#তুমি_রবে_নীরবে
#২য়_পর্ব
#সাদিয়া_ইসলাম_ইকরা
দুপুরের খাবার শেষ করে আমি গেলাম তৈরি হতে।ড্রেস চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা করে চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি।চিরুনি দিয়ে চুল আচঁড়াতে আঁচড়াতে খেয়াল করলাম দরজার পাশে আদিব ভাইয়া উঁকি দিচ্ছে।তার প্রতিবিম্ব যে আয়নায় দেখা যাচ্ছে সেটা সে নিজেও জানে না!
সামনের দিকে তাকাতে কেমন যেন লজ্জা করছে তাই আদিব ভাইয়াকে দেখেও না দেখার ভান করলাম।কারন তখন ওরনাটা দিইনি।আয়নার পাশে একটা চেয়ারে ওরনাটা রাখা ছিল হাতে টেনে ওরনাটা নিলাম।
ওরনায় পিন করতে করতে দেখলাম ভাইয়া চলে যাচ্ছে।আমিও ছোট একটা ব্যাগে মোবাইলটা ঢুকিয়ে আর কিছু টাকা নিয়ে রুম থেকে বের হলাম।আমি যাচ্ছি বান্ধবীর বাসায় চাচ্চুর বিয়েতে দাওয়াত দিতে।
রুম থেকে বের হতেই দেখলাম সবাই আড্ডা দিচ্ছে কাজিনরা গোল করে বসেছে।রাক্ষসগুলো একটু আগে দুপুরের খাবার খেয়েছে এখন আবার সবাই মিলে চিপস খাচ্ছে এদের নিয়ে আর পারা গেল না।
আড্ডার মাঝখান থেকে আমার ছোট বোন তনু এসে আমার হাতটা ধরে টান দিল।
–ছাড় তো আমার হাত।আমি বের হব।
–উফ আপু!চল তো।সবাই আড্ডা দিচ্ছে দেখ।
–আড্ডা দেখে আমি কি করবো??
–এখন আদিব ভাইয়ার পালা।
–কিসের পালা?
–আরে বুঝিস না?আজকে আড্ডার টপিক হচ্ছে ভালোবাসা বলতে কে কি বুঝে?
–তুই বুঝ আমার বুঝা লাগবে না!পুচকি একটা মেয়ে আবার ভালোবাসাও বুঝে!
–আচ্ছা চল না!
বলে এমন ভাবে আমাকে টান দিল আমি আর নিজেকে সামলাতেই পারলাম না।চলে গেলাম।আড্ডার মাঝখানে গিয়ে দেখছি সবার হাতে একটা করে চিপস।আর যে যার মত করে টপিকের উপর মতামত দিচ্ছে।
“কেউ বলছে ভালোবাসা মানে এক মুঠো স্বপ্ন যা দুইজন মিলে দেখেতে হয়”
“কেউ বলছে ভালোবাসা মানে দুইজনের মধ্যে গোপন অনুভূতি যা প্রকাশ করার ভাষা কারোরই থাকে না”
এইবার আসলো আদিব ভাইয়ার পালা।কাজিনরা তো আদিব ভাই বললে খুশিতে গদগদ করে তার উপর আবার তার মুখে আজ শুনবে ভালোবাসার কথা!কে দেখে কার খুশি।
সবাই আদিব ভাইয়াকে বলছে বলো বলো ভাইয়া।তোমার কাছে ভালোবাসার মানে কি?
আদিব ভাইয়া অপলক দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে
“খুব ছোট্ট বেলা থেকে একটা মানুষের প্রতি এক প্রকার মোহ তৈরি হওয়া।যেটা এতটাই হৃদয় ঘায়েল করার মত যে যদি তাকে এই জীবনে না পাই বৃদ্ধকাল অবধি না পাওয়ার কষ্টটা বুকের ভিতর কাঁটার মত বিঁধবে”
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাইয়া আমার দিকে।আগেই বলেছি ছেলেটা খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে।সবাই তার উত্তর শুনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
আদিব ভাইয়া নিজের কথা শেষ করে আমাকে বলছে
–এইবার তুই বল?তোর কাছে ভালোবাসা মানে কি?
–আমি তো এইখানে ভালোবাসা মানে বলতে আসিনি।
–আরে বল না সবাই শুনি।
–সবাই সবারটা শুনো।আমারটা শুনে লাভ নেই।
এই বলে আমি বের হয়ে গেলাম বান্ধবীর বাসায় দাওয়াত দিতে।
বাসা থেকে একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলাম।বান্ধবীর নাম অবনী।অবনী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!ছোট বেলা থেকে আমরা এক সাথে লেখাপড়া করছি।অবনীর বাসা আমার বাসা থেকে খুব একটা দূরে না।
আমাকে রিকশা করে বাসার দিকে যেতে দেখে অবনী বের হলো। আমি রিকশা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে অবনীর সাথে বাসায় ঢুকলাম।আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছি কিছুক্ষণ পর আন্টি আমার জন্য চা নাস্তা নিয়ে আসলেন।আন্টিকে দেখে আমি সালাম দিলাম।আমার সাথে একটু কথা বলে আন্টি ভিতরে চলে গেলেন।
আমি আর অবনী চা খাচ্ছি।চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অবনী বলছে
–জানিস!আবির তোর কথা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে।
–আমি কেন কলেজে যেতে পারছি না আবিরকে বলিস নি?
–বলেছি তো।
–তাহলে?
–তোকে দেখতে পারছে না বলে ছেলের অবস্থা তো পাগল প্রায়।
–কি বলছিস?
–হ্যাঁ রে।গতকাল ফোন নম্বরটা দিয়েছে।আর বলেছে সেটা যেন তোকে দিই।আর আজকেই কথা বলতে বলেছে।
–আচ্ছা নম্বরটা দে।
অবনীর কাছ থেকে নম্বরটা আমার মোবাইলে নিয়ে চাচ্চুর বিয়ের কার্ডটা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
তখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো।বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।ভাবছি একটু পর আবিরকে কল দিব।কিন্তু বাসায় তো সবাই আছে কথা বলতে শুনলে অনেক ঝামেলা হবে আর কাজিনগুলো তো এক একটা ফাজিলের ডিব্বা।কথা বলতে দেখলে তিল থেকে তাল করবে!তাই ভাবলাম একটু পর আবিরকে ছাদে গিয়ে কল দিব।
আপাতত ছাদে কেউ যাবে না।কে কোথায় আছে দেখে নিলাম।যে যার মত কাজ করছে।কিন্ত আদিব ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।সে যেখানে যাবে যাক আমার কি!কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।এর মধ্যে তনু এসেছে ম্যাথ বুঝিয়ে নিতে।মেয়েটা অংকে কখনো পাস করতে পারে না!কত যে বেতের বারি খেয়েছে অংকের জন্য তার কোনো হিসেব নেই।আমি তো মাঝে মাঝে তনুকে ফেলুদা বলে ডাকি।ফেলুদাকে ম্যাথ বুঝিয়ে দিয়ে একটু পর গেলাম ছাদে। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এলো।রাতের পরিবেশটা খুব সুন্দর।ঝিরিঝিরি বাতাস।পূর্নিমার আলোতে সব কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।বাতাসে চুল গুলো উড়ছে।সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম অনুভূতি!এমন অনুভূতি গুলো খুব কম মানুষ ভাষায় প্রকাশ করতে পারে।
যাই হোক,আবিরকে কল দিলাম!
–হ্যালো!চিনতে পেরেছ?
–জ্বি মহারানী চিনতে পেরেছি!
–বাব্বাহ!এইটুকুতেই মহারানী?
–হ্যাঁ!তুমি তো আমার মহারানী-ই।
–তাই!
এইটুকু কথা বলতেই মনে হচ্ছে কে যেন পিছনে আসছে আমি লাইন কেটে পিছনে ফিরে তাকাতে দেখি আদিব ভাইয়া।ভাইয়াকে দেখে আমার একটু ভয় লাগছে।যদি দুপুরের মত কোনো অঘটন ঘটায়?
আমি তাড়াতাড়ি করে তার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছি।আমাকে চলে যেতে দেখে আদিব ভাইয়া বলল
–দাঁড়া!
–কেন?
–একটু থাক না!
–কেন থাকবো?
–দেখ কত সুন্দর পরিবেশ!
–আমি এসেছি বান্ধবীর সাথে কথা বলতে এখন কথা শেষ চলে যাব।
এই কথা বলে আমি ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছি।আমি চলে যাওয়ার ভান করেও একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমি আদিব ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না।আমি চলে গেছি ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে গলায় সুর তুলেছে।
“মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম.
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে.
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি.
মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে…”
আমিও মনের অজান্তে চোখ বন্ধ করে গানটা শুনছি।গিটার ছাড়াও খালি গলায় এত সুন্দর গান সত্যিই অসাধারণ।মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না!
চলবে…