তোমাতে মত্ত আমি পর্ব-১৫

0
672

#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৫

আজ কাজের প্রচুর চা’প ছিলো হামজার, লাঞ্চ টাইমে এসে একটু ফুরসৎ মিলেছে। বন্ধুর সঙ্গে মিলেই লাঞ্চটা সেরে নিলো সে। দুজনে টুকটাক বিষয়ে আলাপ করছিলো, আলোচনার ফাঁ’কে হামজা বললো..

“ড্যাড এবার বিয়ের জন্যে ভীষন প্রে’সা’র ক্রি’য়ে’ট করছে আমার ওপর, আমার আর ভালো লাগছেনা এসব”

“এ আর নতুন কি! আঙ্কেল তো কবে থেকেই তোকে বিয়ের জন্যে চা’প দিচ্ছেন আর তুইই শুধু পিছিয়ে যাচ্ছিস। নাহলে এতোদিনে আমার আগে তোর বিয়ে হয়ে যেতো”

“মনে হচ্ছে বিয়েটা এবার করেই ফেলা উচিত”

“তুই নিজে এই কথা বলছিস হামজা? বিশ্বাস হচ্ছেনা!”

“বিশ্বাস না করার কি আছে? আমি কখনো বলিনি যে বিয়ে করবো না, আমার জাস্ট তখন বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না”

“হুম, বুঝলাম। তা তোর যাকে বিয়ে করার ইচ্ছে হচ্ছে সে কি জানে কিছু? নাকি তুই নিজে নিজেই সব ঠিক করে বসে আছিস?”

চোখ বুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো হামজা..

“বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিৎ”

“আমার মনে হয় তোর আলফাকে জানানো উচিত, অনেকদিন হলো এভাবে আর কতদিন তুই এক তরফাভাবে ভালোবেসে যাবি? তারও তো জানা উচিত যে তুই তাকে কতোটা ভালোবাসিস”

“আই নো, আমি আলফার পাশে থাকতে চাই। আমার মনে হয় ফাহাদের মৃ’ত্যু’র পর আলফার জীবন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। ও অনেকটা ক্রি’টি’ক্যা’ল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছে। জানিস সেদিন, ওর নিজের ফুপু অব্দি কতো বাজে কথা শোনাচ্ছিলো। অহেতুক দো’ষা’রো’প করছিলো, আমি নিশ্চিত উনি সবসময়ই আলফার সঙ্গে হয়তো এভাবে কথা বলেন”

“এমনই হয় বুঝলি, সময় বদলেছে ঠিকই কিন্তু আমাদের সমাজের মানুষ বদলায়নি”

“হুমম! তবে আমি এবার এই বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। মনে হচ্ছে আমার এগোনো উচিত, এভাবে আর সময় ন’ষ্ট করা ঠিক হবে না”

“আমিও সেটাই বলছি কিন্তু হামজা, আমার মনে হয় এই ব্যাপারে আগে তোর নিজের মা বাবার সঙ্গে কথা বলা উচিত। পরে যদি ওনারা আবার.. বুঝতেই তো পারছিস আমি কি বলতে চাইছি”

হামজা ইমরানের মন্তব্যে সহমত পোষণ করলো, সত্যিই বিষয়টা নিয়ে আগে নিজের মা বাবার সঙ্গে কথা বলতে হবে এরপর বাকিদের সঙ্গে! ওদিকে আলফা রান্না করছে আর অহনা ওর টুকটাক সাহায্য করছে। রান্নার এক পর্যায়ে হুট করে আলফা প্রশ্ন করে বসে..

“আচ্ছা অহনা, তোমার ভাই কি বরাবরই এমন?”

“কেমন?”

“এইযে, কারো সাহায্যের প্রয়োজন হলেই ছু’টে যায়”

“মোটেই না! ভাইয়া সবসময় সকল প্রকার ঝা’মে’লা থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। শুধু তোমার কথা বলেছিলাম বলেই গেছিলো নাহলে আর..”

“তো তুমি বলতে চাইছো, তোমার ভাই শুধু আমার জন্যেই গেছিলো? কিন্তু কেনো?”

“ভাবী! ছা’ড়ো না ওসব। যা হবার তা তো হয়ে গেছে”

“সে তো হয়েছেই বটে কিন্তু হুট করেই কেনো যেনো তোমার ভাইয়ের বিষয়ে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। তাই জিজ্ঞাসা করছি”

“সত্যি ভাবী? আচ্ছা, তোমাকে ভাইয়ার ব্যাপারে আমি সব বলবো। আমার ভাইয়া অনেক ই’ন্টা’রে’স্টিং একটা পারসন। তার ব্যাপারে যতো শুনবে ততোই জানতে ইচ্ছে হবে”

হামজার ব্যাপারে জানার জন্যে আলফার টুকটাক ই’ন্টা’রে’স্ট জাগছে, তার ওপর অহনার কথা শুনে তা যেনো আরেকটু বেড়ে গেলো। অহনা হামজার সম্পর্কে অনেককিছুই শেয়ার করে আলফার সঙ্গে কিন্তু ভুলেও এটা প্রকাশ করেনি যে হামজা ওকে পছন্দ করে। অহনা চায় ভবিষ্যতে কোনো একদিন এই কথাটা আলফা হামজার মুখ থেকেই শুনুক। হামজা আজ অফিসে বসেই মনস্থির করে নিয়েছিলো যে মিস্টার শাহ্কে আলফার কথা জানাবে, যেই ভাবনা সেই কাজ। ডিনার শেষে মা – বাবার সঙ্গে বসেছে, আলফার সম্পর্কে জানাতে..

“ড্যাড – মাম্মা, আমি একজনকে পছন্দ করি। আর যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে তাকেই করতে চাই”

ছেলের কথা শুনে ভীষন খুশী হলেন মিসেস শাহ্..

“বাহ, এটা তো ভালো কথা। তা, কে সেই মেয়ে? আমাদের চেনা পরিচিত কেউ নাকি?”

“হ্যাঁ মাম্মা, তোমরা দুজনেই তাকে ভালোভাবে চেনো”

“কে?”

“আলফা! আমি আলফাকে পছন্দ করি”

ছেলের কথা শুনে মিস্টার ও মিসেস শাহ্ দুজনেই চমকে উঠলেন, মিস্টার শাহ্ নিশ্চিত হবার জন্যে আরেকবার ছেলেকে প্রশ্ন করলেন..

“তুই কি অহনার জা এর কথা বলছিস?”

“হ্যাঁ, আমি ওর কথাই বলছি। আই লাইক হার”

“তোর মাথা ঠিক আছে হামজা? তুই জানিস কি বলছিস?”

“ড্যাড, আমি ঠিকই বলছি আর যদি আমার বিয়ে করতে হয় শুধু আলফাকেই করবো”

“হামজা, সব বিষয়ে বা’ড়া’বা’ড়ি মানায়না আর তুই যা করতে চাইছিস তাতে আমি সাপোর্ট করছি না”

“তুমি আমায় বিয়ে করতে বলেছো, আমি বলেছিলাম আমি আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবো। এতে স’ম’স্যা কোথায়? তোমার আমার উভয়ের কথাই তো থাকবে”

“তাই বলে আমি তো তোকে বলিনি তুই আলফাকে পছন্দ কর, তুই ওর থেকেও শত গুনে ভালো মেয়ে ডিসার্ভ করিস”

“ড্যাড, আলফার সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই! তুমি ওর সম্পর্কে কিছু জানো না তাই এগুলো বলছো, কিন্তু আমি জানি। আমি চিনি ওকে, আর সবটা ভেবেই ওকে আমি আমার জন্যে পছন্দ করেছি। আর আমার মনে হয় এই বিষয়ে তোমার আমাকে সা’পো’র্ট করা উচিত”

“হামজা, আমার মনে হয় তোর আরেকবার বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখা উচিৎ। দেখ আমি আলফাকে খা’রা’প বলছি না, ও অনেক ভালো মেয়ে কিন্তু..”

“কিন্তু? কি স’ম’স্যা মাম্মা?”

“তুই তো জানিস সব, তারপরও..”

মিস্টার শাহ্ ছেলের কথা শুনে অনেকটা অ’স’ন্তু’ষ্ট হয়েছেন বটে, ছেলের সকল সিদ্ধান্তে সহমত পো’ষ’ণ করলেও এবার করতে পারছেন না..

“এতো কথার কিছুই নেই, হামজা। তুই যা চাইছিস আমি তাতে তোকে সাপোর্ট করতে পারবো না। আমাদের ফ্যামিলির একটা স’ম্মা’ন আছে, এমন আজ অব্দি আমাদের ফ্যামিলিতে হয়নি”

“আলফার জন্যে আমাদের ফ্যামিলির স’ম্মা’ন’হা’নি হতে পারে এটা কেনো মনে হচ্ছে তোমার ড্যাড?”

“তুই একটা বি’ধ’বা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছিস হামজা! লোকে কি বলবে? আমাদের আত্মীয় স্বজন..”

“আত্মীয় স্বজনের পরোয়া আমি করিনা, জীবন আমার আর আমিই ঠিক করবো কার সাথে ভবিষ্যৎ জীবন কা’টা’তে চাই। আলফা আমার কাছে শুধু আলফাই, আর তুমি যেটাকে ইস্যু করছো সেটা ওর স’ম’স্যা নয়। একটা অ্যা’ক’সি’ডে’ন্ট মাত্র, এর মানে কি ওর ভবিষ্যতে সুন্দর হওয়ার অধিকার নেই?

“তুই আমাকে যাই বল, আমি এ বিষয়টা মানতে পারছিনা”

“ড্যাড, আমার মনে হয় তুমি বিষয়টা যতো তাড়াতাড়ি সহজভাবে নেবে ততোই ভালো হবে। কারণ আমি যদি বিয়ে করতে চাই তবে আলফাকেই করবো! এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত”

মিস্টার শাহ্ তো মানতেই রাজি নন, এদিকে হামজাও গো ধরেছে। মাঝে মিসেস শাহ্ বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন। স্বামীর কথা শুনবেন নাকি ছেলেকে সাপোর্ট করবেন। অবশ্য আলফাকে নিয়ে তার তেমন বিশেষ স’ম’স্যা নেই কিন্তু ছেলের পক্ষ নিলে যে মিস্টার শাহ্ অ’স’ন্তু’ষ্ট হবেন এ বিষয়েও তিনি চি’ন্তি’ত। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ কে’টে যায়, মিস্টার শাহ্ ছেলেকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু ফলাফল শূন্য! হামজা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে বি’ন্দু’মা’ত্র সরেনি, ছেলের জে’দ সম্পর্কে ভালোই জানা আছে মিস্টার শাহ্ এর। উনি মনে মনে ভাবলেন, ছেলের জে’দে’র কাছে না আবার পরাজয় শি’কা’র করতে হয়। রাতে আলফা টেবিল ল্যাম্প জ্বে’লে একটা বই পড়ছিলো, দরজা খোলাই ছিলো। তখনই দরজায় নক পড়ে, অহনা এসেছে..

“কি করছো ভাবী?”

“তেমন কিছুনা!”

“আমি একটু তোমার এখানে বসি?”

“কেনো? ফারহান কিছু বলেছে নাকি?”

“আরে নাহ! ও কাজ করছে। লাইট জ্বা’লি’য়ে রেখেছে, ওখানে একটু শুয়েও শান্তি নেই”

“বেশ তো, এখানেই কিছুক্ষণ শুয়ে থাকো। পরে না হয় চলে যেও”

অহনা বিছানায় বসে পড়লো, একটু পর লক্ষ্য করলো আলফা অ’ন্য’ম’ন’স্ক হয়ে কিছু একটা ভাবছে। ও কিছু বললো না, একটু পর বই রেখে বাতি নিভিয়ে আলফা বারান্দায় চলে গেলো। অহনাও এলো ওর পিছু পিছু..

“তুমি কি কিছু ভাবছো ভাবী?”

“আজকাল ভাবনা একাই চলে আসে। আমার জীবনটা এইটুকু সময়ের মাঝেই কতো ধরনের খেল দেখিয়ে গেলো। আ’ফ’সো’স করবো না কি করবো মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারিনা। নিজেকেই নিজের কাছে বেশ অ’দ্ভু’ত লাগে”

“ভাবী, সত্যি বলতে তুমি অনেক স্ট্রং। তুমি এখনও সবকিছু যেভাবে হ্যা’ন্ডে’ল করছো, আমি হলে পারতামই না”

“হুমম, স্ট্রং থাকার চেষ্টা করি এই বাড়ির মানুষগুলোর জন্য আর নিজের জন্যে। তবে কি জানোতো মাঝে মাঝে ভীষন ক্লা’ন্ত লাগে, মনে হয় আমার জীবনটা তো এমন না হলেও পারতো তাইনা?”

আলফার কথার উত্তর দিতে পারলো না অহনা, তবে এইটুকু বুঝলো যে আলফা অনেকটা আফসোস নিয়েই আজ কথাগুলো বললো। হয়তো সত্যিই মন ভে’ঙে গেছে ওর, তবুও সবার সামনে নিজেকে শ’ক্ত রাখার চে’ষ্টা করে যাচ্ছে..
________________
আলফার চাকরিটা হয়ে গেছে, আজ থেকে জয়েনিং। ওর চাকরির খবর শুনে মিসেস খান ভীষন খুশি হয়েছেন। উনিই বেশি করে চাইছিলেন ওর জবটা হয়ে যাক, বাইরে মানুষের মধ্যে থাকলে ওর মনটা ভালো থাকবে। চাকরিটা শুরুর করার পর আলফার দিনগুলো অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা ভালোই কা’ট’ছি’লো। কদিন পর কয়েকদিন হামজা আসে এ বাড়িতে, হঠাৎ ভাইকে দেখে বেশ অবাক হয় অহনা। মিস্টার ও মিসেস খানের সঙ্গে কোনো এক বিষয়ে কথা বলতে চায় হামজা কিন্তু মিস্টার খান বাজারে গেছেন শুনে হামজা অপেক্ষা করলো। বোনের ঘরে গিয়ে বসেছে হামজা, অহনা ওর জন্যে জুস নিয়ে আসে। গ্লাসটা হাতে নিয়েই হামজা প্রশ্ন করলো..

“তোর ভাবী বাড়িতে নেই?”

“তুই কি ভাবীকে দেখার জন্যে এখানে এসেছিস?”

“যেটা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দে!”

“ভাবী কলেজে গেছে, তার আবার চাকরি হয়েছে তোকে না না বললাম?”

“ওহ হ্যাঁ, ভুলে গেছিলাম”

“আচ্ছা একটা কথা বল তো ভাইয়া, তুই হঠাৎ এই সময়ে আমাদের বাড়িতে কি করছিস? কাজকর্ম নেই তোর?”

“দরকারি একটা কাজেই এসেছি”

“এখানে দরকারি কিসের কাজ?”

“বললেই বুঝতে পারবি”

ভাইয়ের এই হঠাৎ আগমনের কারণ কি হতে পারে ভেবেই পাচ্ছেনা অহনা,জানার জন্যে ওর কৌতূহল আরো বেড়ে যাচ্ছে। কিছু সময় পর মিস্টার খান ফেরেন, এরপর মিস্টার ও মিসেস খানের সঙ্গে কথা বলার জন্যে আসে হামজা..

“আঙ্কেল – আন্টি, আপনাদের একটা কথা জানানোর আছে আমার”

“কি বিষয়ে বলো”

“আমি আলফাকে বিয়ে করতে চাই”

হামজার কথা শুনে মিস্টার ও মিসেস খান অবাক হলেন, সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে অহনা। একদিক থেকে ওর খুশিও লাগছে আবার রা’গ’ও হচ্ছে। ভাইয়া কেনো এ কথা আগে আমায় বললো না? মিস্টার খান বাড়তি কোনো প্রশ্ন করলেন না, শুধু একটা কথাই জানতে চাইলেন..

“তুমি কি আলফাকে পছন্দ করো?”

“জ্বি আঙ্কেল”

“আলফা জানে এটা?”

“না, ওকে এখনও জানাইনি। আমি আগে আপনাদের সম্মতি চাই এরপর ওর সঙ্গে কথা বলবো। আমার মনে হয় ওর সঙ্গে কথা বলার আগে আপনাদের সম্মতি জানাটা আমার জন্যে দরকার”

“আমাদের তো বললে, তা তোমার বাড়িতে জানে?”

“হ্যাঁ আঙ্কেল, আমার বাড়িতে সবাই জানে। বর্তমানে ধরতে গেলে আপনারাই আলফার অভিভাবক, আলফা এখানেই থাকছে তাই আমার মনে হলো আপনাদের আগে জানানো দরকার”

মিসেস খান প্রশ্ন করলেন..

“হামজা, তুমি কি নিজের ব্যাপারে নিশ্চিত? না মানে সত্যিই কি ওকে পছন্দ করো নাকি সহানুভূতি..”

“না আন্টি, ওকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা আমি কোনো প্রকার সহানুভূতি দেখানোর জন্যে দিচ্ছিনা। আমি ওকে পছন্দ করি আর ও যদি আমার জীবনে আসে তাহলে আমি আমার পুরোটা দিয়ে চে’ষ্টা করবো ওকে ভালো রাখার। ভরসা করতে পারেন আপনারা আমার ওপর”

“তোমার ওপর ভরসা আমাদের আছে হামজা, তোমার ওপর ভরসা করা যায়, তার প্রমাণ তুমি আমাদের অনেকভাবেই দিয়েছো কিন্তু এখন যা বলছো সেটা অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত”

“জানি আঙ্কেল, তবে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনাদের অ’ভি’যো’গ করার কোনো সুযোগ দেবো না”

হামজার কথায় মিস্টার ও মিসেস খান যেনো খানিকটা স্বস্তি পেলেন, আলফার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন ওনারা চি’ন্তা’য় ছিলেন তখনই হামজা নিজেই এমন প্রস্তাব নিয়ে এলো। হামজাকে ওনারাও ছেলে হিসেবে বেশ পছন্দ করেন, আর হামজা তাদের চেনা মানুষ। সবদিক বিবেচনা করেই মিস্টার খান বললেন..

“বেশ, আলফা যদি রাজি থাকে তাহলে আমরাও রাজি। আমার ছেলেটা যাওয়ার পর ওই মেয়েটার জীবন যেনো অন্ধকার হয়ে গেছে, যদি আবারো ওর জীবনটা আলোকিত হয়ে ওঠে হয়তো আমাদের থেকে বেশি খুশি কেউ হবেনা”

এ পক্ষ থেকে মোটামুটি সম্মতি পেয়েই গেছে হামজা, নিজের বাড়িতে যদিও একটু স’ম’স্যা হচ্ছে কিন্তু সেটা আস্তে আস্তে ম্যানেজ করে নিতে পারবে বলে হামজার বিশ্বাস আছে। এবার শুধু আলফাকে জানানোর পালা,তবে এ ব্যাপারে কিছুটা চি’ন্তা হচ্ছে। আলফার রি’য়ে’ক’শ’ন হয়তো প’জি’টি’ভ হবেনা এ ব্যাপারেও হামজা জানে, তবুও এতদূর এগিয়ে আসার পর হা’ল ছাড়বে না সে! সন্ধ্যায় আলফা ফেরার পর মিসেস খান ওর ঘরে আসেন, আলফা তখন সবে ফ্রেশ হয়ে এসেছে..

“আন্টি, কিছু বলবেন?”

“তোমার কলেজের প্রথমদিন কেমন গেলো তাই জানতে এলাম আর কি, সব ঠিক ছিলো?”

“হ্যাঁ, সব মোটামুটি ঠিকই ছিলো। তবে ওখানকার পরিবেশ একদম নতুন তো। নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু স’ম’স্যা হচ্ছিলো এই আর কি!”

“ও সমস্যা নেই, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা আলফা, হামজার সঙ্গে তোমার কথা হয়েছে?”

“হামজা? ওনার সঙ্গে আমার কোনো কথা বলার ছিলো নাকি?”

“ওহ, তারমানে এখনও তোমায় কিছু বলেনি”

“কি ব্যাপারে আন্টি? আর হঠাৎ হামজার কথা বলছেন যে? এসেছিলো নাকি আজ এ বাড়িতে?”

“হ্যাঁ, আর আজ ও এসেই এমনকিছু বলেছে যা শুনে আমার আর তোমার আঙ্কেলের চি’ন্তা অনেকটা দূর হয়ে গেছে”

“আন্টি, আপনি কি বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না”

“হামজা আজ আমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, তোমাকে বিয়ে করতে চায় ও”

মিসেস খানের কথা শুনে রীতিমতো চ’ম’কে উঠলো আলফা, এরপর মিসেস খান আরো কিছু কথা বললেন কিন্তু আলফা কোনো উত্তর দিলো না কারণ ও এখনও শ’ক’ড! ভেবে পাচ্ছেনা হামজা হঠাৎ এমন কেনো করলো? কিছু সময় কথা শেষে মিসেস খান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামজাকে ফোন করে আলফা, ওদিকে ফোন স্ক্রিনে প্রথমবারের মতো আলফার নাম ভেসে উঠতেই হাসি ফুটে উঠলো হামজার। কল রিসিভ করেই হাসিমুখে বলে উঠলো..

“ওয়াও! আলফা, আজ তুমি প্রথমবার নিজে থেকে আমায় কল করেছো। নিজেকে ভীষন ভা’গ্য’বা’ন মনে হচ্ছে”

“হামজা, কালকে আপনি আমাদের বাড়িতে আসবেন। কথা আছে আমার আপনার সঙ্গে”

“বাড়িতে? আমরা বাইরে দেখা করতে পারি”

“নাহ, বাড়িতেই আসবেন। যা কথা বলার বাড়িতেই বলবো”

“ফাইন, আমি আসবো কিন্তু তুমি মনে হচ্ছে আমার ওপর রে’গে আছো। আমি কি কোনো দো’ষ করেছি?”

“এটা বোধহয় আপনিই আমার থেকে ভালো জানবেন যে আপনি কি করেছেন”

শুরুতে বুঝতে না পারলেও এবার আলফার রা’গে’র কারণ কিছুটা বুঝতে পারলো হামজা, তবে কিছু বললো না..

“আলফা, আমরা কালকে কথা বলি? আমি আপনাকে সবটা এক্সপ্লেইন করবো”

“হুমম, আমিও আশা করি আপনি নিজে থেকেই সবটা এক্সপ্লেইন করবেন। বেটার এটাই হবে”

কল কে’টে দিলো আলফা, এদিকে হামজা কিছুটা চি’ন্তা’য় পড়ে গেলো। কাল কথা বলতে গিয়ে আলফা যদি অনেক রে’গে যায় তাহলে কি হবে? হামজা কি আলফাকে মানিয়ে নিতে পারবে? হাজারো চিন্তা এসে ভ’র করতে শুরু করে হামজার মাথায়। ডিনার টেবিলে হামজা কে বাবাকে জানায়..

“আমি আজ মিস্টার ও মিসেস খান কেও জানিয়ে এসেছি সব। বলাই যায় যে ওনারা রাজি হয়েছেন”

“কিন্তু আমি রাজি হইনি হামজা!”

“ড্যাড, আমি ভালো থাকলে তুমিও খুশি হবে এটা আমি জানি। আস্তে আস্তে তুমিই আলফাকে মেনে নেবে, দেখে নিও”

“এসব আবেগী কথা বাদ দে হামজা, তুই নিজের জীবন ন’ষ্ট করার পথে পা বাড়াচ্ছিস সেটা দেখছিস না? দেখ এখনও সময় আছে। তুই কি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরবি না হামজা?”

“এটা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত ড্যাড, পি’ছু’পা কেনো হবো? আর আমি আমার জীবনটা তাকে নিয়ে সাজাতে চাইছি যাকে আমি ভালোবাসি আর ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে জীবন সাজালে জীবন আরো সুন্দর হয় ড্যাড, ন’ষ্ট নয়”

ছেলের কথা শুনে মিস্টার খান ভীষন বি’র’ক্ত হন, স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন..

“আমার কথা তো কানেই তুলছে না, পারলে তুমি একটু বোঝাও। মাথা খা’রা’প হয়ে গেছে তোমার ছেলের”

স্বামীর কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললেন না মিসেস শাহ্, তবে উনিও ছেলের খুশিতেই খুশি আর আলফাকেও পছন্দ ওনার। তাই একদিক থেকে উনি ছেলের পক্ষেই রয়েছেন। রাতে, ছেলের ঘরে আসেন মিসেস শাহ্। মা কে দেখে হামজা ভাবলো বুঝি ওর বাবা পাঠিয়েছে, তাই ওর মা কিছু বলার আগে নিজেই বললো..

“মাম্মা, প্লিজ। তুমিও অন্তত ড্যাডের মতো আমাকে কিছু বোঝাতে এসো না। আমি আমার ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি, বিয়ে আমি আলফাকেই করবো”

ছেলের কথায় হাসলেন মিসেস শাহ্, ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন..

“না হামজা, আমি তোকে কিছু বোঝাতে আসিনি। শুধু এইটুকু বলতে এসেছি যে তোর বাবা যতোই অসম্মতি জানাক কিন্তু আমি তোর সাথে আছি। তুই যাকে পছন্দ করবি তাকে আমি মেনে নেব”

“সত্যিই মাম্মা? তোমার আলফাকে নিয়ে কোনো স’ম’স্যা নেই?”

“নাহ, আলফা তো অনেক ভালো মেয়ে আর তুই যখন তাকে নিজের জন্যে পছন্দ করেছিস কিছু একটা ভেবেই করেছিস। তোর সিদ্ধান্তের ওপর আমার পুরো ভরসা আছে”

মায়ের কথায় কিছুটা ভরসা পেলো হামজা, মা বাবা দুজনেই বি’প’ক্ষে থাকলে কিছুটা স’ম’স্যা হয়ে যেতো হামজার জন্যে তবে এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো..

“থ্যাংক ইউ মাম্মা! শুধু তোমার সা’পো’র্ট পেলেই আমার জন্যে যথেষ্ট”
_______________________
ছাদের ওপর মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে আছে আলফা ও হামজা, সামনেই ছোটো একটা টেবিলে দু কাপ চা রাখা। অহনা নিজেই সবটা অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে। আসার পর হামজা একটা সিরিয়াস ভাবে ছিলো কিন্তু এখানে এসে বসার পরই কেমন যেনো উদাসীন টাইপের হয়ে গেছে। ও কিছু বলছে না দেখে আলফাই কথা শুরু করলো..

“আপনি নাকি আঙ্কেলকে বলেছেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান? হঠাৎ এই কথা কেনো বলেছেন জানতে পারি?”

আলফার কথা শুনেও মুখোমুখি চেয়ারে বসে থাকা হামজার কোনো হেলদোল নেই, সে যেনো আলফার কথা কানেই তোলেনি..

“আপনি কি মজা করছেন আমার সঙ্গে?”

“এটা মজা করার মতো কোনো বিষয় নয়”

“তাহলে? কি চাইছেন আপনি?”

“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, আঙ্কেলকে পরিষ্কার সে কথাটা জানিয়েছি এবার আপনিও জানলেন”

“কিন্তু আমি এমনকিছু চাইনা, আর আমার মনে হয় আপনি যখন আঙ্কেলকে কথাটা বলেছেন তখন সম্পূর্ন হু’শে ছিলেন। নাহলে..”

“আমি যা বলার স’জ্ঞা’নে বলেছি আর এই বিষয়টাকে আপনি এতো অস্বাভাবিকভাবে কেনো দেখছেন আলফা? একজন ছেলে হিসেবে আমি কি আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারিনা?”

“অন্য মেয়েদের দিতে পারেন, কিন্তু আমায় না পারেননা”

“কেনো পারিনা? আমার মধ্যে কোনো দো’ষ আছে?”

“নাহ!”

“তাহলে স’ম’স্যা কি?”

“স’ম’স্যা’টা আমার, তাই আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করবো না”

“কিসের স’ম’স্যা আপনার? আপনার মধ্যে আমি তো কোনো দো’ষ দেখতে পাচ্ছিনা”

“সব জেনেও না জানার ভান কেনো করছেন আপনি হামজা? বলছি তো এটা সম্ভব নয়”

“বিয়ের আট মাসের মাথায় বি’ধ’বা হয়েছি আমি আর সেটা আপনার অজানা নয়। তারপরও এই প্রস্তাবের মানে কি? আপনি আপনার উপযোগী অনেক ভালো মেয়ে পাবেন, পারলে তাদের খোঁজ করুন। আমাকে কেনো জড়াচ্ছেন?”

“কারণ আপনাকেই আমার নিজের জন্যে উপযোগী মনে হয়েছে, আর আমার মনে হয় না আপনার মতো কাউকে আমি পাবো”

“হামজা, আমার মনে হয় আমাদের এই আলোচনা এখানেই শেষ করা দরকার। আপনি..”

“আমি আপনাকে পছন্দ করি আলফা”

হামজার কথা শুনে এবার চ’ম’কে উঠলো আলফা। হামজা এক নজর আলফার দিকে চেয়ে ছাদের সাইডে সাজিয়ে রাখা ফুলের টব গুলো দেখেই বলে বসলো..

“আপনার ছোট্ট বাগানে সুন্দর সুন্দর ফ্লাওয়ার প্লান্ট আছে দেখছি, অবশ্য অহনা আমাকে বলেছে যে আপনার গার্ডেনিং এর শখ আছে”

এতো গু’রু’ত’র আলোচনার মাঝে হামজা ফুল গাছের প্রসঙ্গ তুলতেই তা’জ্জ’ব হয়ে গেলো আলফা..

“আপনি কি বলছেন এসব হামজা? আমায় পছন্দ করেন মানে?”

“আমি আপনাকে পছন্দ করি, এই কথাটার মানে বোঝার মতো বোধ তো আপনার আছেই। আশা করি, আমাকে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না”

“কিন্তু কিভাবে? আমাদের মধ্যে কখনো সেরকম কোনো কথা হয়নি তাহলে কিভাবে আপনি আমায় পছন্দ করতে পারেন?”

“আলফা, আপনি কি জানেন আমি আপনাকে তখন থেকে চিনি যখন আপনি আমাকে চিনতেন না?”

“তাতে কি? তাই বলে বিয়ে? এটা তো কারণ হতে পারে না”

“আমি আপনাকে পছন্দ করি আলফা, বলতে পারেন ভালোবাসি। আর একজনকে বিয়ে করতে চাওয়ার জন্যে হয়তো এর থেকে বড় আর কারণ আর হতে পারে না তাইনা?”

“হামজা! আমার মনে হয় আপনার আরো একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবা দরকার, তাহলে আপনি বুঝবেন যে আপনি ভুল করছেন আর আমার প্রতি আপনার তেমন কোনো অনুভূতি নেই”

“অনুভূতিটা আমার, আপনার থেকে সেটা নিশ্চয়ই আমিই ভালোভাবে জানি। তাইনা আলফা?”

“আপনার অনুভূতি মি’থ্যে হামজা, আপনি আমায় ভালোবাসতে পারেন না”

“সব মি’থ্যে হলেও অনুভূতি কখনো মি’থ্যে হয় না আলফা, আপনি হয়তো আজ অব্দি কাউকে ভালোবাসেননি তাই ভালোবাসার অনুভূতি সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই নেই। নাহলে এ কথাটা বলতে পারতেন না”

অবাক চোখে তাকালো আলফা, হামজার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি। কয়েক মুহূর্তের জন্যে থ মে’রে গেলো আলফা, ভেবে দেখলো সত্যিই তো। আজ অব্দি বিশেষ কোনো অনুভূতি হয়নি আলফার আর ফাহাদকে ভালোবাসার সময় সুযোগ কোনোটাই পেয়ে ওঠেনি ও। তাই হামজার কথাগুলো একেবারেই ফেলে দিতে পারছে না আলফা, কারণ সেভাবে ভেবে দেখলে ভালোবাসা তো এখনও ওর জীবনে আসেনি!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে