তোকে চাই❤(সিজন-২)part:51+52+53
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
.
?
.
রাত প্রায় ৩ টা। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু ঘুমগুলো যেনো ধরায় দিচ্ছে না। দক্ষিণের জানালাটা খোলা। হালকা মৃদু বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে পর্দা…বাইরে থেকে নিশাচর পাখির কান্না ভেসে আসছে কানে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসলাম বিছানায়। কাঁথাটা সরিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাইরের ফ্যাকাশে অন্ধকারে….শূন্যদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি…মনে চলছে হাজারও কথা।।চারদিন পর চিত্রার বিয়ে!!কথাটা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে আমার।সেই ছোট্ট থেকে একসাথে আমরা….ওর বিয়েতে আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হবে না তো? আর মাত্র চারদিন পর চিত্রা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে আমি ছাড়াও অন্যকেউ ভ্রু কুঁচকে তাকাবে। আমার চোখের মতো তার চোখে বিরক্তি থাকবে না, থাকবে একগুচ্ছ নবীন শীতল ভালোবাসা। আমার হাতে চড় খেয়ে মুখ কালো করার পরিবর্তে কারো মিষ্টি আদরে লাজুকতায় মত্ত হবে। কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি খালি গেলো আমার। একবার আকাশের দিকে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে বিছানায় তাকালাম। দৌড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়েই ফোন লাগালাম শুভ্রকে। কয়েক মিনিট পর ফোন কেটে ব্যাক করলেন উনি। আমি ফোন ধরতেই বলে উঠলেন –
.
❤
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে__
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো…
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
.
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
মনে থাকবে?
.
বুদ্ধদেব বসু❤
.
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম আমি। কানে তার কন্ঠটা এখনও বাজছে। কি সুন্দর ঝঙ্কার উঠা কন্ঠ তার। কতো আবেগ তার ভাষায়। আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠলেন উনি-
.
আমাদের তো পরের জন্ম নেই রোদপাখি।তবে জান্নাতে আমি আবারও তোমার প্রেমে পড়বো …মনে থাকবে? তোমার ভেজা চুলে আসক্ত হবো,,তোমার হাসিতে আবারও পাগল হবো…মনে থাকবে??
.
আমি এখনও চুপচাপ বসে আছি।কি বলবো বুঝতেই পারছি না। এতোটা ভালোবাসার যোগ্য তো আমি? হালকা গলায় ভেজা কন্ঠে বলে উঠলাম আমি-
.
মনে থাকবে।
.
আমার এই ছোট্ট কথায় হেসে উঠলেন উনি।ছোট্ট করে বলে উঠলেন – “পাগলী!” কিছুক্ষণ আবারও নীরবতা। এই নীরবতা ভেঙে আবারও বলে উঠলেন উনি-
.
তো ম্যাডাম? এতো রাতে এই ব্যাক্তিকে মনে হওয়ার কারণ কি? ম্যাডামের চোখে কি ঘুম নেই?
.
ওহ্ হ্যা! ভুলেই গিয়েছিলাম। জানেন?চারদিন পর চিত্রার বিয়ে। আমার মধ্যে তো দারুন এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানেন? শিশির স্যারকে দেখেই ওর কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়…বিয়ের পর কি করবে কে জানে?
.
উনি হাসলেন।তারপর গলা মৃদু কন্ঠে বলে উঠলেন –
.
সে কাঁপা-কাঁপি তো তোমারও শুরু হয়ে যায় রোদপাখি। চিত্রারটা বিয়ের আগে…তোমারটা বিয়ের পরে। এনিওয়ে এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে কেন? চারদিনের মাথায় বিয়ে!স্ট্রঞ্জ।
.
একসপ্তাহ পর রোজা তো। রোজায় বিয়ে কেমন কেমন লাগে না?তাই এই চারদিনের মাথায় বিয়ে কমপ্লিট করতে চাইছে সবাই।। শিশির স্যারের তো তরই সইছে না। তাই এত্তো তাড়াহুড়ো….
.
তর তো আমারও সইছে না। বাট আমারটা কেউ বুঝে না। এনিওয়ে শপিং করবে না? বেস্টুর বিয়ে বলে কথা।
.
করবো তো। কাল যাবো চিত্রাকে নিয়ে। এনিওয়ে খেয়েছেন আপনি?
.
নাহ্ কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে ফিরলাম। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত… ঘুমোবো।
.
কিহ্ এতোক্ষণে? চুপচাপ ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে খেতে যান।।তারপর ঘুমোবেন।আর হ্যা…যদি কাল থেকে এতো দেরী করে ফিরেন তো আপনার সাথে আমার কথা বন্ধ।। দরকার নেই এতো কাজ।।এভাবে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন আপনি কেন বুঝেন না?
.
আহ্ তোমার কথাগুলো ভীষন বউ বউ লাগছে। দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
.
আর একটা কথা না। ফোন রাখুন আর খেয়ে ঘুমোন। গুড নাইট।
.
এই মেয়ে? চলে আসো না….তাহলে আর দেরী করে ফিরবো না।
.
আচ্ছা! কাল সকালে চলে আসছি।
.
মানে?(অবাক হয়ে)
.
মানে হলো…ব্যাগ গুছিয়ে কাল সকালে চলে আসছি।। জানেন না?স্বামীর আদেশ শিরধার্য। এখন গুড নাইট।ঘুৃমোন।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি।। আলমারির দিকে তাকিয়ে আছি একদৃষ্টিতে… সত্যি কি ব্যাগ গুছিয়ে হুট করে চলে যাবো?ছিহ…সবাই কি ভাববে।
.
#চলবে…
.
(সরি গাইস।।মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।।কিচ্ছু লিখতে পারছি না।। তাই বিশ্রী করে ছোট্ট একটা পার্ট দিলাম যার অর্ধেকটায় কবিতায় ভরে গেছে,,, আরেকটা পার্ট দেওয়া চেষ্টা হয়তো করবো….সরি এগেইন)
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:52
.
?
.
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার। জানালা দিয়ে কড়া রোদ এসে পড়ছে বিছানায়। কটা বাজে কে জানে? বালিশের নিচে থেকে অলস হাতে ফোনটা নিলাম সময় দেখবো বলে। এমা! ১২ঃ৩০ টা! ১২ঃ৩০ টা বেজে গেছে আর কেউ আমায় ডাকলো না? কি অদ্ভুত! আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসতেই অবাক হলাম আমি। সারা বাড়ি মোটামুটি সাজানো হয়েছে। কিচেন থেকে বাহারী রান্নার সুঘ্রাণ ভেসে আসছে নাকে। কাহিনী কি? কপাল কুঁচকে একঝাঁক চিন্তা মাথায় নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম। ভাইয়া সোফায় বসে গেইম খেলছে। আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলাম –
.
ওই? অফিস যাস নি?
.
গেলে এখানে থাকতাম কি করে? দিন দিন তো হাদা নাম্বার ওয়ান হচ্ছিস।
.
তুই হাদা, তোর বউ হাদা। এনিওয়ে…কাহিনী কি রে ভাইয়া? আজকে মা জননী এতো শান্ত কেন? চিল্লাইয়া আমার ঘুমও ভাঙালো না। তুই অফিস যাস নি তবু কিছু বলছে না। এক্চুয়াল জটটা কোথায় ভাইয়া? তোকে মেয়েপক্ষ দেখতে টেখতে আসছে না তো?
.
আমার কথায় ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো এক ধমক-
.
ওই? কি বলতে চাস তুই? আমাকে কেন দেখতে আসবে? আমি কি মেয়ে? বেয়াদব মাইয়া। (আবারও ফোনটা হাতে নিয়ে) দেখতে তো আসছে তোকে।
.
আমাকে মানে?(চিৎকার করে) আমাকে দেখতে আসছে মানেটা কি? আরে আমার বর আছে। আমাকে দেখতে আসে কোন শালায় ?(রাগী গলায়)
.
আমার কথায় ভাইয়ার কোনো ভাবান্তর হলো না। ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলো –
.
শালা না দুলাভাই! দুলাভাই দেখতে আসছে।
.
মানে?(অবাক হয়ে)
.
মানে তোর বর আসছে উইথ হিজ ফ্যামিলি। বউকে নাকি অনেকদিন দেখে না। আহা! কতো প্রেম! (ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই) এমনে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। যা আমার জন্য একগ্লাস পানি আন। ভাইয়ের সেবা কর বুঝলি….তোর জন্য পুরো একটা দিনের ছুটি কাটলো আমার।।
.
তোকে বলছি আমি বসে থাকতে। যা না অফিসে,,,অফিসে তুমি যে তোমার সুন্দরী পি.এ র সাথে লাইন মারতে যাও তা আমি খুব ভালো করেই জানি। হুহ।
.
ভাইয়া এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর বিস্মিত গলায় বলে উঠলো –
.
আমার পি.এ একজন পুরুষ। ম্যান্টাল! না জেনে কথা কস কেন?
.
ভাইয়ার কথায় দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়েই কেটে পড়লাম। কিচেনে একটু উঁকিঝুকি দিয়েই রুমে ঢুকে গেলাম। সিরিয়াসলি শুভ্র আসছেন? কিন্তু হঠাৎ? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটা লং শাওয়ার নিয়ে শরীরে জড়ালাম কচুপাতা রঙের শাড়ি। চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। কেন জানি হাজার মুছলেও আমার চুল বাবাজি শুকানোর নামই নেয় না উল্টো পানিতে ভাসিয়ে বন্যা বানিয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোনের রিংটোন কানে এলো। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো-
.
এই রোদপাখি? ব্যাগ গুছিয়েছো?
.
ব্যাগ গুছাবো মানে?(অবাক হয়ে)
.
কেনো কাল রাতেই তো বললে। ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসবে।
.
আরেহ্ আমি তো মজা করেছি। আ..
.
এটুকু বলতেই পেটে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। কাঁধে গরম নিঃশ্বাসের বহর ফেলে,, ঠোঁট ছুইয়ে সেই চেনা কন্ঠটা বলে উঠলো –
.
কিন্তু আমি তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছি রোদপাখি।
.
আমি উনার দিকে ফিরতেই মিষ্টি হেসে তোয়ালে টা টেনে নিয়ে চুল মুছতে লাগলেন উনি। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে বলে উঠলেন –
.
ভেজা চুলো তোমাকে একদম…..
.
একদম কি?(ভ্রু কুঁচকে)
.
বাকিটুকু ও বাড়িতে যখন যাবে তখন বলবো। এখন বললে লজ্জা পাবে।
.
আমি কিছু বলবো তার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ কানে এলো। আমরা তাকাতেই অভ্র ভাইয়া হাসিমুখে বলে উঠলো –
.
সরি গাইস! আজ কিন্তু ইচ্ছে করে ডিসটার্ব করি নি। একটা কাজে এসেছিলাম।
.
অভ্র ভাইয়ার কথায় শুভ্রর তেমন একটা ভাবাবেগ হলো না। নিজের মতো চুল মুছতে মুছতে বলে উঠলেন-
.
সেদিনের ডিস্টার্বের অপেক্ষায় এই ডিস্টার্ব কিছুই না। রিভেঞ্জ আমিও নিতাম, একমাত্র বউমনির কথা ভেবে তোকে ছেড়ে দিলাম। যাহ্ ভাই জি লে আপনি জিন্দেগী। এখন বল কি কাজ?আমার বউয়ের কাছে তোর কিসের কাজ?
.
ওই ওটা শুধু তোর বোন সরি সরি বউ হে হে শুধু তোর বউ না। আমার বোন, শালিকা কতো কিছু। সো সাইডে যা।
.
কথাটা বলে শুভ্রকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো অভ্র ভাইয়া-
.
রোদ? ব্যাথার স্প্রে আছে?
.
হ্যা আছে। কিন্তু কেন ভাইয়া? কোথাও ব্যাথা পেয়েছেন?
.
আরে না। রুহির মেবি মাথা ধরেছে। কখনো তো কিছু বলেই না….দাও তো একটু স্প্রে টা। ওর রুমে খুঁজে পাচ্ছি না।
.
আমি ড্রয়ার থেকে স্প্রে টা নিয়ে উনাকে দিতেই একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন –
.
থেংকিউ বোন। আর হ্যা…হলুদের শুভেচ্ছা।
.
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলেন উনি। আমি অবাক চোখে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্রর দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম –
.
হলুদ শুভেচ্ছা মানে?
.
শুভ্র হাসলেন। আমাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন –
.
তুমিই তো বলেছিলে আজ বাসায় যাবে। বউ আমার কিছু চাইবে আর আমি দিবো না তা তো হয় না। সো…বউ নিতে আসছি। এখন সাজুগুজু করে ড্রয়িং রুমে চলে যাও সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে। গিয়েই দিদাকে সালাম করবে। ওরা কিন্তু তোমায় আজ দেখতে এসেছে। পাত্রী দেখা যাকে বলে আরকি। তারপর পছন্দ হলে আংটি পড়াবে। হয়ে যাবে আমাদের এনগেজমেন্ট।
.
আর যদি পছন্দ না হয়?(করুণ মুখে)
.
ধূর বোকা! পছন্দ হবে না কেন? আর এগুলো তো জাস্ট সবাই মিলে মজা করার জন্য। আমাদের বিয়েতে কিছু হয় নি তাই মেয়ে দেখা থেকে শুরু করে রিসেপশন সব হবে। বিকেল তিনটায় হলুদ, রাত আটটায় বিয়ে, রাত দশটায় কনে বিদায়, ১২ টায় বাসর(চোখ টিপে) আর কাল রিসেপশন। হয়ে গেলো সব…
.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। একদিনেই এতোকিছু? কখন প্ল্যান করলেন এসব? আর গেষ্ট?
.
আচ্ছা? বিয়েতে শুধু আমরাই থাকবো? মানে গেস্ট?
.
নো টেনশন বিবি সাহেবা….কাছের আত্মীয় সবাইকে বলা হয়ে গেছে। সবাই তিনটার মধ্যে চলে আসবে। আর বাকি গেষ্টদের রিসেপশনে ইনভাইট করে হয়েছে। আপনার বেস্টু আর তার হাফ জামাইও কিন্তু অলরেডি চলে এসেছে। শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটাই এলো না। খুব মিস করছি ওকে…..
.
কথাটা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে জানালার দিকে মুখ করে পকেটে হাত দিয়ে স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়ালেন উনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলে উঠলেন –
.
এখন হয়তো ওদিকে রাত। সাহেল ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। ওকে ছাড়া কখনো কিছু করি নি আমি আর আজ….ওকে খুব মিস করছি রোদপাখি।
.
কথা বলতে বলতে হঠাৎই হেসে উঠে বলে উঠলেন উনি-
.
সাহেল বলেছে ও হুট করেই বিয়ে করে ফেলবে। রিভেঞ্জ ইজ রিভেঞ্জ ইউ নো? আমাকে বলবেই না তারপর হুট করে বউকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবে, এই নে তোর ভাবি!!
.
আমি মায়া মায়া চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কি আশ্চর্য বন্ধুত্ব উনাদের…আমি মুখে হাসি টেনে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনই দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে এলো চিত্রা। ওর চোখে-মুখে খুশি যেনো ধরছেই না। আমার সামনে এসে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলে উঠলো –
.
এই যে মিষ্টার! এখানে কেন? মেয়ে দেখতে এসে সরাসরি মেয়ের রুমে ঢুকে গেছেন। কি সর্বনাশের কথা! যান বেরুন….(আঙ্গুল নেড়ে)
.
শুভ্র দুষ্টু হাসি টেনে নিয়ে চিত্রার মাথায় চাটি মেরে বেরিয়ে গেলেন। চিত্রা সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো –
.
চল চল সাজাই। আজ বুঝবা শোপিজের মতো বসে থাকতে কেমন লাগে….হে হে হে।
.
চিত্রার কথা শেষ না হতেই রুমে ঢুকলো আপু। হাতে খয়েরী রংঙের শাড়ি। শাড়িটা বিছানায় রাখতে রাখতে বলে উঠলো –
.
আমি দুই পক্ষেই বুঝলি রোদু? এখন তোর পক্ষ হয়ে সাজাবো আর দেখার সময় দেবরের জন্য পাত্রী চুজ করার মতো উল্টে পাল্টে দেখবো। হিহিহিহি।
.
আপু আর চিত্রা মিলে আমাকে সং সাজিয়ে দিলো মুহূর্তেই। মাথায় ঘোমটা এঁটে দিয়ে এই সেই কতো উপদেশ ছুঁড়ছে তারা। চিত্রার ভাবভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে আমি কোনো যুদ্ধে যাচ্ছি আর সে আমার প্রশিক্ষণ দাতা। অবশেষে মার তাড়াহুড়োই আমাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাওয়া হলো। সোফায় সবাই আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে। ভাবটা এমন যেন জীবনে প্রথমবার তারা আমাদের চৌকাঠ মারিয়েছে। আমি একটু এগিয়ে যেতেই মামানি মিষ্টি হেসে বললেন- ” বসো মা” আমি চুপচাপ বসে পড়লাম। ওদের তাকানোর ভাব দেখে নিজেকে কেমন এলিয়েন এলিয়েন লাগছে আমার। আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বসে আছি। হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন দিদা-
.
নাম কি?
.
জি? (অবাক হয়ে)
.
নাম কি নাম?এই? মেয়ে কি কানে কম শুনে নাকি রেনু?(মামানির কানে ফিসফিসানির মতো করে) কি হলো গো মেয়ে নাম বলো।
.
জি আমার নাম নৌশিন আহমেদ রোদেলা।
.
ওহ্ ভালো নাম। তা পড়াশোনা কতদূর?
.
জি অনার্স করছি। এবার ২/১ এ আছি।
.
পাশ থেকে মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন মামু –
.
তা মা আয়তুল কুরসি পারো?
.
আমি বিস্ফারিত চোখে মামুর দিকে তাকালাম। এসব কি হচ্ছে? আমি একটা ঢোক গিলে বললাম- ” জি, পারি।” দিদা এবার গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন-“শুনাও দেখি” এবার কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা আমার। অসহায় চোখে মার দিকে তাকাতেই মা আগুন চোখ নিয়ে বলতে ইশারা করলো। ভাবখানা এই,এবার বিয়েটা ভাঙলে তোর খবর আছে। আমি মুখ ফুলিয়ে এক নিঃশ্বাসে আয়তুল কুরসী বলা শেষ করে আড়চোখে শুভ্রর দিকে তাকালাম। এমা! উনি আপু আর অভ্র ভাইয়ার সাথে কি নিয়ে হাসাহাসি করছেন। শালা খাটাস একটা….তোকে তো….!! এটুকু ভাবতেই পাশ থেকে মামানি বলে উঠলেন-
.
রান্নাবান্না পারো মা?
.
জি..
.
কি কি রাঁধতে পারো?
.
মোটামুটি সব।
.
দিদা এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
মাথার ঘোমটা সরিয়ে চুলগুলো খুলে দাও তো দেখি। চুল আছে তো? একটু হেঁটে দেখাও তো।
.
আমি রাগ নিয়ে মাথার ঘোমটা টা সরাতেই মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন মামানি-
.
মাশাআল্লাহ!! আপা?মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। ছেলে মেয়ে আলাদা একটু কথা বলে নিক। ততক্ষণে আমরা বাকি আলাপ সেরে ফেলি।
.
আমি সরু চোখে তাকিয়ে আছি। বলে কি? নতুন করে আলাদা কথা বলার কি আছে?উনাকে কি আমি নতুন চিনি নাকি? তবু আম্মুর সম্মতিতে উঠতে হলো। উনাকে নিয়ে রুমে ডুকতেই ভাব নিয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
তো?আপনার নামটা যেনো কি? আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?
.
কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে এসে দুই হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন –
.
কি?সমস্যা আছে?
.
#চলবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:53
?
– কি? সমস্যা আছে?
– অবশ্যই সমস্যা আছে। এই দূরে দাঁড়ান। মেয়ে দেখতে এসে শরীরের উপর পরে যাচ্ছেন কেনো শুনি? মেনারলেস লুচু ছেলে। সরুন বলছি….সরুন। আমি এসব লুচু ছেলেদের বিয়ে করবো না হুহ।
– ইশশ….কি করবো বলুন। আপনার মতো এমন রসগোল্লা টাইপ মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কি আর দূরে দূরে থাকা যায়?আপনাকে দেখেই তো আমার সব সিস্টেম উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমি কি করতে পারি বলুন?(চোখ টিপে)
– আপনি তো ভয়ানক অসভ্য ছেলে। এমন একটা অসভ্য ছেলেকে আমি কখনোই বিয়ে করবো না । তাছাড়া…আমি না একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি। একদম হার্টবিট কাঁপা-কাঁপি টাইপ ভালোবাসি কিন্তু সমস্যা কি জানেন?(মুখ উল্টিয়ে)
– কি সমস্যা? (অবাক হয়ে)
– আমি ছেলেটাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসি অথচ ছেলেটা আমায় একটুও ভালোবাসে না।(কাঁদো কাঁদো হয়ে)
– ওহ্ শিট! আপনার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসে না? এর জন্য তাকে সাজা দেওয়া উচিত। আর সাজা হিসেবে তাকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক হাঁড়ি রসগোল্লা খেতে হবে। থেংক গড সে আপনাকে ভালোবাসে না…কষ্ট পাবেন না প্লিজ।এটা তো একটা সুখবর তাইনা? সে ভালোবাসে না তাতে কি? আমি তো বাসি….আই মিন ভাসবো। একদম মন- প্রাণ -দেহ উজার করে ভালোবাসবো। সো নো টেনশন বেবি।
কথাটা বলেই দাঁত কেলিয়ে আরো শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরলেন উনি। আমি হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠলাম,
– আরে ধুর! আপনি ভালোবাসলে হবে নাকি? আপনার নাম কি হ্যা? নিশ্চয় চেঙ্গিস খান টাইপ কিছু একটা? আর তার নামটা কি সুন্দর জানেন? “আবরার আহমেদ শুভ্র” ইশশ নামটা শুনলেই তো প্রেম প্রেম পায়। দেখতে না পুরোই চকলেট বয় টাইপ।সামনে এলেই খপ করে ধরে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। গালগুলো তো গাল নয় যেনো সফ্ট কেক। আর চুলের কথা নাহয় বাদই দিলাম। হায়!! উনাকে দেখলেই আমার মধ্যে কেমন বিরহ্ বিরহ্ ফিলিংস কাজ করে।এই বিরহ নিয়ে কি আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব?? নহে,, কখনোই নহে। আমাকে ক্ষমা করুন মহাশয়।
কথাটা বলে মুখ কালো করে উনার দিকে তাকালাম। দু’জনেই কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই হুহা করে হেসে উঠলাম। উনি হাসতে হাসতেই কপালের সাথে কপাল ঠেঁকিয়ে বলে উঠলেন,
– ভালোবাসি❤ আবরার আহমেদ শুভ্র আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে ম্যাডাম।
কথাটা বলে কোমর ছেড়ে হুট করেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন উনি। বামহাতটা ধরে পকেট থেকে আংটিটা বের করে বলে উঠলেন,
– সারাটা জীবন বুকের সাথে জড়িয়ে রাখার অধিকার দিবে প্লিজ? ক্লান্ত দিনের শেষ অংশে উষ্ণ আদরে নিজেকে হারানোর সুযোগ দিবে প্লিজ? আমার “ভালোবাসি” র উত্তরে এক টুকরো লাজুক হাসির দায়িত্বটা নিবে প্লিজ? তোমার লম্বা চুলে বেলীফুলের মালা জড়ানোর ইচ্ছেটা পূরণ করতে দিবে প্লিজ? তোমার এই বাজে বরটাকে আবারও একবার বিয়ে করবে প্লিজ?
উনার কথায় অবাক হয়ে ডানহাতে মুখ চেপে ধরলাম আমি। খুশিগুলো যেনো চোখের জল হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চলেছে অনবরত। আমি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। উনি মিষ্টি হেসে রিং টা পড়িয়ে দিয়ে বললেন,
– হাফ এনগেজমেন্ট শেষ রোদপাখি। এবার তোমার পালা। আমার রিং কই?
– রিং! আমার কাছে তো রিং নেই। (মাথা নিচু করে)
আমার কথায় হাসলেন শুভ্র। হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে আনলেন উনি। কপালে চুমু দিয়ে হাতে একটা বক্স ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করলেন। আমি লাজুক হেসে রিংটা পরিয়ে দিলাম উনার হাতে। উনি মুচকি হেসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে মুখের দিকে ঝুঁকতেই দরজায় কড়া নড়ার শব্দ কানে এলো। ওপাশ থেকে অভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন,
– ভাই রে। আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি। মান- ইজ্জতটা রাখ। এতোক্ষণ রুমের ভিতর কি কথা বলিস? মহাভারত পড়ে শুনাচ্ছিস নাকি মেয়েটাকে?
শুভ্র একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। শুভ্র বের হতেই চিত্রা একরকম লাফিয়েই রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো। সন্দেহী চোখে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,
– রোদু? বন্ধ দরজার পেছনে কি করলি তোরা? ” হাম তুম এক কামরে মে বান্ধ হে ” এমন টাইপ কিছু হচ্ছিলো নাকি? (চোখ টিপে)
– নাহ্। ” তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ের সুখের দোলা ” টাইপ কাহিনী হচ্ছিলো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
– মানে? (কনফিউসড হয়ে)
– মানে তোর মাথা। সর সামনে থেকে। এমন হ্যাবলাকান্তের মতো মাথার উপর এসে দাঁড়িয়েছিস কেন শুনি?
আমার কথায় দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিলো চিত্রা। বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পা নাঁচাতে লাগলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। ওর মতিগতি তেমন একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার। কিছুক্ষণ সটান শুয়ে থেকে উঠে বসলো সে। হাসিমুখে বলে উঠলো,
– দোস্ত? আমার না খুব হ্যাপি হ্যাপি লাগছে বুঝলি? আজ তোর বিয়ে আর ঠিক দু’দিন পর আমার বিয়ে। আজ আমি তোকে সাজাবো দু’দিন পর তুই আমাকে সাজাবি। আমিই প্রথম কণে যে কিনা বিয়ের আগের দিনও বেস্ট ফ্রেন্ডের ফিরতির অনুষ্ঠানে লাফ ধাপ পারবো
। এনিওয়ে তুই কি জানিস?আমার আর তোর বিয়ের ড্রেস সেইম।
– বিয়ের কথায় তো জানতাম না আবার ড্রেস! প্ল্যানিং না হয় করে ফেললো বাট এতো এরেঞ্জমেন্ট এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে?
– হোহহো। আমার দুলাভাইটা একদম অলরাউন্ডার বুঝলি? রাত তিনটায় ফোন দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলে সব ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করার দায়িত্ব ঝুলিয়ে দিয়েছে। এক পরিচিত মল মালিককে ফোন করে মল খুলিয়ে….আন্টি আর রুহি আপুকে নিয়ে শপিং করেছে আর বাকিগুলো অনলাইন অর্ডার। বিয়ের যাবতীয় এরেঞ্জমেন্টের জন্য একদম নিউ একটা কোম্পানিকে হায়ার করেছে ডাবল টাকা দিয়ে..
তাতে অপেক্ষাকৃত টাকা যেমন কম লেগেছে তেমনি ভালো সার্ভিসও পাওয়া যাচ্ছে। ভাইয়ার ধারনা নতুনদের দায়িত্ব দিলে তারা অবশ্যই তাদের বেস্টটা দিবে। এনিওয়ে এসব কথা রাখ….দু’টো তো প্রায় বেজে গেলো। রেডি হবি চল। গায়ে হলুদটা পাশের কমিউনিটি সেন্টারে হবে….বিয়েটাও সেখানেই। বাড়ি সাজাতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগবে তাই এই ডিসিশন। এবার চল… আমাকেও সাজতে হবে..
একমাত্র শালী বলে কথা! (দাঁত কেলিয়ে) বুঝলি রোদু? আমার না খুব মন খারাপ!
– কেনো?(ভ্রু কুঁচকে) আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে?
– নাহ।( গাল ফুলিয়ে)
– তাহলে?
– শুভ্র ভাইয়ার সবগুলো বন্ধুরই একঝাঁক গার্লফ্রেন্ড আছে। আমি কার সাথে লাইন টাইন মারবো বল? বেস্টুর বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো। কতো সাজবো! জামাইয়ের বন্ধুরা সহ বেস্টুর জামাইও “হা” করে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু হায় অনিষ্ট! শুভ্র ভাইয়ার মাথায় বন্ধুক ধরলেও তিনি তাকাবেন না। সে আশা তো বাদ….এবার তার বন্ধুগুলোর আশাও বাদ। একমাত্র সাহেল ভাইয়ায় ভরসা ছিলো কিন্তু তিনি তো মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বসে আছেন। যত্তসব!! যদিও সাহেল ভাইয়াও আরেক এলিয়েন…. শুভ্র ভাইয়ার মতো তার নজরেও যেন স্টেপলার লাগানো। এদিক ওদিক কোথাও তাঁকায় না। তবে তোর দিকে কিন্তু ঠিকই তাকায়। বুঝি না…দুজনের নজর সব সময় একদিকে চলে কেন? হুয়াই? আমাকে দেখলেও তো পারে। তাহলে নেচে নেচে বিয়ে করে নিতাম। আহা! কি বেদনা দোস্ত…কি বেদনা। ” সে যে কেনো বুঝে না, কিছু ভালো লাগে না ” টাইপ ফিলিংস হচ্ছে বন্ধু। (চোখ টিপে)
ওর কথায় মুচকি হাসলাম আমি। ধীরে পায়ে ওর পাশে পা ঝুলিয়ে বসে ডান কাঁধে হাত রাখলাম। এক আঙ্গুলে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,
– ডার্লিং? শিশির স্যারকে বলি? উনি উনার চুমু থেরাপি শুরু করলে সব ভালো লাগতে শুরু করবে তোমার। ” আর কতো রাত একা থাকবো…” এই টাইপ ফিলিংস আসবে তখন। কি রে, বলবো? (চোখ টিপে)
চিত্রা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বারকয়েক ঢোক গিলে নিয়ে করুণ গলায় বলে উঠলো,
– নননননননো।
চিত্রার চিৎকারে কয়েকসেকেন্ড চুপ করে বসে থেকে হঠাৎ করেই ভুবন কাঁপানো হাসিতে মত্ত হয়ে পড়লাম দুজনে।
?
হলুদের সাথে সবুজ পাড়ের শাড়ি পড়ানো হয়েছে আমায়। সারা গা জুড়ে তাজা ফুলের গহনা। নিজেকে একদম ফুলের দোকান মনে হচ্ছে আমার। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ছাড়া আর কোনো সাজ নেই মুখে। এটা নাকি শুভ্রর আদেশ…আর যায় করো না কেন? মুখে মেকাপ দিবে না একদম! এতোক্ষণে মেহমান আর ফ্রেন্ডে সারা বাড়ি ভরে একাকার। মা-বাবার কি ব্যস্ততা। চিত্রা,রুহি আপু সবাইকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ। শিশির স্যার আর অভ্র ভাইয়া তো নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক
করবে আজ। আমাকে স্টেজে নেওয়া হবে ঠিক তখনই দৌঁড়ে এলো চিত্রা। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
– এক মিনিট, এক মিনিট। পায়ে আলতা পড়ানো হয় নি। গাঢ় আলতা পড়ানোর হুকুম আছে। সো চুপচুপ বসে যা তো ভাই। নয়তো গেইটে টাকা পাবো না আজ।
আমি মুচকি হেসে সোফায় বসে পড়লাম। আলতা পড়ানো শেষে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো আমায়। আমি আড়চোখে চারপাশে তাকাচ্ছি। অল্প সময়ে বেশ মুগ্ধ হওয়ার মতো করেই সাজানো হয়েছে চারপাশ। সব মেয়েরাই সবুজ শাড়ি পড়েছে আর ছেলেরা পড়েছে বেগুনী রঙের পাঞ্জাবি। মুখে হাসি টেনেই শুভ্রকে খুঁচ্ছে আমার চোখ। হঠাৎ দরজার পাশে চোখে পড়লো সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির মুখ। আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি। মুখে মিষ্টি হাসি। সাদা পাঞ্জাবি আর তারওপর হলুদ কটিতে খুবই সতেজ লাগছে তার চোখ -মুখ। ফর্সা মুখে থুতনির কাছে ওই কালো তিল আর টোল পড়া আঁকাবাঁকা দাঁতের হাসি এতদূর থেকেও কতো স্পষ্ট আর মনোমুগ্ধকর!! উনি বুকে হাত দিয়ে জোড়ে একটা শ্বাস ফেলে মাথা হেলিয়ে দিলেন। আমি লাজুক হেসে মাথা নিচু করে আবারও আড়চোখে তাকালাম। উনি দাঁত বের করে হেসে দিয়ে কপালে পড়ে থাকা সিল্ক চুলগুলো ঠেলে দিলেন পেছনে। ডান চোখটা টিপে দিয়ে চলে গেলেন দরজার আড়ালে। আমি কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি দিয়েও উনার দেখা না পেয়ে মুখ কালো করে বসে রইলাম চুপচাপ।
#চলবে..