Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১১

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-১১

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-১১

ফাবিহা নওশীন

??
২দিন পরের ঘটনা।আজও রাজ ভার্সিটির গেইটের সামনে দাড়িয়ে ছিলো।সামু না দেখার ভান করে চলে আসে।সামুর প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।আজ আদিকে জানিয়ে দিবে।ভাবতে ভাবতে গাড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকে অবাক।বাড়িতে লাইটিং করা হচ্ছে।কেন করা হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।কৌতুহল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে আরেক দফা অবাক।কতগুলো মেয়ে শাড়ি,লেহেঙ্গা,গাউন দেখাচ্ছে।
কতগুলো লোক বিভিন্ন বক্স বের করে গয়না দেখাচ্ছে।বাড়ি না শপিং মলে আছে বুঝতে পারছেনা।সামান্তা অবাক হয়ে দেখছে।নিশি এটা সেটা দেখেই যাচ্ছে।ওর চোখ মুখ চকচক করছে।
সামু নিশির দিকে আগাবে তখনই নিজের মা,বাবা আর ভাই সামীরকে দেখে।

–আম্মু,,আব্বু!!!

ওনারা সামুর কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকায়।তাদের চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করছে।সামু বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।সামুর মা সামুকে চুমুয় চুমুয় ভরিয়ে দেয়।সামান্তা বাবা-মাকে পেয়ে কেদে দেয়।

–আপু আমি এখনো বাদ আছি,,আমাকে হাগ দেও নাই।
সামু চোখ মুছে সামীরকে হাগ করে।
–কেমন আছিস?
–আপু তুমি তো রোজ কথা বলো,তুমি তো জানো আমি কেমন আছি তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?

সামু ভাইয়ের কান মলে বললো, এইটা ফরমালিটি।গতকাল বলিস নি কেন আজকে আসবি?
আম্মু,আব্বু তোমরা বলো নি কেন আজকে আসবে?

কেউ কিছু বলার আগেই সামীর বললো,। সারপ্রাইজ!!
–ভালো ছিল।
তোমরা কখন এসেছো?
খাওয়া দাওয়া করেছো?

সামুর আব্বু বললো, সকালে এসেছি।তোর কি মনে হয় আমাদের না খাইয়ে রেখেছে?যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে।

সামু ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আর নিশির সাথে কথা হলোনা।আদি উপর থেকে সামুকে এতক্ষণ দেখছিলো।
সামু ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই নিশি ওকে ধরে নিচ থেকে উপরে নিয়ে এলো।
–নিশি আপু উপরে নিয়ে যাচ্ছো কেন?আর কি হচ্ছে এই বাড়িতে?
–বিয়ে।
–বিয়ে!!হটাৎ?? জয় ভাইয়ের আর তর সইছেনা? তোমার পড়াশোনা শেষে না বিয়ে হবে তবে হুট করে কি হলো?
–হুট করে বিয়ের রোগে পেয়েছে।যাইহোক এখন দেখ কোন শাড়ি পরবি?(নিশির রুমে এনে)
–শাড়ি?
বিয়ের পর একদিন ও শাড়ি পড়িনি।
–তাই আজ পড়বি।আমিও পড়বো।
–বুঝতে পারছিনা।কোনটা পড়বো?
–আচ্ছা দাড়া।আমি আসছি।সামান্তা বুঝতে পারছেনা কোনটা পড়বে।এখানে ১০টার মতো শাড়ি আছে।
কিছুক্ষণ পর নিশি আদিকে নিয়ে হাজির।
–ভাইয়া তোর বউকে শাড়ি সিলেক্ট করে দে।
সামু ঘুরে নিশির কথা শুনে আর আদিকে দেখে শকড।
সামু আর আদি একে অপরের দিকে বোকার মতো চেয়ে আছে।
–এভাবে চেয়ে থাকবি না শাড়ি সিলেক্ট করবি?শাড়ি পড়ার পর চেয়ে থাকিস।যত ইচ্ছে।
সামু নিশির কথায় লজ্জা পেলেও আদি ভাবলেশহীন।
আদি অনেক দেখে সামুর জন্য ডার্ক বেগুনি রঙের একটা শাড়ি সিলেক্ট করলো।শাড়ি সিলেক্ট করার সাথে সাথেই নিশি আদিকে ঘর থেকে বের করে দিলো।
–সামু ব্লাউজ,পেটিকোট পড়ে আয়।
সামু ব্লাউজ,পেটিকোট পড়ে এলে নিশি ওকে শাড়ি পড়াতে যায়।
–তুমি শাড়ি পড়াতে পারো?
–হেই গার্ল,ডোন্ট ফরগেট মাই নেইম ইজ নিশিতা চৌধুরী।আমি সব পারি!!
–ইম্প্রেশিং।

শাড়ি পড়া শেষে সামুর দু’হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়েছে।মেহেদীতে আদির নাম লিখে দেওয়া হয়েছে।সামুর অদ্ভুৎ লাগছে।নিশিও দু’হাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে।
সামু তোর ক্ষুধা পেয়েছে?
–হুম।খুব।
–আচ্ছা,বস।আমি হাত ধুয়ে ফেলবো।কেমন চুলকাচ্ছে।তোর জন্য তারপর খাবার নিয়ে আসবো।
–আচ্ছা।
নিশি হাত ধুয়ে নিচে গেলো।

সামু পড়েছে আরেক সমস্যায় মেহেদী দিয়ে নিশির হাত চুল্কাচ্ছে আর ওর পিঠ।দু’হাতে মেহেদী তাই কিছু করতেও পারছেনা।নিশি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।হটাৎ নিশির পায়ের শব্দ পেয়ে চিতকার করে বললো,
–নিশিপু,,তাড়াতাড়ি এসো,,পিঠে চুলকাচ্ছে।পিঠ চুলকিয়ে দেও।
ঠান্ডা হাত সামুর পিঠ স্পর্শ করলো।
–পিঠে হাত দিয়ে বসে আছো কেন? চেইন খোলে শিরদাঁড়া বরাবর চুলকিয়ে দেও।
ঠান্ডা হাতটা চেইন খোলে শিরদাঁড়া বরাবর চুলকিয়ে দিলো।
সামু তৃপ্তি পেয়ে বললো,বাচলাম।তারপর হুট করেই সন্দেহ নিয়ে বললো,
নিশি আপু,তোমার হাত এত শক্ত কিভাবে হলো?একদম পাথরের মতো,,,।
তারপর হাসির শব্দ শুনে ঘুরতেই সামু “আহহহহহ” করে চিতকার করলো।

–আপনি,,ছিঃ,,,
বলেই দু’হাতে গলা চেপে ধরতে গিয়ে থেমে গেলো।অসহায় ভাবে দু’হাতের মেহেদীর দিকে চাইলো।এখন গলা চেপে ধরতে গেলে এত সুন্দর ডিজাইনের মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।সামু তো মেহেদী পাগলী।

–হাত দিয়ে কিছু করতে যেওনা বেবি,মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।

–তাইতো আপনি বেচে গেলেন।নয়তো আজকে আপনাকে খুন করতাম।

আদি বাকা হেসে সামান্তার উপর চোখ বুলিয়ে বললো,
–তোমার এই লুকে অলরেডি খুন হয়ে গেছি। শাড়িতে তোমাকে যা লাগছেনা।একদম পিচ্ছি বউ।
আদি কথাটা বলেই সামান্তার কোমড় জরিয়ে ধরলো।
–ওই কি করছেন? সুযোগ নিচ্ছেন?
আদি ভ্রু কুচকে বললো,সুযোগ কেন নিবো?আমি কি পরপুরুষ?

–দেখুন,,ভালো হবেনা।ছাড়ুন।আমার এত স্বাদের মেহেদী নষ্ট হলে খারাপ হয়ে যাবে।

–আহ,,তুমি নড়াচড়া করোনা তো,, করলেই তোমার মেহেদী শেষ।কি বিদঘুটে দেখা যাবে বুঝতে পারছো?

আদি সামান্তার দুগালে হাত রাখলো।সামু নিজের মেহেদী দেওয়া দুহাত দু’দিকে সরিয়ে মাথা নাড়িয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
–ছাড়ুন,,বজ্জাত ছেলে।
আদি মুচকি হেসে উষ্ণ নিশ্বাস ছেড়ে সামান্তার গলায় কিস করলো।
সামান্তা শিওরে উঠে।কাপা গলায় বলল,
–আপনি কি করছেন?ছাড়ুন গন্ডার কোথাকার।
আদি সামুর কথা পাত্তা না দিয়ে সামুর থুতনিতে হালকা করে কামড় দিয়ে বললো,
–আমি গন্ডার,বজ্জাত না?
সামান্তা ধাক্কা দিয়ে বললো,
আপনি শুধু বজ্জাতই নন,আপনি একটা লুইচ্চা।একটা মেয়েকে একা পেয়ে ছি,,।

বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।বের হতেই নিশিকে দেখলো,,
–কিরে বিরবির করে কাকে গালাগাল দিচ্ছিস?
–কাকে আবার তোমার ওই লুইচ্চা ভাইকে।
–ওই কি বলিস,,?আমার ভাই লুইচ্চা?
–তা নয়তো কি?তুমি জানো সে আমার সাথে কি করেছে?আমি ভেবেছি তুমি তাই বলেছি ব্লাউজের চেইন খোলে পি,,,,
আর বলতে পারলোনা নিশি ওর মুখ চেপে ধরে।ফিসফিসিয়ে বললো,
–তুই আমার ভাবি,,আমার বড় ভাই তোর সাথে কি করেছে সেটা তুই মাইক নিয়ে আমাকে বলছিস?লজ্জা করেনা,লাজ লজ্জা কি চান্দের দেশে গেছে?ভাইয়া তোর পিছনে দাড়িয়ে আছে এবার সামলা।
নিশি উল্টো হাটা ধরলো।

সামু ঢোক গিলে পিছনে তাকালো।আদিক চোখ মুখ কুচকে ওর দিকে চেয়ে আছে।সামু জোর করে স্মিত হাসি দিলো।
–কি বলছিলে আমার বোনকে? আমি লুইচ্চা,,আমি তোমার সাথে কি করছিলাম সেটাও বলছো?হায় আল্লাহ এ মেয়ে বাসরের পরের দিন সবাইকে বলে বেরাবে,,আমার মান ইজ্জত প্লাস্টিকের কারখানায় পাঠাবে?

–না মানে,,,

–না মানে কি?

–আমার ক্ষুধা লেগেছে।নিচে যাচ্ছি।

–খাওয়াচ্ছি তোমাকে,,,
আদি আচমকা আলতো করে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ালো।সামান্তা ফ্রিজ হয়ে গেছে।এ লোক আজকে ভালো সুযোগ পেয়েছে।

–যাও,,এবার সবাইকে বলো গিয়ে আমি কি করেছি।

সামান্তা চোখ পাকিয়ে বললো,
–আদি,,কলার কাদি।বেহায়া,বেশরম,নির্লজ্জ,লুইচ্চা,বদমাইশ।জিরাফ,গন্ডার,ছিলা সাদা মুরগী,উগান্ডা,
জলহস্তী।

আদি চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।সামু দৌড়ে নিচে চলে গেলো।
মেহেদী অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই যায়।সামু নিজের হাতে সারাক্ষণ আদির নাম দেখেই কাটিয়ে দেয়।রাজের কথা আর এতকিছুর মধ্যে বলা হয়না।

সামান্তার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেছে।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে সবাই ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করছে।সামান্তা আদিকে খোজছে।নিশি ওকে দেখে নাস্তা করার জন্য ডাকে।

–আজকে ভার্সিটি যাওয়া হবেনা।নাস্তা করে আমাকে হেল্প করবি।

–আচ্ছা।(ভালো হয়েছে আজ যেতে হবেনা।আদির সাথে কথাও বলা যাবে)

সামান্তা নাস্তা করে সবার চোখ ফাকি দিয়ে উপরে গিয়ে আদির রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করতেই দরজা খোলে গেলো।আদি দরজা লক না করেই ঘুমায় বেশিরভাগ।সামান্তা দরজা একটু ফাক করে ঘরের ভিতর চোখ রাখে।আদি ঘুমাচ্ছে।সামু পা টিপে টিপে আদির বিছানার কাছে গেলো।আদি কুশন জড়িয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ছেড়ে ঘুমাচ্ছে।সামান্তা ঘরে পাইচারি করছে আর ভাবছে আদিকে ডাকবে না ডাকবে না,,?
তারপর আদির ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে ভাবলো,
–ঘুমাচ্ছে,ঘুমাক।পড়ে বলা যাবে।

সামান্তা ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।নিচে লিভিং রুমে সবাই বসে আছে।বসে আছে বললে ভুল হবে,,শাড়ি দেখছে কে কোনটা পড়বে।নিশি উচ্ছ্বসিত ভাবে একটা শাড়ী হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছে।সামু পা টিপে টিপে সিড়ি দিয়ে নেমে নিশির সামনে দাড়ালো।
–দেখতো সামু শাড়িটা কেমন?
–অনেক সুন্দর তোমাকে খুব মানাবে।
–ওকে,,তোর জন্য এই শাড়িটা দেখেছি।(অন্য একটা শাড়ি দেখিয়ে)
–কিন্তু আপু এটা তো তোমার শাড়ির চেয়ে বেশি গর্জিয়াছ।
–আমার চেয়ে গর্জিয়াছ পড়তে সমস্যা কি?তুই এই বাড়ির বউ একটা ব্যাপার আছেনা।
–আচ্ছা।
–চুপিচুপি ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলি?পুরনো অভ্যাস গেলোনা?
সামু খুক খুক করে কাশতে লাগলো।নিশি দেখে ফেলেছে।

আদি,সামু সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করছে।সামু আদির সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খোজছে।লাঞ্চ শেষে সামু ডাইনিং ছাড়তে যাচ্ছে তখনই নিশি বললো,,
–বিয়ের কনে,,রেডি থেকো কিছুক্ষণ পর পার্লার থেকে সাজাতে আসবে।

–বিয়ের কনে!!কি বললে তুমি?

নিশি মুখ টিপে হেসে বললো,
–বিয়ের কনে।বিয়ের কনে কে বিয়ের কনে বলবো না তো কি,,

সবাই মুখ টিপে হাসছে।এমনকি আদিও।সামান্তা সবটা খেয়াল করে বললো,, কি হচ্ছে আমাকে একটু খোলাসা করে বলবে,,?

আদি নিশিকে কিছু একটা ইশারা করলো যা সামুর চোখ এড়ায়নি।আদি ইশারা করেই সামিরকে বললো, চলো একটু হেটে আসি।তারপর দুজনে হাটা ধরল।

নিশি বললো,,
–সামু একচুয়েলি,,বিয়েটা তোর।আমার না,

সামু অবাক হয়ে বললো,, আমার বিয়ে?কি বলছো,কার সাথে?

–ওই কার সাথে মানে কি?আমার ভাইকে কি চোখে পড়েনা?নাকি অন্য কাউকে চাস?

সামান্তা পিছনে ঘুরে আদির দিকে চাইলো।আদি পিছনে ঘুরে সামান্তাকে চোখ মারলো।সামান্তা মুচকি হেসে সামনে ঘুরলো।

–তুই এতো বোকা কেন হা?বাড়িতে ঢুকার সময় দেখিস নি বড়বড় করে লিখা আদিল উইডস সামান্তা?
সামান্তা লজ্জায় মরেই যাচ্ছে।কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
–আহারে!!ভাবি আমার লজ্জা পেয়েছে?

সবাই একসাথে হেসে দিলো।

বিকেল বেলা-
সামান্তা উপরে গিয়ে ছাদে গিয়ে দাড়ালো।ওর বাইরেটা দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু লজ্জায় যেতে পারছেনা।তাই ছাদে উঠেছে।গেইটের সামনে সামনে জ্বলজ্বল করছে আদিল উইডস সামান্তা।

ইসস,এতোবড় লিখাটাও আমার চোখে পড়েনি?আমি এমন কানা হয়ে গেলাম?সব দোষ রাজের।ওর জন্য মেজাজ খারাপ ছিলো তাই চোখে দেখিনি।আচ্ছা এখন কি আদিকে রাজের কথা বলবো?আজ হলুদ,কাল বিয়ে এখন এসব না বলাই ভালো।ওর মুড নষ্ট করার দরকার নেই।কালকের দিনটা যাক তারপর ওই রাজকে দেখে নিবো।

পুরো বাড়ি সাজানো শেষ।লন-গার্ডেন সব কিছু কত সুন্দর লাগছে।সব কিছু আভিজাত্যপূর্ণ।সামান্তা মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

পিছন থেকে আদি কাধে হাত রাখলো।হটাৎ এভাবে কেউ ধরাতে সামান্তা ভয় পেয়ে ছিটকে সরে যায়।আদিকে দেখে সামু নিজের বুকে হাত রেখে ভীত চেহারায় বলে,
–আপনি কি আমাকে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলতে চান?
–তুমি আবার ভয় পাও?জানতাম না তো,,।
আর কি বলছিলে তোমাকে মেরে ফেলবো?তোমাকে মেরে বউ হারা হবো নাকি?এমনিতেই এখানো আমার তোমার সাথে বাসর করা হয়নি।(মুখ ইনোসেন্ট করে)

সামান্তার আদির এমন লাগামহীন কথা শুনে থ মেরে গেলো।
(এই ছেলে এতো লাগামহীন কেন?)
–আপনি এখানে কেন এসেছেন?
–বিয়ের আগে বউয়ের সাথে প্রেম করতে।
বলেই আদি সামান্তার একদম কাছে চলে গেলো।সামান্তা দুহাত আদির বুকে রেখে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বললো,
–দূরেএএএ,,।দূরে থাকুন।আদি দূরে দাড়িয়ে বললো,
–ঠিক আছে থাকলাম,,তবে আগামীকাল রাতে কিন্তু দূরে থাকবোনা।তুমি চাইলেও সরাতে পারবেনা।
বলেই বাকা হাসলো।

সামান্তা চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।সামান্তা গলায় হাত রাখলো।

–কি গো পানি খাবে?তোমার জন্য বাসর ঘরে এক ড্রাম পানি রাখবো।

–শখ কতো?
আগে বিয়ে তো হোক।পরে বাকি প্ল্যান করবেন।হু।?

–এই তোমার মাথায় কি উল্টো পাল্টা কিছু চলছে?যদি কিছু চলে ঝেড়ে ফেলো।নয়তো ভালো হবেনা।(সিরিয়াস ভংগীতে)

সামান্তা আদির সিরিয়াস ভংগী দেখে বললো,
–বিয়ে না করলে কি করবেন?

–বেশি কিছুনা,,বিয়ে ছাড়াই বাসর করে ফেলবো প্রমিস।আগের লাইসেন্স তো আছেই।
(বাকা হেসে)

সামান্তা চোখ মুখ কুচকে বললো,
–আপনি এই বাসর ছাড়া কিছু বুঝেন না?কথায় কথায় বাসর??

–অবশ্যই বুঝি।আমি তোমার হাসব্যান্ড তুমি আমার ওয়াইফ।আমাদের বাসর হবে।ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চা হবে।তারা আমাদের মাম্মি পাপা বলে ডাকবে।তারা বড় হবে।বিয়ে হবে।নাতি-পুতি হবে।আমাদের দা,,,,

–হয়েছে,,হয়েছে৷থামুন।এখনি এখান থেকে যান,,নয়তো আপনার বকবক শুনতে শুনতে পাগল হয়ে ছাদ থেকে লাফাবো,,তারপর আপনার বিয়ে,বাসরের স্বপ্ন শেষ।

আদি হোহো করে হেসে দিলো।ওর সামান্তাকে রাগাতে ভালোই লাগে।হাসি থামিয়ে বললো,, আজ যাচ্ছি,,,।বিয়ের পর কিন্তু সরাতে পারবেনা।সো প্রিপেইড হও।

বলেই আদি ছাদ ত্যাগ করলো।আদি যেতেই সামান্তাও হেসে দিলো।এতক্ষণ অনেক কষ্ট করে নিজের হাসি চেপে রেখেছিলো।সামান্তাও চায় ওর আর আদির সম্পর্কের পরিপূর্ণতা পাক।ওদের জীবনটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হোক।

হটাৎ ই সামান্তার ফোন বেজে উঠলো।
–হ্যালো,,
–শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে,,,,বিয়ের দাওয়াত দিলেনা?এতো স্বার্থপর তুমি?
–কে বলছেন?
–এখনো বুঝতে পারোনি?
–রা,,,,জ??
–হাও সুইট,,তুমি আমাকে চিনতে ভুল করোনি।
–আমার নাম্বার কই পেলেন?আর কি চাই?
–সে না হয় নাই জানলে,,,তোমার ফোনে একটা ভিডিও সেন্ড করেছি।চেক করো।
বলেই ফোন কেটে গেলো।

সামান্তা তাড়াতাড়ি ফোন চেক করলো।একটা ভিডিও সেটা দেখে সামান্তা ঘামছে আর বলছে,,
নো,,,নো,,,এদিকে ঘুরোনা,,,নো নো।
বলেই কাদতে কাদতে ছাদে বসে পড়লো।হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর আবার ফোন বেজে উঠলো।
সামান্তা ফোন রিসিভ করে বললো,,
–আপনি এতো বড় অমানুষ?আমি আপনাকে নিতান্তই ভদ্র ছেলে ভেবেছিলাম।আপনি তো একটা শয়তান।

–সে তুমি যাই বলো।আমি সত্যিই এরকম কিছু করতে চাইনি,,তুমি বাধ্য করেছো,,,,আর এখন তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য।নয়তো এক মিনিটে ১মিলিয়ন ভিউ হবে।তোমার শ্বশুর একজন রাজনীতিবিদ,,,তার সম্মান কোথায় যাবে ভাবতে পারছো?আর তোমার নিশি আপু সে তো সুসাইট করবে।কারণ জয় ভাইয়া বিয়ে করবেনা,,আর সে মুখ দেখাতে না পেরে আত্মহত্যা করবে।তোমার শ্বশুর শাশুড়ী ও সমাজে মুখ দেখাতে পারবেনা।লজ্জায় অপমানে তারাও আত্মহত্যা করবে।পুরো ফ্যামিলি ফিনিসড।
হাহা,,,।

—নাহ,,,নিশি আপু আপনার ভাবি হয় ভুলে যাবেন না।

–আই ডোন্ট কেয়ার।ভাবি দিয়ে কি করবো?আর এসব কে করেছে তার কোনো প্রমাণ ও কেউ করতে পারবেনা।আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এসব টেকনিক আমার জানা আছে।সব প্রমাণ লোপাট করে দেবো।

–কি চান আপনি?

–সেটা দেখা করে বলবো।তোমাকে একটা এড্রেস টেক্সট করছি চলে এসো।

–আমি কোথাও আসবো না।

–ওকে।নো প্রব্লেম।আমি এখুনি ভিডিও ছেড়ে দিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর তুমিও নেটে পেয়ে যাবে।

–না,,এমন করবেন না প্লিজ।

–তাহলে দেখা হচ্ছে সময় খুব কম।বাইরে তোমার জন্য লাল একটা গাড়ি অপেক্ষা করছে। আমি অপেক্ষা করবো।আর হ্যা,,একদম চালাকির চেষ্টা করবেনা,,তোমার পিছনে আমার লোক আছে।তুমি এখন ছাদে দাড়িয়ে আছো তাই না?আমার লোকেরা তোমাকে ফলো করছে।কাউকে জানানোর চেষ্টা করলে কিংবা কারো সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে সত্যি বলছি খারাপ হয়ে যাবে।

সামান্তা কাপা কাপা গলায় বললো,
–না,আমি কিছুই করবোনা।আ,,,মি আসছি।

সামান্তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ভাবছে ও কি করবে,,সময় কম,ওকে আবার ফলোও করা হচ্ছে।
সামান্তা আদির রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো।বাড়ি ভর্তি মানুষ।নিচে গিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কে বা কারা ওকে ফলো করছে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেনা।

সামান্তা উপায় না দেখে নিজের পার্স নিয়ে সবার চোখ ফাকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।সামান্তাও দেখতে চায় ও কি করে,,, বাইরের লাল গাড়িতে উঠে বসলো।সাথে সাথেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।

চলবে………

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ