তোমাতে মত্ত আমি পর্ব-১৪

0
769

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৪

মিস্টার ও মিসেস খান কয়েকদিনের জন্যে একটু বাইরে গেছেন, অনেকদিন যাবত বাসায় থেকে অ’সু’স্থ হয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের দুজনেরই একটু হাওয়া বদলের দরকার আছে, তাই আলফাই তাদের পাঠিয়েছে কোথাও একটা গিয়ে কয়েকদিন থেকে আসতে। আলফার আজ একটা কলেজে ইন্টারভিউ আছে, সকালেই সেখানে যেতে হবে। সারাদিন লাগবে, ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। ফারহানও বাইরে গেছে বিধায় অহনা বাসায় একা থাকবে ভেবে চিন্তা হচ্ছে ওর!

“ভাবী, তুমি দরকারি সব নিয়েছো তো? আরেকবার চেক করে নিও যাওয়ার আগে”

“হ্যাঁ সব নিয়েছি আমি। কিন্তু তুমি কি বাসায় একা থাকতে পারবে? যদি ভ’য় করে তাহলে তোমার বাবার বাসায় গিয়ে ঘুরে আসতে পারো”

“না ভাবী, আমি বাসায়ই থাকবো আর নিজের বাসায় থাকতে ভ’য় কিসের? আমি পারবো, তুমি আমার চিন্তা বাদ দিয়ে ভালোভাবে ইন্টারভিউ দিয়ে এসো। অল দ্যা বেস্ট ভাবী”

“থ্যাংক ইউ অহনা, আর শোনো কোনো দরকার পড়লে আমাকে বা ফারহানকে ফোন করবে কেমন?”

“ঠিক আছে করবো, তুমি যাও এবার”

আলফা বেরিয়ে পড়লো, এবারের যে কলেজে ই’ন্টা’র’ভি’উ দিতে যাচ্ছে সেটা কিছুটা দূরে, আসা যাওয়ায় অনেকটা সময় লাগবে। ইন্টারভিউ দিতে দিতে প্রায় দুপুর গড়িয়েছে। পরে মিস্টার ও মিসেস খানের সঙ্গে কথা বলে আলফা জানায় যে ইন্টারভিউ ভালোভাবেই হয়েছে ওদিকে আজ সন্ধ্যায় হামজার ডেট আছে ওর বাবার ঠিক করা মেয়ের সঙ্গে যেখানে যাওয়ার বি’ন্দু’মা’ত্র ইচ্ছে নেই ওর তবুও বাবাকে কিছু সময়ের জন্য থামানোর জন্যই যেতে রাজি হয়েছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে অনেকটা সময় কে’টে গেছে কিন্তু আলফার ফেরার নাম নেই, এবার চিন্তা হচ্ছে অহনার। কয়েকবার কলও করলো কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে, ফারহানকে কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু ফারহান এই মুহূর্তে মিটিংয়ে থাকায় সে রিসিভ করতে পারেনি। ওদিকে হামজা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেছে, ইতিমধ্যে সেই মেয়েটিও এসে গেছে। দুজনের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে, যদিও হামজা নিজে কিছু বলছে না। মেয়েটা যা বলছে শুধু তার উত্তর দিচ্ছে..

“আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে রাজিই হবেনা, কিন্তু ফাইনালি এলে। তোমাকে দেখে অনেক হ্যাপি আমি”

হামজা মেয়েটার কথায় কান না দিয়ে জুস খেলো, মেয়েটা আবারো হামজার অ্যা’টে’ন’শ’ন পাওয়ার জন্যে হেসে বলে উঠলো..

“তুমি তো জানোই আমাদের বাবারা চাইছে আমরা যেনো একে অপরকে বিয়ের আগে একটু চিনে নিতে পারি তাই..”

“বিয়ে? একদিন দেখা করলেই বিয়ে হয়ে যায়না!”

“এভাবে কেনো বলছো? দেখা সাক্ষাৎ হবার পরই তো বিয়ে হয় তাইনা? তাছাড়া আমাদের বাবারা তো প্রায় ঠিকই করে ফেলেছে বিয়ের কথা”

“বাবারা মিলে কথা বলেছে মানে এই না যে বিয়ে হবে। আর আমি দেখা করতে এসেছি বলে প্লিজ তুমি আবার ভেবে নিও না বিয়েটা হচ্ছে”

“কেনো? আমাকে কি পছন্দ হয়নি তোমার?”

“তেমন কিছু না, ইউ আর বিউটিফুল। ইটস জাস্ট দ্যাট, আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। তুমি হয়তো ভাবছো বাবারা মিলে ঠিক করলেই বিয়েটা হবে কিন্তু এমন নয়। আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। কথাটা তোমাকে পরিষ্কারভাবেই বললাম”

“কেনো হামজা? কেনো বিয়ের ইচ্ছে নেই তোমার? আচ্ছা তোমার কী কোনো বিশেষ পছন্দ আছে? বলো আমায় তবে, আমি নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলবো”

“কোনো দরকার নেই! শুধু আমাকে নয়, যাকেই বিয়ে করো না কেনো কখনো নিজেকে চেঞ্জ করতে যেও না। তুমি নিজের মতোই পারফেক্ট আছো”

কথার মাঝেই হু’ট করে অহনার ফোন এলো, কল রিসিভ করতেই অহনা অস্থির হয়ে বললো..

“ভাইয়া, একটু হে’ল্প কর প্লিজ”

“কি হয়েছে অহনা?”

“তুই কোথায় আছিস এখন?”

“তুই আগে বল কি হয়েছে, তোর বাড়িতে কি কোনো স’ম’স্যা হয়েছে?”

“না ভাইয়া, আসলে ভাবী ফোন ধরছেনা”

“কেনো? কোথায় গেছে আলফা?”

“ভাবী সেই সকালে গেছে ইন্টারভিউ দিতে। বিকেলে আমায় বললো সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় এসে যাবে কিন্তু দেখ এখন রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনও আসেনি। আমি কিছু বুঝতে পারছি না ভাইয়া, এতো দেরি হবার তো কথা নয়”

“আমি দেখছি, চি’ন্তা করিস না তুই”

চি’ন্তিত হয়ে উঠে দাড়ায় হামজা, তখন মেয়েটা বলে ওঠে..

“হেই, হামজা। যাচ্ছো কোথায়? আমাদের কথা এখনও শেষ হয়নি”

“আই হ্যাভ টু গো নাও”

আর এক মুহূর্ত দাড়ায়নি হামজা, আলফাকে কল করতে করতে বেরিয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে। কয়েকবার কল করেও ফোন বন্ধ পেয়ে হামজা ঠিক করে তার এক বন্ধুকে আলফার ফোন ট্র্যা’ক করার জন্যে বলবে। তার আগে আরেকবার কল করে দেখলো, এবার ওপর পাশ থেকে কল রিসিভ হতেই স্ব’স্তি’র নিঃশ্বাস ফেললো হামজা। আলফা কিছু বলার আগেই হামজা ধ’ম’কে বলে উঠলো..

“এই মেয়ে, ফোন কেনো আপনার? আর এতো রাত হয়ে গেছে আপনি এখনও বাড়ি কেনো যাননি?”

“হামজা?”

“ঠিক আছেন তো আপনি?”

“হ্যাঁ, ঠিকই আছি”

“কোথায় আছেন এখন?”

“আমি তো পু’লি’শ স্টে’শ’নে আছি”

“পু’লি’শ স্টে’শ’ন মানে? আপনি কি করছেন ওখানে?”

“একটা স’ম’স্যা হয়েছিলো তাই..”

“কোন পু’লি’শ স্টে’শ’নে আছেন আপনি? এখনই অ্যাড্রেস দিন আমাকে”

“আপনার আসার দরকার নেই, আমি..”

“জা’স্ট শা’ট আপ, যা বললাম তাই করুন”

“দেখুন হামজা, এটা আমার স’ম’স্যা আর আমার মনে হয় না আপনার এখানে আসার কোনো দরকার আছে। আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি সবটা”

“দেখুন আলফা, এই মুহূর্তে আপনার সঙ্গে ঝ’গ’ড়া করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই তাই ভালোভাবেই বলছি, অ্যাড্রেসটা আমাকে মেসেজ করে দিন”

“হামজা, শুনুন। আপনার..”

আলফা পুরো কথা শেষ করতে পারেনি, তার আগেই হামজা কল কে’টে দিয়েছে। হামজার এই রা’গে’র কারণ বুঝে উঠতে পারলো না আলফা, সাত পাঁচ না ভেবে অ্যাড্রেস মেসেজ করে দিলো হামজাকে। এরপর অহনাকেও মেসেজ করে জানিয়ে দিলো ও ঠিক আছে। মেসেজ পাওয়ার প্রায় মিনিট বিশেক পর হামজা পৌঁছায় পু’লি’শ স্টে’শ’নে, গিয়ে দেখলো আলফা বসে আছে। হামজা প্রথমেই আলফার কাছে গেলো, ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই দেখলো মেয়েটার হাত ছো’ড়ে গেছে। কপালের এক সাইডেও আ’ঘা’ত পেয়েছে।

“কি হয়েছিলো আলফা? আপনার এই অবস্থা কেনো আর আপনি তো ইন্টারভিউ দিতে গেছিলেন তাহলে এখানে এলেন কিভাবে?”

“আপনি এতোকিছু কিভাবে জানলেন?”

“অহনা ফোন করেছিলো আমাকে, আপনার ফোন বন্ধ ছিলো বলে চি’ন্তা করছিলো কিন্তু আপনি..”

“চি’ন্তা’র কিছু নেই, আমি ঠিক আছি”

“অবস্থা দেখেছেন আপনার? এরপরও বলছেন ঠিক আছেন?”

হামজার এতো জোরে ধ’ম’ক দিয়েছে যে পু’লি’শ স্টে’শ’নে’র সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে..

“কি করছেন আপনি হামজা? এটা পু’লি’শ স্টে’শ’ন, এখানে আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না”

“তাহলে আপনিই বলুন কি করা উচিৎ আমার এখন?”

“প্রথমত আপনার এখানে আসারই দরকার ছিলো না, আমি সব সামলে নিয়েছিলাম। এখন ব্যস কিছু ফর্মালিটি আছে তাই আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে”

তখনই এক অফিসার আলফা ডাকলো, আলফা উঠে গিয়ে কিছু পেপারে সাইন করার পর অফিসার বললো..

“আপনার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্যে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত”

“আপনাদের তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি হয়তো প’রি’স্থি’তি মোকাবেলা করতে পেরেছিলাম আর পুলিশ স্টেশন কাছাকাছি ছিলো বলে আপনারা আমাকে রে’স্কি’উ করতে পেরেছেন। নাহলে আজ অনেককিছুই হতে পারতো”

“জ্বি, আপনাকে যদিও আর প্রয়োজন হবেনা কিন্তু দরকার হলে পড়লে আপনাকে ডাকা হতে পারে। আমরা আপনার কো অ’পা’রে’শ’ন আশা করছি”

“অবশ্যই”

পুলিশ স্টেশনের সব কাজ শেষে আলফা ও হামজা বের হয়। হামজা এখনও পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয়, অফিসার ও আলফার কথা থেকে সে এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।

“আলফা, আপনি কিন্তু বললেন না কি হয়েছে”

“আসলে, আমি আগে যে কলেজে চাকরি করতাম সেখানে আমার ক্লাসের এক মেয়েকে এক ছেলে স্টুডেন্ট সে’ক্স’চু’য়া’ল হ্যা’রা’স করেছিলো আর সেটা আমি দেখে ফেলেছিলাম। আমিই ছেলেটাকে কলেজ থেকে বের করার আবেদন করেছিলাম কারণ এরকম ছেলেরা বাকি মেয়েদের সঙ্গেও এমন করতো হয়তো মেয়েরা ভ’য়ে বা ল’জ্জা’য় কখনো মুখ খুলতো না। ওই ছেলেটাই আমাকে ফর কয়েকদিন যাবত ফলো করছিলো আর আজ আমাকে কি’ড’ন্যা’পে’র চেষ্টা করছিলো। আমি কোনোরকম পা’লি’য়ে পুলিশকে ফোন করেছিলাম, ছেলেটার এসবের ব্যাপারে কাঁচা হাত হওয়ায় বেঁ’চে গেছি এবারের মতো নাহলে..”

সবটা শোনার পর হামজা বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। আলফার সাহসিকতার জন্যে বাহবা দেবে নাকি শা’স’ন করবে?

“অনেক সাহস দেখিয়েছেন, এবার চলুন ডাক্তারের কাছে। আপনার অনেক জায়গায় আ’ঘা’ত লেগেছে, ট্রি’ট’মে’ন্ট প্রয়োজন”

“আমি ঠিক আছি! এগুলো বাড়ি গিয়ে ওষুধ লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে”

“জে’দ করবেন না তো, চলুন চুপচাপ”

আলফাকে জোর করে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিলো হামজা, ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সারাদিনের ইন্টারভিউয়ের টে’ন’শ’ন তার ওপর আবার এই ঘটনায় আলফা মা’ন’সি’ক ও শা’রী’রি’ক’ভা’বে অনেকটা দু’র্ব’ল হয়ে গেছে। এতক্ষণ ঠিক থাকলেও এখন যেনো বারবার মাথা ঘু’রে যাচ্ছে আলফার, এরই মাঝে ওর মায়ের ফোন আসে। মেয়ের ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে জানার জন্যে ফোন করেছিলেন তিনি, আলফা কল রিসিভ করার চেষ্টা করেও পারছে না। আঙুলগুলো যেনো হু’ট করেই অ’ব’শ হয়ে আসছে, চোখের সামনে কেমন ঝা’প’সা দেখতে শুরু করেছে। ড্রাইভিং এর ফাকে একবার আলফার দিকে তাকাতেই অস্বাভাবিক লাগলো হামজার..

“আলফা, আর ইউ ওকে?”

হামজার কথার উত্তর দিতে পারেনি আলফা, তার আগেই হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। সিটে হেলিয়ে পড়ে আলফা, হামজা গাড়ি চালাতে চালাতেই আলফাকে কয়েকদফা ডাকলো..

“আলফা, কি হলো আপনার! আলফা..!”

অ’জ্ঞা’ন হয়ে গেছে মেয়েটা, এই ভ’য়’টা’ই হামজা পাচ্ছিলো। আলফা মুখে যতোই বলুক কিন্তু ও যে মা’ন’সি’ক ও শা’রী’রি’ক’ভা’বে অনেকটা ভে’ঙে পড়েছে তা হামজা আলফার মুখ দেখেই বুঝেছিলো। হামজা গাড়ির স্পি’ড আরো বাড়ালো..
___________________

ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত মেন্টাল প্রে’সা’রে জ্ঞা’ন হারিয়েছে আলফা, স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ওকে। জ্ঞান ফিরলেই বাড়ি যেতে পারবে, তা শুনে হামজা নিশ্চিন্ত হলো। অহনা – ফারহান এসে গেছে, আলফার মা বাবা এবং ফুপুও এসেছে। আলফার এই অবস্থা কেনো হয়েছে তা হামজার মুখে শোনার পরই ওর ফুপু দু’ম করে বলে বসলো…

“এই মেয়ে যে আর কতো অ’ঘ’ট’ন ঘটাবে আল্লাহ জানে। প্রথমে এতকিছু হয়ে গেলো, অ’ল্প বয়সে বি’ধ’বা হলো এখন আবার এইসব কাহিনী। ছেলেমানুষ ধরে নিয়ে গেছিলো ওকে? কি একটা বি’চ্ছি’রি ব্যাপার। না জানি কি..”

“আপা! এখানে আমরা আমাদের মেয়েকে দেখতে এসেছি, মেয়েটা আমার অ’সু’স্থ। আপনার মধ্যে ম’নু’ষ্য’ত্ব থাকলে এখন এসব কথা তুলতেন না”

“এখানে অমনুষ্যত্বের কি বললাম? ভুল বলেছি কিছু? আর তোমার মেয়েও পারে। মেয়ে মানুষের এতো সাহস দেখানো ভালো নয় নাহলে এই পরিণতিই হবে”

আলফার মা আর এখানে কিছু বললো না, উনি মেয়ের কেবিনে চলে গেলেন। হামজা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ওর ফুপুর বলা সব কথা শুনেছে, মহিলার কথা বলার ভ’ঙ্গি এতো বা’জে যে হামজার মে’জা’জ গ’র’ম হয়ে গেলো। আলফার সাথে যে ঘটনা হয়েছে তাকে আলফার ফুপু বেশ বা’জে’ভা’বে প্রেজেন্ট করছেন, আর আলফার বাবা ওখানে চু’প করে দাঁড়িয়ে মেয়ের নামে এসব কথা শুনছেন দেখেও হামজার ভী’ষ’ন রা’গ হলো। হামজা ওর ফুপুর কাছে এগিয়ে এসে বললো..

“আপনি, আলফার ফুপু তাইনা?”

“হ্যাঁ, কেনো?”

“না আসলে আন্টি আপনার কথাগুলো সুনাম। আমার মনে হয় আপনার জানায় কিছু ভুল আছে তাই ভাবলাম আপনার ভু’ল’গু’লো ধরিয়ে দেই”

“কিসের ভু’ল?”

“মেয়েদের সাহস থাকার প্রয়োজন অবশ্যই আছে, আর হ্যাঁ ফাহাদের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে কিন্তু আলফার দো’ষ ছিলো না। যা হয়েছে তা হবারই ছিলো”

“শোনো, ছেলে। তুমি কি এখানে ওর পক্ষ নিয়ে আমার সঙ্গে ঝ’গ’ড়া করতে এসেছো?”

“মোটেই না আন্টি, আমি কারো পক্ষে বলছি না আর আপনার সঙ্গে ঝ’গ’ড়া কেনো করবো! আপনি তো আমার গুরুজন। তবে একটি আপনি যেসব কথা বললেন সেগুলো ভীষণই শ্রুতি কটু! আমার মনে হয় ফুপু হিসেবে আপনার শুকরিয়া করা উচিত যে আলফা ঠিক আছে। সুস্থ অবস্থায় ফিরেছে। পূর্বের সব ঘটনা টেনে এনে এগুলোকে জোড়া লাগানোর কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না”

“খুব তো আলফার হয়ে কথা বলছো, কয়দিন হলো চেনো তুমি ওকে? জানো কিছু ওর ব্যপারে হ্যাঁ? এই মেয়ের চো’পা সবসময়ই চ’ড়া ছিলো। বিয়ের পরও একই অবস্থা, এইসবই তো মেয়ে মানুষের প’ত’নে’র মূল”

“তাই নাকি? আলফা এমন? তাহলে তো আপনার খুশি হওয়া উচিত আন্টি, মনে হয় আপনারই কথার তে’জ পেয়েছে!”

হামজার কথায় ভীষন অ’প’মা’নি’ত বোধ করলো আলফার ফুপু, একেবারে তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলেন ঠিকই কিন্তু কোনো জবাব দিলেন না! মহিলাকে কথা শোনাতে পেরে হামজার এবার একটু শান্তি লাগছে, এরই মাঝে অহনা ইশারায় হামজাকে ডাকলো..

“কি হয়েছে?”

“আম্মু – আব্বুকে বিষয়টা জানানো উচিত না?”

“আমার মনে হয় আব্বু আম্মুকে এসব এখন না জানানোই ভালো, এখন তো সব ঠিকই আছে। তবুও শুধু শুধু টে’ন’শ’ন করবে”

“আমারও তাই মনে হয় অহনা, এখন ওনাদের জানানোর দরকার নেই। ওনারা ফিরলে ঠান্ডা মাথায় না হয় সব বলিস। এখন এসব জানালে হতে পারে ওনারা চিন্তা করে আবার অসুস্থ হয়ে গেলেন”

“ঠিক আছে তাহলে, আর ফোন করবো না। আচ্ছা ভাইয়া, কি বলেছে ডাক্তার? স্যালাইন শেষ হতে কতো সময় লাগবে?”

“৩-৪ ঘণ্টা লাগবে হয়তো, আর আলফার জ্ঞা’ন ফিরলেই ওনাকে নিয়ে তোরা বাড়ি যেতে পারবি”

অল্প সময়ের ব্যাপার বিধায় সবাই ওখানেই অপেক্ষা করছে, এদিকে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে। আলফার বাবা সবার জন্যে খাবার আনে উদ্দেশ্যে ক্লিনিক থেকে বেরোতেই হামজা ও তার পিছু পিছু হেটে আসে। আলফার বাবা বুঝতে পারে হামজাকে বলে..

“তোমার আসতে হবে না, আমি নিয়ে আসছি”

“না আঙ্কেল, চলুন। আমিও সাহায্য করছি”

হোটেল থেকে খাবার কিনে ফেরার পথে হামজা হুট করেই বলে উঠলো..

“আঙ্কেল, যদি মা’ই’ন্ড না করেন একটা কথা বলবো?”

“কি ব্যাপারে?”

“একটা কথা কি জানেন তো আঙ্কেল, কেউ যদি আমার সামনে দাড়িয়ে আমার মেয়েকে কিছু বলে আমি মোটেও স’হ্য করবো। সেটা যদি আমার বোন অহনাও হয় তাও না, কারণ আমার মেয়ে আমার কাছে সবার আগে। সেখানে আপনার সামনে বসে আপনার বোন এতগুলো ক’টু কথা বললো আলফাকে আর আপনি কিছুই বললেন না আঙ্কেল? এটা মানা যায়না”

“ওগুলোকে এতো মনে লাগানোর কিছু নেই। আসলে আমার বোনের স্বভাবই এমন, ওকে বলে লাভ নেই। আমরা সবাই ওর কথা ই’গ’নো’র করি”

“ই’গ’নো’র করার মতো কথা উনি বলেননি। আর আপনার কি একবারও মনে হলো না যে এসব কথা আলফা শুনলে ক’ষ্ট পাবে?”

হামজার কথায় উত্তর দিলেন না আলফার বাবা, উনি যে নিজের বোনকে মেয়ের থেকেও বেশি প্রা’য়ো’রি’টি দেন সেটা হামজার বুঝতে অসুবিধা হলো না।

“আমি জানিনা আপনার চিন্তা ভাবনা কেমন, তবে আপনি যেহেতু আলফার বাবা তাই এইটুকু বলবো অন্তত নিজের মেয়েকে মানুষ নি’র্দ্বি’ধা’য় কথা শোনাবে এমন সুযোগ করে দেবেন না। আলফার কিন্তু আপনাদের সাপোর্টের ও ভীষন দরকার”

কথাগুলো বলেই দ্রুত পা চালিয়ে আগে চলে গেলো হামজা, আলফার বাবা দাঁড়িয়ে পড়লেন। হামজার কথাগুলো শুনে অবাক হয়েছেন বটে। একটা অচেনা ছেলে এসে তার মেয়ের সা’পো’র্টে কথা বলছে আর বাবা হয়ে সে চু’প ছিলো। কয়েক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো সত্যিই কি নিজের বোনকে প্র’শ্র’য় দিতে গিয়ে মেয়েকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি? সবাই ডিনার সেরে নিলো, আলফার জ্ঞা’নও ফিরে এসেছে, তবে ডাক্তার বলেছেন ওর শরীর দূ’র্ব’ল। বিশ্রাম নিতে হবে। সবাই আলফার সঙ্গে দেখা করলেও হামজা করেনি, সবার শেষে হামজা আসে দেখা করতে। টুলটা টেনে বেডের কাছাকাছি এনে বসলো হামজা, আলফা কৃতজ্ঞতার স্বরে বললো..

“আমাকে সাহায্য করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ”

“আপনাকেও ধন্যবাদ”

“কেনো?”

“আপনি যে আমাকে ধন্যবাদ জানাবেন এটা আশা করিনি তাই, থ্যাংকস টু ইউ ঠু ফর থ্যাংকিং মি”

হামজার কথায় আলফা একটু হাসলো, লোকটা যেনো টি’জ করার একটা সুযোগও ছাড়তে চান না!

“তা, এখন কেমন লাগছে আপনার?”

“অনেকটা ভালো”

“ভ’য় পেয়ে গেছিলেন আপনি, তাইনা?”

ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো আলফা, হুট করেই মনে পড়লো সন্ধ্যায় ঘ’টা ঘ’ট’না’র কথা। কিভাবে ওখান থেকে বেঁ’চে ফিরেছে, সবই মনে পড়লো।

“হুমম, অনেকটা। আমি যখন ছেলেটার থেকে পা’লি’য়ে বেড়াচ্ছিলাম, মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিলো।সেই মু’হূ’র্তে মনে হচ্ছিলো আমার হয়তো আর বাড়ি ফেরা হবেনা”

“কিন্তু আপনি ভে’ঙে পড়েননি, সাহস দেখিয়ে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। অনেক স্ট্রং আপনি আলফা, হয়তো আজ এমন ঘটনা না ঘটলেও আমি জানতেই পারতাম না। আই অ্যাম সো প্রাউড অফ ইউ আলফা”

হামজা যে মন থেকেই কথাগুলো বলেছে তা আলফা বেশ বুঝতে পেরেছে, ভালো লেগেছে ওর। একটু পরে অহনা ও ফারহান দুজনেই এলো, এসেই অহনা আলফাকে বললো..

“ভাবী, জানো আমি কতো চি’ন্তা’য় পড়ে গেছিলাম তোমার জন্যে? ভ’য় পেয়ে গেছিলাম”

“আমি এখন ঠিক আছি অহনা, তোমায় আর চি’ন্তা করতে হবে না। আচ্ছা, ফারহান আঙ্কেল আন্টিকে আবার এসব ব্যাপারে জানাওনি তো?”

“না ভাবী, তাদের জানানো হয়নি”

“ভালো করেছো, এসব শুনলে বেকার চি’ন্তা করতেন ওনারা”

“তুমি এখন সব স্ট্রে’স ছেড়ে রেস্ট করো কিছুদিন বুঝলে ভাবী? আর হ্যা, আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। তুমি এখন বাসায় যেতে পারবে, অহনা তুমি ভাবীকে নিয়ে এসো আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি”

ফারহান বেরিয়ে গেলো, আলফাও যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত তখন ওর মা এসে বললো..

“আলফা, তুই বরং আজ আমাদের সঙ্গে বাড়ি চল। কদিন বাড়িতে থেকে আসবি”

“নাহ, আমি আজ অহনাদের সঙ্গেই চলে যাবো”

“কেনো আলফা? তুই বাড়ি চল। কয়দিন থেকে এলে ভালো লাগবে”

“সুস্থ হলে একদিন গিয়ে ঘুরে আসবো আমি, আজ থাক”

আলফা কেনো বাড়ি যেতে চাইছে না তা ওর মা বুঝেছে, হামজারও বুঝতে পেরেছে বিষয়টা যে আলফা ওর ফুপুর জন্যে বাড়ি যেতে চাইছেনা। আলফার মা আর জো’র করলেন না। আলফা অহনা আর ফারহানের সঙ্গে বাড়ি চলে গেলো, হামজা আর আজ ওদের সঙ্গে যায়নি। নিজের বাড়িতে চলে এসেছে। বাড়ি ফিরতেই বাবার রো’ষা’ন’লে’র শিকার হতে হয়েছে হামজাকে!

“তোর কা’ন্ড জ্ঞা’ন দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি হামজা, একটা মেয়েকে ঐভাবে বসিয়ে রেখে তুই কোথায় চলে গেছিলি?

“তোমাকে ফোন করে জানানো হয়ে গেছে?”

“যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দে, কি এমন দরকারি কাজ ছিলো তোর যে ঐভাবে চলে গেছিলি?”

“ড্যাড, আজ কি ঘ’টে’ছে তুমি জানো না। অহনা আমাকে ফোন করার পর ওই মুহূর্তে ওখানে বসে থাকতে পারিনি”

“মানে? কি হয়েছে?”

হামজা ওর বাবাকে বিস্তারিত ঘ’ট’না বলে, সবটা শোনার পর মিস্টার শাহ্ বললেন..

“আলফা এখন সুস্থ আছে আর ওর টেক কেয়ারের জন্যে হা’স’পা’তা’লে তো সবাই ছিলোই, তারপরও ওখানে তোর কি কাজ ছিলো? তুই তো ফিরে আসতে পারতিস”

“স’রি ড্যাড, ওই মুহূর্তে আমার ফেরাটা ভালো দেখাতো না তাছাড়া লিজার সঙ্গে ডে’ট আমার কাছে এতোটা দরকারি কিছু নয়”

“তোর জন্যে দরকারি না হতে পারে কিন্তু আমার জন্যে দরকারি। আমাকে তো তোর ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। তুই তো এসব ব্যাপারে বিষয়ে মোটেও সি’রি’য়া’স না তাই ব্যবস্থা তো আমাকেই করতে হবে”

“ড্যাড, তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমি..”

“আমাকে আর কিছু বলতে হবেনা। যা হবার হয়েছে তুই রাতে লিজার সঙ্গে ফোনে কথা বলে স’রি বলে নিস, মেয়েটা অনেক ক’ষ্ট পেয়েছে”

“ড্যাড, তুমি এবার লিজার কথা বাদ দাও কারণ ওর সঙ্গে কথা বলার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। ইন ফ্যাক্ট, সি ইজ নট মাই টাইপ”

“আচ্ছা? তাহলে তোর যেমন টাইপের মেয়ে পছন্দ বল”

“আমার যাকে পছন্দ হবে তাকে আমি নিজেই তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো, তোমাকে ক’ষ্ট করে খুঁজতে হবে না”

বরাবরের মতো এবার ছেলে তার হেয়ালি করে বা উদাসীন হয়ে কথা বলেনি, হামজার কথার মাঝে সি’রি’য়া’স’নে’স দেখতে পেলো মিস্টার শাহ্। মনে মনে উনি খুশি হলেন এটা ভেবে যে হামজা হয়তো কোনো মেয়েকে নিজের জন্যে পছন্দ ফেলেছে। আলফা বাড়ি ফেরার পর থেকেই অহনা ভীষন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, ওর ভীষন যত্ন করছে। অহনার কা’ন্ড দেখে না হেসে পারছে না আলফা..

“এতো ব্যস্ত হতে হবে না তোমায় অহনা, তুমি বসো তো এখানে। অনেক কাজ করেছো”

“ভাবী, কয়েকদিন আমিই সব করবো তোমাকে কিছু করতে হবেনা। তুমি শুধু চুপচাপ রে’স্ট করবে বুঝেছো?”

“জানো, তুমি যখন অ’জ্ঞা’ন ছিলে আমরা সবাই কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম। সবথেকে বেশি চিন্তা করছিলো ভাইয়া”

“তোমার ভাই আমার চি’ন্তা কেনো করছিলো আর তুমি তোমার ভাইকেই কেনো ফোন করেছিলে?

“আসলে, তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে ফারহানকে কল করেছিলাম। ওকেও পাইনি তাই বাধ্য হয়েই ভাইয়াকে কল করেছি। আর দেখো, একদিক থেকে কিন্তু ভালোই হয়েছে। ভাইয়া তোমার সঙ্গে ছিলো বলেই কিন্তু তোমাকে সঙ্গে সঙ্গে হ’স’পি’টা’লে নিয়ে গেছিলো”

অহনা যদিও স্বাভাবিকভাবেই কথাগুলো বললো, কিন্তু আলফার কেনো যেনো মনে হলো অহনা হামজার প্রসঙ্গে কোনো একটা বিষয় এ’ড়ি’য়ে গেলো..

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে