#তোমায় আমি দেখেছিলেম বলে
মৌলী আখন্দ
পর্ব-৭
গভীর রাত পর্যন্ত ল্যাপটপে কাজ করছিল এলিনা। আজকাল প্রায়ই রাত হয়ে যায় কাজ করতে করতে।
অফিস থেকে আগেই ফেরে রাইয়ান, দুজনের কাছেই দুটো চাবি আছে। দুজনেই বাইরে থেকে তালা খুলে বাসায় ঢুকতে পারে।
এলিনা আজকে বাসায় ঢুকে দেখেছে রাইয়ান বিছানায় উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। তার ঘুম না ভাঙিয়েই রাতের খাবার রেডি করে রেখে কাজ করতে বসে গিয়েছিল ও।
আচমকা মাথায় স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল এলিনা। রাইয়ান সদ্য ঘুম ভাঙা জড়ানো কন্ঠে বলল, “কখন এসেছ, আমাকে ডাকোনি কেন?”
এলিনার মুখ থমথমে। সে রাইয়ানের দিকে সরাসরি তাকাল না।
“কী হলো, কথা বলছ না যে?”
ঘুরে বসল এলিনা। কঠিন গলায় বলল, “তুমি আমার ল্যাপটপে হাত দিয়েছিলে?”
“মানে?”
“তুমি জানো না আমার ল্যাপটপে প্রোটেকশন দেওয়া? পেন ড্রাইভ ঢোকালে, ঘাঁটাঘাঁটি করলে আমি টের পাই?”
এলিনা নিজের ল্যাপটপ নিয়ে যায় না অফিসে। ল্যাপটপ বাসাতেই থাকে।
অফিসের ডেস্কটপ আর ট্যাব দিয়ে বাইরের কাজ সারে। ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড জানাই ছিল রাইয়ানের, পাসওয়ার্ড বদলানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি এলিনা।
কিন্তু আজকে তার ল্যাপটপ খোলা হয়েছিল, একটা পেন ড্রাইভ ঢোকানো হয়েছিল। রাইয়ান ছাড়া আর কারো কাজটা করার সুযোগ নেই।
রাইয়ান আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু বলতে যাচ্ছিল। এলিনা দুহাত তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “লিসেন। আমার এখানে কিছু ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন থাকে। সেগুলো রেস্ট্রিক্ট করা। আমার অফিসের সিক্রেট। জনসাধারণের জানার জন্য না।“
রাইয়ান আহত গলায় বলল, “তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না?”
“তুমি বলতে চাচ্ছ তুমি খোলোনি আমার ল্যাপটপ? ঢোকাওনি কোনো পেন ড্রাইভ?”
“আমি একটা মুভি দেখতে চেয়েছিলাম শুধু, আর তাতে এত ঝামেলা হবে জানলে নিশ্চয়ই ধরতাম না তোমার ওই ক্লাসিফায়েড ল্যাপটপ!”
“তুমি মিথ্যা বলছ!”
বরফ শীতল কণ্ঠে বলল এলিনা।
“তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি আমার প্রত্যেকটা ড্রাইভ ঘেঁটেছ। কী খুঁজছিলে তুমি, রাইয়ান?”
রাগ দেখিয়ে চলে গেল রাইয়ান। এলিনা কিছুক্ষণ বসে রইল থমথমে মুখে।
রাইয়ান সে রাতে রাগ করে কিছু খেল না। না খেয়েই শুয়ে পড়ল বিছানায়।
অনেক বার হাত ধরে টানাটানি করল এলিনা। বার বারই হাত ছুঁড়ে ফেলে দিল রাইয়ান।
খিদে সহ্য করতে পারে না এলিনা, সে খেয়ে নিল একা একাই। রাইয়ানের কথা সে বিশ্বাস করেছে।
তবুও ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড বদলে দিল সে। হয়ত এতদিন ধরে বদলে না দেওয়াটাই ভুল ছিল তার।
বহুদিন পর দুজন জেগে রইল অনেক রাত পর্যন্ত, সেই প্রেমের দিনগুলোর মত, যখন দুজন রাত জেগে চ্যাট করত। অথচ দুজনের মধ্যে একটিও বাক্য বিনিময় হলো না।
চুপচাপ দুদিকে ফিরে গভীর ঘুমের ভান করে নিশ্চুপ পড়ে রইল দুজনে।
চলবে,,