তোকে চাই❤(সিজন -২)Part:19+2‭‭0 +21+22

0
5052

তোকে চাই❤(সিজন -২)Part:19+2‭‭0 +21+22
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 19
.
.
?
.
আজ আপুর এ্যাংগেজমেন্ট….সবাই আজ সকালে এলেও মামু আমায় কাল রাতেই নিজের সাথে নিয়ে চলে এসেছেন।ঘুম ভেঙে কোথায় আছি বুঝতেই দুই মিনিট লাগলো।বাইরে তুমুল কথাবার্তার আওয়াজ।মানুষ হয়তো নিজেদের কাজে লেগে গিয়েছে এতোক্ষণে… আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছি।।ছিহ্ কি লজ্জার ব্যাপার।।বিছানা থেকে নেমে পাশে থাকা ওড়নাটা গলায় জড়িয়েই বেরিয়ে গেলাম।দরজা খুলে বাইরে বের হতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া আর সাহেল ভাইয়া রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছেন।হয়তো ডেকোরেশনের কাজ নিয়ে বিজি।।আমায় দেখেই শুভ্র ভাই তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ফিরে গেলেন।।বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলেন…
.
মারডালা ইয়ার!!!
.
সাহেল ভাইয়া শুভ্র ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বেক্কল মার্কা হাসি দিলেন।তারপর শুভ্রকে ঝাপটে ধরে কানেকানে কিছু একটা বলতে লেগে গেলেন।।আমি ওদের এসব অদ্ভুত বিহেভিয়ারের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।।আচ্ছা ঘুম থেকে উঠে তো ফ্রেশ হয় নি।মুখে কিছু লেগে নেই তো.???উল্টো পায়ে হেঁটে রুমের মধ্যে গিয়েই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।নাহ্ সব তো ঠিকই আছে…এটলিস্ট হাসির মতো তো কিছু হয় নি।।বেশি ঘুমানোর ফলে চোখ..ঠোঁট…মুখ হালকা ফুলে গেছে এটাই আর কোনো সমস্যা তো চোখে পড়ছে না।।ভাবনা চিন্তা শেষ করে চোখে-মুখে পানি দিয়ে আবারও বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।।শুভ্র ভাই আর সাহেল ভাইয়া ওখানেই দাঁড়ানো।।হাতে খাতা কলম নিয়ে কিছু একটা হিসেব করছেন।।আমাকে দেখেই শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।।উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝতে পারলাম উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছেন।।আমি তাড়াতাড়ি ঠোঁটের উপর হাত রাখলাম।উনি হাতের কলমটা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে কলমের ক্যাপটা ছাড়িয়ে নিলেন শক্ত এক টানে…..নিচের ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।।ব্যাপারটায় আমি অবাক।।ছি ছি শুভ্র ভাই ওমন বিহেভ কেন করলেন??হুয়াই??কথাটা ভাবতে ভাবতে সামনে এগুতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম বলে মনে হলো।।বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকিয়েই দেখি সাকিব।হাতে ব্যান্ডেজটা এখনো আছে।।পায়ে ব্যান্ডেজ নেই তবে হাঁটতে যে একটু সমস্যা হচ্ছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে….
.
আরে সাকিব ভাইয়া? কেমন আছেন?
.
আলহামদুলিল্লাহ…..আপনি কেমন আছেন ভাবি??
.
আবার সেই ভা….
.
আমার কথাটা শেষ করার আগেই রাতুল নামের ছেলেটা হাজির।।আমার সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো….
.
ভাবি? লাল ফুলের ঢালিটা দিতে বললো ভাই।।কাল রাতে নাকি আপনার কাছে রেখেছিলো।।
.
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই আরেকটা ছেলে এসে বলে উঠলো-
.
ভাবি লাল ফুলের ঢালির সাথে নাকি ভাইয়ের ওয়ালেটটাও ওখানে পড়েছিলো।। পেয়েছেন??ভাই তাড়াতাড়ি ওয়ালেটটা দিতে বললো।
.
এদের কথায় আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম।।ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আমি তাদের ভাইয়ের বিয়ে করা বউ৷। আমি গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলাম-
.
আচ্ছা ভাইয়ারা?আমি আপনাদের কোন ভাইয়ের বউ??
.
ওরা কিছু বলবে ঠিক তখনই শুভ্র এসে ধমকে উঠলো…” এই তোদের এখানে গল্প জমাতে পাঠাইছি??? কাজের কাজ কিছুই করিস না।। তাড়াতাড়ি আয়” তৎক্ষনাৎ আমার সামনে থেকে সব হাওয়া!!!আর আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।।ধীরে ধীরে খেয়াল করছি শুধু জুনিয়ররা না শুভ্র ভাই আর সাহেল ভাই ছাড়া উনার ফ্রেন্ডসরাও মাঝে মাঝে আমায় ভাবি বলে ডাকে।। কি একটা বিশ্রী অবস্থা।।জামাইয়ের খুঁজ নাই ননদ দেবরের ছড়াছড়ি।।
.
?
.
সেই কখন থেকে চিত্রাকে খুঁজে চলেছি আমি কিন্তু তার দেখায় নেই।।এদিকে এ্যাংগেজমেন্ট শুরু হয়ে যেতে চললো।।কত্তো কাজ বাকি…. উফফ..এই মেয়ে কি শুভ্র ভাইয়ার সাথে রোমান্স করতে চলে গেছে নাকি??হঠাৎ এক কোনায় চিত্রাকে চোখে পড়লো।।ওর কাছে গিয়ে কিছু বলার আগেই মিনমিনয়ে বলে উঠলো-
.
রোদ?আমি চলে যাই?প্লিজ কিছু মনে করিস না।।আমার এখানে ভালো লাগছে না মোটেও।
.
কিন্তু কেনো??কিছু হয়েছে কি??
.
ও আমার কথার জবাবে শুধু “না” কথাটা বলেই সিঁড়ির দিকে হাঁটা দিলো।।আমিও ওর পিছু নিলাম।।হঠাৎই আদিব ভাইয়া চিত্রার সামনে এসে দাঁড়ালো।। এই ছেলেটা শুভ্র ভাইয়ার কাজিন।।আমি কাছাকাছি যেতেই উনি চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-
.
হ্যালো হটি গার্ল?হোয়ার আর ইউ গোয়িং?আই হেভ টু টক টু ইউ।।আজকের পার্টিতে তুমি আমার ডান্স পার্টনার হবে,,,বলেছিলাম তো।।তবুও কোথায় যাও??
.
চিত্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো-“প্লিজ সরুন আমি বাসায় যাবো।”
.
তুমি বললেই তো আর যেতে দিচ্ছি না বেবি।।
.
এই ছেলের এমন অভদ্রের মতো কথা আর সহ্য হলো বা আমার।।আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলাম-
.
এইযে মিষ্টার?এই অসভ্যতামো নিজের বাড়ি গিয়ে দরজা বন্ধ করে করুন।।এখানে নয়।
.
তুমি যদি আমার সাথে দরজার ওপাশে থাকো তো অসভ্যতামো না হয় সেখানেই দেখাবো।।(চোখ টিপে)
.
হাউ ডেয়ার ইউ??মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না??
.
খুব ভালো করেই জানি।।সো প্লিজ…তুমি এখান থেকে যাও।।আপাতত আমি তোমার ফ্রেন্ডের প্রতি ইন্টারেস্টেড নট ইউ…!!তোমাকে না হয় কাল….
.
কথাটা শেষ করার আগেই উনার গালে জোড়ে সোড়ে চড় বসিয়ে দিলাম।।মেজাজটা চরমে উঠে গেছে উনার কথায়।।চিত্রার হাত ধরে উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে এলাম শেখান থেকে।রুমের দিকে পা বাড়াতেই উনি হাত চেপে ধরলেন আমায়।।মনে হচ্ছিলো এখনি হাতটা মর করে ভেঙে যাবে।।ছেলেটা আমার দিকে লাল চোখে তাকিয়ে “আমায় দেখে নিবে” ধরনের কথা বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।।চিত্রাকে রুমে নিয়ে শান্ত করে রুম থেকে বের হতেই তুমুল কান্ড।।আদিব ভাইয়ের মা অভদ্রের মতো মা কে কথা শুনাচ্ছেন।আমি নাকি আদিব ভাইয়ের সাথে ডলাডলি করতে গেছি।আদিব ভাই মানা করতেই উনার গালে চড় বসিয়েছি।।আমার নাকি শিক্ষা নেই।।বাবা-মা নষ্টামো ছাড়া কিছুই শেখায় নি।।আরও কতো বাজে কথা৷। আম্মু একহাতে মামুর হাত আর অন্যহাতে ভাইয়ার হাত চেপে ধরে আছে।।দুজনেই রেগে মেগে লাল।।অভ্র ভাইয়া এককোনায় দাঁড়িয়ে আছেন।।ব্যাপারটায়,তিনি বিরক্ত কিন্তু কিছু বলছেন না।।শুভ্র ভাইয়াকে কোথাও চোখে পড়লো না। আম্মুটা সমাজকে ব্যাপক ভয় পায়।।আপুর এ্যাংগেজমেন্টে ঝগড়াঝাঁটি করে মানসম্মান হাঁরাতে চান না।।কিন্তু আমি তা মানলে তো।।ধৈর্যের সীমা পাড় হতেই সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম-
.
আপনি নিজের ছেলেকে কতোটা শিক্ষা দিয়েছেন?, উনার আচরণ তো কোনো ভদ্র সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।।
.
এটুকু বলার সাথে সাথেই গালে খুব জোড়ে চড় বসিয়ে দিলো মা।।
.
চুপ একদম চুপ।।এখানে কেনো এসেছিস??এই অপমান কম হয়েছে যে আরো বাড়াতে এসেছিস।।তোর মতো মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকায় ভালো ছিলো।।তোর জন্য আজ মানুষ থুথু দিয়ে যাচ্ছে মুখে।।মরে যেতে পারিস না??,
.
মার কথায় অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি।।ঠিক তখনই ভাইয়া বলে উঠলো-
.
ফাজলামো পেয়েছো মা?ওকে মারলে কেনো??এই মহিলা যাতা বলে যবে আর আমাদের শুনতে হবে??আরে এই মহিলাকে দেখেই বুঝা যায় যে এদের ছেলেরা কেমন হবে….
.
ভাইয়ার কথা শেষ না হতেই আম্মু ভাইয়ার গালেও বসিয়ে দিলো এক চড়।।ভাইয়াকেও শুনতে হলো হাজার কথা।।ভাইয়া শান্ত গলায় বলে উঠলো-
.
রোদ?ব্যাগ নিয়ে আয়…এই বাড়িতে আর একমুহূর্ত নয়।
.
কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।।কোনো রকম সেখান থেকে চলে এলাম আমি।।ছাদের এককোণে বসে আছি।।ইচ্ছে করছে সত্যি মরে যাই।।একদম শেষ করে দিই নিজেকে আমার থাকা না থাকা তো কারো ম্যাটার করে না।।আম্মু সবসময় এমন করে যারই দোষ থাকুক না কেন সবসময় আমাদের তিন ভাইবোন কেই শাসন করবে।।তার ধারনা আমার ছেলেমেয়েকে আমি শাসনে রাখবো অন্যরা কি করছে দেখার বিষয় না।।তাই বলে…এতোগুলো মানুষের সামনে এভাবে বলবে আমায়??রাগটা যেনো কিছুতেই কমছে না।।সবাইকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।।পাশে একটা ইরের টুকরো পেয়ে সেটায় হাতে চালাতে লাগলাম ক্রমাগত।।উদ্দেশ্য হাত কেটে ফালাফালা করবো।।কিন্তু ইটের টুকরো দিয়ে কি আর হাত কাটে??কিছুক্ষণ চেষ্টা করে টুকরোটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলাম।।হটাৎ আমার হাতের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।হাত সরিয়েই দেখি শুভ্র।।উনি শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে আমার।।উনি কাঁপা কাঁপা হাতটা আমার গালের উপর রাখলেন।।ঠান্ডা গলায় বললেন-
.
ডোন্ট ক্রাই।কাঁদবে না।
.
আমার কান্নার গতি যেনো আরো বেড়ে গেলো।। কিছুতেই কনট্রোল করতে পারছিলাম না নিজেকে।।উনি আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
.
রাতুল???
.
জি ভাই?
.
ফোনে শর্টকার্ট বলছিস।এখন উইথ ডিসক্রিপশন বল।কে কি বলেছে সব শুনতে চাই আমি।।রাতুল ভাইয়া এক নিমেষে সবটা বলে গেলেন।।সাথে সাথে লাল হয়ে এলো শুভ্র ভাইয়ার চোখ।।হুট করে দাঁড়িয়ে আমাকে টেনে দাঁড় করিয়েই হাঁটা দিলো।।আমি হাঁটতে পারছি না….অনেকক্ষণ বসে থাকায় পা জিনজিন করছে।।উনি দুপা এগিয়ে আমায় কোলে তোলে নিয়ে সোজা ড্রয়িং রুমের মাঝখানে নামিয়ে দিলেন।।সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।।কারো বুঝতে বাকি নেই যে শুভ্র রেগে আছে।।মামুকে দেখলাম সে আরো আরাম করে বসলেন।মামানি আগে যেমন বসে ছিলেন ওমনি বসে রইলেন।।শুভ্র ভাইয়া আমার সামনে এসে বললেন…
.
রোদ জুতো খুলো??
.
আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।জুতো খুলবো কেন??আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললেন-
.
জুতো খুলো রোদ।
.
কককেনো??
.
জুতো খুলে আদিবের গালে চড় মারবে।।খুব শক্ত করে মারবে গো।
.
আমি বিস্মিত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।আদিব ভাইয়া রেগে বলে উঠলেন-
.
শুভ্র?তুমি এই মেয়েকে আমায় মারতে বলছো??এই দুইদিনের ফুপ্পির মেয়ে বেশি প্রিয় হলো তোমার??
.
কি হলো রোদ??আমি তোমায় ওকে মারতে বলছি!!(দৃঢ় কন্ঠে)
.
উনার এই কন্ঠ হয়তো আদিব ভাইয়ার পরিচিত।।উনি একটু থতমত খেয়ে গেলেন।।আমতা আমতা করে বলে উঠলেন-
.
শুভ্র?আমি এই মেয়েকে কিছুই করি নি।।আমি তো চিত্রার সাথে কথা বলছিলাম।মধ্যে থেকে ও চলে এলো।
.
এবার শুভ্র ভাইয়া আদিব ভাইয়ার কলার চেপে ধরলেন…চিৎকার করে বলে উঠলেন-
.
তো?তোর কি মনে হয় আমি কিছু জানি না??চিত্রাকে বাজে কথা কেনো বলেছিলি??আচ্ছা বলেছিস বেশ করেছিস।।ট্রাস্ট মি…এইজন্য আমি তোকে জাস্ট জারি দিতাম আর কিছুই করতাম না।।কিন্তু তোর বড় ভুল হলো তুই রোদের হাত ধরেছিস।।ধরেছিস না??তোর সাহস কেমনে হয় ওর হাত ধরার??ওর হাতের কুনুইয়ের নিচে তোর হাতের ছাপ কেনো থাকবে??হুয়াই??
.
কথাটা বলেই পাশের সোফায় দিলেন এক লাথি।।সোফাটা বেশকিছুটা পিছিয়ে গেলো।।আমি কাউকে কখনো এতো রাগ করতে দেখি নি।।কি ভয়ানক অবস্থা।এবার মামু কথা বললেন।।আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-
.
রোদ?শুভ্রর কথামতো কাজ কর।।হি ইজ আউট অফ মাইন্ড।।আর শুভ্র?কাম ডাউন মাই সান!!!
.
হোয়াট কাম ডাউন, বাবা??রোদের শরীরে ওর হাতের দাগ কেনো থাকবে??ও রোদকে ছুঁবে কেন??এতো সাহস হয় কি করে ওর?
.
আমার মাথাটা যেনো ভো ভো করছে।। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।।অতিরিক্ত কান্নার কারণে মাথাও ব্যাথা করছে ব্যাপকভাবে।।সোফার হাতলে হেলান দিয়ে কোনোরকম দাঁড়ালাম।। আদিব ভাইয়ের মা ঝনঝনে গলায় শুভ্র ভাইয়ার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-
.
তুই কিছু বলবি না রানু??আমার ছেলেটাকে যে তোর ছেলে এভাবে অপমান করছে…আর তুই চুপ করে বসে আছিস??
.
কি করতে বলিস আপা?আদিব যেমন আমার ভাগ্নে রোদও ঠিক তেমনি আমার ভাগ্নী।।ওকে অপমান করার সময়ও তো আমি চুপ ছিলাম এখনও চুপ থাকবো এটাই স্বাভাবিক।।আর আমার ছেলের বিহেভিয়ার নিয়ে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।।হি ইজ অলওয়েজ রাইট।। আমার শুভ্র ভুল কিছু করে না।।এটলিস্ট আমার চোখে তো পড়ছে না।।
.
তোর কাছে শুভ্রর বিহেভিয়ার ঠিক লাগছে?
.
অবশ্যই ঠিক লাগছে।।আদিব যা করে তা তোর কাছে ঠিক মনে হলে,,,আমার ছেলে দোষী কেন হবে??তাকেও আমি দশ মাস দশ দিনই পেটে রেখেছি।।
.
এবার আর চোখ খুলে রাখতে পারলাম না।।শরীরটা হালকা গতিতে কাঁপছে।।ধীরে ধীরে সবটা অন্ধকার হয়ে এলো তারপর??তারপর কি হয়েছিলো জানি না।।তবে আাদিব ভাই জুতোর বাড়ি থেকে বেঁচে গিয়েছিলো…. হা হা হা হা।।
.
#চলবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 20
.
.
?
.
চোখ মিটমিট করে তাকালাম।।চোখের সামনে সাদা টাইলস করা ছাদ।ঘরে কোনো সারা শব্দ নেই। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে মনে করতে চেষ্টা করছি এক্চুয়েলি কি ঘটেছিলো আমার সাথে।।কথাগুলো মনে হতেই শুভ্র ভাইয়াকে একটা থেংক্স করছে…একদম গ্রেন্ড থেংক্স।কাউকে তোয়াক্কা না করে এমন স্ট্যান্ড কজন নিতে পারে?উনার সবকিছুই ভালো লাগছে আজ।।আচ্ছা আমি কি উনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি?কিন্তু চিত্রাকে পছন্দ করেন….এমনও তো হতে পারে যে উনি আমায় পছন্দ করেন।হতে পারে না কি??কথাটা ভাবতে ভাবতেই উত্তেজনায় এক লাফে উঠে বসলাম আমি।।শরীরটা দুর্বল কিন্তু উনার কথা চিন্তা করতেই মনে লাড্ডু ফুটছে ক্রমাগত।দরজার বাইরে কারো হাসি আর চাপা কথা শুনা যাচ্ছে।।কন্ঠটা পরিচিত…অসীম কৌতুহল নিয়ে দরজার কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম আমি।।চিত্রা আর শুভ্র ভাইয়া হাসাহাসি করছে।কি নিয়ে তাদের এতো আনন্দ??হাসিটা চেপে শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন-
.
“ভালোবাসি” বলে ভালোবাসতে হয় না চিত্রা।।ভালোবাসাটা সত্যি হলে উপলব্ধিটা করেই নেওয়া যায়।।চেঁচিয়ে পুরো পৃথিবীকে বলতে হবে আমি তোমায় ভালোবাসি তবে তুমি মানবে এই উক্তিতে আমি বিশ্বাসী নই।।আমার ভালোবাসা সত্য হলে,,, আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসলে তোমার কাছে সেই উপলব্ধিটা এমনি চলে আসবে।।আম আই রাইট মিস.চিত্রা?
.
ইয়েস মিষ্টার।ইউ আর ওলওয়েজ রাইট।
.
ইয়াহ আই নো।(ভাব নিয়ে)
.
আপনার স্মাইলটা কিন্তু জোস?একদম প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো।।(লাজুক ভঙ্গিতে)
.
যেভাবে লজ্জা পাচ্ছো আমিই তো তোমার প্রেমে…
.
এটুকু শোনার পরই উল্টো হেঁটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।। নিজের প্রতি ঘেন্না হচ্ছে,, ভয়ানক ঘেন্না।।নিজের বান্ধবীর পছন্দের মানুষের দিকেই আমার নজর কি করে গেলো?? ছিহ্।।আমি নিশ্চয় খুব বাজে মেয়ে,,খুব খুব বাজে মেয়ে।।ওই তো গল্প উপন্যাসে বিশ্বাসঘাতক বান্ধবীদের মতো যাদের দেখলে ঘৃনা লাগে ঠিক তেমন মেয়ে মনে হচ্ছে নিজেকে।নাহ্ এভাবে চলতে পারে না।।আই হেভ টু বি স্ট্রং বাট দিস ফিলিংস??এবারও সব দোষ শুভ্র ভাইয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে….কেনো করেন উনি আমার জন্য এত্তোকিছু??হুয়াই?? গ্রিলে রাখা হাতটা কেঁপে উঠছে আমার… কান্নাগুলো ভীর জমিয়েছে বুকে।।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করি।।কেঁদে কেটে বন্যা বানিয়ে ফেলি।।আর সেই বন্যায় ভেসে যাক শুভ্র।।নিচ থেকে খাবার খাওয়ার ডাক পড়লো।।কাঁপা হাতে চোখে মুখে পানি দিয়ে শক্ত করলাম নিজেকে।।শুভ্র ভাইয়া থেকে দূরে থাকতে হবে আমায়…অনেক দূরে..
.
.
নাস্তার টেবিলে বসে আছি।এতোক্ষণে বুঝতে পারছি এখন সকাল।সবাই নিরবে খেয়ে চলেছে।।এদের নীরবতাও অসহ্য লাগছে আমার।।হঠাৎ করেই বলে উঠলাম আমি-
.
আমি বাসায় যাবো এবং এই মুহূর্তে যাবো…
.
আমার কথায় যেনো সবাই অবাক।।মামু শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
কি বলছিস?আমরা তো আরো পিকনিকে যাবো বলে ঠিক করেছি।।অরি,রুহি,রাদিন,রাহাত সবাই দুইদিন আমাদের বাসায় থাকবে।তারমধ্যে তুই বাসায় যাবি?
.
হ্যা যাবো।কে কোথায় থাকলো বা থাকলো না… আই ডোন্ট কেয়ার।।
.
তুই কি রেগে আছিস মা?আই এম সরি…আমি তোর হয়ে স্ট্যান্ড নিতে পারি নি।।
.
মামুর কথা শেষ না হতেই মামানি বলে উঠলেন-
.
রোদ?আদিব আর আপা তো চলে গেছে কাল রাতেই।সে আর তোমাদের ডিস্টার্ব করবে না।তাহলে বাসায় কেনো যেতো চাচ্ছো মা?
.
এমনি যাবো।আদিব ভাইয়াদের বলুন চলে আসতে।উনাদের জন্য আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।।আমি নিজেই নিজের জন্য সমস্যা সো আই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক।
.
মামু এবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
প্লিজ রোদমা যাস না।
.
মামু প্লিজ।তুমি আমায় রিকুয়েস্ট করো না।।তোমার রিকুয়েষ্ট ফেলতেও পারবো না আবার রাখতেও পারবো না।।সো প্লিজ স্টপ দিস…এন্ড আই এম গোয়িং…
.
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার থেকে।।খাবার টেবিলে শুভ্র ছিলো না।।থেংক গড ছিলো না… নয়তো যে দম ফুরিয়ে আসতো আমার। এখন ভালোই ভালোই এখান থেকে বিদেয় হলে বাঁচি।।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছাচ্ছি তখনই মা রুমে এলো।।কোনোরকম বনিতা না করেই বলে উঠলো-
.
তুই যেতে পারবি না।
.
সব সময় তোমার কথা শুনতে হবে এমন কোনো কথা নেই মা!(ব্যাগ গুছাতে গুছাতে)
.
তোর মামু কতো আশা করে বললো…
.
মার কথায় কেনো জানি রাগ উঠে গেলো।।তাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম-
.
সবসময় তোমাদের ইচ্ছা,আশা,ভালোলাগা দিয়ে চলবে না আমার।।আমার ভালো লাগে খারাপ লাগা তো তোমার চোখে পড়ে না কখনো।
.
এভাবে বড়দের মতো কথা বলছিস কেন??তোর বিহেভিয়ার দিন দিন খারাপ হচ্ছে..
.
বলেছো,??শেষ??এখন প্লিজ যাও এখান থেকে বিরক্ত লাগছে।।আমি প্রচুর রেগে আছি এখন উল্টো পাল্টা কিছু বলে দিলে তোমার ভালো লাগবে না।।সো প্লিজ লিভ।
.
আমি কথা বললেই কি তুই বিরক্ত হোস?
.
মা প্লিজ যাও…
.
.
.
রাস্তা ধরে হাঁটছি।।সকাল প্রায় ১০ টা।কর্মমুখর মানুষের ব্যস্ততা চারপাশে।। এভাবে উদ্দেশ্যহীন হাঁটায় বেশ মজা আছে।।ভীরের মধ্যে নিজেকে একটু একলা পাওয়া যায়।।হাজার মানুষের ভীরে কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই…সবাি যার যার কাজ নিয়ে,,চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত…এতো সময় কোথায় তাদের??ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছি নিচে বেগমান পানি।।আচ্ছা এখান থেকে লাফিয়ে পড়লে কি আমি মরে যাবো?ইশশ…জীবন দুবার পাওয়া গেলে আমি অবশ্যই একবার মরে দেখতাম।।মানুষ মরার পর মানুষের কতো রিয়েকশন হয়…আমি মারা গেলে সবার কেমন রিয়েকশন হবে জানার খুব ইচ্ছে।।আচ্ছা শুভ্র ভাইয়ার কি খারাপ লাগবে? উনি কি কাঁদবেন?এমা..ছি ছি!!উনি কাঁদতে যাবেন কেন??কি উদ্ভট চিন্তা আমার।ঠিক তখনই তুমুল হর্ন কানে এলো।।কেউ একজন ক্রমাগত হর্ণ বাজাচ্ছে।।ইচ্ছে করছে একটা চড় লাগায় লোকটার গায়ে।।অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম…, ভাইয়া বাইকের উপর বসে কিউট স্মাইল দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।ভাইয়াকে দেখে ভালো লাগলেও মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলে উঠলাম-
.
কি চাই.?
.
তোকে চাই।
.
মানে??
.
বাইকে উঠে আয়।।আজ দুই ভাই বোনে এই শহর থেকে দূরের কোনো গ্রামে ঘুরে আসবো।।মন একদম ফ্রেশ হয়ে যাবে।।
.
আমি যাবো না তুই ফুট এখান থেকে।
.
চল না যাই..
.
না..তোর অফিস নাই? অফিসে যা না..জ্বালাচ্ছিস কেন?
.

আরে রুহির বিয়ের জন্য তো ছুটি নিয়েছি।।ছুটিতে অফিস যাবো কেন??বিয়ের ছুটি এমনি এমনি যেতে দিলে হয়??কাজে লাগাতে হবে বুঝেছিস?আজ আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মেয়ে খুঁজবো।। মিশন পাত্রী খোঁজা বুঝলি?? এবার চলে আয় তো..ফাস্ট..
.
ঢাকায় মেয়ে কম পাওয়া যায় যে ওখান থেকে আনবি।
.
সেটা তুই বুঝবি না।।আয় তো…
.
.
#চলবে?
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 21
.
.
?
.
নদীর পাড়ে কি জানি একটা গাছের তলায় বসে আছি।।ভাইয়া বলেছে এটা নাকি নামছাড়া গাছ।।এসব গাছের নাম হয় না।সত্যিই কি নাম হয় না??এইটা নিশ্চয় ভাইয়ার গাঁজাখুরি মতবাদ।।এমন নির্জন একটা স্থানে বসে থাকতে বেশ লাগছে।।মনটাও ভালো লাগছে অনেক।ভাইয়া ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।।আমি অবাক চোখে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
.
বিরিয়ানি??
.
হুম।সকালে তো না খেয়েই ওঠে এলি।।খাবারের সাথে তোর এতো কিসের রাগ বল তো??
.
কোনো রাগ নেই।(খেতে খেতে) আচ্ছা ভাইয়া??তুই না বললি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পাত্রী খুঁজবো?তাহলে এখানে বসে আছি কেন??হুয়াই?
.
আরে পাগলী….তুই হয়তো জানিস না নদীর ধারই পাত্রী খোঁজার সবচেয়ে সুইটেবল জায়গা।
.
তাই নাকি?(ভ্রু কুচঁকে)
.
হুম একদম।এই দেখ কোমড় দুলিয়ে কলসি কাখে চারপাশের চারগ্রাম থেকেই মেয়েরা আসবে।।এমনি তো চারগ্রামে ঘুরতে হতো এখন একজায়গায় বসেই চারগ্রামের মেয়ে দেখা যাবে ভালো না??
.
মহা ভালো।।আরে আহাম্মক এখন আর মেয়েরা কলসি কাখে নদীতে আসে না।।সবার বাড়িতে কলঘর আছে।।বুঝিস না?সচেতন বাংলা!!তোর কপালে বুঝি আর বউ নাই রে।।তোকে চিরকুমারই থাকতে হবে।
.
চুপ।একদম বাজে বকবি না।চিরকুমার কেন থাকবো??হালি হালি বাচ্চার বাবা হবো ইনশাআল্লাহ!! নো কম্প্রোমাইজ বুঝলি??
.
ভাইয়ার কথায় হুহা করে হেসে উঠলাম আমি সাথে ভাইয়াও।।
.
?
.
তিনদিন যাবৎ শুভ্র ভাইয়াকে এবোয়েড করে চলছি।চোখে লাগার মতো এবোয়েড। খুব প্রয়োজন ছাড়া উনার সামনেই পড়া বন্ধ করে দিয়েছি এখন।ভার্সিটি যাই না তিনদিন হলো।ফোনের সিম চেঞ্জ করেছি।উনি বাসায় এলে দরজা লাগিয়ে বসে থেকেছি।।মোট কথা টপ লেভেলের এবোয়েড যাকে বলে।।একদম মুখদর্শন ও বন্ধ।।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো… চিত্রা ফোন দিয়েছে…নাম্বার কেমনে পেলো কে জানে।ফোনটা ধরতেই উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো..
.
কি সমস্যা তোর?ক্লাসে আসিস না কেন?ফোনেও তো পাওয়া যায় না।।ঠিক আছিস তুই?
.
হুম ঠিক আছি।।কি বলবি তাই বল…আমার ঘুম পাচ্ছে।
.
সকাল ৮ টা ক্লাস টাইম এখন কিসের ঘুম?
.
মরার ঘুম।তোর যা বলার বল তো…কথা পেঁচাস না।
.
সেমিষ্টার তো চলে এলো।শীট,নোটস কিছুই তো নেসনি।।আজ স্পেশাল ক্লাস আছে আক্কাস স্যারের।।আজ তো এটলিস্ট ভার্সিটিতে আসিস….শুভ্র ভাই বারবার খুঁজ করে কিছু বলতে পারি না খারাপ লাগে।।
.
তোর শুভ্র ভাই আমার খোঁজ কেন করে?(অবাক হয়ে)
.
শুভ্র ভাই আমার কবে থেকে…
.
এটুকু বলতেই ফোনটা কেটে দিলাম আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।।ভার্সিটি যাওয়া উচিত,, এভাবে বাড়ি বসে থাকা যায় না।।তাই রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলাম ভার্সিটিতে।।ভার্সিটি গেইটে পা রেখেই কেমন অন্যরকম ফিলিং হলো যেনো কতোদিন পর আসছি সব যেনো অপরিচিত।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা দিলাম।।কিছুক্ষণ পরই হাতে টান পড়লো।।তাকিয়েই শুভ্র ভাইকে দেখতে পেলাম।ইশশশ…কি অবস্থা করেছেন চোখ মুখের।মনে হচ্ছে কতরাত ঘুমোন না উনি। খুব মায়া লাগছে উনাকে দেখে কিন্তু আমার তো মায়া লাগলে চলবে না।।তাই বিরক্তি নিয়ে চোখ কপাল কুঁচকে হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলে উঠলাম-
.
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া….কোনো দরকার?পাব্লিক প্লেসে এভাবে হাত ধরলেন কেনো? নিশ্চয় কোনো দরকার ছিলো।।দেখুন কোনো দরকার হলে আমায় বলবেন এমন হুটহাট হাত ধরবেন না।।আমি আসি ক্লাস আছে।
.
কথাটা বলেই হাঁটা দিলাম সামনের দিকে।।উনি অবাক চোখে এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।।থাকলে থাকুক তাতে আমার কি??ক্লাস শেষে বের হয়ে কিছুটা সামনে এগুতেই কেউ টেনে ফাঁকা ক্লাসে দাঁড় করিয়ে দিলো আমায়।।শুভ্র ভাইয়া?? উনার চোখদুটো লাল টকটকে।খুব জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে “কি হয়েছে আপনার?” কিন্তু জিগ্যেস করা হলো না।।উনি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
.
আমার সাথে কথা বলছো না কেনো??তিনদিন পর দেখা দিলে এসবের কারণ কি??
.
কেন?আপনার সাথে কোনো কন্ট্রাক্ট সাইন করা ছিলো যে প্রতিদিন আপনার সাথে কথা বলে সকাল সকাল আপনাকে মুখ দেখাতে হবে?
.
উনি পাশের বেঞ্চটাতে জোড়ে লাথি দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলেন-
.
মজা করো আমার সাথে?ফাজলামো পাইছো??আমাকে মানুষ মনে হয় না??আমি মরে যাচ্ছিলাম আর তুমি মজা নিচ্ছো?জানো তুমি??শ্বাস নিতে কতো কষ্ট হচ্ছিলো আমার।।আরেকটু হলে সত্যিই মরে যেতাম।।
.
.
চলবে?
.
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 22
.
.
?
.
আমি কি আপনার প্রাণ ভোমড়া নিয়ে ভেগেছিলাম নাকি যে মরে যাবেন।(অবাক হয়ে)
.
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়া মুচকি হাসলো…. গালের উপর এসে পড়া চুলগুলো গুঁজে দিলো কানে।।ঠোঁটে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলেন-
.
তুমিই তো আমার প্রাণ ভোমড়া…
.
উনি আরো কিছু বলতেন তার আগেই চিত্রার গলার আওয়াজ কানে এলো।।সাথে সাথেই আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন উনি।। লুচু পোলা… চিত্রার ভয়ে ছেড়ে দিলো নির্ঘাত.. তার চিত্রা বেবি কষ্ট পাবে বলে কথা!!!..অসভ্য,সাদা বিলাই কোথাকার!!আমার ভাবনায় জল ঢেলে চিত্রা অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো-
.
সরি ভাইয়া!!আই থিংক আমি রং টাইমে চলে এসেছি।
.
না না ইটস ওকে।আমরা এমনি ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে ডিসকাশন করছিলাম।(জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে) এক্চুয়েলি লাস্ট টাইম তো আদিবের গন্ডগোলের জন্য এ্যান্গেজমেন্টটা হতে হতেও হয় নি।।সো ওটায় রিপিট করা হবে আগামী শনিবার।।ওটা নিয়েই কথা বলছিলাম জাস্ট।অন্যকিছু না।
.
ওও আচ্ছা।
.
আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে উনাদের সংডং এর কথা শুনেই চুপচাপ বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।।এই শুভ্র ভাইয়ার মতি গতি কিছুই বুঝি না আমি।।কি চায় সে আমার থেকে??কেনো এতো নজরদারি আমার উপর??মামুর ভাগ্নি বলে??নাকি অন্যকিছু??হঠাৎই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো-
.
ভাবি?
.
বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি রাতুল ভাইয়া। এদের মধুর স্বরে ভাবি ডাক শুনে নিজেকে সরকারি ভাবি বলে মনে হয়…. বিরক্তি দমন করে… জোড়পূর্বক একটা ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে বলে উঠলাম-
.
জি বলুন দেবরজি।
.
ভাইকে পাইতেছি না।।ভাই কই?মিটিং আছে লেট হচ্ছে(অসহায় কন্ঠে)
.
আপনার ভাই কই আমি কি করে জানবো??আমার কি জানার কথা ছিলো নাকি??(ভ্রু কুঁচকে)
.
না মানে….লাস্ট যখন দেখেছিলাম তখন তো ভাই আপনার সাথেই ছিলো।।ওই ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দরজা লাগাচ্ছিলো।
.
রাতুল ভাইয়া কথাটা সাদা মনে বললেও আমার রাগ তখন সপ্তম আকাশে।।আমাকে নিয়ে দরজা লাগাচ্ছিলো…ছিহ্ কি বিশ্রী শুনায় কথাটা।।মেজাজ ফোরটি নাইন করে কোনো কথা না বলেই হাঁটা দিলাম বাড়ির পথে।।সবকটা আহাম্মকের ঢেঁকি।।অসহ্য,,, জাস্ট অসহ্য!!
.
?
.
আজকে আপুর এনগেজমেন্ট,,সেদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এনগেজমেন্টটা আর হয় নি।ওখানেই অনুষ্ঠান থামিয়ে দিয়েছিলো মামু।।মার সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে এক মহিলা এসে মুখে অমায়িক হাসি নিয়ে বলে উঠলো-“কেমন আছো মা?” যেনো আমি তার হারিয়ে যাওয়া বউ মা।আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম-“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো!!আপনি??” আমার কথায় উনি যেনো চাঁদ হাতে পেয়েছেন,, খুশিতে গদগদ হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন- “আপা?আপনার মেয়েটা যেমন লক্ষি তেমন মিষ্টি।।আমার ছেলেটাও তেমন,,কি ভদ্র!!এবার ডাক্তারী পাস করে হসপিটালে বসেছে।আমাদের নিজেদের ক্লিনিক।” আম্মু চলনসই হাসি দিয়ে চলেছেন ক্রমাগত।।মায়ের হাসিতে মহিলা যেনো আরো ভরসা পেলেন।হাসিমুখে বলে উঠলেন – ” আপা?আপনার মেয়েকে বিয়ে…” আন্টির কথাটা শেষ হওয়ার আগেই কেউ একজন পাশ থেকে বলে উঠলো- “ভাবি??” পাশে তাকিয়ে দেখি আবার সেই রাতুল ভাইয়া।।।উফফ্ আমার হয়ে যাওয়া বিয়েটা একটা মাত্র “ভাবি” ডেকে ভেঙে দিলো তো??আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই দেখি আম্মু কড়া নজরে একবার আমাকে তো একবার রাতুল ভাইয়াকে দেখছেন।।”ভাবি” কথাটা নিতে তার যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে।তার অবিবাহিত মেয়েকে কোনো সুদর্শন হ্যাবলাকান্ত পুরুষ অবলীলায় ভাবি ডাকছে সেটা মা জাতি হিসেবে তার মেনে নেওয়ার কথা নয়….আমি মুচকি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম-
.
জি ভাইয়া বলুন…..
.
আপনাকে আংকেল ডাকছে…
.
আংকেল??
.
মানে আপনার মামু ডাকছে।এনগেজমেন্টের রিং নাকি আপনার কাছে?এগুলো চাইছেন।
.
ওহ আচ্ছা!!ওকে চলুন।
.
আমার কাছে কোনো রিং কোনো কালেই ছিলো না।রাতুল ভাইয়া যে ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন তা বেশ বুঝতে পারছি।।কিন্তু কেনো??এই ভাবি রহস্য তো দূর করতেই হবে।।আমাকে কোন আহাম্মকের বউ বানিয়ে চলেছে ক্রমাগত কে জানে??ওরা আমায় ভাবি ডাকে…তাহলে ওদের ভাই কে? শুভ্র ভাইয়া?ইয়েস…কারন একমাত্র শুভ্র ভাইকেই ওরা ভাই ভাই বলে ডাকে।। আমি এতোটা ডাফার কি করে হলাম??ওরা আমাকেও অনেকবার বলেছে…ভাই এটা,,ভাই ওটা..আর আমি বুঝতেই পারলাম না?সিউর তো হতেই হবে।।যেই কথা সেই কাজ…একটু দূরেই কোলড্রিংকস হাতে নিয়ে রাতুল ভাইয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে চলেছেন।।আমি সোজা উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।। ব্যাপারটায় উনি অবাক।।আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলাম-
.
কেমন আছেন রাতুল ভাইয়া??
.
আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবি।আপনি কেমন আছেন ভাবি?
.
ভালো..খুব ভালো।(দাঁত কেলিয়ে) তোহ্…. এত্তোগুলো কোল্ডড্রিংক্স নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া??
.
ছাদে যাচ্ছি ভাবি।ভাই নিয়ে যেতে বলছে।সাহেল ভাইয়ারা সবাই মিলে ওখানে আড্ডা দিবে তো তাই।
.
ওহহহহ..আচ্ছা আচ্ছা।।খুব ভালো হেহেহে…ভাই আড্ডা দিবে?ভালো,,খুব ভালো,,মহা ভালো!!
.
আমি এখন যাই ভাবি?দেরী হলে ভাই রাগ করবে।
.
নাহ্ না আপনি যাবেন না।
.
মানে?(অবাক হয়ে)
.
মানে সিম্পল আপনি এখন ছাদে যাবেন না।।এখানে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন।
.
আমি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো?(অবাক হয়ে)
.
আমার সাথে গল্প করবেন।আমার না খুব গল্প করতে ইচ্ছে করছে বুঝলেন??সো আপনি এখন আমার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করবেন।
.
কিন্তু ভাই রাগ করবে তো ভাবি।।আর আমি আপনার সাথে কি নিয়ে গল্প করবো?(অসহায় দৃষ্টিতে)
.
অনেক টপিকস আছে গল্প করার মতো।।আর ভাইয়ের টেনশন করবেন না…ভাই কিচ্ছু বলবে না…ভাইদের উপর হলো ভাবি।।একটা সিক্রেট বলি??
.
জি??
.
আপনার ভাই কিন্তু আমায় দেখে ভয় পায়।। ভালোবাসে তো বুঝেন না??আচ্ছা আপনার কি মনে হয়,,আপনার ভাই আমাকে সত্যিই ভালোবাসে??নাকি সব নাটক??হুম?(ভ্রু নাঁচিয়ে)
.
জি জি অনেক ভালোবাসে।নাটক কেনো হবে?আস্তাগফিরুল্লাহ্
.
আপনি কিভাবে বুঝলেন,,অনেক ভালোবাসে?(ভ্রু কুচঁকে)
.
বুঝবো না কেন?আপনি কোথায় যাচ্ছেন,, কি করছেন সব কিছুই তো ভাইয়ের জানা।।অলওয়েজ আপনাকে কেউ না কেউ ফলো করে,,যদিও ডিস্টেন্স রেখে তাই আপনি বুঝেন না।।আর সেই দিন তো স্বপনদের হেব্বি কেলিয়েছে….হাত ভেঙে দিছে একদম।।
.
কেনো??কেলিয়েছে সরি মেরেছে কেনো??
.
আপনার দিকে তাকিয়ে সিটি বাজিয়েছিলো বলে….(মাথা নিচু করে)
.
ওহহ…এটুকুর জন্যই হাত ভেঙে দিলো??(অবাক হয়ে)
.
জি ভেঙে দিলো।
.
আচ্ছা আমি সম্পর্কে আপনার কি হই??
.
ভাবি….
.
আপনি আমার কি হোন??
.
জি মানে…(কনফিউজড হয়ে)দেবর হই ।
.
আপনার সাহেল ভাইয়ার কি হই আমি??
.
উনি তো সানশাইন বলেন।।(বোকা বোকা গলায়)
.
ওহ হ্যা তাই তো।।তাহলে আপনার শুভ্র ভাইয়ের কি লাগি?
.
বউ…
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।।সন্দেহী দৃস্টিতে বলে উঠলাম-
.
বউ? এটা শুভ্র ভাইয়া বলেছে আপনাকে??
.
হুম।ভাই তো সবাইকে বলে দিয়েছেন,,,”রোদ হলো আমার বউ।।সো তোদের মধ্যে একজনও যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকাস….জাস্ট খুন করে ফেলবো।।ভুল করেও যেনো ওর দিকে চোখ না যায়,,নয়তো আমার ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে