#তুমি_রবে_নীরবে
#পর্ব_৬
#সাদিয়া_ইসলাম_ইকরা
তনু চা বানিয়ে এনেছে।আর কিছু পারুক না পারুক চা টা বেশ ভালোই বানাতে পারে।আমি আর তনু চা টা খেয়ে নিলাম।তনু মায়ের রুমে চলে গেল।আবিরকে একটা কল দেওয়া উচিত। মোবাইলটা নিয়ে দিলাম কল!
–হ্যালো!মহারানী
–হুম
–মন খারাপ?
মনে মনে ভাবলাম কীভাবে
জানলো যে আমার মন খারাপ!
–কেন বলছো?
–আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ!
আবিরকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে মন খারাপ এমনিতে দেখা হয় না তার উপর যদি এইসব বলতে যাই আরো মন খারাপ করে ফেলবে আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম
— নাস্তা করেছ?
–আগে বল মন খারাপ কেন? কেউ কিছু বলেছে?
–না তো!আমার মন একদম ভালো।দেখো আমি হাসছি!
— হ্যাঁ নাস্তা করেছি তুমি করেছো?
–করেছি।
–আচ্ছা শুনো না!তোমাকে না দেখে আর থাকতে পারছিনা একটু দেখা করো।তুমি ছাদের এক কোনায় দাঁড়াবে আমি তোমাকে মন ভরে দেখব!
— পাগল হয়েছ? কেউ দেখবে তো!
–প্লিজ!প্লিজ!প্লিজ।
— আচ্ছা চেষ্টা করছি আমি।
— চেষ্টা না দেখা করতেই হবে
— আচ্ছা আসো।
–এখন আসি?
— আমার খুব ভয় লাগছে।
–ভয়ের কিছু নেই।আমি আড়াল থেকে একটা বারের জন্য দেখবো তোমাকে।
–আচ্ছা!এসে কল দিও।
আমি লাইনটা কেটে দিলাম।তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল প্রায়।এতক্ষণ মন খারাপ ছিল এখন মনটা ভালো হয়ে গেল। ছেলেটার পাগলামি আর নিতে পারছিনা।
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছি। নিজকে বার বার আয়নায় দেখছি।লজ্জা ভয় সব মিলিয়ে আমার ভিতরে অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করছে। অস্থিরতা তো আছেই।হাত পা কাঁপছে।এমন অস্থিরতা কাজ করছে যে স্থির থাকতেই পারছি না।কম করে হলেও এই কয়েক মিনিটে বিশ পঁচিশ বার আয়নায় নিজেকে দেখা শেষ। প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলো এমনই হয়।নিজের সাথে না ঘটলে বুঝতাম না।
আবির কল দিয়েছে রিং টোন বাজছে সাথে হৃদস্পন্দনও বাড়ছে।সিঁড়ি অবধি স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে গেলাম।এর পর ব্যস্ততা নিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে ছাদে চলে গেলাম।নিজেকে আর সামলাতে পারছি না।কয়দিন পর যে দেখবো আবিরকে। আবির আমাদের বাড়ির সামনে এককোনায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি আবিরের দিকে তাকাচ্ছি আর আবির আমার দিকে।দুইজোড়া চোখ যেনো অন্য কোনো দিকে সরছেই না।
খুব করে ইচ্ছে হচ্ছিলো সামনাসামনি দাঁড়িয়ে দুইজন হাত ধরাধরি করে একজন অন্যজনকে মনভরে দেখি।এর মধ্যে তনু কখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করতে পারিনি।আবিরকে দেখে নেয়নি তো!
তনুকে দেখার সাথে সাথে কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠল!
–আপু তুই এইখানে কি দেখছিস?
–কই কিছু না তো!
–আমি তো দেখলাম দেখছিস।
ততক্ষণে আবির চলে গেছে।
–যা তো এইখান থেকে!
–তুইও চল।তুই গেলেই যাবো।আচ্ছা আপু কালকে তো আদিব ভাইয়ারা চলে যাবে তোর খারাপ লাগবে না?
তনুর কথায় আমার কোনো মনোযোগ নেই।আবির এখনো আছে কিনা সেটা দেখতে উঁকিঝুঁকি মারছি।কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।হয়তো তনুকে দেখে চলে গেছে।কতদিন পর দেখা হলো।তাও ফেলুদা এসে ঝামেলা করলো।একটু ছাদে অপেক্ষা করে আবিরকে দেখতে না পেয়ে নেমে গেলাম।ফেলুদাও আমার সাথে সাথে নেমে গেল।
এর মধ্যে আমি পুরোপুরি ভুলে গেলাম যে একটু আগে আমার মনটা খারাপ ছিল।ছাদ থেকে নামতেই আবিরের কল।তনুকে বললাম
–দেখ তো মা বোধ হয় তোকে ডাকছে।
–কই শুনলাম না তো!
–আমি শুনেছি।যা তুই!
তনু সরে যেতেই আবিরের কল রিসিভ করলাম
–মহারানী!
–বলো!
–কি যে শান্তি লাগছে আজকে বলে বুঝাতে পারবো না।
–কেন?কি হয়েছে আজকে!লটারি জিতেছ?
আবির হাসতে হাসতে বলছে
–তুমি তো আমার কাছে লটারির চেয়েও বেশি কিছু।
–তাই?
–হুম!তুমি কখনো জানবে না তোমাকে দেখার আকুতি!
এইটুকু কথা হতেই দেখলাম মা আমার রুমের দিকে আসছে।মাকে দেখতে পেয়ে ব্যস্ত কন্ঠে আবিরকে বললাম
–এই শুনো!রাখছি রাখছি মা আসছে!
আবির কি বললো আর শুনতে পাইনি।লাইনটা আমি নিজেই কেটে দিলাম।মা এসে আমার পাশে বসেছে।
–তুই কি আজকাল মাথায় তেল দিস না?
–না মা।তেল দিতে ভালো লাগে না।তেল দিলে সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ দেখায়।
–তেলের কৌটো টা দে তো মাথায় তেল দিয়ে দিই।
–না না মা।আমি মাথায় তেল দিবো না।
ততক্ষণে ফেলুদা রুমে হাজির।মুচকি হেসে বলছে
–মা আজকাল আপুর মেজাজ বেশি খারাপ থাকে।সেদিন চাচ্চুর গায়ে হলুদে আমার সাথে বাজে ভাবে কথা বলেছে। তেলের কৌটোটা কোথায় আমাকে বলো আমি নিজেই এনে দিচ্ছি।মা তনুকে তেলের কৌটোটা দেখিয়ে দিল।মায়ের সামনে এখন কিছু বলতে গেলে তনুর দোষ চোখে পড়বে না।দোষ তো সব আমিই করি!
তনু কৌটোটা মায়ের দিকে এগিয়ে দিল মা উপরে বিছানায় বসেছে আর আমি নিচে ফ্লোরে বসেছি।আমার চুল গুলো খুলে দুইফাঁক করে আলতো হাতে তেল দিয়ে দিচ্ছে।
— কাল তোর খালা চলে যাবে তুইও যাবি বুবুর সাথে।
— মা তুমি তো জানোই যে আমার কোথাও যেতে ভালো লাগেনা।তবুও এসব বলছো?
— সেখানে তো শান্তা আছে
তোর একা একা লাগবেনা। আর যাওয়াটা জরুরি!
— জোর করো না মা।আমি যেতে পারবো না।
এতক্ষণ তনু আমার আর মায়ের কথা চুপচাপ শুনছিল।যেই না বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনলো অমনি লাফ দিয়ে উঠে বললো
— মা মা আমিও যাই আপুর সাথে?
— না তুই কি করবি সেখানে। তুই পরের বার যেতে পারবি!
— তোমরা সব সময় আমার সাথে এমন করো।সব জায়গায় আপুকে যেতে জোর করো।আর আমি নিজে থেকে বললেও আমাকে বকা দিয়ে চুপ করিয়ে দাও!
এই কথা বলেই তনু বিছানায় রাখা বালিশে মাথা রেখে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো।তনুর এই এক বাজে অভ্যাস যখন রাগ করবে নায়কাদের মত বালিশে মাথা রেখে অন্য পাশ হয়ে শুয়ে পড়বে!
চলবে…