তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট- ১৪(দ্বিতীয় অংশ)

0
2525

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_১৪(দ্বিতীয় অংশ)
Writer:#সারা_মেহেক

আয়ান এবার মৌ কে জড়িয়ে ধরে বললো,

—“ভুলটা আমি করেছিলাম,তাই সাজাটাও আমাকে ভোগ করতে হবে।তবে আমার সাথে যে তুইও এতো কষ্ট পাবি তা চিন্তা করেনি।সরি রে।।আমার জন্য তোকেও এতো কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হলো।”

মৌ আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

—“আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হয়নি।বরং আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হয়েছে। প্রতিদিন সোফায় ঘুমানো।তারপর আবার এই শীতের সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে শাওয়ার নেওয়া।সবটাই আমার জন্য হয়েছে।”

আয়ান মৃদু হেসে বললো,

—“এটা আমার প্রাপ্য ছিলো রে মৌমাছি।আর আমার ভাগের কষ্টটা আমি ভোগ করেছি।৭দিন পর আজকে নিজেকে খুব ফ্রি ফ্রি লাগছে। মনে হচ্ছে,আমি মুক্ত এক বিহঙ্গ।”

আয়ানের কথা শুনে মৌ সামান্য হেসে বললো,

—“আচ্ছা,অনেক কথা বললাম,এবার আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।অফিস থেকে এসেই তো সোজা এখানে চলে এসেছেন।”

—“হুম।আচ্ছা, তুইও আমার সাথে রুমে আয়।”

—“না। এখন যাবো না। কিছুক্ষন বারান্দায় থাকি।”

—“উঁহু। বারান্দায় পরে আসা যাবে।আগে আমার সাথে রুমে চল।”বলে আয়ান মৌ কে টেনে নিয়ে রুমে নিয়ে গেলো।
বেডের কাছে দাঁড়ীয়ে থেকে আয়ান সেখান থেকে শাড়ীটা নিয়ে মৌ কে দিয়ে বললো,

—“এটা তোর জন্য।এখনি পরে আয়।”

মৌ একদিকে যেমন চমকে গেলো, তেমনি অন্য দিকে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।মনের মধ্যে একধরনের মিশ্র সুখ অনুভুত হতে লাগলো তার।এই প্রথম সে আয়ানের কাছ থেকে উপহার পেলো।তাও আবার আয়ানের ইচ্ছায়।একজন স্ত্রীর জন্য স্বামীর দেওয়া উপহারই শ্রেষ্ঠ মনে হয়।মৌ এর কাছেও তেমনটাই মনে হলো।সে শাড়ীটা হাতে নিয়ে খুশিতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—“খুব খুব ভালো লেগেছে শাড়ীটা।আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংকস শাড়ীটার জন্য। ”

আয়ান ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বললো,

—“এতো থ্যাংকস বলতে হবে না।যা শাড়ীটা পরে আয়।”
মৌ আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

—“আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর আমি শাড়ীটা পরে নিবো।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

—“না না।আমি ফ্রেশ হতে হতে শাড়ীটা ঝটপট পরে নে।”

মৌ মৃদু হেসে বললো,

—“আচ্ছা ঠিক আছে।”
আয়ান মৌ এর হ্যাঁ সূচক জবাব পেয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো । আর মৌ শাড়ী হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো,এখন শাড়ীটা পরবে কোথায়?অহনার রুমে যাওয়া যাচ্ছে না কারন এখন সময় হলো প্রায় ১১.৩০।তাই আর উপায় না পেয়ে মৌ রুমেই শাড়ী পরা শুরু করে দিলো।সে লাইট অফ করে শাড়ী পরছে।শাড়ী পরা প্রায় শেষের দিকেই,তখনই আয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
রুমের লাইট অফ দেখে আয়ান সামান্য জোরে করে বললো,

—“রুমের লাইট অফ কেনো?মৌ?তুই কোথায়?”

আয়ানের আওয়াজ পেয়ে মৌ তাড়াতাড়ি শাড়ীড আঁচলটা গায়ে নিয়ে নিলো।এরপর সুইচের কাছে গিয়ে লাইট অন করে দিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“আসলে,শাড়ী পরছিলাম তো তাই লাইটটা অফ রেখেছিলাম।”বলে মৌ নিজের আঁচলটা ঠিক করতে লাগলো।
এদিকে আয়ান যে একপলকে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।আয়ান মৌ কে দেখার সাথে সাথেই যেনো মৌ এর সৌন্দর্যে পুরো হারিয়ে গিয়েছে।কোনো সাজ ছাড়া খোলা চুল আর লাল শাড়ীতে মৌ কে সাক্ষাত লাল পরি লাগছে।যে লাল পরির উপর থেকে নজর সরানো দায় হয়ে পরেছে তার।মৌ শাড়ীর আঁচল ঠিক করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে একটু ভয়ই পেয়ে গেলো।আয়ানের তাকানো দেখে সে ভাবছে,হয়তো তাকে খারাপ দেখা যাচ্ছে বা কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। সে শাড়ীর আচঁলটা শক্ত করে ধরে ঠিক করতে লাগলো।আর আয়ানের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,

—“আমাকে কি খারাপ দেখা যাচ্ছে? বা শাড়ীর কোথাও কোনো সমস্যা আছে?”

আয়ান কিছু না বলে এক পা দু পা করে মৌ এর দিকে এগুতে লাগলো।আয়ানের এমন আগানো দেখে মৌ এক অজানা ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিললো।সে আয়ানের দিকে তাকাতে পারছে না।কারন আয়ানের চাহনিটা সে সহ্য করতে পারছে না।অদ্ভুত লাগছে তার কাছে এ চাহনিটা।আগে কখনো এমন দেখেনি সে।বুকটা ঢিপঢিপ আওয়াজ করে যাচ্ছে। মৌ আবারো ভয়ের একটা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে রেখেই শাড়ীর আঁচলটা শক্ত করে ধরলো।এতোক্ষনে আয়ান তার একদম কাছে চলে এসেছে। দুজনের মধ্যে সামান্য দূরত্ব বাকি আছে।তবে আয়ান সে দূরত্বটুকুও রাখলো না।কারন সে মৌ এর কাছে গিয়ে একদম হুট করে মৌ কে হ্যাঁচকা টানে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
এতোক্ষন মৌ এর অবস্থা যেমন তেমন ছিলো,আয়ানের এ কাজের ফলে তার অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেলো।পুরো শরীরটাই তার ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।উঁহু, শীতের কাঁপুনি না এটা।এটা আয়ানের স্পর্শের কাঁপুনি।
আয়ান মৌ এর কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। কোমড়ে আয়ানের স্পর্শের কারনে মূলত মৌ এর মধ্যে এ কাঁপুনি ভাবটা উদয় হয়েছে। কি আজব!!কিছুক্ষন আগেও সে আয়ানকে দুবার নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে। তখন তো এমনটা লাগেনি তার।অথচ আয়ান এখন জড়িয়ে ধরেছে বলে তার মধ্যে কাঁপাকাঁপির অন্ত নেই।ভেতরটা কেমন যেনো লাগছে মৌ এর নিজের কাছে।সে নিজে যখন জড়িয়ে ধরেছিলো,তখন এমন কোনো ফিলিসই আসেনি।অথচ আয়ানের বেলায় এমনটা লাগছে কেনো তার?হয়তো আয়ানের চাহনির দোষ।তার এমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকানোর দোষ।হুম আয়ানেরই দোষ।
মৌ আয়ানের নজর বরাবর তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।তাই সে মাথা নিচু রাখে আয়ানকে একপ্রকার মিনতির সুরে বললো,

—“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমার কেমন কেমন যেনো লাগছে।”

মৌ এর কথায় আয়ান মুচকি হেসে দিলো।সে নিজের হাত দিয়ে মৌ এর মুখের সামনে আসা চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,

—“তোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো ধরেনি আমি।তোর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য তোকে ধরে নিজের কাছে এনেছি।এখন চুপচাপ দাঁড়ীয়ে থাক।আর আমি তোকে দেখতে থাকি।”

আয়ানের স্পর্শে মৌ এর অবস্থা এমনিতেই নাজেহাল ছিলো।এখন আয়ানের কথা আর কাজে মৌ যেনো আর নিজের মধ্যে নেই।
সে কাঁপাকাঁপা স্বরে বললো,

—“প্লিজ,আয়ান ভাইয়া,আমাকে ছাড়ুন।দূর থেকেও তো দেখা যায় আমাকে।”

মৌ এর কথা শুনে আয়ান সামান্য ধমকের সুরে বললো,

—“এই!তুই আমাকে আবারো ভাইয়া বলছিস!গত একমাস যাবত তো তুই আমাকে একবারো ভাইয়া বলিস নি।তাহলে আজকে কেনো?এখন তো তোকে আমি ছাড়ছিই না।”

মৌ মাথা নিচু করে রাখা অবস্থাতেই মিনমিনে সুরে বললো,

—“আচ্ছা,আচ্ছা।আর ভাইয়া বলবো না।অনলি আয়ান।এবার তো ছাড়ুন।”

আয়ান মুচকি হেসে মৌ কে নিজের আরো কাছে টেনে এনে বললো,

—“উঁহু। ছাড়ার কোনো প্ল্যানিং এই নেই আমি।কি যেনো বলছিলি তুই?ওহ হ্যাঁ।তোকে দূর থেকে দেখতে বলছিলি। বাট সরি টু সে।এটা আমি পারবো না।তোকে দূর থেকে দেখা আর চাঁদকে দূর থেকে দেখা একই।এক্ষেত্রে আমি আমার চাঁদটা কাছে পেয়েছি। সো এতো তাড়াতাড়ি তো ছাড়ছি না।”বলে সে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।তবে এ হাসিটা মৌ এর চোখে পরলো না।কারন সে তো মাথা নিচু করে আছে।
মৌ পরেছে এক মহামুসিবতে।না পারছে কিছু করতে না পারছে সইতে।শেষমেশ সে হাল ছেড়ে দিয়ে কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়ীয়ে রইলো।
বেশ কিছুক্ষন পার হওয়ার পর আয়ান মৌ এর কানের কাছে ধীর স্বরে বললো,

—“কি ব্যাপার?কোনো কথাবার্তা নেই যে?এখন কি খুব ভালো লাগছে আমার এমন করে তোকে ধরে রাখা?”

মৌ চমকে গিয়ে মাথা উঁচু করে বললো,

—“কি বললেন!!আমার এমন করে ভালো লাগছে!!মোটেও না।আমি বারবার বলার পরও আপনি ছাড়ছেন না বলে আমি চুপ হয়ে ছিলাম।”

আয়ান পাশ ফিরে মুচকি হেসে মৌ কে ছেড়ে দিয়ে বললো,

—“নেহ তোকে ছেড়ে দিলাম।নাউ হ্যাপি?”বলে আয়ান আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে আলমারি থেকে একটা জ্যাকেট বের করে বললো,

—“গায়ে চাদর জড়িয়ে নে।”

মৌ এবার পিছন ফিরে অবাক হয়ে বললো,

—“বাসায় এখন চাদর দিয়ে কি করবো?”

আয়ান জ্যাকেটটা নিয়ে আলমারি আটকিয়ে বেডের উপর থেকে মৌ এর চাদরটা নিয়ে মৌ এর গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বললো,

—“বাসায় থাকছে কে?”

মৌ কপাল কুঞ্চিত করে বললো,

—“মানে!!এ রাতে কোথায় যাবো?”

আয়ান মৌ কে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

—“উফ….এতো প্রশ্ন করিস কেনো?আমার সাথে চুপচাপ চল।তোকে তো আর গুম করে দিবো না আমি।এমন রিয়েক্ট করছিস!!”

মৌ আয়ানের কথা শুনে একটা ভেঙচি কেটে চুপচাপ আয়ানের সাথে হাঁটতে লাগলো।সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে বাসার বাইরে বের হওয়ার আগে মৌ চুলে হাতখোপা করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো।
রাস্তায় এসে আয়ান নিজে হাতটা মৌ এর হাতে গুঁজে দিলো।মৌ ও শক্ত করে আয়ানের হাতটা ধরে রাখলো।
ঘড়ির কাটায় প্রায় ১২টা বাজে।চারদিকে নিস্তব্ধ নিরবতা।থেকে থেকে দূর থেকে শুধু কুকুরের আওয়াজ ভেসে আসছে।আর সাথে আয়ান আর মৌ এর ধপধপ পায়ের আওয়াজ।
চারপাশ থেকে শীতটা কাঁবু করে ফেলেছে মৌ আর আয়ানকে।এই শীতে মৌ এর গায়ে থাকা চাদরটায় কুলাচ্ছে না।সে চাদরটাকে আরো শক্ত করে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিলো।আয়ান কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞাস করলো,

—“বেশি শীত করছে মৌ?বাসায় ফিরে যাবি?”

মৌ না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,

—“উহুঁ।শীত লাগলেও এ শীতটা বেশ উপভোগ করছি।খুব ভালো লাগছে।এভাবে এতো রাতে রাস্তায় হাঁটার মজাই আলাদা।”

আয়ান মুচকি হেসে বললো,

—“তা অবশ্য ঠিক।প্রেয়সী পাশে থাকলে সুদীর্ঘ পথটাও নিতান্তই ছোটো মনে হয়।সেই আইনস্টাইন এর আপেক্ষিকতার সূত্র মতে।”বলে সে আর মৌ একসাথে হেসে উঠলো।আশপাশ নিরব থাকায় তাদের সে হাসিটাও ছোটো আকারের প্রতিধ্বনি আকারে ফিরে এলো।

প্রায় আধঘন্টা হাঁটার পর আয়ান আর মৌ বাসায় এসে শুয়ে পরলো।তবে গত সাতদিনের মতো আজকে আয়ান সোফায় শুবে না। আজকে সে তার প্রাণপ্রিয় মৌ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে।শান্তির ঘুম ঘুমাবো।

————-

২দিন পর,

আয়ান অফিস থেকে বের হয়ে মৌ কে কল দিয়ে বললো,

—-“মৌ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

মৌ কৌতুহল আর জিজ্ঞাসু স্বরে বললো,

—“কেনো?কোথায় যাবো?”

—“হুম।”

—“কিন্তু কোথায়?”

—“এতো প্রশ্ন করিস কেনো?যাবে এক জায়গায়।তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।আমি অফিস থেকে বের হয়ে পরেছি।আর হ্যাঁ, শোন,শাড়ী আর হিজাব পরবি।খবরদার মুখে কোনো সাজ দিবি না।আমি চাই না বাইরের কেউ তোর সাজুনি মুখটা দেখুক।”

আয়ানের কথা শুনে মৌ ফোনটা কেটে দিলো।এরপর একদম আয়ানের কথামতো সে রেডি হয়ে আয়ানের অপেক্ষা করতে লাগলো।
মিনিট বিশেক পর আয়ান এসে অফিসের ব্যাগটা রুম রেখে মৌ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে পরলো।তবে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময়ে আয়ানের দাদি জিজ্ঞাস করলো,

—“এতো হুড়োহুড়ি করে মৌ কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
আয়ান বের হতে হতে বললো,

—“তোমার নাতবৌ কে আজ পুরো শহর ঘুরাবো।”বলে আর অপেক্ষা না করে সে মৌ কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।
বাসা থেকে বের হয়ে আগে থেকে রেডি করে রাখা রিকশায় চড়ে বসলো দুজনে।রিকশায় উঠার সাথে সাথে আয়ান ক্লান্তির এক নিঃশ্বাস ছাড়লো।
আয়ানের এমন অবস্থা দেখে মৌ বললো,

—“এতো তাড়াহুড়ো করার কি দরকার ছিলো?”

—“ছিলো ছিলো।এতো তাড়াহুড়ো না করলে যে নদীর পারে দাঁড়ীয়ে সূর্যাস্ত দেখতে পাবো না।”

মৌ অবাক হয়ে বললো,

—“সূর্যাস্তের তো এখনও প্রায় ১ ঘন্টা বাকি আছে।”

—“হুম।তো আমি কি তোকে বলেছি আমি এখনি তোকে সূর্যাস্ত দেখাতে নিয়ে যাবো?এই ১ ঘন্টা তো আমরা ঘুরবো।রিকশায় চড়ে ঘুরবো।”

—“তাই নাকি মিস্টার মিরর?”

—“জ্বি হ্যাঁ মিসেস মৌমাছি।”বলে আয়ান আর মৌ দুজনে একসাথে হেসে উঠলো।

আয়ান আর মৌ বেশ মজায় মজায় ১ঘন্টা ধরে রিকশা সফর করলো।মাঝে এক টঙ ঘরে দাঁড়ীয়ে দুজনে বেশ আয়েস করে চা খেলো।এরপর আবারো রিকশায় চড়ে সোজা নদীর পারে গেলো তারা।
সূর্য ডোবা শুরু করে দিয়েছে।সূর্যের আশেপাশে উদয়মান লাল কমলা আভা তাই বলে দিচ্ছে।নদীর পারের হালকা ঠান্ডা বাতাস আর ডুবন্ত সূর্যের সামান্য উষ্ণতা চারপাশের আবহাওয়াটাকে মনরোম করে তুলেছে।সূর্যটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে পুরো দুনিয়া থেকে নিজেকে লুকানোর জন্য নদীর পানির পিছনে আশ্রয় নিচ্ছে।তবে এ লুকানোটা শুধু রাত পর্যন্তই রবে।এর বেশি না।সূর্যের আভাটা নদীর পানির উপর পরে বেরঙা নদীর পানিকেও রঙিন করে তুলছে।নিজের রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে সূর্য তার আশপাশটাকে।
এতোক্ষন পাশাপাশি দাঁড়ীয়ে ছিলো আয়ান মৌ। সূর্যটা একদম ডুবে যাওয়ার আগ মূহুর্তে আয়ান গিয়ে মৌ কে পিছের থেকে জড়িয়ে ধরলো।আশেপাশে মানুষ আছে,তবে তারা নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত।
আয়ান ধীর স্বরে মৌ কে জিজ্ঞাস করলো,

—“তো মিসেস আয়ান খান,এই ১ঘন্টা কেমন কাটলো আপনার?”

মৌ মুচকি হেসে জবাব দিলো,

—“বেস্ট বেস্ট এন্ড বেস্ট।ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না এ সময়গুলো।আমি কিছুই বলবো না এসব নিয়ে।আমি চুপটি করে থাকবো।আর আপনি আমার নিরবতা বুঝে নিবেন।বুঝে নিবেন আমার না বলা কথাগুলোকে।কি?পারবেন না বুঝতে? ”

আয়ান মৌ কে ছেড়ে দিয়ে মৌ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো,

—“আমার এ মৌমাছিটার নিরবতা আমি বুঝবো না তো বুঝবে কে।”
আয়ানর ছোঁয়া পেয়ে মৌ চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।

রাতের খাবারদাবার এর পর আয়ান বসে বসে অফিসের কাজ করছে।আর মৌ বসে বসে আয়ানকে দেখছে। একদম বেহায়ার মতো দেখা যাকে বলে।সে মাঝে মাঝো ভেবে অবাক হয় যে,যে মানুষটাকে সে দুচোখেও সহ্য করতে পারতো না,আজকে সে তার বউ।তারপর আবার তার সামনে বসে থাকা এ মানুষটাকেও সে খুব ভালোবাসে।মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা যাকে বলে।
বেশকিছুক্ষন পর আয়ান কাজ সেরে ল্যাপটপ রেখে শোবার প্রস্তুতি নিতে লাগলো।হঠাৎ করে মৌ আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—“আজকে মনে হচ্ছে আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেই থাকি।”

আয়ান মুচকি হেসে মৌ কে জড়িয়ে ধরে বললো,

—“তাই নাকি??আচ্ছা?তোর মতলবটা কি বলতো?”

মৌ কিছু না বলে লজ্জাময় একটা হাসি দিলো।আয়ানও বেশ হাসিটা টের পেলো।সে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,

—“বাহ বাহ।আমি তো তোর ছোটো ইশারাও পড়ে ফেলতে পারি দেখছি।”

—“দেখতে হবে না,এই হাজবেন্ডটা কার..”

আয়ান দুষ্টু হাসি দিয়ে মৌ কে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

—“ওহ আচ্ছা!!তাহলে চল দেখাই এ হাজবেন্ডটা কার।”

মৌ কিছু না বলে আয়ানের গলাটা দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে