানে আদির রাগ আদির কন্ট্রোলের বাইরে।কি করবে নিজেও জানেনা।
তারপর আদি একা একাই বলছে,,
আমারই ভুল।আমি চেয়েছিলাম সোসাইটিতে বিয়েটাকে স্বীকৃতি দিতে।সবাইকে জানাতে।ওকে ওর প্রাপ্য মর্যাদা দিতে কিন্তু ভুল করেছি।এ তো এর যোগ্যই না।

সামু কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।গাড়ি বাড়ির সামনে আসতেই আদি নেমে সামুকে টেনে গাড়ি থেকে বের করে।সামু পার্সটাকে আঁকড়ে ধরে রাখে।
সামু আদিকে বিভিন্ন কথা বলছে কিন্তু আদি কানেই নিচ্ছেনা।ওকে এভাবে টানতে দেখে সবাই অবাক।সবাই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,,
কি হয়েছে,,ওকে এভাবে টানছিস কেন?

আদি কারো উত্তর না দিয়ে সিড়িতে পা রাখে তারপর পিছনে ঘুরে চোয়াল শক্ত করে বলে,,

আজকে আমার আর সামুর মাঝে কেউ এলে আমি এই বাড়ি জ্বালিয়ে দেবো।কেউ আসবে না পিছনে।ওর সাথে আমার বুঝাপড়া আছে।হাসব্যান্ড ওয়াইফের মাঝে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমি সহ্য করবোনা।
বলেই উপরে দিকে যাচ্ছে।সামুর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
সামুর বাবা-মাও নির্বাক।তারা কিছুই বুঝতে পারছেনা।মেয়ের জন্য ভয় পাচ্ছে।আদির বাবা সামুর বাবার কাধে হাত রাখলেন।

আদি সামান্তাকে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লক করে বিছানায় ছুড়ে মারলো।সামান্তা মাথা তুলে কাদছে।তারপর আদির দিকে ঘুরে।আদি নিজের গায়ের টিশার্ট খোলছে।সামু আদির এহেন কাজে ভয় পেয়ে যায়।এক লাফে উঠে বসে।কাপা কাপা গলায় বলল,
–কিহহহ,,,,করর,,,ছে,,ন??

আদি টিশার্ট ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে সামুর দিকে এগিয়ে বললো,
–কি করছি বুঝতে পারছোনা?ছাদে কি প্রমিস করেছিলাম ভুলে গেছো?
সামান্তা ভয়ে পিছাতে পিছাতে বেডের কোনায় চলে গেলো।কান্নার গতি বেড়ে গেলো।দু’হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বললো,
–প্লিজ,স্টপ দিস।প্লিজ।

আদি একটানে সামান্তাকে বিছানায় চেপে ধরলো।তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো,,
–আমি তোর হাসব্যান্ড।কিসের কমতি আছে আমার মাঝে?কেন আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে রাজের সাথে সম্পর্ক করেছিস?বল?

–ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই?ছাড়ুন আমাকে,,আমার কথা,,,শুনুন, (কাদতে কাদতে বললো)

সামু নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আদি ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।সামান্তার দু’হাত ব্যথায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
–চুপ,,এসব বলে তুই আর পার পাবিনা।আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তু না তুই আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছিস,,প্রতিশোধ নিয়েছিস।

বলেই আদি সামান্তার গলার ওড়না টেনে ছুড়ে ফেলে দেয়।সামান্তা চিতকার করে উঠে।আদির মুখের গরম নিশ্বাস ওর মুখের উপর পড়তেই সামান্তা চিতকার করে বলে,
–আদি প্লিজ,,আমার কথা শুনো।আমি ওকে ভালোবাসিনা,,ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ওর সাথে আমি পালিয়ে যাইনি।ওর সাথে পালানোর হলে তোমাকে মেসেজ করে জানাতাম না।

আদি থমকে গেলো।মাথাটা হালকা উঁচু করে সামুকে দেখছে,,।আস্তে আস্তে সামুর হাত ছেড়ে দিচ্ছে।সামান্তা ওকে আদি বলেছে,,তুমি করে বলছে,,,যেকিনা সব সময় টাইটেল সহ নাম বলতো।আর হ্যা ঠিকই তো,,,সামু পালানোর হলে রাজের নাম বলতোনা।কারণ সামু ভালো করেই জানে আদি ওকে খুজবে।তাহলে কি ছিলো??

সামান্তা হাত আলগা পেয়ে আদির পিঠে দুহাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

–তুমি এখন রেগে আছো।রাগের বশে এমন কিছু করোনা,যাতে পরে পস্তাতে হয়।আমার উপর তোমার অধিকার আছে তুমি আমার সাথে যা খুশি করতে পারো কিন্তু আগে আমার কথা গুলো শুনো,,আমাকে বিশ্বাস করো।আমি ওকে ভালোবাসি না,,ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ট্রাস্ট মি,,,

–তাহলে কি এসব?কেন গিয়েছিলে?

সামান্তা আদিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে চোখ মুছে বলতে শুরু করে,,

–আপনি ছাদ থেকে আসার পর একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।পরে জানতে পারি রাজ।নাম্বার কোথায় পেয়েছে জানিনা।আমাকে ও একটা ভিডিও পাঠায়,,

ভিডিওয়ের কথা শুনে আদির বুকে মোচড় দেয়।তারপর কাপা কাপা গলায় অস্থির হয়ে বলে,,
ভিডিও!!!

সামান্তার চোখে আবার পানি এসে পড়ে।ও বলে,,
–যেদিন পার্টিতে আমি যাইনি সেদিন ও নিশি আপুর ড্রেস চেঞ্জের একটা ভিডিও বানায়।আর ওটা দিয়েই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে।

আদির হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আছে।চেহেরা আবার হিংস্র রুপ ধারণ করে।ওর বোনের ভিডিও বানিয়েছে।ওর ইচ্ছে করছে রাজকে এখুনি খুন করে পুতে দিতে।
কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে,, তারপর??

–ও আমাকে বলে ওর সাথে দেখা করতে।যদি না যাই বা কাউকে জানাই তাহলে নেটে ভিডিও ছেড়ে দিবে।আর ও যে এসব করেছে তার প্রুভ ও রাখবেনা।এ বাড়িতে কয়েকজন ছিলো যারা আমাকে ফলো করছিলো তাই আমি কাউকে কিছুই বলতে পারিনি।আপনাকে ছোট করে জাস্ট মেসেজ লিখে যাই যাতে আপনি আমার খোজ করেন।

আদি শান্ত স্বরে বললো, তারপর ও তোমাকে কি বলেছে?

সামান্তা একবার আদির চোখের দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রেকর্ড শুনালো।রেকর্ড শুনে আদির মেজাজ টুংগে।
রেকর্ড শুনে সামান্তার বাহু চেপে ধরে বললো,, আমাকে আগে জানাওনি কেন?কতদিন ধরে চলছে এসব?

সামান্তা আমতা আমতা করে বলল,,
আপনার সাথে ফার্ম হাউস থেকে আসার পরের দিন ভার্সিটির সামনে দেখি।আমি ওনাকে বলি ওনার সাথে আমি কোনো ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইনা।ওনি যেন আমাকে আর বিরক্ত না করে।অনেক রাগারাগি করি।কিন্তু তারপর দুদিন গেইটের সামনে দেখি।আমি না দেখার ভান
করেই চলে আসি।আমার মনে হচ্ছিলো ব্যাপারটা আপনাকে জানানো দরকার।তাই কালকে ভার্সিটি থেকে ফিরে আপনাকে জানাতে চাই কিন্তু বাড়িতে অনুষ্ঠান,, আব্বু আম্মুকে দেখে বিষয়টি মাথা থেকে বেরিয়ে যায়।আজকে সকালে আপনার ঘরে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।তারপর দুপুরে যখন দেখা হলো তখন বিয়ের কথা শুনে আর বলতে পারিনি।ভেবেছিলাম পরে বলবো।আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি এমন কিছু হবে।রাজ ছেলেটা এত খারাপ কিছু করবে।সত্যি বলছি।

–এত কিছুর পর তুমি একা চলে গেলে?তোমার সাহস তো কম না?তোমার ভয় লাগলো না?ও যদি তোমার সাথে কিছু করে দিতো? আমি যদি না যেতাম?

–আমার তখন শুধু নিশি আপুর কথাই মনে হচ্ছিলো।আর আমি জানতাম আপনি যাবেন।আর না গেলে,,,

–না গেলে কি??

সামান্তা কোমড় থেকে মিনি পিস্তল বের করে বললো,,
–ও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চাইলে আমি ওর পায়ে গুলি মেরে দিতাম।

–তুমি এটা কই পেলে?

–আপনার রুমের ড্রয়ার থেকে নিয়ে গেছি।

আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামুর হাত থেকে পিস্তলটা নিয়ে নিজের কোমড়ে গুজে উঠে দাড়ালো।আর বললো,, নিশিকে এসব বলোনা।ও খুব সরল।মানতে পারবেনা।

তারপর নিজের টিশার্ট ঠিক করে পড়ে নিলো।
সামু বুঝতে পারছে আদি কোথাও যাচ্ছে।
–কোথায় যাচ্ছেন?

আদি টিশার্ট পড়ে সামান্তার ওড়না তুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললো,,
–তোমার মুখে তুমিটাই ভালো লাগে।

তারপর ওর গালের দিকে চেয়ে অপরাধীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।বাম গাল লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।রাগের মাথায় সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরেছে।
আদি সামুর বামগালে নিজের ঠোঁট ছোইয়ে বললো,,
সরি সামু,আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি রাগের মাথায় না জেনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।প্লিজ ক্ষমা করো।

আদি উঠে দাড়ালো।সামান্তা আবারো প্রশ্ন করলো,,
–কোথায় যাচ্ছো?
আদি ঘুরে রহস্যময় হাসি হেসে বললো,,
ওকে একটু সাইজ করে আসি।ও আদির বোন আর স্ত্রীর সম্মানে হাত দিয়েছে।ও নিশির,,,,,।আমি ওর কলিজা কেটে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো।
শেষের কথাগুলো বলার সময় আদি অদ্ভুৎ ভাবে কাপছে।

সামান্তা বুঝতে পারছে আদি ভয়ানক কিছু ঘটাবে।সামু ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললো,
–তুমি কোথাও যাবে না,কিচ্ছু করবেনা।ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেও,যা করার আইন করবে।

আদি সামুর হাত ছাড়িয়ে বললো,
–তাতে আমার শান্তি হবেনা।
সামু আদিকে আবার আটকে দিলো।আদি বুঝতে পারলো সামু ওকে বাধা দিবেই।আদি সামুর ওড়না নিয়ে ওর দুহাত বাধছে।

–কি করছেন?হাত বাধছেন কেন?ছাড়ুন।
সামান্তা ছুটার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু আদির শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারেনি।

আদি সামুকে বেধে বেডে রেখে বললো,, সরি জান।এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।তুমি রেস্ট করো।

আদি উঠে বেরিয়ে গেলো।সামু চিতকার করে আদিকে ডাকছে।আদি দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে গেলো।সামান্তা উঠে দরজার সামনে গিয়ে দরজা মাথা দিয়ে,কাধ দিয়ে,বাহু দিয়ে ধাক্কাচ্ছে আর চিতকার করছে।রুম সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় কেউ শুনতে পাচ্ছেনা।
সামান্তার মনে কু ডাকছে।খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে কিন্তু ও অসহায়।

আদি হনহন করে সিড়ি দিয়ে নামছে।সবাই ওকে দেখে উঠে দাড়িয়ে এগিয়ে আসছে।আদি বাবা আদিকে জিজ্ঞেস করলো,,
–সামু কই?
–আমার ঘরে।
–ও ঠিক আছে তো?ওর সাথে কিছু করিস নি তো?
–বাবা আমি ওর সাথে কি করবো?সামু আমার বউ,,আমি ওকে ভালোবাসি।ওর সাথে কিছু করার কথা ভাবতে ই পারিনা।কিছু জানার ছিলো জেনেছি।এখন আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি।
নিশি কেউ যেন আমার ঘরের দরজা না খোলে,,সামুকে কেউ যেন বিরক্ত না করে।তাহলে ভালো হবেনা।

–আচ্ছা।

আদির বাবা চিতকার করছে,,আদি কোথায় যাচ্ছ তুমি?

আদি কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো।ছেলের এমন অবস্থা দেখে আহনাফ চৌধুরীর ভয় হচ্ছে।তিনি তার লোকদের আদির পিছে পাঠালো।

চলবে…..?

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ